হামিংবার্ড পর্ব ৩৩

হামিংবার্ড পর্ব ৩৩
তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া

গ্রীষ্মকাল। সময় এখন দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। তপ্ত রোদের তাপে হাঁসফাঁস করছে শহরজুড়ে মানুষ। নয়নার শরীরটা আজ বেশ একটা ভালো লাগছে না। হালকা পেটব্যথা আর ক্লান্তি নিয়ে সে পুরো ক্লাস না করেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়েছে। ফুটপাত ধরে ধীরে ধীরে হাঁটছে – চোখ তার কৃষ্ণচূড়ার রাঙা ফুলে ভরা গাছগুলোর দিকে। যেন পুরো ঢাকা শহরটাই এক রঙিন ফুলের শহরে রূপ নিয়েছে। জারুল, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু- সব মিলিয়ে চারপাশটা এমন মনকাড়া যে তাকালেই চোখটা জুড়িয়ে আসে।

“ এই নয়না…… “
হঠাৎ পরিচিত এক কণ্ঠস্বর কানে আসতেই থমকে দাঁড়াল নয়না। ধীরে ধীরে ঘুরে তাকাতেই দেখল পলাশ আসছে। নয়নার স্কুলেই পড়ে সে, এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার দিন চলছে এখন। পলাশ দৌড়ে এসে ঠিক নয়নার সামনে দাঁড়াল। মুখে ঘাম, কাঁধ ওঠানামা করছে হাঁপানিতে –বুঝাই যাচ্ছে, অনেকটা দৌড়ে এসেছে।
“ কী হয়েছে? এভাবে দৌড়ে এলেন কেন?”
“ তোমাকে যে সকালে বললাম, ছুটির পর দাঁড়িও কিন্তু তুমি তো না বলেই চলে যাচ্ছিলে!”
নয়না আবার হাঁটা শুরু করেছে। পলাশও তার ঠিক পাশেই হাঁটছে। চুপচাপ, কিন্তু যেন অনেক কিছু বলার ইচ্ছা চোখে। তার পরনে সাদা রঙের শার্ট, সঙ্গে নীল জিন্স। সাধারণ পোশাক হলেও বেশ মানিয়েছে তাকে। গায়ের রঙ তার ফর্সা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ আমার শরীর খারাপ লাগছে, সেজন্য আগেভাগে বলে চলে এসেছি। আপানকে বলতাম কীভাবে? “
“ তা-ও কথা। “
মাথা চুলকাতে চুলকাতে কথা বলল পলাশ, কণ্ঠে একরকম ভেবে-না-পাওয়া ভাব। নয়নার দৃষ্টি একটানা সামনের দিকে – চোখে কোনো চঞ্চলতা নেই। যেন পলাশের উপস্থিতি তার জন্য একেবারে নিরর্থক। একফোঁটাও আগ্রহ নেই চোখে-মুখে।
“ আচ্ছা, নয়না শোনো। “
“ বললেই হয়, কান আছে যখন অটোমেটিক শুনতে পারবো। “
“ স্কুল থেকে পিকনিকে যাবে, তুমি যাবে না?”
“ নাহ। “
“ কেনো?”
“ সেটা আমার বিষয়। “

চুপচাপ রইল পলাশ। নয়নার সঙ্গে কী ঘটেছে, সে সব পলাশ জানে, খুব ভালো করেই জানে। তবুও সে চেষ্টা করে নয়নাকে স্বাভাবিক রাখার, যেন অন্তত কিছুটা স্বস্তি পায় ওর চোখে-মুখে। কিন্তু নয়না কারো সঙ্গেই, বিশেষ করে ছেলেদের সঙ্গে, কথা বলে না। এই বয়সেই তার মনে গেঁথে গেছে একধরনের ভয়, একরকম গোপন ক্ষোভ। আর যেসব অভিজ্ঞতা এই অল্প বয়সেই তাকে পেরোতে হয়েছে, তাতে তার এমন মনোভাব খুব একটা অস্বাভাবিকও নয়।

“ ওকে, মেহবুবা। “
“ আপনাকে না বলেছি, এসব নামে ডাকবেন না?”
নয়না মুখে হালকা বিরক্তির ছাপ এনে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল। পলাশ শুধু মুচকি হাসল– চেনা সেই হাসি, যে হাসির আড়ালে অভিমানও ঢাকা পড়ে যায় কখনো কখনো।
“ আমি ছাড়া আর কে ডাকবে বলো? আমিই ডাকব৷ রাগ করো না। এখন আসছি আমি। পরে কথা হবে। “
‘ হবে না কথা। যান আপনি। “
নয়না পা চালিয়ে দ্রুত হাঁটতে শুরু করল। পলাশ পড়ে রইল একটু পেছনে, স্থির। ছেলেটি কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল নয়নার চলে যাওয়ার পথে, চোখে একরকম অপূরণীয় শূন্যতা। তারপর ধীরে ধীরে সে নিজের গন্তব্যের দিকে পা বাড়াল, নিঃশব্দে।

“ আমি দেশের বাইরে যাবো না মা। তুমি আরিশকে বলো, বোঝাও। প্লিজ, মা!”
সাবিহার চোখ-মুখ ফুলে গেছে, সকাল থেকে একটানা কাঁদছে সে। ছোটোবেলা থেকে গ্রামের মাটিতে বেড়ে ওঠা মেয়েটা হঠাৎ করে দেশের বাইরে যাওয়ার খবর শুনে বেশ অস্থির হয়ে পড়েছে। মনের ভেতর একরাশ ভয় আর শূন্যতা জমে উঠেছে। মা, ভাই আর আরিশ – এই তিনজনকে ছেড়ে এত দূরে চলে যাওয়ার কথা ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠছে তার। সব মিলিয়ে সাবিহার মনটা ভীষণ খারাপ। পাশে বসে তাসলিমা খাতুন মেয়ের মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন–চোখে-মুখে নিরব সান্ত্বনা।
“ শান্ত হ তুই। আরিশ ফিরুক আগে। হয়তো মাথা ঠান্ডা হলে কিছু বুঝালে বুঝবে৷ তবে হ্যাঁ এরপর থেকে বুঝেশুনে কাজ করবি। কী দরকার ছিলো, অরা না বড়ার জুসে মদ মেশানোর? “
চোখমুখ কুঁচকে ফেলল সাবিহা। ওই অরাকে নাজেহাল করার জন্যই তো করেছিল সব। কিন্তু হলো উল্টো। সাবিহাকেই নাজেহাল হতে হচ্ছে এখন।

“ ওই মেয়েকে সহ্য হয় না আমার। কী আছে ওর মধ্যে, যা আমার মধ্যে নেই? আমিও তো আরিশের কাজিন। তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করলো না সে? অরাকেই কেনো? আর করেছে তো করেছে, এতো আদিখ্যেতার কী হয়েছে? “
“ নিজেকে সামলাতে হবে সাবিহা। তোকে আগেও বলেছিলাম– কাছাকাছি গিয়ে, বিশ্বাস অর্জন করে ক্ষতি করতে হয়। তাহলেই সেটা মরণকামড় হবে। “
“ হুম। “
লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল সাবিহা। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সে।
সকাল থেকে অপেক্ষা করে বসে আছে অরা। আরিশের ফেরার অপেক্ষা যেন ফুরচ্ছে না। সন্ধ্যা থেকে আরিশের পছন্দের বিভিন্ন খাবার রান্না করেছে সে। বিরিয়ানি, গরুর মাংস, ভাত, পোলাও সবকিছু। কিন্তু সমস্যা হলো অরা কন্টিনেন্টাল ডিশ বানাতে জানে না। তবে সময় নিয়ে এটাও শিখে নেবে বলে ভেবেছে সে।

ঘরের ভেতর পায়চারি করছে অরা। পরনে কালো রঙের শাড়ি। বিয়ের পর আজকেই প্রথম শাড়ি পরেছে সে। তামান্না পরিয়ে দিয়েছে। বিয়েতেও শাড়ি পরেনি। শাড়ি সামলানো ঝামেলা বলেই পরা হয়নি তখন। বারবার দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখেছ সে। এগারোটা পয়তাল্লিশ বেজেছে। এয়ারপোর্টে নেমে কল করেছিল আরিশ। বলল– কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় ফিরবে। কিন্তু কই? বিশ মিনিট পেরিয়ে গেলো তবুও তো আসছে না। অবশ্য কীভাবে আসবে? ঢাকার যে জ্যাম তাতে বিশ মিনিটে বাসায় পৌঁছানোর কথা ভাবাও হাস্যকর ব্যাপার । বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এলো অরার। কী বোকা বোকা ভাবনা তার। আয়ানার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো কিছুক্ষণ। কালো শাড়ির সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ, গলায়– কানে কুন্দনের সিম্পল গয়নাগাটি। কপালে একটা ছোটো টিপ, হাতে ম্যাচিং চুড়ি, চুলগুলো খোলা। তবে বেশ পরিপাটি করে রাখা।

“ঠিকই আছে, সব?”
নিজেকে প্রশ্ন করল অরা, মনে মনে। তারপর আবার নিজের দিকে মনোযোগ দিল। চোখে কাজল লাগানো হয়নি। দ্রুত হাতের কাজলটা নিয়ে চোখে লাগাতে শুরু করল সে। এর মধ্যে গাড়ির আওয়াজ শুনে আচমকা নড়ে উঠল অরা। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ঝাঁকুনি। ধড়ফড় করতে লাগলো হঠাৎ। কাজলটা তাড়াতাড়ি ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে, শাড়ির কুঁচি ধরে ঝটপট ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

তালহা গিয়েছিল এয়ারপোর্টে। দুই ভাই একসাথে বাসায় ফিরেছে মাত্র। তামান্না দরজা খুলে দিয়েছে। তালহা আর আরিশ পরপর বাসায় ঢুকল, যেন দীর্ঘ সময় পরে ঘরে ফিরে এসেছে। অথচ মাত্র দুই দিন বাইরে ছিলো আরিশ। তামান্নার মুখে এক উজ্জ্বল হাসি।
“ কী খবর তামান্না? “
গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো আরিশ। এমনিতে সব সময় এরকমই গম্ভীর থাকে সে। তবে অরার সামনে আলাদা।
“ ভালো, ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন? “
“ ভালো। তোর ভাবি কোথায়, রুমে?”
সিঁড়ি পর্যন্ত এসে থমকে দাঁড়ালো অরা। ওইতো ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ, পরনে সেই চিরচেনা কালো রঙের পোশাক। নিজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল অরা। আজকে সে-ও আরিশের মতো কালো রঙের পোশাক পরেছে। এরমধ্যে তালহার নজর গেলো অরার দিকে।

“ ভাবি ওখানে, ভাইয়া। “
তালহার কথায় সিঁড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করলো আরিশ। ঠিক সেই মুহুর্তেই যেনো ছোটোখাটো হার্ট অ্যাটাক হলো তার। বুকটা ধক করে উঠলো কিছুটা পিছনে সরে গিয়ে সোফায় বসে পড়লো আরিশ। আকস্মিক ঘটনায় অরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নিজেকে সামলে যত দ্রুত সম্ভব সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো সে। তামান্না, তালহা আরিশের অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।
“ কী হলো, ভাইয়া?”
“ এই মেয়েটা কে, তালহা? “
“ হুঁশ! নিজের বিয়ে করা বউ, নিজেই চিনতে পারছ না৷ “
শুকনো ঢোক গিলল আরিশ। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অরার দিকে এগোল।
“ কী হয়েছে আপনার? শরীর ঠিক আছে তো?”
ব্যতিব্যস্ত হয়ে শুধালো অরা। আরিশ চুপচাপ তাকিয়ে আছে তার দিকে। কোনো কথা বলছে না। অরা আরো কয়েকবার একই প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পেলো না। হঠাৎ আরিশের মনে পড়ল, অরাকে তালহাও দেখছে। সম্বিৎ ফিরে পেলো সে। কোনোকিছু না বলেই হুট করে অরাকে কোলে তুলে নিলো । চমকাল অরা। তামান্না কিছুটা লজ্জা পেলো বটে কিন্তু তালহার ঠোঁটের কোণে হাসি।

“ কী করছেন, আপনি? এখানে লোকজন আছে। “
“ থাকুক। এই তালহা চোখ বন্ধ করে রাখ৷ আমার বউয়ের দিকে তাকাবি না এখন৷ আমি দেখব শুধু। ”
“ ঠিক আছে, মহারাজ। “
তালহা হাসতে হাসতে চোখ বন্ধ করে ফেলল। তামান্না মাথা নিচু করে হাসছে। সিঁড়ির দিকে এগোল আরিশ। ওরা চলে যাওয়ার পর তালহা তামান্নার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো তামান্না,
“ কী হয়েছে? আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন কেন!”
“ এমনি৷ “
“ ও তাই?”
“ হু, হু – একদম তাই। চলো ছাদে গিয়ে বসি। “
খুশি হয়ে গেলো তামান্না। হাসিহাসি মুখে শুধালো,
“ গান শোনাবেন? “
“ হ্যাঁ, শোনাবো। “
“ তাহলে চলুন। “

আরিশ ঘরে ঢুকে অরাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো, যেন কোন সময় নষ্ট না হয়। এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে, তৎক্ষণাৎ দরজা আঁটকে দিয়ে তার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিল। অরা শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো, মনে হতে লাগলো—লোকটা কি আজ পুরো পাগল হয়ে গেছে? এত এলোমেলো আচরণ কেন? তার মানসিকতা কি পুরোপুরি বদলে গেছে?
আরিশ এক নিশ্বাসে তাকে খাটে বসিয়ে, পা ঝুলিয়ে রেখেছে। তারপর ফ্লোরে হাঁটু গেঁড়ে নেমে, একেবারে তার সামনে বসে গেল। চোখে এক অদ্ভুত দৃশ্য—না বলা কিছু কথা, অস্বাভাবিক কিছু অনুভূতি মিশে যেন এক অস্থির নীরবতা সৃষ্টি হল।
“ তুমি কি মারতে চাইছ আমাকে? “
চমকাল অরা। চোখ ছলছল করে উঠল তার। আরিশ কীভাবে এমন কথা বলল তাকে?

“ মানে?”
“ তোমার এই অপূর্ব সৌন্দর্য আমাকে খু* ন করে ফেলছে, হামিংবার্ড। এভাবে মেরো না জান৷ তোমার এই সৌন্দর্যে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। আমি কন্ট্রোল হারাচ্ছি, পাখি। “
অরা এবার একটু লজ্জা পেল, মাথা নিচু করে ফেলল সে। আরিশ যেন এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ডুবে গেছে। তার চোখ এক পলকেও সরে না—অরার মাথার চুল থেকে শুরু করে পা অবধি পুরো দেহ এক নজরে পরখ করছে। লাল রঙের লিপস্টিক আর কালো শাড়ি, যেন এক অন্য রকম দুনিয়া খুলে দেয় তার সামনে। অরার ঠোঁটের দিকে এক মনে তাকিয়ে, আরিশের চোখে যেন কিছু হারিয়ে যাওয়ার অবস্থা। তার মধ্যে অরার মেদহীন, উন্মুক্ত পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে এখন। আরিশ ইচ্ছে করেই শাড়ির পৃষ্ঠটা একটু সরিয়ে রেখেছে, যেন সে আরও ভালোভাবে দেখতে পারে।

“ আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো আপনার? ওখানকার সবকিছু ঠিক আছে তো? “
“ ঠিক নেই, জান। আমি ঠিক নেই। তোমার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি আমি। “
বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চুলের মুঠি টেনে ধরলো আরিশ। হালকা ব্যথা পাচ্ছে অরা। কিন্তু সেটা বলার আগেই আরিশের ঠোঁটের নিচে চাপা পড়লো অরার ঠোঁট। চিরচেনা সেই উন্মাদনা, কঠোরতার ছোঁয়া পেলো সে। ভালোলাগা, খারাপ লাগা, আকর্ষণ সবকিছু একসাথে অনুভব করছে মেয়েটা। চুম্বনের সাথে সাথে উন্মুক্ত পেটের ওপর হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো আরিশ। অরার কেমন কেমন লাগছে যেন। এই অনুভূতির নাম জানা নেই তার। জীবনে প্রথম এমনকিছু অনুভব করছে সে। কিছুক্ষণ পর থামল আরিশ।
“ ফ্রেশ হয়ে নিন আগে, আরিশ। আপনার জন্য, আপনার পছন্দের খাবারগুলো রান্না করেছি আজ। “
অরাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে আরিশ। আচমকাই তালহার কথা মনে পড়লো আরিশের। চোখমুখ কুঁচকে ফেলল সে।

“ এভাবে সেজেগুজে রুমের বাইরে কেনো গিয়েছিলে, হামিংবার্ড? তালহা ছিলো ওখানে। “
“ আপনি কিন্তু বলেছেন, এসব বলবেন না। তালহা আপনার ভাই, আমারও ভাই হয়। “
নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছে আরিশ। নেহাৎ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলছে বলেই এখনও নিয়ন্ত্রণ হারায়নি সে৷ নয়তো আজকে তালহার জন্য ফের ঝামেলা হতো। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে আরিশ। কিন্তু তার ওভার পজেসিভনেস আর রাগ, এটা তার স্বভাব। এসব তো পরিবর্তন করা সম্ভব না
“ সে যাইহোক, অপ্রয়োজনে কখনো সেজেগুজে রুমের বাইরে যাবে না৷ তোমার সবকিছু কেবল আমার জন্য। সুন্দর দেখাক কিংবা অসুন্দর, সবকিছু আমি দেখব, আমি। “
“ ঠিক আছে। এখন যান, ফ্রেশ হয়ে আসুন। “

ফ্রেশ হওয়ার কথা মনে পড়তেই আরিশের মনে হলো, আসলেই গোসল করা দরকার।
“ বাইরে থেকে এলাম, ফ্রেশ না হয়েই এসব করা উচিত না। লং জার্নি! যদি কোনো ব্যাকটেরিয়া সাথে নিয়ে আসি? সেসব তোমার শরীরে যায় তখন আমি কী করব? না, না। আমি এমন রিস্ক নিতে পারবো না। আমি গোসল সেরে আসছি। “
মুখটা মলিন হয়ে গেলো অরার। নিজের হাতে রান্না করেছে বলল সে, তবুও লোকটার থেকে কিছু শুনতে পেলো না। কিছু তো বলতে পারতো!
“ হুম, যান। “
“ যান না বলে, জান বলতেও তো পারো। “

হামিংবার্ড পর্ব ৩২

জামাকাপড় খুলতে খুলতে বলল আরিশ৷ অরা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
“ আমি কি চেঞ্জ করব? না মানে এভাবে খেতে যাবো?”
“ দরকার নেই। সুন্দর লাগছে। এভাবেই থাকো। তালহা দেরিতে খাবে হয়তে। আমরা এখন খেতে যাবো। “
“ ঠিক আছে। আমি ডাইনিং রুমে গেলাম। আপনি আসুন।”
অরা যেতে চাইলে আরিশ তার হাত ধরে নিজের বুকের ওপর ফেলল তাকে। অরার মুখটা এখন আরিশের উন্মুক্ত বুকের সাথে মিশে আছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল অরা।
“ যাও, আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি। “
“ আচ্ছা। “

হামিংবার্ড পর্ব ৩৪