অনুভবে তুমি পর্ব ১৬
লিজা মনি
খুব শখ না আমার থেকে দুরে থাকার। ভালোভাবে বুঝালে কথা কানে যায় না। কি করবো আমি তোকে এত অবাধ্য কেনো হোস। এক কাজ করি মেরে ফেলি তাহলে সব সমস্যার সমাধান। আমার থেকে দুরে যাওয়ার ইচ্ছা পূরন করে দেয়। আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে শুট করে দেয়। ইয়ানা দুই হাত দিয়ে কান চেপে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। যখন নিজের শরিরে কোনো আঘাত অনুভব করতে পারলো না তখন আস্তে আস্তে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায়। দেখে বেলকনিতে রাখা বিশাল বড় ফুলের টবটা ভেংগে মাটিতে পারে আছে। তারমানে ওকে শুট করে নি ফুলের টবের দিকে শুট করেছে। এইটা ভেবে বুকে হাত রেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তারপর আহানের দিকে তাকায় দেখে সে কপালে বন্ধুক ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
আহান এইবার ইয়ানার দিকে তাকায়।
ইয়ানা আহানের তাকানো দেখে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,,
” কি ভেবেছিলেন মি, চৌধুরি ভয় পাবো। আপনার বন্ধুক থেকে ছোড়া গুলি দেখে বাকিদের মতো চিৎকার করে উঠবো। ইয়ানা এইসবে ভয় পায় না। খুব অল্প বয়সে সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে এসেছে। তাই মৃত্যু নিয়ে ভয় ওকে কাবু করতে পারে না।
আহান কিছুটা শান্ত হয়ে ইয়ানার সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়। তারপর চোখে চোখ রেখে বলে,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“” সেইজন্যই তোমাকে চাই আমার। তোমার সাহসীকতায় আমি সত্যিই মুগ্ধ। যে মেয়ের একটু আগে সম্রমহানী হচ্ছিলো সে ভয় না পেয়ে এখনো চোখে চোখ রেখে কথা বলছে। সাহসী না হলে সেটা কয় জনে পারে।
এর পর আহান এক মিনিট ও দেরি করে নি রুম থেকে বের হয়ে যায়। যেতে যেতে বলে যায়,,,,
” আমি গাড়িতে যাচ্ছি যদি বাড়ি ফিরতে চাও তাহলে আসতে পারো”””
ইয়ানা আর এক মিনিট ও দেরি না করে আহানের পিছন পিছন চলে যায়।
ইয়ানা বড়ির সামনে গিয়ে দরজা খোলে ভিতরে ডুকতে নিবে কিন্তু একজনকে দেখে থমকে যায়। দেখে সুমু সোফায় বসে আছে।
ইয়ানা কয়েকটা ডুক গিলে বলে,,,
“” ইয়ানা আজ তুই গেলি। পাগলি আজ ভীষণ ভাবে ক্ষেপে আছে। কোনো ভাবেই মি. চৌধুরির কথা বলা যাবে না। সবতো ঠিক করেই দিবো তাহলে শুধু শুধু টেনশনে ফেলার কারন নেই । ইয়ানা পা টিপে টিপে সবার আড়ালে রুমে ডুকতে যায় কিন্তু রুয়ানার কথায় দাঁড়িয়ে পরে,,,,
“” ওইতো আপুই চলে এসেছে”
রুয়ানার কথা শুনে সুমু ও পিছন ফিরে তাকায়। ইয়ানা আর এক মিনিট ও দেরি না করে দেয় এক দৌড়। তারাতারি করে গিয়ে মিসেস সেলিনার পিছনে দাঁড়ায়।
“” আম্মু প্লিজ আজকের মতো বাচাও পাগলি ক্ষেপেছে”
সুমু রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,,,
” আন্টি তুমি সামনের থেকে সরে দাড়াও ওকে আজ আমি মেরেই ফেলবো। ওর ধারনা আছে কতটুকু চিন্তায় ছিলাম আমি””
ইয়ানা সুমুর চিন্তার কারন বুঝতে পেরে দুইহাতে কান ধরে বলে,,,,
“” প্লিজ জানু আজকের মতো ক্ষমা করে দে। আর কখনো এইরকম করবো না”
“” ঠিক আছে করলাম ক্ষমা। এখন বল কোথায় গিয়েছিলি””
মিসেস সেলিনা হোসেন : ঠিক আছে তোরা দুইজনে বসে সব মিটমাট কর আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
ইয়ানা আর সুমু গিয়ে সোফায় বসে।
সুমু কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে,,,
“” ইনু রায়হান বা অগ্নি চৌধুরি আসে নিতো। ওরা কিছু করে নিতো। প্লিজ ইনু মৌন হয়ে থাকিস না তারাতারি বল।
ইয়ানা সুমুকে আশ্বাস দিয়ে বলে,,,
” এমন কিছুই নয়। আসলে তুই যখন পানি আনতে দোকানে গিয়েছিলি তখন একটা পথ শিশু আসে। বার বার খাবার চাচ্ছিলো, তুই ও আসছিলি না তাই ওকে নিয়ে একটা রেস্টোরেন্টে নিয়ে যায়। ভেবেছিলাম খাবার কিনে দিয়েই চলে আসবো কিন্তু কিছুতেই রেস্টোরেন্টে ডুকতে দিচ্ছলো না মেয়েটা পথশিশু তাই। এই নিয়ে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে””( এখন বিশ্বাস করলেই হয়। আল্লাহ আমায় ক্ষমা করে দিও মিথ্যে বলার জন্য। কিন্তু কি করবো আমি নিরুপায় মনে মনে)
সুমু কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে ইয়ানার দিকে,,
“” হুম মানলাম তুই একটা কাজে আটলে গিয়েছিলি । কিন্তু ফোন ধরছিলি না কেনো। তুই জানিস কতটা চিন্তায় ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম হয়তো রায়হান তোকে কিডন্যাপ করেছে বা অগ্নি চৌধুরি”
ইয়ানা সুমুর চিন্তার কারন বুঝতে পেরে বলে,,
“” আসলে ফোন সাইলেন্ট ছিলো। আর চিন্তা করিসা না এমন কিছুই হয় নি। আজ আর বাসায় যাওয়ার দরকার নেই এখানেই থাক”
রাত ঠিক বারোটা রুয়ানা কিছুর শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পরে। দেখে সবাই তার সামনে সবাই দাড়িয়ে আছে।
আসাদ হোসেন : শুভ জন্মদিন আমার ছোট মা।
ইয়ানা : শুভ জন্মদিন আমার ছোট মিষ্টি ঝগরুটে বোন।
রুয়ানা সবার ইউশ করা দেখে খুশতে আত্নহারা।
“” থ্যাংক ইউ সো মাচ আব্বু, আম্মু, আপুই, সুমু আপ্পি”
তারপর তারা ছোটখাটো সেলিব্রেশন করে যার যার মতো গিয়ে ঘুমাতে চলে যায়।
প্লিজ মি, চৌধুরি আমার সাথে এমন করবেন না। প্লিজ প্লিজ দুরে যান আমার থেকে। একদম কাছে আসবেন না।
হঠাৎ ইয়ানা ঘুম থেকে চোখ মেলে তাকায়। পাশেই সুমু গভির ঘুমে আচ্ছন্ন। ও এতক্ষন সপ্ন দেখছিলো ভেবেই শ্বস্তির নিশ্বাস নেয়। ভয়ে ওর হাত পা কাপছে। পাশ থেকে এক গ্লাস পানি এক শ্বাসেই খেয়ে ফেলে।
“” আজ আপনি যা করেছেন তা কখনো ভুলব না মি, চৌধুরি। ঘৃনা করি আপনাকে। ঠিক এতটাই ঘৃনা করি যে আপনার ছায়া দেখতে অস্বস্তি হয়। চলে যাবো অনেক দুর যেখানে আপনি আমায় খুজে পাবেন না। ”
হল্লাপর্টি আর রুয়ানা তারা একটা বড় রেস্টুরেন্টে বসে আছে। কারন আজ রুয়ানার জন্মদিন। তাই হল্লাপার্টির তরফ থেকে জন্মদিন উপলক্ষে ছোট একটি সেলিব্রেশন।
এক এক করে সবাই রুয়ানাকে গিফট দেয়। যা পেয়ে সে খুব খুশি।
ঠিক তখনি রুয়ানার কথায় সবাই পাশে তাকায়,,,,,
“” আপুরা দেখোতো উনি আহান ভাইয়া না। উনিতো বিদেশ গিয়েছিলেন তারমানে ফিরে এসেছেন।””
আকাশ : হুম তাইতো উনিতো আহান ভাইয়া। সাথে রায়ান আর ইউভি ভাইয়া ও রেয়েছেন।
আয়াত: তাহলে উনাদের বলি আমাদের সাথে এটেন্ড করতে। আর তাছাড়া অনেকদিন ধরে ওদের সাথে কথা হয় না কথা ও বলে নেওয়া যাবে।
ইয়ানা : সব ঠিক আছে আয়াত কিন্তু ওনারা কোনো দরকারে ওতো আসতে পারে। হতে পারে কোনো বিসন্যাস মিটিং ।
আরু : নারে মিটিং নয়। মটিং হলে আরও মানুষ থাকতো। কিন্তু এইখানে ওরা তিনজন ছাড়া আর কেও নেই। তোরা বস আমি ডাক দেয়।
আরু আহানদের কাছে চলে যায়।
আরু: আসসালামু আলাইকুম ভাইয়ারা। কেমন আছেন?
আহান আরোরাকে চিনতে এক মিনিট ও দেরি করে নি। তাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,
“” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লা।তুমি কেমন আছো। একা এসেছো নাকি নিজের ফ্রেন্ড তারা সবাই এসেছে”
আরু : জি ভাইয়া আজ আমাদের রুয়ানার জন্মদিন তাই আমাদের পক্ষ থেকে ছোট একটা আয়োজন। আপনারা ও আসুন না।
আরুর কথা শুনে ইউভি মনে মনে ভাবে আজ পিচ্চির জন্মদিন।
রায়ান : হুম কেনো নয় চলো।
তারপর তারা ও সেলিব্রেশনে জয়েন করে।
আহান যথাসম্ভব নিজের দৃষ্টি ইয়ানার আড়ালে রাখার চেষ্টা করছে। কারন ইয়ানা বলে দিয়েছে অগ্নি চৌধুরির চোখ জোড়ার সাথে অন্য কারোর চোখ জোড়ার খুব মিল পাওয়া যায়।
ইউভি রুয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। সাদা পাথরে কারুকাজ করা একটা সিম্পল গাঊন। আর মখে হালকা মেকআপ। মেয়েটা বাচ্চাসুলভ চেহারাতে যেনো অদ্ভুত এক আকর্ষন রয়েছে।
তারপর কিছু একটা মনে পড়তেই রুয়ানাকে প্রশ্ন করে,,,
“” আচ্ছা পিচ্চি তোমার বয়স কত। মানে আজ কত বছর বয়স হয়েছে তোমার।””
রুয়ানার মুখ থেকে হাসি উবে গেলো পিচ্চি ডাক শুনে। সে এখনো পিচ্চি নাকি আজব।
“” আমাকে একদম পিচ্চি বলবেন না। আর আমার আজ ষোল বছর পূর্ন হয়েছে”
ইউভি আহাত শুরে বলে : হ্যা অনেক বড় হয়ে গিয়েছো। ১৬ বছর কম নাকি।
[হায় কপাল ভালোবাসার জন্য আর কোনো মেয়ে পেলি না। শেষে কি না হাটুর বয়সী মেয়েকে পছন্দ করতে হলো। আমার বয়স ২৭ আর ওর ১৬ আল্লাহ কত ফারাক। ঠিক সময় বিয়ে হলে ওর সমান একটা মেয়ে থাকতো আমার। কবে বড় হবে এই মেয়ে। (মনে মনে)]
“আড্ডার মাঝে কেও একজন সুমুকে গভীর ভাবে পরখ করছে। সেটা কি ও বুঝতে পারছে। নাকি বুঝে ও না বুঝার অভিনয় করছে?”
অনেক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর তারা সবাই সবার থেকে বিদায় জানিয়ে যার যার বাড়িতে ফিরে আসে।
অনুভবে তুমি পর্ব ১৫
ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে আসে। আর ভাবছে কিভাবে নিজের আব্বু আম্মুকে রাজি করাবে। তারা কি সত্তিই রাজি হবে নাকি আমাকে নিরাশ করবে। যা হওয়ার হোক বললে তো আর মেরে ফেলবে না। বলেই সে তার আব্বু আম্মুর রুমের দিকে যায় তারপর……..