সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৫
বুশরা আহমেদ
তারিখ ৪-৬-২০২৫
“নুর ভিলা ” পরের দিন সকালে বুশরা খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে তার রুমের বেলকুনিতে এসে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে বাগান টা । শত শত ফুল ফুটে আছে তার ঠিক সামনে বাগানে। বুশরা ঠিক করলো সে এখন বাগানে যাবে ।
যেই ভাবা সেই কাজ।সে চলে এলো বাগানে।
সূর্য উদয় হচ্ছে ঔ নীল আকাশে, হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে। বুশরা বাগানের চারিদিকে ঘুরছে আর ফুল গুলোর সুবাস নিচ্ছে। বুশরার মনটা বেশ ফুরফুরে।
সামনে তাকাতেই দেখলো ।রাহি সেই সাদা গোলাপ,আর তার পাশে থাকা গাছটাতে পানি দিচ্ছে। বুশরাকে দেখে রাহি বললো।
এই সময় তুই বাগানে কেন?
বুশরা : মন চাইলো তাই।
বুশরার পরনে শুধু ফুল হাতা গেঞ্জি আর পান্ট।রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ফুলের উপরে পানির ফোঁটা পরে আছে ।
বুশরা নিশ্চুপ হয়ে আসে । বুশরা ব্যাস্ত ফুলের রাজ্যে হারিয়ে যেতে। বাগান বিলাস না বলে গোলাপ বিলাস বলে এটাকে।
অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে ফুল গাছ গুলোতে একটু বেশিই ফুল ফুটেছে।রাহি গাছ থেকে তিনটা ফুল ছিঁড়ে বুশরার বেনুনিতে গুঁজে দিল।বুশরা কিছুটা অবাক হলো কিন্তু কিছু বললো না।
বুশরা রাহি কে বললো , আচ্ছা তুমি তখন থেকে এই দুইটা গাছেই পানি দিয়ে যাচ্ছো কিন্তু আর গাছ গুলোতে দিবে না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রাহি : আমার দায়িত্ব এই দুইটা গাছেই পানি দেওয়া।আর বাকি গাছ গুলোতে পানি দেওয়ার জন্য তো লোক আছেই।
আর তুই পারলে এই গাছ দুটোর যত্ন নিস।আর তোর ইচ্ছে হলে অন্য গাছ গুলোরও যত্ন নিতে পারিস।
বুশরা : শুধু এই গাছ গুলো দুটো কেন?
রাহি : আমার ইচ্ছে তাই ।আর তোর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি।
বুশরা কিন্তু পানি দেওয়ার তো কোন প্রয়োজন নেই রাতে
বৃষ্টির কারণে পানি পেয়েছে অনেক।
রাহি কিছু বললো না।
হুট করেই বৃষ্টি পরতে শুরু করলো ।
রাহি তার গায়ে থাকা জ্যাকেট টা বুশরার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বললো চল ভিতরে ।
ভিতরে এসে দেখে দেখলো সবাই উঠে গেছে। আয়ান ও উঠে বসে আছে। সবার সঙ্গে।
তৌফিক: বনু তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে খেতে আয় ।নেক প্লানিং বাকি আসে
বুশরা : আসতেছি ।
রাহি ফ্রেস হয়ে খেতে বসলো ।
বুশরাও ফ্রেস হয়ে খেতে বসলো।
বুশরার এক পাশে আয়ান আর তার সামনে রাহি ।
আফরিন: আপু তুই ভাইয়ার জ্যাকেট পরে আসিছ কেন?
বুশরা: এমনি।
রিফাত: তোর সব কিছু তেই মাথা ব্যথা কেনরে ?
আফরিন: আমি সেইটা বলি নি।আপুকে জ্যাকেট টাতে Beautiful লাগতেছে তাই বললাম।
রিফাত: হুম।আপু You look like a pretty lady .
আফরিন: আপু তোমার চুলে তরতাজা ফুল দেওয়াতে তোমার সুন্দর্য আরো বেড়ে গেছে ।
বুশরা নাহার এর মাথায় আসতে করে মেরে বললো ” কি ব্যাপার রে তোর?? ভাইয়া আর রাহি ভাইয়া আসার পর থেকে তোর মুখে শুধু আমার প্রশংসা। তুই তো সারাক্ষণ ঝগড়া করতি । এখন কি হয়েছে।
আফরিন রাহির উদ্দেশ্যে বলে দেখছো ভাইয়া আপুর প্রশংসা করলেও সন্দেহ করে । আল্লাহ এমন বোন তুমি কারো দিও না। যার প্রশংসা করলেও দোষ ঝগড়া করলেও দোষ।
বুশরা: হইছে ঢং করতে হবে না। তারাতাড়ি খাবার শেষ কর । বলেই বুশরা প্লেটে খাবার নিয়ে নিজেও খেতে বসলো।
খাওয়া শেষে যে যার মতো সোফায় বসে আসে।
তৌফিক: বনু মামনি আর বাবা এর ২৪ তম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে ছোট একটা আয়োজন করতে চাচ্ছি ।
বুশরা : কিন্তু আম্মু আব্বু এর বিবাহ বার্ষিকী সেইটা তো১৪ জানুয়ারিপার হয়ে গেছে।
তৌফিক: জানি ।কিন্তু তোরা কোন সেলিব্রেশন করিস নি। তাই আমি আর ভাই মিলে প্লান করেছি। এইটা যে আর তিন দিন পর যেহেতু আমরা ।তারা এক সঙ্গে ২ যুগ অতিবাহিত করেছে ।তাই আমি চাইছি এইটা ।আর তুই তো জানিস আমরা ঈদ -উল -আজহা এর পর আমেরিকা তে চলে যাবো আর কবে ফিরবো ঠিক নাই ।আর তাই এইটা একটা গেট টুগেদার।আর মামনি আর বাবা এর ২৪ তম বিবাহ বার্ষিকী টাও সেলিব্রেট করা হয়ে যাবে ।
রাহি : সব কিছু প্লান করা হয়ে গেছে। এখানে আমার আর তৌফিক এর কিছু ফ্রেন্ড আসবে । আর আফরিন আর রিফাত তোমাদের কোন ফ্রেন্ড কে বলার থাকলে বলে দেও ।
তৌফিক: এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও সবাই। তাড়াতাড়ি ঐ বাসায় ফিরে সব আয়োজন করতে হবে।
বেলা ১১ টা বেজে ২০ মিনিট সবাই “আহমেদ মেনসন” এ এসে পৌঁছায় । তৌফিক আর রাহি তাদের নেমে দিয়ে চলে গেছে কোন এক দরকার এ । বুশরারা বাসাই ডুকতেই আয়ান গিয়ে মিসেস: রেবেকা আহমেদ (রেবা) কে জড়িয়ে ধরে।
রেবা আহমেদ ও আয়ান কে কোলে নিয়ে আদর করে।
আয়ান: আম্মু তুমি স্কুল এ যাওনি।
রেবা আহমেদ: না বাবা এখন স্কুল বন্ধ। ঈদের ছুটি।
আয়ান কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে।
রেবা আহমেদ: বুশরা রাহি আর তৌফিক কোথায়??।
বুশরা : জানি না। আমাদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।বললো বিকেলে ফিরবে কি জানো দরকার।
রেবা আহমেদ: ওহ্। যাও তোমারা ফ্রেস হয়ে রেস্ট নেও।
বুশরা : যাচ্ছি আম্মু।
যে যার মতো রুমে চলে যায় । অতিরিক্ত গরম আর রোদ বাহিরে । বর্ষা কাল নয় তবুও হুট করেই বৃষ্টি হচ্ছে আবার একটু পরেই রোদ উঠেছে সঙ্গে গরম।বুশরা রুমে এসে একদম ড্রেস নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।তার এখন সাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন। মাথা প্রচুর ব্যাথা করছে । বুশরার দুইটা প্রবলেম। একটুতেই রেগে যাওয়া আর রাগ করার কারণে কান্না করা ।আর কান্নার ফলে মাথা ব্যথা। মাঝে মাঝে এমনি ব্যাথা হয় ।ম্যাইগ্ৰেসন এর ব্যাথা । অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে ।
বুশরা ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে সুয়ে পরলো ভিজে চুল নিয়েই। এমটা বুশরা করে না । কিন্তু এখন বড্ড খারাপ লাগছে তাই সে যহরের নামাজ পড়ে সুয়ে পরে ।
ফোনটা হাতে নিয়ে হিয়াকে ম্যাসেজ করে দেয়। বিকেলে বাসাই আসতে ।
ফোনটা রেখে দিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঐ দিকে তৌফিক আর রাহি গেছে রাফি আর মাহমুদ এর সঙ্গে দেখা করতে । তৌফিক আর রাহি তাদের বাড়ির পাশে মাঠের কাছে আসতেই দেখতে পেল গাছের নিচে বসার ব্যবস্থা করা আছে সেখানেই রাফি আর মাহমুদ বসে আছে।
তৌফিক আর রাহি গাড়ি থেকে নামতেই রাফি আর মাহমুদ তাদের জড়িয়ে ধরে ।
বললো ,,Long time no see bro .
রাহি : হ্যাঁ অনেক দিন পর এই জায়গায়।এক সঙ্গে।
রাফি: হুম। আমিরিকাতে সেই এক বছর হচ্ছে যাই নি ।এক বছর আগে দেখা হয়েছে আর এখন।
মাহমুদ: তারপর রাহি বুশরা কে ১৬ বছর পর দেখে কি মনে হলো । কেমন লাগলো তোর , অনুভূতি কি?
রাহি : কিসের অনুভূতি বলবো । যখন বাসায় এসে শুনি আজকে নুর কে দেখতে আসবে।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিল।তবে
“”নুরের চোখে আমি আমার পৃথিবী দেখেছি। আমার মনে হয় নি যে আমি ১৬ বছর পর তাকে দেখছি আমি তো সেই ছোট্ট নুর কেই দেখেছি ।আমার বেঁচে থাকার কারণ দেখেছি । নুর যখন সিঁড়ি দিয়ে নামে তখন আমি তাকে প্রথম দেখেছি সাদা রঙের থ্রি পিজ এ।সাদা রঙে তাকে একদম সাদা পরীর মতো লাগছিল।মনে হচ্ছিল সদ্য ফুটে ওঠা একটা আস্ত সাদা গোলাপ।যার মাঝে নেই কোন অপবিত্রার ছোঁয়া,একদম পবিত্র আর নিষ্পাপ,যাকে ছুঁইয়ে দিলে ঝরে পড়ে যাবে। সে শুধুই আমার, আমার হৃদয় হরণী,আমার নুর, আমার White queen 🤍, আমার বেবিগার্ল।””
তৌফিক মুসকি হাসে । কিন্তু রাফি আর মাহমুদ রাহির দিকে হাঁ করে তাকে থাকে বলে ,,
বাহ্ ভাই বাহ্ বুশরাকে এতো ভালোবাসিস । এতো নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করলি ।
রাহি মুসকি হেসে বললো শুধু ভালোবাসি না , নুর আমার হৃদয় হরণী, আমার অস্তিত্ব, আমার আত্তা । নুর যতদিন আমিও ততোদিন। নুর ছাড়া এই রাহি নিঃস্ব।
তৌফিক: হুম ভাই এখন বাদ দাও । তুমি যদি বনুর কথা ভাবতে শুরু করো আজকে সারাদিন পার হয়ে যাবে । ভুলে গেলে বাসায় গিয়ে কতো কিছু আয়োজন করতে হবে।
রাহি : না ভুলি নি।তোরা সব কিছু কিনেছিস ।
রাহি বুশরাদের বাসায় নেমে দিয়ে।রাফি আর মাহমুদ কে ফোন করে বলে যে কালকে ছোট আম্মু আর ছোট আব্বু এর ২৪ তম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে ছোট সেলিব্রেশন সেই জন্য বাসা সাজাইতে যা যা লাগে কিনে অপেক্ষা করতে ।
তারাও তাই করে ।রাহি তৌফিক রাফি মাহমুদ মিলে আহমেদ মেনসন টা পুরো সাজিয়ে ফেলে । সাজাতে সাজাতে সন্ধ্যা লেগে যায় ।
রেবেকা সুলতানা আর রেজা আহমেদ কে জানানো হয় নি যে তাদের জন্যই এতো আয়োজন।তারা জানে ছোট একটা গেট টুগেদার।রাহি তৌফিক তাই বলেসে তাদের কে । সন্ধ্যা ৭ টা।বুশরা উঠেছে অনেক আগেই।
ম্যাথাটা আরো বেশি ব্যাথা করছে ।কয়টা বাজে।বুশরা দেখলো ৭ টা বেজে গেছে কিন্তু হিয়া আসলো না।?? বুশরা ফোনে ম্যাসেনজার এ গিয়ে দেখলো হিয়ার ম্যাসেজ সরি আজকে যেতে পারলাম না।কালকে অবশ্যই যাবো । বুশরার রাগটা আরো বেড়ে গেল এমনিতেই বুশরা দুপুরে ঘুমাই না।
দুপুরে ঘুমালে বুশরার প্রচুর মাথা ব্যথা করে ।তার খুব ঘুম পাচ্ছিল দুপুরে সেই জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে।
এই দিকে রেবা আহমেদ রাহিদের নাস্তা খেতে দিলো । রাহির খুব মন চাচ্ছিল বুশরার হাতের কপি অ্যান্ড নুডুলস খেতে । তৌফিক এর মুখে অনেক শুনেছে তার নুরের হাতের রান্না মাশাআল্লাহ।কিন্তু রাহি খেয়াল করলো বুশরা এখনো নিচে নামি নি । বিকেল থেকে কাজের ব্যস্ততা থাকায় তার খবর টাও নেই নি রাহি।
আয়ান এসে রাহির পাশে এসে ফোন টা নিয়ে গেমস্ খেলছে।
রাহি: আয়ান তোমার আপু কোথায়?
আয়ান: বুশরা আপু রুমে।
রাহি: ছোট আম্মু বুশরা এখনো নিচে নামে নি।
রেবা আহমেদ: না । বাসায় এসে সেই যে রুমে গেছে । এখনো নিচে আসে নি। দুপুরেও খায় নি।ডাকছিলাম তখন গিয়ে দেখি ঘুমাচ্ছে।
তৌফিক: সে কি মামনি ,,বনু তো দুপুরে ঘুমায় না । দুপুরে ঘুমালে তো বনু এর মাথা ব্যথা করে।
রাহি: তোমারা থাকো আমি দেখে আসি।
রাহি বুশরার রুমে সামনে এসে দেখলো । রুমের দরজা খোলা। তাই রাহি তার রুমে ঢুকে গেলো।দেখলো রুম অন্ধকার।রাহি লাইট অন করতেই দেখতে পেলো বুশরা মাথা হাত দিয়ে ধরে বসে আছে। রাহির বুঝতে আর বাকি রইলো না। অতিরিক্ত টেনশন করে ঘুমানোর কারণে । মাথা ব্যথা।
রাহি: কি হয়েছে মাথা ব্যথা??
বুশরা: মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে। কেন যে ঘুমাইতে গেলাম।
রাহি: ফ্রেস হয়ে নিচে আয় । কিছু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নে ।ঠিক হয়ে যাবে।
রাহি বুশরার মাথায় হাত দিয়ে দেখলো এখনো চুল গুলো ভিজা।
রাহি বললো এখনো চুল ভিজে আসে এই জন্যই তো মাথা আরো ব্যাথা করছে।রাহি বুশরার ওয়ারড্রোপ থেকে হেয়ার ড্রায়ার বের করে নিয়ে এসে তার চুল গুলো শুকিয়ে দিতে লাগলো।
বুশরা বললো আমি নিজে করে নিচ্ছি।
রাহি : চুপ করে থাক নিজে করতে পারলে এতোক্ষণ করিছ নি কেন।
এইদিকে বুশরার মাথা ব্যথা কমার নাম নিচ্ছে না।তাই চুল শুকানো শেষ হলে বুশরা তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নেয় ।রাহি নিচে নেমে আসে। কিছু ক্ষণ পর বুশরাও আসে । বুশরা সিঁড়ি তে এসে অনেক অবাক হয় । ড্রয়িং রুমের লুক পুরো চেঞ্জ। সিড়ির দুই সাইডে রং বেরঙের লাইটিং করা । ড্রয়িং রুমের এক পাশে বেলুন দিয়ে ডেকোরেশন করা । কিছু কিছু লেখা হয়নি। পরে লেখা হবে হয়তো । আব্বু আম্মু জন্য সারপ্রাইজ।
বুশরা নিচে এসে দেখলো রাফি আর মাহমুদ।বুশরা তাদের সালাম দিলো । বুশরা ছোট থেকেই তাদের চিনে । তৌফিক আর রাহির ফ্রেন্ড হিসেবে। তারা সব সময় বুশরাকে বোনের মতোই দেখে।
রাফি: মাথা ব্যথা কমছে বুশরা ?
বুশরা : আপনি কেমন করে জানলেন ভাইয়া ?
মাহমুদ: তোমার ভাইয়া আর রাহি তো বললো তোমার মাথা ব্যথা।
বুশরা: ওহ্।না কমে নি।
রাহি প্লেটে কিছুটা ভাত আর একটা সিদ্ধ ডিম , সঙ্গে কিছু সবজি । নিয়ে এসে বুশরার পাশে বসলো ।
রাহি ভাত মেখে বুশরার মুখের সামনে ধরল। বুশরা অবাক হলো অনেক। সামনে রাফি আর মাহমুদ বসে আছে কি করে খাবে সে । বুশরার লজ্জা পেল অনেক। তৌফিক এর সামনে বুশরার এতো লজ্জা পায় না। মায়ের পেটের ভাই না হলেও সে তার ভাই সেই যখন থেকে বুশরার জন্ম বুশরা তৌফিক কে নিজের ভাই এর মতোই দেখে । তারপর যখন তৌফিক এর মা বাবা মারা যায় তখন থেকে তৌফিক বুশরার আম্মু আব্বু কেই মামনি আর বাবা বলে ডাকে ।তাও বুশরার জোদ এর কারণে।
এখন তৌফিক ও মেনে নিয়েছে সব টা।বুশরাকে নাহার আয়ান কে নিজের ভাই বোনের মতো ভালোবাসে।মা বাবার জায়গাটায় বুশরার আম্মু আব্বু কে মেনে নিয়েছে।
তৌফিক: বুশরা ভাই যখন খাইয়ে দিচ্ছে খেয়ে নে।
রাহি বুশরাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।বুশরা খেয়ে নিলো ।
তারপর মাথা ব্যথার ওষুধ টাও রাহি খাইয়ে দিলো ।
বুশরা: এই সব কিছু আপনারা সাজিয়েছেন ভাইয়া?
রাফি: হ্যাঁ। কেমন হয়েছে।
বুশরা : অনেক সুন্দর।
রাফি: আমরা তো শুধু সাজিয়েছি ।রাহি তো পুরো প্লান টা করেছে ।
বুশরা নিশ্চুপ।সে জানে রাহি সব কিছু তেই পারফেক্ট।আমাকে কি সে মেনে নিবে । আমি তো সব কিছু এতো পারফেক্ট করতে পারি না।
বলেই মনটা খারাপ হয়ে গেল বুশরার। ততক্ষণাৎ বুশরা আবার ভাবলো কি সব ভাবছি আমি।এই সাইকোর বউ যে হবে সে তো একটা সেওরা গাছের পেত্নি । আমি কেন হতে যাবো ।হুম্।
তৌফিক: বনু কি ভাবছিস।মাথা ব্যথা কমছে?
বুশরা : কিছু না। একটু কমছে।
মাহমুদ: তাহলে আমরা এখন আসি রাহি । আন্টি আসছি ।
রাহি: হ্যাঁ যা। কালকে ঠিক টাইমে চলে আসস।
রাত ১০ টা সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে বসে আসে । ছোফায় সবাই বসে আলোচনা করছে কালকে কি কি রান্না করা হবে কি কি আয়োজন হবে ।সব কিছু।
আর দুই দিন পর ঈদ উল আজহা তাই তাড়াতাড়ি প্রোগাম শেষ করতে হবে ।
হাফিজুর আহমেদ ও রেজা আহমেদ এই সব কিছু আলোচনা করছিলেন।
এই দিকে বুশরার শরীর টা প্রচুর খারাপ। মাথা ব্যথা কমছে কিন্তু কিছুই ভালো লাগছে না।
রেজা আহমেদ : বুশরা আম্মু তোমার মাথা ব্যথা কমছে
বুশরা: হুম আব্বু ।
রেজা আহমেদ: তোমার কি ইচ্ছে এখন কি প্রাইভেট এ ভর্তি হবা নাকি ন্যাশনাল এ ।
তৌফিক: না বাবা ।বনু কে আমি আমার সঙ্গে আমিরিকাতে নিয়ে যাব। ওখানে গিয়ে ওকে আমি ভালো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দিব।
হাফিজুর আহমেদ: কিন্তু তৌফিক বুশরা কি মতামত জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
তৌফিক: আমি বনু কে বলছি ।বনুও চায় ।তার পচ্ছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে।
রেজা: কিন্তু তৌফিক এইটা তো ঠিক না ।এতো দুরে একা একটা মেয়ে কি করে।
তৌফিক: কেন বাবা আমি কী তোমাদের কেউ না। আমার কি কোন অধিকার নেই তোমাদের উপর। তোমারা কি আমাকে ছেলে হিসেবে মেনে নিতে পারোনি । আমি তো বুশরাকে বোনের মতো ভালোবাসি।তাহলে আমর আমার কেন কোন অধিকার নেই। আমার উপর বিশ্বাস নেই ঠিক আছে । ভাই তো থাকবে । আমি আছি ভাই আছে তাহলে কেন বাবা। বুশরার ইচ্ছে কি কোন দাম নেই।মাহিম এর সঙ্গে বিয়ে ঠিক করলে কিন্তু এক বারো আমাকে জানালে না । কেন বাবা আমি কি পর তোমাদের??
রেবা আহমেদ: তৌফিক তুমি ভুল বুঝছো আমাদের। তুমি আর বুশরা, আফরিন, আয়ান চার জনি আমাদের সন্তান।তাই বলে বুশরা এতো দুরে ।বুশরা যদি চায় যেতে পারে।
তৌফিক কোন কথা না বলেই চলে গেল।বুশরাও তার ভাই এর পিছনে পিছনে চলে গেল।
রাত ১১ টা বেজে ৩০ মিনিট। বুশরার হাতে কিছু চিঠি। এই চিঠি গুলো রেজা আহমেদ রেবা আহমেদ এর জন্য লিখেছিলেন। হ্যাঁ রেজা আহমেদ ও রেবা আহমেদ এর লাভ ম্যারেজ।
বুশরার মন খারাপ হলে সে এই চিঠি গুলো বের করে দেখে। হুট করেই বুশরার কানে ভেসে আসলো গিটার এর টুংটাং শব্দ।
বুশরার বুঝতে বাকি রইলো না কে এই গিটার এর মালিক।
বুশরা চিঠি গুলো রেখে রাহির রুমে দিকে পা বাড়ালো। বুশরার অবস্থান রাহির রুমে। এই রুমে বুশরা এর আগেও ঢুকেছে কিন্তু রাহি আসার পর প্রথম আসলো ।রুমটা অনেকটা অন্ধকার। বুশরা দেখলো রাহি গিটার হাতে বেলকুনির চেয়ার এ বসে আছে।বুশরা গিয়ে রাহির পিছনে দাঁড়িয়ে পরলো ।
রাহি: নুর..!!
বুশরা: হুম।
রাহি : এতো রাতে এখানে কেন??
বুশরা: আমি গিটার বাজানো শিখতে চাই।
রাহি: এখন??
বুশরা: না ।তবে শিখতে চাই।
রাহি: তুই চাস আমিরিকাতে যেতে?
বুশরা: জানি না,।
রাহি : ভেবে নে ।এই কয়েক দিনের মধ্যেই।
বুশরা: হুম।একটা গান শোনাবে রাহি ভাইয়া।
সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৪
রাহি : না।কালকে শুনিস । এখন শুয়ে পর যা।আর হুট হাট এই ভাবে চলে আসবি না। নিষেধ করি নি। কিন্তু এতো রাতে এই ভাবে আসবি না।
বুশরা হুম বলে চলে গেল।। নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।কালকে সকালে উঠতে হবে।