হামিংবার্ড পর্ব ৬১

হামিংবার্ড পর্ব ৬১
তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া

বাইরে এখনও বৃষ্টি ঝরছে, তবে একটু থেমেছে। জানালার পাশে ঘরের নরম আলোয় দাঁড়িয়ে আছে অরা আর আরিশ। অরা তার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সেই স্পর্শে যেন অস্থিরতা মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আরিশও তাকে জড়িয়ে রেখেছে, এমনভাবে, যেন একটুও আলগা হলেই সব ভেঙে যাবে– হারিয়ে ফেলবে অরাকে।
“বুঝতে পারি আমি।”
ফিসফিস করে বলল অরা। একটু থেমে আবার বলতে লাগলো,
“আমি সরি, রাগী ভূত। কিছুদিন ধরে তোমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করছি। জানি না কেন এমন করলাম হঠাৎ।”
আরিশ তার পিঠে ধীরে হাত বুলিয়ে দিল। তারপর দুই গালে হাত রেখে মুখটা নিজের দিকে তুলে আনল। দুজনের চোখ এক মুহূর্তে আটকে গেল।

“ সময় সবকিছু ঠিক করে দিবে, হামিংবার্ড। শুধু ভয় পাই, যদি তুমি…”
আরিশের কথার মাঝখানে অরা তার ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে থামিয়ে দিল। মুহূর্তের জন্য আরিশ কেঁপে উঠল অরার স্পর্শে। অনেকদিন পর প্রেয়সীর এমন কাছাকাছি আসা, তাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল। দুজনের মাঝখানে এখন নিঃশব্দতা, কিন্তু হৃদস্পন্দনে গুঞ্জরিত হচ্ছিল শত শব্দ।
“চুপ করুন। কিছু হবে না আর। আমি আছি আপনার জন্য। শুধু অনুরোধ, নিজেকে একটু বদলানোর চেষ্টা করুন।”
“চেষ্টা করছি, অরা। কিন্তু মনে হয়, নিজেরই সঙ্গে লড়ছি প্রতিদিন। আর এখানেই আমার ভয়…”
অরা একটুখানি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। আরিশ ধীরে ধীরে তার কোমরে হাত রেখে কাছে টেনে আনল। চমকাল অরা, তবে পিছিয়ে যায়নি। এই স্পর্শ তার অজানা নয়, সে জানে আরিশের স্পর্শের গভীরতা। আরিশ তার কপালে একটি চুমু রাখল, অনেকটা সময় নিয়ে। এরপর তার ঠোঁট নেমে এলো নিচে—ধীরে, ধীরস্থিরভাবে। তাদের ঠোঁট এক মুহূর্তে ছুঁয়ে গেল—নরম, শুদ্ধ, গভীর এক ছোঁয়া। তাতে ছিল না কোনো জেদ, কোনো অস্থিরতা, ছিল কেবল হৃদয়ের সমস্ত প্রশান্তি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরাও সেই মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে রইল। একটুখানি উষ্ণতা, একটুখানি ভরসা… যেন বহুদিনের অপেক্ষার এক চিরন্তন উত্তর। তবে কিছুক্ষণ পরই অরা ধীরে বলে উঠল,
“শরীরটা ভালো লাগছে না, আরিশ। আমার একটু বিশ্রাম দরকার।”
অরার কথায় যেন হুঁশ ফিরলো আরিশের। বেপরোয়া আরিশ বরাবরই নিজের অনুভূতি সামলাতে ব্যর্থ । আবেগে ভেসে গিয়ে অরার ক্লান্তি, অসুস্থতা ভুলেই গিয়েছিল সে। বিষয়টি অনুভব হতেই সাথে সাথে নিজেকে অরার থেকে সরিয়ে নিল সে, মুখে এক ধরনের অনুশোচনা।
“তুমি বিশ্রাম নাও, পাখি। আমি… আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

আর কোনো কথা না বলে দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল সে। অরা চুপচাপ তাকিয়ে রইল তার পেছনে। ভদ্রলোকটা বদলায়নি, তবুও ভালোবাসার পরশে সে একটু একটু করে নিজের কঠিনতাগুলো গলিয়ে নিচ্ছে।
মুখ গোমড়া করে বিছানায় বসে আছে সাবিহা। পাশেই ফোনে বারবার রিং হচ্ছে – মেহরাব কল করছে। অনেকবার বাজার পর আবার কেটে গেল। কিন্তু সাবিহা ফোনটা ধরছে না। গত দু’দিন ধরে মেহরাবের ফোন বন্ধ ছিল। চিন্তায় অস্থির হয়ে ছিল সে। এমনকি আরিশের এমন দুঃসময়েও মেহরাব পাশে ছিল না – বিষয়টা একদম ভালো লাগেনি সাবিহার।

“এতবার কল করছে কে, সাবিহা? রিসিভ না করে বসে আছিস যে?”
মায়ের কথায় চমকে উঠল সে। কী বলবে? মেহরাব কল করেছে…তাসলিমা খাতুন যদি ভুল কিছু ভেবে বসেন! তাই চুপ করে রইল সাবিহা। কিন্তু তাসলিমা খাতুন আবারও বললেন,
“কী রে?”
“আমার এক বন্ধু কল করছিল।”
“ওহ! তা বন্ধু যখন কল করেছে, কথা বলছিস না কেন?”
“সময় হলে বলব।”
বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলেন তাসলিমা খাতুন। এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,

“অরার অসুস্থতার জন্য তালহার বিয়েটা পিছিয়ে গেল। তোর তো ক্লাসও বন্ধ যাচ্ছে ।”
“আমি আর বিদেশে ফিরব না, মা।”
চমকে উঠলেন তাসলিমা। বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“কী বলছিস এসব?”
“যা বলছি ঠিকই বলছি। আমি আরিশ ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলে নেব।”
“লেখাপড়া না করলে কী করবি? বিয়ে?”
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে হঠাৎ থমকে গেল সাবিহা। মেহরাবকে বিয়ে করে সংসার করতে চায় সে। কিন্তু মাকে সেটা সরাসরি বলা যাচ্ছে না।

“সেটা পরে দেখা যাবে, মা। তুমি এত চিন্তা করো না।”
“বোঝা যায় না তোদের মতিগতি! বিদেশে গিয়ে ভালো করে পড়াশোনা করে একটা চাকরি-বাকরি করবে—এই আশায় তো পাঠালাম। আর তুই দেশে বসেই থেকে যেতে চাইছিস! যা খুশি কর!”
বলতে বলতেই রাগে ভরা মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তাসলিমা খাতুন। সাবিহা চুপচাপ বসে রইল। বলার মতো কিছু ছিল না তার কাছে।
সবচেয়ে আগে দরকার – মেহরাবের সঙ্গে কথা বলা। তারপর দেখা যাবে কী হয়!
এইভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ। অরার শরীর এখন অনেকটাই ভালো।

আরিশও নিয়মিত অফিসে যাচ্ছে। তালহা-তামান্নার বিয়ে নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে – তবে এবার তারা তাড়াহুড়া করতে চায় না। অরা পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পরই বিয়ে করতে চায় তারা। আর এদিকে…সাবিহার সঙ্গে মেহরাবের কথা হয়নি নয় দিন। সেদিন মেহরাব ফোন করেছিল– কিন্তু সাবিহা রিসিভ করেনি।
পরে সাবিহা যখন নিজে থেকে কল করে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল, তখন মেহরাবই ফোন ধরেনি। এরপর শত চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বাসা, অফিস—কোথাও মেহরাবকে খুঁজে পায়নি সাবিহা। আসলে মানুষ ইচ্ছে করে দূরত্ব তৈরি করলে তার কাছাকাছি পৌঁছানো মুশকিল।

সন্ধ্যার ঝলমলে আলোয় আলোকিত শহরটা যেন আজ একটু বেশিই ব্যস্ত দেখাচ্ছে। চারদিকে গাড়ির হেডলাইট, রোডল্যাম্পের নরম আলো, আর দূর থেকে ভেসে আসা হর্ণের শব্দ মিলে তৈরি করেছে এক বিশেষ শহুরে সুর।
উঁচু বিল্ডিংয়ের করপোরেট অফিসের কেবিনে বসে আছে দুজন পুরুষ—মেহরাব আর আরিশ।
একটি কাঁচঘেরা ঘর, ভিতরে নীরব আলো, বাইরে শহরের হালকা কোলাহল।
দু’জনের মাঝখানে একটি সেন্টার টেবিল, তাতে রাখা কফির কাপ। কথাবার্তা চলছে কিছুক্ষণ ধরেই– স্বাভাবিক সুরে। আরিশ, বরাবরের মতোই পরিপাটি—কালো শার্টে গাঢ় ছায়া পড়েছে তার গালের ধার ধরে, গায়ে ফিটিং ফরমাল প্যান্ট। মেহরাব আজ বেশ সাধারণভাবে এসেছে। টি-শার্ট আর জিন্স, একহাতে কফির কাপ ধরা, অন্য হাত দিয়ে চেয়ার ঘষে ঘষে কিছুটা অস্থিরতা প্রকাশ করছে। তার মুখে শান্ত ভঙ্গি।

“আন্টি এখন কেমন আছেন?”
নরম গলায় জানতে চাইলো আরিশ। মেহরাব ম্লান হেসে কফির কাপ হাতে নিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ, এখন অনেকটাই ভালো।
অরা ভাবির কী অবস্থা? মা’র অসুস্থতার জন্য তোর পাশে থাকতে পারিনি রে… খুব খারাপ লাগছে, সরি আরিশ।”
আরিশ একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল, চোখে ভ্রু কুঁচকে হালকা দুশ্চিন্তার ছাপ। তারপর মাথা নেড়ে বলল,
“কি সব বলছিস, মেহরাব? উল্টো আমার সরি বলা উচিত। আন্টির এত বড় অপারেশন, আর আমি জানতেই পারিনি…”

মেহরাব কফির কাপ টেবিলে রাখে ধীরে, চোখ নামিয়ে নিচু স্বরে বলল,
“কাউকেই কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিলাম না রে। অবস্থা দু’জনেরই ভালো ছিল না। সব কিছুর পর… আলহামদুলিল্লাহ, মা আর অরা ভাবি দু’জনেই এখন ভালো আছে।”
একটা ছোট্ট নীরবতা নামল, দুজনেই যেন একসাথে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
“হ্যাঁ, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।”
বলেই আরিশ তার কফির শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা রেখে দিল টেবিলে। কিছুটা দ্বিধা নিয়ে মেহরাব আবার কাপটা হাতে তোলে। চোখ নামিয়ে, নিচু গলায় বলল,
“আরিশ, তোকে একটা কথা বলতে চাই।”
আরিশ সোজা হয়ে বসে, কৌতূহলী মুখে তাকায়।
“হ্যাঁ, বল না।”
মেহরাব একটু থেমে, মুখে একটুখানি সংকোচ নিয়ে বলে,

“ভনিতা না করে সরাসরি বলি—আমি সাবিহাকে পছন্দ করি। সাবিহাও আমাকে পছন্দ করে।
ভাই হিসেবে তোর বোনকে আমার হাতে তুলে দিতে কি তোর কোনো আপত্তি আছে?”
আরিশ মুখে হালকা মুচকি হাসি হাসলো। মেহরাবের কথায় মোটেও অবাক হয়নি সে। কারণ অরা তাকে আগেই এ বিষয় বলেছিল। মেহরাব ভালো ছেলে। আরিশের বন্ধু, সেই তার বিষয় হিসেবে সবকিছুই জানে। তাই সাবিহার সাথে মেহরাবের বিয়েতে কোনো আপত্তি করার কারণ নেই আরিশের কাছে।
“আপত্তি কিসের, ভাই! বন্ধু থেকে দুলাভাই হবি– এর চেয়ে ভালো ব্যাপার আর কি হতে পারে! যদিও সম্পর্কে আমি তোর বড়ই হবো।”

মেহরাব যেন হঠাৎ নিঃশ্বাস ফিরে পেল, মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। চোখেমুখে একধরনের স্বস্তি খেলা করতে লাগল।
“আলহামদুলিল্লাহ, যাক! তোর বোনকে এবার টাইট দেবো। নয় দিন ধরে কথা বন্ধ—একটুও যোগাযোগ করছি না।”
আরিশ কপালে হাত ঠেকিয়ে অবাক ভান করে বলল,
“কেন রে? কী হয়েছে?”
মেহরাব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হালকা হেসে বলল,
“সেদিন তোকে বলেছিলাম, আমি বারবার কল দিয়েছিলাম—কিন্তু সে ধরেনি। মা’র অবস্থা তখন খুব খারাপ ছিল। সব মিলিয়ে দু’দিন যোগাযোগ করতে পারিনি। আর সেই রাগে সাবিহা আমায় একেবারে এড়িয়ে গেল। আমি তখন আর কল করিনি। মানুষ কবে কোন পরিস্থিতিতে পড়ে – তা না জেনে অনেকেই অন্যকে জাজ করে। এটাই বড় দুঃখ।”

আরিশ হালকা চোখ ছোট করে বলল,
“বুঝেছি… মেহরাব সাহেবের অভিমান হয়েছে।”
মেহরাব একটু হাসতে হাসতে বলে,
“আরে না, ঠিক তা না…”
আরিশ হেসে উঠে বলে,
“তামান্নাদের বিয়ের সাথে তোদের বিয়েটাও দিয়ে দেবো, ভাবছি!”
মেহরাব চেয়ার থেকে আধা উঠে খুশিতে বলল,
“ তাহলে তোরাও আরেকবার বিয়েটা করে নে ভাই! কী যে বিয়ে করেছিলিস, কোনো অনুষ্ঠানই তো ছিল না!”
আরিশ হেসে মাথা নাড়ে। চোখে-মুখে স্থিরতা।

“ বিয়ে তো দু’বার করা যায় না,
অনুষ্ঠান করা যায়। অরা পুরোপুরি সুস্থ হোক, তারপর হবে সব।”
মেহরাব মজা করে বলে,
“বাহ! ছেলেটা কতো ভদ্রসভ্য হয়ে গেছে!”
আরিশ চুপ করে থাকে এক মুহূর্ত, তারপর চোখে এক মায়াবি আলো নিয়ে বলল,
“সবই তোদের জন্য… আর অরার জন্য।”
তারপর হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
“ শোন, তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। অরা গতকাল চকলেট খেতে চেয়েছিল—সেগুলো কিনে নিয়ে যেতে হবে। তুই যাবি?”
মেহরাব হাত নাড়িয়ে বলে,

“না রে। আর শোন, তোর বজ্জাত বোনটাকে কিছু বলিস না। আরেকটু সোজা হোক…”
দু’জনেই হঠাৎ একসাথে হেসে উঠল। অফিস কেবিনের পরিবেশ মুহূর্তেই হালকা হয়ে গেল।
চায়ের গন্ধ, আলো, আর বন্ধুত্ব—সব মিলিয়ে সেই সন্ধ্যা হয়ে উঠল একটু বেশি রঙিন।
রুমে পায়চারি করছে অরা। কিছুক্ষণ পরপর দেয়ালঘড়ি দেখে সময় হিসেব করছে। পরনে তার হালকা আকাশি রঙের শাড়ি, খোঁপা করা চুল, চোখে কাজল। রাত দশটা পেরিয়ে গেছে। আরিশ এখনও ফেরেনি। সকালে পইপই করে বলেছিল আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে। অথচ এখনও তার কোনো পাত্তা নেই! ভাবনার ছেদ ঘটলো আরিশের আগমনে। দরজা পেরিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই অরাকে এমন পায়চারি করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলল সে।

“ এসব কী করছো, পাখি!”
“ পায়চারি… “
ভ্রু নাচিয়ে মিটিমিটি হেসে বলল আরিশ,
“ পায়চারি না করে এদিকে এসো। “
অরা আরিশের দিকে ভালো করে তাকাল। নাহ… তার হাতে কোনো ব্যাগপত্র নেই। তারমানে ভদ্রলোক চকলেট আনেনি। খুব মন খারাপ লাগছে অরার। আরিশ তো ভুলবার পাত্র নয়! তবে?
“ সেসব পরে, আপনি কি কিছু এনেছেন? “
“ কী আনবো?”
আরিশের এমন প্রশ্নে অরার ভাবনা আরও গভীর হলো। মন খারাপের সাথে রাগও হলো তার। আরিশকে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো সে। আরিশ মাথা চুলকে মুচকি মুচকি হাসছে। ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল সে। অরা ভেতরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিয়েছে।

“ ওপেন দ্য ডোর, হামিংবার্ড।”
“ নাহ, খুলবো না দরজা। আমি আপনার সাথে রাগ করেছি। “
“ রাগ করেছো, ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা আঁটকে দাঁড়িয়ে থাকবে! “
আরিশের কথায় যেন সম্বিৎ ফিরে এলো অরার। রাগের বশে ওয়াশরুমে ঢুকে দাঁড়াল কেন? নিজের কাজকর্মে বড্ড আফসোস হলো তার।
“ তাই তো, এটা তো ওয়াশরুম! এখানে কেন এলাম! “
“ তুমি বের হও।”
“ নাহ.. হোক ওয়াশরুম তবুও এখানে থাকবো। “

আরিশ জোরে হেসে ফেলল এবার। আজকাল অরার সাথে সম্পর্কটা যেনো আরো মিষ্টি মধুর হয়ে উঠেছে তার।
“ তুমি ভালো করেই জানো, আমি চাইলে দরজা ভেঙে তোমাকে বের করতে পারি। “
চমকাল অরা। ভদ্রলোক সত্যি দরজা ভেঙে ফেলবে? হ্যাঁ, এটা আরিশের পক্ষে কোনো ব্যাপার নয়। তাকে এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা যায় না। অরা কোনো কথা না বলে আস্তে করে দরজা খুলে ফেলল। আরিশ মুচকি হেসে ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকেই অরার হাত দু’টো পেছন দিকে চেপে ধরল। অরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আরিশের এসব আচরণের সাথে পরিচিত সে।

“ আমার দিকে তাকাও, হামিংবার্ড। “
অরা একবার চাইলো কিছু বলবে, তবে কিছু না বলেই আরিশের দিকে তাকাল সে।
“ কী?”
“ এতগুলো দিন একসাথে থেকে নিজের বরকে একটুও চিনতে পারলে না তুমি। “
“ মানে?”
“ রুম থেকে বেরিয়ে দেখো, ড্রইং রুমে ডেলিভারি বয়রা চকলেটের বক্স নিয়ে এদিকে আসছে। অনেকগুলো বক্স, নিয়ে আসতে সময় লাগছে। “
অরা কী বলবে বুঝতে পারছে না। সত্যি তো, অরা না চাইতেও যে পুরুষ সবকিছু তার সামনে এনে হাজির করে – সেই অরা কিছু মুখ ফুটে চেয়েছে আর আরিশ তা ভুলে যাবে এমনটা কি হতে পারে কখনো?

“ আমি ভাবলাম….. “
“ দুনিয়ার সবকিছু নিয়ে ভাবা বন্ধ করে, শুধু আমাকে নিয়ে একটু ভাবতে পারো পাখি? “
“ আমি চকলেট, খাবো। “
ফিক করে হেসে বলল অরা। আরিশও হাসল। আঁড়চোখে একবার বাথটাবের দিকে তাকাল। পরক্ষণেই অরাকে সেদিকে ইশারা করে বলল,
“ যখন ওয়াশরুমে এসেই পড়েছ গোসল সেরে যাও, হামিংবার্ড। “
আরিশের কথার মানে বুঝতে অসুবিধা হয়নি অরার। সে কোনোমতে আরিশের থেকে সরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরিশ চেঁচিয়ে বলল,

হামিংবার্ড পর্ব ৬০

“ দূর থেকে দেখো, ডেলিভারি বয়দের কাছে যাওয়ার দরকার নেই……. “
“ ঠিক আছে…. “
অরার কণ্ঠস্বর শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল আরিশ। ধীরপায়ে বাথটাবের দিকে এগোল সে।

হামিংবার্ড পর্ব ৬২