হ্যালো 2441139 পর্ব ৪৭

হ্যালো 2441139 পর্ব ৪৭
রাজিয়া রহমান

ঢাকা শহরে নিশুতি রাত বলে কিছু হয় না।সারাক্ষণই বাস,ট্রাকের শব্দ শোনা যায়। আষাঢ়ের ঘুম ভেঙে গেলো হুট করেই। এই শহরে এক ধ্যানে প্রেয়সীকে দেখাটা ও যেনো দুঃস্বপ্ন।
বুকের ভেতর কেমন খাঁখাঁ করছে।
তার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটা তার স্ত্রী, আজীবন যে তার হয়ে থাকবে।
অথচ তাদের সূচনাই হয়েছে দু’জনের মনের যোজন যোজন দূরত্ব নিয়ে।
বারান্দার ফুলগাছ গাছগুলো থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ ভেসে আসছে।
আষাঢ় উঠে গিয়ে জানালা খোলে।

আকাশে আজ ভরা পূর্ণিমা।সবকিছু কেমন যেনো রূপকথার মতো লাগছে।পাশে শুয়ে থাকা রমনীর দিকে তাকিয়ে আষাঢ়ের মনে হয় চাঁদের আলো বুঝি ম্লান হয়ে যায় তার সৌন্দর্যের কাছে!
আষাঢ় পিয়াসার উপর ঝুঁকে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
ভাগ্যিস বিয়েটা করেছিলো,তা না হলে এমন মন ভরে দেখতো কিভাবে!
সেই তাও লুকিয়ে চুরিয়ে আড়াল থেকে যে একটু দেখতে পেতো তাতে মন শান্ত হতে পারতো কই!
এই যে ঘুম ভাঙতেই দেখতে পেলো তার জীবনের সবটুকু সুখ তার পাশে শুয়ে আছে এটুকু শান্তি তো এতোদিন পায় নি সে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আষাঢ়ের প্রেমিক হৃদয় ঝটকা খায় পিয়াসার পায়ের দিকে তাকিয়ে।
পিয়াসা শুয়েছে একটা বড় হিজাব পরে।কোনো ভাবেই সে রিস্ক নিতে চায় না।কিন্তু ঘুমের মধ্যে সে যেভাবে ফুটবল খেলে তার থেকে সুরক্ষিত থাকতে নিজের দুই পা একটা ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখেছিলো পিয়াসা।যাতে কোনো নড়াচড়া না করতে পারে ঘুমের মধ্যে।
আষাঢ় তা দেখে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
হুট করেই পিয়াসার ঘুম ভেঙে যায়।মনে হচ্ছে যেনো কেউ তাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে।এমন অনুভূতি হতেই পিয়াসা চোখ মেলে তাকায়।
তাকিয়ে দেখে আষাঢ় পাশেই শুয়ে ঘুমাচ্ছে।এই লোক কি সত্যি ঘুমাচ্ছে?
পিয়াসা ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করে আষাঢ়ের দিকে ধরে। তারপর উপুড় হয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে আষাঢ়কে যে সে ঘুমে কি-না।

আষাঢ়ের ভীষণ হাসি পাচ্ছে।পিয়াসার চোখ পিটপিট করছে দেখেই সে বুঝতে পারে পিয়াসা হয়তো স্বপ্ন দেখছে নয়তো ঘুম হালকা হয়ে গেছে জেগে উঠবে।তাই তক্ষুণি ঘুমের ভান করে শুয়ে পড়ে।
কিছু না জানার ভান করে আষাঢ় ও চোখ মেলে তাকায়। তারপর মৃদু চিৎকার করে উঠে বসে।
পিয়াসা কেমন থতমত খায়, ওর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়।
চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সবকিছু।
আষাঢ় ভয়ার্ত গলায় বললো, “কি করছিলে তুমি এতোক্ষণ? আমাকে দেখছিলে?”
পিয়াসা বলতে গিয়ে ও থেমে যায়। সে কি বলবে?
আষাঢ় আবারও বললো, “এই তো নিজেই আমাকে ক্যারেক্টারলেস বলো,আবার নিজেই চুপিচুপি আমাকে এমন করে দেখো?

এক রাতেই প্রেমে পড়ে গেলে না-কি?”
পিয়াসা বিরক্ত হয় এসব বাজে কথা শুনে।
আষাঢ় হেসে ফেলে।
তারপর এক মুহূর্তে গম্ভীর হয়ে বলে, “না বাবা,এবার থেকে আমাকে ও বোধহয় হিজাব পরে ঘুমাতে হবে।যামানা পাল্টে গেছে। এখন দেখি মেয়েরা ও ছেলেদের খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে।নিজের ইজ্জত নিজেকেই রক্ষা করতে হবে।নয়তো দেখা যাবে আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে কেউ…”
আষাঢ় কথা শেষ করতে পারে না।তার আগেই পিয়াসা আষাঢ়ের মুখ চেপে ধরে বললো, “চুপ,একদম চুপ।কি সব বাজে কথা বলা শুরু করেছেন আপনি? পাগল না-কি! আর আপনি কোথাকার শাহরুখ খান আসছেন যে আমি আপনাকে দেখতে যাবো?”

“আষাঢ় পিয়াসার হাত সরিয়ে বললো, “ শাহরুখ না হই,তবে ফেলে দেওয়ার মতো ও না।মেয়েদের ক্রাশ হই বুঝলে।আর শাহরুখ না হলেও তো তুমি নিজেই চুপিচুপি আমাকে দেখছিলে।”
পিয়াসা উত্তেজিত হয়ে বললো,“আজব লোক তো আপনি, আরে ভাই আপনাকে আমি কোন দুঃখে দেখতে যাবো!”
আষাঢ় সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো, “না শব্দটা ভাই হবে না,জামাই হবে।”
পিয়াসা মাথা নাড়িয়ে বললো, “সে যাই হোক,আরে জামাই,আপনাকে আমি কোন দুঃখে দেখতে যাবো?”
বলেই বুঝতে পারে সে একটা বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে। গম্ভীর হয়ে আষাঢ়ের দিকে তাকায় পিয়াসা। আষাঢ় আত্মসমর্পণ করার ভঙ্গিতে বললো, “সরি,গুড নাইট।”
আষাঢ় শুয়ে পড়তেই পিয়াসা বিছানা থেকে নামতে যায় ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য।
এক মুহূর্তের জন্য সে ভুলে গেছে নিজেই নিজের পা বেঁধে শুয়েছিলো।ফলস্বরূপ ধপাস করে পড়ে গেলো পা ফেলতে গিয়ে।

মৃদু সুরে গুঙিয়ে উঠে বললো, “ও মা গো,মরে গেলাম।উফ!”
মহুয়া বেগম চুপিচুপি এসেছিলেন আড়ি পাততে দরজায়।
পিয়াসার আর্তনাদ শুনে দুই হাত কানে চাপা দিয়ে মহুয়া বেগম সরে গেলেন।এই মেয়ে তাহলে তার নাতিকে ইতোমধ্যে হাত করে নিয়েছে। ছলাকলা সব জানে এই মেয়ে!
তিনি ভেবেছিলেন এমন হুট করে বিয়ে হয়েছে যেহেতু একটু সময় নিবে হয়তো দুজনে।আর তাতে তিনি ও একটু সুযোগ পাবেন আগুনে ঘি ঢালার।
কিন্তু তার সেই আশায় গুড়ে বালি।
বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে মহুয়া বেগম রুমে গেলেন।অযথা তার ঘুম নষ্ট হলো মাঝখান দিয়ে।
আষাঢ় বিছানা থেকে নেমে হাত বাড়ায় পিয়াসাকে কোলে তুলে নেয়ার জন্য। কিন্তু নিজেকে সংবরণ করে নেয় আষাঢ়।

সে বলেছিলো পিয়াসাকে টাচ করবে না নিজ থেকে।
কথার খেলাপ আষাঢ় করবে না।
আলগোছে পিয়াসার পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে বললো, “উঠে দাঁড়াও নিজে নিজে।”
পিয়াসা স্বাভাবিকভাবে হাত বাড়িয়ে দেয় তাকে তোলার জন্য।
আষাঢ় হাত না ধরে বললো, “সরি,আমার এমনিতেই রেকর্ড ভালো না,ক্যারেকটারলেস ট্যাগ পেয়ে গেছি ইতোমধ্যে। নতুন করে আর কোনো ট্যাগ পেতে চাই না।নিজেই উঠার চেষ্টা করো বউজান।”
কোনো কথা না বলে উঠে ওয়াশরুমে গেলো পিয়াসা।আয়নায় নিজের দিকে নিজে অপলক তাকিয়ে রইলো।তাকিয়ে থাকতে থাকতে পিয়াসার মনে হলো আষাঢ় তাকে হঠাৎ করেই যেনো অপ্রস্তুত করতে চাইছে।তা না হলে এটা তো সাধারণ ভদ্রতা কেউ পড়ে গেলে তাকে তুলতে হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

পর মুহূর্তেই যেনো আয়নায় থাকা তার প্রতিচ্ছবি হেসে উঠে। পিয়াসা চমকায়।এ যেনো তাকে বিদ্রুপ করছে।
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো এই সাধারণ ভদ্রতা করেছে বলে সে নিজেই তো আষাঢ়কে চরিত্রহীন বলেছে তাহলে আবার কেনো এক্সপেক্ট করছে যে সে পড়ে গেলে আষাঢ় হাত বাড়িয়ে দিবে তাকে সাহায্য করতে!
নিজের ভুলভাল ভাবনায় নিজে হেসে উঠে পিয়াসা।

হ্যালো 2441139 পর্ব ৪৬

এই লোক হাত বাড়িয়ে দিতে হবে কেনো?
পিয়াসা নিজের চৌহদ্দিতে কাউকে আসতে দিবে না।যতবার মুখ থুবড়ে পড়বে ততবারই নিজে নিজে উঠে দাঁড়াবে।কারো থেকে কেনো সে সাহায্য আশা করবে!

হ্যালো 2441139 পর্ব ৪৮