হলুদ বসন্ত পর্ব ৩১

হলুদ বসন্ত পর্ব ৩১
জাওয়াদ জামী জামী

সেদিন আর ইশরাকের অবনীর হোস্টেলে যাওয়া হলোনা। অফিসেই ওর রাত দশটা পর্যন্ত থাকতে হয়। অবনীকে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দেয় পরদিন সকালে ও হোস্টেলের বাহিরে অপেক্ষা করবে।
পরদিন বিকালে অবনী ইশরাকের ম্যাসেজ পেয়ে খাবারের বক্স নিয়ে বাহিরে আসে। আজ একটু আগেই অফিস থেকে বেরিয়েছে ইশরাক। ইশরাককে দেখে থমকে গেল অবনী। ফর্মাল ড্রেসে কি চমৎকার লাগছে তাকে! হালকা নীল শার্ট তার শ্যামলা চেহারায় বেশ মানিয়েছে। শার্টের হাতা কনুইয়ের নিচ পর্যন্ত গোটানো। বা হাতের কব্জিতে শোভা পাচ্ছে কালো রঙের রিষ্ট ওয়াচ। অবনী আগেই খেয়াল করেছে ঐটা… ব্রান্ডের। চোখে কালো রঙের রে ব্যানের রোদচশমাও রয়েছে। অবনীর বুঝে আসছেনা রোদচশমা আর রিষ্ট ওয়াচ কালো কিন্তু শার্ট পরেছে নীল, এটা কেন? নীল শার্টের সাথে মিলিয়ে তাকে নীল ঘড়ি আর নীল রোদচশমা পরতে হত। তবেই না তাকে স্মার্ট লাগত। মনে মনে কতকিছু চিন্তা করছে অবনী। নিজের চিন্তার বহর দেখে মুচকি মুচকি হাসল । তবে হাসিটা ইশরাককে দেখতে দিলনা। মুখে গম্ভীর ভাব এনে এগিয়ে গেল ইশরাকের দিকে। খাবারের প্যাকেট বাড়িয়ে দিল ইশরাকের দিকে।

” রুমে ফিরেই ফ্রিজে ঢোকাবেন। নয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। আর এগুলো নষ্ট হয়ে গেলে শ্বাশুড়িমা আমার চৌদ্দটা বাজাবে। সে ধরেই নেবে, তার আদরের ধনের খাবার আমিই ইচ্ছে করে নষ্ট করেছি। ”
ইশরাক অবনীর কথা শুনে হতাশ হয়। কোন সৌজন্যতা না দেখিয়ে সরাসরি এ্যাটাকিং কথাবার্তা এই মেয়ের দ্বারাই সম্ভব।
” মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। এটা রাখ। ”
” কি আছে এতে? ”
” রুমে গিয়ে খুলে দেখলেই বুঝতে পারবি। ”
” বাসা দেখেছেন? নাকি না দেখেই মাকে শান্তনা দিচ্ছেন? এটা আমার কথা নয়, বাবার কথা। ”
অবনীর মুখভঙ্গি দেখে ইশরাক হাসল।
” দেখেছি। একটা পছন্দও হয়েছে। ফ্ল্যাটের মালিকের ফোন বন্ধ ছিল, তাই কথা হয়নি। দুই-এক দিনের মধ্যেই কথা হবে। বাবাকে বলে দিস, তার ছেলে কাউকে মিথ্যা শান্তনা দেয়না। ”
” আমি বলতে যাব কেন? আপনিই বলবেন। ”
” বাবা তো আমাকে জিজ্ঞেস করেনি। জিজ্ঞেস করলে আমিই বলতাম। এখন কি করবি? ”
” ছাত্রী পড়াতে যাব। ”
” কোথায়? ”
” সামনেই। পাঁচ মিনিট লাগবে। ”
” তৈরী হয়ে আয়। আমি পৌঁছে দেব। ”
” হুম। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অবনী রুমে গিয়ে তৈরী হয়ে বাহিরে আসল। ইতোমধ্যেই ইশরাক একটা রিক্সা ডেকেছে। অবনী আসলে ইশরাক ওকে রিক্সায় উঠতে বলল। অবনী রিক্সায় উঠে বসল।
পরদিন সকালে ক্লাসে গেল অবনী। প্রথম ক্লাস করে বের হতেই মুখোমুখি হল মাহির।
” হেই বিউটিফুল, কেমন আছো? আজকাল দেখছি বেশ ফূর্তিতেই দিন কাটাচ্ছ? গভীর কোন ঘটনা আছে নাকি? ”
” আমার ফূর্তিতে দিন কাটানো নিয়ে আপনার এত মাথাব্যথা কেন? আমি ফূর্তিতে থাকি আর না থাকি সেই কৈফিয়ত কি আপনাকে দেব? ”
” ধানী লংকা আমার বরাবরই পছন্দের। ঝালেই লংকার আসল স্বাদ সেটা কি জানো? তুমিও আমার কাছে ধানী লংকা। দেখলেই ঝাল লাগে। ”
” মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ, রাসকেল। আর একটাও আজেবাজে কথা বললে থাপড়িয়ে আপনার গাল লাল করে দেব। আপনাকে দেখে মেডিকেল পড়ুয়া মনে হয়না। আপনার চালচলন দেখে মনে হয় বস্তির টোকাই। আপনার মত মানুষ ডক্টর হলে সমাজে কেমন বিরূপ প্রভাব পরবে সেটা ভেবেই ভয় হচ্ছে আমার। ”
” জ্ঞান দিওনা। ওগুলো নিজের কাছেই রাখ। আগে নিজের চরিত্র ঠিক কর, পরে অন্যকে জ্ঞান দিও। ”
” সাট আপ। আমার চরিত্র ঠিকই আছে। আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে। বেয়াদব একটা। ” অবনী আরও কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু ওকে ডেকে পাঠিয়েছে ওদের স্যার। তাই বাধ্য হয়ে ওকে যেতে হল।

পরদিন ছুটি থাকায় সারাদিন রুমেই কাটাল অবনী। সাদাফ সকালেই ফোন দিয়ে জানিয়েছে, একটা তিন রুমের ফ্ল্যাট নিয়েছে ইশরাক। খুব তাড়াতাড়ি ওরা নতুন ফ্ল্যাটে উঠবে। এরপর আর ওর সাথে যোগাযোগ করেনি সাদাফ। অবনী অবশ্য ফোন বন্ধ করে লম্বা ঘুম দিয়েছিল। ঘুম ভেঙেছে সন্ধ্যার একটু আগে। ঘুম ভাঙ্গলে ফোনের সুইচড অন করল অবনী। একটু পরেই সাদাফের ফোন আসল।
” তোকে কতবার ফোন দিয়েছি জানিস? কি করছিলি এতক্ষণ? ” ধমকে উঠল সাদাফ।
” ঘুমাচ্ছিলাম। কেন ফোন দিয়েছিলে? ”
” ভাইয়া আর আমি মিলে বাসার জন্য কিছু ফার্নিচার কিনেছি। সেগুলো সেট করাও শেষ। তোর জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখ। কাল সকালে আমরা এসে তোকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠব। পারবি তো? নাকি কোন কাজ আছে? ”
” কালকে সারাদিন কোন কাজ নেই। একদম ফ্রি আছি বলতে পার। ”
” তাহলে আমি আর ভাইয়া নয়টার দিকে যাব তোকে নিতে। ”
” আমাকে নিতে আবার দু’জনকে আসতে হবে! ”
” গাধী, ঐ দিকে ভাইয়ার একটা কাজ আছে। আমি যেহেতু যাবোই, তাই ভাইয়াকেও বলেছি যেতে। বুঝেছিস? ”
” বুঝবনা কেন? খুব বুঝেছি। ”
” বুঝলেই ভালো। ” দু’জন আরও কিছুক্ষণ ঝগড়া করার পর ফোন রাখল।

পরদিন সকালে কোন একটা কাজে হোস্টেলের বাহিরে আসল অবনী। ও রাতেই গোছগাছ করে, ওর ব্যবহার্য জিনিসপত্র সব গেটের ভেতরে এনে রেখেছে। নয়টা বাজার মিনিট দশেক আগে ওর রুমমেটের সাথে নিচে আসে। কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত জানতনা, একটু পরই কি হতে চলেছে। অবনী জানতনা হোস্টেলের বাহিরে মাহি আছে। অবনীকে বাহিরে দেখেই ওর দিকে এগিয়ে আসল মাহী।
” কি সৌভাগ্য আমার সকাল সকাল মক্ষীরানির দর্শন পেলাম! হঠাৎ করেই যে বাহিরে আসলে? কেউ আসবে নাকি? না মানে তোমার কাস্টমারদের কথা বলছিলাম। ” মাহী সেদিনের অপমানের প্রতিশোধ নিতে চায়। সেজন্যই সে অবনীকে আক্রমণ করল।
মাহির মুখে এমন অশ্লীল কথা শুনে চমকে উঠল অবনী। সেই সাথে ঘৃণায় ওর চোখমুখ কুঁচকে গেল।

” হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে অপমান জনক কথা বলার? আপনার কোন ধারনা আছে এইমাত্র আমাকে কি বললেন আপনি? ” রাগে-অপমানে অবনী কাঁপছে৷
” আমি যা বলার জেনে-বুঝেই বলেছি। অস্বীকার করতে চাও তোমার মনোরঞ্জনের জন্য কাস্টমার নেই? আজকাল তো দুই কাস্টমারকে বেশ এ্যাক্টিভ দেখা যাচ্ছে। তা তোমার রেট কত? কি ভেবেছিলে, মেধাবী ছাত্রী বলে পার পেয়ে যাবে? তোমার কুকর্ম কেউ দেখতে পাবেনা? আচ্ছা, দু’জন কাস্টমার যখন আছে, তখন আর একজনকে রাখলে ক্ষতি কি? তারা তোমাকে যা দেয়, তার থেকে বেশিকিছু আমি তোমাকে দেব। রাজি হয়ে যাও৷ আখেরে তোমারই লাভ হবে। ”
মাহির এমন মিথ্যা অপবাদে দিশেহারা অবনী অপমানে কেঁদে ফেলল। আশেপাশের লোকজন ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। কেউ কেউ ফিসফিস করে কিছু বলছে। আজ-অব্দি ওর চরিত্র নিয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারেনি। কিন্তু আজ?

” আপনি থামবেন? আবারও বলছি না জেনে আজেবাজে কথা বলবেননা৷ আমি কোন রাস্তার মেয়ে নই যে আপনি আমাকে এভাবে কথা বলবেন। আমি থানায় যাব। আপনাকে শাস্তি পেতেই হবে। ”
” আরে থাম। তোমার মত মেয়েকে আমার চেনা আছে। মুখে মুখে আদর্শের বুলি আউড়ানো তোমাদের কাজের একটা অংশ৷ কিন্তু দিনদুপুরে খদ্দের নিয়ে ঘুরে বেড়াতে তোমাদের একটুও বাঁধেনা। ”
” স্টপ ইট। আই সে স্টপ ইট। আপনি কার দিকে আঙুল তুলেছেন সেটা যদি জানতেন তবে এভাবে সবার সামনে আমাকে অপমান করতে পারতেননা। অসভ্য লোক একটা। আমার দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের দিকে একবার তাকান। মেডিকেলে ভর্তি হবার পর থেকেই আমি আমার পেছনে ঘুরেছেন। আমাকে নানান প্রলোভন দেখিয়েছেন। কিন্তু যেই দেখলেন, আমি আপনার প্রলোভনে পা দেইনি, ঠিক তখনই আমার নামে বদনাম করছেন। আপনি একটা কাপুরষ। ”

” বাহ্ বাহ্ তালিয়া। আজকাল রাস্তার মেয়েরাও জ্ঞানের বহর নিয়ে চলাফেরা করে দেখা যায়। তোমার রেট জানলেই আর কোন কথা বলতে হয়না। অন্যদের তো সুযোগ ঠিকই দিচ্ছ। আর সেই সুযোগ আমরা চাইলেই দোষ? ”
অবনী এবার জোরে কেঁদে ফেলল। আশেপাশে বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছে। ছোটখাটো একটা ভীড় জমে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে অবনীর হেঁচকি উঠে গেছে। কয়েক মুহূর্ত পর ওর চোখ গেল সামনের দিকে। রিক্সা থেকে নামছে ইশরাক। সাদাফও আছে তার সাথে। ওদেরকে দেখে অবনী বোধশক্তি হারাল।
সামনে লোকজনের জটলা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইশরাক, সাদাফ দু’জনেই। কৌতুহলী হয়ে সামনে এগোতেই ইশরাক ওর বুকে কাউকে আছড়ে পরতে দেখল। পরক্ষণেই বুঝতে পারল এটা অবনী।
ইশরাককে জড়িয়ে ধরে অবনী হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। অবনীকে কাঁদতে দেখে ইশরাক হতভম্ব হয়ে গেল। ওর কলিজায় কাঁপন ধরাচ্ছে অবনীর চোখের প্রতিটি অশ্রুকনা। বুকের ভেতর তোলপাড় হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন শতসহস্র ছোরা দিয়ে ওর ভেতরটা ক্ষত-বিক্ষত করছে।

” কি হয়েছে আমার, সোনা পাখী? কাঁদছিস কেন তুই? দেখি, একবার তাকা আমার দিকে। ” ইশরাক কাঁপা গলায় অবনীকে ডাকছে।
কিন্তু অবনী ইশরাকের ডাক শুনলনা, ও কেঁদেই চলেছে। ইশরাকের ন্যায় সাদাফও অবনীকে কাঁদতে দেখে অবাক হয়ে গেছে। যে মেয়ে হাজার দুঃখ-কষ্টেও ভেঙে পরেনা সেই মেয়ে আজ কাঁদছে! নিশ্চয়ই গুরুতর কিছু ঘটেছে।
” অবনী, কথা বল। আমাদের বল তুই কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? তোকে কাঁদতে দেখে ভাইয়া টেনশন করছে। ” সাদাফ ব্যাকুল গলায় বলল।
সাদাফের কথা অবনী শুনতে পেয়েছে সেটা বুঝতে পারল ইশরাক। সাদাফের কথা শোনামাত্রই অবনী দু হাত দিয়ে আরও জোরে আঁকড়ে ধরল ইশরাককে। এবার ইশরাক নিশ্চিত গুরুতর কিছুই ঘটেছে। ইশরাকও স্থান কাল ভুলে জড়িয়ে ধরল অবনীকে। আদুরে গলায় বলল,
” লক্ষ্মী বউ আমার আমাকে বল তোর কি হয়েছে? এভাবে আমাকে টেনশনে রাখিসনা। ” ইশরাকের ডাকে কিছু একটা ছিল যে অবনী ওর দিকে মুখ তুলে তাকাল। পেছনে হাত দিয়ে ইশারা করল। যেখানে মাহি দাঁড়িয়ে আছে। অবনীর হাতের দিকে লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাল ইশরাক। এক নজর সেদিকে দেখে অবনীর চোখের পানি মুছে দিল।

” ঐ লোকটা আমাকে প্রস্টিটিউট বলেছে। সে আরও বলেছে, তুমি আর সাদাফ ভাইয়া তোমরা দু’জনেই আমার কাস্টমার। সে আমার রেট জানতে চেয়েছে। আরও অনেক আজেবাজে কথা বলেছে। আমি তাকে পাত্তা দেইনা জন্যই সে এটা করেছে। ”
অবনীর কথা শুনে রাগে ইশরাকের মাথা এলোমেলো হয়ে গেল। সাদাফেরও একই অবস্থা। সাদাফ কোনকিছু না ভেবে এগিয়ে গেল মাহির দিকে। কোন কথা না বলে ওর কলার চেপে ধরল।
” তোর এতবড় সাহস, অবনীকে এমন জঘন্য কথা বলেছিস? তুই জানিস ও আমার কে? ও আমার বোন, আমার বড় ভাবী। ”
রাগে সাদাফের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। ও কথাগুলো বলেই একটা ঘুষি বসিয়ে দিল মাহির নাক বরাবর। ওর শরীরে যেন অসুরের শক্তি এসে গেছে। এক ঘুষি খেয়ে মাহি মাটিতে পরে গেলে ওকে মাটি থেকে তুলে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে সাদাফ৷ আশেপাশের লোকজন প্রথমে মাহিকে বাঁচাতে আসলেও সাদাফের কথাগুলো শুনে থেমে গেল। তারাও বুঝতে পারছে ছেলেটা ভুল করেছে।
ইশরাক রাগী চোখে তাকিয়ে আছে মাহির দিকে। সে মার খেতে খেতে কাহিল হয়ে গেছে। অবনী কাঁদছে জন্য ওকে রেখে মাহির কাছে যেতে না পারার আফসোস হচ্ছে ওর। এই আফসোস আজীবন থাকবে।

” জান পাখি, এবার কান্না থামা। এখানে একটু দাঁড়াবি? ঐ জানোয়ারটাকে তোর পায়ের কাছে নিয়ে আসতে হবে যে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক। আমি এক্ষুণি আসছি। তোকে অপমান করার শাস্তি তাকে না দিয়ে ছাড়বনা আমি। ” অবনীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে কাঁপা গলায় বলল ইশরাক। এরপর অবনীকে সেখানে রেখেই গেল সাদাফের কাছে৷
” সাদাফ, অনেক হয়েছে। তুই অবনীর কাছে যা। একে আমি দেখছি। ” কথার মাঝেই ইশরাক শার্টের হাতা গুটিয়ে নেয়। এরপর মাহির কাঁধে হাত রাখল। রক্তাক্ত মাহি দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই। কিন্তু ইশরাক ওকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
” ও আমার স্ত্রী, সেটা না জেনেই তুই ওকে অপবাদ দিয়েছিস? কি দোষ ওর? তোকে পাত্তা দেয়নি তাই, এমন জঘন্য অপবাদ দিয়েছিস! ভুল করেছিস। আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস তুই। এর শাস্তি তোকে পেতেই হবে। ” কথাটা শেষ করেই ইশরাক মাহির গালে সর্ব শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারল। এক থাপ্পড়েই মাহির মুখের ভেতরটা রক্তে ভরে গেল। মুখের ভেতর থেকে একটা দাঁত ছিটকে বাহিরে পরল। ইশরাকের সেদিকে নজর নেই। সে ব্যস্ত মাহিকে মারতে।
অবস্থা বেগতিক দেখে আশেপাশের লোকজনের ভেতর থেকে কেউ একজন থানায় ফোন করল।

” আপনি বলতে চাইছেন, এই ছেলেটা আপনার স্ত্রীকে অপমান করেছে? প্রমান আছে কোন? ” ডিউটি অফিসারের কথা শুনে ফোন থেকে মনযোগ সরাল ইশরাক।
” আপনার কি মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি? ”
” প্রশ্ন করবেননা। আমি প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দিন। এটা থানা, এখানে আমরা প্রশ্ন করি। অন্যেরা শুধু উত্তর দেয়। ”
” আচ্ছা! তারমানে আপনি এটা বোঝাচ্ছেন যে, এখানে আপনারাই সর্বেসর্বা, জনগণকে আপনারা আঙুলে নাচাবেন? ”

হলুদ বসন্ত পর্ব ৩০

” জাস্ট শাট আপ। এত বড় বড় কথা বলছেন, আপনার পরিচয় কি জানতে পারি? ”
” অফকোর্স, হোয়াই নট। তবে তার আগে ফোন রিসিভ করুন। ”
বিরস মুখে ডিউটি অফিসার ফোনের দিকে তাকায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তার চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

হলুদ বসন্ত পর্ব ৩২