হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১২
সানা শেখ
“এই তুই কিসের শা/লা সমন্ধি ডাকছিস?”
“আশ্চর্য, সম্পর্কে তোমরা আমার যা হও তা বলেই তো ডাকছি।”
“না ডাকবি না এমন অদ্ভুত নামে। মনে হচ্ছে কেউ গালী দিচ্ছে।”
“কি আশ্চর্য , শালা সোমন্ধি কে এখন শা/লা সমন্ধী বলেও ডাকা যাবে না।”
“মাহিদ যা ওর সাথে।”
মাহিদ সোফা ছেড়ে উঠে আলভীর হাত টেনে ধরে বলে,
“চলো।”
“আগামী কাল অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে সাথে নিয়ে যাবে ভাইয়া।”
“তুই অফিসে গিয়ে কি করবি?”
“এমনি ঘুরতে যাব।”
“আচ্ছা নিয়ে যাব।”
মাহিদ এর সাথে নিজের রুমে চলে আসে আলভী।
পানির বোতল টা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে মাহিদ এর পাশে বেডে বসে।
“বলো কি বলবে!”
“তুই আর মায়া একই ভার্সিটিতে পরিস?”
“হ্যাঁ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“দুজন একসাথে যাওয়া আসা করিস?”
“মাঝে মধ্যে, মায়া বেশির ভাগ ড্রাইভারের সাথে যাওয়া আসা করে।”
“ভার্সিটিতে মায়ার ছেলে বন্ধু আছে?”
“না, মায়া তো ভার্সিটিতে মেয়েদের সাথেই মেশে না। ছেলেদের সাথে কথাও বলে না।”
“বয়ফ্রেন্ড আছে?”
“না।”
“শিওর?”
“হ্যাঁ, কিন্তু এসব জিজ্ঞেস করছো কেন?”
“গত পরশু মায়া উল্টা পাল্টা কথা বলেছিল কিছু।”
“কেমন কথা?”
“সেসব তোর জানতে হবে না।”
“একটা সত্যি কথা বলবি?”
“বলো।”
“মায়া আমাকে ভালোবাসতো?”
“হুম।”
“এখন?”
“তুমি দেশে আসার পর থেকে ওর আচরণ পাল্টে গেছে। এখন বুঝতে পারি না কিছু”
“সেদিন রাতে ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে মায়া যা যা বলল সব মন থেকে বলেছে? তোর কি মনে হয়?
“কারো মনের কথা তো বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই তবে আমি যত টুকু বুঝতে পারছি মায়া এখনো তোমাকে ভালোবাসে। ছোট বেলা থেকে মায়া অনেক কিছু সহ্য করেছে। আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে পারা প্রতিবেশী, মায়ার ক্লাস মেট রাও খোঁচা দিয়ে ব্যঙ্গ করে কথা বলেছে মায়া কে। সেসব কিছু সহ্য করতে করতে এমন হয়ে গেছে। তুমি আসার দুদিন আগেও রাতের বেলা এই রুমের সামনে এসে দাড়িয়ে ছিল। প্রায় রাতেই এরকম করতো। কিন্তু তুমি আসার পর থেকে একে বারেই পরিবর্তন হয়ে গেছে।”
মাহিদ এর কথা গুলো শুনে চুপ হয়ে যায় আলভী।
“আচ্ছা তুই যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। মায়ার দিকে খেয়াল রাখবি কোন ছেলে যেন ওর আশে পাশেও না ঘেঁষে।”
“আচ্ছা।”
মাহিদ বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আলভী চুপ চাপ বসে রইলো। হঠাৎ অনুভব করে ওর বুকের ভেতর কাপছে।
বসা থেকে উঠে আলমারি থেকে সিগারেট আর লাইটার নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ছাদে এসে দাঁড়ায়। আজকে ছাদে হালকা হালকা বাতাস বইছে।
পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করে সিগারেট ধরায়।
দুটো টান দিতেই পেছন থেকে বড় ভাইয়ের গলার স্বর শুনে চমকে ওঠে। দ্রুত সিগারেট টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেলে। দুই হাতের সাহায্যে সিগারেটের ধোঁয়া দূরে সরানোর চেষ্টা করে।
“একা একা ছাদে কি করছিস?”
আলভী না ঘুরেই বলে,
“এমনি।”
“সিগারেট খাচ্ছিস?”
আলভী আমতা আমতা করে বলে,
“না।”
মাহির আলভীর সামনে এসে দাঁড়ায়।
“আমি তো সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছি।”
আলভী এদিক ওদিক তাকায়।
“সিগারেট খাওয়া শিখে গেছিস দেখছি।”
বড় ভাইয়ের মুখের দিকে তাকায়। আস্তে আস্তে বলে,
“কলেজে থাকতে বন্ধুদেরও পাল্লায় পড়ে শিখে গিয়েছিলাম। ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।”
“ফেলে দিলি কেন? আমি এসেছি বলে?”
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
“পকেটে আরো আছে?”
“হুম।”
“বের কর।”
“থাক খাব না।”
“তুই না খেলি আমি খাব।”
অবাক হয় আলভী। অবাক স্বরে বলে,
“তুমিও?”
“হ্যাঁ, বের কর এখন।”
আলভী পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে। একটা ভাইয়ের হাতে দিয়ে নিজে একটা নেয়।
সিগারেট ধরিয়ে দুজন বসে ছাদে সিমেন্ট দিয়ে বানাবো ব্রেঞ্চের উপর।
সিগারেটে টান দিয়ে আলভী বলে,
“তুমিও আমার মত বাড়ির সকলের নজর এড়িয়ে খাও নাকি?”
মাহির হেসে বলে,
“হুম।”
“তুমি আমার উপর অনেক রেগে আছো তাইনা ভাইয়া?”
“একটু আকটু।”
“ছাদে এসেছো কেন?”
“তোকে আসতে দেখলাম তাই তোর পেছন পেছন এসেছি।”
“কিছু বলবে?”
“উঁহু।”
দুজনের মধ্যে নীরবতা নেমে আসে।
চুপ চাপ ধোঁয়া উড়াতে থাকে দুই ভাই।
সিগারেট শেষ হয় তার পরেও দুজন চুপ থাকে।
“সরি।”
আবারো অবাক হয় আলভী।
“কেন?”
“ওই দিন তোর সাথে রেগে কথা বলার জন্য।”
“আমি কিছু মনে করিনি। ধরে যে মারোনি সেটাই অনেক।”
“চাচ্চুর কাছে ওই কথা গুলো শোনার পর অনেক রাগ উঠে গিয়েছিল। আমি সব সময় চাইতাম তুই ফিরে আয়। মায়ার সাথে না থাকলি অন্তত বাড়ির সকলের জন্য ফিরে আয়। আমি চাচ্চুর কাছে অনেক বার তোর মেইল আইডি চেয়েছিলাম চাচ্চু দেয়নি ভয়ে, তুই যদি চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিস তাই। একটা সময় পর মনে হতে শুরু করে তুই আর কোন দিন ফিরবি না। ওখানে হয়তো অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছিস। মায়া আগে ছোট ছিল তাই সেরকম কোন ভাবনা ছিল না। ভেবেছিলাম মায়া বড় হতে হতে তুই ফিরে আসবি। কিন্তু তুই ফিরলি না। আমার তোর উপর অনেক রাগ হতো, এই ফ্যামিলির উপরও। মায়ার গুমরে গুমরে কান্না, ঘর বন্দী হয়ে থাকা আমার সহ্য হতো না। মাঝে মধ্যে রাগ সামলাতে না পেরে আব্বু আম্মুর উপর চেঁচামেচি করতাম। দোষ তো আসলে তোর না। তোর জায়গায় থাকলে হয়তো আমিও এমন কিছুই করতাম।”
একটু চুপ করে থেকে বলে,
“আমি চাই মায়া তোর সাথেই থাকুক। বাড়ির সবাই ও তাই চায়। আমি চাই না আমার বোনের নামের পাশে ডিভোর্সী তকমা যোগ করা হোক। কিন্তু মায়া এখন বেঁকে বসেছে। যখন জানতে পেরেছে তুই ডিভোর্স দেওয়ার জন্য এসেছিস তখন থেকেই এমন করছে। আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি ও বুঝতে চায়নি। ওর সামনে তোর নাম মুখেই নিতে দেয় না। তুই আগের মায়া কে পছন্দ করতি না। তুই এত গুলো বছর ধরে ভেবেছিস মায়া এখনো আগের মতোই আছে।”
আলভী মাথা নিচু করে বসে থাকে। বলার মত কিছুই নেই ওর কাছে। পরিবারের উপর এত বেশি রেগে ছিল যে এত গুলো বছরে একটা বার দেশে আসার জন্য মন টানেনি। তবে সকলের কথাই মনে পড়তো রোজ।
রাগ মানুষ কে দিয়ে সব করাতে পারে, আবার মায়া ভালোবাসাও মানুষ কে দিয়ে সব করাতে পারে।
আলভী অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বলে,
“এই সব কিছুর জন্য সব চেয়ে বেশি দোষী আমি নিজে, সব ভুল আমার। আমি কাউকেই বোঝার চেষ্টা করিনি। নিজের রাগ জেদ ধরে রেখে বাড়ি ছেড়েছিলাম। জেদ চেপে রেখে দেশও ছেড়েছিলাম। সেই রাগ ধরে রেখে এত গুলো বছর পাড় করে দিলাম। রাগে এত টাই অন্ধ ছিলাম যে কিছুই ভাবতে পারতাম না। ডিপ্রেশন, ফ্রাস্ট্রেশন, মানসিক অবসাদ সব সময় আমাকে চেপে ধরে রেখেছে। আমি কি চাই আমি নিজেও জানতাম না।”
” ভুল সবার হয়,,দোষ সবাই করে। তোরও হয়েছে , এই বাড়ির সকলেরই হয়েছে শুধু মাজ খান থেকে আমার বোন কে সাফার করতে হয়েছে এত গুলো বছর।”
চারটার পর অফিস থেকে ফিরে আসে আলভী। সারা দিন আজ দারুন কে টে ছে ওর।
শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে বেডে শুয়ে পড়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর শোয়া থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। করিডোরে দাঁড়িয়ে মায়ার রুমের দিকে তাকায় একবার। তারপর ছাদের দিকে এগিয়ে যায়।
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরিয়ে নেয়। ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে ছাদের সিঁড়ি শেষ করে উপরে এসে দাঁড়ায় । কানে ভেসে আসে মায়ার মিষ্টি স্বরের গান।
“রংচটা জিন্সের প্যান্ট পরা,
জলন্ত সিগারেট ঠোটে ধরা,
লাল শার্ট গায়ে তার বুক খোলা,
সানগ্লাস কপালে আছে তোলা।
রাখো না কেন ডেকে ওই দুটি চোখ?
হেই যুবক।
রংচটা জিন্সের প্যান্ট পরা,
জলন্ত সিগারেট ঠোটে ধরা,
লাল শার্ট গায়ে তার বুক খোলা,
সানগ্লাস কপালে আছে তোলা।
রাখো না কেন ডেকে ওই দুটি চোখ?
হেই যুবক।।
দৃষ্টিতে যেন সে রাজপুতিন,
খুন হয়ে যাই আমি প্রতিদিন,
নাম-ধাম জানিনা তার কিছু,
তবুও নিলাম আমি তার পিছু।”
মায়ার গান শুনে আলভী নিজের দিকে তাকায়। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট আছে তবে ওর প্যান্ট তো রংচটা নয় আর না গায়ে লাল শার্ট আছে। সানগ্লাস ও নেই।
সিগারেট হাতে রেখেই এগিয়ে যায় মায়ার কাছে। মায়া এক মনে তাঁকিয়ে থাকার কারণে বুঝতে পারে না আলভী এসেছে। এতই গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে যে আশে পাশে কি হচ্ছে বুঝতেই পারছে না। মায়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিচের দিকে তাকায় আলভী। রাস্তায় কারেন্টের খাম্বার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে একটি ছেলে। সানগ্লাস মাথায় তোলা রয়েছে। গায়ের শার্ট লাল কালারই মনে হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে বখাটে যুবক।
মায়া ওই ছেলে কে দেখে গান গাচ্ছে?
আলভী রাগী স্বরে বলে,
“বিবাহিতা হয়ে অন্য ছেলের দিকে নজর দিতে লজ্জা করছে বউ তোমার?”
হঠাৎ আলভীর গলার স্বর শুনে চমকে লাফিয়ে ওঠে মায়া। পাশে আলভী কে দেখে একটু দূরে সরে যায়।
“বখাটে ছেলে কে দেখে গান গাঁওয়া হচ্ছে?”
“মাথা খারাপ হয়েছে নাকি আপনার? ছেলে কে দেখে গান গাইতে যাব কেন?”
“তুমি এতক্ষণ ওই ছেলের দিকে তাকিয়ে গান গাইছিলে না?”
আলভীর হাত অনুসরণ করে তাকায় মায়া। ছেলে টা কে দেখে নাক মুখ কুচকে বলে,
“ওই ছেলে কে দেখে কেন গান গাইতে যাব আমি? আমি তো ওই কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওখানে যে কোন ছেলে দাড়িয়ে আছে সেটাই তো দেখিনি আমি।”
আলভী গাছটার দিকে তাকায়। এখনো লাল ফুলে সেজে আছে গাছ টা।
মায়া আগের চেয়েও বেশি নাক মুখ কুচকে বলে,
“আপনি সিগারেট খান? কি বিশ্রী গন্ধ আসছে।”
বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। এত গুলো বছর পর দ্বিতীয় বারের মতো মায়া কে ছোয় আলভী। হাত বাড়িয়ে মায়ার হাত টেনে ধরে। দার করায় নিজের মুখোমুখি করে।
“এত পালাই পালাই কেন?”
“হাত ছাড়ুন সিগারেটের গন্ধ আসছে আপনার মুখ থেকে।”
হাতের সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দেয় আলভী।
“তুমি যদি এই ঠোঁটে চুমু খাও আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেব।”
মায়া রাগী স্বরে বলে,
“বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু হাত ছাড়ুন।”
“আর একবার আপনি আপনি বললে
কথা শেষ করতে দেয় না মায়া। তেজ দেখিয়ে আঙ্গুল তুলে বলে,
“কি করবেন আপনি? আমি একশো বার বলবো আপনি আপনি আপনি।”
“কিছু হয়ে গেলে তখন কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবে না।”
“কচু করবেন আপনি।”
আলভী সময় নেয় না। মায়া কে টেনে এনে গোলাপী নরম ওষ্ঠদয় দখল করে নেয়।
আকস্মিক ঘটনায় থ হয়ে গেছে মায়া। আলভী এমন কিছু করবে কল্পনায় ছিল না। কিছু সময় পর মায়ার ওষ্ঠদয় ছেড়ে দেয় আলভী। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“একবার আপনি বলবে আর একটা করে চুমু পাবে। বাড়ির সকলের সামনেও যদি আপনি বলো আমি কিন্তু সকলের সামনেই চুমু খাব। আমার মধ্যে আবার লজ্জা সরম কম।”
মায়া রেগে আলভীর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আশে পাশে তাকিয়ে কিছু খোঁজে কিন্তু পায় না।
সর্বশক্তি দিয়ে আলভী কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
রাগে কটমট করে বলে,
“আপনি আমার ধারে কাছেও আসলে আপনার গলা কেটে দেব আমি শ য় তা ন লোক। নির্লজ্জের মতো আবার দাঁত বের করে হাসছে।”
হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১১
মায়া রাগে গজগজ করতে করতে বকাবকি করে ছাদ থেকে নেমে যায়।
আলভী উঠে দাড়িয়ে প্যান্টের বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
“বাবারে কি শক্তি! এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিল? ভাগ্য ভালো যে ছাদ থেকে ফেলে দেয়নি নয়তো আজকেই ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যেত।”