সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩২
Jannatul Firdaus Mithila
অরিন ছলছল চোখে চেয়ে রইলো রৌদ্রের পানে।খানিকক্ষণ বাদে ফুপিয়ে ওঠে মেয়েটা।রৌদ্র তড়িঘড়ি করে অরিনের চোয়াল ছেড়ে দেয়। পরক্ষনেই চোখ বন্ধ করে, ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ফেলে রাগ সংবরণের চেষ্টা চালায় সে।কিয়তক্ষন বাদে কোনরকমে নিজেকে স্বাভাবিক করে মেয়েটার দিকে তাকায় রৌদ্র। অরিনের কাঁদো কাঁদো মুখখানা নিজের দু’হাতের আজলায় নিয়ে আদুরে স্বরে বলতে লাগলো,
“ সরি না জানবাচ্চা! ভুল হয়ে গেছে। আর বকবো না তোমায়।এবার আর কেঁদো না বউজান!”
রৌদ্রের মুখে এরুপ আদুরে কথাবার্তা শুনে অরিনের সকল মান-অভিমানগুলো এই বুঝি চুলোয় গেলো!মেয়েটা এবার আরেকটু আহ্লাদী হলো।ঝট করে রৌদ্রের হাতদুটো সরিয়ে দিয়ে নাক টেনে টেনে বললো,
“ ছোঁবেন না আমায়! আপনি একটা….”
“ আমি একটা কি বউজান?”
অরিনের কথার মাঝেই রৌদ্র শান্ত কন্ঠে কথাটা বললো।অরিন আবারও গাল ফোলায়।নাক টেনে দৃষ্টি ফেলে জানালার বাইরে। তা দেখে রৌদ্র স্মিত হাসলো।একহাত বাড়িয়ে অরিনের কোমর চেপে তাকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।অরিন কোনরূপ নড়াচড়া করলোনা। সে মাথানিচু করে বসে রইলো রৌদ্রের কোলে।রৌদ্র মেয়েটার দিকে নিখাঁদ দৃষ্টিতে তাকায়।এ মুহুর্তে অরিনের রক্তাভ আভায় ছেয়ে যাওয়া গালদুটো বড্ড টানছে রৌদ্রকে।তারওপর সরু নাকের পাটাটাও কেমন লাল টুকটুক হয়ে আছে কান্নার ফলে! দুধে আলতা গায়ের রং কি-না, একটু ছোঁয়া লাগলেই বুঝি লাল হয়ে গেলো! অরিনের চোখদুটোও বুঝি আজকে কেমন ঘোষণাহীন যুদ্ধে নেমেছে! মেয়েটার ঘন পল্লবিত আঁখিযুগলে আজ চিকন করে কাজল টানা।তার পাতায় আবার সরু রেখার আইলাইনার!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ব্যস! এটুকুই যেন যথেষ্ট রৌদ্রকে পাগল করে দেওয়ার জন্য! এতক্ষণের রাগের তোপে মেয়েটার দিকে ঠিকঠাক মতো তাকায়নি অবধি রৌদ্র। তাকালে হয়তো এতো রাগ দেখানোর সাহস কিংবা ইচ্ছে কোনোটাই পেতো না সে।
রৌদ্র আলতো হাতে অরিনের গালের ওপর এসে আছড়ে পড়া অবাধ্য চুলগুলোকে কানের পিঠে গুঁজে দেয়।তারপর টুপ করে চুমু দিয়ে বসে মেয়েটার ফোলা ফোলা গালদুটোতে।অরিন তবুও কোনরূপ ভ্রুক্ষেপ করলোনা এসবে।সে এখনো একইরকম মাথানিচু করে বসে রইলো। রৌদ্র অরিনের বাম-গালে আলতো করে আঙুল স্লাইড করতে করতে বলে,
“ কি যেন বলছিলে বউজান? তুমি বলো,আমি শুনছি! নাউ ইউ কেন স্টার্ট ইট এগেইন!”
অরিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবারও নাক টানে।রৌদ্র তখন নিজের পকেট থেকে রুমালটা বের করে এগিয়ে দেয় অরিনের দিকে। অরিন একবার আড়চোখে তাকালো রৌদ্রের হাতের দিকে।পরক্ষণেই মনে মনে মুখ ভেংচায় সে।
— এতক্ষণ বকাঝকা করে, এখন কি-না আসছে আদর দেখাতে? হুহ্ ঢং যত্তসব!
অরিনের কোনরূপ হেলদোল না দেখে রৌদ্র এবার দুষ্ট হাসলো।সে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে পাদুটো আরেকটু মেলে বসে।অরিনের কোমর চেপে তাকে আরও খানিকটা কাছে নিয়ে আসে।অরিন এখনও নিশ্চুপ!
রৌদ্র আর কোনো ভনিতা ছাড়াই গা থেকে পাঞ্জাবিটা খুলতে শুরু করে।অরিন হকচকিয়ে ওঠে এহেন কার্যক্রমে।সে শুষ্ক ফাঁকা ঢোক গিলে মিনমিনে সুরে বলে,
“ আপনি পাঞ্জাবি খুলছেন কেনো?”
রৌদ্রের হাত তখনো ব্যস্ত পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে।অরিনের মিনমিনিয়ে বলা কথাটা শুনে মনে মনে বাঁকা হাসে ছেলেটা।ভাবলেশহীন গলায় জবাব দেয়,
“ উফফ! গরম লাগছে ভিষণ! একটুখানি স্বস্তি প্রয়োজন।”
রৌদ্রের এহেন কথায় আবারও ঢোক গিলে অরিন।মনে মনে ভাবে,
— লোকটা কি বোকা? সে কি জানেনা, তাকে এভাবে শার্টলেস দেখলে তার যেন কেমন কেমন লাগে! মনের ভেতর কিসব আজগুবি চিন্তাভাবনা এসে ভর করে তার।পেটের ভেতর অনুভব হয় হাজারো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানো! উহু! নাহ, এসব তো আর সহ্য করা যায় না।বদ লোকটা নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে তাকে জ্বালাচ্ছে।
ভাবনা শেষে অরিন খানিকটা গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে।ততক্ষণে রৌদ্রের পাঞ্জাবির সবগুলো বোতাম খোলা শেষ। ছেলেটা বোধহয় ইচ্ছে করে পাঞ্জাবি কেমন হা করে খুলে রেখেছে। অরিন সেদিকে তাকাবে না, তাকাবে না করেও তাকালো।এ মুহূর্তে তার বেহায়া চোখদুটোকে কেও যদি আলটিমেটাম দিয়েও রাখতো, তারপরও হয়তো বেহায়াগুলো তাকাতোই!
আবার এ তাকানো কি যেই সেই তাকানো? এ তাকানোতো রীতিমতো চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া!
রৌদ্রের উম্মুক্ত বক্ষের ওপর স্পষ্ট বিন্দু বিন্দু ঘাম। সেখান থেকে দুয়েকটা ঘাম বুঝি গড়িয়ে পড়লো নাভির দিকে।অরিন শুষ্ক ঢোক গিলে। নিজের বেহায়া চোখদুটোকে একপ্রকার টেনেহিঁচড়েও কাজ হচ্ছে না তেমন!সে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে আছে তার সামনে থাকা সুদর্শন যুবকের দিকে।
রৌদ্র বাঁকা চোখে অরিনের তাকায়।মেয়েটার মুখাবয়বে স্পষ্ট তার ভেতরকার অনুভুতির জোয়ার! রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসে।সে তো জানতোই এমনটা হবে! তাইতো ইচ্ছে করেই মেয়েটাকে জ্বালাতন করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া তার। রৌদ্র এবার মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। অরিন তৎক্ষনাৎ হকচকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় রৌদ্রের উম্মুক্ত বক্ষের ওপর থেকে। রৌদ্র খানিকটা নড়েচড়ে বসে। হাত বাড়িয়ে পাঞ্জাবিটা গা থেকে টান দিয়ে খুলে ফেলে তৎক্ষনাৎ। পরক্ষণেই সেটা পাশে রেখে দুহাত ছড়িয়ে মেকি আড়মোড়া ভাঙ্গে।
আড়মোড়া ভাঙ্গার মাঝেই আড়চোখে খেয়াল করে মেয়েটার দিকে। মেয়েটা কেমন ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।রৌদ্র এবার দুহাত ছড়িয়ে গা এলিয়ে বসে সিটে।ভাব এমন — সে বুঝি মেয়েটাকে আরেকটু সুযোগ করে দিলো তাকে পূর্ণ নিরীক্ষন করার।
অরিন যেন দিন-দুনিয়া ভুলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। রৌদ্রের বুকটা যথেষ্ট প্রশস্ত, হালকা ঘাম জমে আছে বুকের উপর। চওড়া কাঁধ আর সেগুলোর ওপর থেকে নেমে আসা পেশিবহুল বাহু।
বোঝাই যাচ্ছে — ছেলেটা বুঝি বেশ হেলথ কন্সাশ!
তার ফুলেফেঁপে থাকা বাইসেপসগুলো হালকা নড়লেই কেমন তীক্ষ্ণভাবে ফুটে ওঠছে।অরিনের বেশ ইচ্ছে করলো, একটুখানি ছুয়ে দিতে সেথায়।কিন্তু মনের এহেন লাগামহীন ইচ্ছে আর পূরণ হলো কই? তার হাতদুটো বুঝি জমে গিয়েছে হুট করে।
রৌদ্রের মেদহীন পেট— সেথায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ছয়টি শক্ত পেশির রেখা যেন কোনো মার্বেল আর্ট। ভি-লাইনটা নিচের দিকে নামতে নামতে একরকম নিষিদ্ধ কৌতূহল জাগাচ্ছে অরিনের মনে।অরিন বারবার শুকনো ঢোক গিলে। ইশশ্ গলাটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার। এই প্রথম তার স্বামী নামক পুরুষটাকে সে এতোটা কাছ থেকে নিরীক্ষণ করলো।আর এতেই যেন ঘোর বিপত্তি বাঁধলো তার।এখন কেমন নিজেকে এলোমেলো ঠেকছে। বারবার মনে জাগছে এক নাম না-জানা অনুভুতির ঢেউ। কি হচ্ছে তার সাথে? কেনো এমন লাগছে হুট করে? অরিনের দুচোখ বুজে আসে।সে শরীর ছেড়ে দেয় নিজের। রৌদ্রের কোল থেকে ঢুলে পড়তে নিলেই তাকে বাহুডোরে আঁকড়ে ধরে রৌদ্র। মেয়েটাকে বুকে নিয়ে অস্থির গলায় বলতে থাকে,
“ সানশাইন! এই সানশাইন…. শুনছিস? কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বউ? এই…কথা বল না!”
অরিনের গালে একের পর এক আলতো চাপড় মেরেও কাজ হচ্ছে না তেমন।রৌদ্র আরও কিছুটা অস্থির হলো।অরিনকে হালকা ঝাঁকুনি দিতেই মেয়েটা পিটপিট করে চোখ মেলে।রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে,
“ আপনি একটা… আস্তো গিরগিটি! ক্ষনে ক্ষনে নিজের রং বদলান।এই ভালো তো এই খারাপ।”
রৌদ্র ভ্রুকুটি করে। গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে,
“ তুই এতক্ষণ ইচ্ছে করে চোখ বন্ধ করেছিলি?”
অরিন মাথা উপর-নিচ ঝাকায়।রৌদ্রের মেজাজ খারাপ হয়।সে অরিনের দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“এত্তো পাজিঁ তুই? আমায় না জ্বালালে ভাল্লাগেনা তোর? আরেকটু হলেই তো হার্ট অ্যাটাক করে বসতাম আমি!”
অরিন আঁতকে ওঠে।তৎক্ষনাৎ একহাতে জড়িয়ে ধরে রৌদ্রকে।কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
“ এমনটা বলবেন না ডাক্তার সাহেব! আমি শুধু… মজা করছিলাম আপনার সাথে! প্লিজ..এরম কথা আর কখনো মুখে আনবেন না।”
অরিন ফোপাঁতে থাকে।রৌদ্র মেয়েটাকে আরেকটু আগলে নেয় নিজের বাহুডোরে।নিজের ভুলগুলো বুঝতে পেরে খানিকটা অপরাধবোধ জেগে ওঠে ভেতর ভেতর।অরিনের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বলে,
“ সরি বউজান! আর কক্ষনো বকবো না তোমায়।আই প্রমিস, একটুও বকবো না তোমায়। এইবার কান্না থামিয়ে একটু হাসি দাও প্লিজ!”
অরিন ধীরে ধীরে মাথা তোলে।রৌদ্রের দিকে ছলছল চোখজোড়া তাক করে মোটা কন্ঠে বলে,
“ আপনি ভিষণ পঁচা… ভিষণ রকমের পঁচা লোক।আমি রাগ করেছি আপনার সাথে, কই আপনি আমার রাগ ভাঙাবেন তা না করে উল্টো বকেই যাচ্ছেন আমায়! হুহ্! এখন আবার আসছেন এসব মিষ্টি কথা বলতে?”
রৌদ্র মনোযোগ দিয়ে অভিমানিনীর অভিযোগ শুনলো।পরক্ষণেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি টেনে অরিনের গালে হাত রাখলো।নরম গলায় বললো,
“ তাই?….তা আর কি কি অভিযোগ আছে শুনি?”
অরিন মুখ ভেংচি কাটে। তা দেখে রৌদ্র কেমন খিলখিল করে হেসে ওঠে। অরিন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো সেই খিলখিল হাসির দিকে।রৌদ্র হাসতে হাসতেই বললো,
“ বউ! কি ছিলো এটা? দারুণ লাগলো তো!আরেকবার করবা একটু?”
“ কি দরকার?”
“ এমনিতেই করো না!”
অরিন মুখ ভেংচি দেয় আবারও। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ চুমু খেয়ে বসে মেয়েটার ফোলা গালদুটোতে।অরিন সরু চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
“ একটুখানি সুযোগও মিস করতে ইচ্ছে করেনা তাই-না? ”
রৌদ্র বাধ্যের ন্যায় মাথা নাড়ায়। ঠোঁট কামড়ে মেয়েটার গোলাপি অধর জোড়ার দিকে দৃষ্টি রেখে হাস্কি স্বরে বলে,
“ বিয়ে করা স্বত্বেও ভার্জিন আমি!এত্তো কিউট একটা বাচ্চা বউকে কাছে পাইনা মোটেও। তাইতো যখনি বউকে একটু-আধটু কাছে পাই,একটুর জন্যেও সুযোগ মিস করিনা আমি। তাছাড়া, আ’ম আ পাংচুয়াল ম্যান বেইব, সময়ের কাজ সময়েই করতে পছন্দ করি!”
অরিন ফিক করে হেসে দেয়। রৌদ্রের দিকে খানিকটা এগোতেই হুট করে বাজখাঁই শব্দ তুলে রৌদ্রের ফোনটা বেজে ওঠে পকেটে। রৌদ্র বুঝি বিরক্ত হলো খানিকটা। এমন একটা মুহূর্তে কল আসাটা নিতান্তই বিরক্তের কারণ বৈকি! রৌদ্র বিরক্ত নিয়ে ফোনটা বের করে পকেট থেকে। ফোনটা সামনে আনতেই দেখা যায় — সেখানে স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে তার বাবার নাম্বার। রৌদ্র অরিনকে শান্ত থাকতে বলে ফোনটা রিসিভ করে কানে ঠেকায়।গলায় মৃদু খাঁকারি দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
— আসসালামু আলাইকুম!
— কোথায় তুমি?
— এইতো বাড়ির বাইরে।কেনো কিছু বলবে?
ওপাশ থেকে তৎক্ষনাৎ জবাব আসেনি।খানিকক্ষণ সময় বাদে শোনা গেলো কবির সাহেবের গম্ভীর কণ্ঠধ্বনি। রৌদ্রও মনোযোগ দিয়ে শুনছে বাবার কথা।
অরিন বসে আছে একমনে। হয়তো অপেক্ষা করছে রৌদ্রের কথা শেষ হবার।করার মতো কিছু না পেয়ে সে ঠোঁট উল্টে রৌদ্রের গলার কাছের আডামস এপেলটা আলতো হাতে ছুয়ে দিলো।তারপর ধীরে আঙুল বুলাতে লাগলো সেথায়।রৌদ্র তৎক্ষনাৎ চেপে ধরে অরিনের হাত।মোবাইল কানে রেখেই নিঃশব্দে বোঝায় — এমনটা না করতে।তক্ষুনি অরিনের মাথায় হুট করে এক দুষ্ট বুদ্ধি আসে।সে কেমন দুষ্ট হাসলো। রৌদ্রের অন্য কানে ফিসফিস করে বললো,
“ আমায় আটকাবেন না ডাক্তার সাহেব! নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার দিয়ে জানিয়ে দিবো, আমি আপনার সাথেই আছি।”
রৌদ্র ভ্রু কুঁচকায়।মেয়েটার দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো পরবর্তী পদক্ষেপ বোঝার জন্য। অরিন তখন বাঁকা হেসে রৌদ্রের অন্যহাত নিজের কোমরে চেপে ধরে। তারপর ইচ্ছে করেই খানিকটা নড়েচড়ে বসে রৌদ্রের কোলে।রৌদ্র তৎক্ষনাৎ অস্ফুট স্বরে বললো,
“ উফফ!”
তক্ষুনি ওপাশে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান কবির সাহেব।সন্দিহান গলায় ছেলেকে বললেন,
“ কি বললে?”
জিভ কাটে রৌদ্র। অরিনের দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলে উঠে,
“ না… মানে..এমনি। তুমি বলো আঙ্কেল আর কি কি যেন বলেছিল? ”
অরিন নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছে। রৌদ্রের কটমট দৃষ্টিতেও বুঝি একবিন্দু ভয় পেলো না মেয়েটা।সে রৌদ্রকে আরেকটু জ্বালাতে তার এডামস আপেল বরাবর ঠোঁট ছোঁয়ায়।রৌদ্র সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নেয়।ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের। অরিনের কোমরে থাকা তার হাতটা আরেকটু চেপে ধরে সে।এতেও কোনো হেলদোল নেই মেয়েটার।অরিন থামলো না এবার।সে নিজের মিষ্টি জ্বালাতন গুলো চালিয়ে গেলো নিজের মতো।
অরিন ধীরে ধীরে নিজের আঙুল নামিয়ে আনে রৌদ্রের উম্মুক্ত কলারবোনের দিকে।সেখানটায় কিছুক্ষণ স্লাইড করতে করতে ছেলেটার মুখপানে তাকায়।দেখতে পায় — রৌদ্রের শান্ত দৃষ্টি যা কি-না তার দিকেই তাক করে রাখা।অরিন মুচকি হাসলো।আস্তে করে নিজের নাক ঘষে দিলো রৌদ্রের উম্মুক্ত বক্ষে। রৌদ্রের মুখ থেকে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে আসে,
“ উমমম!”
— এই ছেলে! কি বলছো তুমি?”
ওপাশ থেকে ভেসে আসা কবির সাহেবের ঝাঁঝালো কণ্ঠে মৃদু শব্দে কেশে উঠে রৌদ্র। অরিনের দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“ ইয়ে.. মানে কিছুনা আব্বু! তুৃমি কি যেন বলছিলে?”
— সেটা কি আর তুমি ঠিকঠাক শুনছো?
রৌদ্র প্রতিত্তোরে গম্ভীর গলায় বললো,
“ জ্বি! ”
অরিন এবার ক্ষুদ্র চোখে তাকায় রৌদ্রের দিকে।ছেলেটার ঘাড়ের কাছে মুখ গুঁজে নাক ঘষলো আবারও। রৌদ্র খপ করে চেপে ধরে অরিনের ঘাড়।তাতেও বাঁধ মানলোনা অরিন।সে তক্ষুনি ছেলেটার ঘাড়ের ওপর দাঁত বসিয়ে দেয় জোরালো ভাবে। রৌদ্র ককিয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে। অস্ফুটে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
“ আউচ!”
ওপাশ থেকে কবির সাহেব ভড়কালেন। ফোনটা একবার সামনে এনে ফের কানে ঠেকালেন।মৃদু ধমকে বললেন,
“ কি হয়েছে আবার? হুটহাট এসব কি বলছো তুমি? আর আছোই বা কোথায়? আমায় বলো আমি আসছি!”
“ এই না.না.. আসলে আব্বু তেমন কিছু হয়নি।”
“ তাহলে এমন চেঁচালে কেনো?”
“ একচুয়েলি… পিপড়া কামড় দিয়েছে!বড় পিঁপড়া! ”
কথা বলার একফাঁকে অরিনের দিকে তাকায় রৌদ্র। মেয়েটা কেমন হেসে কুটোকুটি খাচ্ছে। রৌদ্র সরু চোখে তাকিয়ে রইলো।ইশারায় বোঝালো— একবার খালি কথাটা শেষ হোক।তারপর মজা বোঝাবো!তা দেখে অরিন মুখ ভেংচায়।রৌদ্রের উম্মুক্ত শরীরে অনবরত নিজের আঙুল স্লাইড করতে থাকে। ছেলেটার এহেন ভাবভঙ্গিতে বড্ড শান্তি লাগছে তার।এতক্ষণ তো বেশ কথা শুনিয়েছে তাকে, এবার নাহয় ঠেলা সামলাক!
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩১
রৌদ্র আর কিছুক্ষণ পর কথা শেষ করে ফোনটা কেটে দিয়ে সামনের সিটে একপ্রকার ছুড়ে ফেললো।অরিন ভড়কে যায় এমন কান্ডে।কিছু বুঝে উঠবে তার আগেই মেয়েটাকে হেঁচকা টানে নিজের কাছে টেনে এনে অদ্ভুত শান্ত কন্ঠে রৌদ্র বললো,
“ বাসর করার শখ জাগছে বউজান? আমি এবার কন্ট্রোললেস হলে সামলাতে পারবেন তো আপনি?”