অদৃষ্টচর পর্ব ৫

অদৃষ্টচর পর্ব ৫
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রাহীদ দিপার মৃত্যুর কথা শুনে ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। রুপের কথা মত সব প্রমান সে রেডিও করেছে। আর সেগুলো জমা দেওয়ার আগেই, দিপাকে কেউ নিষ্ঠুর ভাবে খুন করলো। যে খুনটা করলো। সে কি রাহীদের মত অকারণে ফেঁসে ছিলো? নাকি দিপার কোন অজানা শত্রু? আচ্ছা এত জটিল লাগছে কেন ব্যাপারগুলো? ওই দিকে আটজন যুবকের প্রতিদিন একটা একটা করে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। পর পর সাতটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে ছেলে গুলোর শরীর বিন্দু মাত্র রক্ত থাকেনা। ধারালো ছুরিকাঘাত করে তাদের শরীর থেকে রক্ত বের করা নেওয়া হয়। চোখ আর কিডনিও থাকেনা। তাহলে কি কেউ কিডনি, চোখ নেওয়ার জন্যই খুন করছে? নাকি এমন ভয়াবহ খুনের পেছনেও জটিল কোন রহস্য লুকিয়ে আছে? আর এই ব্যাপারগুলো সোশাল মিডিয়া গুলোতে খুন আর রহস্য নিয়ে তর্ক, যুক্তি, হাজারও কথা ছড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ বা মিথ্যা কিছু এড করেও নতুন খবরের আমদানি করছে। এমন মৃত্যু নিয়ে সবাই খুব আতংকে আছে। কখন কার সাথে কি ঘটেছে তা তো বলা যাচ্ছে না। প্রথমে দোষীদের মারা হচ্ছিলো। কিন্তু এই সাতজন যুবক তো কিছু করেনি। তাহলে কে মারলো তাদের? কেন মারছে? এদের মেরে তারই বা কি লাভ?

ভয় আর আতংকের মাঝে কেটে গেল আরো দুটো সপ্তাহ। দিপা মৃত্যু নিয়ে রাহীদ সহ কলেজের অনেকের সাথেই পুলিশ আলাদা ভাবে কথা বলেছে। কিন্তু কেউ খুনীর কোন ক্লু খুঁজে পায়নি। রুপ রাহীদের বাসায় দুইদিন থেকে ওর বাসায় চলে গেছে। রাহীদ এবারও বলতে পারেনি। ওর মনে রুপের প্রতি সুপ্ত ভালবাসার কথাটা।
খুন আর রহস্য নিয়ে যত সময় যাচ্ছে। এই ব্যাপারগুলো আরো জটিল আকার ধারণ করছে। সবুজের মামার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। দুইটা মেয়েকে নোংরা কথা বলার জন্য, বখাটে ওই চারটা ছেলে অন্ধ হয়ে গেছে৷ ওদের এসিড না মারলেও এমন কিছু ওদের মুখে পড়েছিলো। যে ওরা অন্ধ হয়ে গেছে৷ তাদের অবস্থাও আরো করুণ। ওদের পুরো মুখের মাংস পঁচে খসে খসে পড়ছে। চোখে তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছে না, সাথে সারাটাক্ষন মুখে জ্বালাপোড়া করে, পুরো শরীর জ্বলে যায়। পানির জন্য আঁকুতি মিনতি করে। কিন্তু চোখে দেখতে পায়না। এজন্য পানি নিয়েও খেতে পারেনা। কেউ খাইয়ে দিলে তারপর তারা খায়। মারাত্মক কষ্ট নিয়ে ওদের দিন কাটছে। এদের মৃত্যুও মনে হয় অতি শ্রীঘই ওদেরকে আপন করে নিবে। কারন দিন দিন ওদের বেঁচে থাকার লড়াইটা ওদের জন্যই মারাত্মক কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। ব্যাথা, জ্বালা যন্ত্রণা, এসবে ওরাই চাচ্ছে এখন ওদের মৃত্যু হোক।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“পবিত্র গেট দিয়ে বের হচ্ছে ওই মেয়েটাকে চিনো?”
–“হুম। কেন?
–“ওই মেয়েটা সব খবর আমার চাই।”
–“দাদু বুড়ো বয়সে এসব কি ঠিক?”
–“আজকেই ওর খবর চাই। আর তুমি কখন ফিরবে?”
–“জানোই তো আমার ফেরার ঠিক নেই। প্রতিদিনের মত সময় হলেই ফিরবো।”
–“ওকে।”
পবিত্রের দাদু রুপ দেখে রুপের সব তথ্য জানতে চাইলো। কেন চাইলো? সেটা উনিই জানেন। তবে কোন কারণ ছাড়া ওর দাদু এই কথা বলার মানুষ না। হয়তো নাতির জন্য পছন্দ হয়েছে৷ পবিত্র ওর দাদুকে না ঘেঁটে ওর রুমে চলে গেল। পবিত্রের কাছে অন্য কারো ব্যাপারে হুট করে বাম হাত ঢুকানোটা, ওর কাছে বিরক্তিকর লাগে। সে সবসময় নিজের মর্জিমত কাজ করতে পছন্দ করে। তবে কেউ ভালো কাজের সাপোর্ট চাইলে সে অবশ্যই তার পাশে থাকে। আজকেই ওরা এই ফ্ল্যাটে উঠেছে। কারো সাথে তেমন কথা হয়নি। পাশের ফ্ল্যাটের দুইজন এসে নিজেরাই কথা বলে গেছে। এই ফ্র্যাটে
দিদা, দিদু আর পবিত্রই থাকবে।

শ্রেয়ান কাল রাতে বাইক নিয়ে আসছিলো তখন হঠাৎ পেছন থেকে কিছু ওকে ধাক্কা দেয়। চলন্ত বাইকে ধাক্কা দেওয়ার ফলে শ্রেয়ান ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে। কে ধাক্কা দিলো সে জানেনা। তবে খুব জোরে ধাক্কা দিয়েছে এজন্য ছিটকে পড়েছে। ওকে এমন ভাবে পড়তে দেখে। কয়েকজন দৌড়ে গিয়ে ওকে তুলে হসপিটালে যায়। শ্রেয়ানের আম্মু এই খবর পেয়ে হসপিটালে যায়। শ্রেয়ানের মাথায় আর আর পুরো শরীরে চোট পেয়েছে। শ্রেয়ান হসপিটালেই আছে। দুইদিন হসপিটালে থেকে একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে। ভাল ভাবে হাঁটতে না পারলেও সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে।

কালকে রাতে ঘুমের ঘোরে মনে হলো ওর কেউ গলা চেপে ধরেছে। কোন পুরুষের বলিষ্ঠ শক্ত হাত। কিন্তু সে মোটেও চোখ খুলতে পারছেনা। অনেক ধস্তাধস্তি করে শ্রেয়ান একপর্যায়ে সেন্স হারিয়ে ফেলে। পরেরদিন সকালে শ্রেয়ানের আম্মু এসে শ্রেয়ানের সেন্স ফেরায়। ওর গলাতে চেপে ধরার দাগ স্পষ্ট। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো শ্রেয়ানের হাতের মুঠোতে কোন মেয়ের চুল ছিলো। শ্রেয়ানের মনে আছে কোন পুরুষের সাথে রাতে ধস্তাধস্তি হয়েছিলো। কোন পুরুষ তার গলা শক্ত করে চেপে ধরেছিলো। কিন্তু ওর হাতে মেয়ের চুল আসলো কোথায় থেকে? ওর আম্মু বাদে বাসায় কোন মেয়ে নেই। তাহলে কেউ কি ওকে মারতে চেয়েছিলো? ওর জানামতে সে জেনে বুঝে কারো ক্ষতি করেনি। তাহলে কে মারতে চাইব ? শ্রেয়ান এই ব্যাপারটা কোন মতে ওর আম্মুর থেকে চেপে গেল। তবে মনে মধ্যে প্রশ্নের পাহাড় এসে জমা হয়েছে।
রুপ আজকে কলেজে গেছে। মিমি রুপের সাথে বসে গল্প করছে। এখনো ক্লাস শুরু হতে ২০ মিঃ বাকি আছে। মিমি রুপে যা যা জিজ্ঞাসা করছে। রুপ সেই সবেরই আনসার করছে। মিমি ফট করে বলে উঠলো,

–“রুপ একটা ছেলে খুঁজে দে না।আর কতদিন সিঙ্গেল থাকবো?”
–“আমি আবার এখন তোর জন্য ছেলে কই পাবো?”
–“তোদের পাড়ায় সুদর্শন কোন ছেলে থাকলে বল।তাকে পটানো দায়িত্ব আমার। সবার দেখে আমারও আজকাল খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে।”
–“তুই তো মায়াবতী। তোকে আবার ছেলে খুঁজে দিতে হবে? তবে আর.জে শ্রেয়ানকে পটাতে পারিস। সে সবদিক দিয়েই পারফেক্ট।”
–“রুপ আমার গায়ের রং শ্যামবর্ণ বলে কি মায়াবতী বলে আমাকে উপহাস করলি?”
মিমির কথা শুনে রুপ অবাক হয়ে মিমির দিকে তাকালো। মিমির গায়ের রং শ্যামবর্ণ হলেও মিমির চোখ দু’টো বড্ড মায়াবী। তাই রুপ এককথায় তাকে মায়াবতী বলে ডাকলো। কিন্তু মিমি তো ওকে ভুল বুঝলো। রুপ মিমির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
–“যে নিজেকে ছোট করে দেখে। তাকে অন্যরাও সন্মান করেনা। গায়ের রংয়ের দিয়ে কারো বিচার করা উচিত না। আমিও এইকাজ কখনোই করিনা।আর মায়াবতী কাকে বলে জানিস? যে মায়াতে ঘেরা থাকে তাকেই মায়াবতী বলে। আর তোকে কে বললো গায়ের রং ফর্সা হলেই সে সুন্দরী হয়? মিমি আমি তোকে এই কথাটা হার্ট করার জন্য বলিনি।”

মিমি আর কথা বাড়ালো না। ওকে ওর গায়ের রং নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। অনেকেই আছে এজন্যই ওকে এড়িয়ে চলে। কয়েকটা ছেলের কাছেও সে অপমানিত হয়েছে। ভালো লাগলেও এজন্য সে প্রকাশ করতে পারেনি। মিমি যাকে খুব ভালবেসেছিলো। তাকেও ভয়ে কোনদিন বলতে পারেনি। এখন ওই ছেলেটা বিবাহিত।এখন সে ফুটেফুটে একটা বাচ্চা ছেলের জনক। মিমি অনেক ভেবে চিন্তে, সে গত দুই মাস ধরে সুন্দরী হওয়ার জন্য নিজের রুপচর্চা করা শুরু করেছে। এই রুপচর্চা করলে সুন্দরী হোক বা না হোক। তবুও সে এটাই চলমান করবে। এটা করলে ও মনে মনে খুব প্রশান্তি অনুভব করে। ও মনের দিক থেকে ভাবে, এটা করলে দিন দিন ওর গায়ের শ্যামবর্ণ রং থেকে দুধে আলতা গায়ের রং হবে। যার যেমন চিন্তা ভাবনা আর কি। রুপচর্চা করলে যেহেতু সে মনে প্রশান্তি পায়। এজন্য সে এটাই করবে। আর ওর কাছে মনের সুখের থেকে বড় কিছু নেই।

কেউ টাকার জন্য, কেউ সৌন্দর্যের জন্য, কেউ ভালবাসার জন্য, কেউ সুস্থতার জন্য, আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গায় থেকে এগুলোর জন্যই মরিয়া হয়ে উঠছি। তবে রুপ মিমিকে হার্ট করার জন্য কথা বলেনি। মিমি কিছু বললো না শুধু মৃদু হাসলো। ওদের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। এজন্য ওরা আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসে চলে গেলো।

পবিত্রের দাদু সবুজের মৃত্যুর ঘটনাটা পুরোটা শুনলো। সামনে একটা চায়ের দোকানে সে চা খেতে গিয়েছিলো। ওখান থেকেই শুনে এসেছে। ছেলের এমন ভয়ংকর মৃত্যু বাবা মায়ের কতই না কষ্ট হচ্ছে। পৃথিবীর সব’চেয়ে ভারী জিনিস হলো। বাবা হয়ে সন্তানের লাভ কাঁধে নেওয়া। না জানি সেই বাবা মা এখন কেমন আছে? এমনটা ভেবেই উনি সবুজের বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে গেলো। মানবতার খাতিকেই আর কি। সবুজের আম্মু উনাকে সালাম দিয়ে বসতে দিলো। উনিও বসলেন। সবুজের আম্মু উনাকে নাস্তা দিতে গেল। কিন্তু উনি বলে উঠলেন,
–“মা তুমি বসো। আমি কিছু খাবো না। আসলে কারো বাসায় কিছু খাওয়া আমার জন্য নিষিদ্ধ। আমি তোমার সাথে শুধু কথা বলতে এসেছি।”
উনার কথা শুনে সবুজের আম্মু অবাক হলেও কিছু বললো না। উনি সবুজের আম্মুর সাথে অনেক কথাই বললো। আর কথায় কথায় সবুজের মামার কথাটাও উনি বললেন। সবুজের মামার কথা শুনে পবিত্রের দাদু আসাদকে দেখতে চাইলেন। এই বিল্ডিংয়ের সাত তলাতে সবুজের মামা আছে। সবুজের আম্মু উনাকে ওখানেই নিয়ে গেলো। আসাদকে দেখে উনি পুরো রুমে চোখ বুলালো। পুরো রুম জুড়ে কয়লা দিয়ে একটা চিহ্ন আকা। আসাদের অবস্থা এখন ভালো না। সে বিছানাগত। উনি আসাদকে দেখে উনার বাসায় চলে গেল। তবে যাওয়ার আগে উনি পুরো রুমে আরেকটাবার চোখ বুলিয়ে নিলো। বিশেষ করে চিহ্নটার উপর। কেন জানি উনার কাছে অদ্ভুত লাগলো ব্যাপারটা।
ওই দিকে সাতজন যুবকের মধ্যে যে খুলনা জেলার। তাকে সর্বশেষ দেখা দেখে রুপের সাথে। রুপের কোচিংয়ের সামনের কফি শপটাতে। ওখানকার সি সি টিভিতে এই দৃশ্যটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওরা কিছু একটা নিয়ে তর্ক করছিলো। রুপ ছেলেটাকে একটা থাপ্পড়ও মেরেছিলো। আর ব্যাপারটা পুলিশের খুঁজে পাওয়ার সাথে সাথে, কেউ একজন খবরটা ভাইরাল করে দিয়েছে। সম্ভবত এই কাজটা করে সেই কফি শপের ওয়েটা। নিজেকে ভাইরাল করার জন্য।

আর ভিডিওটা কয়েক মিনিটে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে৷ রুপের আম্মু আব্বু এসব দেখে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে৷ রাহীদ খবরটা দেখার সাথে সাথে রুপের বাসায় এসে হাজির। তবে রুপ এই ব্যাপারে এখন মুখ খুলেনি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুপকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেছে। দুই ঘন্টা হলো রাহীদ নিজেও পুলিশ স্টেশনে এসেছে। কিন্তু তাকে রুপের সাথে দেখা করতে দেয়নি। তবে রুপ এখনও স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে। যেন সে কিছুই করেনি। ওর কাছে মতি গতি দেখে মনে হচ্ছে ওর কাছে এই ব্যাপারটা দুধভাত।
তবে অবাক করা ব্যাপার হলো। আটজন যুবকের মধ্য একজন কিডন্যাপের হাত থেকে পালিয়ে এসেছে। সে মারাত্মক ভয়ে জুবুথুবু হয়ে আছে৷ তার বাড়ির লোক পুলিশকে জানিয়েছে। তাৎক্ষনিক পুলিশ এসে। ওই ছেলেটাকে সব রকমের প্রোট্রেকশন দেওয়া চেষ্টা করছে। ছেলেটার শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। থরথর করে কাঁপছে সে। একজন পুলিশ ছেলেটাকে অভয় দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–“কে তোমাদের কিডন্যাপ করেছে। তুমি কি তাকে চিনো?
–“মে মে মেয়ে। এ একটা মেয়ে।”

এই কথা বলে ছেলেটা সেন্স হারিয়ে ফেলে৷ একটা মেয়ে তাদের কিডন্যাপ করেছিলো। তাহলে কি রুপ আছে এর পেছনে? সে কেনই বা এমনটা করবে? পুলিশের কাছে থাকা দুইটা প্রমানই রুপকে ইঙ্গিত করছে। রুপই বা কেন মুখ খুলছেনা? সে নির্দোষ হলে তো, সে নিজেকে প্রমান করার চেষ্টা চালাবে। কিন্তু সে চুপ করে আছে। নাকি ধরা পড়ে যাওয়াতে সে সবটা মেনে নিয়েছে। আর এজন্যই চুপ করে আছে। চারদিকে এই খবরটা ছড়িয়ে পড়েছে। রুপের কঠিন শাস্তি দেওয়ার জন্য মানব বন্ধণ করা হচ্ছে। রাহীদের বাসার সবার আর রুপের আব্বু আম্মুর মাথা কাজ করছেনা। রুপ কিভাবে এমনটা করতে পারে?
তিন ঘন্টা পর ছেলেটার সেন্স ফিরে। আর সে জানাই যে ওদের কিডন্যাপ করিয়েছে। সে একটা মেয়ে। একসাথে আটজনকে সেই মেয়েটাই কিডন্যাপ করেছে। প্রতিটা জেলায় ওর লোক ছড়ানো আছে। চাকরি দেওয়া নাম করে, সে যুবকদের কিডন্যাপ করায়। আগের সাতজনকে কিডন্যাপ করে জবাই করা হয়েছে। তাও এই ছেলেটার চোখের সামনেই। কালকে সে একা ছিলো। তাই আরেকজনকে কিডন্যাপ করতে ওরা বেরিয়ে গেছে৷ জোড়া জোড়া ছাগল জবাই করার মত ওই মেয়েটা ২০/২৪ বছরের যুবককে জবাই করার পারমিশন দেয়। অবশ্যই সেই সব যুবকদের সুদর্শন হতে হবে। কারন ওই মেয়েটা সুদর্শন যুবকের রক্তে নাকি আলাদা মজা পায়। সেই রক্তের গন্ধ নাকি তাকে মাতোয়ারা করে তোলে।

অদৃষ্টচর পর্ব ৪

এই ছেলেটা ওখানকার একজনের পা ধরে, তার মায়ের কসম দিয়ে জানে বেঁচে ফিরেছে। ওইখানে নাকি প্রতিদিন দুইজন ছেলেকে জবাই করা হয়। ছেলে দুইটার শরীরে রক্ত নিয়ে ওই মেয়েটা গোসল করে। আর আমাদের মানবদেহে শতকরা ৭ ভাগ রক্ত থাকে (গড়ে মানবদেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে)। সব রক্তগুলো একটা বড় বাথটাবে রেখে, সে উৎফুল্ল হয়ে গোসল করে। ওই মেয়েটা নগ্ন হয়ে গোসল করে কিডন্যাপ করা যুবকদের সামনে। তখন সব যুবকরাই ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। তখন যুবকদের ভয়ার্ত মুখ দেখে মেয়েটার হাসির শব্দে পুরো বাসাটাও যেন আঁতকে উঠে। ওই মেয়েটার সাথে দুইটা ডাক্তারও আছে। ছেলে দুইটাকে জবাই করা হয়ে গেলে। তারা কিডনি আর চোখ আরো প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে নেয়। আর মেয়েটা শুধু রক্ত গুলো নেয়।

ছেলেটার মুখে এসব শুনে পুলিশের কলিজাও যেন শুকিয়ে গেছে। এই মেয়ে এতটা ভয়ংকর কি ভাবে হতে পারে? রুপ নামের মেয়েটা এমন? ওর রুপের সৌন্দর্যে পেছনেও এত ভয়ংকর আরেকটা রুপ লুকিয়ে আছে। এমন ভয়ংকর চিন্তা ধারা সে কিভাবেই বা করতে পারে? এতটুকু বয়সে এমন ভয়ংকর কাজ কারবার? আর যুবকের রক্তে গোসল করে বলে কি সে এতটন সৌন্দর্যের অধিকারী? এই পুলিশটাও রুপ দেখে উনারও চোখ আঁটকে গিয়েছিলো রুপের প্রতি। মানতেই হবে মেয়েটার যেমন বুদ্ধি তেমনই সাহস।

অদৃষ্টচর পর্ব ৬