সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৯
বুশরা আহমেদ
আমিরিকার নিউইয়র্ক,,, চারিদিকে নির্জন, চারিদিকে শা শা করে ছুটছে চলন্ত গাড়ি।
রাহি এর ব্লাক মার্সিডিস টাও চলছে আপন গতিতে।আমেরিকা চার ঋতু । এটি শীতপ্রধান দেশের অন্যতম একটি দেশ । এখন বসন্ত কাল এর শেষের দিকে । এখনি যা শীত পরেছে । আর কয়দিন পর তো মানুষ জমে যাবে । বু্শরা গাড়ির জানালায় মুখ বাড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে । রাহি আপন গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে আর আড় চোখে বারবার বুশরাকে দেখছে ।
বুশরার যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সে নিজেকে গাড়ির মধ্যে অবস্থান করে । কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারলো না কী করে।রাহি কেও কিছু জিজ্ঞেস করলো না। বুশরার রাগ এর থেকেও জেদ বেশি ভয়াবহ।
কিছুক্ষণ আগে ,, বুশরা যখন ঘুমিয়ে পড়ে রাহির বুকে । প্লেন ল্যান্ডিং হওয়ার পরও বুশরা ঘুমে বিভোর ছিল।রাহি উপায় না পেয়ে বুশরাকে কোলে করে এনে সিট এ বসে দিয়ে।সিট বেল্ট বেঁধে দিলো তারপর নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।বুশরা যখন চোখ খোলে তখন নিজেকে গাড়িতে আবিষ্কার করে। এইসব মনে করতেই বুশরার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল।তার মানে রাহি ভাইয়া আমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে ,,মনে মনে ভাবলো । আড় চোখে সেও একবার রাহিকে প্রয়োগ করে নিলো । রাহি আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে।
এই দিকে বুশরার খেয়াল করে নি যে তাদের পিছনে আরো তিনটে গাড়ি আসছে। হ্যা এই গুলো সব রাহির বিশেষ গার্ডস।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
গাড়ি এসে থামলো একটা নির্জন পরিবেশে।সামনে একটা বড় ডুপ্লেক্স বাড়ি।
এই বাড়িটা প্রায় নুর ভিলা মতোই ডিজাইন। চারিদিকে নির্জন পরিবেশ । আশেপাশে আর তেমন কোন বাড়ি দেখা যাচ্ছে না। পিছন এ ঘন জঙ্গল,, তারপর বয়ে গেছে নদী । নিউইয়র্কে থেকে অনেক টা দুরে এই দিকে তেমন মানুষ আসা যাওয়া করে না বললেই চলে।
রাহি গাড়ি থেকে নেমে এসে দরজাটা খুলে বললো নেমে আয় নাকী কোলে নিতে হবে। বুশরা লজ্জায় আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে পরলো । বুশরা খেয়াল করলো তিনটি গাড়ি থেকে প্রায় ২০-২৫ জন লোক নেমে এসে বাড়ির চারিদিকে দাঁড়িয়ে রইলো। বুশরা তৌফিক কে কোথাও দেখতে পেল না। রাহি বুশরার হাত ধরে বাড়িটার মধ্যে গেল ।
তাদের পিছন পিছন ২ জন গার্ডস ও গেল।তারা রাহির বিশেষ দক্ষ গার্ড । তারা জমজ দুই ভাই হেভেন ও কেভেন ।
দুই জনেই খুবই শক্তিশালী ও লম্বা চওড়া । আর আমেরিকান হওয়ায় চেহারা আমেরিকানদের মতোই।
রাহি বুশরার হাত ধরে দোতলায় একটি রুমে প্রবেশ করলো। বুশরা রাহির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,,
বুশরা : ভাইয়া কোথায়??
রাহি: জানি না!
বুশরা : আপনি জানেন না মানে তো কে জানবে?
রাহি: বাহ্ এখনো অভিমান আছে দেখছি!! তাই তো হুট হাট রেগে যাস আর তুমি থেকে আপনি বলে ফেলিস!! তা এই রাগ টা কি শুধু আমাকে দেখাস নাকি অন্য কাউকেও ?
বুশরা কী বলবে বুঝলো না।রাহির সঙ্গেই সে এমন করে শুধু । অভিমান হলেই তুমি থেকে আপনি আবার অভিমান কমলে সেই তুমি ….
বুশরা নিজের কাজে নিজেই লজ্জায় পরে যাচ্ছে। অন্য কারো সঙ্গে তো এমন করে না সে তাহলে রাহির সঙ্গেই কেনো এত অভিমান… এই প্রশ্নের উত্তর বুশরার জানা .. কিন্তু সে রাহির অনুভূতি টা জানতে চায় ।
বুশরাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে রাহি বললো …
তৌফিক ছোট না নুর।সে কোথায় গেছে না গেছে সব সময় আমাকে বলে যাইতে হবে এমন না । কিন্তু তৌফিক আমাকে সব সময় বলে যায় ।আর হ্যাঁ চিন্তা করিস না। তৌফিক অফিস এর কাজে গিয়েছে ..। ফ্রেস হয়ে নে ।তারপর নিচে আয় । রাহি চলে যাবে তখনি বুশরা বলে উঠলো,,
এতো গার্ডস কেন বাড়ির চারপাশে,,আর এখানে কোন বাসা নেই কেন? লোকজনও তেমন নেই ।
রাহি: নুর এতো কিছু তোকে ভাবতে হবে না।আর হ্যাঁ তুই ভালো করেই জানিস আমাদের বিপদ এর শেষ নেই । এই গার্ডসরা দীর্ঘ ৬ বছর যাবত এই ভাবেই পাহারা দেয় বাড়ির আশেপাশে। তুই তো জানিস আঙ্কেল আন্টি কে যারা মেরেছে তারা তৌফিক আর আমাকেও মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু চিন্তা করিস না এখানে কেউ আসতে পারবে না।তাই এতো সিকিউরিটি। তাড়াতাড়ি নিচে আয় । আর শোন আমাকে বের হতে হবে কিছু কাজ আছে। তাড়াতাড়ি নিচে আয় একসঙ্গে খাব ।
রাহি চলে যেতেই বুশরা ফ্রেস হয়ে নিলো । সিকিউরিটি গার্ডস এই সব নিয়ে আর ভাবলো না । বুশরা জানে তাদের শত্রুর শেষ নেই ।আর তৌফিক এর বাবা মা কে যারা মেরেছে তারা এখনো জীবিত আছে ।তারা তৌফিক কে আর রাহি কেউ মেরে ফেলতে চায়।এই কথাটা ভাবতেই কষ্ট হতে লাগলো বুশরার। না এসব কি ভাবছি আমি,রাহি ভাইয়া আর আমার ভাইয়ার আমি কিছু হতে দিব না,, কিছু না।
বুশরা নিচে নেমে এলো।রাহি আগে থেকেই উপস্থিত। তৌফিক এখনো আসে নি।
বুশরা বসেতে যাবে তখনি রাহি বুশরার হাত ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো ।বুশরা চোখ বড় বড় করে রাহির দিকে তাকিয়ে বললো,
কি করছেন এইটা??
রাহি : কিছু না তো । চুপ করে বসে থাক আমি খাইয়ে দিচ্ছি ।
বুশরা: আমি নিজে খেতে পারি ।
রাহি: তুই কী চাস আমি রেগে গিয়ে খাবার টা না খেয়েই চলে যাই!!
বুশরা আর কিছু বললো না। বুশরার লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে রাহির কোলে। কারণ সামনে হেভেন আর কেভেন দাঁড়িয়ে আছে। তারাও একে অপরকে দিক তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
রাহি: কেভেন খাবার সার্ভ করো ।কভেন সার্ভ করে দিলো ।রাহি নিজেও খাচ্ছে বুশরাকেও খাইয়ে দিচ্ছে।
বুশরা: কে রান্না করেছে ?
হেভেন : আমি ম্যাম ,, !
বুশরা: আপনি এতো ভালো রান্না করতে পারেন? আর আমাকে ম্যাম বলছেন কেন। আমি তো আপনাদের অনেক ছোট । তাই আমাকে বুশরা বলেই ডাকবেন।
হেভেন : ওকে ম্যাম ,, বুশরা তাকাতেই বললো ওহ্ সরি বুশরা।
রাহি মুচকি হাসলো,বুশরার এই সহজ ভাবে সবকিছু মেনে নেওয়া। অন্যকে আপন করে নেওয়া। সবার সঙ্গে সহজেই আপন হয়ে উঠে বুশরা।
কিন্তু সব সময় তো এইটা ঠিক না । সবাই কে বিশ্বাস করলে যে তোর আরও ক্ষতি হতে পারে। ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস নিলো রাহি।
রাহি আর বুশরা খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেল। বুশরা পাশের রুমটাই রাহির । বুশরা রাহির রুমের দরজার কাছে এসে দাড়িয়ে বললো ,,
আসবো।
রাহি: হুম ।আয় ।
বুশরা রুমে ঢুকতেই দেখে রাহি রেডি হচ্ছে , রাহি সেই তখন থেকে টাইটা বাঁধার চেষ্টা করছে ।
বুশরা গিয়ে রাহির হাত থেকে টাই টা নিয়ে নিজে বেঁধে দিতে লাগলো।
রাহি: বাসায় সাবধানে থাকবি।আর এখন থেকে তোকে অভ্যাস করতে হবে । কিন্তু চিন্তা করিস না। আমি তৌফিক এর সঙ্গেই তাড়াতাড়ি চলে আসবো ।
বুশরা কিছু বললো না।
অন্যদিকে ,, বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন লোক । চেহারা শান্ত, চোখ মুখে বিরক্তির ছাপ । চোয়াল শক্ত করে জোরে চিৎকার করে বললো,,
আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করো নি কেন??? এখন একটা একটা করে বন্দুক এর গুলি চালিয়ে দেই তোমাদের বুক বরাবর । বলেই জোরে চিৎকার করে উঠল লোকটা,,
সামনে থাকা গার্ডস রা বলে উঠলো, আমাদের মাফ করে দেন সেকেন্ড মাস্টার। আমাদের ভুল হয়ে গেছে।
আমার কাছে এই সব এর কোন মাফ নেই কিন্তু তোমাদের আমি মারবো না ভালো করেই জানো এমন অবস্থা করবো যে নিজেই মরে যেতে চাইবে ।
সবার করুন অবস্থা। তারা বারবার এক অনুরোধ করেই চলেছে।
সামনে থাকা ব্যক্তিটি স্বাভাবিক ভাবেই বললো ,, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সব অস্ত্র, বন্দুক সব কিছু জায়গা মতো পৌঁছে দিয়ে আসো ।আমি জেনো শুনি সবাই সব কিছু পেয়ে গেছে ।
আর সবাই কে আলার্ট থাকতে বলো । কোন শত্রু যেন এই” ম্যারিল্যান্ড রাজ্যের” আশা পাশে না আসতে পারে।
সামনে থাকা ব্যক্তিটি উদ্দেশ্য সবাই বললো “” ওকে স্যার ”
সামনে থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ না, তৌফিক জোবায়েদ । যার কাছে সব কিছুর উর্ধ্বে তার ভাইয়া আর তার বনু ।তারপর যদি কিছু থাকে তাহলে সেইটা পরিবার।
সবাই কে চলে যেতে বললো তৌফিক।আজকে সবাই প্রাণে বেঁচে গেলেও। অন্য দিন এই সব ভুল হলে দুই চার জন নিজের মাথায় নিজে বন্দুক ঠুকে মারা যেত ।
তৌফিক এর অবস্থান এখন ম্যারিল্যান্ড রাজ্যের ম্যারি প্যালেস এ- বিশাল করিডোর রুমে। তৌফিক সব গার্ড দের এখানে উপস্থিত হতে বলেছেন।
সবাই সেখানে উপস্থিত হলেন। আজকে তাদের কে উপস্থিত হতে বলেছেন একটা বিশেষ কারণে। তাদের বস আসবে ।
সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৮
কিছু ক্ষণ এর মধ্যেই করিডোর রুমে প্রবেশ করলো এক লম্বা,চওড়া পেশীবহুল সুপুরুষ।পরণে তার কালো লং কোর্ট মুখে মুখোশ । চোখ গুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে সে হবে কোন এক সুদর্শন পুরুষ।
কিন্তু এই শান্ত চোখ দিয়ে মূহুর্তে সব সব কিছু ধ্বংস করে দিতে পারে।