অনুভবে তুমি পর্ব ১৯
লিজা মনি
আহান এইবার বিডিও প্লে করে। যা দেখে ইয়ানা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। একবার নিজের ছোট বোনটার দিকে তাকায়। যে এখনো ভয়ে কান্না করে যাচ্ছে।
ইয়ানা আহানের হুডি চেপে ধরে বলে,,,,
” কতটা নিচ আপনি আহান। লজ্জা করে না এইসব করতে। শত্রুতা আপনার আমার সাথে। তাহলে আমার,,,,
ইয়ানা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই আহান আঙ্গুল দিয়ে ঠোট চেপে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,,,,,,
” দেখো বিডিওর কথা আমি তুমি রায়ান ইউভি ছাড়া কেউ জানে না। এখন তুমি যদি চিৎকার করে জানাতে চাও তাহলে জানাতে পারো। কিন্তু তুমি যদি এখন আমার কথা অমান্য করো তাহলে এই বিডিও শুধু আমাদের তিনজনের মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকবে না পুরো দেশ দেখবে। তখন তোমার বোনের কি হবে ভেবে দেখেছো। তোমার হলে একটা কথা ছিলো বাট এইটা তোমার প্রান ভোমরার। এখন যদি আমার কথার অবাধ্য হও তাহলে আমি বিডিও ভাইরাল করতে দেরি করবো না। তখন কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবে না তার জন্য তুমি নিজেই দায়ী থাকবে। এখন তুমিই ভাবো কি করবে। তোমাকে দশ মিনিট সময় দিলাম ভাবার জন্য”
এই বলে আহান ইয়ানা থেকে সরে এসে সোফায় গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে।
ইয়ানা যেনো স্তব্দ হয়ে গেছে। কি বলবে কি করবে সবকিছুর হিতাহিত ঙ্গান হারিয়ে ফেলছে।জীবনের এমন এক পর্যায়ে সে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে সব বোধ শক্তি লোপ পেয়েছে।
এইদিকে আহান বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” পাচ মিনিট কিন্তু শেষ। আর মাত্র পাচ মিনিট ”
ইয়ানার মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,,,,
আমার যায় হোক আমার বোনটার যাতে কিছু না হয়। যদি একবার এই বিডিও ভাইরাল হয় তাহলে ওও নিজেকে শেষ করে দিবে। এইসব ভেবেই ইয়ানার বুকটা আতকে উঠে। আর যায় হোক এইটা হতে দেওয়া যাবে না।
আহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানা বলে,,,
” আমি রাজি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। বলেই ইয়ানা নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়”
আহান একটা বাকা হাসি দেয়।
বাড়ির সবাই ইয়ানার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়। ইয়ানার আব্বু আর চোপ না থেকে বলে,,,,
“” কি সব বলছিস বিয়ে করতে রাজি মানে। এই ছেলেকে বিয়ে করলে তোর জীবনটা শেষ হয়ে যাবে”
ইয়ানা নিজের আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” আমার জীবন শেষ হলে আমি মানিয়ে নিতে পারবো আব্বু। কিন্তু আমার জীবন শেষ না হলে আরেকজনের জীবন শেষ হয়ে যাবে। যা আমার জন্য আরো বেশি কষ্টদায়ক। আর তা আমি হতে দিতে পারবো না। আমি লড়তে পারবো কিন্তু ও লড়তে পারবে না আব্বু””
ইয়ানার কথা শুনে আকাশ বলে উঠে,,,
” আরেকজনের জীবন নষ্ট করবে মানে? ”
ইয়ানা নিজেকে স্ট্রং করে বলে,,,
” আমি তোদের বলতে পারবো না।”
আহান এইবার বসা থেকে উঠতে উঠতে বলে,,,
“” তোমাদের ড্রামা যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে আমরা বাকি কাজটা শেষ করি। কাজী সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করুন।
এইদিকে মিসেস সেলিনা হোসেন আর আসাদ হোসেন কান্না করে যাচ্ছেন। তারা নিরুপায় নিজের মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তবুও কিছু বলতে পারছে না।
কাজি সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করে। তারপর এক পর্যায়ে কাজি সাহেব কাবিনের কথা জিজ্ঞাসা করলে আহান বলে
” দিয়ে দিন যা ইচ্ছে হয়।”
ঠিল তখনি ইয়ানা বলে,,,
” না মি, চৌধুরি কাজী সাহেব দিলেতো হবে না। ওনি দিলে সর্বচ্চো ছয় লক্ষ বা দশ লক্ষ দিবে। কিন্তু আমি পাচ কোটি চায়। আর আপনি তো জানেন কাবিনের টাকা নগদ দিতে হয়। কি পারবেনতো দিতে?
আহান ইয়ায়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” মাত্র পাচঁ কোটি আমি তো ভেবেছিলাম আরো দিবো। তুমার চাওয়ার পরিমান যে এত কম হবে আগে জানতাম না।”
ইয়ানা আহানের কথা শুনে মনে মনে বলে,,,,
” ওরে ইয়ানা পাচঁ কোটি চাইলি কেন। ভুলে গিয়েছিলি নাকি ও একজন টপ বিজন্যাসমেন সাথে টপ মাফিয়া ও।আমাদের জন্য দশ লক্ষ অনেক কিন্তু তাদের জন্য এইসব কিছুই না। আরেকটু বেশি চেয়ে বেটারে একটু জব্দ করতে পারতি।”
ইয়ানার ভাবনার মাঝে কাজী সাহেব ইয়ানাকে কবুল বলতে বলে,,,
ইয়ানার কানে এইটা পৌছাতেই নিজের দুই চোখ বন্ধ করে চোখের পানি ফেলে আর নিজের অনিশ্চিত অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে পা বারানোর জন্য প্রস্তুত হয়।
আহান এইবার ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,
” তোমাকে কবুল বলতে বলছে ইয়ানা। চুপ থাকতে নয়”
ইয়ানা এইবার নিজের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে দেয় সেই তিন শব্দ যেই শব্দগুলো একটা মেয়ের জীবন পালটে দেয়।
” কবুল কবুল কবুল ”
ইয়ানা কবুল বলতেই আহান একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
ইয়ানা উঠে যেতে নিবে কিন্তু পিছন থেকে আহান হাত চেপে ধরে। ইয়ানা পিছনে তাকিয়ে হাত
ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,,
” হাত ধরেছেন কেনো? ছারুন বলছি। আপনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন করে নিয়েছেন এখন আবার আটকাচ্ছেন কেনো। যেতে দিন আমায় আমার পরিবারের কাছে।
আহান হাত চেপে ধরেই বলে,,,,
” বিয়ে করেছি কি বউকে পরিবারের কাছে রেখে যেতে। আর যদি বলো হাত ধরেছি কেনো তাহলে বলবো শুধু হাত নয় অনেক কিছু করার ওই অধিকার আছে। ”
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,
” মানে?”
আহান উঠতে উঠতে বলে,,,
” মানে হলো এই যে, তুমি এখন তোমার পরিবারের কাছে যাবে না। আমার সাথে আমার বাড়ি যাবে।”
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,,,
” জীবনে ও না। আমি আপনার সাথে যাবো না।”
আহান ইয়ানার কাছাকাছি এসে বলে,,,
” বিডিওর কথা মনে আছেতো। নাকি ভুলে গেছো?”
ইয়ানা এইবার অসহায় হয়ে বলে,,,,
” প্লিজ আহান আম্মু আব্বুর সাথে একটু কথা বলে আসি।”
তারপর ইয়ানা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গিয়ে গড়িতে বসে। ইয়ানা কান্না করে না কারন আহান ভাব্বে ও দুর্বল হয়ে পরেছে। তাই অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে রেখেছে। আহান ইয়ানার দিকে এক পলক ও তাকায় নি। সামনে রায়ান বসে গড়ি স্ট্রাট দেয়। ইয়ানা এক নজরে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই বাড়িটা থেকে আজ সে সবাইকে কাদিয়ে চলে এসেছে। আরেকজনের বলির পাঠা হয়ে।
এইদিকে ইয়ানা চলে যেতেই আসাদ হোসেন হা্র্ট আ্যটাক করে। ওনাকে নিয়ে সবাই দিশেহারা হয়ে যায়। রুয়ানা শুধু কাদতে থাকে। আসাদ হোসেনকে নিয়ে চট্টগ্রামের একটা হসপিটালে ভর্তি করায়। ওনাকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়।
আহান তারা এতক্ষনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলে আসে।সরাসরি গিয়ে চৌধুরি মেনশনে প্রবেশ করে।
ভিতরে আহানের দাদুমনি আর আর আহিয়া বসে ছিলো।
আহানের সাথে একটা মেয়েকে দেখে তারা চমকে যায়।
দাদুমনি আহানের সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,
” এই মেয়েটা কে দাদুভাই। বিয়ের পোশাক পরিধান করা তোমার সাথে কি করছে””
আহান নিজের দাদুমনির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” আমি এই মেয়েকে বিয়ে করেছি দাদুমনি।”
আহিয়া আর দাদুমনি একে অপরের দিকে অবিশ্বাস নজরে তাকিয়ে আছে। এইটা কি সত্যি না সপ্ন। যেই ছেলে বিয়ের নাম শুনলেই ঘুর্নিঝর চালিয়ে দেয়। সে আজ কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে এনেছে।
আহিয়া এসে আহানকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে আত্নহারা হয়ে বলে,,,
” তুমি সত্যি বিয়ে করেছো দাদাভাই । আমাদের বউমনি কি সুন্দর একদম পতুলের মতো।”
আহান আহিয়ার মাথায় হাত রেখে বলে,,,
” আমার বোনের থেকে না”
আহিয়া একটা হাশি দিয়ে বলে,,,,
“” যাই হোক দাদাভাই আমার বউমনিকে একদম কষ্ট দিবে না। পুতুল বলে কথা, পুতুলদের কষ্ট দিতে নেয়”
আহান ইয়ানার দিকে না তাকিয়েই বলে,,,
“” ওইটা সময় বলে দিবে””
দাদুমনি এইবার খুশি হয়ে বলে,,,
” তোরা দাঁড়িয়ে থেকেই সব কথা বলবি। তারাতারি ভিতরে ডুকে ফ্রেশ হয়ে নে। আর রায়ান আর ইউভি তোরা ও ফ্রেশ হয়ে আয়। আমার দাদুভাইয়ের বিয়ের গল্প শুনবো”
রায়ান একটা শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে বলে,,,
“” তোমায় কি বলবো দাদুমনি। তোমার নাতি আজ যেইভাবে এন্ট্রি নিয়েছিলো কবুল বলে। আবার সাইকোগিরি করে বিয়ে ও করে নিয়ে এসেছে। এইসব শুনলে তোমার মাথায় হাত পরবে।”
এইদিকে ইয়ানা ভিতরে ডুকতে ডুকতে ভাবে,,,
” কি পরিবাররে বাবা। ছেলে বলা নেই জানা নেই বিয়ে করে এনেছে যেখানে রাগ করার কথা সেখানে সবাই খুশিতে আত্নহারা। কিন্তু এই ডেবিলের মা বাবা কোথায় দেখতে পাচ্ছি নাতো।”
ইয়ানা এইসব ভাবতে ভাবতে ভিতরে ডুকে অবাক হয়ে যায়,,,,
” ভিতরে কোনো রাজপ্রাসাদ থেকে কম না। চোখ ধাধানো ঘরের কারুকাজ আর আসবাব পত্র।”
আহান ইয়ানাকে রেখেই নিজ কক্ষে উপরে চলে যায়। কিন্তু মাঝ রাস্তায় কারোর কথা শুনে থমকে দাঁড়ায়।
“”” বিয়ে করেছো ভালো কথা কিন্তু বাড়ির সবাইকে একবার জানালে কি হতো।””””
আহান এইবার পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে,,,,,
“”” কাকে জানাবো মি, চৌধুরি? তবে দাদুমনি আর আহিয়াকে জানাতে পারতাম বাট জানাইনি। আমার মনে হয় না এখন তারা কম খুশি হয়েছে।”””””
সাজদ চৌধুরি : তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আহান তোমার বাবা এখনো বেচে আছে। তাই বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধন একবার হলেও জানানোর প্রয়োজন ছিলো। আমরাতো আর না করতাম না।
আহান সাজিদ চৌধুরির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,
“”বাবা মাই ফুট। যখন আপনি বলেন না আপনি আমার বাবা হন তখন এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছুই নেই।শুধু জন্ম দিলেই বাবা হয় না। বাবা হওয়ার জন্য না যোগ্যতা প্রয়োজন””””
সাজিদ চৌধুরি চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,
“” আহান! ভদ্রভাবে কথা বলো””
আহান একটা তাচ্ছল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” এখনো ভদ্র আছি মি, চৌধুরি। তাই বাবার অধিকার নিয়ে সামনে এসে দাড়াবেন না। সহ্য করতে পারি না।
বলেই হন হন করে উপরে চলে যায়।
সাজিদ চৌধুরি চোখের পানি মুছে ইয়ানার কাছে গিয়ে বলে,,,,
“” তোমার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। তবে আমরা আশা করবো তুমি এই পরিবারকে এক করে রাখবে। আর আহানের সম্পর্কে নিশ্চয় সবকিছু জানো। চেষ্টা করবে ওকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে””””
ইয়ানা মাথা নত করে বলে,,,,
“” ঠিক আছে আংকেল। আমার জন্য দোয়া করবেন।””””
আসাদ চৌধুরি মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“”” আংকেন কেনো ডাকছো। বাবা বলে ডাকবে আজ থেকে””””
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” ঠিক আছে বাবা “””
তারপর সাজিদ চৌধুরি আহিয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
অনুভবে তুমি পর্ব ১৮
“” কখন থেকে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। যা গিয়ে আহানের রুমে নিয়ে দিয়ে আয়।”””
আহিয়া : ওকে আব্বু।
এরপর আহিয়া ইয়ানাকে নিয়ে আহানের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর বলে,,,,,
“””” এটা দাদাভাইয়ের রুম। আজ থেকে তোমার ও। দাদাভাই কখনো নিজের রুমে কাউকে ডুকতে দিতো না। আর আজকের রাতের জন্য শুভেচ্ছা বউ মনি। এখন আমি যাই।”””
আহিয়া এইখান থেকে চলে যায়। ইয়ানা একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে ভিতরে ডুকে। ভিতরে ডুকতেই ওর চোখ চুরকগাছ।