৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩০
সারা চৌধুরী
রিকশা এসে থামে একটা ক্লিনিকের সামনে রাহি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে কোথা থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে রাহিকে বলে উঠে….
-“ম্যাম ডাক্তার এখানেই আছে..?
-“তুমি শিউর তো..?
-“জি ম্যাম ওনার হাসবেন্ড ই ড্রাইভার ছিলেন আর সেদিনের এক্সিডেন্ট এ পুরোপুরি পেরালাইসড হয়ে জায়।
রাহির সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিম,,রাহি মিম কে টাকার বিনিময়ে কাজে রেখেছে,,রাহি মিম এর পিছু পিছু সেই মহিলা ডাক্তার এর কেবিনে ঢুকলো,,রাহি কেবিন এ ঢুকতেই ডাক্তার এর সাথে চোখা-চোখি হলো,,ডাক্তার রাহিকে না চিনলেও রাহি ডাক্তার কে চিনে ফেলে।
রাহি ইনিয়ে বিনিয়ে এখানে আশার মুল উদ্দেশ্য বলে দেই ডাক্তার ফারজানা কে,,প্রথমে ফারজানা রাহি কে চিনতে না বলতে চাচ্ছিলো না কিন্তু রাহি নিজের পুরো পরিচয় দিয়ার পর বলতে না চাইলেও রাহির কান্না দেখে বলে দেই সে দিনের ঘটনা…..
ফ্লাসব্যাক….
রাহি মাত্র হসপিটাল থেকে বের হলো,, সাথে তার মেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড জিম,,জিম এর কোলে একটা ছোট নবজাতক শিশু,,নরমাল ডেলিভারি তে হয়েছে শিশুটি,,ডাক্তার ফারজানার মাধ্যমেই নরমাল ডেলিভারি হয়েছিলো ক্লিনিকে,,সেদিন গাড়ি না পাওয়াই ডাক্তার ফারজানার স্বামি নিজেই ইচ্ছা পোষন করে তাদের ড্রপ করার,, রাহি রাও মানা করে নি,,গাড়ি চলতে শুরু করে রাস্তার মাঝে হটাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়,, বৃষ্টির মাজেই গাড়ি চলতে থাকে হটাৎ রাহি কিছু একটা জিমের সাথে বলতে গেলে ড্রাইভার অন্য মনষ্ক হয়ে যায় কিছু বুজে উটগার আগেই ট্রাক এর সাথে ধাক্কা লেগে উলটে যায় গাড়িটি।।রাহির জ্ঞান ফেরে হসপিটালে,, রাহি যখন উঠে বসে তখন ডাক্তার জানায় পুরো তিন দিন পর তার জ্ঞান ফিরেছে আর গাড়ির সবাই মারা গেছে,,তখন রাহির মানষিক ভারসাম্য চলে যায়।।
এটুকু বলে ডাক্তার ফারজানা বলে সেদিন আমার স্বামি মারা জায় নি শুধু একটা মৃত লা*শ পাওয়া যায়। মেয়েটি তোমার ফ্রেন্ড ছিলো,,রাহির চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে,, রাহি ধপ করে চেয়ারে বসে থাকে হ্যা কিছুদিন আগে রিহান তাকে মেন্টাল হেল্থ কেয়ার থেকে এসেছে তবে তার মনে ছিলো সব,,ফারজানা এসে রাহির মাথায় হাত রাখে।রাহি কেদে উঠে,, ফারজানা শান্তনা দিয়ে বলে তোমার বাচ্চা বেচে আছে কারোর ঘরে একটু অপেক্ষা করো কেও একজন এডাপ্ট করেছিলো,,আমি লিস্ট খুজে বলছি হয়তী চোখের দেখা দেখ মতে পাবা কথা টা কর্ন হরে যেতেই খুশিতে মন ভরে উঠে রাহির।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শুভ্র নিজের গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে আসলো বাসস্টান্ড এর কাছে।শুভ্রদের গাড়ি বাসস্টান্ড এর এক পাশে দাড় করিয়ে শ্রাবন অর্কের নাম্বারে ফোন দিতেই অর্ক পিছন থেকে ডেকে উঠলে শ্রাবন পিছনে তাকিয়ে দেখে অর্ক হাতে একটা ল্যাগেজ নিয়ে এগিয়ে আসছে।শ্রাবন তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলো অর্কের দিকে শুভ্র ও গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো,,শ্রাবন অর্কের সাথে কোলাকুলি করে হাতে থাকা লাগেজ গাড়ির ডিকি তে তুলে দিলো,, অর্ক শুভ্রর সাথেও কোলাকুলি করলো প্রায় আট বছর পর সামনা সামনি দেখা আবেগ আপ্লুত হলো একটু,,তারপর হেসে গাড়িতে চড়ে বসলো তিনজন এবার শ্রাবন ড্রাইভিং করছে,, আর গল্প করছে,,গাড়ি এগিয়ে আসতে লাগলো তালুকদার বাড়ির দিকে।।
সারা সকালে খেয়ে আবার পড়তে বসেছিলো,,এখন উঠে দেখে ঘড়িতে একটা বাজতে পাচ মিনিট বাকি,,সারা ওয়াশরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নেই,,মিনিট বিশেক পরে ভেজা চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয় সারা,,ড্রেসিং টেবিল এর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,,গলার দিকে নজর যেতেই কালসিটে পড়ার একটা দাগ বুজা যায়,,সারা লজ্জা পেয়ে যায়,,সেদিকে খেয়াল না দিয়ে শুভ্রর কথা মতো কাবার্ড খুলে একটা শপিং ব্যাগ পাই।।
সারা ভ্রু কুচকে ব্যাগ টা খুলতেই দেখতে পাই ভিতরে একটা পিংক কালারের গাউন সাথে ম্যাচিং উড়না পাজামা।আর কিছু চুরি আর চকলেট সাথে একটা চিরকুট।।সাথে সাথে সারার মন আনন্দে নেচে উঠে,,কাচের চুরি তার খুব পছন্দ,, কিন্তু হটাৎ মন খারাপ হয়ে যায় কাচের চুরি পরলে যদি অরু ব্যাথা পায়,,সারা চিরকুট টা খুললো ধিরে ধিরে চিরকুটের মধ্যে আর একটা চিরকুট।সারা ছোট টা পাশে রেখে বড় টা পড়া শুরু করলো…
-“প্রিয় পিচ্চি পাখি….
হটাৎ করে দমকা হাওয়ার মতো আমার জিবনে এসে বসন্তের সুভাষে আমার হৃদয় ভরিয়ে দিয়োছো।আমি জানিনা কেন তোমাকে ছাড়া আমার প্রতিটা সেকেন্ড এখন মনে হয় কয়েক বছরের সমতুল্য। আচ্ছা পিচ্চি পাখি শুনো ব্যাগ এর ভিতরে দেখো একটা গোলাপি রঙের গাউন আছে সেটা আমার পছন্দে কেনা,,আমি যখন কিছু কিনি সবার জন্যই কিনি তবে এই জামা টা হটাৎ অফিসের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে মুহুর্তেই তোমাকে কল্পনায় একে ফেলি কেমন লাগবে পরতে।তাই দেরি না করে কিনে ফেলি, জানি না তোমার পছন্দ হবে কিনা,তবে পছন্দ না হলেও আজ একটু পরিও,আমি গোলাপি জামাতে আমার গোলাপি পিচ্চি পাখি কে দেখার অধীর আগ্রহে থাকবো।
ইতি…
তোমার ভালোবাসা
চিরকুট টা পড়ে সারার মন ভরে গেলো। আসলেই প্রিয় মানুষ গুলোর দেওয়া সামান্য উপহার ও খুব আনন্দ দেই,, ভরিয়ে দেয় হৃদয়,,সারা হাসি মুখে জামা নিয়ে ওয়াশ্রুমে চলে যায় চেঞ্জ করতে।।
আনিশার হটাৎ মন খারাপ হয়ে গেছে,,ফাতিহা বুজলো না কেন,,আনিশা রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় সুয়ে পড়ে,, মুখের উপর বালিশ নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে,, চোখ দিয়ে অশ্রু নির্গত হচ্ছে,,এর কারন আনিশা জানেনা তবে আনিশার এখন খুব কান্না পাচ্ছে,খুব খুব,,এইতো কিছুক্ষন আগেও আনিশা রান্না ঘরের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছিলো ঠিক তখনই মিসেস আনিতা, সুমনাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…
-“ছোট শুনছিস..?
-“হুম আপা কিছু বলবা,..?
-“আনিস রা তো দুদিন পর আসছে।
-“হুম আপা শুনলাম,তেমন নাকি কোনো কাজ নাই আর,,।
-“হুম রে। আচ্ছা ওই মেয়েটা কেমন রে..?
-“কোন মেয়েটা আফা..?
-“ওই যে শান্তার সাথে আসতো মাঝে মধ্যে বাবা নেই মেয়েটার।
আনিশা খাওয়া থামিয়ে আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে..-“সম্পা আপুর কথা বলছো চাচি..?
-“আরে হ্যা মা ওই সম্পা মেয়েটা কিন্তু দেখতে শুনতে ভালোই কি বলিস ছোট।
-“হুম আপা কিন্তু কেন..?
-“আনিস আর শুভ্রর আব্বু মিলে ওর সাথে শ্রাবন এর বিয়ে ঠিক করেছে,, এসে পাকা কথা বলবে।
-“কিহ..শ্রাবন এর বিয়ে..?
-“হুম আমারে বললো,, আসলেই দুজনের মানাবে।
আনিশার গলায় পিঠা আটকে গেলো,, কেশে উঠলো সাথে সাথে সাথে,, শ্রাবন ভাই এর বিয়ের কথা শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে,,আনিতা তাড়াতাড়ি পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো,, আনিশা ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নিলো,, আনিতা আনিশার পিঠে হাত বুলাতে লাগলেন সাথে মাথায় ফু দিয়ে বলে উঠলেন…-“আস্তে খেতে পারিস তো তাড়াহুড়ো করিস কেন।
আনিশার চোখে পানি ভিড় করলো মুখে একটা কথাও আসলো না,,আনিশা পিঠার বাটি টা থুয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কাপাকাপা কন্ঠে বলে উঠলো -“চাচি আর খাবো না আমি গেলাম।।বলেই এক ছুটে সিড়ির কাছে চলে যায়,, দূর থেকে আনিশার চোখে পানি দেখে ছুটে আসে ফাতিহা এসে আনিশার হাত ধরে ফেলে,,আনিশা কেবল সিড়ি তে পা রাখছিলো,,আনিশা পিছু ঘুরতেই ফাতিহা জোরেই বলে উঠে —
-“কিরে আনু কে কি বলছে কাদছিস কেন..?
-“আপি ছাড়ো ভালো লাগছে না কেও কিছু বলে নি।।
ফাতিহা একটু মজা করে বলে উঠে..-“আরে বলো বলো ছিচকাদুনি বুড়ি।।
আনিশা খুব রেগে জায় এই কথায় জোরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠে..-“আর কখোনো আমার নামে কিছু বলবা না আমার হাত ও ধরবা না ছাড়ো তো।।কথা বলেই আনিশা উপরে চলে এসে দরজা আটকে দেয় নিজের রুমের।ফাতিহা হতভম্ব সাথে আনিতাও।আনিতাও মনে মনে বলছিলো হটাৎ মেয়েটার কি হলো না খেয়ে চলে গেলো,,তারভিতরে ফাতিহার সাথে খারাপ ব্যাবহার এটা,, ফাতিহা মানতে পারছে না,,আনিশা অল্প তে কাদে সে জানে তবে এমন করে কথা বলা শুনেনি।
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৯
ফাতিহা পিছন ফিরে মিসেস আনিতা কে জিজ্ঞাসা করলেও তিনি কোনো জবাব দিতে পারলেন না।পর পরি বাইরে গাড়ির শব্দ এলো মিসেস আমিতা ও ফাতিহা সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সব কিছু ভুলে..দরজার কাছে যেতেই অর্ক ছুটে এসে আনিতাএ পা ছুলো,, ফাতিহা আর অরুর দিকে তাকালো হটাৎ নুপুরের রিন রিনে আওয়াজে অর্ক আনিতা বেগমের পিছনে উকি দিয়ে সোজা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সিড়ির পানে। মুহুর্তে অর্ক দৃষ্টি থেমে গেলো,,অর্কের এমন করে তাকানো দেখে সবাই অর্কের দৃষ্টি লক্ষ করে তাকিয়ে দেখলো…..
