অনুভবে তুই পর্ব ২১

অনুভবে তুই পর্ব ২১
লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া

আদ্রিশ স্মিত হেসে বলে ওঠলো, ‘আমারও কোনো সংশয় নেই। কিন্তু ছোটচাচীর বোনের মেয়েটার সংশয় আছে। জানোই তো, অহেতুক বিষয়ে সন্দেহ করে সে আমাকে কতটা অবিশ্বাস করেছে! সম্পর্ক হয় তখনই, যখন দুজন দু’জনকে বিশ্বাস করে, ভরসা করে। কিন্তু রোজার মধ্যে তার ছিঁটেফোঁটাও দেখি নি আমি। আসলে ও কোনোদিনই বুঝতে চায়নি আমাকে। তাছাড়া আমাদের মধ্যে যতটুকু সম্পর্ক ছিলো, তা অনেকদিন আগেই চুকেবুকে গেছে। তাই আমি চাই, এ ব্যাপারটা নিয়ে তোমরা আর মাথা ঘামিও না। সবচেয়ে বড় কথা কী জানো? রোজা আমাকে ভালোবাসে না।’

একথা শুনে উৎস কিছু একটা বুঝাতে চাইলো আদ্রিশকে। কিন্তু সে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলো ব্যাপারটা যেন এখানেই শেষ হয়। আর কোনো কথা উঠুক বা বাড়াবাড়ি হোক তা ও চায় না। সবার উদ্দেশ্যে এই কথাটা ব্যক্ত করে ড্রইংরুম থেকে প্রস্থান করে আদ্রিশ। উৎস ওর যাওয়ার পানে নির্বাক চেয়ে থাকে। ভাইয়ের চাপা অভিমানটা বেশ ভালোভাবেই টের পায় সে। নেহা-ফিহা-ইশাকে ব্যাপারটা জানায় ও। সবারই মনক্ষুন্ন হয়৷ চারজন বসে শলাপরামর্শ করে। ঠিক করে নেহার বিয়েকে উপলক্ষ্য করে জোরজবরদস্তি করেই হোক, রোজাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। বাড়ির কারোরই যখন ওদের সম্পর্কে আপত্তি নেই, একটা সুযোগ নিয়ে দেখাই যাক না রোজা-আদ্রিশের বন্ধনটা হয় কি-না!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

উৎসের কাছ থেকে পুরো সত্যিটা জেনে রোজার নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয়। বিমর্ষচিত্তে তাকিয়ে থাকে সুদূর আকাশে। লোকটার কাছে ওকে মাফ চাইতে হবে। কিন্তু কোনমুখে সে ক্ষমাটুকু চাইবে? আদ্রিশ তো ওকে তাঁর সামনে যেতেই বারণ করে দিয়েছে। তাহলে? কি করবে ও? একটা ফোন করবে? কিন্তু লোকটা যদি ওর সঙ্গে কথা বলতে না চায়? যদি রেগে গিয়ে উলটাপালটা কিছু বলে ফেলে? অবশ্য রোজা ওকে যেভাবে কথা শুনিয়েছে তার বিনিময়ে এসবই প্রাপ্য। কিন্তু আদ্রিশের সেলফোন নাম্বারটি ওর ফোনে আছে কি-না সেটাও ঠিক খেয়াল নেই রোজার। কিন্তু লোকটার সাথে একটিবার কথা বলতে না পারলে আত্মগ্লানিতে দম বন্ধ হয়ে রোজা মরেই যাবে।

পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম সূর্যের প্রায় ডুবি ডুবি অবস্থা। আবছা অন্ধকার নেমে এসেছে ততক্ষণে। হাওয়া উত্তাল। পাখিরা ক্লান্ত ভঙ্গিতে ফিরে যাচ্ছে নীড়ে। পরিবেশ নিরব-নির্জন। ছাদের রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা রোজার হাতে সেলফোন। আঁতিপাঁতি করে খুঁজে অনেক নিচে সে আদ্রিশের ফোন নম্বরটি যোগাড় করতে পেরেছে। ঘন্টাখানিক ধরে রোজা ভেবেই যাচ্ছে লোকটাকে সে ফোন করবে কি-না! বা, ফোন করে বলবেই বা কী?

ভাবনার জগতে পদাপর্ণ শেষ করে ইতস্তত করতে করতে ভীষণ সাহস নিয়ে একসময় সে ডায়াল করলো আদ্রিশের ফোনে। যতবার রিং হচ্ছে ততবারই ওর হৃদযন্ত্রের গতি বাড়ছে। অফিস থেকে ফিরে কফির মগ নিয়ে একাকীত্ববোধ ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতে ব্যলকনিতে পায়চারি করছিলো আদ্রিশ। ঠিক তখনি পকেটে বেজে ওঠে ফোনটা। স্ক্রিনে ‘রোজানু’ নামটি ভাসতে দেখে কপালে তিনটি ভাঁজ ফেলে তাকায়। ফোনটি ধরবেনা বলেও নিজেকে আটকাতে পারলো না। রোজানুর গলার স্বরটি একবার শ্রবণেও ওর পিপাসার্ত হৃদয়টি শীতল হয়। সেই লোভ সামলাতে না পেরে ফোনের সবুজ সাইনটিতে চেপে ধরে সে। ভরাট গলায় বলে ওঠে,

‘কোনো প্রয়োজন?’
প্রায় সপ্তাহখানিক পর কাঙ্খিত কন্ঠস্বরটি শুনতে পেয়ে কেন জানেনা রোজার শরীর অজান্তেই কেঁপে ওঠলো।শীতল বাতাস এসে ওর গা ছুঁয়ে গেল। কাঁপতে থাকা গলা দিয়ে কোনোমতে বলে, ‘আ আমি রোজা।’
ওপাশ থেকে তাচ্ছিল্যের সুরে আদ্রিশ বলে, ‘সে-তো বুঝতেই পেরেছি। কোনো প্রয়োজন আছে? নাকি ভুল করে ডায়াল করে ফেলেছেন?’

রোজা অবনত কন্ঠে বলল, ‘ভুল করে না। আমি আপনার কাছেই ফোন করেছি।’
আদ্রিশের রাগী গলা, ‘কেন? আবার কোন দোষে দন্ডিত হলাম?’
রোজা মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘আমাকে আপনি ভুল বুঝছেন।’
‘সিরিয়াসলি?’
‘জি। আমি আসলে আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম..’
আদ্রিশ রুক্ষ স্বরে বলল, ‘তো?’

স্বর নামিয়ে অসহায় কন্ঠে রোজা বলে, ‘ক্ষমা প্রার্থনা করছি আপনার কাছে। প্লিজ আমার ওপর রেগে থাকবেন না। আপনার ফুপি যেভাবে আমার সঙ্গে ব্যবহার করেছিল, আমি হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে ঠিক-ভুল যাচাই করিনি যে আসলেই আপনি ওই কাজটা করেছেন কিনা!’
আদ্রিশ চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘ঠিক-ভুল যাচাই করার সময় ছিলো তখন যখন করেননি, সো এখন করে কোনো লাভ নেই। আপনি বরাবরই এরকম ছিলেন, আর থেকে যান৷ আমার কিছু যায়-আসে না।’
রোজা বিষন্ন কন্ঠে বলল, ‘আপনি আমার ওপর রেগে আছেন তাই এরকম কথা বলছেন। দয়া করে আমার পরিস্থিতিটাও বিচার করে দেখুন।’

আদ্রিশ বলে, ‘মিস. রোজা। আমি কারো ওপর রেগে নেই। পরিচিত মানুষদের ওপর রেগে থাকা যায়, কিন্তু আপনি তা নন। আশা করি আরকিছু বলার নেই আপনার।’
আদ্রিশের কন্ঠস্বর, কথা বলার ভঙ্গিমা সবই অন্যরকম, অচেনা মনে হচ্ছিলো রোজার। অনেকটা অবাক হয়েই সে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি বয়সে আপনার ছোট। ‘আপনি’ সম্বোধন করছেন কেন?’

আদ্রিশ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, ‘কাছের মানুষদেরই ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করা যায়। দূরের মানুষদের ‘আপনি’ সম্বোধনই মানায়। আপনি আমার অনেক দূরে চলে গেছেন রোজানু, অনেক! চাইলেও আর হৃদয়েশ্বরী হওয়ার জায়গাটুকুর দখল নিতে পারবেন না, হৃদয়ের খুব কাছে আসতে পারবেন না, সেই যোগ্যতা এবং অধিকার দুটোই হারিয়েছেন আপনি।’
বলেই ফোন কেটে দেয়। রোজা কিছু বলার সুযোগই পায় না। আদ্রিশের শেষ কথাগুলো কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই কখন যে ওর গালদুটো নোনাজলে সিক্ত হয়ে গেছে টেরই পায়নি সে। একজন মানুষের হৃদয়েশ্বরী হয়ে থাকার এতো লোভ যে ওর সুপ্ত মনের কোণে লুকিয়ে ছিল, আজই কেন সেটা বুঝতে পারলো? সবকিছুতেই ওর এত দেরি হয়ে যায় কেন?

মিনার খান হরষপুর গ্রামের একজন গণমান্য ব্যক্তি। বাজারে তাঁর পাঁচটি দোকানসহ মাছ ও সবজির ব্যবসা আছে। বেশ অবস্থাপন্ন পরিবার তাঁর। একমাত্র ছেলে রাফি। একটি মাত্র ছেলে বলে খুব আদর দিয়ে বড় করেছেন ওকে। আহ্লাদে বড় করেছে বলে ছেলে যা করতে চায় তাকে সেটাই করতে দিতেন মিনার সাহেব। ছেলে কি করছে না করছে কিছুতেই তাদের নজর নেই, খারাপ কাজে অংশ নিলেও ছেলেকে শাসনের বাইরে রাখতেন। বাবার আস্কারায় এবং খারাপ ছেলেদের পাল্লায় পড়ে বিগড়ে গেছে রাফি। পড়াশোনা সেই কবেই ছেড়েছে।

সারাদিন টইটই করে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ায় দলবল নিয়ে। ছোটখাটো একটা গ্যাং-ও আছে ওর। গ্রামের মানুষ ওর গ্যাংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের কটুক্তি করা আর চাঁদাবাজি করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই ওর। ছেলের এমন দশা দেখে মিনার সাহেবের হুঁশ ফেরে ; ওকে শক্ত হাতে শাসন করতে চায়। কিন্তু ততদিনে রাফি পুরোপুরি তাঁর হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সঠিক সময়ে শাসন না করায় যে রাফির এই অধঃপতন এটা তারা এখন বুঝতে পারে।

কিন্তু এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ওদের। হরষপুর গ্রামে বোধহয় এমন কোনো মেয়ে বাদ নেই যে ওর ইভটিজিংয়ের শিকার হয়নি। অনেকদিন ধরেই রোজার পিছনে পড়ে আছে রাফি। রোজার চেয়ে দুই বছরের বড়। এমনকি মা-বাবাকে বলেছে রোজাকে ওর বউ করে এনে দিলে ও ভালো হয়ে যাবে। সেজন্য ওর বাবা মিনার খান রোজার সাথে নিজের ছেলের বিবাহের প্রস্তাবও পাঠান ওদের বাড়িতে। কিন্তু রাফির চরিত্র ভালো নয় বলে রোজার পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এতে রাফি অপমানিত বোধ করে। সেই থেকে আরও বেড়ে গিয়েছিল রাফির অত্যাচার। ওর যন্ত্রণায় একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়েই আজিজুর রহমান মেয়েকে শহরে পাঠিয়েছিলেন। রোজা শহরে পড়াশোনা করতে গিয়েছে শুনে রাফি তখন খুব ক্ষেপে গিয়েছিল; কিন্তু তৎক্ষনাৎ কিছু করতে পারে নি। অনেকদিন পর রোজা গ্রামে ফিরেছে বলে ভর দুপুরে নিজের দলবল নিয়ে সোজা চলে আসে রোজাদের বাড়ির পেছনের জঙ্গলে। সেদিকে অনেকদিনের পুরোনো ভাঙ্গা সিঁড়ি আছে, যেটা দিয়ে উপরে উঠা যায় এবং সিঁড়িটা একদম রোজার ঘরের জানালা বরাবর।

রোজা তখন সদ্য গোসল সেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিলো। জানালার ধার থেকে বিশ্রি শিসের আওয়াজ শুনে ভ্রু কুঁচকে পেছন দিকে তাকায়। জানালার কাছে রাফিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আৎকে ওঠে। পরক্ষণেই বুঝতে পারে ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে জানালা বরাবর উঠে এসেছে সে। রোজার চেহারা কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। ভাগ্যিস জানালার গ্রিল আছে, নয়তো এই ছেলে এতক্ষণে ভেতরে চলে আসতো। রোজাকে তাকাতে দেখেই রাফি বিশ্রি নজর বুলায়। সিঁড়ির নিচে অপেক্ষায় থাকা বাকি তিনটে ছেলেকে বলে, ‘ওই দেখ তোগো ভাবি আইছে। কইছিলাম না আমার ডাক শুনলেই সে ছুইট্টা আইবো?’

ছেলে তিনটে বলল, ‘ঠিক কইছো রাফিভাই।’
রোজা বিরাগপূর্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে ঘর থেকে বেরুতে নিলেই রাফি জোরালো গলায় ডেকে ওঠে। রোজা হতভম্ব হয়ে যায়। বাড়ির কেউ শুনলে কি ভাববে? রাফি বাঁকা হেসে বলে, ‘পলাই যাও কেন সুন্দরী? তুমি তো ঘরে একা। হবু শ্বশুরমশাই বাড়িতে নাই বইলাই তো তোমার সাথে গল্প করতে আসলাম।’

রোজা নিজের রাগ সামলে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, ‘আপনার মতো অসভ্য ছেলের সাথে গল্প করার ইচ্ছে নেই আমার। দয়া করে এখান থেকে চলে যান। নয়তো বড় কাকাকে ডাকতে বাধ্য হবো আমি।’
‘তোমার কাকা তো নাই। সে-তো বাজারে গেছে চা খাইতে। দেখি এদিকে আসো।’
রোজা হতচকিত হয়ে বলল, ‘মানে? ওখানে আসব কেন?’
‘তোমার সঙ্গে বইসা দুইটা রসের আলাপ করতে ইচ্ছা করলো। এইজন্যই তো ছুটে আসলাম। শহরের হাওয়া গায়ে লাগাইয়া ভালোই সুরত ধরেছ।’

রোজা বিক্ষিপ্ত হয়ে বলল, ‘আমি আপনার সাথে গল্প করতে ইচ্ছুক নই। এবার আসতে পারেন।’
‘কিন্তু আমি তো যাব না।’
‘মানে?’
‘আগে এদিকে আসো, তারপর বাকিসব কথা হবে।’
রোজা ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কীসের কথা?’

‘তোমাকে বিয়ে করতে হলে কি আগে তোমার বাবাকে প্রস্তাব দিতে হবে? কিন্তু ওই বুড়োকে দিয়ে লাভ কি? সে বলে আমার চরিত্রখানা ভালো না৷ কও তো আমি করছি কী? যাকগে, বাদ দেও। তুমি আমি কবুল বলে নিলেই তো বিয়ে শুদ্ধ!’
রোজা ওর লাগামহীন কথা শুনে বেশ চটে যায়। কপালে ভাঁজ ফেলে জোরালো কন্ঠে বলে, ‘আপনি শুধু শুধু আমার পেছনে পড়ে আছেন। দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। আপনার মতো গুন্ডা, ইভটিজারকে কখনোই বিয়ে করবো না আমি।’
রাফির চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হবে৷ রেগে জানালার একটা কপাটে ঘুষি মারে। রোজা ভয়ে কেঁপে ওঠলেও সেটা প্রকাশ করে না। বলে, ‘এসব ছাড়া আপনার দ্বারা আরকিছুই হবে না। অকর্মা লোক, বসে বসে বাবার অন্ন ধ্বংস করছেন আর গ্রামের লোকদের যন্ত্রণার কারণ হচ্ছেন।’

‘বেশি কথা ফুটেছে তাই-না? সুন্দরী বলে অহংকার দেখাও? এই রুপটা না থাকলে কি করবা?’
রোজা অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখেই বলল, ‘আপনার ভাবতে হবে না! আসতে পারেন এবার।’
রাফি নাছোড়বান্দা। কিছুতেই এখান থেকে যাবেনা বলে যেন পণ করেছে। জানালার কপাটে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে থাকে। এ অবস্থায় রোজা ভয়ে, জমে কাঠ হয়ে যায়। কি করবে বুঝে ওঠতে পারে না। হঠাৎই রোজার মায়ের গলা ভেসে আসে। তার কন্ঠস্বর শুনে কোনোরকমে রোজাকে একটা হুমকি দিয়ে রাফি আর ওর সাথের ছেলেগুলো পড়িমরি করে সিঁড়ি থেকে নেমে যায়, যেন ওদেরকে কেউ দেখতে না পায়।

তাহলে গ্রামে আবার পঞ্চায়েত বসবে, শাস্তি পেতে হবে। ব্যাপারটা যেন কোনোভাবেই বাবা মিনার খানের কানে না পৌঁছে তার জন্যই রাফি ওখান থেকে পালিয়ে যায়। ওকে চলে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রোজা! তখনি মনে পড়ে আদ্রিশের কথা। লোকটা ওর প্রতি অধিকারবোধ দেখাতো, কিন্তু কোনোদিনই কুরুচিপূর্ণ কোনো কথা বলেনি বা ইঙ্গিত দেয়নি। রোজা জানালাটা বন্ধ করে দেয়। সুলতানা সেই কখন থেকেই ডেকে যাচ্ছেন খাওয়ার জন্য। ভেজা চুলটা দ্রুত শুকিয়ে নিচতলায় নামে রোজা। বড় চাচা আনিসুর রহমান আর আজিজুর রহমান সবেমাত্র ফিরেছে। হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে বসেছেন খাবার খেতে। বাড়ির গিন্নিরা পরিবেশন করছে সবকিছু। রোজা একটা চেয়ার টেনে মিলার পাশে বসে পড়ে। সবাই খাওয়া শুরু করে। খাওয়ার শেষপর্যায়ে রোজা যখন প্লেট ধুতে ওঠে যাচ্ছে তখনি ওর বড়চাচা গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘রাফি নাকি তোমাকে আবার বিরক্ত করেছে?’

রোজা বড় চাচার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল, ‘কে বলেছে আপনাকে চাচা?’
‘পাশের বাড়ির সুমনা। বাড়িতে ঢুকার পথে সে জানালো, রাফি নাকি আমাদের পুরোনো সিঁড়ি বেয়ে তোমার জানালায় দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করছিল? সুমনা স্কুল থেকে ফেরার সময় ও নাকি দেখেছে।’
রোজা জানে সত্যটা বললে অনেক ঝামেলা হবে। কিন্তু ও অস্বীকার করারও সুযোগ পায় না। বড়চাচা যখন জেনেই গেছে তখন সত্যটা বলে দেওয়া উচিৎ বলে মনে হলো ওর। গলার স্বর নিচু করে বলল, ‘জি চাচা।’

বলেই দ্রুত সেখান থেকে চলে আসে। আনিসুর রহমান ক্লেশবোধ করলেন। রাফির ঔদ্ধত্য দেখে তিনি রেগে যান। এতবড় সাহস হয় কি করে যে, তাঁরই বাড়িতে এসে লুকিয়েচুকিয়ে রোজাকে বিরক্ত করে? ভাতিজীকে তিনি খুবই স্নেহ করেন বলেই রোজার সব ব্যাপারে তিনি একটু বেশিই চিন্তা করেন। সেজন্য ছোটভাই আজিজুরকে ব্যগ্র গলায় বললেন, ‘রাফির বাপের সাথে দেখা হলে বলে দিস, তার ছেলেকে যেন সামলায়। আমাদের বাড়ির মেয়েকে ওদের বাড়িতে বউ করে পাঠাবো না। যদি বেশি জবরদস্তি করে তাহলে বলবি আমাদের রোজার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বুঝলি?’

অনুভবে তুই পর্ব ২০

রোজার বাবা আজিজুর রহমান চেয়ারম্যান হওয়া স্বত্ত্বেও বরাবরই বড় ভাইয়ের কথাকে গুরুত্ব দেন, মেনে চলেন। কিন্তু এবারে বেশ অবাক হলেন তিনি। খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘কিন্তু রোজার তো বিয়ে ঠিক হয় নি। ব্যাপারটা কেমন হয়ে যাবে না?’
‘আমি যেটা বলেছি সেটাই করবি।’
‘জি আচ্ছা।’

অনুভবে তুই পর্ব ২২