সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৩

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৩
বুশরা আহমেদ

-বুশরা বাসা থেকে বের হয়ে আসতে ই দেখতে পেলো বাসর সামনে দুইটা বিএমডব্লিউ গাড়ি রাখা। এই ১৬ বছরে রাহি বাংলাদেশে না আসলেও তৌফিক এসেছে তখন তৌফিক বুশরা, আফরিন, রিফাত আর আয়ান কে নিয়ে ঘুরতে গেছিলো । বুশরা জানে আর .এ কম্পানির অনেক অনেক টাকা আর এই বিএমডব্লিউ গাড়ি কিনা ব্যাপার না। কিন্তু বুশরা জানতো না রাহি দেশে এসে আর একটা বিএমডব্লিউ গাড়ি কিনে ফেলবে। আর বুশরা তৌফিক এর কাছে থেকে শুনেছে রাহি খুব ভালো কার রেসিং করে । তৌফিক এতো ভালো পারে না ।। কিন্তু রাহি কাছ থেকে শিখছে বলে অনেক টাই ভালো পারে এখন।

বুশরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাহি বিরক্ত হয়ে বললো ,, তোর যদি ভাবনা চিন্তা শেষ হয়ে থাকে তাহলে গাড়িতে এসে বস।
বুশরা কিছু না ভেবে পিছনের সিটে বসতে যাবে ,,রাহি বলে উঠলো আমি কী তোর ড্রাইভার??
বুশরা : না । কেন?
রাহি: তাহলে পিছনে বসতেছিস কেন?সামনে আয়।
বুশরা: ভাইয়া , রিফাত, আফরিন, আয়ান ওরা যাবে না?
রাহি : তৌফিক এদের নিয়ে আসবে ।আর এইটা আমার প্রাইভেট গাড়ি । আমি সামনের সিটে অন্য কাউকে বসাই না ।।আর তৌফিক এর নিজ গাড়ি থাকতে আমার গাড়িতে কেন যাবে?
বুশরা: তাহলে আমাকে কেন বসাচ্ছো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাহি: আমি তোর ড্রাইভার নই তাই।। মনে মনে বললো, তুই তো আমার সব কবে বুঝবি এইটা তুই,, তুই হিনা যে আমি নিঃস্ব। বুশরাকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাহির রাগ উঠলো তুই কি উঠবি নাকি আমি চলে যাবো । রাহি গাড়ির দরজা টা খুলে দিতেই বুশরা উঠে পরলো ।রাহি বুশরার দিকে ঝুঁকে যেতেই বুশরার হার্টবিট বেড়ে গেল, বুশরা চোখ বন্ধ করে বললো কী করছো ভাইয়া,,রাহির ভাইয়া ডাকটা শুনে রাগ উঠলো ,,রাহি সিট বেল্ট টা লাগে দিয়ে সরে আসে ।আর বলে আমি কী তোর মায়ের পেটের ভাই লাগি?? রাহি ভাইয়া বলে ডাকার হলে ডাকবি আর নয়তো ডাকবি না।

বুশরা : রাহি ভাইয়া আর শুধু ভাইয়ার মধ্যে পার্থক্য কি??আর আমি তো তৌফিক ভাইয়া কে শুধু ভাইয়া বলে ডাকি । ভাইয়া তো কিছু বলে না..!!
রাহি : চুপ কর স্টুপিট, অভদ্র।তোর মুখের খুব জোর হয়েছে। আমার কথা না শুনলে আমার সঙ্গে কথা বলার দরকার নাই।আর তৌফিক কে শুধু ভাইয়ায় ডাকবি।আর আমাকে রাহি ভাইয়া।
বুশরার রাগ উঠছে,বুশরা বললো আমাকে স্টুপিট অভদ্র বললা তাই না ‌। নিজে তো অসভ্য , বাদর ‌। তুমি দুপুরে আমার রুমে…..বুশরা আর কিছু বলতে পারলো না ।।
রাহি বললো চুপ করলি কেন বল কী করছি আমি । আমার অসভ্যতার কিছুই দেখিছ নি। আর হ্যাঁ মুখে মুখে তর্ক করা আমি একদম পছন্দ করি না।আর যার সঙ্গে কর না কেন আমার সঙ্গে না।

আমিও দেখি তুই এই মুখ মুখে কত দিন তর্ক করতে পারিস!! আর কথা না‌ বাড়িয়ে রাহি গাড়ি স্টার্ড দিল। বুশরাও আর কোন কথা না বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল।গাড়ি চলছে আপন গতিতে। বুশরার রাগ অভিমান একসঙ্গে মিশি অদ্ভুত এক জেদে পরিণত হয়েছে।তাই বুশরা ঠিক করলো রাহির সঙ্গে কথা বললো‌ না। রাহি দেখলো তার নুর জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে তার মুখভঙ্গি শান্ত।সামনে একটা ফুচকার দোকান দেখে গাড়ি থামালো রাহি। রাহি গাড়ি থামাতেই বুশরা রাহি দিকে তাকিয়ে রইলো কিন্তু কিছু বললো না। রাহি বুশরাকে নামতে বললে বুশরা নেমে পড়ে,, বুশরা রাহির সঙ্গে কথা বলবে না তাই চুপচাপ নেমে দাঁড়িয়ে থাকে ।রাহি একটা ফুচকার প্লেট এনে বুশরার সামনে ধরতেই বুশরা খুশি হয়ে যায় পরক্ষণেই বলে” আমি খাবো না” তোকে খাইতে বলি নি।আমাকে খাইয়ে দে ।
বুশরা : আপনি নিজে খান ?আমাকে কেন বলছেন।আর আমি আপনার কেউ না । আর একটা কথা আপনি তো টক খাইতে পারেন না ?? তাহলে ফুচকা খাইতে চাইছেন কেন।
রাহি : তুমি থেকে সোজা আপনি, কয়েক দিন পর আবার তুই বলে ফেলবি ‌।।আর আমি টক খাই না তুই কেমনে জানলি ?

বুশরা: আপনাকে আপনি বলাই ঠিক আছে। আপনি তো আর আমার কেউ না যে তুমি বলবো । আর বড় আম্মু সব সময় বলে রাহি এইটা পছন্দ ওইটা পছন্দ এইটা খায় না এমন কি আম্মুও বলে আমার হাতের রান্না রাহি কতো পছন্দ।। এই গুলো শুনতে শুনতে শুধু আমার না বাসার সবারই আপনার সব পছন্দ অপছন্দের কথা জেনে গেছে।
রাহি বুশরার হাতে জোর করে প্লেট টা ধরিয়ে দিয়ে বললো নে খাইয়ে দে।বুশরা মুখ ফুলিয়ে বললো ,,পারবো না।তাহলে নিজেই খাইয়ে নে।
বুশরা কি করবে বুঝতে পারলো না।তাই সে নিজেই খাইতে শুরু করলো ।রাহি মনে মনে বললো‌,,বড় হয়েছিস সঙ্গে তোর রাগ জেদ , অভিমান গুলোও বেশি হয়ে গেছে ।যা দিন দিন তোর ক্ষতির কারণ হচ্ছে ।
বুশরা দেখলো রাহি তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বুশরা রাহি এর মুখ এর কাছে একটা ফুচকা ধরে বললো হা করুন,,
-রাহি মুখ ঘুরিয়ে নিল।

বুশরা বললো একটু আগেই তো খাইয়ে দিতে বললেন এখন আবার কী হলো।
রাহি বললো চুপ অভদ্র, মুখে মুখে কথা বলা তোর হ্যাবিট হয়ে গেছে তাই না,তুই আমার কে হস যে খাইয়ে দিতে চাচ্ছিস।আর কোন অধিকার এ খাইয়ে দিতে চাচ্ছিস??
কথাটা শুনে বুশরার প্রচুর কষ্ট হচ্ছে ,বুশরার চোখের কোণ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। বুশরা সেইটা বুঝতে দিল না রাহি কে। কিন্তু রাহি ঠিকই বুঝতে পেরেছে।
রাহি উঠে গিয়ে ফুচকা এর বিল পরিশোধ করে দিয়ে,বুশরার দিকে তাকিয়ে দেখলো বুশরা এখনো একি রকমভাবে ফুচকা এর প্লেট নিয়ে বসে আছে মন খারাপ করে।
রাহি বললো,, তোর যদি খেতে হয় খা নয়তো গাড়িতে বস। বুশরার মন আর সাই দিল না খেতে । যেখানে ফুচকা তার পছন্দের জিনিস সেখানে সে ২ টার বেশি ফুচকা খেতে পারলো না। তার ইচ্ছে করছে না।
বুশরা গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি স্টার্ড দিল রাহি , গাড়ি চলছে আপন মনে।
বুশরার জানালার সাইডে গা এলিয়ে দিল আর ভাবতে লাগলো কেন এমন কষ্ট হচ্ছে যে সে সহ্য করতে পারছে না। একটু আগে সে তো রাহিকে বলেছিল যে রাহি তার কেউ না তাহলে এখন যখন রাহি সেই কথাটা বললো এতো কেন কষ্ট হচ্ছে তার।

রাহি দেখলো বুশরা একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। রাহি মনে মনে বললো, তুই শুধু কাঁদবি তোর নিজের মানুষদের জন্য আমার জন্য, কেন ঔ মাহিম এর জন্য কান্না করলি কেন? তোর চোখের পানি যে আমার সহ্য হয় না । তোকে একমাত্র কষ্ট দেওয়ার অধিকার আমার,তোকে কষ্ট আমি দিব আর সেই কষ্টে আমি মলম লাগাবো। শুধু আমার অধিকার আর কারো না। তোকে আমি হাসাবো আমি কাঁদাবো অন্য কেউ না।
বলেই গাড়ি স্পিড বাড়িয়ে দিল গাড়ি চলছে আপন গতিতে স্পিড বাড়িয়ে দেওয়ায় গাড়ি প্রচুর দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বুশরা খেয়াল করলো বিষয় টা কিন্তু রাহির রক্তাক্ত দু চোখ দেখে কিছু বলল না।
বুশরা অভিমান,রাগ , জেদ এইসব বাদ দিয়ে এখন ভয় চেপে ধরল তার মনে । বুশরা খেয়াল করলো রাস্তাটা নিরিবিলি।

গাড়ি এসে থেমেছে ” নুর ভিলা” সামনে।
রাহি নেমে যেতেই বুশরা নেমে পড়লো । বুশরা অনেক বার আসতে চেয়েছিল এই বাসায় তৌফিক যখনি দেশে ফিরে তখনি বুশরা আসতে চায় কিন্তু কোন না কোন বাহানার মাধ্যমে তৌফিক আর নিয়ে আসে না।এই বাসা তৈরি করা হয়েছে দু বছর আগে।এই কারণে তৌফিক কে অনেকবার দেশে আসতে হয়েছে। বুশরা জানে এইটা তৌফিক আর রাহি এর বাসা । বুশরা দেখতে পেলো বাসাটা ডুপ্লেক্স। সামনে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল শত শত গোলাপ গাছ, আর তাতে ফুটে আছে শত শত লালা গোলাপ। বুশরা আর একটু এগিয়ে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো সাদা গোলাপ দেখে ।একটা সাদা গোলাপ গাছ যেটাকে ঘিরে আছে একটা গোলাপ গাছ। বুশরা দেখলো পেল গাছটাই সবে কলি ফুটেছে আর সেইটা কালো রঙের।বুশরা বেশ অবাক হলো সাদা গোলাপ পাওয়া গেলেও কালো গোলাপ পাওয়া অনেক কঠিন। কিন্তু এই গাছ গুলো কে লাগিয়েছে,, তৌফিক ভাইয়া তো বাংলাদেশে আসলেও বেশি দিন থাকতো না। আর তা ছাড়া গাছ গুলো দেখে মনে হচ্ছে অনেক যত্ন নেওয়া।

সব রকমের গোলাপ গাছ আছে কয়েকটা গাছে হলুদ আর গোলাপি রঙের ফুল ফুটেছে। বুশরার মনে হাজার রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।বুশরা সামনে যেতেই দেখলো বাড়ির সামনে বড় করে লেখা “নুর ভিলা” বুশরা আর এক দফা অবাক হলো। বুশরা যত দুর জানে এইটা রাহি আর তৌফিক এর বাসা তাহলে নুর ভিলা কেন। বুশরার নাম ছাড়া তো আর কারো নাম নুর নেই তাহলে ।। কেন এই বাসার নাম “নুর ভিলা” । নুর ভিলা তো বুশরার স্বপ্নের বাড়ি যেখানে থাকবে শত শত গোলাপ গাছ,, কিন্তু এই সব কী করে এতো মিল। বুশরা তো এই সব কাউকে বলে নি।সব তো ও তার ডাইরি তে লিখতো তাহলে।।,,
বুশরার ভাবনার অবকাশ ঘটে একজন লোক এসে বলে ” ম্যাম স্যার ভিতরের আছে আপনাকে ভিতরে যেত বললো”।

বুশরা কে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল লোকটা। লোকটার বয়স বেশি না ৩৫ কি ৩৭ হবে ।
লোকটা চলে যেতেই বুশরা নুর ভিলা এর মধ্যে প্রবেশ করে। সেখানে গিয়ে সে আরো অবাক হয়। কেন না এই বাসা থিম টা একদম সাদা তার মনের মতো।বুশরা দেখলো সামনে রাহি, তৌফিক, আফরিন, রিফাত, আয়ান সবাই বসে আছে। তাদের সামনে অনেক গিফট।
বুশরা: ভাইয়া তোমারা কখন আসলে?
তৌফিক: অনেক আগে।তুই কই ছিল,,?ভাই তো অনেক আগেই আসছে বাসার মধ্যে।
বুশরা দেখলো রাহি আয়ান কে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি গুলো নিয়ে খেলতে শিখে দিচ্ছে। বুশরা বললো ভাইয়া আমার তোমার সঙ্গে কথা আছে।

তৌফিক: হুম জানি।রাগ করে আসিস। তোর গিফট গুলো তোর রুমে আছে গিয়ে দেখ তো পছন্দ হয় কিনা।
বুশরা বললো এই বাসা টা তোমার আর তোমার ভাই এর তাহলে এখানে আমার রুম কেন??
তৌফিক কিছু বলবে তার আগেই আফরিন আর রিফাত বললো আপু দেখ তৌফিক ভাইয়া আর রাহি ভাইয়া আমাদের জন্য কতো কি নিয়ে আসছে।আসলে এই গুলো সব এই বাসায় ছিল তাই ভাইয়া দিতে পারিনি কালকে ।আমরা শুধু রাগ করছি।
রিফাত বললো আপু দেখ আমার আর আফরিন এর জন্য আপেল ওয়াচ। কেমন হয়েছে?
বুশরা বললো খুব ভালো। তোমারা গিফট দেখ আমি আসতেছি। তৌফিক বুশরা কে নিয়ে একটা রুমে গেল দুই তালায় । রুম টা অনেক বড় আর ঠিক তার মনের মতো করে সাজানো। সবকিছুই সাদা রং দিয়ে কালার করা। সামনে একটা বড় আলমারি কী আছে এই আলমারি তে।
তৌফিক বললো এইটা তোর রুম।

বুশরা: আমার রুম মানে। আর এই বাসা টা তোমার আর তোমার রাহি ভাই এর।এই বাসার নাম নুর ভিলা কেন??কারো নাম তো নুর নেই আমার নাম ছাড়া তাহলে । এই বাসার নাম নুর কেন।
তৌফিক: এই প্রশ্ন গুলো ভাই কে করিস ভাই ভালো উত্তর দিতে পারবে ।
আমি তোমার কাছ থেকে শুনতে চাইছি।
তৌফিক: বুশরার সামনে একটা বক্স ধরে বলে তোর গিফট।
বুশরা : কী এইটা।
তৌফিক: তুই খুলে দেখ।
বুশরা খুলে দেখলো বিভিন্ন ধরনের ব্রান্ডের কসমেটিক,আর একটা বক্স এ বিভিন্ন ধরনের চকলেট।
তৌফিক: পছন্দ হয়েছে তোর ? এই যে নে এইটাও তোর।
এই টা ভাই তোর জন্য কিনিছে।
বুশরা দেখলো একটা আপেল ওয়াচ আর একটা অ্যপেল ল্যাপটপ।
বুশরা বললো এই গুলো তো আমার চাই না। আমি এতো কসমেটিক কি করবো আর এই ল্যাপটপ আমার দরকার নাই।

তৌফিক: আমি জানি তুই মেকআপ করিস না ‌‌।এই গুলো এই রুমে সাজে রাখবি যখন মন চাইবে সাজবি।
বুশরা : তুমি কিন্তু আমাকে এখনো বললে না এই বাসার নাম নুর ভিলা কেন? আর তুমি কেন আমার সঙ্গে দেখা করলে না।
তৌফিক: তোকে যে মাহিম দেখতে আসবে এইটা আমাকে কী এক বারো জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। মাহিম ভালো ছেলে না বনু। মামনি আর বাবা কে আমি আমার নিজের মা বাবা এর মতো ভালোবাসি ।তারা কেন এক বারো আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না। আমি কী তাদের পর হয়ে গেছি।
বুশরা: আমি জানতাম না ভাইয়া যে আমাকে দেখতে আসবে। কিন্তু সকালে জানতে পেরেছি।আমি কী করবো বলো আমি তো কোথাও চান্স পেলাম না। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না ভাইয়া। কিন্তু তুমি কেন রাগ করে চলে আসলে।
আমার সঙ্গে দেখা না করেই।
তৌফিক: একটু রাগ করছিলা কিন্তু সব এখন আর রাগ করে নাই। তখন একটু মামনি আর বাবা সঙ্গে রাগা রাগি করছি কিন্তু।সব ঠিক করে নিছি । আর একটা কথা তুই আমার আর রাহি ভাই এর সঙ্গে আমিরিকা তে যাবি। আর ওখানে আমি তোকে ভর্তি করে দিব।
বুশরা : আমিরিকা তে কিন্তু ভাইয়া। আব্বু আম্মু কে ছাড়া কী করে ।আর আম্মু আব্বু কী রাজি হবে।
তৌফিক: তোকে ভাবতে হবে না। সামনে মামনি আর বাবা এর ২৪ তম বিবাহ বার্ষিকী। তার পরেই আমরা চলে যাব ।

বুশরা খুব ইচ্ছে দেশের বাইরে যাওয়ার কিন্তু।এই ভাবে ও কখনো ভাবে নি। ভেবেছিল যে দেশের বাইরে যাবে তৌফিক ভাইয়াকে বলবে কিন্তু বলা হয়ে ওঠে না।
আর রাতে আমরা বারবিকিউ পার্টি করবো । এখন রেস্ট নে ।
বুশরা: সামনে এতো বড় আলমারি তে কি আছে?আর এইটা তে তো তালা দেওয়া।
তৌফিক: যে তোর রুম সাজিয়েছে সে ভালো করে জানে কি আছে আর তার কাছেই চাবি আছে ।আর তোকে আমাদের সঙ্গে আমিরিকায় নিয়ে যাবো এখনি কাউকে বলিস না। সবাই জানে এই নুর ভিলা আমাদের ৬ জনের।মানে রাহি ,আমি ,তুই , রিফাত, আফরিন আর আয়ান এর। তুই ও এইটা জানে রাখ যে এই বাসা টা ভাই নিজের টাকা দিয়ে তৈরি করেছে।কারো আর . এ কম্পানি থেকেও এই টাকা নেই নি। আর বনু ভাই কে কখনো ভুল বুঝবি না।

বুশরা বুঝলো না তৌফিক কেন ভুল বুঝার কথা বললো । কেন বা সে রাহিকে ভুল বুঝবে।তখনি রাহি আর আয়ান আসলো ।
আয়ান এসে বুশরার কোলে উঠে গেল।আপু তুমি শুধু ভাইয়ার সঙ্গে গল্প করছো আমার সঙ্গে করো না কেন।
বুশরা : তুমি তো আমার সঙ্গে কথা বলো না তুমি তো শুধু ফোন নিয়ে থাকো।
আয়ান:তোমার ফোন দেও আমি গেম খেলবো।আজকাল কার বাচ্চা দের এই এক জ্বালা শুধু ফোন। বুশরা কিছু বলবে তার আগেই রাহি বললো তৌফিক তোদের ভাই বোনের কথা শেষ হলে আয়ান কে নিয়ে নিচে যা।
তৌফিক আয়ান কে নিয়ে যেতেই বুশরা বের হয়ে যেতে লাগলো।রাহি বুশরার হাতে একটা চাবি দিয়ে বললো আলমারি টা খোল।
বুশরা কিছু বললো না। চাবি দিয়ে আলমারি টা খুলতেই অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে গেলো।
আলমারি তো নয় যেন শাড়ির শো রুম।

বুশরা দেখলো দশ বারো টা নয় ১০০ টা বেশি কোন কালার এইখানে এতো শাড়ি দেখে তার মাথা ঘুরতেসে। কিন্তু এখানে সাদা আর কালো রঙের শাড়ি বেশি।
পাশে একটা বক্স।বুশরা বুঝলো এইটা কিসের বক্স এই জুয়েলারি বক্স। বক্স টা খুলতেই চোখে পরলো সুন্দর একটা ডায়মন্ড এর নিকলেস । বুশরা রাহির দিকে তাকালো রাহি বুশরাকে ইশারা করলো পাশের ওয়ারড্রোপটা খুলতে বুশরাও তাই করলো বুশরা আরেক দফা অবাক হলো কারণ সেখানে ছিল
বিভিন্ন ধরনের ব্রান্ডের হাই হিল যা বুশরার স্বপ্নের মতো লাগছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বান্ড্রের হিল ও আছে এখানে।

বুশরা আর দেরি না করে পাশে থাকা ছোট আলমারি টা খুলতেই দেখতে পেলো বিভিন্ন কালারের হিজাব।
বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে রইল। বুশরা কিছু বলবে তার আগেই রাহি বললো ” পছন্দ হয়েছে তোর” ?
বুশরা কি বলবে বুঝলো না। বুশরা বললো: এইগুলো কার ?
রাহি: এই রুম টা যার !
বুশরা : কিন্তু কেন তার জন্য এতো কিছু।
রাহি : আমি মুখে মুখে তর্ক বা কথা বলা কোন টাই পছন্দ করি না।আর তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে এসে একটা সুন্দর দেখে শাড়ি পরবি ।
বুশরা : কেন?
রাহি : তোর প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি।
বুশরা : পারবো না।

রাহি বললো ওকে তাহলে তুই কি চাচ্ছিস আমি তোকে জোর করি ।
বুশরা ভয় পেয়ে গেল এমনিতেই এই মানুষ টার কাছে গেলে বুক ব্যথা করে আর যদি,,না না কি ভাবছি আমি।
বুশরা বললো আমি শাড়ি পড়তে পারি না।
রাহি জানে বুশরা শাড়ি পরতে পারে না।তাও সে বললো শাড়ি পরতে পারিসনা আবার বিয়ে করার জন্য লাফাছিলিস?
বুশরা মনে মনে বললো বিয়ে করলে তো বর শাড়ি পরে দিতো। আমাকে তো আর নিজে পরতে হতো না।
রাহি বললো তোর বর শাড়ি পরে দিতো কি না জানি না কিন্তু তুই চাইলে আমি পরে দিতে পারি ।
বুশরা অবাক হলো সে তো মনে মনে কথাটা বলছে তাহলে এই লোক কি মন পরতে পারে নাকি।
রাহি বললো: আফরিন কে বল হেল্প করতে।
বুশরা বললো আফরিন পারে না।
রাহি কিছু বলবে তার আগেই রাহি বললো আমি পড়িয়ে দিব । ফ্রেস হয়ে নে।
বুশরা বললো না ‌আমি শাড়ি পরবো না ‌।
আমি তোর কোন কথা শুনতে চাইছি না।
আর আমি তো বলছি না সব কিছু পরিয়ে দিব ।নাকি তুই চাচ্ছিস আমি ইনার থেকে শুরু করে ব্লাউজ সব কিছু পরিয়ে দেই ।

বুশরা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না সে জানে না রাহি কেন তাকে এতো লজ্জায় ফেলে দেয় আর কেন বা সব সময় রাহি তার কাছে চলে আসছে এতো টা ।আর কেন বা সে রাহিকে কিছু বলতে পারছে না। কিছু বলতে গেলেই লজ্জায় পরে যাচ্ছে বার বার।আর কেন তার এতো লজ্জা,বুকে ব্যথা অনুভব হয় তবে কি সে রাহিকে ,,না‌ না কিছুতেই না।
রাহি বললো: তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নে।
বলেই রাহি নিজের রুমে চলে গেল ফ্রেস হতে । রাতে সব আয়োজন করা হয়েছে বারবিকিউ পার্টি এর জন্য।
বুশরা শাড়িটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে কিভাবে পরবে । তখনি রাহি এসে শাড়িটা নিয়ে তাকে নিজের কাছে টেনে সামনাসামনি দাড় করিয়ে।যেইটা পারবি না সেই কাজ টা করার জন্য আমি আছি।
বুশরার লজ্জায় লাল হয়ে গেছে তার পরনে ব্লাউজ আর পেটিকোট।রাহি বুশরাকে বললো সাদার সঙ্গে কালো মানায় না। সাদা পরতি ।

বুশরা রাহির দিকে তাকাতেই দেখলো রাহি তার নজর তার ঘাড়ের দিকে। বুশরা ঠিক করতে যাবে তখনই রাহি তার ঘাড়ে হাত দিয়ে ইনার টা ঠিক করে দিলো ।
বুশরা যেন পাথর হয়ে গেছে রাহি শাড়ি পরাতে শুরু করলো আর বুশরা পাথর এর মতো দাঁড়িয়ে আছে। রাহির শক্ত হাত যখন বুশরার নরম পেটে ছোয়ালো তখন বুশরার ভিতরে যেন ঝড় বয়ে গেলো বুশরা নিমিষেই চোখ বন্ধ করে নিলো । বুশরার শরীরে এইভাবে প্রথম পুরুষের ছোঁয়া । যার মধ্যে শুধু ভালো লাগা কাজ করছে।
রাহি বুশরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল ” এতো টুকু তেই তোর এই অবস্থা বেবি গার্ল ” তাহলে একটু ভেবে দেখ আমি এতো গুলো বছর তোকে না ছুঁয়ে কিভাবে থেকেছি।
রাহির বুশরাকে শাড়ি পরিয়ে দেওয়া শেষ হলে রাহি বুশরার ঘাড়ে থাকা তিলটা আলতো করে কামড় দেয় ।
বুশরার এতো ক্ষণে হুস ফিরল কি ভাবছিল সে এতোক্ষণ।রাহি দিকে তাকিয়ে বললো আপনি কী পাগোল যখন তখন এই ভাবে কামড় দেন কেন..?

রাহি বললো আমাকে দিবি না?
বুশরা বললো কি ।রাহি বললো ভুলে গলি তুই না বলছিলি আমি যা যা দিব তাই তাই ফেরত দিবি ।
বুশরা বললো পারবো না।
রাহি আর কথা না বাড়িয়ে আলমারি থেকে ডায়মন্ডের নিকলেস টা এনে বুশরার গলায় পরিয়ে দিল। দিয়ে বুশরার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল ” white queen, baby girl” তোকে অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।
বলেই চলে গেল বুশরা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে রাহি কি বললো । কিন্তু কেন বললো ।তবে কি রাহি ,,বুশরা বললো না কি যা তা ভাবছি ।

বুশরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখলো অবাক হলো সে এতো সুন্দর করে শাড়ি পারাতে কোথায় শিখলো রাহি‌। আর সত্যিই তাকে অপূর্ব সুন্দর লাগছে। রাহির ভাষায় “white queen”
এই দিকে রাহি ছাদে গিয়ে দেখলো বারবিকিউ প্রায় রেডি।
তৌফিক: ভাই বুশরা কোথায় ‌
রাহি : আসতেছে।
তৌফিক: ভাই একটা গান শোনাতেই পারিস অনেক দিন শুনি নি।
আফরিন আর রিফাত বললো ভাইয়া তুমি গান গাইতে পারো।আপু অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে ।
রাহি জানে বুশরা অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে। বুশরার এমন কোন জিনিস নাই যা রাহি জানে না।
আফরিন বললো প্লিজ ভাইয়া একটা গান শোনাও ‌।
রাহি বললো ‌আচ্ছা তুই যখন বলেছিস তাহলে শোনাচ্ছি ।রাহি দেখলো সিঁড়ি দিয়ে বুশরা আসছে ,,রাহি গিটার 🎸 টা হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করলো ,,

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ২

একটা প্রেমের গান লিখেছি ,,
আর তাতে তোর নাম লিখেছি,,
মাঝরাতে বদনাম হয়েছে মন ,,
যেই না চোখের ইচ্ছে হলো ,,
তোর পাড়াতে থাকতে গেলো,,
ডাকনামে তোর ডাকতে গেলো মনন,,
কী করি এমন অসুখে.. ,,,
জমেছে মরণ এ বুকে,,
🎵🎵🎵🎵🎶
যা চাওয়ার চেয়ে নে ,,
যা হওয়ার হয়ে নে আজকেই ,,
এই দিন বেশামাল তোর ষষ্টি নাজেহাল,,
দেখে কষ্ট হলো কাল ঝড়াটাকে,,
ওওও তাইতো প্রেমের গান লিখেছি,,
আর তাতে তোর নাম লিখেছি আর,,
তাতে তোর নাম লিখেছি,,
মাঝরাতে বদনাম হয়েছে মন,,
যেই না চোখের ইচ্ছে হলো,,
তোর পাড়াতে থাকতে গেলো,,
ডাকনামে তোর ডাকতে গেলো মনন,,,
কি করি এমন অসুখে,,
জমেছে মরণ এ বুকে,,
🎶🎵🎵🎵

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here