সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৭
বুশরা আহমেদ
হিয়া ফ্রেস হয়ে এসে ফোন টা হাতে নিতেই ,দেখলো তৌফিক এর ম্যাসেজ,,
” কেমন আছো হিয়া?”
হিয়া নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। আপনারো কি আমাকে মনে পরছে ,,,তৌফিক জোবায়েদ।
হিয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠল। এতক্ষণ যা নিয়ে মন খারাপ হচ্ছিল এখন তা আর নেই।
হিয়া তৌফিক এর ম্যাসেজ এর রিপ্লাই দিলো ,,,
হিয়া : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ? আপনি কেমন আছেন?
তৌফিক: ভালো । তোমার কোন সমস্যা হয় নি তো একা একা থাকতে?
হিয়া : না সমস্যা হয় নি। বুশরা কেমন আছে?
তৌফিক: আছে ভালো । ওর সঙ্গে কথা হয় নি।
হিয়া : বুশরার সঙ্গে কথা হওয়া আর অমাবস্যার রাতে চাঁদ দেখা একি ব্যাপার ।
তৌফিক: তোমার তো দেখছি বনুর সঙ্গে থেকে কথার উন্নতি হয়েছে। আসোলে বনু অনেক ব্যাস্ত। আর আম বাসায় কিন্তু বনু নাই। বনু আসলে কথা বলাবো এইবার।
হিয়া : এর আগেও আপনি বলেছিলেন?
তৌফিক: এইবার সত্যিই বলাবো।প্রমিস,, এখন বাসায় নাই তো থাকলে বলা তাম।
হিয়া: কোথাও গেছে,,
তৌফিক: রাহি ভাইয়া আর বনু একটু বেরিয়েছে ।
হিয়া : আচ্ছা ঠিক আছে।
তৌফিক আর কিছু লিখলো না। হিয়া ফোন রেখে দিল।
তৌফিক ফোন রাখতেই । হ্যাভেন এসে খবর দিলো , দুই জন অচেনা লোক বাসার আসে পাশে ঘুরতে দেখা গেছে,,,
তৌফিক: তাদের কে আমার সামনে নিয়ে এসো ,,
তৌফিক এর চোখে মুখে রাগের ছাপ।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
দুইটা লোককে তৌফিক এর সামনে আনা হলো ।
তৌফিক হ্যাভেন ক্যাভেন কে ইশারা করতেই ,,, তাদেরকে একটি অন্ধকার ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো ,, তৌফিক সেখানে থাকা চেয়ার টিতে বসলো ,,
তৌফিক এর আদেশে তাদেরকে উল্টো করে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো ,,,
তৌফিক ক্যাভেনকে ইশারা করতেই ক্যাভেন তাদের মুখ গুলো খুলে দিলো ,,
লোক দুটো অনুরোধ করতে লাগলো ,,,
আমাদের ছেড়ে দিন ,,আমরা কিছু করি নি ,,,
তৌফিক: তোদের কে পাঠিয়েছে তা আমার জানা ,,আমি শুধু জানতে চাই কেন পাঠিয়েছে ???
আমাদের ছেড়ে দিন, আমরা কিছু করি নি আমাদের আনোয়ার হোসেন পাঠিয়েছে , রায়হান আহমেদ ও আপনি কোথায় থাকেন সেইটা খোঁজ নেওয়ার জন্য,আর আপনাদের ছবি তুলে তাদের দেওয়ার জন্য।
তৌফিক পকেট থেকে বন্দুক বের করে তাদের কপাল বরাবার তাক করলো ,,
লোক দুটো অনুরোধ করতে লাগলো কিন্তু তৌফিক ক্যাভেন কে ইশারা করতে ,, ক্যাভেন হাতে করে একটা বোতল নিয়ে আসলো ,, লোক দুটো চিৎকার করতে লাগলো কিন্তু, কোন উপায় নাই,, ক্যাভেন বোতল এর মুখ খুলে , ছুঁড়ে মারলো লোক দুটোর মুখের উপর ,, সঙ্গে সঙ্গে ঝ্বলছে পুড়ে গেলো তাদের মুখমণ্ডল।
তৌফিক বললো ,,, তোদের ভাগ্য ভালো আজ এখানে আমি আছি আমার জায়গায় যদি রায়হান আহমেদ রাহি উরফে গ্যাংস্টার লিডার তাজোয়ার থাকতো তোদের নির্মম মৃত্যু হতো ,,
তৌফিক এই বার বন্দুক টা তাদের কপাল বরাবার তাক করলো , লোক দুটো চিৎকার করছে কিন্তু তৌফিক এক চুলও নড়ছে না,, কপাল বরাবর তাক করে গুলি চালিয়ে দিলো একটা নয় পর পর দুই তিনটা,,,
সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে রক্তে রক্ত পুরি হয়ে গেল,, তৌফিক এই বার
রসি বরাবর গুলি চালালো সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল দুইটি নিথর দেহ । তৌফিক চলে যেতে যেতে বললো ,,,, ম্যারিল্যান্ড এ জঙ্গলে গিয়ে এই দু’টোকে কি করতে হবে তা তোমাদের জানা,, আর ম্যারিল্যান্ড এ গার্ড বারিয়ে দেও প্যালেস এর দুরেই গার্ড থাক কিন্তু ভাইয়া আর বনুর কোন ক্ষতি যেন না হয়। আর একটা কথা ভাইয়া কে এখন কিছু জানিও না ভাইয়া ফিরলে আমি বলবো ।
ভ্যাভেন ক্যাভেন লোক দুটো কে গাড়ি তে তুশে ম্যারিল্যান্ড এর জঙ্গলে এর গভীরে রে গিয়ে ,, তাদের নামিয়েসামনে তাকিয়ে বললো ,,, ড্যাক্সি & হ্যাক্সি ,, Come here,,
সঙ্গে সঙ্গে সামনে থেকে বেরিয়ে এলো বিশাল দুটো কালো কুচকুচে কুকুর,,
অন্ধকারে তাদের চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে ,,যে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে ,, ।
ভ্যাভেন বললো ,, আজকে তোদের জন্য স্পেশাল ডিনার ,, বলেই তাদের সামনে লোকদুটোর ডেট বডি ফেলা দেওয়া হলো ,, ।
ক্যাভেন : আজকে তোদের বস আসে নি,, তবে তোরা জানিস সে তোদের আসে পাশেই আছে । তোদের কি কাজ এখন তোরা জানিস ।
ড্যাক্সি & হ্যাক্সি , ঘেউ ,ঘেউ আওয়াজ শুরু করলো কারণ তারা বুঝতে পেরেছে।
ভ্যাভেন ,ক্যাভেন সেখান থেকে চলে গেলে । কারণ এই রাতে বেলা ড্যাক্সি & হ্যাক্সি এর সামনে থাকা বিপদ জনক।
রাহি যখন ১৬ বছর বয়স তখন থেকে ভ্যাক্সি & ড্যাক্সি তার সঙ্গে থাকে , তাদের ট্রেনিং দেওয়া , খাওয়া দাওয়া সব নিজ হাতে করেছে রাহি । যখন তারা বিশাল আকারের হয়ে যায় তখন রাহি তাদের ম্যারিল্যান্ড এর জঙ্গলে নিয়ে আসে আর ছেড়ে দেয় । রাহির যখন সময় হয় তখন তাদের সঙ্গে দেখা করে । খাবার খাওয়ায় । এখান তারা মাংসাশী হিংস্র পশুর মতো হয়ে গেছে।
রাহি ছাড়া কাউকে আসে পাশে সহ্য করতে পারে না ।
হাক্সি & ডাক্সি দুই জনেই হিংস্র হয়ে উঠলো ,, তারা লোক দুটোর গলায় কামড় দিয়ে মাথা আলাদা করে ফেললো ,, মাংসাশী পশুর মতো লোক দুটোকে খেয়ে ফেললো ।
,, তারপর দুইজনেই গর্ত খুঁড়তে লাগলো ,, তারপর লোকদুটোর বডিতে যা কিছু বাকি ছিল তা গর্তে ফেলে মাটি চাপা দিয়ে দিলো ।
হ্যাভেন ক্যাভেন দুরে গাড়িতে বসে সব দেখছিল,, যে কোন কেউ এই দৃশ্য দেখলে ভয়ে কেঁপে উঠবে। কিন্তু ভ্যাভেন ক্যাভেন এসবে অভ্যস্ত।
পরেরদিন সকালে,,,রাহি বুশরার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে,বুশরা এখনো ঘুমে বিভোর।
সারারাত রাহি বুশরার পাশে বসে ছিল, একটু ঘুম হয়নি ।গোটা একটা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে সে ।কত কত রাত জেগেছে সে ,, শুধু তার প্রিয়সিকে নিয়ে ভেবে ভেবে। কিন্তু আজ প্রয়সির পাশে বসে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রাত কেটে দিয়েছে সে ।
রাহি এসে বুশরাকে ডাকলো,,
নুর!!
বুশরা শুধু একটু নড়লো ,,
রাহি আবার ডাকলো নুর!!
বুশরা এইবার উঠে বসলো ।
রাহি : তাড়াতাড়ি উঠে, ফ্রেস হয়ে নে ।
বুশরা : হুম ।
রাহি বুশরার পাশ থেকে উঠে চলে যাবে তখনি বুশরা রাহিকে জড়িয়ে ধরলো।
রাহি : কি হয়েছে নুর?
বুশরা : তুমি আমাকে ভালোবাসো রাহি ভাইয়া?
রাহি: আগেই বলেছি আমি তোর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই ।
বলেই বুশরাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল।
বুশরা: এখনো চুপ করে থাকবে রাহি ভাইয়া।
বুশরা উঠে ফ্রেশ হয়ে,, নাস্তা করে রাহি আর বুশরা বের হয়ে গেল।
রাহি গাড়ি থামালো একটা বড় একটা শপিং মলের সামনে এসে ,, বুশরা এতক্ষণ কোন কথা বলে নি ।
রাহি : নাম!!
বুশরা : কেন?
রাহি : নামতে বলছি নাম ।
বুশরা : যদি না নামি??
রাহি : আমাকে বাধ্য করিস না রেগে যাইতে ,,, নকি চাচ্ছিস আমার সঙ্গে রো..মান্স …?
বুশরা রাহিকে কোন কথা বলতে না দিয়ে নেমে পরলো গাড়ি থেকে। রাহি বুশরাকে নিয়ে একটা ফোনের দোকানে আসলো ,,
সেখান থেকে একটা iPhone 16 pro max,,কিনে দিতে চাইলে,,বুশরা বলে আমি এইটা নিবো না।
কোনটা নিবি ,,
বুশরা Samsung latest model টা নিলো ।
রাহি: ফোন টা কিনি দিয়েছি , বাসায় কথা বলার জন্য,আর ফোনে যেন কোন আননোন নাম্বার না দেখি ।
বুশরা কিছু বলবে ,তার আগেই রাহি বলেলো,, কোন কথা শুনতে চাই না।
রাহি বুশরাকে নিয়ে একটা শাড়ির দোকানে গেল,, সেখানে রাহির চোখ গেল একটা সাদা রঙের শাড়ি তে ,,, রাহি বুশরার জন্য সেই শাড়িটা কিনে নিলো । সঙ্গে আরো কয়েকটা ড্রেস।
হাইহিল ,সু ,সহ প্রায় ১০ জোরা জুতো কিনি দিলো । রাহি বুশরার জন্য ১০ রঙের ১০ টা হিজাব কিনে নিলো ।
বুশরা : এতো কিছু কি করবো ?
রাহি: এতো কিছু কোথায়,, আজকে সময় নাই না হলে অনেক কিছু কিনতাম।
বুশরা : আরো ?
রাহি : হুম।
বুশরার রাহির দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরছে । এতোক্ষণ এ সে প্রায় ৫০ টা শাড়ি,৫০ পিস হিজাব, গাউন থেকে শুরু করে সব কিছু কিনছে ।
বুশরা : এতো হিজাব আমি কি করবো । ?
রাহি কোন কথা না বলে গাড়িতে গিয়ে বসলো ,,
বুশরা ও গাড়িতে এসে বসলো ,,,
বুশরা: একটু কম হয়ে গেল না ,,,
রাহি: আর কি লাগবে ,,বল নিয়ে আসছি,,
বুশরা অবাক হয়ে যাচ্ছে রাহির কথা শুনে,
রাহি : আর কি লাগবে বল ।
বুশরা: তোমার কি মাথা খারাপ,, এতো কিছু কিনছো শুধু আমার জন্য, ,, এতো গুলো ড্রেস আমি কি করবো । আর হিজাব আমি তো ভেবেছি আর হিজাব পরবো না।
রাহি মনে মনে বললো তুই চাইলে পুরো পৃথিবী কে কিনে নিবো ।
পরক্ষণেই বুশরার দিকে তাকিয়ে বললো,, হিজাব ছাড়া বাইরে বের হওয়ার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে ,, এর ফল ভালো হবে না।
রাহি বুশরাকে নিয়ে বাসা আসলো ।
তৌফিক বাসায় ছিল,, বুশরা আর রাহি বাসায় এসে দেখে তৌফিক ডাইনিং এ বসে আছে আর ভ্যাভেন ক্যাভেন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তৌফিক: তোমাদের এখন আসার সময় হলো ভাইয়া আর বনু।
রাহি: কেন কি হয়েছে?
তৌফিক: তোমাদের মিস করছিলাম।
রাহি: ক্যাভেন & হ্যাভেন তোমরা গাড়ি থেকে সব কিছু নিয়ে আসো।
ভ্যাভেন ক্যাভেন গাড়ি থেকে সব কিছু নিয়ে এলো ,,,
তৌফিক অবাক হয়ে বললো,,
এতো সব কিছু কে কিনেছে ?
বুশরা : এতো কিছু সব রাহি ভাইয়ার পছন্দ।
রাহি : কিন্তু সব কিছু নুর এর ।
তৌফিক আর কিছু বললো না মুচকি হেসে বলল,, বনুর বিয়ের শপিং করছো নাকি ।
রাহি চোখ রাঙাতেই তৌফিক চুপ হয়ে গেল।
তৌফিক বললো,,: বনু যা ফ্রেস হয়ে রেস্ট নে ।
বুশরা চলে গেল নিজ রুমে।
তৌফিক কালকে রাতের কথা সব রাহি কে বললো ,,,
রাহি চোখ রক্তিম হয়ে উঠলো ,,
সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১৬
বাস্টা.র্ড এতো এতো গার্ড সবার নজর এড়িয়ে আসে কি করে ।
তৌফিক: ভাইয়া শান্ত হও ।
রাহি : ডেক্সি &হ্যাক্সি কে কেমন দেখলে ক্যাভেন ।
ক্যাভেন : ওরা আগের তুলনায় এখন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে বডি দুটোকে মাটি পুঁতে ফেলেছে ।
রাহি হাসলো ।।