সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩৩
Jannatul Firdaus Mithila
“ বাসর করার শখ জাগছে বউজান? আমি এবার কন্ট্রোললেস হলে সামলাতে পারবেন তো আপনি?”
অরিন ভড়কায়।পরপর শুষ্ক ঢোক গিলে কয়েকটা। আমতা আমতা করে বললো,
“ ইয়ে…না মানে…”
রৌদ্র তার কথার মাঝেই ফোড়ন কেটে বলে উঠে,
“ এখন এমন আমতা আমতা করছো কেন? এতক্ষণ তো বেশ জ্বালালে আমায়!তখন মনে ছিলোনা এর পরিনতি কি হবে?”
অরিন হতবুদ্ধির ন্যায় মাথা নাড়াতে গিয়েও থেমে যায়। রৌদ্রের দিকে নিষ্পাপ চাহনি দিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,
“ সরি!”
রৌদ্র মেয়েটার নিষ্পাপ চাহনির দিকে তাকিয়ে রইলো অনিমেষ চোখে। এমন চাহনিতে বরাবরই কুপোকাত হয় ছেলেটা।আজকেও যে তার ব্যাতিক্রম ঘটলো না। সে অরিনের মুখটা আলতো হাতে চেপে ধরে উঁচুতে তোলে।গলায় অন্যরকম মাদকতা মিশিয়ে বলে,
“ আই ডোন্ট নিড ইউর দিস কাইন্ড অফ সরি!”
অরিন বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে।হয়তো বুঝতে চেষ্টা চালাচ্ছে রৌদ্রের কথার ভাবার্থ। রৌদ্র মুচকি হাসলো। ভ্রু উঁচিয়ে বাঁকা চোখে তাকালো মেয়েটার দিকে।ঠোঁট গোল করে চুমুর ভঙ্গিমা দেখিয়ে দুষ্টু কন্ঠে বলে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ কাম বেইব! আই ওয়ান্না টেস্ট ইউ!”
অরিন চোখ বড়সড় করে তাকায়।তৎক্ষনাৎ একহাতে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে সে।ডানে-বায়ে পরপর মাথা নাড়িয়ে বলে,
“ একদম না! দূরে সরুন আপনি!”
রৌদ্র শুনলো না মেয়েটার বারন।সে জোর করে অরিনের ঠোঁটের ওপর চেপে রাখা হাতটা সরায়।তারপর নিজের সম্পূর্ন মনোযোগ মেয়েটার গোলাপি অধরজোড়ার ওপর নিবদ্ধ রেখে মোহগ্রস্তের ন্যায় বলল,
“ এমন করেনা সানশাইন! একটুই তো।”
অরিন ফের মাথা নাড়ে।বলে,
“ উহু! কোনো একটু-আধটু না। এখন আর এসব কিচ্ছু করবেন না আপনি।”
রৌদ্র এবার ভ্রু কুচকায়।মেয়েটার কোমরে মৃদু চাপ দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“ কি সমস্যা তোর? আটকাচ্ছিস কেন আমায়?”
অরিন মাথানিচু করে নেয়।মিনমিনে স্বরে বলল,
“ আপনি.. আপনি শুধু কামড় দেন…ব্যাথা লাগে আমার!”
রৌদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো নিঃশব্দে। অরিনের মুখপানে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষণ। তারপর মেয়েটার নুয়ে রাখা মাথাটা বুকে চেপে ধরলো আলতো করে। অরিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“ তোকে ডিপলি চুমু না দিলে ফিল করতে পারিনা সানশাইন! তাছাড়া…. ”
প্রথম কথাটা কর্নপাত হতেই লজ্জায় কানদুটো ঝা ঝা করে উঠে অরিনের। কিন্তু রৌদ্রের বলা পরবর্তী কথাটা সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় খানিকটা কৌতুহলী হয়ে উঠে মেয়েটা।সে মাথা উঁচু করে কৌতুহলী চোখে তাকালো রৌদ্রের দিকে।থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলো,
“ তাছাড়া? ”
রৌদ্র দুষ্ট হাসে। অরিনের নিচের ঠোঁটটায় নিজের বুড়ো আঙুল স্লাইড করতে লাগলো।এহেন স্পর্শে কেঁপে ওঠে অরিন।চোখদুটো আপনাআপনি বন্ধ হয়ে আসে তার।কিয়তক্ষন বাদেই তার কর্ণকুহরে পৌছায় রৌদ্রের বলা লাগামহীন কথা!
“ তাছাড়া, তোমায় কাছে পেলে নিজের ওপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি বউজান! আর আমার কিন্তু একটু রাফ টাইপ আদরই পছন্দ!”
অরিন চোখ বন্ধ রেখেই আরেকদফা কেঁপে ওঠে। ছিঃ ছিঃ কিসব নির্লজ্জ কথাবার্তা এই লোকের! এহেন কথার পরিপ্রেক্ষিতে গালদুটোতে তার লালিমা ছড়িয়েছে বহু আগেই! রৌদ্র মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইলো তার প্রাণভোমরার দিকে।হুট করে তার কি হলো কে জানে! মেয়েটার তিরতির করে কাঁপতে থাকা অধরযুগলে তাকিয়ে থেকে জিভ দিয়ে নিজের শুষ্ক ঠোঁট দুটি ভিজিয়ে নেয় ছেলেটা। কেন যেন এ মুহুর্তে নিজেকে এক তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় লাগছে রৌদ্রের।গলাটা কেমন খা খা করছে শুষ্কতায়।রৌদ্র আলতো হাতে মেয়েটার কোমর টেনে তাকে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে।অরিনের চোখ এখনও বন্ধ। এই উম্মাদ মানুষটার চোখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা আছে তার? মরে যাবে না সে! রৌদ্র অরিনের হাতদুটো নিজের ঘাড়ের ওপর রাখে।মেয়েটাকে নিজের উম্মুক্ত বক্ষের সঙ্গে চেপে ধরে কপালে কপাল ঠেকায়।তারপর হাস্কি স্বরে বলে,
“ এখন থেকে অভ্যাস গড়ে নে জান! ধীরে ধীরে সয়ে যাবে সবটা!”
কথাটা বলতে দেরি, পাগল ছেলেটা অরিনের নরম ওষ্ঠপুটে নিজের দখলদারি চালাতে দেরি করলো না।মেয়েটার ওষ্ঠপুট নিজের ওষ্ঠপুটের মাঝে গভীর আশ্লেষে টেনে নিচ্ছে সে।ব্যস্ত হলো প্রেয়সীর অধরসুধাপানে।ছেলেটার ভাব এমন,কোনো তৃষ্ণার্ত পথিক বুঝি একটুখানি তৃষ্ণা নিবারনের সুযোগ পেলো।তার বেহায়া হাতদুটোর বিচরণ মেয়েটার সমগ্র পিঠ জুড়ে। অরিন প্রথম প্রথম সায় না দিলেও এখন বুঝি নিজেকেই আটকাতে পারছে না সে।সেও সায় জানাচ্ছে ছেলেটার সাথে। অরিন একহাতে শক্ত করে চেপে ধরে রৌদ্রের মাথার পেছনের চুল।অন্যহাতে ধীরে ধীরে স্লাইড করতে থাকে ছেলেটার উম্মুক্ত বক্ষে। আজ বুঝি রৌদ্রকে পুরোপুরি উম্মাদ করতে উঠেপড়ে লেগেছে মেয়েটা।রৌদ্র অরিনের এহেন স্পর্শে আরেকটু গভীরভাবে নিজের ওষ্ঠপুটের কাজ চালায়।নিজের বাঁধ ভাঙা উন্মাদনার খানিকটা চাপ ফেলে মেয়েটার নরম ওষ্ঠপুটে।অরিনের হাত ধীরে ধীরে রৌদ্রের বক্ষবন্ধনী ছেড়ে পেট অবধি পৌঁছায়।তারপর আরও কিছুটা নিচে পৌঁছাতে লাগলেই রৌদ্র অরিনের ঠোঁট ছেড়ে দেয়। মেয়েটার চুলগুলো মুষ্ঠিতে পুরে নিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
“ এমনটা করিস না সানশাইন! আই সয়্যার,কিছু একটা হয়ে যাবে এখনি!”
অরিনের চোখ বুঝি আজ এক ভিন্ন রুপে সাজিয়েছে নিজেদের। সেথায় নেই কোনো অস্থিরতা কিংবা ভয়।আছে কেবল মাত্র মুগ্ধতা। অরিন নিজ থেকে জড়িয়ে ধরে রৌদ্রকে।রৌদ্রও শক্ত করে চেপে ধরে অরিনকে।দুজনেই বেশ হাঁপাচ্ছে। একে-অপরের হৃদয়ের ধুকপুকানি স্পষ্ট টের পাচ্ছে তারা।মুখে কিছু না বললেও, নিজেদের মধ্যকার নিরবতা যেন অনেককিছুই বলে দিচ্ছে। অরিন রৌদ্রের ঘাড়ে আলতো করে হাত রাখে।ছেলেটাকে আদুরে কন্ঠে বলে,
“ ভালোবাসি!”
রৌদ্র মেয়েটাকে আরেকটু চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে,
“ আমিও ভালোবাসি আমার সানশাইনকে!”
একে একে রেহান আর রৌদ্রের গাড়ি এসে দাড়ায় এহসান বাড়ির আঙিনায়। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা ঘন্টা দুয়েক আগেই পৌঁছেছে বাড়িতে। কেননা মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে বরণ করারও তো একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে তাই-না? রৌদ্র,তাশরিক সাহেব আর অনিক থেকে গিয়েছিল রেহান আর রুহিকে আনতে।অরিনকে তখন বাদবাকি সবার সাথেই পাঠিয়ে দিয়েছিল রৌদ্র।
রেহান-রুহি এগিয়ে আসে বাড়ির দরজার সামনে। সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বাড়ির চার গৃহবধূ। জুবাইদা বেগম দাঁড়িয়ে দুয়েকটা সূরা পড়ে মেয়ে-জামাতার গায়ে ফু দিলেন।তারপর সহাস্য মুখে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন তাদের। রেহান-রুহিসহ বাকিরাও ঢুকে ভেতরে।রেহানকে ভেতরে আনতেই শুরু হলো আপ্যায়নের ঝড়! বাড়ির চার বধূ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ছেলেটার আপ্যায়নে।মিনিট খানেকের মধ্যেই ড্রয়িং রুমের সোফা-টেবিলের ওপরটা সাজিয়ে ফেললেন হরেকরকমের মিষ্টান্ন, নাশতা দিয়ে। রেহান শাশুড়ীদের এহেন কার্যক্রমে বিনম্র হাসলো।
কই সে ভেবেছিলাে এসেই আগে বউকে নিয়ে ঘরের দোর দিবে, কিন্তু তা না-হয়ে হলো তার উল্টোটা।রেহানকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে রাফিয়া বেগম বললেন,
“ রেহান! বাবা খাচ্ছো না কেন? খাবার ভালো হয়নি?”
রেহান মাথা নাড়ায়।বলে,
“ না না আন্টি…তেমন কিছু না।”
পাশে দাড়িয়ে থাকা মাইমুনা বেগম বলেন,
“ তাহলে নিচ্ছো না যে বাবা!”
“ জ্বি নিচ্ছি! ”
বলেই সে হাত বাড়িয়ে একটা মিষ্টির প্লেট নিতেই জুবাইদা বেগম এগিয়ে এলেন।মমতাময়ী কন্ঠে বললেন,
“ একি! শুধু এটুকু নিলেই হবে না-কি? দাঁড়াও আমি দিচ্ছি! ”
বলেই তিনি মেয়ের জামাইয়ের পাতে একে একে সব-কয়টা পদ থেকে দু-তিনটে করে মিষ্টি উঠিয়ে দিলেন।রেহান হতবাক হয়ে দেখছে শাশুড়ীর কান্ড।তার হাতের প্লেটটা ইতোমধ্যেই স্তুপ আকার ধারণ করেছে। তবুও মমতাময়ী শাশুড়ীতো থামার নামই নিচ্ছেন না।রেহান বেচারা বারবার বলে যাচ্ছে,
“ হয়েছে, আম্মু… আর দিতে হবে না।”
অথচ কে শোনে কার কথা! শাশুড়ী চারজন মিলে বুঝি এখনি ছেলেটাকে খাইয়ে খাইয়ে কুপোকাত করে ছাড়বে।রেহান ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে।
আড়চোখে রুহির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো — মেয়েটা মুখ টিপে হাসছে। হয়তো বেচারার এমন অসহায়ত্বে বেশ মজা পাচ্ছে সে।রেহান একবার চোখ গরম করলো।কিন্তু এতেও বুঝি থামলোনা মেয়েটা।সে-তো নিজের মতই হেসে যাচ্ছে। রেহান নিজের অবস্থা বেগতিক দেখে মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে।মুখে চমৎকার হাসি টেনে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“ ধন্যবাদ আপনাদের। কিন্তু এতো খাবার আমি একা খাবো না।আমার শালিকা,সম্বন্ধিদের ডাকুন।তাদের সঙ্গে বসে একসঙ্গে নাহয় খাবারটা খাওয়া যাক!”
রেহানের মুখের এহেন বাক্যে সকলেই মুগ্ধ হাসলেন। রাইসা বেগম হেসে পা বাড়ালেন সবাইকে ডাকতে। কিন্তু মাঝপথেই থামলেন তিনি।ছেলেমেয়ে গুলো নিজে থেকেই ঘিরে বসলো রেহানকে।অরিন গিয়ে বসলো রুহির পাশ ঘেঁষে। আহি-মাহি আর রিমি বসলো পাশের সোফায়। অনিক বসলো তাদের সোফার হ্যান্ডেলে।সে আগে থেকেই পায়েসের বাটি নিয়ে গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে। পায়েসটা আবার বড় পছন্দের ছেলেটার।রৌদ্র এগিয়ে এসে রেহানের প্লেট থেকে একটা বরফি উঠিয়ে রেহানের মুখে দেয়।মৃদু হেসে বলে,
“ ওয়েলকাম দুলাভাই!”
খাবারটা মুখে নিয়েই হালকা কেশে উঠে রেহান।রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“ হু হু, থ্যাংকস!”
বলেই একগ্লাস ঠান্ডা পানি উঠিয়ে গটগট করে গিলে ফেললো রেহান।তারপর সময়টা কাটলো সকলের আদর-আপ্যায়নে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে। ধরণীতে এখন কেমন মৃদু মন্দ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব।হয়তো শেষ রাতে বৃষ্টি নামবে।রৌদ্র খালি গায়ে বেরুলো ওয়াশরুম থেকে।
মাত্রই গোসল শেষ হলো তার।একহাত দিয়ে চুলগুলো মুছছে কোনরকম।তখনি দরজার কাছ থেকে ভেসে আসে রেহানের ডাক!
“ আসতে পারি সম্বন্ধি মশাই?”
রৌদ্র হাত থেকে টাওয়েলটা নামিয়ে পেছনে ঘুরে। ভ্রূদ্বয়ের মাঝে দুয়েকটা ভাজ ফেলে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“ তুই আবার এতোটা ফরমালিটি মানতে শুরু করলি কবে থেকে?”
রেহান স্মিত হাসলো। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“ শত হলেও তুই এখন আমার সম্বন্ধি! তাই একটু ফরমালিটি মানছি আরকি!”
রৌদ্র আগের ন্যায় মুখভঙ্গি রেখে হাতে থাকা টাওয়েলটা রেহানের দিকে ছুড়ে মারে। বলে,
“ নো নিড অফ ইট! বস!”
রেহান মুখ থেকে টাওয়েলটা নামায়।মুখ কুঁচকে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ আঁটকে যায় রৌদ্রের ঘাড়ের কাছে জ্বলজ্বল করতে থাকা কালচে দাগটার দিকে।রেহান সরু চোখে এগিয়ে আসে রৌদ্রের কাছে।রৌদ্র তার এহেন দৃষ্টি দেখে বলে,
“ হোয়াট?”
রেহান জবাব দিলো না। সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের ঘাড়ের দিকে। তারপর হুট করেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো ছেলেটা। রৌদ্র অবাক হয়। অবাক কন্ঠে বলে,
“ কি হয়েছে? হুট করে এমন পাগলের মতো হি হি করছিস কেন?”
রেহান মুখে লাজুক ভাব টানে।কন্ঠে দুষ্টভাব এনে বলে,
“ তলে তলে টেম্পু চালাও, আর আমরা কইলেই হরতাল ব্যাডা!”
“ মানে!”
রেহান রৌদ্রের হাতটা টেনে তাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করায়।ইশারায় বলে,
“ সামনে তাকা!”
রৌদ্রও বিরক্ত চোখে আয়নায় তাকায়। পরক্ষণেই তার দৃষ্টি আঁটকে যায় তার ঘাড়ের ওপর। সেখানে এখনও কালচে দাগ বসে আছে। রৌদ্রের হঠাৎ মনে পড়লো তখনকার ঘটনা। মেয়েটা যে তাকে কামড় দিয়েছিল সেই দাগটাই বুঝি বসে গেছে এখানে।রৌদ্র আনমনেই মুচকি হাসলো।হাত বাড়িয়ে ঘাড়ের কাছটা আরেকটু ঘষে দিলো। যেন এই দাগটা খুব সহজে না মিটে। রেহন পিছে দাঁড়িয়ে হতবিহ্বল কন্ঠে বললো,
“ কাহিনি কি দোস্ত? লাভ বাইট নিয়েও এখন ঘুরাঘুরি হচ্ছে তাহলে!”
রৌদ্র পেছনে না তাকিয়েই ঠোঁট কামড়ে হাসলো। পরক্ষণেই তা মিলিয়ে গেলো অজানায়।সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে সরে আসে।বিছানার ওপর বের করে রাখা টিশার্টটা গায়ে জড়িয়ে নেয়।তারপর রেহানের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“ বিবাহিত পুরুষ মানুষের গায়ে এমন দাগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তুই এমন বাজঁ পাখির চোখে এসবের দিকে তাকানো বন্ধ কর।নিজেরটায় খেয়াল রাখ।”
এহেন সোজাসাপটা কথায় চুপ করে গেলো রেহান।হালকা হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ। তখনি ঘরে ঢুকে অনিক।হাতে তার কি যেন একটা ধরে রাখা। অনিক হাসি মুখে রৌদ্রের দিকে এগিয়ে আসে। হাতে থাকা খামটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ এই নাও! তুমি যেটা আনতে বলেছিলে।”
রৌদ্র নিয়ে নেয় খামটা।পাশ থেকে রেহান উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা চালায় খামটা কিসের। তার এমন কৌতুহল দেখে রৌদ্র মুচকি হাসে।খামটা রেহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ নে।আমার পক্ষ থেকে তোর বিয়ের গিফট!”
রেহান খামটা নিয়েই খুলে ফেললো।পরক্ষণেই দেখতে পেলো — দুটো প্লেনের টিকেট। সুইজারল্যান্ডের।রেহান চোখ বড়সড় করে তাকায়।অবাক হয়ে বলে,
“ এগুলো… কবে কাটলি?”
রৌদ্র ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বিছানায় বসে।ঘাড় এদিক ওদিক ঘুরিয়ে মৃদু শব্দে ফুটায়।তারপর বলে,
“ সেগুলো তোর জানতে হবে না। তুই জাস্ট ইনজয় কর!”
রেহান মাথা নাড়ায়। কন্ঠে দুষ্টুমির রেশ টেনে বললো,
“ ভাই তুই কবে যাবি রে?”
কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই নাকেমুখে উঠে যায় অনিকের।ছেলেটা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে এদিক ওদিক। শত হলেও বোনের বিষয় নিয়ে তো আর এতোকিছু শোনা যায় না। রৌদ্র বুঝলো হয়তো ছেলেটার দোটানা। সে প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
“ এই!তুই রুহিকে ছেড়ে এখানে কি করিস? যা.. ঘরে যা।”
রেহান প্রতিত্তোরে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।মিনমিন করে বললো,
“ আমি যতক্ষণ বাইরে থাকি ততক্ষণই বউ আমার রেস্ট নিতে পারে।নাহলে তো….”
“ এই তুই চুপ করবি?”
রেহানের মিনমিনে সুরে বলা কথাটাও বেশ শুনলো রৌদ্র। তাইতো ছেলেটার কথা শেষ হবার আগেই খেঁকিয়ে ওঠে সে।রেহান মুখ ভেংচি কাটে। মুখে কপট অভিমান লেপ্টে বলে ওঠে,
“ সম্বন্ধি আমার মানুষ ভালো না। নিজে করবে ইটিশপিটিশ আর আমি বললেই দোষ!”
“ তোরে তো!!”
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩২
বলেই রৌদ্র এদিক ওদিক তাকায় রেহানকে কিছু ছুড়ে মারতে। তা দেখে রেহান দিলো ভো দৌড়। তবে যাওয়ার আগে আরেকবার মৃদুস্বরে বলে গেলো,
“ কন্ট্রোল ডাক্তার বাবু! আপনি যেই স্পিডে এগোচ্ছেন তাতে তো মনে হচ্ছে আমার ছেলে এ পৃথিবীতে আসার আগেই আপনি আমার ছেলের বউ নিয়ে আসবেন! একটু ধৈর্য্য ধইরেন হবু বেয়াই সাব!”