হ্যালো 2441139 পর্ব ৪১

হ্যালো 2441139 পর্ব ৪১
রাজিয়া রহমান

আষাঢ় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে সে রাতেই রাশেদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।
রাত সাড়ে দশটার দিকে রাশেদ বাড়ি ফিরছিলো। আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরছে বাড়িতে।
আগামী কাল সকালেই তাদের মালের নতুন একটা চালান আসবে ইন্ডিয়া থেকে।
বেনাপোল বর্ডারে রাশেদদের নিজস্ব লোক আছে।
ধানমণ্ডি এরিয়ার সবচেয়ে বড় সাপ্লায়ার রাশেদ নিজেই।তবে এই চালানটা একা রাশেদের না।রাশেদের সাথে আছে তার আরেক পার্টনার মাসুদ।

মাসুদ ঢাকা ৩ আসনের এমপির শালা।
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রাশেদ বাড়ি ফিরছিলো। বাসার উল্টো দিকে একটা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে।
কার কি হয়েছে না-কি!
এক দলা থুথু ফেলে রাশেদ।মরুক যার ইচ্ছে, তাতে তার কি!দুনিয়ায় আসছে সবাই মরার জন্য। দুইদিন আগে মরলে তো ক্ষতি নাই!
একটা গান আছে না!
“আমি হয়তো দুদিন পরে মরবো,আগে মরলে কি ক্ষতি…”
গেইটে দেখে দারোয়ান নেই। মনে মনে ভাবে,”এই হারামজাদা বসে আছে কে জানে! শুধু কাজ কি দেওয়ার ধান্দা।”
সিড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠতেই দেখতে পায় সিড়ির লাইট বন্ধ করা।
মনে মনে বিরক্ত হয় রাশেদ।শালার দারোয়ানরে গিয়ে ইচ্ছে মতো থাপ্রাতে ইচ্ছে করে।
রাশেদের ভাবনার মধ্যে ধপ করে একটা ম্যাচের কাঠি জ্বলে উঠে। এক মুহূর্তের আলোয় রাশেদ যাকে আবছা দেখতে পায়,চমকে উঠে সাথে সাথে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাশেদের বুক ঢিপঢিপ করে। কাকে দেখছে সে!
পকেট হাতড়ে মোবাইল বের করে আনে।
মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট অন করতেই রাশেদ আবারও চমকে উঠে। অন্ধকারে সিড়িতে যে বসে আছে সে-ই মানুষটাকে রাশেদ এখানে প্রত্যাশা করে নি।
আষাঢ় উঠে দাঁড়ায়। রাশেদের গলা শুকিয়ে আসে। প্রচন্ড পিপাসায় গলা শুকিয়ে যেন মরুভূমি!
কি আশ্চর্য কেমন লাগছে কেন?
আষাঢ়ের ডান হাতে এখনো প্লাস্টার করা.। এক মুহূর্তের জন্য রাশেদের মনে হয় আষাঢ় নিজেই বাঘের গুহায় পা দিয়েছে। যেখানে তার ডান হাত ভাঙ্গা সেখানে সে রাশেদের সাথে কিভাবে লড়াই করবে?
রাশেদ ভুলে গেলো,বলিষ্ঠ দেহী আষাঢ়ের সাথে দলবল ছাড়া লাগতে যাওয়া রাশেদের জন্য নিরাপদ নয়।সেখানেই রাশেদ ভুলটা করলো।তেড়ে গেলো আষাঢ়ের দিকে।
আষাঢ় বাম হাতে কষে একটা থাপ্পড় মারল। রাশেদের হাতের ফোন উপুড় হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।
ঝটকা খেয়ে রাশেদ আষাঢ়ের দিকে তাকায়।

এটা কি হাত না-কি হাতুড়ি রাশেদ দ্বিধায় পড়ে যায়।
ভাবনার মধ্যেই আষাঢ় লাথি মারে রাশেদের পেট বরাবর।
ব্যথায় কোঁকিয়ে উঠে রাশেদ।ধপ করে ফ্লোরে পড়ে যায়।
আষাঢ় নিজের ভাঙা হাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো, “সাহস থাকলে লাগ আমার সাথে।কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আক্রমণ না করে সামনাসামনি লাগতে আয়।তোর কোন বাপ আছে,কল কর।”
রাশেদ পেট চেপে ধরে শুয়ে আছে।আষাঢ় আরেকটা লাথি মেরে রাশেদকে সিড়ি দিয়ে কয়েক সিড়ি গড়িয়ে নিচে ফেলে।
পেটের উপর পা দিয়ে চাপ দিয়ে বললো, “তুই কি ভাবছিস,আষাঢ় থাকতে ড্রাগ বিজনেস হবে এই এরিয়ায়?
ভাবছস আমি হাসপাতালে, আহত এই সুযোগে নতুন মাল আনবি?”
রাশেদ কথা বলার অবস্থায় নেই।পেটে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে তার।আষাঢ় পায়ে আরো প্রেশার দেয়। রাশেদের মনে হয় বন্ধ হয়ে আসছে।

আষাঢ় শান্ত জিজ্ঞেস করে, “মাল কোথায় আসবে?”
রাশেদ জবাব দেয় না।
পেট থেকে পা গলায় নিয়ে আসে আষাঢ়। আবারও বলে, “আর একবার জিজ্ঞেস করবো,বল।”
রাশেদ অস্ফুট স্বরে উত্তর দেয়, “সকাল ৯টায় ঝিগাতলায় আসবে।”
“ট্রাকের নাম্বার কতো?”
রাশেদ জবাব দেয় না।
গলার উপর চাপ আরেকটু বাড়ে।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
রাশেদ বড় করে হা করে চোখ বড় বড় করে তাকায়।দুই চোখ ভিজে উঠেছে রাশেদের।
আষাঢ় চাপ কমায়।আবারও জিজ্ঞেস করে।
রাশেদ বুঝতে পারে আজকে তার রক্ষা নেই।
জীবন বাঁচানো ফরজ।
ট্রাকের লাইসেন্স নাম্বার বলে দেয় রাশেদ।
আষাঢ় কষে একটা লাথি মারে আবারও।
গড়িয়ে গড়িয়ে রাশেদ দুই তলায় পড়ে।

আশার ড্রাইভারকে কল করে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আষাঢ়ের বন্ধুরা আগে থেকেই তৈরি ছিলো।কল পাওয়া মাত্রই চারজন ছুটে এসে রাশেদকে নিয়ে যায়।
আষাঢ় বের হয়ে থানায় কল করে।
ওসি জাকির হোসেন এই ফোন কলটার অপেক্ষায় ছিলেন।রিং হতেই রিসিভ করে বললেন, “মিশন সাকসেসফুল?”
“জি স্যার। লাইসেন্স নাম্বার টেক্সট করে দিচ্ছি।বেনাপোল বর্ডার থেকেই ধরতে হবে।”
“আর ওর কি অবস্থা? বেঁচে আছে?”
“স্যারের কি আমাকে এতটা নির্দয় বলে মনে হয়?খুনখারাবি কি আমার পক্ষে করা সম্ভব?”
জাকির হোসেন হেসে বললেন, “তা অবশ্য ভুল বলো নি।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তুমি যে হাল করো ওদের, এরপর ওরা নিজেরাই মৃত্যু কামনা করে।”
“এবার ও তেমন কিছু করি নি স্যার।”
“ওয়েল ডান।মার্ডার না হলেই হলো।বাকিটা আমি সামলে নিবো।”
রাশেদের ড্রাগ ভর্তি ট্রাক সেদিন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
রাশেদের শারীরিক কন্ডিশন দ্রুত অবনতি হয়।সেরিব্রাল হেমারেজের কবলে পড়ে পক্ষাঘাতের দিকে চলে যায়।
ডান হাত,ডান পাশ অবশ হয়ে যায়।
পিয়াসা রুমে বসে পড়ছিলো।

ঢাবি গ,ঘ ইউনিটের জন্য আবেদন করেছে।পড়ার মধ্যখানেই শুনতে পেলো বাবার গলার স্বর।
পিয়াসা চমকে উঠে। বাবা এসেছে!
এক ছুটে পিয়াসা বের হলো। বাহিরে গিয়ে দেখে বাবা মা দুজনেই এসেছে।
পিয়াসার বুকের ভেতর আনন্দের ঝড়।মরুর বুকে পানির সন্ধান মানুষকে যেমন আনন্দ দেয়,বৃষ্টি ফোঁটা চাতককে যে স্বস্তি দেয়, মা বাবাকে দেখে পিয়াসার তেমন অনুভূতি হলো।
মরুভূমির মতো শুকনো অন্তর ভালোবাসায় সিক্ত হলো।
বুকের ভেতর আনন্দের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে পিয়াসার মনে হলো সে যেনো উড়ে যাচ্ছে।
আনোয়ার চৌধুরী মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
কে জানে কেনো,হুট করেই তার দুই চোখ ভিজে উঠলো।
বাবার চোখের পানি দেখে মেয়ে ও কেঁদে উঠে।

শারমিন বললো, “তুমি কি একা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রাখবে না-কি আমাকে ও একটু সুযোগ দিবে?”
আনোয়ার চৌধুরী সলজ্জ হেসে বললো, “সরি ডিয়ার,কিন্তু মেয়ে নিয়ে কম্প্রোমাইজ নেই।আমার অন্তর না জুড়ানো পর্যন্ত আমি আমার বাবাকে বুকে ধরে রাখবো।”
বাবা মা যে মহুয়া বেগমকে দেখতে এসেছেন তা পিয়াসা বুঝতে পেরেছে।
শারমিন বললো, “চল আমাদের সাথে, হাসপাতালে যাবো চাচী আম্মাকে দেখতে।”
“তোমরা হাসপাতালে যাও নি?”
“নো,আগে আমি আমার বাবাকে দেখতে এসেছি। তারপর হাসপাতালে। আগে আমার সন্তান।”
পিয়াসা বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বললো, “বাবা,মানুষ সবসময় মেয়েকে মা বলে ডাকে,তুমি সবসময় আমাকে বাবা বলে ডাকো কেনো?”
“মানুষ মেয়েকে মা বলে, ছেলেকে বাবা বলে ডাকে।আমার কাছে আমার ছেলে ও তুই, মেয়ে ও তুই মা।তাই তোকে আমি বাবা বলে ডাকি।”

পিয়াসা বাবার কপালে চুমু খায়।
শারমিন বললো, “তৈরি হয়ে নে।”
পিয়াসার কেমন অস্বস্তি হলো।ওখানে আষাঢ় আছে।পিয়াসা ওখানে যেতে চাচ্ছে না। তাছাড়া মহুয়া বেগমের সাথে ওর সম্পর্ক এতটা ও মধুর না যে ও হাসপাতালে যাবে।
বাবাকে বললো, “আমার পড়া আছে তো বাবা।তোমরা যাও,আমি গিয়ে কি করবো?”
আনোয়ার চৌধুরী মেয়ের চিবুকে হাত দিয়ে বললো, “এভাবে বলে না মা।উনি মুরুব্বি মানুষ।”
শারমিন নিজেও চায় না মেয়ে যাক।তাই বললো, “থাক না,যেতে চাইছে না যখন ও।পড়ুক।”

হ্যালো 2441139 পর্ব ৪০

আনোয়ার চৌধুরী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমার থেকে এমন অবুঝের মতো কথা আমি আশা করি না শারমিন।তাছাড়া, সামাজিকতা বলে ও একটা কথা আছে। রোগী দেখতে যাওয়া সুন্নত জানো না?”
শারমিন মনে মনে ভাবলো, “এই সুন্নত পালনের চক্করে যে আমার মেয়ের মনে কষ্ট যাবে তা তুমি জানো না।আমি ও তোমাকে তা জানাতে পারবো না।”

হ্যালো 2441139 পর্ব ৪২