অদৃষ্টচর পর্ব ২

অদৃষ্টচর পর্ব ২
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

পরেরদিন সকালে পুরো কলোনিতে সবুজ আর ওর মামার ঘটনাটা ছড়িয়ে গেল। সবার মাঝে একটা আতংক বিরাজ করছে। রুপ আর শ্রেয়ানদের বিল্ডিং পাশাপাশি। কালকে রাতে রুপ তারাতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে সবুজের মৃত্যুর কথা জানে না। সবুজের মামার অবস্থা তেমন একটা ভালো না। সে পাগলের মতো একা একা বিরবির করছে। কখনো শব্দ করে কাঁদছে৷ আবার কখন উচ্চ শব্দে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। একদিকে সবুজের মৃত্যু আর অন্যদিকে ওর মামার এই করুণ অবস্থা। দু’টো ঘটনা মিলে সবুজের পরিবারের বেহাল দশা। সবুজের আম্মুও ছেলের এমন ভয়ংকর লাশ দেখে সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলেন। পুলিশ এসে সবুজের লাশটাকে নিয়ে গিয়েছিলো পোষ্ট মরর্টাম করার জন্য। এরপর কয়েক ঘন্টা পর লাশটাকে সবুজের বাবা নিয়ে আসে। মুরব্বিরা সবুজের লাশকে গোসল করায়। তারপর ওদের আত্মীয় স্বজন, বিল্ডিংয়ে অনেকে মিলে ওর দাফন কার্য সম্পূর্ণ করে।

সবুজের এমন ভয়ংকর মৃত্যুর কথা রুপের আম্মুও রুপ আর মিঠিকে কিছু বলেনি। ওরা দু’জনে খুব ভীতু। বড়রাই যেখানে ভয়ে জড়সড় হয়ে গেছে, সেখানে ওরা তো বাচ্চা। রুপ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। রাতে ওর ঘুমটা ভালো হয়েছে। এজন্য চোখ দু’টো ফুলে আছে। চিরুণী নিয়ে চুল আঁচড়ে, হালকা নাস্তা সেরে কলেজের জন্য রেডি হতে গেল। মেরুণ কামিজ, সাদা সালোয়ার, ড্রেসের সাথে সাদা ক্রসিং বেল্ট, চুল গুলো উচু করে ঝুঁটি করে বাঁধা, কানে সাদা দুটো টপ দুল, হাতে ঘড়ি, ঠোঁটে লিপ বাম আর কাঁধে পুতুল ওয়ালা কলেজ ব্যাগ। ব্যস! সে এখন সম্পূর্ণ রেডি। আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলো রুপ। তখনই রুপের ভাই নিয়ান রুপের রুমের দরজা নক করে বললো,
–“এই বুচি আর কতক্ষণ লাগবে? এবার তো চল। আর কত সাজুগুজু করবি?”
–“ভাইয়া আমার হয়ে গেছে৷ চলো আমি রেডি।”
রুপ নিয়ানের সাথে বের হলো। ড্রয়িংরুমে ওর আব্বু আম্মু ওদের সাবধানে যেতে বললো। মিঠির স্কুলের রাস্তা বিপরীতমুখী। তাই নিপা মিঠিকে নিয়ে আগেই চলে গেছে। নিয়ান রুপকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে অফিসে যাবে। কেবল দুই দিন হলো রুপ এডমিশন নিয়ে একটা কলেজে ভর্তি হয়েছে। কলেজের রুলসগুলো খুবই কড়া। এজন্য হয়তো এখানে এডমিশন নেওয়ার জন্য অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
নিয়ান রুপকে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“কলেজে পড়ো মানে এই না অনেক বড় হয়ে গেছো। পড়াশোনা ব্যাতীত অন্য কোথাও যেন মন না যায়। তা না হলে রিকশাওয়ালা ধরে বিয়ে দিয়ে দিবো।”
রুপ এই কথা শুনে নিয়ানের পিঠে কিল বসিয়ে দিলো। নিয়ান তখন হাসতে থাকলো। গল্প গল্প করতে দুই ভাই-বোন কলেজে পৌঁছে গেল। নিয়ান রুপকে ওর ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে ওর গন্তব্যে চলে গেল। রুপ এর আগে গার্লস স্কুলে পড়তো। এজন্য এত ছেলেদের সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। এখানে এসে সে অনেক কিছুই খেয়াল করেছে। তারমধ্যে হলো কয়েকটা ছেলের ছ্যাচড়ামি, অতিরিক্ত পারফিউমের গন্ধ, ফোন নিয়ে অযথা ভাব নেওয়া, অতিরিক্ত স্টাইলিশ ভাবে কথা বলা, চুলের কথা না ই বা প্রকাশ করলো। শুধু ছেলে না, তাদের থেকে কয়েকটা মেয়েও পিছিয়ে নেয়। চুল ছাড়া, ভারী মেকাব, ঠোঁট ভর্তি লিপস্টিক, পারফিউম, চুলে হাজারটা ক্লিপ, হাতে মেহেদী, সাথে ফোন। বেচারা মেয়ে গুলো শুধু পারছে না ছেলেদের কোলে উঠে সেলফি নিতে।
রুপ এসব থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে। নিজেকে এতটা সস্তা ভাবে না। প্রতিটা মানুষের মধ্যে একটা নিজস্ব পার্সোনালিটি থাকা প্রয়োজন। নাহলে মানুষ আর পশুর মধ্যে তফাত থাকবে না।

চিল মুড, হাসি-খুশি, আড্ডা, বন্ধু, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের সামনে -সবখানেই নিজের পার্সোনালিটি বজায় রেখে চলা উচিত। যাতে কেউ সস্তা ভেবে হেয় চোখে না দেখে। পার্সোনালিটি মানে অহংকার, এটিটিউড, ভাব, অন্যকে ছোট করে দেখা না, হ্যাংলামি অথবা ছ্যাচড়ামিও ইঙ্গিত করে না। বরং তোমার ব্যবহার, কথা বলা, আচার-আচরণ, মার্জিত স্বভাব, অন্যের ভালবাসাটা আদায় করা বোঝায়। যাতে কেউ তোমার ব্যবহারে খুশি হয়ে আরেকববার তোমার সাথে কথা বলে।
রুপের নতুন একটা ফ্রেন্ড হয়েছে। ওর নাম মিমি। রুপের মতোই সেও হ্যাংলামি থেকে দূরে থাকে। তবে রুপ কম কথা বলে, মিমি একটু বেশি কথা বলে। এখন যেমন
মিমি বাম দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রুপকে বললো,
–“এরা কেমন অসভ্যতামী করছে দেখ। এমন ভাব করছে, মনে হচ্ছে শুধু ওদের কাছেই ফোন আছে। পৃথিবীর আর কারো কাছে ফোন নেই। সবগুলোই ছ্যাচড়ামার্কা।”

রুপ সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। ‘সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে’ এমন একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে৷ যে যেমন তার সঙ্গীও জুটে তেমন। আর এটাই স্বাভাবিক। মিমি রুপের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“রুপ আমি কালকে দ্বিতীয় ক্লাসের নোট তুলিনি। তোর নোট খাতাটা দে। ওদের ন্যাকামি না দেখে নোট করি।”
রুপ মিমিকে নোট খাতা দিলো৷ এরপর ওর হাতে থাকা বইয়ে আবার মুখ গুঁজে নিলো। একটু পরে ওদের ক্লাসে টিচার আসলো। সবাই হইচই থামিয়ে যার যার স্থানে গিয়ে বসলো।
রাহীদ সকালে নামাজ পড়ে মর্নিং ওয়াকের জন্য বের হয়েছিলো। আজকে ফিরতে একটু দেরীই হয়ে গেল। একটা বিড়াল রাস্তা পার হতে গিয়ে অটোর নিচে পড়েছিলো। রাহীদ দ্রুত গিয়ে বিড়ালটাকে ধরে রাস্তার পাশে শুইয়ে দিলো। ফুটপাতের ধারে টিউবওয়েল থেকে পানি এনে বিড়ালটার মুখে পানি দিলো। আর আলতো করে মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো। বিড়াল খুব ব্যাথা পেয়েছে। এজন্য চোখ বন্ধ করে আছে। রাহীদ বিরবির করে বললো,
–“অটোওয়ালা মনে হয় অটোকে প্লেন ভেবে নিয়েছে। এজন্য সে রাস্তায় অটো নিয়ে প্লেনের গতিতে ছুটছে। মধ্যখান থেকে এই প্রাণীটা আঘাত পেল। দায়িত্বহীন লোকজন সব।”
রাহীদ সামনে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বিড়ালটার দিকে তাকালো। তখন দেখলো বিড়ালটা ওখানে নেই। হয়তো একটু সুস্থবোধ করেছিলো। তারপর ওকে দেখেই ভয়ে পালিয়েছে। রাহীদ আশেপাশে তাকিয়ে বিড়ালটাকে না পেয়ে বাসায় ফিরে আসলো। শাওয়ার নিয়ে একেবারে রেডি হয়ে ডায়নিং টেবিলে বসলো৷ রাহীদ স্বভাবসূলভ নরম মনের মানুষ। রাহীদ ওর আব্বু আম্মু আর ছোট ভাইয়ের সাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসলো। রাহীদের আম্মু খেতে খেতে বললো,

–“আব্বু আজকে তারাতাড়ি ফিরবে। আজকে তোমার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো।”
–“আম্মু! আমি আপাতত বিয়ে নিয়ে ভাবছি না। কেবল জবে ঢুকলাম। আর কিছুদিন যাক তারপর দেখা যাবে।”
রাহীদের আম্মু আর কথা বাড়ালো না। উনার ছেলেকে উনি ভালো মতোই চিনে। রাহীদ ব্রেকফাস্ট সেরে আম্মু-আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। রাহীদ পেশাতে একজন প্রফেসর। কয়েকমাস হচ্ছে সে একটা কলেজের প্রফেসর পদে নিয়োজিত হয়েছে।
রুপ কলেজ থেকে ফিরে শাওয়ার নিলো। সিলিং ফ্যানের পাওয়ার বাড়িয়ে বেডের উপর বসলো। আজকে খুব গরম পড়েছে। রোদের তাপটাও ছিলো বেশি। রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে গালের মাংস মনে সিদ্ধ হয়ে গেছে। এখন শাওয়ার নিয়ে ওর ভালো লাগছে। তখনই মিঠি দৌড়ে এসে রুপের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। রুপ মিঠিকে কোলে নিয়ে বললো,
–“এই দুষ্টু এভাবে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে? আমি ব্যাথা পেলাম তো।”
–“ওহ সলি সলি।”

মিঠির ফোকলা হাতের হাসি দেখে রুপও হেসে দিলো। মিঠির পাঁচ বছর বয়স। এখনও ওর কথার মাঝে একটা তোতলা ভাব রয়ে গেছে। রুপ উঠে ওর ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে মিঠিকে দিলো। মিঠি খুশিতে গদগদ হয়ে রুপের গালে আদর দিয়ে বললো,
–“আমার নক্ষী পি মণি। তোমাতে এতু এতু আদল।”
রুপ হেসে মিঠির গালেও আদর দিয়ে ভেজা টাওয়াল বেলকণিতে মেলে দিলো। এরপর রুপ মিঠিকে নিয়ে খেতে গেল। নিয়ান লাঞ্চ টাইমে বাসায় চলে আসে। সবাই মিলো দুপুর একসাথে খেতে বসে। নিপা সবুজের মৃত্যু ঘটনা বলতে গেলে নিয়ান কথা ঘুরিয়ে ফেলে। এতে নিপা রাগে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে।

শ্রেয়ানদের বিল্ডিংয়ের সবাইকে পুলিশ আলাদা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু পায়নি। শ্রেয়ান সন্ধ্যার পর এসেছে এফএম রেডিও অফিসে। বিকেলে ওর প্রোগ্রাম ছিল। কিন্তু পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগের সময়টা ক্যানসেল করে, সন্ধ্যার পর করা হয়েছে। এখন রাত আট”টা থেকে দশটা অবধি ওর এখানে থাকতে হবে। ও এখন হাজার হাজার মানুষকে বিনোদন দেওয়ার সর্বচ্চো চেষ্টা করবে। অনু্ষ্ঠানটা শুরু করার সাথে সাথে অনেক গুলো মেসেজ এসে জমা হলো। বেশির ভাগ ম্যাসেজ শ্রেয়ানের বিকেলের শো টা ক্যানসেল করার ব্যাপারে৷ সবাই বেশ ক্ষেপে আছে। কারণ অনেকে আছে যারা শ্রেয়ানের অন্ধ ভক্ত। শ্রেয়ান মিষ্টি হেসে তাদের বললো,
–“হ্যালো আপু এবং ভাইয়ারা! আমি শ্রেয়ান শাহরিয়ার আর আমার সাথে রাতুল রায়হান। আমরা আবারও চলে এলাম তোমাদের সাথে আড্ডা দিতে। তারপর বলো, তোমরা কেমন আছো? কোথায় আছো? কে কোথায় থেকে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছো? তার আগে বলি আমি কিন্তু এখন বিন্দাস মুডে আছি। তোমরাও মেসেজ করে জানিয়ে দাও তোমরা কে কেমন মুডে আছো। তোমরা খারাপ মুডে থাকলেও মেসেজ করে জানিয়ে দাও। আমি শ্রেয়ান শাহরিয়ার আছি তোমাদের সঙ্গে এত এত আড্ডার মাধ্যমে তোমাদের মুড ঠিক করতে।”

শ্রেয়ান ওর মতো করে নিদির্ষ্ট সময় অনুযায়ী ওর
প্রোগ্রামটি চালিয়ে যেতে থাকলো। আর. জে , কথাবন্ধু অথবা রেডিও জকি আধুনিক সময়ে একটি জনপ্রিয় ও আকষর্ণীয় একটা পেশা। একজন মানুষ তার সুমধুর কন্ঠে মুগ্ধ করছে হাজার হাজার শ্রোতাদের। তাকে না দেখে, না জেনেও মানুষ বন্ধুর মতো তাকে মেসেজ করছে। প্রকাশ করছে তার কাছে নিজের মনের ভাব। ভালো-মন্দ, মনের হাজারও কথা তাদের শেয়ার করছে। এই পেশাতে যারা নিয়োজিত তাদের হতে হবে স্পষ্টভাষী। তাদের বচন ভঙ্গিতে থাকতে হবে আকষর্ণীয়তা। কারণ শুদ্ধ বাংলাতে কথা বলা একজন আর. জের শ্রেষ্ঠ গুন। সাথে থাকতে হবে শুদ্ধ উচ্চারণ, কথা বলার ভঙ্গি, কন্ঠের স্বর, হাসি খুশি মনোভাব। যাতে আমজনতা একজন আর. জের কন্ঠ আর কথা বলার ভঙ্গি মিশুক ভাব দেখে তাদের কথা শুনতে আগ্রহী হয়। এবং একজন সাধারণ মানুষ যেন খুব সহজে তাদের কাছে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারে।
রাহীদের কলেজের এক ছাত্রী ওকে মারাত্মক ভাবে বিরক্ত করছে। রাহীদকে বাজে ভাবে চিঠি লিখা, কল করা, মেসেজ করা, হুটহাট করে ওর অফিসে চলে আসা, নোংরা ইঙ্গিত করা, কয়েকদিন ধরে এমনটা চলছে। রাহীদ এই ব্যাপারটাকে পাঁচ কান করে নিজের সন্মান ক্ষয়াতে চাচ্ছে না। এজন্য মেয়েটার সাথে সরাসরি কথা বলে মিটমাট করতে চেয়েছে। কিন্তু সে মেয়েটা অতিরিক্ত অসভ্য টাইপের। সে রাহীদের কোন কথায় শুনে নি। একপ্রকার বিরক্ত হয়েই
রাহীদ মেয়েটার জোরাজুরিতে ক্যাফেতে দেখা করলো। মেয়েটির নাম দিপা। সে দেখতে মন্দ না হলেও, তার চরিত্রে ভালোর কোন ছিটেফোঁটা নেই। রাহীদ দিপার দিকে না তাকিয়ে শান্ত সুরে বললো,

–“দিপা তুমি আমার ছোট বোনের মত। প্লিজ এসব বন্ধ করো। কলেজে এসব কথা পাঁচ কান হলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে।”
–“বোন না আমি আপনার বউ হতে চাই রাহীদ সোনা। বলো কি করলে তুমি আমাকে মেনে নিবা? আমার শরীর পেলে কি তোমার মনটা আমাকে দিবা?”
–“মুখে লাগাম দাও। ভুলে যেও না আমি তোমার টিচার।”
রাহীদ রেগে উঠে দাঁড়ালো। কোন মেয়ের মুখে যে এত নোংরা কথা আসতে পারে। এটা রাহীদের কাছে অজানা ছিলো। দিপা ঠোঁট কামড়ে রাহীদের পায়ের উপর পা রাখলো। রাহীদ বুঝে গেছে এই মেয়ে অত্যন্ত অসভ্য। এজন্য রাহীদ দিপাকে আর কিছু না বলে চলে গেলো। দিপা শয়তানি হেসে বললো,

অদৃষ্টচর পর্ব ১

–“পুরুষ মানুষকে কাবু করার জন্য কোন নারীর নগ্ন শরীরটাই যথেষ্ট সোনা। যেটা যতই সাধু পুরুষই হোক। তুমিও রেডি থাকো রাহীদ ডালিং।”
কথাটা বলে দিপা হাসতে থাকলো। এমন নোংরা খেলা এটা ওর জন্য প্রথমবার নয়। ভদ্র কোন পুরুষকে এভাবে প্যাচে ফেলাটা ওর কাছে মজার একটা খেলা। সে খুব মজা পায় কোন পুরুষকে বড্ড বেশি মানসিক চাপে ফেলতে। সে বেঁছে বেঁছে ভদ্র ছেলেদেরকেই টার্গেট করে থাকে। প্রথমে কেউ রাজি না হলেও, পরে তাকে নোংরা ভাবে ফাঁদে ফেলতে দিপা দু’বার ভাবেনা। সে টাকার জন্যও এমনটা করেনা। কেন করে তাও জানেনা। তবে সে শুধু জানে ওর প্রচন্ড ভালো লাগে, মান সন্মান হারানোর ভয়ে ছেলেদের সুইসাইড করার খবরটা কান পেতে শুনতে। সে তখন অনাবিল আনন্দ পায়। প্রশান্তিতে ওর কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে যায়। একটা মেয়েকে টিজ করলে বা ধর্ষিত হলে কখনও না কখনও তার শাস্তি মিলে। কিন্তু এমন ভাবে একটা পুরুষ মানুষকে জঘন্য খেলার গুটি বানানোর শাস্তি কি আদৌও মিলে? লোকচক্ষুর অগোচরে কোন পুরুষকেও এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়, এটা কি কেউ জানে? দিপার মত মেয়েদের জন্য রাহীদের মত ছেলেদের নোংরা খেলার গুটি হয়। সর্বশেষে মান সন্মান হারানো ভয়ে অথবা নোংরা খেলায় জড়িয়ে পড়ার কারণে সুইসাইড নামক পন্থা বেছে নিতে হয়। আর সেটা
সেটা হোক সেই ছেলেটার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। এমন জঘন্য ঘটনাগুলো অহরহ ঘটলেও সেটা অপ্রকাশিত থেকে যায়।

–“মাম্মা মেয়েটার বুকের ঝাঁকুনি
আমার বুকে তো কাঁপুনি তুলে দিলো রে।”
সন্ধ্যার পর দুইটা মেয়ে ফিরছিলো। ওরা দুই বান্ধবী হয়তো। নিজেদের মধ্যে কি একটা কথাটা বলে দু’জনে হেসে উঠলো। তারপর একজন আরেক জনকে দৌড়ানি দিলো। বান্ধবীর মারের ভয়ে পাশের মেয়েটা দৌড়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। তখনই পাশের চায়ের দোকানের থাকা একটা ছেলে ক্যারাম বোর্ড থেকে হাত উঠিয়ে এই জঘন্য মন্তব্যটি করলো। একথা শুনে ওখানকার আরো চারজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আচানক ভাবে ওই চারটে ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দু’হাত দিয়ে পুরো মুখ ধরে ছটফট করতে থাকলো। কারো মুখে এসিড ঢেলে দিলে যেমন করে, ওরাও ঠিক তেমন ভাবেই ছটফট করে অার্তনাদ করে উঠছে। ওদের
আর্তচিৎকারে চারপাশে মানুষ জড়ো হয়ে গেল। কি হলো? কেন হলো? কে ওদের এই অবস্থা করলো? আর কেনই বা হলো? এটাও সবাই মাঝে একটা আতংক হয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে গেল।

অদৃষ্টচর পর্ব ৩