৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩৩
সারা চৌধুরী
শুভ্র বিড়বিড় করে বলে উঠলো…
-“পিচ্চি পাখি আমার ঘুম না ভাঙা অব্দি কোথাও জাইবা না,, নো এক্সকিউজ ওকে।
সারা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো সেতো শুভ্রকে নিচে খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিলো আর এখন ফেসে গেলো।শুভ্র কিছুক্ষনের মাঝেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো..সারা ও বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে রইলো।শুভ্রর মুখের দিকে চোখ নিবদ্ধ,, ইশ কি সুন্দর মায়াবী মানুষটা,,সারার চোখ আটকে যায় শুভ্রর ঠোঁটের দিকে।গোলাপি ঠোঁট কালচে হয়ে যাচ্ছে।সারা বালিশের পাশ থেকে শুভ্রর মোবাইল টা নিলো।
কিন্তু একি ফোনের লক চেঞ্জ,সারা অনেক চেষ্টা করেও খুলতে পারলো না..সারা ভ্রু কুচকে শুভ্রর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো..সারা ফোনটা পাশে রাখতে যেতেই ফোনের ওয়াল পেপারে চোখ আটকে গেলো সারার।শুভ্র অরুকে কোলে নিয়ে অরুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই মুহুর্তে ছবি টা তোলা হয়েছিলো।ছবিটাতে দুজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সারা তাকিয়ে হাসলো একটু তারপর ফোনটা বালিশের পাশে রেখে শুভ্রর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে সেও ঘুমিয়ে পড়লো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আনিশা অরুকে নিয়ে সোফাই বসে আছে,,এ বাড়ির মাঝে আনিশার সবার আগে খিদে লাগে আর সে সবার আগে খেয়ে নেয়।আনিতা শ্রাবন,অন্তু আর অর্ক কে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।সুমনা খাবার এগিয়ে এনে দিচ্ছে আর ফাতিহা টিভি দেখছে সে সবার সাথে পরে খাবে।সবাই শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করে সারাকে ডাকতে পাঠিয়েছিলো,, কিন্তু সারার না আশা দেখে আনিতা কিছু বুজলো,,তারপর সবাইকে খেতে দিলো।
খেতে খেতে আনিতা অর্কের বাড়ির সবাই কেমন আছে জিজ্ঞাসা করলো,, অর্ক হাসি মুখে উত্তর দিলো আম্মু বাদে সবাই ভালো আছে আন্টি।আনিতার হাসি মুখ কালো হয়ে গেলো কালো মুখে জিজ্ঞাসা করলো এখোনো ভুলে উঠতে পারে নাই,,অর্ক সভাব সুলভ হেসে বললো.. না আন্টি ডাক্তার বলেছে যাকে নিয়ে চিন্তা করে এই অবস্থা তাকে যদি এনে দিতে পারি তাহলে সুস্থ হয়ে যাবে নয়তো হবে না,,কিন্তু আন্টি আপনি তো জানেন তা কোনোদিন সম্ভব না।আনিতা একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো জারা কেমন আছে। আন্টি বনুর তো কিছুদিন পর বিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা। আমাদের দুইভাই বোনের জন্য আব্বু ও টেনশনে।শ্রাবন নির্বিকার ভাবে খাচ্ছে তার মন কোথায় সে জানে না তবে এটা জানে এখানের কোনো কথা তার কানে যাচ্ছে না।
শান্তা সকাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছে,, নাহিদ আর তার বন্ধুরা একের পর এক অর্ডার করে যাচ্ছে।মনিরা,, ইব্রাহিম,, আর নাহিদের মা পাশের গ্রামে গিয়েছে কি একটা দরকারে,,শান্তা আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে,,নাহিদ শান্তা কে সহ্য করতে পারে না,,কথায় কথায় গায়ে হাত তুলে শান্তা চুপ চাপ সহ্য করে নেই কারন সে জানে তার করা ভুলের শাস্তি সে পাচ্ছে,,আকাশ কে ঠকানোর শাস্তি তাকে ভোগ করা লাগবে।
নাহিদ পান থেকে চুন খসলেই শান্তা কে মারে,, শান্তা ভয়ে কাওকে কিছু বলে না,,সে জানে মনিরা বেগম শুনলে কষ্ট পাবে নাহিদ কখোনো মুখে মারে না তাই কারোর কাছে ধরা খাওয়ার চান্স নেই।এসব ভাবতে ভাবতে বেসিনে থালা-বাসন ধুচ্ছিলো শান্তা ঠিক সেই সময়ে নাহিদ পিছন থেকে এসেই শান্তার চুলের মুঠি ধরে বলে উঠে…
-“কিরে মা** তোরে কখন থেকে ডাকছি বললাম না খেতে দে ওদের কে..?
শান্তা ব্যাথায় ককিয়ে উঠে বাথ্যাতুর কন্ঠে বলে উঠে..
-“দিচ্ছি বসুন..!
-“দিচ্ছি কি দে..!
বলেই নাহিদ চলে যায়,, শান্তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে,,আকাশ তার কখোনো ধমক দেই নি,, আর এখানে রীতিমতো মার খাওয়া লাগছে,,তালুকদার বাড়িতেও তাকে কোনো কাজ করে খাওয়া লাগে নাই,,শুভ্র আর শ্রাবন তাকে যখন যা দরকার এনে দিয়েছে,,শান্তার চিন্তার মাঝেই নাহিদ জোরে ডেকে উঠলো শান্তা তাড়াহুড়ো করে খাবার বেড়ে নিয়ে গেলো ডাইনিং টেবিল এ…!
সবাই খাচ্ছে খেতে খেতে নাহিদের এক ফ্রেন্ড অরুন বলে উঠে..
-“ভাবি রান্না কিন্তু সেই হইছে…?
নাহিদ খেয়ে যাচ্ছে রাগী রাগী একটা ভাব চোখে,,সবাই খেয়ে উঠে গেলো নাহিদ এখোনো টেবিল এ বসে আছে,, শান্তা ভয়াতুর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো…আর কিছু নিবেন…?শান্তার কথা বলা শেষ হতে না হতেই নাহিদ খাবারের প্লেট শান্তার মুখে ঠেসে ধরে।শান্তার চোখে মুখে ঝাল লেগে ছটফটাই তে থাকে,,নাহিদ রাগী কন্ঠে বলে উঠে….
-“তুই জানিস না আমি ঝাল খাই না তুই ঝাল দিলি কেন মাংসে,,, নে মা** খা একা।।
নাহিদের এতো চেচামেচি শুনে সবাই তাড়াতাড়ি হাত ধ্যে ডাইনিং টেবিলে এসে দেখলো শান্তার সারা মুখে ভাত,, শান্তা উড়বা দিয়ে মুচার চেষ্টা করছে,, অরুন কিছু বলতে যেতেই নাহিদ থামিয়ে দিয়ে ওদের নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।নাহিদ চলে যেতেই শান্তা ঢুকরে কেদে উঠলো তাড়াতাড়ি জগের পানি গুলো মুখে ঢেলে দিলো,, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল।
তালুকদার বাড়ির সবার খাওয়া শেষ সোফাই এসে বসেছে মাত্র,, অর্ক সুজোগ পেলেই আনিশা কে একটু করে রাগিয়ে দিচ্ছে,, আনিশা যদিও আশাই ছিলো শ্রাবন ভাই কিছু হলেও বলবে অর্ক কে,, কিন্তু না আনিশা কে হতাশ করে দিয়ে শ্রাবন পকেট থেকে মোবাইল বের করে গেম খেলা শুরু করে দেই।সারার চোখ লেগে এসেছিলো শুভ্র নড়াচড়ার জন্য সারার ঘুমের বারোটা বেজে গেছে,,এখন আবার চোখ টা লেগে এসেছে সে মুহুর্তে বিকট আওয়াজ এ শুভ্রর ফোন বেজে উঠলো।সারা শুভ্রর ফোন্টা হাতে তুলে নিতেই।
চোখ পড়লো ❝অহু❞ বলে সেভ করা নাম্বার..তাও আবার একটা মেয়ের ছবি ভাসছে স্ক্রীনে,, সারা চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো…
এই অহু টা আবার কে..সারার কথা শেষ হতে না হতেই শুভ্রর সারার হাত থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে উঠে বারান্দায় চলে গিয়ে বারান্দার দরজা লক করে দিলো।ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে সারা হকচকিয়ে গেলো,,সারার মন কেমন খুত খুত করা শুররু হলো,,সারা বিছানা থেকে উঠে দাড়াতেই শুভ্র বারান্দার দরজা খুলে আবার রুমের ভিতরে চলে এলো,,কিন্তু শুভ্রর মুখ শুকনো,,কপালে ঘাম চিকচিক করছে।।সারা গিয়ে পর্দা সরিয়ে রুমের জানালা খুলে দিলো,, সাথে সাথে উজ্জ্বল আলোয় পুরো রুম আলোকিত হয়ে গেলো।
সারা এবার দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্রর দিকে তাকালো,,শুভ্র ও সারার দিকে চেয়ে আছে ফলে চোখাচোখি হয়ে যায়,,সারা চোখ নামিয়ে নিতেই,,শুভ্র সারার দিকে এগিয়ে আসে,,সারার দুই বাহুতে হাত দিতেই সারা চমকে উঠলো। চোখ তুলে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখ শুকনো ঘামচে রীতিমতো। শুভ্র কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সারা বলে উঠে.. -“আচ্ছা অহু নামে সেভ করা মেয়েটা কে আর আপনি এমন ভাবে ফোন টা কেড়ে নিলেন কেনো আর বারান্দায় গিয়ে দরজা লক করলেন কেনো..?
শুভ্র যে ভয়টা করছিলো সেটাই হলো শুভ্র সারাকে ছেড়ে দিয়ে সারাকে বিছানার পাশে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে বলে উঠলো….
-“আস্তে আস্তে প্রশ্ন করো এক সাথে এতো কিছু আমি কিভাবে বলবো..?
সারা শুভ্রর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো…-“আপনি আমার সরলতার সুজোগ নিচ্ছেন না তো…?
-“মানে…?
-“আপনি কিছু লুকাচ্ছেন না তো আমার থেকে…?
শুভ্র শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠলো.. তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না পিচ্চি পাখি.. সারা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে বেশ কিছুক্ষন পর উত্তর দিলো.. আমি কি একবারো বলেছি আমি আপনাকে অবিশ্বাস করি..তার আগে বলুন অহু কে…?
শুভ্র কথা ঘুরাতে বলে উঠলো আগের দিন তুমি আমাকে প্রমিচ করেছো ভুল বুজবে না,,,সারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবারো শুভ্রর ফোন বেজে উঠলো,, শুভ্র কল ধরার আগেই সারা ফোন টা নিয়ে দেখলো সেই অহু,, সারা কল রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়েটা বলে উঠলো….
-“আমি চলে এসেছি বাড়ির সামনেই,, তুমি সব রেডি করে রাখো শুভ্র।নইতো সব শেষ করে দিবো।
সারা কিছু বলার আগেই কল কেটে গেলো,, ফোন লাউড স্পিকার এ থাকাই শুভ্র ও অহনার কথা গুলো শুনতে পেলো,,সারা ফোনটা কান থেকে নামিয়ে শুভ্রর দিকে তাকালো শুভ্র শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো…
-“যত যাই হোক পিচ্চি পাখি আমারে ভুল বুজিও না,, আমি সব সময় করে তোমাকে বুজিয়ে বলবো একটু সময় দাও।
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩২
কলিং বেল বেজে উঠায় আনিতা বার বার বলতে থাকে কেও দরজা টা খুলো আমার হাতে কাজ,,কারোর যেতে না দেখে বার কলিং বেল বাজা দেখে শ্রাবন গেম বন্ধ করে উঠে দাড়াই মোবাইল টা পকেট এ রেখে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ওপাশের মানুষটা শ্রাবন কে ভুত দেখার মতো চমকে গিয়ে বলে উঠে…
-“শ্রাবন তুমি এখানে…?
