অনুভবে তুমি পর্ব ৩০
লিজা মনি
তপ্ত দুপুর সূর্যের প্রখর তেজ যেনো আছরে পরছে। আহান কালো মা্র্জিশিয়ান গাড়িটি নিয়ে ঘন কালো জংগলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উদ্দেশ্যে নিজের টর্চার সেলে যাওয়া। তার সাথে রয়েছে আরিফ। আরিফ শুধু ভাবছে আজ কেনো আহান টর্চার সেলে যাচ্ছে। না জানি আজ আবার কার ভয়ংকর মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হবে। তার ভাবনার মাঝেই আহানের বজ্রের মতো কন্ঠ কানে ধাক্কা খায়।
— আরিফ পিছনের গাড়িতে শুট কর।
আহানের কথা কর্নে পৌছাতেই বুঝতে পারে কেউ তাদের পিছু নিয়েছে। আরিফ আর এক মুহূর্ত ও বিলম্ব না করে পিছনের গাড়িতে শুট করে। সাথে সাথে পিছন থেকে চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে। জায়গাটা ছিলো জজ্ঞলের দিকে তাই দিনে সূর্যের প্রখর উত্তাপে ও অন্ধকার আচ্ছন্ন।
আহান একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে গাড়ি থেকে নামে। আরিফ ভেবে পাচ্ছে না আহানতো আজ নিজে গড়ি ড্রাইভ করেছিলো তাহলে ওই লোকটা আমাদের পিছু নিয়েছে এইটা বুঝলো কিভাবে।
আহান আহত লোকটার গাড়ির সামনে গিয়ে বলে,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“” এত কষ্ট করে আমার পিছু নেওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো। তুই আমাকে বলতে পারতি অগ্নি চৌধুরির ভালোবাসা পেতে চাস। আই সয়ার কোনো প্রশ্ন ছাড়ায় আমি তোকে সেই ভালোবাসা দিতাম। এমন ভালোবাসা যা একজন সাধারন মানুষ দেখলে ও তার রুহ কেপে উঠবে।”
আহানের কথা ছিলো একদম শীতল কিন্তু কথা ছিলো রহস্যে ঘেরা।
লোকটা নিজের হাতে ধরে ছটফট করতে থাকে। কারন গুলিটা একদম হাতে গিয়ে বিধেছে। আহানের কথা শুনে লোকটা আরো ছটফট করতে থাকে। লোকটা পালানোর জন্য বাহির হয়ে দৌর দেয়। আহান ও লোকটাকে আটকায় না। শুধু দেখে পিশাচিক হাসি দিতে থাকে। লোকটা প্রান প্রন দৌরাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ লোকটা গলায় হাত দিয়ে চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। সাথে সাথে আবার ও গগনবিধায়ী চিৎকার ভেসে আসে। লোকটা এইবার সহ্য করতে না পেরে পায়ে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কারন আহান লোকটার ঠিক ঘার বরাবর ছুরি দিয়ে আঘাত করে তারপর আবার পায়ের ঘোরালিতে শুট করে।
আহান আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” আরিফ এইটাকে নিয়ে পুরনো বাংলোতে যা। আমার কুকুরগুলো অনেক দিন ধরে অভুক্ত। তাদের আহারের ব্যবস্থা করবো। “”
আরিফ আহানের দিকে না তাকিয়েই বলে,,,,
“” ঠিক আছে ভাই ” আহানের দিকে তাকানোর মতো সাহস ওর নেই। আহান যখন মৃত্যুর আদিম খেলায় মেতে উঠে তখন ওর দিকে তাকানোর সাহস আরিফের এখনো হয় নি। হয়তো সময়ের ব্যবধানে খুন দেখতে দেখতে সয়ে গেছে।
ইয়ানার ঘুম ভাঙ্গে দুপুর দুইটার দিকে। তারাতারি করে ঘড়ি দেখে মাথায় হাত দিয়ে বলে,,,,
“” হায় আল্লাহ এত দেরি হয়ে গিয়েছে। ইসস সবাই কি ভাবছে যে বাড়ির বউ এত দেরি করে ঘুম থেকে উঠে। “”
ইয়ানা বিছানা থেকে বুঝতে পারে শরিরের ব্যথা কমেছে। কিন্তু শরীরটা মেজমেজ করছে। মনে হয় হালকা জ্বর এসেছে।ইয়ানা আয়নার সামনে গিয়ে উরনা দিয়ে ভালোভাবে দাগ গুলোকে ডেকে নিচে চলে যায়। নিচে গিয়ে দেখে বাড়িতে কিসের আয়োজন চলছে।পুরো বাড়ি খাবারের গন্ধে মো মো করছে। ইয়ানা চারদিক ভালোভাবে দেখে দাদুমনির সন্ধান পায়। তারপর তারাতারি করে গিয়ে বলে,,,,,,
“” অফফ দাদুমনি সরি আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছে। আসলে শরীরটা ভালো লাগছিলো না। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।”
দাদুমনি ইয়ানার দিকে তালিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
“” আমি বাংলা সিনেমার সেই দজ্জাল দাদি শাশুরি না যে তোর উপর চিৎকার করবো। এইটা তোর নিজের বাড়ি আমরা সবাই নিজেদের মানুষ। শরীর খারাপ লাগলে রেস্ট নিবি এতে রাগ করবো কেনো পাগলি মেয়ে। আমাকে আহান বলে গিয়েছে তোর শরীরটা নাকি ভালো না যাতে ঘুম থেকে না জাগায়। তাই তোকে আর ডাক দেয় নি। কিন্তু ইয়ানা আমার তো সবকিছু মেজিক মনে হচ্ছে। যে ছেলে মায়ের কথা শুনলে তুফান চালাতো সে কাল রাতে এত বড় এত সত্ত্যের সম্মুখীন হয়ে কিভাবে এত শান্ত। কিরে ব্যপার কি, কি করেছিস দাদুভাইকে হুম?””
ইয়ানা দাদুমনির কথা শুনে লজ্জায় হাসফাস করতে থাকে। কি বলবে সে দাদুমনিকে ইসসস কি লজ্জা কি লজ্জা।
দাদুমনি ইয়ানার লজ্জামিশ্রিত মুখখানা দেখে ফিক করে হেসে দেয়। তারপর বলে,,,,
“” হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না আমি বুঝেছি। এইভাবে সবসময় আমার নাতিটাকে দেখে রাখিস। ওর খুব ভালোবাসার অভাব জানিসতো। আমার বিশ্বাস ওর জীবনের সব কালো দুরে ঠেলে দিয়ে আলোর সন্ধান মেলাতে পারবি। তুই পারবি ইয়ানা তোকে পারতে হবে।””
ইয়ানা দাদুমনির কথা শুনে মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,
“” ইনশা আল্লাহ দাদুমনি আমি সবসময় ওনার পাশে থাকার চেষ্টা করবো যদি ওনি আমাকে চায়। আচ্ছা এইসব বাদ দেও আগে বলো বাড়িতে কে আসছে? এত আয়োজন করা হচ্ছে কেনো হুম? তোমার আবার বিয়ে করার সখ জাগেনিতো সত্যি করে বলবা। “”
দাদুমনি —- আমার জন্য তোর দাদাজান কবরে অপেক্ষা করছে আর আমি ওনাকে ছাড়া বিয়ে করবো। আজ আমার বোনের মেয়ে ও তার নাতি নাতনি আসছে। ওরা সবাই কানাডায় থাকে। আমার বোনের মেয়ের নাম নাফিসা। ওর হাসবেন্ড অগ্নি কান্ডে মারা যায়। নাফিসার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম হচ্ছে রেশব আর মেয়ের নাম ঝর্না। আহান আর ঝর্না এক ভারাসিটিতেই পরাশুনা করেছে কানাডায়। ওরা যখন ছোট ছিলো তখন বাংলাদেশে এসেছিলো আর আসে নি। আজ বিকালে আমাদের বাড়িতে আসছে।””
ইয়ানা —- আচ্ছা তাই বলো। আহিয়া কোথায় ওকে দেখতে পাচ্ছি না যে।
দাদুমনি — গিয়ে দেখ হয়তো ফোনে কার্টুন দেখেছে। এদেরকে নিয়ে আর পারি না এত বড় হয়েছে এখনো বাচ্চাদের মতো কার্টুনে আসক্ত।
ইয়ানা দাদুমনির কথা শুনে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে বির বির করে বলে,,,
” কি বলবো কষ্টের কথা দাদুমনি আমি ও যে কার্টুনে আসক্ত কিন্ত এইটা বলা যাবে না তাহলে মান সম্মান সব শেষ।”
ঠিক তখনি ইয়ানার মোবইলে ফোন আসে। ফোনের স্ক্রিনে হল্লা পার্টি লেখাটা ঝলঝল করছে। নিশ্চয় সবগুলো বাদর বিডিও কল দিয়েছে। আজ ভার্সিটিতে যাবো এইটা সবাইকে জানিয়েছিলাম। এখন যাইনি কেনো এইটা নিশ্চয় জানতে চাইবে।
ইয়ানার ভাবনার মাঝে দাদুমনির কন্ঠ ভেসে আসে ,,,
“” কিরে কখন থেকে ফোনে রিং হচ্ছে ফোন দরছিস না কেনো? প্রয়োজনীয় ফোন হলে রুমে গিয়ে কথা বলে আয়। “”
ইয়ানা দাদুমনির কথা মতো রুমে চলে যায়।ফোন রিসিভ করতেই সবার এত গুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
আয়াত — মাফিয়া রুমান্টিক জামাই পেয়ে কি আমাদের ভুলে গেছিস ইনু। হায় এই দিন দেখার জন্য বেঁচে আছি। এই দেখার আগে আমার মৃত্যু হলো না কেনো?
রুহান — চুপ কর ড্রামাবাজ। তুই এত সহজে মরতি না। শয়তানকে দেখেছিস তারাতারি মরতে। আর মরলে ও ট্রিট দিয়ে মরিস। “”
আয়াত রুহানের কথা শুনে মন খারাপ করে বলে,,,,
“” দেখেছিস তোরা এই ভাদাইম্মা কিভাবে আমার মরার জন্য পাগল হয়ে আছে””
রুহান — আমি আবার কি বললাম তুই নিজে ওইতো মরার কথা বললি। আমি শুধু বন্ধু হয়ে তর কথায় সম্মতি জানালাম। আর তাছাড়া তুই এত দ্রুত মরবি না আগে জামাইর ঘারের রক্ত খাবি তারপর। বেচারা জামাইটাকে একটু শান্তি দিস বইন।
শেষ রুহানের কথা শেষ হতেই আয়াত পিঠে কিল বসায়।
রুহান পিঠে হাত দিয়ে বলে,,,
“” রাক্ষসি আমি তর জামাইর ঘারের রক্ত খাওয়ার কথা বলেছিলাম তুই আমার রক্ত খাচ্ছিস কেনো। “”
আয়াত রেগে রুহানের দিকে তাকায়।রুহান ও চুপ হয়ে যায় বুঝতে পেরেছে পাগলি ভীষনভাবে ক্ষেপেছে। দুইজনের কান্ড দেখে সবাই হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।দুইজন পারে ও বটে।
সুমাইয়া — আজ তো তুই ভার্সিটিতে আসবি বলেছিলি। তাহলে আসলি না কেনো? আর এইভাবে লম্বা ঘুমটা টেনে আছিস কেনো?
ইয়ানা সুমুর কথা শুনে একটা শুকনো ঢুক গিলে। হল্লাপার্টি যদি একবার ইয়ানার ঘাড়ের দাগ গুলো দেখতে পারে তাহলে আজ লজ্জা দিতে দিতে মেরে ফেলবে।
এরপর ইয়ানা বলে,,,
“” আসলে সকালে হঠাৎ করে পেট ব্যাথা শুরু হয়। তাই ওনি বারন করেছে আজ যাওয়ার প্রয়োজন নেই।””
ইয়ানার কথ শুনে আরুরা বলে,,
আরুরা —-ওহহ ভালো করেছিস না এসে। বাড়িতে রেস্ট নে ইনশা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা ইনু জানু আমাদের ক্রাশবয় অগ্নি চৌধুরি কেমনরে। মানে রুমান্টিক নাকি বাহিরে যাইভাবে মুড নিয়ে চলে এইরকম “”
ইয়ানা আরুরার কথা শুনে লজ্জা মইয়ে যায়। ইয়ানার অবস্থা দেখে সবাই হু হু করে হেসে উঠে। এইভাবে অনেক সময় কথা বলে ফোন কেটে দেয়। তারপর ইয়ানা নিচে চলে যায়। মনটা কেমন যেনো অস্থির লাগছে। আহানকে একবার ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোনটা রিসিভ হয় নি। ভেবেছে হয়তো কাজের চাপে আছে তাই আর ফোন দেয়নি। কিন্তু সময় যাচ্ছে এইদিকে ইয়ানার অস্থিরতা বেড়ে চলছে। অনেক্ষন আহিয়ার সাথে আড্ডা দিয়ে নিজের রুমে আবার ফিরে আসে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে। কেনো ওনি কি একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারতো না আমার শরির কেমন আছে।কই ইয়ানাতো ফোন দিয়েছে বেহায়ার মতো কিন্ত ফোন রিসিভ করার প্রয়োজন বোধ করে নি। যেই শুনেছে আমি ওনাকে ভালোবাসি এমনি আমার উপর থেকে সব ইন্টারেস্ট উঠে গেছে। সব ছেলেরা এক। খুব খারাপ আপনি মি.অগ্নি চৌধুরি । একবার ফোন দিলে কি হতো।
মনের ভিতরে অভিমানের পাহার জমতে লাগলো। বার বার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু আহানের কোনো ফোন আসে নি।
মুখের উপর পানি পড়তেই লোকটি ধরফরিয়ে উঠে।
সামনে আহান মাথা থেকে হুডি ফেলে দিয়ে বলে,,,,,
“” কেমন লাগছে আমার টর্চার সেলে। এইখানে খুব ভালোবাসা দেওয়া হয় অগ্নি চৌধুরির স্টাইলে। সেইজন্য তোর ক্ষতস্থান গুলোতে বেন্ডেজ করে দিলাম এত তারাতারি তোকে মরতে কিভাবে দেয় বলতো।
লোকটি আহানের কথা শুনে পায়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলে,,,,
“” স্যার আমি আজীবনের জন্য সুপারি দেওয়া কাজ ছেড়ে দিবো। আমি জানতাম না এইটা যে আপনি।””
আহান নাক মুখ কুচকে লোকটার থেকে পা ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,,,,
“” ছেহহহ পা ছাড়। অগ্নি চৌধুরির শরীরে স্পর্শ করছিস কেনো বিচ।””
হঠাৎ করে আহানের মুখের অবয়ব পাল্টাতে থাকে। সমস্ত সত্তা যেনো রাগে থর থর করে কাপছে। আহান বুজেছে এইটা কার লোক। কার গুপ্তচর হয়ে ওর পিছু নিয়েছে
তবুও লোকটিকে ফোর প্রশ্ন করে,,,
“”এইবার বল কার কথায় আমার পিছু নিয়েছিস।কার হয়ে কাজ করছিস। “”
লোকটা ভয়াতুর কন্ঠে বলে,,,,,
“” আমি জানি না লোকটি কে ছিলো। আমি সত্তিই চিনি না।
লোকটির এই কথা আহানের রাগকে আর ও উত্তপ্ত করে দিয়েছে। এতক্ষন ধরে অগুনে ঝলসে থাকা শিকটাকে হাতে তুলে নেয়। তারপর লোকটার জিহ্বা টেনে বের করে শিকটা বসিয়ে দেয়।
তারপর রেগে হুংকার দিয়ে বলে,,,,
“” অগ্নি চৌধুরি আমার নাম আগুনের মতো আমার শাস্তি। আমার সাথে মিথ্যে বলিস। সত্তি করে বলে তুই কার লোক। আর তার চেয়ে বড় কথা কেনো পিছু নিয়েছিস। যদি সত্তি বলে দিস তাহলে তোর লাশটাকে কুকুর দিয়ে খাওয়াবো না ট্রাস্ট মি। আর যদি মিথ্যে বলিস তাহলে ব্লা ব্লা ব্লা। তোকে ওইটা নাই বলি প্রেক্টিকেল ভাবে দেখি নিবি””
লোকটা ছটফট করছে ছুটার জন্য। কিন্তু আহান এখনো শিক জিহ্বায় ধরে রেখেছে। লোকটার ছটফট দেখে ঠোটের কোনে এক বাকা হাসি ফুটে উঠে। শিকটা উঠিয়ে বলে,,,,,
“” বল তারাতারি। “”
লোকটার ঠোট ঝলসে গেছে কথা বলতে পারছে না। তবুও আহানের ভয়ে অস্ফুর্ত ভাষায় বলে,,,,,
“” আ.. আমি রায়হানের হয়ে কাজ করতাম আগে। তারপর রায়হানের আর সন্ধান মেলে নি। তার জায়াগা এখন দখল করেছে সাহিল মির্জা। শুনেছি রায়হানের বাপ সাহিলকে এই জায়গা দিয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে আপনার পিছু নিতে আর গোপন খবর জেনে যেতে। আমি গুপ্তচর ছিলাম মাত্র। আমি এসেছিলাম আপনার বউকে কিডন্যাপ করতে ওনি নাকি আজ ভার্সিটিতে যাবে। তাই ওনাকে খুজতে আপনার পিছু নিয়েছিলাম।”
আহান লোকটার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে নেয়। ওতো ভেবেছিলো ওর পিছু নিয়েছিলো কিন্তু সত্যি তো এইটাই যে ইয়ানার পিছু নিতে এসেছে। আহান আগেই বুঝতে পেরেছে এইটা রায়হানের লোক ছিলো কারন রায়হানের প্রত্যেকটা গুপ্তচরের হাতের উপরের অংশে একটা গোলাকৃতি বাঘের মাথার ট্যাটু করা। কিন্তু ওর বউয়ের পিছু নিয়েছে এইটা তো সে মানবে না।
আহান চেয়ার থেকে খুব শান্ত হয়ে উঠে তারপর বলে,,,,
“” যা তোকে মুক্ত করে দিলাম সত্যি কথা বলার জন্য। “”
লোকটাও খুশিতে গদগদ করে উঠে। অগ্নি চৌধুরি তাকে ছেড়ে দিচ্ছে এর চেয়ে আশ্চর্যের আর কিছু নেই। আহান লোকটার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে সামনের দিকে ঘুরে আরিফের দিকে ইসারা করে। সাথে সাথে পিছন থেকে লোকটার ভিবৎস্য চিৎকার ভেসে আসে। লোকটার বুক বরাবর পর পর তিনটি গুলি করা হয়েছে। এক পর্যায়ে লোকটা গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে করতে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে।
আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে টর্চার সেল থেকে বের হয়ে যায়।
আহান ডুপ্লেক্স চাবি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই এত গুলো মানুষকে দেখে বিরক্তি নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হতে নিবে তখন কেউ ঝরের গতিতে এসে জাপটে ধরে। আহান প্রথমে ভেবেছিলো ইয়ানা তাই সম্মতি জানাতে গিয়ে আটকে যায়। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে মেয়েটার গালে সজোরে থাপ্পর বসায়। রাগে থর থর করে কাপছে দেহখানা। আহান রেগে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,,
“” চিপ গার্ল। লজ্জা করে না পরপুরুষ এর গায়ে ঢলে পড়তে। অসভ্য বেহায়া মেয়ে। “”
মেয়েটা অবাক দৃষ্টি মেলে বলে,,,,,
“” এইভাবে রিয়াক্ট করার কি আছে আমি তো যাস্ট জরিয়ে ধরেছি। কানাডায় তো এইসব অহরহ চলতো। “”
আহান —- লিসেন ঝর্না কানাডাই তুমি অনেকের সাথে বেড শেয়ার করেছো সেখানে তোমার জন্য জরিয়ে ধরাটা আহামরি কিছু না। কিন্তু ভদ্র মেয়েরা কখনো ছেলেদের গায়ে ঢলে পড়ে না। অবশ্য তোমার মতো নির্লজ্জ আর নষ্টা মেয়ে বুজবে না। নেক্সট টাইমে যাতে আমার আশে পাশে ও না দেখি গট ইট।
এরপর আহান বড়বড় পা ফেলে রুমের দিকে অগ্রসর হয়।
আহানের এমন ব্যবহারে কেউ কিছু বলে নি। কারন ঝর্নার দোষ ছিলো। আর আহান সম্পর্কে তারা অবগত। ঝর্না রাগে হাত মুঠো করে নেয়। বিরবির করে বলে,,,,
“” তোমাকে আমার করেই ছাড়বো আহান চৌধুরি “”
আহান রুমের ভিতর ঢুকে ইয়ানাকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে আসে। গেলো কোথায় মেয়েটা। বারান্দায় উকি দিতেই ইয়ানার অবয়ব দেখতে পায়।মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
এরপর আহান ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় চলে যায় উদ্দেশ্য ইয়ানার কাছে যাওয়া। মেয়েটার শরীর কেমন তা জানাই হলো না।
ইয়ানা নিজের মেদহীন পেটে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেতেই কেপে উঠে। হাতের মালিক কে বুঝতে পেরে এইখান থেকে সরে আসে। ইয়ানা সরে যাওয়াতে আহান রেগে গিয়ে ইয়ানার গাল চেপে ধরে কিছু বলতে যাবে কিন্তু ইয়ানার চোখ দেখে আহান থমকে যায়। চোখগুলো ভীসন লাল হয়ে ফুলে গেঁছে। মনে হচ্ছে অনেক্ষন ধরে কান্না করেছে। আহান ইয়ানার এই হালাত দেখে বুকের সাথে মিশয়ে বলে,,,,,,
“” কি হয়েছে কান্না করছো কেনো। কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে। প্লিজ ইয়ানা কান্না করো না তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না। “”
ইয়ানা নিজেকে ছাড়াতে ছারাতে বলে,,,,,
“” ছুবে না আমায় একদম। আপনি খুব খারাপ সেইমলেস।”
ইয়ানার কথা আহানের কর্নপাত হতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সাহস হয় কি করে সেইমলেস বলার।
“” চুপ হয়ে যাও ইয়ানা আমাকে রাগিয়ে দিও না। আমি রেগে গেলো তোমার জন্য ভালো হবে না
ইয়ানা কান্না করতে করতে বলে,,,,
“” হ্যা আমার সাথেই সবসয় খারাপ ব্যবহার করেন বাহিরে তো সবাইকে ঠিক ওই জরিয়ে ধরেন। একদম ছুবেন না আমায় ওই মেয়েকে গিয়ে জরিয়ে ধরেন।””
আহান ইয়ানার কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। কথায় স্পষ্ট অভিমান প্রকাশ পাচ্ছে।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” তাহলে এই কারনে রাগ করেছো। হিংসে হচ্ছে বুঝি হুম।””
ইয়ানা কিছু বলে না রুমের দিকে চলে যেতে নেয়। আহান ইয়ানার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর ইয়ানার মাথায় হাত রেখে শান্ত সুরে বলে,,
“”আভিমান করেছো? কিন্ত আমিতো অভিমান ভাঙ্গাতে পারি না। আমি জানতাম নাকি ওই মেয়েটা জরিয়ে ধরবে। তুমি সবটা না দেখে একটু দেখেই চলে আসলে। আমি মেয়েটাকে মেরে দিয়েছি আর কখনো আমার আশে পাশে আসবে না। এইবার কান্না থামাও। “”
ইয়ানা আহানের বক্ষ থেকে মুখ তুলে বলে,,,,
“” মেরেছেন মানে? কি করেছেন আপনি ওনার সাথে সত্যি করে বলবেন “”
আহান — বেশি না শুধু থপ্পর দিয়েছি।
ইয়ানা —- ওহহ
এরপর ইয়ানা রুমের ভিতর গিয়ে শুয়ে পড়ে। আহান ইয়ানার হাবভাব বুঝার চেষ্টা করে নিজে ও রুমের ভিতর যায়।
আহান ইয়ানাকে ডাক দেয় কিন্তু রেসপন্স আসে না। এইবার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। এই মেয়ে এইভাবে ইগ্নোর করার কারন কি। এত রাগ জেদ কোথায় রাখে।
এরপর আহান ইয়ানকে বিছানা থেকে তুলে দাতেদাত চেপে বলে,,,,,
“” সমস্যা কি তোমার এইভাবে ইগ্নোর করছো কেনো? একটু ভালোবাসা দেখিয়েছি তাই মাথায় চেপে বসেছো। আমাকে ইগ্নোর করার দঃসাহস দেখাও কিভাবে মেয়ে। আমি তোমাকে আগে ও বলেছি আর যাই করো ইগ্নোর করবা না। আর যদি কোনোকিছু নিয়ে কখনো সন্দেহ হয় তাহলে সোজা আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করবা। কখনো যাতে এইভাবে কান্না করতে না দেখি।””
তারপর ও ইয়ানার কোনো রেসপন্স নেই। আহান ইয়ানাকে থাপ্পর দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই ইয়ানা আহানের বুকে আছরে পড়ে। আহান হতভম্ব হয়ে যায়।
আলতো করে চেপে ধরে বলে,,,,,,
“” কি হয়েছে কি নিয়ে অভিমান করেছো? না বললে আমি বুঝবো কিভাবে “”
ইয়ান এইবার কান্না করতে করতে বলে,,,,
“” আমি আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম ফোন রিসিভ করেন নি কেনো? সারাদিনে একটা ফোন দিয়ে ও জিজ্ঞাসা করেন নি আমি কেমন আছি।চিন্তা হচ্ছিলো খুব আপনাকে নিয়ে।,
আহান প্রেয়সীর অভিমানের কারন বুঝতে পেরে বলে,,,
“” আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম তাই খেয়াল ছিলো না। প্রমিস এর পর থেকে এমন হবে না। এইবার কান্না থামাও।
অনুভবে তুমি পর্ব ২৯
ইয়ানা ও শান্ত হয়ে পড়ে। আহান ইয়ানাকে নিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। আহান নিজেকে সব থেকে সুখীদের কাতারে দাড় করাতে চাচ্ছে। কারন এই মেয়ে আহানের হৃদয়হীন রক্তে গন্ধে মিশে গেছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে যে অগ্নি চৌধুরি নিজের বোন ছাড়া কোনো নারীকে সহ্য করতে পারতো না সে ও আজ এক মেয়ের প্রতি ভীষনভাবে আসক্ত হয়ে গেছে।