স্নিগ্ধবিষ পর্ব ১৭

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ১৭
সানজিদা আক্তার মুন্নী

বিবিজান ঘরে প্রবেশ করে নাজহার দিকে এক পলক চেয়ে ঘুমন্ত তৌসিরের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“ওরে ডাকিয়া তুলো।”
নাজহা বেশ অবাক। এভাবে ঢুকে পড়লেন! এভাবে যে কারো ঘরে প্রবেশ করা আদৌও উচিত? এই যে ওরা একটা আপত্তিকর অবস্থায় শুয়ে ছিল, তার মধ্যে উনার আসা খুবই বেমানান একটি বিষয়।তাও নাজহা কিছু না বলে আবারো ধীরে ধীরে বিছানায় বসে, হাত বাড়িয়ে তৌসিরের বাহুতে ধাক্কা দিতে দিতে বলে,”এই যে, উঠুন, বিবিজান ডাকতেছেন।”

তৌসির ঘুমঘুম গলায় বলে ওঠে,”তোর যন্ত্রণায় লো, আমি বাড়ি ছাইড়া যাইমু! তুই একটা বার আমারে শান্তি দেস না।”
নাজহা তৌসিরের কথায় এবার বেশ জোরালো ধাক্কা দিয়ে কড়া গলায় বলে,”বিবিজান এসেছেন।”
তৌসির এই এত শক্ত ধাক্কায় চোখ মেলে তাকায়। তাকিয়ে দেখে, নাহ সত্যিই বিবিজান এসেছেন। ভেবেছিল, নাজহা মিথ্যা বলছিল। তৌসির বিবিজানের এই আতঙ্কে কোনো পাত্তা দেয় না, কারণ কী জন্য উনার এই আগমন, কেনইবা এত তীব্র আতঙ্কে ফাটছেন উনি, তা সবই তৌসিরের জানা।তাই সে ধীরে ধীরে উঠে বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে,”তুমি গুলজারের বিষয় নিয়া আসছো না?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গুলজারের কথা শুনে বিবিজানের রাগ আক্রোশের রূপ নেয়। উনি তড়িৎগতিতে তৌসিরের সামনে এসে দাঁড়ান। দাঁতে দাঁত চেপে তৌসিরকে ফোনে একটা ক্লিপ দেখান। সেখানে গতকালের কেরমতের রেকর্ড করা ভিডিওটা আছে, কিন্তু ভিন্ন রূপে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে তৌসির বলছে,“ভালো হইছে, এগুলা ভাইরাল হইছে। এতে ঐ মা****গির পোলা গুলজারের থেইকা দু’এক কাঠি এগোনোর চান্স আমার আছে।”

অথচ গতকাল ওরা রেকর্ড করে পাঠিয়েছিল অন্য কিছু। এ দেখে বোঝা গেল গুলজার আর তার দলের মানুষ এটাকে এডিট করে সরাসরি বদলে দিয়েছে।তৌসির এ দেখে মৃদু হাসে। যা চেয়েছিল, যেমন চেয়েছিল, তেমনি হলো। খেলা জমে এক্কেবারে ক্ষীর! কতদিন এমন খেলার স্বাদ নেয়নি।বিবিজান ফিসফিসিয়ে বলেন, যাতে নাজহা শুনতে না পায়,“এসব কি? কোন খা***নকিরে এসব কইছিলি? এখন তোর নামে মানুষ উল্টাপাল্টা কইতেছে!”
তৌসির এসব গায়ে লাগায় না। তিরস্কার সহিত হওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে জয়ের হাসি হাসতে হাসতে বিবিজানের দুই কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলে,”এসবে তুমি চিন্তা করইও না। আগামীকাল দেখো কি হয়। মানুষ আজ যার নিন্দে, আগামীতে তারেই মাথায় তুলে রাখে। তুমি খালি দেইখা যাও।”

বিবিজান তৌসিরকে এতটা শান্ত দেখে বুঝে নেন তৌসির সব সামলে নিবে। তৌসির নিজের বদনামে কিছু রটাবে, এতটা বোকা উনার তৌসির নয়।তাই তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন,”খারাপ কোনো বা*ল যেনো হয় না, মনে রাখিস।”
এ বলে নাজহার দিকে এক পলক তাকিয়ে চুপচাপ রুম থেকে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যান।তারা কথা বলছিল এ ফাঁকে নাজহা বিছানা গুছিয়ে নিয়েছে। বিছানা গুছাতে গুছাতে সবকিছুই কান খাড়া করে কর্ণপাত করেছে। কথাবার্তা থেকে তেমন কিছু আঁচ করতে পারেনি, তাই আর ওতো মন গুটায়নি এসবে।
তৌসির আবার শুতে যাবে দেখে বিছানা গুছিয়ে নিয়েছে নাজহা। তৌসির এতে বড্ড বিরক্ত হয়ে বলে,”এ ছি*না*ল, তোর সমস্যা টা কিতা? ইতা করস ক্যান তুই?”
নাজহা তৌসিরের দেওয়া গালির জবাবে ছ্যাৎ করে ওঠে,

“এভাবে গালি দিবেন না! বেলা কয়টা বাজে? আমি বিছানা গুছিয়ে নিয়েছি, এখন ঘুমাতে পারবেন না। যান নিচে গিয়ে চান খান।”
তৌসির নাজহাকে এবার শ্বাসিয়ে বলে,
“জামাই কি কি করে, এখনো তো তুই বুঝস নাই! আইজ থেইকা তোরে কোনো ছাড় দিতাম না। আধারাইত সজাগ থাকলে সকালে ঘুমাবি, আর আমারে একটু ঘুমাইতে দিবি।”
নাজহা তৌসিরের কথায় ব্যঙ্গ করে বলে ওঠে,”ছাড় দেন? তুমি বাচ্চা? এইসব তোমার লগে করব না, এটা ওটা, কত নাটকের বাণী গান, কিন্তু বাস্তবে সবই আমার!”

এ বলে নাজহা মুখ বন্ধ করে নেয়। কি থেকে কি বলে দিচ্ছিল তাড়াহুড়োর মাইরে” তৌসির ওকে চুপ করতে দেখে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,”আমি আবার তোমার লগে কিতা করলাম? বেঈমানী কথা কও ক্যান?”
নাজহা জবাবে বিতৃষ্ণা প্রকাশ করে ,”বেঈমানী বলতেছেন কেন? ঘুমাতে দেন রাতে আমায়? এই গলায় চুমু, এই গালে চুমু, এই কপালে চুমু, এই চুলে মুখ গুজে দেওয়া, এই ঘাড়ে চুমু, ছিঃ ছিঃ, কত কি!”
নাজহার মুখে ধারণা করা বাণীতে তৌসির অতিশয় স্তব্ধ হয়।তালুকদারের মাইয়া তো এমন না! এমন নির্লজ্জ কথা কিভাবে বললো?তৌসির নাজহার কথার জবাবে তিক্ততার আভা মিশানো নিগড় স্বরে সোধায়,”ছিঃ ছিঃ, তালুকদারের মাইয়া, তোমার একটুও লাজলজ্জা নাই। জামাই হিসাবে আলোগেছে, একটু মিঠা মায়া করি, এটাও এমনে ব্যঙ্গ কইরা বলতেছো?”

“নিজে করতে সময় লজ্জা লাগে না, আর আমি বললেই দোষ?”
“না না, তোমার মতো নোবেল প্রাপ্ত ডাকাইত মাইনষের দোষ আছে নাকি! যত দোষ আর নিন্দা আমারই।”
“সে তো আর আছেই, মন্দ লোকের নিন্দাই তো বেশি।”
“আইচ্ছা, তুমি এখন নিচে যাও, গিয়া আম্মা চাচীদের লগে কামে সাধ দাও, আমি আইতাছি।”
“না, আমি যাব না। আমি গেলেই আপনার বিবিজান আমার দিকে কেমন করে তাকান, আর খুঁচা মেরে কথা বলেন।”
তৌসির নাক-মুখ কোঁচকায়। বিয়ের পর থেকেই শুরু হয়েছে যে এই দুই বেজাত মহিলার রেষারেষি, আর থামারই নাম নেই! তাই আর এক্সট্রা কথায় না গিয়ে লুঙ্গির গিট খুলে তা শক্ত করে দিতে দিতে সামনে দু’কদম পেলে বলে ওঠে,”আমিই যাই, তুমি লাগত না।”

এ বলে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।
নাজহা তৌসিরের যাওয়ার পানে একনজর দেখে আবারো বিছানা গুছাতে থাকে।তৌসির দরজার সামনে এসে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা।যখন দেখে কেউ নেই, তখন ঠোঁট রঙিলা হাসি টেনে ধরে দ্রুত পায়ে নাজহার পিছনে এসে দাঁড়ায়।
দাঁড়িয়েই নাজহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, ওর পেটে পেটের সাইডে কাতুকুতু দিতে দিতে নিজের নাক-মুখ ঠেসে ধরে নাজহার ঘাড়ে গলায় বারবার ছোঁয়াতে থাকে।
এমন অপ্রত্যাশিত অঙ্গিকারে নাজহা ভয়ে, লজ্জায়, ইতস্ততায় জমে যায়। কাতুকুতু লাগায় নিজের অজান্তেই খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,”আরে আরে, কি করছেন, কি করছেন!”
” কিচ্ছু না!”

​শিকদার কুঠিরের অন্দরমহলে, বিবিজানের ঘরের দিকে লুঙ্গির কোণ হাতে নিয়ে চিল্লাতে চিল্লাতে এগোতে থাকেন তুয়াঈদ সাহেব, অর্থাৎ তৌসিরের দাদাজান। “নূরজাহান! নূরজাহান!” বলে হাঁক দিতে দিতে তিনি প্রবেশ করেন।
শিকদার কুঠির কি কোনো গোপন আস্থানা? না শিকদার কুঠির কোনো নিছক গোপন আস্তানা নয় এটি আসলে শিকদার জমিদার বাড়িরই একটি সুবিশাল শাখা। বাইরের লোকজনের কাছে এই স্থানটি স্রেফ একটি বিশাল কৃষি ও পশুসম্পদ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে শত শত মুরগী, গরু, ছাগল ও পাখির সুবৃহৎ খামার। চারপাশে নজরকাড়া ফল-ফুলের বাগান, আর বিস্তীর্ণ জলরাশিতে ফিশারি মাছ চাষের বিপুল আয়োজন। ফসল ও অন্যান্য সামগ্রী রাখার জন্য রয়েছে সুবিশাল গুদাম ঘরও। এক কথায়, জনসাধারণের কাছে এটি শিকদারদের সমৃদ্ধি ও ব্যবসার প্রতীক।

কিন্তু এই সবটুকু কেবলই এক চমৎকার মুখোশ। এই দৃশ্যমান ঐশ্বর্যের ঠিক নিচেই চাপা পড়ে আছে এক শীতল, গোপন জগৎ। লোকচক্ষুর আড়ালে, এই প্রাচীরঘেরা কুঠিরের মূক চলে এক অন্য খেলা যেখানে আইন নয়, বরং কালো হাতের ইশারাই শেষ কথা। শত শত অপকর্মের নিঃশব্দ আনাগোনা চলে এই প্রকাশ্য আস্তানার অন্দরে, যেখানে ব্যবসার আড়ালে চলে অশুভ শক্তির গোপন কারবার।

দাদাজান ​বিবিজানের ঘরে ঢুকেই প্রচণ্ড রাগী গলায় তিনি উচ্চারণ করেন, “তুমি ঐ ইমলিরে কী করেছো?”
​বিবিজান উনাকে দেখে ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাদাজানের সামনে এসে দাঁড়ান। শান্ত চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলেন, “গতকাল পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি ওর সাথে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছি।”
​এই কথা শুনা মাত্রই দাদাজানের রাগ তিনগুণ বেড়ে যায়। ক্রোধ নিয়ে তিনি বলে ওঠেন, “এ মা**গি! তুই জানিস না, এই ইমলিই একমাত্র তৌসির সম্পর্কে জানত!
​বিবিজান এই কথায় বিচলিত না হয়ে স্পষ্ট গলায় জবাব দেন, “আমি চাই না আমার তৌসির সম্পর্কে আর কেউ জানুক।”

​দাদাজান রাগে গজগজ করতে করতে বলেন, “তোর পণ্ডিতি আমি ছাড়াবো! খালি একবার তৌসিরের মাধ্যমে তিরুনাল্লুরের জমি বেচে নেই।”
​এই বলে ঘর থেকে নাচ বেরিয়ে যান তিনি। তাঁর যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে থাকেন বিবিজান আর নিরলসভাবে বলেন, “তৌসিরের জমির ভাগ শুধুই আমার। অন্য কারও হতে দেব না আমি।”
রাত আটটা।

শিকদার বাড়ির ছাদের আড্ডাখানায় চিন্তার আড্ডা বসেছে আজ। আর বসতেই যে বাধ্য। সেই ফেইক রেকর্ডটা প্রচুর পরিমাণে ভাইরাল হচ্ছে মিমস, পোস্ট, রিলস, নিন্দার শেষ নেই। তৌসিরের পক্ষের মানুষও তার বিপক্ষে। গুলজার তো এই সুযোগে একদম মাথায় উঠে নাচতেছে। নাযেম চাচা, রুদ্র সবাই মাথা মারছেন। উনাদের এই মাথা মারা আর আক্ষেপের ধার তৌসির ধারছে না। সে নিশ্চিন্তে মুভি দেখতে ব্যস্ত।
রুদ্র পায়চারি করতে করতে ঠোঁট কুঁচকে, চোখ ফিরিয়ে তৌসিরের এই শান্ত চেহারার দিকে তাকায়। এত শান্ত দেখে ক্লান্ত হয়ে অসন্তুষ্ট স্বরে বলে, “ভাই, তোমারে লইয়া তোলপাড় হইয়া যাইতাছে, আর তুমি এসব এত শান্ত! কিছু করো।”

তৌসির রুদ্রের এই ছটফটানি দেখে বলে, “হয়ে যাক,তুই আমাদের আন্ডারে যে নিউজ মিডিয়া গুলো আছে, একটায় কনফারেন্সে সেট কর। ওখানে যেন গুলজারকেও ইনভাইটেশন দেওয়া হয়। সাথে টাইটেল যেনো দেয় –‘তৌসির শিকদার অবশেষে সরাসরি মাফ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তার প্রতিপক্ষের প্রতি এমন আচরণের জন্য।’”
রুদ্র হা হয়ে যায়। রুদ্র কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। নাযেম চাচা তৌসিরের প্ল্যান কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারেন, তাই বলেন, “আইচ্ছা, আমি করতাছি ব্যাবস্থা।”

রুদ্র মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলে, “তোমাদের কত কি! তোমরা পারোও বটে।”
তৌসির হাসতে হাসতে রুদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলে, “আমি হাতে না মাইরা ভাতে মারতে পছন্দ করি। দেখিস, ঐ খান**কির পোলা মাদার***চুত গুলজাররে কি করি আমি।”
মিনহাজ মামা ফোনে নিউজ দেখতে দেখতে উদাসীন ভঙ্গিতে বলে ওঠেন, “আরে দেশে তো তোলপাড় হইয়া যাইতাছে ইসকন নিয়া।”

তৌসির ইসকনের কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সোফায় মাথা এলিয়ে দিতে দিতে ধারণ করে, “এরা এই দেশরে খাইয়া নেওয়ার আগে ভাগাইতে হইবো ওগো। আরে ওদের মেইন টার্গেট মুসলিম মাইয়ারা। আমি তিন দিন আগে টাউনে গেছিলাম, তখন দেখলাম একটা হিন্দু পোলা একটা মুসলিম মাইয়ারে নিয়া আবাসিক হোটেলে যাইতাছে। ঐ মাইয়া মনে হয় মাদ্রাসার বোরকাওয়ালা। এমনে আরো কতখানে দেখছি।”
নুহমান তৌসিরের মুখে এই ঘটনা শুনে অসন্তোষ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে, “ওগো মেইন টার্গেটই মুসলিম মাইয়াদের শেষ করা। পাচার অবধি কইরা দেয়।”

কেরামত বলে ওঠে, “দেশ বাচাইতে হইলে এই জানুয়ারদের ভাগাইতে হইবো। যা নয়, তা কইরা বেড়ায়।”
তৌসির রুক্ষ গলায় বলে ওঠে, “ঐ বদ**মাশদের ধইরা একেকটারে আল্লার নামে কোরবানি দিয়া দিলে মন্দ হয় না।”
রুদ্র হেলে তৌসিরের কাঁধে মাথা রেখে পা তুলে সোফায় বসতে বসতে বলে, “ভালো-মন্দ রাখো, তোমার কি হইবো এইটা ভাবো। কাল কি করতে চাইতাছো?”
তৌসির রুদ্রের চুল শক্ত হাতে মুঠো করতে করতে বলে, “সুয়োরের বাচ্চা গুলজারের জীবনের চব্বিশটা বাজাইতে চাইতাছি। তোরা শুধু দেইখা যা।”

নুহমান এ ফাঁকে বলে ওঠে, “তোমার বদনাম দেইখা তালুকদাররা হয়তো ঢোল বাজাইয়া নাচতাছে।”
নাযেম চাচা মদের গ্লাস হাতে নিতে নিতে বলেন, “ওরা নাচতে নাচতে কোমর ভেঙে ফেলছে হয়তো। দেখ গিয়া, যতই আত্মীয় হোক, ওরা খুশিই হইবো।”
তৌসির চাচার কথার জবাবে মৃদু হেসে বলে, “আরে ঐ চুতমারানির নোবেলপ্রাপ্ত বাইনচু**দের কথা কইয়ো না। ওরা তো সবগুলোই ধৈঞ্চার বাল।”

নাজহার আব্বা ওকে ফোন দিয়েছেন। উনি তৌসিরের সাথে কথা বলতে চান বর্তমান ইস্যু নিয়ে , তাই নাজহা ফোন নিয়ে ছাদে তৌসিরের কাছে আসে। যদিও আসার ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু বাবার জোরাজোরিতে নিয়ে আসে।
এদিকে মিনহাজ মামা তৌসিরকে জিজ্ঞেস করেন, “তোর বউ ভালো চলতাছে তো? বাপ-চাচার মতো গাদ্দারি করে নাতো?”

তৌসির এ শুনে মুচকি হেসে বলতে যায় না, কিন্তু তখনই চোখ পড়ে টেবিলের উপর থাকা নাযেম চাচার সানগ্লাসে। সেখানে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নাজহা পিছন থেকে আসছে। নাজহাকে দেখে তৌসির নিজের মত পাল্টে নিয়ে তিক্ত সুরে বলে, “আরে আমার বউ গাদ্দার না, এক নাম্বার ডাকাত! বাপ-চাচার থেইকা তিন কাঠি উপরে।”
অন্যসময় হলে হয়তো তৌসিরের কথায় সবাই হাসতেন। কিন্তু এখন হেসে মেতে ওঠেন না বরং চুপ মেরে যান। তৌসিরের অপজিটে নাযেম চাচা, মিনহাজ মামা সবাই বসে আছেন। তৌসির আর রুদ্র শুধু এদিক বসা।
নাযেম চাচা নাজহাকে দেখে থতমত খেয়ে তৌসিরকে ইশারা দেন চুপ করতে। নুহমানও ইশারা দিয়ে বলে, “তোমার আজরাইল দাঁড়িয়ে তোমার পিছনে।”

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ১৬

তৌসির তাদের ইশারা বুঝতে পেরেও নাজহাকে রাগাতে বলে ওঠে, “আমার বউ এতটাই মারাত্মক যে, সে যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের পাশে থাকতো,তাইলে হিটলারও জয় লাভ কইরা নিত।”
এ শুনে মিনহাজ মামা মনে মনে বলেন, “আজ তু গায়া, আজ তু গায়া বেটা।”
নাজহা এসে তৌসিরের পাশে দাঁড়ায়। রুদ্র এখানে এই মুহুর্তে নাজহা কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। আতংকে এক লাফে উঠে ঠিক হয়ে বসতে বসতে বলে, “ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ১৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here