হ্যালো 2441139 পর্ব ১১

হ্যালো 2441139 পর্ব ১১
রাজিয়া রহমান

খেতে বসে আনোয়ার চৌধুরী মেয়েকে নিজের বাম পাশের চেয়ারে বসালেন।পিয়াসা খেয়াল করে দেখলো বাবা উঠে তার চেয়ারটা টেনে দিয়ে তাকে বসিয়ে তারপর নিজে বসেছেন।পিয়াসার বুকের ভেতর কেমন তোলপাড় করতে লাগলো।
এই মানুষটার এতো ঋণ কি এই জন্মে পয়াসা শোধ করতে পারবে?
সব ঋণ শোধ হয় কিন্তু ভালোবাসার ঋণ শোধ হয় কি দিয়ে!
এই মানুষটাই কেনো তার জন্মদাতা হলো না!
তার দেহে কেনো এই মানুষটার রক্ত বইছে না!
এই আক্ষেপ কি পিয়াসার এই জন্মে আর ঘুচবে?
খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আনোয়ার চৌধুরী মেয়েকে ইলিশ মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছেন খাওয়ার জন্য।
নিজের প্লেটের মাছ থেকে ডিমটা বের করে পিয়াসার প্লেটে তুলে দিলেন।
সিরাজুল ইসলাম পুরোটা লক্ষ্য করলেন।একমাত্র মেয়ে বলে কথা!
আদর ভালোবাসা সবকিছু তো বেশি হবেই।

মিনি মুখ কালো করে রইলো।পিয়াসা তারই বয়সী। তার বাবা তাকে কেমন প্রিন্সেস ট্রিট করছে অথচ মিনির বাবা কখনো মিনিদের কোনো বোনকে এভাবে আদর করেন না।
ফিসফিস করে মেজো বোনকে বললো, “আপা দেখ,কেমন ন্যাকামি করছে এই শ্বেতি রোগীটা।”
মিরা ফিসফিস করে বললো, “বাদ দে তো।এসব ন্যাকামি দেখলেও গা জ্বালা করে। নিজেরে নিজে নায়িকা ভাবে এই মেয়ে।”
ঝুনি খালা প্লেট নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। রজনী চোখ রাঙিয়ে বললো, “তুই নিচে বসলি কেনো?”
“আমার নিচে বইসা খাইতেই আরাম লাগে ভাবী।তাছাড়া আমরা মানুষ বেশি, চেয়ার টেবিলে সবাইরে ধরবো না।”
রজনী ও নিজের প্লেট নিয়ে নিচে নেমে বসে।এই মানুষটা এই বাড়িতে রজনীর বিয়ের সময় এসেছে। এতো বছরে সে এই বাড়ির সদস্য হয়ে গেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বন্ধ্যা বলে স্বামীর সংসার করতে পারে নি। এরপর থেকে আর বিয়ের নাম শুনতে চায় না ঝুনি।
এখানে সে খুব ভালো আছে।রান্ধাবাড়া সব বড় ভাবী করে। সে আর ছোট ভাবী সব কে টে ধুয়ে এগিয়ে দেয়।আর মহুয়া বেগমের খাওয়া ঔষধের খেয়াল রাখে ঝুনি।
এর বিনিময়ে তাকে মাসে ৫ হাজার টাকা দেয়,প্রতি মাসে একটা করে কাপড় দেয় এরা।সবার মতো ঝুনিকেও ডাকা হয় কোনো বিষয়ে আলোচনা করার সময়।
বড় জা’কে নিচে বসতে দেখে নার্গিস ও গিয়ে বসে।
শিরিন মুখ বাঁকিয়ে নিজের বড় মেয়ে নিরাকে বললো, “ঢং দেখছিস!একের জন্য অন্যের ভালোবাসা উথলে পড়ছে যেনো।”

নির্জন খাবারের ছবি তুলে আষাঢ়কে পাঠালো।আষাঢ় আসে নি।এই একটা অদ্ভুত মানুষ সবসময় সব ফ্যামিলি টুগেদার থেকে দূরে থাকে।
কে যে ওর মাথায় রাজনীতির ভূত ঢুকালো।ইদানীং সবসময় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
১৫ দিনের বড় ছোট দুই ভাই।দুজন সমবয়সী হওয়ায় ভাই কম বন্ধু বেশি দুজনে।এ বছর দুজনেই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে।
পিয়াসা আস্তে আস্তে খাবার খাচ্ছে। নির্জন সেদিকে তাকিয়ে বললো, “এই পিয়াসা,আস্তে প্লিজ।ভাত ব্যথা পাচ্ছে তো।”
পিয়াসা অবাক হয়। এই ছেলেটা কি বলছে।নির্জন হেসে উঠে বললো, “তুমি যেভাবে আলতো হাতে একটা দুটো করে ভাত মুখে দিচ্ছো দেখে মনে হচ্ছে যেনো ভাত ব্যথা পাবে আরেকটু চাপ দিলেই।এরকম পাখির মতো খাচ্ছো কেনো!”

নার্গিস এদিক ওদিক তাকায়।তার ছেলেটা ভীষণ মিশুক।সবার সাথে মিশে যায় সহজে।
আনোয়ার চৌধুরী হেসে উঠে বললেন,”আমার মেয়েটা এমনই বাবা।ওর খাওয়া পাখির চাইতে ও কম।”
এজন্যই তো দেখে মনে হচ্ছে বাতাস এলেই উড়ে যাবে।
বর্ষা বললো, “নিজে যে দিন দিন চালের বস্তার সাইজ হচ্ছিস সেই খেয়াল আছে?”
নির্জন বড় মা’র দিকে তাকিয়ে বললো, “বড় মা,বর্ষা কিন্তু আমাকে বডি শেমিং করছে।”
পিংকি ভাইকে বললো,”ভাইয়া,একটু আগে তো তুই ও পিয়াসাকে বডি শেমিং করলি,তখন!”
শিরিন বিরক্ত হয় ভাতিজা, ভাতিজিদের এসব হাহা হিহি শুনে। মুখ কালো করে বললো, “এতো বকবক করছিস কেনো তোরা?বিরক্ত লাগছে।”
ঝুনি খেতে খেতে বললো, “চাচী কি বড় আপা জন্মের পর মুখে মধুর বদল নিম পাতার রস দিছেন না-কি!
আল্লাহর দুনিয়ায় কতো কিসিমের মানুষ আছে।মাইনসের কতা ও যে নিম পাতার মতন তিতা হইতে পারে বড় আপার কথা না শুনলে কেউ বিশ্বাস করবো না।”
শিরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখে বড় ভাইজান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।শিরিন চুপ হয়ে যায়। এখন আর কিছু বলবে না।সময় মতো ঠিকই বলবে।
মেহমানরা বিদায় নিলো সন্ধ্যা বেলায়।যাওয়ার সময় সিরাজুল ইসলাম পরের শুক্রবার পিয়াসাদের দাওয়াত করে গেলেন।

মালিহা তিন চার দিন ধরে কাদেরের সাথে কথা আগের মতো বলছে না।কাদেরের মাথায় আগুন জ্বলছে যেনো।
রাত দশটার সময় কাদের মালিহাকে কল দিলো বের হয়ে জঙ্গলের দিকে যাওয়ার জন্য।
মালিহা কল রিসিভ করে বললো, “আমার খুব মাথা ব্যথা দুলাভাই। এখন আইতে পারমু না।ঘুম যামু।”
কাদেরের বিশ্বাস হলো না।এই কয়দিন ধরে প্রতিদিনই মালিহা একটা না একটা অযুহাত দেখায়।
তবুও কাদের ঘরে চলে যায়। রাত দুটোর সময় কি মনে করে কাদের মালিহাকে কল করে।
কল দিয়ে নাম্বার বিজি পায় কাদের।
পরপর কয়েক বার কল দেয় কাদের।নাম্বার বিজি।
কাদেরের কিনে দেওয়া মোবাইল দিয়ে অন্য বেডার লগে রসের আলাপ করতেছে!
কাদের চলে যাবে আর দুই দিন পর। কাদের সিদ্ধান্ত নেয় যা করার কালকেই করবে।কাদেরকে বোকা ভাবছে মালিহা!
এতো সহজে ছাড়বে না।

শুয়ে সাবিহাকে বললো, “মালিহার বিয়ার কথা কতো দূর আগাইলো এখন?”
সাবিহা একবার ভাবে স্বামীকে বলবে কি-না। মা তাকে বারবার নিষেধ করেছে কারো সাথে এই ব্যাপারে যাতে আলাপ না করে, এমনকি কাদেরের সাথে ও না।যত লোক জানাজানি হবে,মানুষ কান ভাঙানি দিবে পরে।
সাবিহা ভাবলো কাদের তো তার স্বামী,সে তো আর এরকম কিছু করবে না।
তাই সরল মনে বললো, “মা তো ওদের থেকে সময় নিছে।হাতে টাকা পয়সা নাই।ভাইজানের লগে ও আলোচনা করবে।

হ্যালো 2441139 পর্ব ১০

মনে হয় এক মাসের মধ্যে হই যাইবো।”
কাদের আর কিছু বললো না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে কাদের খোঁজ নিয়ে ছেলেদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।ছেলের বাবাকে তার আর মালিহার কিছু ছবি দেখায়।
দুপুরের দিকে ছেলের পরিবার জানায় তারা এই বিয়েতে এখন রাজি না।এই বিয়ে হবে না।

হ্যালো 2441139 পর্ব ১২