অনুভবে তুমি পর্ব ১০
লিজা মনি
আহানের গাড়ি এসে থামে ভয়ানক সেই টর্চারসেলের সামনে।
রায়ান বুঝতে পারে না টর্চার সেল ঠিক আছে তাই বলে এমন জঘন্য অবস্থা হতে হবে। দেখলেই কেমন ভুতুরে বাড়ি মনে হয়। আর চারদিকে গা গুলিয়ে আসা পচা গন্ধ 🤮।
রায়ান বিরবির করে বলে,
‘”ব্যাটা আসিসতো আসিস সাথে আমাকেও নিয়ে আসিস। ভাই ইউভি কই তুই। কি করে যে বলি এই বাড়িতে প্রবেশ করতে গিয়ে কতবার যে আমার রুহ ঠেলেঠুলে বের হয়ে চলে আসতে চেয়েছিলো তার কোনো হিসাব নেই।”
রায়ানের এইসব অহেতুক চিন্তার মাঝেই তারা গন্তব্যে পৌছে যায়। যেখানে একটা ছেলে চেয়ারে হাত পা অবস্থায় শুয়ে আছে। আহান এইখানে পৌছেতে মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটি ওর দিকে নিভু নিভু নেত্র মেলে তাকায়।
আহান দুই হাত বুকে গুজে রহস্যময় ভাবে হাসি দিয়ে বলে,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– welcome my step brother।
আহান এইভার কিছুটা চিন্তিত হওয়ার অভিনয় করে বলে,,,,, তুই আমার স্টেপ ব্রাদার। নো স্টেপ ব্রাদার ও নয় আসলে তুই আমার কিছু ওই হোস না। এখন তোকে কি করা উচিত বলতো?
বলেই ছেলেটার গায়ে সজোরে হস্টিক দিয়ে বাড়ি মারে।
ফলে ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
আহান মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটির হাত মাটিতে শক্ত করে চেপে ধরে একের পর এক আঘাত করতে থকে।
আহান রেগে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,, এই হাত দিয়ে তুই আমার জানের গায়ে হাত দিয়েছিস। এই হাত কিভাবে অক্ষত রাখি বলতো।আমার সামনে কেউ উচ্চস্বরে কথা বললেই তো তার জবান নিয়ে নেই সেখানে তুই আমার কলিজায় হাত বাড়িয়েছিস।
আহান নিজ হাতে একটা প্লায়ার্স নেয়।
রায়ান ভাবতে থাকে এইটা দিয়ে কি করবে। রায়ানের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে সামনে থাকে ছেলেটির গগনবিধায়ী চিৎকারে ।
আহান প্লায়ার্স দিয়ে এক এক করে হাতের নখ উগরে ফেলছে। এই হাত দিয়ে আমার কলিজায় হাত বাড়িয়েছিস তাই না বলেই এক কুপে হাত থেকে আংগুল আলাদা করে ফেলে। লোকটি এইবার সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে উঠে।
লোকটির চিৎকার শুনে সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে। সামনে মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটি অবাক হয়ে নিভু নভু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । এতদিন যে অগ্নি চৌধুরির সম্পর্কে শুনেছে আজ যেন সেটা নিজের চোখে দেখছে।কথায় আছে না বাপের উপরও বাপ থাকে। অগ্নি চৌধুরি যে কতটা ভয়ানক সেটা আজ বুঝতে পারছে।
আহান রেগে হুংকার দিয়ে বলে,,,,
– কি বলেছিলি কু*ত্তার বাচ্চা আজ এক রাতের জন্য ওকে নষ্ট করবি। you want to take honor. অগ্নি চৌধুরীর কলিজা ও। আর তুই সে কলিজায় হাত বাড়াতে চাইছিলি।
বলেই আহান আবারও হস্টিক দিয়ে মাথায় আঘাত করে। লোকটি আবার সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়।
রায়ান : আহান স্টপ । রায়হানের অবস্থা ভালো নয় মরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আহান : এইটুকু আঘাতে মরবে না ওকে আমি তিলে তিলে শেষ করব। অনেক দিনের হিসাব বাকি আছে। এখন না হয় একসাথে নিব।
আহান এইবার একটা ছেলেকে ডাক দিয়ে বলে,
– ওকে নিয়ে সেই অন্ধকার রুমে ফেলে দিয়ে আসো। না পাবে খাবার আর না পাবে আলো বাতাস। মৃত্যুর চেয়েও কঠিন যন্ত্রণায় তিলে তিলে শেষ হবে।
আহানের গাড়ি গিয়ে আজকে চৌধুরী ভিলার সামনে থামে। গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় রায়ান আহান কে বলে,,,,
– আহান সবই তো বুঝলাম। কিন্তু তুই কিভাবে জানতি রায়হান আজকে ইয়ানাকে রেপ করবে। নো, ইউ ডোন্ট নো 🤔।
আহান এইবার রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
– রায়হানের জন্ম থেকে প্রতিটা চাল আমার জানা। ওভাবে ও এই খেলার রাজা। কিন্তু ও আমার কাছে কিছুই নয়।
তোর মনে আছে আশিকের কথা।
রায়ান কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে,,,,
– হুম মনে আছে তুইতো ওকে কাজ থেকে বের করে দিলি।
আহান একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,
– ওকে কাজ থেকে বের করেনি। আমার গুপ্তচর হিসেবে পাঠিয়েছিলাম রায়হানের কাছে। আর ও হয়ে উঠেছিল রায়হানের বিশ্বস্ত এসিস্ট্যান্ট। প্রতিটা মিনিট প্রতিটা সেকেন্ডের আপডেট ও আমাকে দিত।
আর শুনেছি ইয়ানাকে অনেকদিন ধরে বিরক্ত করছে। কোনো এক মাধ্যমে জেনেছে আমি নাকি ইয়ানাকে ভালোবাসি। কি বোকা আমি নাকি কোনো মেয়েকে ভালোবাসবো🤣।আর আজ আশিক ওই আমাকে জানিয়েছে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ইয়ানাকে রেপ করবে 😠😠।
রায়ান : কিন্তু তুই রায়হান কে ধরলি কিভাবে?
আহান রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,, সত্যিই কি তুই গোয়েন্দা অফিসার।
রায়ান : দেখ ভাই হিয়ালি করিস না। রায়হানের চারপাশে অনেক গার্ড থাকে। তুই একা কিভাবে নিয়ে আসলি ওকে? আমাকে বা ইউভিকে ও সাথে করে নিয়ে জাস নি।
আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,
– রায়হানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো নারী। নারীর সঙ্গ পেলে ও সবকিছু ভুলে যায়। শুধু একটা মেয়েকে ভারা করেছিলাম। ড্রিংকসের মধ্যে নেশার ঔষুধ মিশানো ছিলো। মনে হয় না আর কিছু বোঝাতে হবে তোকে।
রায়ান অবাক হয়ে আহান এদিকে তাকিয়ে বলে,,,,,, আর বুঝাতে হবে না বুঝতে পারছি। এত বুদ্ধি নিয়ে তুই ঘুমাস কেমনে ভাই।
– কেনো তর উড়ুর উপর মাথা রেখে।
রায়ান আহানের কথা শুনে থমথমে খেয়ে যায়।
তারা দুজন বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে।
সমস্ত বাড়ি পিনপিন নিরবতা। কারন রাত খুব গভীর ছিলো।
আহান রায়ানের উদ্দেশ্যে বলে,,,,, ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড় আমি একটু বাহিরে যাব।
রায়ান অবাক হয় বলে,,,,,, এত রাতে তুই এখন কোথায় যাবি?
আহান : মহিলা মানুষদের মতো প্রশ্ন করেছিস কেনো? বউ হস তুই আমার । অনেক ক্লান্ত তুই ঘুমিয়ে পড় আমি আসছি।
আহানের কথা শুনে রায়ান তব্দা লেগে থাকে। লাস্ট পর্যন্ত নাকি বউয়ের সাথে তুলনা করলো। তবে রায়ান বুঝতে পেরেছে আহান কোথায় যাচ্ছে।
সুমাইয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায় ফোনের শব্দে। বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করে বলে,,,, হ্যালো কে বলছেন।
নো রেসপন্স…..
সুমু : কি হলো কথা বলছেন না কেনো।
নো রেসপন্স……….
সুমু : কি ভাই সমস্যা কি আমাকে এক সপ্তাহ ধরে জ্বালিয়ে মারছেন। ফোন রিসিভ করলে কথা বলেন না।যদি বোবা হয়ে থাকেন তাহলে ফোন দেন কেনো?রাতের বেলা মেয়েদের বিরক্ত করতে খুব ভালো লাগে তাই না।
ওই পাশ থেকে : কেমন আছো?
সুমু: কথা বলতে পারেন তাহলে। আমি কেমন আছি সেটা না জানলেও চলবে। ফোন রাখেন যত্তসব।
ওইপাশ থেকে : খবরদার যদি ফোন রেখেছো। তোমার বেডরুমে চলে আসবো কিন্তু।একটা ছেলে একটা মেয়ের এত রাতে বেডরুমে যাওয়াটা নিশ্চয়ই লোকে ভালোভাবে নিবে না। তাই বলছি চুপচাপ থাকো।
সুমু কিছুটা ঘাবরে যায় সাথে ভয় ও পায় । এতদিন যেই ছেলে ফোন দিয়ে কথা ওই বলতো না আজ সে এইভাবে কথা বলছে। সে কিছুটা ভয় পায় কারন সে বাসায় একা থাকে। যদি সত্যি ছেলেটা চলে আসে।
সুমু ভয়ে ভয়ে বলে কি বলবেন বলে ফেলেন।
ওইপাশ থেকে : এইতো গুড গার্ল। এখন শোনো তোমাদের কোচিং এর একটা ছেলে আছে না ওর থেকে দুরে থাকবে। মনে থাকবে।
সুমু অবাক হয়ে বলে,,,, কোন ছেলে?কার কথা বলছেন?
ওইপাশ থেকে : তোমাদের সিনিয়র সায়ন। যে তোমাকে লাভ লেটার দিয়েছিলো।
সুমু : আ….. আ.. পনি কিভাবে জেনেছেন?এইটা তো আমরা ছাড়া আর কেউ জানে না।
ওইপাশ থেকে : কিভাবে জেনেছি সেটা না জানলে ও চলবে। যা বলেছি তা যেনো মাথায় থাকে। এখন রাখি ঘুমাও। আল্লাহ হাফেজ।
সুমুর সব কিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো। কে বললো ছেলেটা। সুমু আর কোনো কিছু না ভেবে ঘুমের রাজ্যে পারি জমায়।
ইয়ানা মায়ের ডাকাডাকিতে আজ ঘুম থেকে উঠতে পারছে না। মাথাটা কেমন ধরে আছে। কোনোমতে ঠেলে ঠুলে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায়। হাতে পানির স্পর্শ পেতে পুরু হাত জলসে উঠে। ইয়ানা হাতের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আতকে উঠে।পুরো হাত ব্লেট দিয়ে কাটা ছেরা। কিন্তু ঘুমানোর আগে পর্যন্ত তো ঠিক ওই ছিলো। তাহলে রাতারাতি হাতের ওই হাল হলো কিভাবে। আর এমন একটা অবস্থা হয়েছে আমি টের ও পেলাম না। ইয়ানা মাথায় হাত রেখে বলে,,,,,, মাথা এইভাবে ভারি হয়ে আছে কেনো? আর কাল রাতে রুয়ানাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসে আমি সজাগ ছিলাম তাহলে ঘুমালাম কিভাবে? ইয়ানা আয়নার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রায়হানের টাচ করা জায়গায় কাটা।ইয়ানা আর কোনোকিছু না ভেবে রুমের ভিতর যায় গিয়ে দেখে টেবিলের উপর একটা চিরকুট রাখা।
“”” ছেলেদের ছোয়া পেতে খুব শখ তোর তাই না। সেইজন্য রাস্তায় ছেলে নিয়ে নোংরামি করিস😠। শুনে রাখ তর শরীরে শুধু আমার ছোয়া থাকবে অন্যকারো ছোয়া কেনো লাগাবি তুই?
যেখানে কেটেছে সেই জায়গায় মলম লাগিয়ে নাও। দেখো টেবিলের উপর মলম রাখা আছে। আমার কথার অবাধ্য হওয়া আমি পছন্দ করি না। লাস্ট বার বলছি ছেলেদের থেকে দুরে থাকবে। নয়তো আজ শুধু কোনো ছেলের ছোয়া জায়গার অস্তিত্ব মুছে দিয়েছে। পরের বার আমার কথার অবাধ্য হলে জান নিয়ে নিতে ও দুইবার ভাববো না।”””””
ইয়ানার এইবার দেয়ালে মাথা ঠুকিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম আজ ও আমি হেরে গেছি। ইস.. হাতটাকে কি করেছে। শয়তান এনাকন্ডা নিজে যখন এসে ধরিস তখন কে তোকে কি বলে। না বলে একটা মেয়ের রুমে লোকিয়ে আসা যাওয়া করছিস তখন কিছু হয় না। আর একটা ছেলে হাত ধরেছে বিধায় আমার হাতের নকশা বদলে দিয়েছে😭😭😭। ভাগ্যিস হাতের তালু কাটেনি নইতো আব্বু আম্মুকে কি বলতাম।
লাগাবো না আমি মলম হু।
ইয়ানার এইসব ভাবনার মাঝে ওর ফোনে একটি এসএমএস আসে,,,,
“” এত কিছু ভাবতে কে বলছে তোমাকে? ত্যারামি না করে যা বলছি তা করো বিয়াদব😠। এই মাত্র তোমার বোন প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে তুমি কি চাও তোমার বোনের কিছু হোক। তাই বলছি মলমটা লাগিয়ে নাও।””””
ইয়ানা মেসেজ পরে বুকের ভিতর অজানা ভয়ে ধুক করে উঠে।
ইয়ানা মেসেজ করার আগেই ওইখানে থেকে পুনারায় মেসেজ আসে,,,,, ভয় পেয়ো না কিছু করব না যদি বাধ্য মেয়ের মতো আমার কথাটা শুনে ফেলো।
ইয়ানা ও বাধ্য মেয়ের মতো মলমটা লাগিয়ে নেয়।
অনুভবে তুমি পর্ব ৯
সময় প্রবাহ মান যা নিজ গতিতে চলতে থাকে। এইভাবে কেটে যায় অনেক দিন। দিন দিন ইয়ানার প্রতি আহান ওরফে অগ্নি চৌধুরির টর্চার বেরেই চলছে। এইখানে যেও না ওই খানে যেও না। না মানলে পরিবার আর বন্ধুবান্ধবকে মেরে ফেলার হুমকি। আজ ও ইয়ানা তার সন্দেহ করা ব্যক্তিটিকে ধরতে পারলো না। ধরবে কিভাবে রাত হলে সে গভির ঘুমে তলিয়ে যায়। চলে যায় অন্য আরেক রাজ্য।