হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩১

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩১
সানা শেখ

ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে আলভী। ফজরের নামাজ আদায় করে জগিং করে বাড়িতে ফিরে আসে ভাই আর বন্ধুদের সাথে। ফ্রেস হয়ে মায়ার রুমের সামনে আসে। আলভী মায়ার রুমে প্রবেশ করতে চাইলেও কেউ করতে দিচ্ছে না। আলভীর রাগ কে কেউ পরোয়া করছে না আজ। সকলের একটাই কথা একে বারে বিয়ের পর বউয়ের মুখ দেখবে তার আগে না।

বাধ্য হয়েই আলভী নিজের রুমে ফিরে যায় আলভী।
আলতাফ মাহমুদ আর আহনাফ মাহমুদ খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেন। ছেলেরা রাতে এমন নাচ নাচিয়েছে যে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারছেন না। পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে সাথে পা দুটো ভীষণ ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন বাঁশ দিয়ে ইচ্ছে মতন পিটিয়েছে দুই ভাই কে।
ড্রইং রুমে এসে দেখে দুই ভাইয়ের শ্বশুরেরা সোফায় বসে আছেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেলে দুলে হেঁটে এগিয়ে এসে সোফায় বসেন দুই ভাই।
আলতাফ মাহমুদ নিজের শশুর আর ভাইয়ের শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“আপনাদের কি অবস্থা? নাতির বিয়েতে কেমন ইনজয় করলেন?”
মায়ার নানা বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আর ইনজয়! ঠিক ভাবে হাঁটতেও পারছি না এখন। মনে হচ্ছে হাড়ের জোড়া জারি সব ছুটে গেছে, হাঁটতে নিলেই খুলে পড়ে যাবে।”
আলভী সোফার দিকে এগিয়ে আসার সময় নানা শ্বশুরের কথা গুলো শুনতে পায়। আগাতে আগাতে বলে,
“নাচলেনোই তো না, নাচার আগেই জোরা জারি ছুটে যাচ্ছে? আজকে আর এক ঘন্টা নাচলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। চলো বয়েজ আর এক ঘন্টা নাচার সুযোগ এখনো আছে।”
আলভীর নানা বলে,
“আস্তাগফিরুল্লাহ, আজ শুক্র বার জুমার দিন। এসব নাচানাচির কথা আর নাচানোর কথা বলো না নানা ভাই।”
“জুমার নামাজের এখনো অনেক দেরি।”
“বাপের জন্মে গত কালের আগে নেচে টেচে দেখিনি কখনো। এক পা কবরে চলে গেছে আর তুমি এখনো নাচাতে চাইছ? আর নাচতে পারবো না, নাচার সখও নেই।”
মায়ার নানা বলে,

“রাতে শেষে যে লুঙ্গি ডান্স গানে নাচলো সবাই তখন কোন বাদরে যেন আমার পাঞ্জাবি ধরে লুঙ্গি ডান্স দিতে গিয়ে পাঞ্জাবির এক পাশ ছিঁড়ে দিয়েছে। পাঞ্জাবি ধরে কেনো লুঙ্গি ডান্স দিতে হবে?”
আলভীর নানা বলে,
“আরে রাখেন আপনার এক পাশ। কোন বাঁদরেরা যেন লুঙ্গি ডান্স গানে পাঞ্জাবি ধরে নাচতে নাচতে আমার পাঞ্জাবির দুই পাশই টানাটানি করতে করতে ছিঁড়ে দিয়েছে। নতুন পাঞ্জাবির জিন্দেগি একজন রফাদফা করে দিয়েছে।”
মায়ার ছোট নানা বলে,
“আরে রাখেন আপনাদের দুজনের পাশ ছেড়াছেড়ি। কে কে যেন আমার পুরো পাঞ্জাবিই ছিঁড়ে নিয়েছে।”
আলতাফ মাহমুদ বলেন,
“আপনাদের গুলো তো তাও অন্য কেউ ছিঁড়েছে আর আমার পাঞ্জাবি তো আমার নিজের ছেলেই ছিঁড়ে দিয়েছে নাচতে নাচতে।”

বাবার কথা শুনে দাঁত বের করে হাসে আলভী।
আলতাফ মাহমুদ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“নির্লজ্জের মতন আবার হাসছে।”
আহনাফ মাহমুদ বলেন,
“বড় শ য় তা ন টা কোথায়? যত নষ্টের মূল সব বড়টা। ওই পাঞ্জাবি ছেঁড়ার জো ধরিয়েছিল।”
মাহির মেয়ে কে কোলে নিয়ে সোফার দিকে এগিয়ে আসছিল। আসার সময় বাবার কথা গুলো শুনতে পায়। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য বলে,

“তুমি বলেছিলে তোমার গরম লাগছে তাই আমি পাঞ্জাবি খুলে দিয়ে তোমাকে সাহায্য করেছিলাম। এখন আমি কি জানতাম নাকি সবাই আমাকে অনুসরণ করবে?”
“সিরিয়াসলি! পাঞ্জাবি খুলেছিলে তুমি?”
রাতে নাচতে নাচতে অস্থির হয়ে আহনাফ মাহমুদ মাহির কে বলেছিল, “আমার গরম করছে এখন, আমি নিচে যাব গেট খুলে দিতে বলো।”
মাহির কোনো কথা না বলে নাচতে নাচতে বাবার পাঞ্জাবির দুই পাশ দুই হাত দিয়ে ধরে এক টানে গলা অব্দি ছিঁড়ে দেয়।

ছেঁড়া পাঞ্জাবির দুই পাশ ধরে “হেই লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স।” আহনাফ মাহমুদ ছেলের কান্ডে হতভম্ভ, বিস্ময়ে বিমূঢ়, বাক্য হারা। মাহির কে কপি করে একে অপরের পাঞ্জাবি ছিঁড়েছে। শেষে বুড়ো দের ও ছাড়েনি। তাদের তিন জনের পাঞ্জাবিও ছিঁড়ে দিয়েছে।
রাতের ঘটনা স্মরণ হতেই মাহির একটু হাসে। তারপর আর কিছু না বলে ছোট ভাইয়ের পাশে বসে। মানতাসা দ্রুত বাবার কোল থেকে নেমে আলভীর কোলে চলে আসে।
মায়া আক্তার সকলের জন্য চা কফি নিয়ে আসে।

বর আর কনে কে গোছল করানোর পালা।
গোছল করানোর কথা শুনেই বরাবরের মতো তেঁতে ওঠে আলভী। সকলের দিকে তাকিয়ে কাঠ কাঠ স্বরে বলে,
“আবার আরেক নিয়ম বের করেছো সবাই গোছল করানোর! বিয়ের দিন বর বউ কে গোছল করিয়ে দিতে হয় এটা নিয়ম? যত্তসব আজাইরা নিয়ম। হাত পা নেই নাকি আমাদের? নাকি এখনো ছয় মাসের বাচ্চা যে গোছল করিয়ে দিতে হবে? যার যার গোছল সে সে করবে কেউ কোনো গোছল করাবে না। এই সব উল্টা পাল্টা নিয়মের কথা যেন আর না শুনি। কি এক নিয়ম চালু করিয়ে রেখেছে গোছল করাতে হবে।”
শেষের কথা গুলো বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় আলভী।

ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে থাকা সকলে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক জন বয়স্ক মানুষ একটু রাগারাগি করেন আলভীর এমন কথা শুনে। ছেলে টা বিয়ের কোনো নিয়ম কানুন পালন করতে দিচ্ছে না। সব কিছুতেই কেমন করছে। এখন কার ছেলে মেয়ে গুলো সব আগের দিনের একটা নিয়মও পালন করে না করতে দেয়ও না। মেহবুবা মেহের আর ঐশী রহমান কোনো রকমে তাদের শান্ত করিয়ে গোছল করে তৈরি হয়ে নিতে বলেন সকল কে।
সাড়ে বারোটার পর পর গোছল করে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি পাজামা পড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে আলভী। ওর গা থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি আতরের ঘ্রাণ। দেখতে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি স্নিগ্ধ, কোমল, ফ্রেস লাগছে।
সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বাড়ির সব পুরুষ কে ডাকে মসজিদে যাওয়ার জন্য আর মহিলাদের বলে ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করার জন্য।

মাহিদ সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলে,
“রাতে শ য় তা নের মতো নেচে গেয়ে পুরো বাড়ি কাপিয়ে এখন হুজুর সেজেছে।”
আলভী সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে নামতে নামতে বলে,
“রাতে শ য় তা নের সাথে শ য় তান হয়ে শয়তান কে আনন্দ দিয়েছি। এখন মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে শ য় তান কে ছ্যাঁকা দেব।”
“তুমি তো দেখা যায় আমার থেকেও বড়
মাঝ পথে থামিয়ে দেয় আলভী।

“মোটেও উল্টা পাল্টা কথা বলবি না এখন। আমি ভালো হয়ে গেছি একটু আগে, আর কখনো কোনো দিন গান বাজিয়ে নাচবো না, কাউকে নাচাবো না।”
এত টুকু বলে একটু থামে। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাত তুলে বলে,
“হে আল্লাহ জীবনে অনেক গুনাহ আর পাপ করেছি আজকের এই পবিত্র জুমার দিনের উসিলায় আর আমার বিয়ে উপলক্ষে আমাকে মাফ করে দাও আর আমাদের উপর রহমত বর্ষিত করো আমীন।”
আলভীর সাথে সাথে মাহিদও আমীন বলে।
অনেকেই আলভীর বলা কথা গুলো শুনেছে। তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ হাসছে কথা গুলো শুনে আবার কেউ কেউ আমীন বলেছে।
আলভী তাড়া দিয়ে সকল কে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় জুমার নামাজ আদায় করার জন্য।

মায়া নিজেই একা একা গোছল করতে চাইলেও মায়ার নানি, মামী সকলের কথায় মেহবুবা মেহের মায়া কে গোছল করান। গোছল করানো বলতে শুধু সাবান মেখে হাত পা ঘষে দেন। চুলে শ্যাম্পু করে দেন। গায়ে পানি ঢেলে দেন।
গোছল করাতে করাতে মেহবুবা মেহের এর চোখ দুটো পানিতে টুইটুম্বর হয়ে যায়। মায়া বাড়িতেই থাকবে তার পরেও কেনো যেনো ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছেন। মায়ের মুখ দেখে মায়ার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে । মেহবুবা মেহের মায়া কে ড্রেস চেঞ্জ করতে বলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসেন।
পাঁচ মিনিট পর মায়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে ওযু করে।
মেহবুবা মেহের নিজেও ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করতে যান। রুমে যারা যারা ছিল সবাই কে নিয়ে গেছেন। মায়ার নামাজ শেষ হলে ওকে খাইয়ে বিয়ের জন্য তৈরি করা হবে।

মায়ার ফুপু আনজারা নিজ হাতে মায়া কে খাইয়ে দেন।
তার ছেলে মেয়ে কেউ দেশে নেই। পড়াশোনা আর জবের সূত্রে দুজনেই দেশের বাইরে। বিয়েতে আসতে চাইলেও দুজনের একজনও আসতে পারেনি।
পার্লার থেকে মেকআপ আর্টিস্ট আসে মায়া কে সাজানোর জন্য।
খাওয়া শেষ করে ফ্রেস হয়ে এসে বসে মায়া।
পার্লারের মেয়ে টা রুমের ভিড় কমাতে বললে দুজন বাদে বাকি সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলভী আগেই মেকআপ প্যাকেজ চুজ করে রেখেছে তাই মায়া কে আলাদা করে আর চুজ করতে হয় না।
শাড়ি পড়িয়ে মেকআপ শেষ করে হিজাব বেঁধে দেয়। হিজাব বাঁধার পর মায়ার চেহারায় অন্যরকম এক সৌন্দর্য, দীপ্তি, নূর ছড়িয়ে পড়ে।

হাতের গলার জুয়েলারী গুলো পড়িয়ে দেয়। মাথায় দোপাট্টা দিতেই সম্পুর্ণ বউ বউ লাগে মায়া কে।
সব শেষে মেয়েটা মায়া কে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে থাকে মায়া। এটা আসলেই মায়া নিজে!
মেয়ে টা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“সব কিছু ঠিক আছে ম্যাম?”
মায়া মাথা নাড়ায়। মেয়েটা নিজের সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলভী আগেই পেমেন্ট করে দিয়েছিল।
মেয়েটা বেরিয়ে যেতেই সবাই হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করে।
শীতল মায়ার পাশে দাঁড়িয়ে নিচু কন্ঠে বলে,

“ভাইয়া তো আজকে তোর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারবে না মায়া। তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে না আবার কানা হয়ে যায়।”
মায়া শীতলের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কানা কেনো হবে?”
“তোর রূপের আগুনে চোখ ঝলসেও যেতে পারে। এখন সোজা হয়ে দাড়া কয়েক টা পিক তুলে ভাইয়ার কাছে পাঠাই।”
নাদিরা সহ আরো কয়েক জন মেয়ে শীতল কে বাঁধা দিয়ে বলে,
“এখন মোটেও ভাইয়ার কাছে বউয়ের পিক পাঠানো যাবে না। বউ কে একে বারে স্টেজেই দেখবে। এখনই যদি দেখে ফেলে তাহলে তখন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকবে নাকি?”

আলভীও বর সেজে রেডি। ওকে কেউ সাহায্য করেনি আলভী নিজেই একা একা রেডি হয়েছে।
রেডি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে বেডে বসে থাকা মাহিদ এর দিকে তাকায়। বাকি সব ছেলেরা খাওয়ার ওখানে রয়েছে। আলভী মাহিদ কে বলে,
“কেমন লাগছে আমাকে?”
“হ্যান্ডসাম।”
“তোর বোন দুই চার দশ মিনিট হা করে তাকিয়ে থাকবে না?”
“আমি তো আর বোন নই যে বলে দেব।”
“কখন যাব?”
“কোথায়?”
“বিয়ে করতে কখন যাব শা লা?”

“এমন ভাবে বলছো যেন এই জন্মে আর বিয়ে করোনি।”
ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হেয়ার ব্রাশ টা তুলে মাহিদ এর গায়ে ছুঁড়ে মা রে আলভী।
“শা লা আগামী দশ বছরেও তুই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারবি না।”
“শকুনের দোয়ায় গরু ম রে না।”
মাহিদ এর দিকে তেড়ে আসে আলভী। মাহিদ বেড থেকে নেমে, দে দৌড়। ওকে আর পায় কে!
আলভী নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে বাসর ঘর যারা সাজাবে তাদের কল করে। সকালে আসার কথা ছিল অথচ এখনো আসছে না। ত্রিশ মিনিট ত্রিশ মিনিট করতে করতে বিকেল হয়ে গেল।
কল রিসিভ হতেই আলভী বলে,

“আপনারা কোথায়? এই বছরে কি বাসর ঘরে বাসর করার সৌভাগ্য হবে আমার?”
“সরি স্যার আমরা এসেই পড়েছি আর পাঁচ মিনিট। সাদা ফুল গুলো আসতে একটু লেট হয়েছে তাই জন্য। রাগ করবেন না স্যার আমরা চলেই এসেছি।”
“হুম তারাতারি আসুন রাখছি।”
কল কেটে আয়নার দিকে আবার তাকাতেই রুমে প্রবেশ করেন আলতাফ মাহমুদ, আহনাফ মাহমুদ সহ আরো অনেক গুরু জনেরা।
আলতাফ মাহমুদ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“হয়েছে তোমার? কাজী সাহেব তাড়াহুড়ো করছেন।”
“হ্যাঁ হয়েছে অনেক আগেই।”
“তাহলে চলো এখন।”
আলভী বাবার সামনে এসে দাঁড়ায়। ঝুঁকে বাবার হাত দুটো ধরে নিজের মাথার উপর রেখে বলে,
“দোয়া করো আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের উপর নেয়ামত, রহমত, বরকত দান করেন। আর কোনো দিন যেন আমার জন্য কাউকে কষ্ট পেতে না হয়। তোমাদের মেয়ে কে যেন সারা জীবন হাসি খুশি ভালো রাখতে পারি। আমাদের আগামী পথচলা যেন সহজ আরো সুন্দর হয়। আগামী দিন গুলোতে তোমাদের কাউকে যেন আমার জন্য দুঃখ পেতে না হয়। সব কিছুর জন্য দোয়া করো।”

আলতাফ মাহমুদ ছেলের মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে ছেলে কে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর বলেন,
“আমি সব সময় দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন তোমাদের ভালো রাখেন, তোমাদের মনের নেক আশা পূরণ করেন। আল্লাহ তায়ালা সব সময় তোমাদের সবাই কে ভালো রাখেন, হাসি, খুশি, সুখে রাখেন এই দোয়াই করি।”
সকলের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে ডোরের দিকে আগায় আলভী। ডোরের সামনে আসতেই বিয়ের গেট ধরে রুমের ডোরের সামনে দাঁড়ায় মেয়েরা।
আলভী কপাল ভ্রু কুঁচকে বলে,

“এসব কি? রুমের সামনে বাঁশ ধরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো সবাই?”
“গেট ধরেছি।”
“এটা কে গেট ধরা বলে? রুমের সামনে বাঁশ ধরে গেট ধরেছি বলছো!”
“পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে এখান থেকে বের হন নয়তো বিয়ে করতে হবে না।”
“আস্তাগফিরুল্লাহ, বাসি বিয়েতে পঞ্চাশ হাজার টাকা? পা গ লে ধরেছে নাকি আমাকে? পাঁচ টাকা দিচ্ছি গিয়ে চকলেট কিনে খাও।”
“এহ্ বিদেশ থেকে ফকির এসেছে। বিয়েতে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে পারবে অথচ গেটে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে পারবে না।”

“বিয়ের খরচ আমার আব্বাজান করেছে আমি না।”
“তো আপনি এত বছর বিদেশ থেকে কি করেছেন?”
“আবার বিয়ে করতে এসেছি।”
হাসতে না চাইলেও আলভীর কথা শুনে হেসে ওঠে সবাই।
আলভী মাহিদ এর দিকে হাত বাড়ায়। মাহিদ বড়সড় একটা খাম আলভীর হাতে দেয়। আলভী মেয়ে গুলোর দিকে বাড়িয়ে দেয় খাম টা। বেশ মোটা সোটা একটা খাম। মায়ার ছোট মামাতো বোন বলে,
“কি আছে এটাতে?”
“টাকা।”
“কত?”

“গুণে দেখো। দেখেছো এখানে কত গুলো টাকা? গুনতে গুনতে রাত পেরিয়ে যাবে তোমাদের।”
“এটার ভেতরে টাকা নেই, নিশ্চই কাগজ কেটে ভরে রেখেছেন নাহলে এতো মোটা কেনো খাম?”
“আল্লাহর কসম এটার ভেতরে টাকাই আছে। যারা গেট ধরবে তাদের জন্য আমি নিজে ব্যাংকে গিয়ে নতুন চকচকে ফ্রেস নোট নিয়ে এসেছিলাম। এই টাকা গুলোর মধ্যে একটা ভাঁজ ও পড়েনি।”
মুরুব্বিদের কথায় খাম টা নিয়ে গেট ছেড়ে দেয় মেয়েরা। সবাই এগিয়ে যায় নিচের দিকে।
মেয়ে গুলো গেস্ট রুমে আসে খুশি মনে। নিশ্চই এক দেড় লাখ টাকা আছে।।
গেস্ট রুমে এসে খাম ছিঁড়ে তো মেয়ে গুলোর মুখের রঙ পাল্টে যায়। বিশ টাকার নোট শুধু। মনে হচ্ছে আট দশ হাজার টাকা হবে।
মায়ার ছোট মামার মেয়ে বলে,

“এভাবে ঠকিয়ে চলে গেল?”
শীতল এসে ওদের কথা শুনে বলে,
“মিষ্টি, শরবত, জুস কিছুই তো খাওয়াসনি তবুও যে এত গুলো টাকা দিয়েছে সেটাই তো বেশি। আমি হলে তো বিশ টাকা দিয়ে আর এক টা টাকাও দিতাম না।”
“মেয়ে পক্ষ হয়ে তুমি এমন কথা কিভাবে বলছো? ওহ সরি তুমি তো আবার পক্ষ বদল করে ছেলে পক্ষে নাম লিখিয়েছ।”
“বেশি কথা না বলে আয় আম্মু ডাকছে তোকে।”

মায়ার হাত ধরে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছেন আহনাফ মাহমুদ। স্টেজের উপর থেকে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আলভী। মায়া নিজেও চোখ তুলে স্টেজের উপর দাঁড়িয়ে থাকা আলভীর দিকে তাকায়। সাথে সাথেই আবার চোখ নামিয়ে নেয় লজ্জায়। গত কাল থেকে ওর ভীষণ লজ্জা করছে।
সিঁড়ির কাছে আসতেই আলভী হাত বাড়িয়ে মায়ার হাত ধরে। আলভীর হাত ধরে উপরে উঠে চেয়ারে বসে মায়া। মায়ার পাশে বসে আলভী।

বড়রা কাজী সাহেব কে নিয়ে স্টেজে উঠে আসেন।
মায়ার সামনে টেবিলের উপর রেজিস্ট্রি পেপার রেখে মায়া কে সই করতে বলা হয়। মেয়ের হাতে কলম তুলে দেন আহনাফ মাহমুদ। কলম টা অন্য সব সাধারণ কলমের মতো না।
সই করার সময় থরথর করে কাঁপতে শুরু করে মায়ার হাত। স্টেজের উপর থাকা সবাই মায়া কে শান্ত হয়ে সই করতে বলে। নার্ভাস নেসের কারণে এভাবে হাত কাপছে। সোজা একটা দাগও দিতে পারছে না কম্পনের কারণে। আলভী মায়ার পিঠে হাত রাখে। মৃদু ভাবে আঙ্গুল গুলো নাড়ায় পিঠে। নিচু স্বরে বলে,
“এত কাপছ কেন? নরমাল হও, লম্বা শ্বাস শ্বাস নিয়ে শান্ত হয়ে সই করো। এখানে তো আমরাই সবাই। নার্ভাস হইও না রিল্যাক্স।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩০

এখন কেনো এভাবে হাত কাপছে জানা নেই মায়ার। আলভীর কথায় লম্বা শ্বাস শ্বাস টেনে নিয়ে একটু থেমে সই করে। তবুও এখনো হাত কাপছে।
আলভী কে সই করতে বলার সাথে সাথেই সই করে দেয়।
তারপর মৌখিক ভাবে আবারো বিয়ে পড়ানো হয় দুজনের। কবুল বলতে গিয়েও মায়ার কন্ঠস্বর কাপছিল। মায়ার কাপতে থাকা একটা হাত আলভীর হাতের মুঠোয়। মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। আলভী চোখের ইশারায় রিল্যাক্স থাকতে বলে আবারো।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩২