সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮০+৮১
neelarahman
সাদাফ নূরকে নিয়ে পুকুর ঘাটে এসে নৌকার জন্য দাঁড়ালো ।নৌকা চালাতে পারে যে মাঝি উনি বললো ,”চলুন আমি আপনাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আনছি ।”
সাদাফ বললো,” না লাগবে না ।আপনি শুধু নৌকা এখানে এনে দিন আমি নিজেই চালাতে পারব।”
বলেই নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”নৌকায় ওঠ তোকে ঘুরিয়ে আনছি ।”নূর সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আপনি নৌকা চালাতে পারেন ?কোনদিন তো দেখিনি!”
“যখন আমি নানি বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে নৌকা চালিয়েছি তখন তুই ল্যাদা বাচ্চা ।তোকে কাধে নিয়ে ঘুরি তখন।তুই কিভাবে দেখবি?”বললো সাদাফ।
মাঝি নৌকা পাড়ে আনতেই পুকুরে সিড়ি পেরিয়ে নৌকায় উঠতে লাগলো নূর। কিন্ত নৌকা দুলে উঠছে বারবার।সাদাফ বললো,” দাড়া আমার হাত ধর। আমি উঠিয়ে দিচ্ছি ।”
নূর সাদাফ এর হাতে হাত রাখলো ।সাদাফ সুন্দর করে নুর কে নৌকায় উঠিয়ে দিয়ে মাঝির হাত থেকে বৈঠা নিয়ে বলল ,”আপনি যান আমি এতটুকু চালাতে পারবো।”
বলেই বৈঠা হাতে নিয়ে নৌকায় উঠে বসল সাদাফ।সাদাফ দেখল নুর সামনে নৌকার আরেক পাশে একা একা বসেছে ।সাদাফ বিরক্ত হলো ।মেয়েটা পাকামি করে এত দূরে গিয়ে বসেছে কেন ?কি উদ্দেশ্যে নিয়ে আসলো আর কোথায় গিয়ে বসল নুর? বিরক্তিভাব নিয়ে সাদাফ বৈঠা নাড়িয়ে নৌকা চালাতে লাগলো।
পুকুরের ঠিক মাঝ বরাবর গিয়ে নৌকা দুলতে লাগলো ।নুর ভয় পেয়ে গেল ।দুই হাত দিয়ে দুই দিকে নৌকা চে*পে ধরে বলল ,”ভাইয়া ভয় লাগছে ।নৌকা এরকম দুলছে কেন?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাদাফ বলল ,”আমি তো বলতে পারবোনা নৌকা কেন দুলছে ?শক্ত করে ধরে বসে থাক ।”বলেই নৌকাকে আবারও দোলাতে লাগলো সাদাফ কিন্তু বোকা নুর বুঝতে পারছে না নৌকা কেন দুলছে?”
নূর আবার বলল ,”ভাইয়া ভয় লাগছে ,ভীষণ ভয় লাগছে আমার ।”
সাদাফ বলল ,”তাহলে কাছে আয় ।আমি আছি তো ভয় পাবি না। কিচ্ছু হবে না ।”নূর বললো,” কাছে আসবো কোথায় ?”
সাদাফ বলল ,”যতটা কাছে এলে আর ভয় পাবি না ঠিক ততটা কাছে আয়।”
নুর বলল ,”কোথায় তাহলে ?”
সাদাফ বললো ,”আমার বুকে আয় তাহলে আর কোন ভয় পাবি না।”
নুর ধীরে ধীরে এলোমলো পায়ে নিজের জায়গা থেকে উঠে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো সাদাফ এর কাছে ।এসে বলল ,”কোথায় বসবো ?”
সাদাফ নিজের দু পা ফাঁক করে বৈঠাটা সরিয়ে বললো,”এখানে বস ।তাহলে আর ভয় পাবি না।”
নুর আমতা আমতা করলেও একটু একটু করে ঘুরে সাদাফের দুই পায়ের মাঝখানে বসল সাদাফ নুরের উপর দিয়েই বৈঠা নিয়ে ধীরে ধীরে চালাতে লাগলো ।আর একটু পুকুরে মাঝখানে যেতে লাগলো ।আর মনে মনে হাসলো ইচ্ছা করে নৌকা দুলিয়েছিল সাদাফ কিন্তু নূর এতটাই বোকা বুঝতে পারিনি একটু নিজের কাছে আনার জন্য।
পুকুরে ঠিক মাঝখানে এসে বৈঠকে সাইডে রেখে নুরের পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নূরের কাধে নাক ঘষতে ঘুষতে কপাল ঠেকিয়ে বলল ,”নুর একটা কথা বললে শুনবি?”
নুর আচমকা এমন কাণ্ডে যেন ভয় পেয়ে গেল। ধীরে ধীরে গুটিয়ে শুটিয়ে গেল নুর। পুকুরের মাঝখানে নৌকায় সাদাফ এমন ভাবে নুরকে জড়িয়ে ধরেছে নূর যেন লজ্জায় আরো লাল হয়ে গেল ।চুপচাপ বসে আছে নূর ।ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে নুর। নিঃশ্বাস নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে নুরের।ধীরে ধীরে আমতা আমতা করে বলল ,”কি করব?”
সাদাফ নুরের কাঁধে ছোট ছোট চু*মু একে বলল ,”চল বিয়ে করি ।আজকে এই মুহূর্তে করবি? শুধু হ্যাঁ কর বিয়ের জন্য রাজি হো ।বাড়িতে কি হবে না হবে সবকিছু আমি টেক কেয়ার করব।তুই শুধু আজকে এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে কর নুর। তোকে আমি আজকে থেকে এই মুহূর্ত থেকে নিজের স্ত্রী হিসেবে চাই ।বল করবি কিনা?”
নূর সাদাফের এহেন কথা এবং ভালোবাসার স্পর্শে যেন পা*গল হয়ে যাচ্ছে ।কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছে না ।একদিকে সাদাফের আ*গ্রাসী ভালোবাসা অন্যদিকে বিয়ে করার জন্য আকুল আবেদন? কি করবে নূর বাসায় কিভাবে বলবে ?এখন যদি সাদাফ ভাইকে না বলে বিয়ে করে সবাই রাগ করবে ।তাদেরকে কিভাবে বুঝাবে ? কিন্ত সাদাফ ভাইকে বা না করবে কিভাবে নুর।নুর যে ভিষন ভালবাসে সাদাফ ভাইকে।কোন কিছুই বুঝতে পারছে না নুর ।নুর আমতা আমতা করে বলল ,”বাবা শুনলে রাগ করবে।”
সাদাফ এক হাত দিয়ে নূরের মুখটা একটু ঘুরিয়ে সাদাফের দিকে করে ছোট্ট একটি চু*মু খেলো ।তারপর বলল ,”যে যা খুশি বলুক আজকে থেকে এই মুহূর্তে থেকে তুই আমাকে নিজে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবি রাজি কিনা বল?
না করিস না প্লিজ ।আজকে না করলে আমি ম*রে যাব নুর।”বলেই নূরের ঠোঁটে আবারো ভালোবাসার পরশ দিতে লাগলো সাদাফ। নূরকে যেন কোন কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে না। তারপর নুরের ঠোঁট ছেড়ে নুরের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থেকে বলল ,”সবার রাগ তুই সহ্য করতে পারবি না আমার জন্য ?আমার ভালবাসার জন্য?”
নূর যেন দুবিধার মধ্যে পড়ে গেল কি বলবে সাদাফ ভাইকে? সাদাফ ভাই যেভাবে আকুল ভাবে আবেদন করছে বিয়ের জন্য যেনো হৃদয় নিংড়ে দিয়েছে নুরের কাছে।আর নূর ও তো ভালোবাসে সাদাফ ভাইকে কিভাবে ফিরিয়ে দিবে তাকে ?
আরেকদিকে পরিবার ।বাবা বড় বাবা তারা জানলে ভীষণ রাগ করবে । কস্ট পাবে।তাদের কি করে কষ্ট দিবে নুর?কিভাবে তাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলবেন নূরের যে বয়স অল্প।
বাসায় কি জবাব দিবে সেই চিন্তাই করছে নূর ।এদিকে সাদাফ আবার বলল ,”কি চিন্তা করছিস নুর ?পারবি না আমার জন্য সবার একটুখানি রাগ সহ্য করতে ?পারবি না তোর বাপ চাচার একটু চোখ রাঙ্গানি সহ্য করতে আমার জন্য ?
তুই না বলিস তুই আমাকে ভালবাসিস ?পরীক্ষা দে নূর তুই আজ কত ভালোবাসিস আমাকে আজকে ?এই মুহূর্তে এই খানে তুই আমাকে বিয়ে করবি ।আর না হলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব কক্ষনো ফিরব না তোর সামনে।”
নুরের ছোট্ট হৃদয়টা কেঁপে উঠল। সাদাফ এখনো নুরকে দুই হাতে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ।নুরের কাঁধে কপাল ঠেকিয়ে রেখেছে সাদাফ।খুব জোরে জোরে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে নূর যেন আরেকটু হলে দম বন্ধ হয়ে ম*রে যাবে ।তার উপর সাদফ ভাই বলছে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে ।নুর ভীষণ ভয় পেয়ে গেল ।হৃদয় টা কেঁপে উঠল নুরের।
নূর সাদাফের বাঁধন থেকে ছুটতে চাইলে সাদাফ দুহাত দিয়ে আরো জোরে জড়িয়ে ধরল নুরকে ।বলল ,”এভাবে থাক নরিস না ।যদি তুই আজ বিয়েতে রাজি না হোস তাহলে এই দেখাই শেষ দেখা হবে তোর আমার।আজকের পর তুই আর আমাকে দেখবি না ।তোকে কিছুক্ষণ ধরে থাকতে দে আমার বুকে থাক আমার বুকটা অস্থির লাগছে একটু সস্তি পেতে নুর !”
নুর এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেল ।যদি নুর না করে দেয় বিয়ে করতে আর সত্যি সত্যি সাদাফ ভাই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ?না নূর সবার রা*গ সহ্য করতে পারবে সবার কটু কথা সহ্য করতে পারবে কিন্তু সাদাফ ভাই চোখের আশেপাশে থাকবে না কোথাও চলে যাবে নূরের কাছে থাকবে না এটা নূর কখনো সহ্য করতে পারবে না ।এটা চিন্তা করলে ও নূরের বুকটা কেঁপে ওঠে।
নুর বড় করে একটি শ্বাস নিল তারপর কান্না কান্না কন্ঠে বলে উঠলো,”ঠিক আছে আমি রাজি। তারপরও আপনি বাসা ছেড়ে যাবেন না প্লিজ ।আপনি বাসা ছেড়ে কোথাও চলে গেলে আমার দম বন্ধ লাগবে ।মনে হবে আমি ম*রে যাব ।এর চাইতে ভালো বাবা বড় বাবা আমাকে বকবে আমি সবার বকা সহ্য করে নিব তবু আপনি কোথাও যাবেন না প্লিজ।
এর আগে যখন তিন দিন আপনি ছিলেন না আমার কাছে মনে হয়েছিল কেউ মনে হয় আমাকে মে*রে ফেলেছে যেন আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না ।চারদিকে শুধু আপনাকে খুজছিলাম ।আর যদি সবসময়ের জন্য আপনি ছেড়ে চলে যান তাহলে আমি সত্যি সত্যি ম*রে যাব।ভিষন খারাপ লাগবে আমার। প্লিজ কোথাও যাবেন না।আমি বিয়ে করবো।আমি রাজি।”
নূরের কান্না কান্না কন্ঠে গলা ধরে আসা কথাগুলো শুনে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সাদাফ নূরের দিকে।
সাদাফ জানতো নূর রাজি হবে ।কারণ নুরও যে ভালোবাসে সাদাফ কে। সাদাফ তাই আজকে ওকে এখানে নিয়ে এসেছে।
ছোট বাবার সব পরীক্ষা দিতে পারবে সাদাফ সব শাস্তি মাথা পেতে মেনে নিবে কিন্তু নূরকে কোনভাবে হারানো সম্ভব নয় ।আর যেই বিয়ের কথা নূর জানে না অস্তিত্বই নেই সেই বিয়ে দিয়ে নূরকে আটকাতে চায় না সাদাফ।তাই আজ নতুন করে বিয়ে করতে চায় নূরকে।
এই বিয়ে নুর সজ্ঞানে করবে স্বেচ্ছায় করবে যাতে পরিবারের কেউ বা অন্য কেউ আঙ্গুল তুলে বলতে না পারে নুর জানতো না না জেনে বিয়ে হয়েছে।
আজ নুর স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে সাদাফ কে স্বামী হিসেবে স্বীকার করবে ।এরপর যা হবে সাদাব দেখে নিবে ।তবে নুরকে কোনভাবেই হারাতে চায় না সাদাফ।
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে নূরের চোখে পানি মুছতে মুছতে বলল ,”আজ থেকে ১৪ দিন পর কি হবে মনে আছে নুর?”
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৮+৭৯
নুর কান্না কান্না কন্ঠে জানতে চাইলো,” কি ?”
সাদাফ নুরের দিকে একটু ঝুঁকে কানে নাক ঘষতে ঘষতে ফিসফিস করে বলল ,”আজ থেকে ১৪ দিন পর তোর আমার বাসর হবে ।আজকে বিয়ে হবে আজ থেকে তুই আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে স্বীকার করে নিবি।
আর ১৪ দিন পর তোর স্বামী তোকে নিজের স্ত্রী হিসেবে নিজের করে নিবে।”
কথাটি শুনেই সাথে সাথে নিজের দুই হাতের আঁজলে মুখ ঢাকলো নূর ।হাত-পা থরথর করে কাঁপছে নুরের।
এইভাবে এখানে নুরকে কি ভীষণ ল*জ্জায় ফেলে দিয়েছে সাদাফ।লোকটি যদি জানতো এই মুহূর্তে নূর ঠিক কতখানি ল*জ্জা পাচ্ছে তাহলে কি এরকম কথা বলতো ঠোঁট কা*টা লোকটা?
কি মনে হয় বিয়েটা কি হবে???? কমেন্ট করে জানান।
