সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১৫
Jannatul Firdaus Mithila
একে একে মনোমুগ্ধকর নাচের পরিবেশনায় অবশেষে শেষ হলো অরিনদের নাচ। আহি-মাহি নাচ শেষ করেই হুট করে ঝাপটে ধরে অরিনকে।বেচারি এমন হুটহাট জড়িয়ে ধরায় তাল সামলাতে না পেরে খানিকটা পিছিয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে দু’হাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরে দু’জনকে। এরই মধ্যে রুহি কেমন ছুটে এসে ঝাপটে ধরে তাদেরকে। পরপর এমন জড়িয়ে ধরায় দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসার যোগাড় অরিনের। মেয়েটা হাসফাস করতে করতে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। রুহি সরে দাড়ায়।অরিনের কনুই ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে উল্লাসিত কন্ঠে বললো,
“ মাই গড! কি নাচলি তুই অরি? আমিতো জাস্ট থান্ডার্ড হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তোর দিকে।বিশ্বাস কর! আজ মেয়ে না হয়ে যদি ছেলে হতাম তাহলে এক্ষুনি তোকে কাজি অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।”
রুহির এমন কথায় মুচকি হাসলো অরিন। আলতো হাতে রুহির গালদুটো টেনে দিয়ে বললো,
“ ইশশ্ কি সুযোগটাই না মিস করলাম রুহিপু! ”
রুহিও গালভর্তি হাসি দিলো।পরক্ষণেই আহি-মাহির দিকে তাকিয়ে বললো,
“ তোরা কি রে? আজ কি সবাই একাধারে আমাদের পাগল করার পায়তারা করছিস নাকি? এমনিতেই তোদের ওপর থেকে চোখ সরানো দায়,তারওপর আবার তোদের এমন নাচ! কি শুরু করলি আজ তোরা? আর এতো সুন্দর নাচ শিখলিই বা কখন?”
মাহিরা এবার মাছি তাড়াবার ন্যায় হাত নাড়িয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ ওহ! ঐটা কোন ব্যাপারই না আমাদের কাছে। আমরা তো এমন দুয়েকটা নাচ এমনিতেই পারি।”
কথাটা শেষ হবার সাথে সাথেই পাশ থেকে আহিরা মুখ কুচকায়। বিরক্তি নিয়ে মুখ ঝামটি মেরে বললো,
“ আরে ব্বাস! কে বললো কথাটা? দেখিতো মেডাম আপনার মুখখানা? যেই মানুষটা কি-না গত একমাস ধরে লুকিয়ে -চুরিয়ে নাচটার প্র্যাক্টিস করে এসেছে সেই বুঝি এহেন যুক্তি দাড় করালো? ব্যাপারটা কেমন হাস্যকর হয়ে গেলো না?”
নিজের ভাব নেওয়া কপট কথাটা ধরা পড়ে যাওয়ায় দাতেঁ জিভ কাটে মাহিরা।মেয়েটা কেমন চোর ধরা পড়ার ন্যায় কাচুমাচু করতে লাগলো। খানিকক্ষণ বাদে গলায় মেকি ঝাঁঝ ঢেলে বললো,
“ আহি! তুই এমন কেন? একটু চুপ থাকলে কি হতো শুনি? সবসময় এমন করিস তুই।”
“ তো?” — ভাবলেশহীন জবাব আহিরার। যা শুনে আরেকধাপ মেজাজ চটে মাহির।মেয়েটা গাল ফুলিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাকে থামিয়ে দেয় রুহি।বলতে থাকে,
“ এই থাম তোরা! এখনানেও কি টম এন্ড জেরির ঝগড়া শুরু করে দিবি নাকি?”
থামলো দু’জনে।একে অপরের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে মুখ ভেঙ্গচায় তারা।
“ বনু নিচে নাম!”
অরিন এতক্ষণ দূরে দাড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসছিলো আহি- মাহির এসব বাক-বিতন্ডায়। তখনি স্টেজের বাইরে থেকে আসা অনিকের গম্ভীর কণ্ঠে তার দিকে তাকায় মেয়েটা। ধীর পায়ে এগিয়ে আসে ভাইয়ের নিকট।অনিকের বাড়িয়ে রাখা হাতটা চেপে ধরে নিচে নেমে আসে সে।
“ এভাবে হুট করে কাওকে কিছু না বলে উধাও হয়ে গিয়েছিলি কেন বনু? জানিস কত টেনশন হচ্ছিলো?”
অনিকের কন্ঠে স্পষ্ট উদ্বিগ্নতার ছাপ।অরিন বেশ টের পেলো তা।ভাইয়ের চিন্তিত মুখখানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো মেয়েটা।
“ এই হাসবিনা বনু।তোর ঐ মিষ্টি হাসিতে আজ আর ভুলছি না আমি। প্রতিবার এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ড করিস,আর কিছু বলতে গেলেই হাসি দিয়ে চুপ করিয়ে দিস।নাহ! এটা প্রতিবার হবেনা। ”
অনিকের এহেন কথায় এবার মুচকি হাসিটা দীর্ঘ হলো মেয়েটার।খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে অরিন।বরাবরই সে হাসি অনিকের রাজ্যসম রাগ-অভিমান নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে সক্ষম। অনিক মেকি অভিমান নিয়ে তাকিয়ে রইলো বনুর দিকে।চোখ দুটো ছোট ছোট করে নিয়ে বললো,
“ বনু! তুই যদি মনে করিস প্রতিবার তোর ঐ হাসি দেখলে আমি আমার রাগ ভুলে যাবো তাহলে শুনে রাখ, তুই একেবারেই ঠিক ভাবছিস।”
বলেই নিজেও ফিক করে হেসে ওঠে অনিক।হাত বাড়িয়ে বোনের মাথাটাকে আলতো করে বুকে চেপে ধরে নিজের। পরক্ষণেই অরিনকে নিজের বাহুডোরে সযত্নে জড়িয়ে রেখে নমনীয় কন্ঠে বললো,
“ এমনটা আর করিস না বনু।ভয় পাই প্রচুর। ”
অরিন বুঝলো ভাইয়ের চিন্তা। বুক হতে মাথা উঠিয়ে ভাইয়ের চোখ বরাবর তাকিয়ে বললো,
“ সরি ভাইয়া! আর করবো না। ”
“সত্যি তো?”
অরিন আবারও আলতো হাসলো। হাতের তিনটি আঙুল দেখিয়ে বললো,
“ এই যে তিন সত্যি! ”
“ ভাবি! আপনার মেয়ে বিয়ে দিবেন না?”
পরিচিত দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের মুখে এহেন কথায় থমকান রাফিয়া বেগম। ঘাড় বাকিয়ে পাশে ফিরে মহিলাটির উদ্দেশ্যে বললেন,
“ জ্বি ভাবি! মেয়ে যেহেতু হয়েছে বিয়ে তো অবশ্যই দিতে হবে তাইনা? ”
মহিলাটি এবার নড়েচড়ে বসলেন। নিজের বসার চেয়ারটা আরেকটু কাছে টেনে আনলেন।তারপর উৎফুল্ল ভরা কন্ঠে বললেন,
“ হ্যা তা তো ঠিকই। আচ্ছা ভাবি শুনেন না, আমার কাছে একটা ভালো পাত্র আছে।যদি আপনি বলেন তাহলে আমি আলাপ করে…..”
“ তার কোন প্রয়োজন নেই আপা। আমার মেয়েকে আমি এতো তারাতাড়ি বিয়ে দিচ্ছি না। মেয়ে আমার এখনও ছোট। এসব বিয়ে -সাদির মতো বড় দায়িত্ব পালনে এখনো সক্ষম হয়নি।”
মহিলাটির কথা শেষ হবার আগেই পেছন থেকে গম্ভীর গলায় কথাগুলো বললেন সাব্বির সাহেব। মহিলাটি তৎক্ষনাৎ চুপ করে যায়।হাসি মুখটা মুহুর্তেই থমথমে হয়ে আসে মানুষটার।চুপসে যাওয়া কন্ঠে মিনমিনে স্বরে বললেন,
“ ওহ আচ্ছা! ঠিক আছে তাহলে আসি আমি।”
কথাটা শেষ করে একপ্রকার গটগট পায়ে চলে যান সেখান থেকে। পাশে বসা রাফিয়া বেগম মহিলাটিকে আটকাতে যাবেন কিন্তু পরক্ষণেই স্বামীর চোখের ইশারায় আর তা করলেন না। সাব্বির সাহেব এগিয়ে এলেন।স্ত্রীর পাশে বসতেই শুনতে পেলেন স্ত্রীর ঝাঁঝালো কণ্ঠ!
“ এ কেমন ব্যাবহার বলো তো? মানুষটা শুধু একটা কথা বলতে চাইলেন আর তুমি তার মুখের ওপর এসব বলে দিলে? মানুষটা কি ভাবলো মনে মনে? ”
সাব্বির সাহেব ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে রইলেন স্ত্রীর পানে। পরক্ষণেই বললেন,
“ কে কি ভাবলো তাতে আমার কিছুই যায় আসে না রাফু।আমার মেয়েকে আমি কিছুতেই এতো তারাতাড়ি বিয়ে দেবো না। সে যতই নবাব পুত্র কিংবা রাজপুত্র আসুক না কেন।”
স্বামীর এরূপ কথার পিঠে আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেলেন না রাফিয়া বেগম। শুধু একটা ক্ষুদ্র নিশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি।
রুহির শ্বশুর বাড়ি থেকে মানুষজন এসেছে মেয়েটাকে হলুদ ছোঁয়াতে। একে একে সকলেই রুহিকে হলুদ ছোঁয়ায়। সবার শেষে রৌদ্র আসে।বোনকে আলতো করে হলুদ ছুঁইয়ে পকেট থেকে রুমালটা বের করে। তারপর রুমালটা দিয়ে বোনের মুখটা কোনরকমে মুছে দেয়। রুহি ভাইয়ের এহেন কান্ডে মুগ্ধ চোখে হাসলো।আসলেই তার অনেক্ক্ষণ যাবত অস্বস্তি হচ্ছিলো মুখের ওপর এতোগুলা হলুদ দেওয়াতে। কিন্তু মুখ ফুটে কোন কিছু না বলতেই তার ভাইটা কেমন বুঝে গেলো সবটা। এসব ভাবতে ভাবতেই রুহির মনটায় আবারও বিষাদের ছায়া নেমে আসে। মুখটা হয়ে ওঠে অন্ধকারাচ্ছন্ন। চোখদুটোর কোটর কেমন টইটম্বুর হয়ে ওঠেছে জলে। রৌদ্র সবটাই খেয়াল করলো সর্তক চোখে।ক্ষুদ্র একটা নিশ্বাস ফেলে আলতো করে হাত রাখে বোনের মাথার ওপর। বললো,
“ কাঁদে না বুড়ি।ভাইয়া আছি না? আর তোকে তো দূরে কোথাও বিয়ে দিচ্ছি না সোনা।যখনি বাড়ির মানুষদের কথা মনে পড়বে রেহানকে বলবি নাহয় আমায় বলবি।গিয়ে নিয়ে আসবো তোকে।কেমন?
ভাইয়ের এমন আশ্বাস দিয়ে বলা কথায় মন খারাপ খানিকটা ঘুচে গেলো রুহির। ভেজা চোখে আলতো হাসলো মেয়েটা। পরক্ষনেই হুট করে জড়িয়ে ধরে ভাইয়ের কোমর। রুহির সারা শরীরে হলুদ লেগে থাকায় রৌদ্রের কাপড়েও নিমিষেই দাগ বসে যায়। তবুও সেদিকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা নেই রৌদ্রের।সেও বোনকে আলতো হাতে জড়িয়ে রেখেছে নিজের সঙ্গে। পাশ থেকে কুহেলি রুহিকে সর্তক করার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই রৌদ্র তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয়। কুহেলিও চুপসানো মুখে বসে রইলো নিজ জায়গায়। খানিকক্ষণ সময় বাদে নিজ থেকে সরে আসে রুহি।ভাইয়ের দিকে চোখ পড়তেই জিভে দাত কাটে মেয়েটা। ইশশ্ হলুদ পাঞ্জাবিটায় কাঁচা হলুদ লাগায় লাল হয়ে দাগ বসে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। রুহি মনে মনে অপরাধবোধ করলো। মলিন মুখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো,
“ সরি ভাইয়া।আসলে….”
রুহির কথার মাঝেই তাকে থামিয়ে দেয় রৌদ্র। মুচকি হেসে বোনের গালে হাত রেখে বললো,
“ কিচ্ছু হবে না বুড়ি।তোর সরি বলতে হবে না। ”
রুহিও কৃতজ্ঞ হাসলো ভাইয়ের প্রতি। তাকিয়ে রইলো ভাইয়ের স্নিগ্ধ সুশ্রী মুখখানার পানে।না জানি আবার কবে এতোটা কাছ থেকে ভাইকে দেখবে সে।
“ অনি ভাইয়া! কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়? ওদিকে সবাই হয়তো খুঁজছে আমায়।”
উঠোন জুড়ে মানুষের বিচরণ। কেও কেও গানের তালে নাচছে আবার কেও কেও হয়তো খানাপিনায় মত্ত। এরই মধ্যে অনিক এসে কিছু না বলে হুট করে তাকে একপ্রকার টেনে নিয়ে চলে আসে বাড়ির ভেতরে। মেয়েটা সেই কখন থেকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে ছেলেটাকে কিন্তু ছেলেটা মুখ খুললে তো! রুহি এবার খেয়াল করলো অনিক তাকে ছাঁদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রাত বাজে ১১:৩০। এতো রাতে এমন করে ছাঁদের দিকে নিয়ে যাওয়ায় ভ্রুকুচকায় রুহি।আবারও জিজ্ঞেস করে,
“ ভাইয়া! এতো রাতে ছাঁদে কেন নিচ্ছো?”
অনিক থামলো এবার। রুহিকে ছাঁদের দরজার সামনে দাড় করিয়ে মিটমিট করে হাসছে ছেলেটা।রুহি ভড়কায়। ক্ষুদ্র চোখে অনিকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,
“ এমন মিটমিট করে হাসছো কেন তুমি? দেখো ভাইয়া প্লিজ মজা করো না।বলো না কেন এনেছো আমায়?”
অনিক হাত দেখিয়ে থামায় রুহিকে।হাসি হাসি মুখে শুধায়,
“ তোর জন্য ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ আছে বুড়ি।”
রুহি অবাক হয়।গলায় একরাশ অবাকের ছাপ ঢেলে বললো,
“ এই বিদঘুটে অন্ধকার ছাঁদে আবার কেমন সারপ্রাইজ? কই আমার তো চোখে পড়ছে না কিছু! ”
অনিক ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো।হাত দিয়ে মৃদু কপাল চাপড়িয়ে বললো,
“ ক্ষ্যামা দে বইন।এতো প্রশ্ন করলে কিভাবে বলবো বলতো? আমার কাজ শুধু এখান অবধি নিয়ে আসা ছিলো।বাকিটা যে দেবার সেই দিবে।”
অনিকের এহেন প্যাচালো কথায় আগা মাথা খুঁজে পেলো না বোকা রুহি। সে বোকা গলায় বললে,
“ মানে? কে দেবে?”
অনিক হাত বাড়িয়ে অদূরে ইশারা করে। রুহিও সেদিকে লক্ষ্য করে। কিন্তু নাহ! অন্ধকারে তেমন কিছুই পরিলক্ষিত হচ্ছে না মেয়েটার। রুহিও পাশ ফিরতে ফিরতে সন্দিহান গলায় শুধায়,
“ কিন্তু ওখানে তো কিছুই….”
কথাটা মাঝপথেই আটকে আসে মেয়েটার।পাশে
অনিক তো ধূর অনিকের টিকিটারও খোঁজ নেই।মেয়েটা এবার সত্যি ভয় পেলো।ভয়াতুর গলায় আশে-পাশে নজর বুলিয়ে ডাকলো,
“ অনি ভাইয়া! কোথায় গেলে? প্লিজ ফিরে এসো।আমার ভয় করছে। ”
নাহ! কোথাও কোন জবাব নেই।রুহি কাঁদো কাঁদো মুখে এদিক ওদিক তাকালো একবার। হুট করেই তার মনে হলো অদূরেই কেমন একটা লম্বা ছায়ার মতো কিছু একটা দাড়িয়ে। তৎক্ষনাৎ ভয়ে কেঁপে ওঠে মেয়েটা।শুষ্ক ঢোক গিলে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে,
“ কে ওখানে?”
ছায়ামূর্তিটা জবাব দিলো না।কিন্তু মিনিটের ব্যাবধানে ধীরে ধীরে সেটা এগিয়ে আসতে শুরু করে রুহির দিকে। যা দেখে মেয়েটার প্রাণপাখি বুঝি ফুড়ুৎ করে উড়ে যায় যায় অবস্থা। ভয়ে সর্বাঙ্গ জমে যায় মেয়েটার।শরীর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে ঘামের বিন্দুকনা। মেয়েটা পেছন ঘুরে দৌড়ে চলে যাবে ঠিক সে মুহূর্তেই কেও একজন তার হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।রুহি তৎক্ষনাৎ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে যাবে তার আগেই লোকটা তার মুখ চেপে ধরে। রুহি শুধু গোঙাতে থাকে। মেয়েটার গাল বেয়ে টুপ টুপ করে ঝড়ে পড়ছে অশ্রুধারা। সেই অশ্রুকণার তোপে লোকটার হাতটাও বুঝি ভিজে ওঠছে বারংবার। লোকটা এবার হকচকিয়ে ওঠে। তড়িৎ মেয়েটাকে নিজের দিকে ঘোরায় ছেলেটা।রুহির নিচু করে রাখা মুখখানা নিজের দু’হাতের আঁজলায় নিয়ে অস্থির গলায় বলতে লাগলো,
“ পাখি! এই, তাকাও আমার দিকে।প্লিজ কেঁদো না। ভুল হয়ে গেছে আমার।আর এমন করে ভয় দেখাবো না তোমায়! প্লিজ এবার কান্না থামাও।প্লিজ!”
পরিচিত কন্ঠ কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই ফট করে চোখ মেলে রুহি।চোখের সামনে রেহানকে দেখতে পেয়ে হুট করেই তার জমানো কান্না গুলো বুঝি ছিটকে বাইরে বেরিয়ে আসে। মেয়েটা দু’হাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে ওঠে। তা দেখে অস্থির হলো রেহান।বিচলিত গলায় বললো,
“ রুহি! জান আমার! প্লিজ কেঁদো না। দরকার হয় আমায় দুটো থাপ্পড় মারো।তবুও তুমি কেঁদো না। এই শুনছো?”
রুহি এবার কান্না থামিয়ে নাক টানে।রেহানের দিকে তাকিয়ে হুট করে ছেলেটার গায়ে আলতো হাতে চাপড়,কিল মারতে থাকে। রেহানও তাকে কোনরূপ বাঁধা না দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে থাকে।দৃষ্টি তার মেয়েটার মায়াভরা মুখটার দিকে। রুহি কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে থাকে,
“ খুব খারাপ আপনি! খুব খারাপ। আরেকটু হলেই তো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো আমার।”
ব্যস! এই কথাটা শেষ হবার আগেই তার হাতদুটো ফট করে ধরে ফেলে রেহান।চোখমুখ শক্ত করে তৎক্ষনাৎ মেয়েটাকে বুকে চেপে ধরে। হঠাৎ এমন হওয়ায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে রুহি।রেহানের বুকে কান পাততেই স্পষ্ট শুনতে পেলো ছেলেটার হৃদয়ের ধুকপুকানি। রেহান রুহিকে শক্ত করে চেপে ধরে গম্ভীর গলায় বললো,
“ চুপ! একদম চুপ! এই কথাটা আজকে বলেছো,আর দ্বিতীয় বার যেন তোমার মুখ থেকে এটা শুনতে নাহয় আমার।”
কি ছিলো ছেলেটার কন্ঠে? কেন কথাটা ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিলো রুহিকে? রুহি কি আদৌও টের পেলো রেহানের কন্ঠের কম্পন? বুঝলো ছেলেটার বিচলিত হওয়ার কারণ? হুম বুঝলো তো! বেশ বুঝলো মেয়েটা। রুহি আলতো হেসে নিজেও জড়িয়ে ধরে ছেলেটাকে।কিয়তক্ষন বাদে রেহানকে ছেড়ে দিয়ে তার দুগালে হাত রাখলো মেয়েটা।তারপর তার মুখটাকে নিচু করে কপালে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ একে দেয়।রেহান চোখবুঁজে অনুভব করলো সময়টা। রুহি সময় নিয়ে কপাল হতে ঠোঁট সরায়।রেহানের চোখে চোখ রেখে বললো,
“ আর বলবো না। এবার খুশি?”
রেহানও মৃদু হাসলো। রুহির দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো,
“ মারাত্মক সুন্দর লাগছে তোমায় শ্যামবতী!”
মেয়েটা লজ্জা পেলো খানিকটা। লজ্জালু মুখটা নামিয়ে ফেললো তৎক্ষনাৎ। চিবুক এসে ঠেকেছে গলার কাছে। রেহান তাকিয়ে দেখলো সবটা। পরক্ষণেই দুষ্ট হেসে বললো,
“ এভাবে লজ্জা পেয়ো না শ্যামবতী, আমার যে তখন লজ্জা ভাঙাতে ইচ্ছে করবে।”
শেষ! মেয়েটা এবার লজ্জায় কুন্ঠা যাওয়ার পথে। রেহান বুঝি বেশ উপভোগ করছে বিষয়টা।সে ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে রইলো রুহির দিকে। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললো,
“ এই শ্যামবতী! আমায় হলুদ লাগাবে না?”
রুহি আচমকা মুখ তুলে তাকায়। ভাবুক গলায় বললো,
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১৪
“ এখানে কোথায় পাবো?”
রেহান বুঝি এই কথাটারই অপেক্ষায় ছিলো। সে রুহির কথার প্রতিত্তোর না করে পকেট থেকে একট প্যাকেট বের করে। সেটা রুহির সামনে ধরে বললো,
“ নাও! এটা তোমার ছোঁয়া হলুদ। দাও,দাও আমায় নিজ হাতে লাগিয়ে দাও।”
রেহানের কথায় বেশ অবাক হলো মেয়েটা। তবুও কিছু না বলে প্যাকেট খুলে একটু একটু করে হলুদ ছোঁয়াতে থাকে রেহানের গালে।আর রেহান? সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিজের প্রেয়সীর পানে।