হ্যালো 2441139 পর্ব ৫৩
রাজিয়া রহমান
বৈশাখীকে দেখে মহুয়া বেগমের কিছুটা স্বস্তি হয়।এই বাড়িতে একমাত্র এই নাতনিটাই তার মনের মতো হয়েছে।
জমিদার বংশের ভাবসাব সবই পেয়েছে তার এই নাতনি।
আষাঢ় বোনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
বৈশাখী শান্ত সুরে বললো, “বিয়ে করে নিলি আমাকে,আমার হাজব্যান্ডকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?না-কি সাদা চামড়ার বউ দেখে হুশ হারিয়ে ফেলছিস।”
আষাঢ়ের কপালের রগ দপদপ করছে। পিয়াসা বাম হাত দিয়ে আষাঢ়ের উরুতে আলতো চাপ প্রয়োগ করে। প্রেগন্যান্সির সময়টাতে মেয়েদের হরমোনাল অনেক পরিবর্তন আসে।তাই বৈশাখীর ব্যবহার পিয়াসাকে কষ্ট দিলেও পিয়াসা চায় না বৈশাখী কষ্ট পাক তার জন্য।
বৈশাখীর কেমন অসহ্য লাগছে পিয়াসাকে।এই মেয়েটা আসার পর থেকে মা একেবারে বদলে গেছে। যেনো পিয়াসা ই তার মেয়ে।সারাক্ষণ পিয়াসা পিয়াসা করতো। এখন তো ছেলের বউ করে ফেলেছে।
রজনী শান্ত সুরে বললো, “নাশতা খেতে বসেছিস,এখন চুপচাপ খেয়ে নে।পিয়াসাকে বের হতে হবে,আষাঢ়কে ও বের হতে হবে।”
“ও কোথায় বের হবে?”
মহুয়া বেগম কটাক্ষ করে বললেন, “তোর মা খুঁজে এই বাড়ির জন্য বাঁদি আনছে,সেই বাঁদি এখন বাঁদিগিরি করবে হোটেলে গিয়ে।”
আষাঢ় ধমকে বললো, “মুখ সামলে কথা বলো দাদী,পিয়াসার নামে আর একটা বাজে কথা কেউ বললে আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না মনে রেখো।”
বৈশাখী হেসে বললো, “বাজে কথা! ওর নামে বাজে কথা এখনো তো আমি শুরুই করি নি।ওর বাবা,মায়ের কেচ্ছা যদি শুরু করি,মুখ লুকাতে পারবি না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপা,বাড়াবাড়ি করিস না।”
“বাড়াবাড়ি করলে কি করবি তুই?আমাকে মারবি?নাকি ভেবেছিস ধমকালে আমিও দাদীর মতো ভয় পাবো?”
“মা,আপাকে নিষেধ কর আজেবাজে কথা না বলতে।”
বৈশাখী আয়েস করে এক লোকমা খিচুড়ি মুখে দেয়।মা’য়ের হাতের রান্না যেনো অমৃত। প্রেগন্যান্সির বাকি সময় এখানে থাকবে বলেই এসে বৈশাখী।
আষাঢ়ের কথা শুনে বললো,
“কিসের আজেবাজে কথা?ওর মা যে চরিত্রহীনা মহিলা সেটা কে না জানে?ও শারমিন আন্টির মেয়ে না। ওকে ওনারা দত্তক নিয়েছেন।ওর মা আমার শ্বশুর বাড়ির দিকের এক আত্মীয়ের সাথে পালিয়ে এসেছে ওকে রেখে।ও একেবারে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। কোনো ভাবেই আমাদের মতো পরিবারের বউ হওয়ার যোগ্যতা ওর নেই। আমি অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে দাদী তুমি কিভাবে এই মেয়েকে বাড়ির বউ বানাতে চাইলে?”
মহুয়া বেগমের মাথায় বাঁজ পড়লো যেনো।
রজনী, সিরাজুল ইসলাম, আষাঢ় ছাড়া উপস্থিত সবাই হতভম্ব হলো এমন খবর শুনে।
পিয়াসা হাসিমুখে তাকিয়ে আছে বৈশাখীর দিকে।বুকের ভেতর রক্তাক্ত হয়ে গেলেও এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হয় নি মুখের।
“এজন্যই তো এর চিন্তাভাবনা এতো নিচুস্তরের।রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হওয়ার শখ তো এমনি এমনি আসে নি।ওর রক্ত তো আমাদের মতো খানদানি পরিবারের না।ওর দেহে বইছে থার্ডক্লাশ পরিবারের রক্ত।যেমন ফ্যামিলি থেকে উঠে এসেছে তেমনই তো স্বপ্ন হবে।”
শিরিন সুযোগ পেয়ে বলে ফেললো।
আষাঢ়ের মাথায় আগুন জ্বলে উঠেছে যেনো।আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর থাকা সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে দিলো
সেই সাথে বৈশাখীর সামনে থাকা খাবার প্লেট ও।
বৈশাখী সবেমাত্র এক লোকমা খেয়েছে।
পিয়াসা আষাঢ়ের হাত ধরে বললো, “প্লিজ,শান্ত হোন আপনি। এমন রিয়েক্ট করছেন কেনো?”
আষাঢ় পিয়াসার হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বললো, “চুপ,একদম চুপ।তুমি শাবানার মতো সব হাসিমুখে সহ্য করতে পারো,আমি আমার বউয়ের এক ফোঁটা অপমান ও সহ্য করবো না।আর আপা শোন,পিয়াসার এসব কথা বাবা,মা,আমি তিনজনই জানি সেই প্রথম দিন থেকেই। আর তখন থেকেই আমি পিয়াসাকে ভালোবাসি।”
শিরিন বললো, “এই দুনিয়া সাদা চামড়ার পাগল।এজন্যই তো আমার মেয়েদের পছন্দ না করে এই বেজন্মা মেয়েরে পছন্দ হইছে।”
আষাঢ়ের মাথায় রক্ত জমে গেছে।শিরিনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগেই পিয়াসা আষাঢ়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “না প্লিজ,আমার জন্য আপনি এমন অশান্তি করবেন না।ওনাদের কথায় আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি,আমার জন্য আপনি তাদের কষ্ট দিলে আমি তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাবো।”
পিয়াসার উষ্ণতা পেতেই আষাঢ় কেমন চমকে উঠে। আষাঢ় এতটুকু কাছাকাছি পাবে পিয়াসাকে কখনো ভাবে নি।
রজনী থমথমে সুরে বৈশাখীকে বললো, “ওর বর্তমান বাবা মা যারা,তারাই ওর আসল বাবা মা।শুধু জন্ম দিলেই বাবা মা হওয়া যায় না।তাছাড়া ওদের অন্যায়ের জন্য পিয়াসা কেনো সাফার করবে?
তুই একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে এমন অশিক্ষিতের মতো কথা বলছিস কিভাবে?”
“মা,আমি তোমার মতো অন্ধ না।শিক্ষিত হওয়ার আগে আমি একজন খানদানি পরিবারের মেয়ে। আমার রুচি ওর মতো নিম্নমানের নয়।তুমি কিভাবে পারলে জেনেশুনে এই মেয়েকে বাড়ির বউ বানাতে? তোমার একবার ও মনে হয় নি এই মেয়ে আমাদের বাড়ির কাজের লোক হওয়ার ও যোগ্যতা রাখে না।”
পিয়াসা হেসে বললো, “কি আর করার বড় আপা,তোমাদের খানদানি বংশের কপাল খারাপ। তা না হলে কেমন করে আমার মতো একটা মেয়ে এই বাড়ির বউ হয়ে গেলো। এই শোকে তোমরা দাদী,নাতনি,ফুফু,ফুফাতো বোন সবাই মিলে না হয় শোক পালন করে দুইদিন উপোস কর অথবা সবাই গলাগলি করে কান্না করো।”
আষাঢ়ের হাত ধরে পিয়াসা উপরে চলে গেলো আষাঢ়কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
বৈশাখী মুখ গোমড়া করে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে।
রজনী বৈশাখীর জন্য খাবার নিয়ে কয়েকবার দরজায় নক করে।
বৈশাখী দরজা খুললো না।
কিছুতেই আজকে সে খাবার খাবে না।মা’কে কিভাবে নিজের দলে নিয়ে আসতে হয় বৈশাখী জানে।
প্রেগন্যান্ট মেয়ে না খেয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে এটা কোনো মা মেনে নিবে না।
বৈশাখী এখানে দীর্ঘদিন থাকার জন্য এসেছে।
এই বংশমর্যাদাহীন মেয়েকে এখানে সে টিকতে দিবে না।একটা অভিজাত পরিবারের জন্য এই মেয়ে কখনোই মানানসই না।
তাছাড়া বৈশাখী মনেপ্রাণে চেয়েছিলো তার খালাতো ননদ সিমরিনের সাথে ভাইয়ের বিয়ে দিবে।মেয়েটা বাবা মা’য়ের একমাত্র মেয়ে।বাবা মা মেয়ে তিনজনই আমেরিকায় সেটেল।বিপুল অর্থসম্পদের মালিক মেয়ের বাবা।আমেরিকায় ওদের দোকানপাট আছে।
সবচেয়ে বড় কথা বৈশাখীর স্বামীর কাছে বেশ বড় একটা এমাউন্ট ধার পাবেন মেয়ের বাবা।
আষাঢ়ের সাথে বিয়ে হলে সেই টাকাটা মওকুফ হয়ে যাবে।
হিসেব করলে সিমরিনরা কখনোই ওদের সাথে আত্মীয়তা করবে না,কিন্তু সিমরিনের একটা অতীত রয়েছে।আর তাই তারা অমত করবে না।বৈশাখীর হাজব্যান্ড সোহাগ এই বুদ্ধিটা দিয়েছে বৈশাখীকে।সে একবার না-কি তার খালার কানে বাড়ি দিয়েছে এই ব্যাপারে। তারা নাকি গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছে।
বৈশাখী তার স্বামীর পরামর্শ মেনে নিয়েছে। সে চায় তার স্বামীর বিশাল দেনা দেওয়া থেকে মুক্তি পায় যাতে।
২০ লক্ষ টাকা দেওয়ার চাইতে আষাঢ়ের সাথে সিমরিনের বিয়ে দেওয়া সহজ।
রজনী দরজা ধাক্কা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে সিরাজুল ইসলামকে ডাকলেন।
একে একে বাড়ির প্রায় সব সদস্য এসে হাজির হলো।বৈশাখী দরজা খুললো না।
হ্যালো 2441139 পর্ব ৫২
ভেতর থেকে বৈশাখী বললো, “আষাঢ় আজকে আমার সাথে যেই বেয়াদবি করেছে,ও আর ওর বউ এসে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমি দরজা খুলবো না।ও আমার সামনে থেকে খাবার ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।বিয়ে করেছে দুই দিন হয়েছে এখনই এতো বেয়াদব হয়েছে ও!
ওই মেয়ের পাল্লায় পড়ে যখন এতটা অধঃপতন হয়েছে ওর,ওদের এসে ক্ষমা চাইতে হবে আমার কাছে।”
রজনী দরজার সামনে হাত পা ছাড়িয়ে বসে পড়লো।শিরিন আর নিরা মুখ টিপে হাসছে।
খেলা ভীষণ জমে উঠেছে এবার। বৈশাখীই পারবে ওই মেয়েকে শায়েস্তা করে এই বাড়িছাড়া করতে।