সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১২

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১২
neelarahman

সাদাফ নুরের কাঁধে হালকা হালকা করে ঠোঁট ছোয়ালো।গালে নাক ঘষতে লাগলো।নুর সাদাফের স্পর্শে কেঁপে উঠল ।বন্ধ করে ফেললো চোখ ।
ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস যেন ভারী হতে লাগলো নুরের।
সাদাফ ধীরে ধীরে চোখ খুলে নুরের দিকে তাকালো ।তারপর বলল ,”শাড়ি পড়ে তোকে অনেক সুন্দর লাগছে নুর। পরিপূর্ণ নারী মনে হচ্ছে।কেমন পা*গল পা*গল লাগছে নিজেকে আজ।সব দোষ তোর নুর।কেনো এই রুপে এলি আমার সামনে? নীলা রহমান লেখিকা। তুই আমার রুমে কেন দেখাতে আসলি নূর??”

নূর আমতা আমতা করে বলল ,”আপনি উপহার দিয়েছেন তাই আপনাকে দেখাতে এসেছি ।”
সাদাফ মুখ তুলে নুরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ।তারপর বলল ,”তুই কি করে বুঝলি এগুলো আমি দিয়েছি ?অন্য কেউ তো দিতে পারে ?আমি তো কোন গিফট আনিনি তোর জন্য।”
নুর বলল ,”বাড়িতে সবাই গিফট দিয়েছিল শুধু আপনি দেননি ।তাই ভেবেছি আপনি দিয়েছেন ।”
সাদাফ নুরের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল ,”আমার রুমে আমাকে দেখাতে এসেছিস ।সবাইকে দেখিয়েছিলি রুমে যেয়ে?”
নুর মাথা ঝুকিয়ে না করল ।
সাদাফ তারপরে নূরের কানে হালকা ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে ফিসফিস করে বলল ,”শুধু আমার রুমে দেখাতে এসেছিস ?কেন এসেছিস নুর ?
প্রশ্ন করেছিলি নিজেকে আমি কে হই তোর?কেনো কিছু নিজে থেকে বুঝে নিসনা না?কেনো আমার স্পর্শ বুঝতে পারিস না?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নুর কোন কিছু বলতে পারছে না ।কোন উত্তর দিতে পারছে না ।সাদাফের ঠোঁটে নরম স্পর্শে নূর ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে । শিহরিত হচ্ছে তনু মন।চোখ বুজে আসছে।
সুখময় যন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে। কোথাও যেনো ব্যাথা হচ্ছে নুরের।সারা শরীরে মৃদু কম্পন শুরু হলো নুরের।সাদাফ অনুভব করলো নুরের প্রতিটি কম্পন। নীলা রহমান
নুর কোনমতে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করল আমি …আমি …প্রশ্ন করেছি …আমি আর কিছু বলতে পারছে না নুর ।
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”রুম থেকে যা নুর।এখানে আর এক মুহুর্ত থাকলে ভয়ংকর প্রলয় হবে।সব ভে*ঙ্গে চুরে শান্ত হবো আমি।সইতে পারবি আমার তা*ন্ডব?”নুরের গালে নাক ঘষতে ঘষতে কথা গুলো বললো সাদাফ।

তারপর কিছুক্ষণ থেমে নুরের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করলো সাদাফ ,”নিজেকে প্রশ্ন কর নুর।
নিজেকে প্রশ্ন করবি আমি কি হই তোর ?যেদিন উত্তর দিতে পারবি সেদিন আমার সামনে এসে আমাকে প্রশ্ন করবি। সেদিন আমি তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিব কিন্তু আগে নিজেকে প্রশ্ন কর নুর ।সাদাফ তোর কি হয় ।সাদাফকে তুই কেন সবার চেয়ে আলাদা চোখে দেখিস ?সাদাফ কে তুই কেন শাড়ি পরে একা রুমে দেখাতে এসেছিস ?নিজেকে প্রশ্ন করবি নূর। চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে প্রত্যেকটি হৃদয় স্পন্দন অনুভব করে নিজেকে প্রশ্ন করবি।”
বলেই নূরের গালে হালকা করে ছোট্ট চু*মু এঁকে দিল সাদাফ।

তারপর সাথে সাথে নূরের থেকে সরে গিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”রুম থেকে যা নূর। আমার ভিতরে তোলপাড় হচ্ছে ভীষণ ভয়ঙ্কর ঝড় তৈরি হয়েছে ।এখানে থাকলে তুই লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবি রুম থেকে যা।”
নূর সাথে সাথে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো নুর ।
কি ভ*য়ঙ্কর ভ*য়ংকর কথা বলছিল সাদাফ।কেন এমন অনুভব হচ্ছিল আরেকটু থাকলে দম বন্ধ হয়ে ম*রে যেত নূর।

চোখ বন্ধ করে নূর বারবার সাদাফ কে কল্পনা করছিল ।টাওয়েল পড়া চুল দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে ।গাল বেয়ে পানি টুপ টুপ করে পড়ছে বুকে।
কি অদ্ভুত ভ*য়ংকর সুন্দর লাগছিল সাদাফ ভাইকে ।সাদাফ ভাই কেন বারবার চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে নূরকে ।নূর বুঝতে পারছে না কিন্তু এতোটুকু বুঝতে পারছে যেখানে সাদাফ ভাই থাকে সেখানে অদ্ভুত এক টান অনুভব করে নূর। অদৃশ্য এক টান অদৃশ্য এক আকর্ষণ যা দেখা যায় না কিন্তু প্রতিনিয়ত নুরকে নিজের দিকে টানছে অদ্ভুতভাবে টানছে।

কিছুক্ষণ পরে নূরের দরজায় কড়া নাড়লো রিমা ।বললো,”তুই এখনো রেডি হয়ে বের হোসনি ?একটু আগে না নিচে দেখলাম আবার কি রেডি হতে উপরে এলি ?তাড়াতাড়ি বের হ সবাই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তাড়াতাড়ি আয়।”
নুর ভিতর থেকে বললো,”আসছি নিচে যাও আসছি আমি।”
রিমা বলল ,”না আমার সাথে চল ।আবার তোকে রেখে গেলে আবার আমাকে উপর আসতে হবে ।এক্ষুনি বের হও না হলে আমি সাইমনকে বলছি তুই বের হবি না ।দরজা ভেঙে যেন ………সরি সাইমন ভাইকে বলবো না সাদাফ ভাইকে বলবো তুই বের হচ্ছিস না সাদাফ ভাই আসলে তুই সুর সুর করে বের হয়ে যাবি।”
সাদাফের নাম শুনে আবার লজ্জায় লাল হয়ে গেল নুর ।কেউ দেখছে না তারপরও নিজের দিকে নিজে তাকাতে পারছে না লজ্জায় ।
তারপর বলল ,”ঠিক আছে বের হচ্ছে আমি।”

বলেই সাথে সাথে আয়নার সামনে গেল নুর ।নিজেকে একটু দেখে পরিপাটি করে তারপর দরজা
খুললো ।
রিমা বলল ,”কি চেঞ্জ করলি ?একটু আগে যা দেখলাম এখনও তাই শুধু মাঝখান দিয়ে গাল গুলো একটু লাল। শুধু ব্লাশন দিতে এত টাইম লাগালি?”
নুর বলল ,”বাজে কথা বলিস না তো ! চল চল তাড়াতাড়ি চল ।আজকে আমার জন্মদিন আজকে আমার সাথে বুঝে শুনে কথা বলবি । নীলা রহমান।না হলে কিন্তু বড় আব্বুর কাছে আর বাবার কাছে বিচার দিব তোর নামে।
আর সবাই জানে তুই অনেক দুষ্টু ।সবাই আমার সাপোর্ট নিবে তোকে ইচ্ছামত বকা দিবে।”
আচ্ছা চল মেরি মা সবাই তোর পক্ষই নেয়। ছোট তো তাই।মাত্র কয়েক দিনে ছোট কিন্তু একটা নাম হয়ে গেছে ও ছোট ও সব থেকে ভালো ।আর আমরা যেন খারাপ। একটু বড় বলে তোর মতো ভালো হতে পারলাম না চল চল।”
বলেই রিমা ও নূর হাসতে হাসতে উপর থেকে নিচে নামছে ।সাইমন ও সাদাফ তাকিয়ে রইল উপরের দিকে।
হঠাৎ সাইমনের চোখ পরল সাদাফের দিকে ।দেখল সাদাফ ভাইয়ের ঠোঁটে যেন মুচকি একটু হাসি রেখা খেলে গেল ।

সাইমন সাদাফের চোখ অনুসরণ করে তাকালো সিড়ির দিকে।
সাইমন বুঝতে পারছে না সাদাফ ভাই কাকে দেখে হাসছে ?রিমাকে দেখে হাসছে নাকি নুরকে দেখে হাসছে ?কনফিউজ হয়ে গেল সাদাফ।পর মুহুর্তে রিমার দিকে চোখ গেল সাদাফের ।দেখল আজ রিমা কে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।

পরক্ষণে ভাবলো সুন্দর আর এই ডা*ইনি ? ছিঃ আমার রুচি এত খারাপ হলো কি করে ?তারপর নিজের বোনের দিকে তাকাল ।মনে মনে ভাবল আসলে সাদাফ ভাই কাকে দেখে হাসছে।আর হাসলোই বা কেনো?
নুর বের হলো সবার শেষে রিমার সাথে ।বাইরে বের হয়ে দেখল দুটো গাড়ি রেডি ।একটি গাড়িতে যাবে ফজলুর রহমান হুমায়ুন রহমান নওরিন আফরোজ ও সামিহা বেগম আরেকটি গাড়িতে যাবে রিমা নূর সাদাফ ও সায়মন।
সাদাফ গাড়িতে ঢুকে ড্রাইভিং সিটে বসলো পাশে বসলো সাইমন পিছনে বসলো নূর ও রিমা ।সাদাফ লুকিং গ্লাসে একবার আর চোখে নূরকে দেখল ।এই প্রথম শাড়ি পরা নূরকে দেখে সাদাফের ভিতরে যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল তা নিয়ন্ত্রণ করতে সাদাফের অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

শুধুমাত্র সাদাফ বলতে পারবে কোন আগুনে জ্ব*লছিল সাদাফ।যে আ‘‘গুন বাইরে থেকে দেখাও যায় না যে আ‘গুন পানি দিয়ে নিভানো যায় না ।দাউদাউ করে জ্ব*লছিল সাদাফের ভিতরে আর একটু হলে হয়তো ভিতরে জ্বলে পু‘ড়ে অঙ্গার হয়ে যেত সাদাফের।
সবাই গাড়িতে উঠে বসলে ড্রাইভ করা শুরু করল ।সাদাফ ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ।আজকে যাবে একটি রেস্টুরেন্টে সেখানেই ওরা লাঞ্চ করবে এবং বিকালে একটু বেড়াতে যাবে বাইরে তবে আশেপাশে কোথাও ।খুব বেশি একটা দূরে যাবে না যেহেতু রাতের মধ্যেই ব্যাক করতে হবে।
সিদ্ধান্ত হয়েছিল শপিং করবে পরে নূর জানিয়েছে শপিং তো পরের দিনও করতে পারবে কিন্তু নূর আজকে জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চায় দূরে কোথাও যেতে চায়।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১১

কারণ এত বড় বয়সে নূরের আর রিমার দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি ।ছেলেরা তো নিজেরা যেতে পারে কিন্তু ওরা কারো সাথে যেতে পারে না তাই চুপচাপ ঘরমুখ হয়ে বসে থাকতে হয়।
তাই ও বড় আব্বুর ও বাবার কাছে বায়না ধরেছে আজকে ওরা ঢাকার বাইরে দূরে কোথাও গ্রাম্য পরিবেশে নিরিবিলি পরিবেশে একটু বেড়াতে যাবে।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here