শ্রাবণ মেঘের রোদ্দুর গল্পের লিংক || ইনায়া রোজ

শ্রাবণ মেঘের রোদ্দুর পর্ব ১
ইনায়া রোজ

– শুনেছি, উঠতি বয়সী মেয়েদের শরীরে জ্বালাপোড়া একটু বেশি থাকে তাই বলে যেখানে সেখানে সেই জ্বালাপোড়া মেটাতে হবে নাকি!
আকস্মিক এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে পিছনে ফিরে তাকায় মেঘ। তাকাতেই তার নজরে আসে মেরুদন্ড টানটান করে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রাবণের বিদ্রুপমাখা মুখাবয়ব। মেঘকে এভাবে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ আবারো বলে ওঠে,
– কি রে মেঘ তোর শরীরের জ্বালাপোড়া কি বেশি হয়ে গিয়েছে? বেশি হলে আমাকে বল আমি মিটিয়ে দিচ্ছি!
শ্রাবনের এমন অশ্লীল মন্তব্যে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করে মেঘ। কাচুমাচু করে পাশে তাকিয়েই দেখতে পায় তার বান্ধবী রুহি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শ্রাবণ এবার রুহির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে রুহি বলে ওঠে,

– তোমরা কথা বলো আমার একটু কাজ আছে।
বলেই তৎক্ষণাৎ সেই স্থান ত্যাগ করে রুহি। বান্ধবীর সামনে এভাবে অপমানিত হতেই খুব্ধ দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে তাকায় মেঘ। কিছুটা ক্রোধ এবং ঘৃণিত দৃষ্টিতে সে শ্রাবণের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
– আপনি একজন ভার্সিটির প্রফেসর হয়ে শিক্ষার্থীকে কিভাবে এমন অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে পারেন?
তৎক্ষণাৎ মেঘের কথা শেষ হতে না হতেই মেঘের দু’বাহ সজরে খাঁ*মছে ধরে ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে শ্রাবণ বলে ওঠে,
– তুই করলে কিছু না আর আমি বললেই দোষ।
ব্যথাতুর কন্ঠে মেঘ বলে ওঠে,
– কি করেছি আমি?
এবার মেঘের একেবারে নিকটে গিয়ে শ্রাবণ বলে ওঠে,
– এই যে এখানে দাঁড়িয়ে ন*ষ্টামি করছিস এটা কি কিছুই না?
শ্রাবণের এমন কথায় ঘৃণায় শরীর রি রি করে উঠে মেঘের।
– ছিহ্ শ্রাবণ ভাই আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না?
– না আটকায় না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চেঁচিয়ে বলে উঠে শ্রাবণ। এরপর মেঘের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। যেতে যেতে শ্রাবণ বলে ওঠে,
– আজকে চল বাড়িতে তোর এই সব ন*ষ্টামি বের করছি আমি।
বলেই টেনে নিয়ে গাড়িতে তুলে নেয় মেঘকে।
এবার পরিচয় পর্বে আসা যাক।
“আলিয়া আহমেদ মেঘ” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। অত্যন্ত শিষ্টাচারী এবং বিনম্র স্বভাবের মেয়ে পড়াশোনার প্রতি বেশ মনোযোগী এবং সুশৃংখল। অল্প বয়সী পরিপক্ক পূর্ণ ফর্সা নিখুত মুখাবয়বের অধিকারী মেঘ। বড় বড় পাপড়ি বিশিষ্ট গভীর সরল চোখ চৌখা নাক সুষম আকৃতিরব ঠোঁট সাথে সুশ্রী মেয়েলী শারীরিক গঠন।

উজ্জ্বল গায়ের রঙে যেন তার সার্বিক সৌন্দর্যকে আরো প্রখর করে তোলে। শরীরের তীক্ষ্ণ এবং আকর্ষণীয় অভিব্যক্তি। আর চোখে থাকে এক ধরনের মাধুর্যতা এবং তার হাসি সব সময় আশেপাশের সবাইকে মুগ্ধ করে রাখে।
অপরদিকে “মাহির আহমেদ শ্রাবণ” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্বনামধন্য প্রফেসর একই সাথে মেঘের চাচাতো ভাই। শ্রাবণের উপস্থিতি সবসময় এক ধরনের অদৃশ্য শক্তির মত যেন সে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে মেলে ধরে।
যার প্রতিটি মুদ্রিত শব্দ ,ব্যবহৃত বাক্য গভীরতা এবং প্রজ্ঞার চিহ্ন বহন করে। তার শারীরিক গঠন এমন যেন প্রতিটি সীমানা পেরিয়ে তার সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়। তবে তার গঠন স্বাভাবিক এবং পরিমিত যেমন একটি সৌগঠিত মূর্তি। যার মধ্যে দৃঢ়তা এবং শৃঙ্খলতা মিশে থাকে। প্রায়সই অন্ধকারে ডুবে থাকা তার চোখ যা সব সময় এক নিঃশব্দ রহস্য ধারণ করে।

বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে মেঘকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসে শ্রাবণ। শ্রাবণ আর মেঘকে এভাবে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে সেখানে উপস্থিত সকলে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। শ্রাবণের মা আফসানা বেগম দৌড়ে এসে ছেলের সামনে দাঁড়ায়।
– কি হয়েছে শ্রাবণ মেঘকে এভাবে টেনে হিচড়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
মায়ের কথায় কোনরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি শ্রাবণের মুখে। শ্রাবনকে এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফসানা এগিয়ে গিয়ে মেঘের সামনে দাঁড়ায়। উৎকণ্ঠিত সরে বলে ওঠে,
– মেঘ মা কি হয়েছে তোর?
অশ্রুসিক্ত নয়নে মেঘ তাকায় আফসানা বেগমের দিকে। মেঘ এবার আফসানা বেগমের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নিদৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকায় শ্রাবণ। শ্রাবনকে এভাবে তাকাতে দেখে মেঘের চোখ দিয়ে টপাটপ পানি পড়তে থাকে। আফসানা বেগম আবারো ছেলের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফসানা বেগমকে থামিয়ে কর্কশ কণ্ঠে শ্রাবণ বলে উঠে,
– যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে নষ্টামি করে বেড়ায় তোমাদের মেয়ে। আজ এটার সঠিক শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো আমি তাকে।
বলেই আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে মেঘকে টানতে টানতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে নিজের কক্ষে নিয়ে যায় শ্রাবণ।
কক্ষে প্রবেশ করে ধরাম করে কক্ষের দরজা লাগিয়ে দেয় শ্রাবণ। আকস্মিক দরজার এমন কর্কশ আওয়াজে কিছুটা লাফিয়ে ওঠে মেঘ। ভয়ার্ত কণ্ঠে মেঘ বলে ওঠে,

– কি করছো শ্রাবণ ভাই?
বাকি কথা বলার আগেই মেঘের চোয়াল খানা শক্ত করে চেপে ধরে শ্রাবণ। এরপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে,
– তোকে বারবার বারণ করার পরও ওই নিলয়ের কাছে তোর এত কি?
ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে মেঘ বলে ওঠে,
– নিলয় ভাই ডেকেছিল আমাকে বলেছে কি জরুরি কথা আছে।
এবার এক ধাক্কায় মেঘকে খাটে ছুড়ে মারে শ্রাবণ। তাল সামলাতে না পেরে ধরাম করে খাটে পড়ে যায় মেঘ। নিজের কোমরে থাকা লেদার বেল্টটা একটানে খুলে মেঘের গায়ে সজরে দুটো আ*ঘাত হানে শ্রাবণ। ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠে মেঘ। মেঘকে মারতে মারতে শ্রাবণ বলে ওঠে,

– তোকে আমি বারণ করেছি না ওই নিলয়ের কাছে না যেতে তাও তোর সাহস কি করে হয় আমার কথা অমান্য করার? আজকে তোকে মেরেই ফেলবো আমি।
বেল্টের আঘাতের ব্যথায় চটপট শুরু করে দেয় মেঘ। কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে,
– আর যাব না শ্রাবণ ভাই এবারের মতো আমাকে মাফ করে দাও।
কিন্তু মেঘের কোনো আর্তনাদই কর্ণকুহরে পৌঁছে না শ্রাবণের। সে তো মেঘের তনু শরীরে নিজের ক্ষোভ মেটাতে ব্যস্ত। একটা সময় আঘাত সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায় মেঘ। এবার মেঘের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সম্মিত ফিরে শ্রাবণের। এতক্ষণ নিজের ক্ষোভ মেটাতে কি করছিল ভাবতেই নিজের উপর ভীষণ রাগ হয় তার।
হাতের বেল্টটা মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে মেঘের কাছে যায় শ্রাবণ। এরপর মেঘের মুখ খানা নিজের হাতের আজলায় নিয়ে ঝাকি দিতে থাকে।

– এই মেঘ, মেঘ কথা বল। ফুল আমার ফুল কথা বলনা। আমার ভুল হয়ে গেছে জান তোকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি। কথা বল মেঘ।
কিন্তু মেঘের কোন সাড়াশব্দ নেই সে অসাঢ় হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। শ্রাবণ তড়িঘড়ি করে উঠে সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে সেই পানির ছিটে মারতে থাকে মেঘের চোখে মুখে। কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় মেঘ। মেঘকে তাকাতে দেখে তড়িঘড়ি করে তাকে টেনে তুলে বসায় শ্রাবণ।
শরীরের অত্যাধিক ব্যথায় আবারও খাটে হেলে পড়ে মেঘ। চোখের কার্নিশ বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। এদিকে আফসানা বেগম সেই কখন থেকে ঘরের দরজায় কড়াঘাত করে চলেছে। শ্রাবণ এবার মেঘকে ডেকে উঠে। মেঘ শ্রাবণের দিকে না তাকিয়েই জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে ওঠে,
– আমি মায়ের কাছে যাব।
এই দিকে আফসানা বেগম যেন এবার দরজাটা ভেঙে ফেলবে। ধীর পায়ে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয় শ্রাবণ। দরজা খুলতেই মেঘকে এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে আফসানা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘের মা রাহেলা বেগম দৌড়ে মেয়ের কাছে চলে যায়।

– মেঘ কি হয়েছে তোর?
বলতে বলতে বিলাপ শুরু করেন তিনি। মেয়ের মাথা সন্তপূর্ণে তুলে ধরে নিজের কোলে রাখেন। মায়ের কোমর জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে মেঘ। মেঘের দিকে এক পলক তাকিয়ে কসিয়ে শ্রাবণের গালে এক থা*প্পর লাগায় আফসানা বেগম। আচমকা থা*প্পরে কিছুটা ভড়কে যায় শ্রাবণ।

– লজ্জা করছে না তোর শ্রাবণ, এইটুকু মেয়ের গায়ে হাত তুলতে? মেঘ কে মারার অধিকার কোথায় পেয়েছিস তুই?
আফসানা বেগমের এমন প্রতিক্রিয়ায় থমকে যায় মেঘ। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সে তাকায় শ্রাবণের দিকে। গালে হাত রেখে অগ্নিদৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকায় শ্রাবণ । মেঘের দিকে শ্রাবণ কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে দ্রুত থেকে হেঁটে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।

শ্রাবণ মেঘের রোদ্দুর পর্ব ২