অনুভবে তুমি পর্ব ৩৩

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৩
লিজা মনি

পিছন ফিরে সে চিৎকার করা ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। আহান সেদিকে দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ইয়ানা নিজের হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আহান ইয়ানাকে দেখে রাগ হলে ও ঠান্ডা কন্ঠে বলে,,,,,,
“”” তুমি এত রাতে বাহিরে এসেছো কেনো? ”
ইয়ানা শুধু ভয়ে কাঁপছে। একটু আগে যে ভিবৎস মৃত্যুর স্বীকার হয়েছে সে কিভাবে ভুলবে। আহান ইয়ানার দিকে এগিয়ে গেলে ইয়ানা দুই কদম পিছিয়ে যায়। আহান কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

“” পিছালে কেনো? তুমি জানো না আমি ইগ্নোর করা পছন্দ করি না কাম। “”
ইয়ানা ভয়ে নিজের কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। আহান ইয়ানার ভয় অনুধাবন করে ঠান্ডা হুমকি দিয়ে বলে,,,,,
“” কেনো এসেছো এখানে? তোমাকে এখানে আসতে বলেছিলাম ইডিয়েট। ”
আহান ইয়ানার কাপা শরীর দেখে বাকা হাসি দিয়ে বলে ,,,
“”” এইভাবে কাপাকাপি করছো কেনো আজব? কিছু করেছি আমি তোমার সাথে। যদি চাও তাহলে রুমে যেতে পারি। “”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এরপর আহান ইয়ানার দিকে অগ্রসর হতে নিলে সে হাত দিয়ে আটকে দেয়। কান্নামিশ্রিত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,
“” দ. দুরে থাকুন আমার থেকে। আপনি সুস্থ মানুষ নন। জানোয়ারের মতো মানুষ খুন করেন। আপনি খুব খারাপ। আপনার মতো নির্দয় মানুষ আমি জীবনে ও দেখিনি। আপনার কি তাদের জন্যএকটু বুক কাঁপে না। একবার ও মনে হয় না তারা ও রক্তে মাংশে তৈরি মানুষ। কিভাবে পারেন কাউকে এতটা জঘন্যভাবে আঘাত করতে। “”
আহান ইয়ানার কথা শুনে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” দুরে থকার তো কোনো প্রশ্ন আসে না বেবি। এইটাই তোমার স্বামী অভ্যস্ত করে নাও। এই জানোয়ারকেই তুমি ভালোবেসেছো। রয়েল গ্রুপ অফ মাফিয়া লিডার অগ্নি চৌধুরিকে যদি কে যদি দেখতে চাও তাহলে রাতের অন্ধকারে দেখতে পারো। তাহলে বুঝতে পারবে আমি কি জিনিস। আর এইটাই আমার জীবন আমার পরিচয়। এই হৃদয়হীন মানুষটার প্রতি তুমি আসক্ত ভীষন ভাবে আসক্ত।

ইয়ানা —- হ্যা ভালোবাসাই আমার জীবনের সবচেয়ে ভুল হয়েছে। কেনো আপনি আমাকে আপনার মতো পাষন্ড মানুষকে ভালোবাসতে বাধ্য করলেন আহান। আপনি বিনা কারনে মানুষকে খুন করেন। আপনার কি একটুও দয়া হয় না ওরা ও মানুষ।
ইয়ানার কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গেছে। আহান ইয়ানার কান্না দেখে বিরক্ত হয়ে যায়। ওর বউ অন্য কারোর জন্য কেনো কান্না করবে। অন্য কারোর জন্য কেনো ভালোবাসা দেখাবে। অগ্নি চৌধুরি তো এইটা মেনে নিবে না।
ইয়ানা অস্ফুর্ত ভাষায় বলে,,,,,,

“”” থাকতে চাই না আমি আপনার সাথে। প্লিজ ছেড়ে দেন আমাকে আমার মতো। আমি আমার ছোট্ট দুনিয়ায় অনেক ভালো ছিলাম আপনার এই বিশাল সম্রাজ্য আমার জন্য নয় আহান। আপনি আমার সাথে এত অন্যায় করার পর ও আমি নিয়তি ভেবে সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম। আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। আমার ভালোবাসা দিয়ে আপনার মনের কালো অন্ধকার মুছে ফেলতে চেয়েছি। কিন্তু আমি হতাশ আপনাকে আমি কখনো ঠিক করতে পারবো না। আমাকে আমার মত ছেড়ে দেন””

আহান রেগে নিজের হাত মুষ্ঠিব্ধ করে নেয়। ইচ্ছে করছে ইয়ানাকে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে। শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে। কিন্তু এইটা তো করা যাবে না তাহলে আহান কাকে নিয়ে বাঁচবে।
এতক্ষনে লোকটার লাশটা নিয়ে আরিফ চলে গেছে। অন্ধকার এই রাতে এখন আহান আর ইয়ানা। আহান ইয়ানার দিকে না তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বলে,,,,
“” ইয়ানা চুপ যাও। তোমার জায়গায় এখন অন্য কেউ থাকলে এখানে লাশ পড়ত। “”
ইয়ানা কান্না করতে করতে বলে,,,,,

“” তাহলে মেরে ফেলুন আমাকে আর বাঁচিয়ে রেখেছেন কেনো? আমাকে মারতে ও নিষ্চয় আপনার কলিজা কাঁপবে না। তাহলে মেরে দিন আপনার মতো হৃদয় হীন মানুষ থেকে তো মুক্তি পাবো “”
আহান নিজের রাগের চরম সীমা অতিক্রম করে। এই মেয়ে যা বলবে সব কিছু মাঝে মৃত্যুর কথা আনবেই। আহান এগিয়ে গিয়ে ইয়ানাকে নিজের কাছে আনতে নিবে তখন ইয়ানা চিৎকার করে বলে,,,,,
“” সমস্যা কি আপনার কথায় কথায় এইভাবে টাচ করেন কেনো? আপনার স্পর্শ আজ সহ্য করতে পারছি না।ঘেন্না লাগছে আপনার এই স্পর্শ।
আকস্মিক আহান ইয়ানাকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে কমর চেপে ধরে রেগে বলে,,,,

“” নে ছোয়েছি,, কি করবি তুই। আমার ছোয়া তর অসহ্য লাগে? কিন্তু তর সর্বাঙ্গে আমার ছোয়া লেগে আছে।আমার সাথেই তোকে থাকতে হবে। আর এই অধিকার অগ্নি চৌধুরি অর্জন করেছে””
ইয়ানা নিজেকে ছড়াতে ছড়াতে বলে,,,,,
“” থাকতে চাই না আমি আপনার সাথে। আমি কাল ওই বাড়ি চলে যাব “”
আহান নিজের রাগ নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়ে ইয়ানাকে সজোরে থাপ্পর বসায়। ইয়ানা পরে যেতে নিলে আহান ধরে ফেলে।
এরপর দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,

“” আমার থেকে মুক্তি পাওয়ার খুব ইচ্ছে তাই না ঠিক আছে ছাদে চল””
আহান ইয়ানাকে এক প্রকার টেনে হেচরে উপরে নিয়ে যায়। ইয়ানা ব্যথায় ছটফট করা শুরু করে। আহান ইয়ানার হাত খুব শক্ত ভাবে ধরে রেখেছে। এরপর ছাদের রেলিং এর কাছে এসে ইয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে ফেলে দেয়। ইয়ানা চিৎকার করতে নিবে আহান সাথে সাথে হাত ধরে ফেলে।
ইয়ানা ভয়ে কান্না ভুলে গিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,

“” প্লিজ আহান উপরে তুলুন আমার ভীষন ভয় করছে। হাত ছেড়ে দিবেন না প্লিজ। হাত ছেড়ে দিলে আমি পড়ে যাবো। এই ছাদ থেকে পড়লে আমি মরে যাব। আমার এত তারাতারি মরার ইচ্ছে নেই। এখনো বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখতে পাই নি। আগে দশ বারোটা বাচ্চা কাচ্ছা হোক তারপর না হয় শান্তিতে মরবো। “””
আহান ইয়ানার কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে যায়। আহানতো ওকে ভয় দেখানোর জন্য এমন করেছে কিন্তু ইয়ানা এইসব বলেবে সে চিন্তা ও করে নি। আহান অবাক হয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“”” what! দশ – বারোটা বাচ্চা মানে কি? দশ বারোটা বাচ্চার মানে বুঝ তুমি। সামলাতে পারবে তো তাদের। সাথে কিন্তু আমার অত্যাচার ফ্রি। আর আমার ভালোবাসা বাকি ভালোবাসার মত এত মিষ্টি না সেটা তুমি এক রাতেই বুঝতে পেরেছো। অগ্নি চৌধুরি তার প্রেয়সীকে ছুলেই সেখানে দাগ হয়ে যায়। তুমি যদি বলো তাহলে আজ রাতেই প্রসেসিং শুরু করব “””

ইয়ানা আহানের কোনো কথা কানে তুলে নি। সে ভয়ে দোয়া ইউনুস পাঠ করছে। এই বুঝি ছাদ থেকে পরে জীবনটা গেলো। আহান ইয়ানার নেত্র বন্ধ করা দেখে এক টানে নিজের সামনে এসে দাড় করায়।ইয়ানা আহানের বক্ষে লুটিয়ে পড়ে। আহান ইয়ানার কোনো রেসপন্স না পেয়ে কপাল কুচকে নেয়।ইয়ানাকে ভালোভাবে পরখ করে বুঝতে পারে অতিরিক্ত ভয় আর কান্নার কারনে ঙ্গান হারিয়েছে। এরপর আহান ইয়ানাকে পাজাকোলে নিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে বিছানায় শুয়ে দেয়।

ফজরের নামাজ পড়ে সুমু নিজের রুমে পড়তে বসে। হঠাৎ বারান্দার দরজা ধ্বাক্কানোর শব্দ কানে ভেসে আসে। কে আসলো এখন ওতো সূর্যদয় হয় নি। কয়েকবার দরজার আঘাত এর শব্দ পেয়ে সুমু ভয়ে একটা শুকনো ঢুক গিলে। ভুত নয়তো আবার। নিজের মনকে নিজে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
“” চুপ সুমু কি বলছিস এইগুলো। ভুত বলতে কিছু হয় নাকি”
এরপর ভয়ে ভয়ে বারান্দার গ্লাস দিয়ে উকি দিতেই মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেছে। এরপর সুমু দরজা খুলে লোকটার দিকে তাকাতেই চোখ বড়বড় হয়ে যায়। মুখ হা করে কপাল কুচকে লোকটিকে দেখতে থাকে। সুমু লোকটিকে এই সময় এই জায়গায় দেখবে কখনো সপ্নে ও ভাবে নি। সুমুর হা করা মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,

“” কেমন মানুষ তুমি। এই ভোরে আমার মতো এমন একটা নিষ্পাপ মানুষ কখন থেকে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে তোমার খবর নেই।
সুমু অবিশ্বস্য নজরে বলে,,,,,,
“” আ.. আপনি “”
এরপর সুমু ব্যক্তিটির সামনে থেকে সরে গিয়ে বেলকনির দিকে উকি দেয় কেউ দেখেছে কি না।
সুমুর কথায় ব্যক্তটি হেসে উত্তর দেয়,,,,,,,,,
“” হুম আমি কেনো আমাকে দেখে তুমি খুশি হও নি? “”
সুমু অবাক হয়ে বলে,,,,
“” সত্যি আপনি রায়ানতো?

সুমু নিজের মন ভুল ভেবে হাতে একটা চিমটি কেটে আহহ,, করে উঠে।
রায়ান তারাতারি করে সুমুর হাতটাকে নিজের কাছে নিয়ে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,,,,
“” চিমটি কেটেছো কেনো হাতে। কেনো আমি আসতে পারি না এত অবাক হওয়ার কি আছে””
সুমাইয়া — কিন্তু আপনি এখানে আসতে গেলেন কেনো?
আঙ্কেল আন্টি দেখতে পেলে খুব বড় ঝামেলা হয়ে পড়বে।
রায়ান — — কেউ দেখবে না আর কয়েকদিন পড় তো তুমি আমার লিখিত দলিল।
সুমু রায়ানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। এরপর বলে,,,,
“” আচ্ছা আপনি বসুন আমি কফি নিয়ে আসছি “”

রায়ান সুমুর এটো করা কফির মগের দিকে তাকায় । এইটা হাতে তুলে নিয়ে বলে,,,,
“” কফি যখন আছে তাহলে নতুন করে বানানোর কি প্রয়োজন””
সুমাইয়া — আরে এইটা আমার এঁটো করা।। এইটা খাবেন কি করে।
রায়ান সুমুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে,,,,
“” যখন তোমার পুরো অস্তিত্বটাই আমার তখন সামান্য এঁটো দিয়ে কি যায় আসে।।””
সুমু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।। ইসস লোকটার মুখে আজকাল কিছু আটকায় না। রায়ান সুমুর লজ্জা মাখা মুখ দেখে আহত সুরে বলে,,,
“” পুরে গিয়েছে। খুব জ্বলা করছে সেই পুড়ে যাওয়া যায়গায়। সহ্য করতে পারছি না এতটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে।

সুমু রায়ানের কথায় ভড়কে যায়।
সুমু — কোথায় পুড়ে গেছে বলুন আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।
এই বলে সুমু ড্র‍য়ার থেকে মলম আনতে গেলে রায়ান সুমুর হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। হঠাৎ আক্রমনে সুমু ভরকে যায়। সুমু জীবনের এই প্রথম কোনো ছেলের এত সন্নিকটে। রায়ানের শরীর থেকে এক মাতাল করা ঘ্রান এসে নাকে বারি খায়। সুমু নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়।
রায়ান সুমুর বন্ধ চোখ জোরা দেখে বলে,,,,
“” সেই জায়গায় যে মলম লাগানো যায় না। এক মায়াবতীর রুপে ঝলসে গেছে সেই হৃদয়। সেই হৃদয়ে মলম লাগাবো কিভাবে? সেই মায়াবিনী কে যখন নিজের করে পাবো ওইদিন আমার পুড়ে যাওয়া জায়গা ঠিক হয়ে যাবে। কোনো মলমের প্র‍য়োজন হবে না। “”

এই বলে রায়ান সুমুর কানের লতিতে ছোট একটা চুমু খায়। আবেশে চোখ বন্ধ করে সুমু সেই ভালোবাসা গ্রহন করে। রায়ান সুমুর বন্ধ চোখ জোরার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রায়ান চলে যাওয়ার পর সুমু লজ্জায় দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ডেকে ফেলে। জীবনের প্রথম কোনো ছেলের ছোয়া পেয়ে সুমুর হৃদয়ে এক অদ্ভুত সিহরন বয়ে গেছে। এই ছোয়াতে কোনো অস্বস্তি কাজ করে না বরং ভালোলাগা কাজ করেছে।

সকালের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই ইয়ানা চোখ মেলে তাকায়। ভালোভাবে নিজের অবস্থান পরখ করে বুঝতে পারে সে আহানের রুমে আছে। বিছানা থেকে উঠে মেঝেতে পা রাখতেই মাথাটা ভারি ভারি লাগে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় সারে ছয়টা। মাথায় চেপে কোনো রকম উঠে বসল। মনে পড়ে যায় রতের সেই ভয়ানক ঘটনা। ভয়ে নিজেকে নিজে আশ্বাস দিয়ে বলে,,,,,

“” না ইয়ানা ভয় পেয়ে তোকে পিছু পা হলে চলবে না। ওনাকে তোর খারাপ পথ থেকে ফরিয়ে আনতে হবে। প্রতিদিন যদি বিছানার চাদর গুছাতে পারি জানি সেটা আবার অগাছালো হবে তাহলে একজন অগুছালো মানুষকে গুছাতে পারবো না। হোক সেটা কষ্টকর তোকে পারতে হবে। তার অস্তিত্বে স্পর্শ করা প্রথম পুরষ হলো আহান। এইসব ভেবে ইয়ানা লম্বা শ্বাস নেই। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখে আহানের কোনো অস্তিত্ব নেই। বুঝতে পারে আহান জগিং এ গেছে। ইয়ানা ফ্রেশ হতে চলে যায় ওয়াশরুমে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে একটা কালো কুর্তি তার সাথে একটা প্লাজু পরে আর মাথায় উরনা দিয়ে ঢেকে নেয়। বাহিরের আবহাওয়া ও বেশি একটা ভালো না মনে হচ্ছে ঝড় আসবে। ইয়ানা গুটি শুটি পায়ে নিচে ড্রয়িংরুমে নেমে আসে। দাদুমনি আর মিসেস নাফিসাকে হাসিমুখে বলে।,,,,,,,

“” শুভ সকাল আপনাদের “”
দাদুমনি উত্তর দিলে ও মিসেস নাফিসা মুখ ঘোমরা করে আছে। ঝর্নার হাতের একটা আঙ্গুল কেটে ফেলেছে। ফলে মেয়েটা সারাক্ষন কান্না কাটি করছে। কিন্ত এখানে ওর কি দোষ। ইয়ানা ধীর পায়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করে। আজ সে নিজে রান্না করবে। কেউ কিছু বললে ও শুনবে না। ইয়ানাকে রান্না করতে দেখে দাদুমনি বলে,,,,,
“”” তুই রান্না করতে যাচ্ছিস কেনো? আহান দেখলে শুধু শুধু অশান্তি করবে। “”
ইয়ানা কাজ করতে করতে বলে,,,,,,
“” ওহহ দাদুমনি রাখতো ওনার কথা। সবকিছুতেই ওনার অশান্তি। সারাদিন তো বসেই থাকি মাঝে মাঝে রান্না করলে কিচ্ছু হবে না। “”””
দাদুমনি —– তর ইচ্ছে দেখিস হাত পুড়িয়ে ফেলিস না সাবধান।
ইয়ানা — হুম।

ইয়ানা রান্না শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভিবানে এসে গা এলিয়ে দেয়। আজ যেহেতু ঠান্ডা দিন তাই ঘামে নি।
তখন আহান বড় বড় পা ফেলে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। ইয়ানার দিকে এক পলক তাকায় দেখে সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এর পর আর এক মুহূর্ত ও দেরী না করে নিজের রুমে চলে যায়। আহান চলে যেতেই ইয়ানা একটা লম্বা শ্বাস নেয়। মনে মনে দোয়া করছে আজ যাতে আহান ডাক না দেয়।
আহান রুমে গিয়ে লম্বা এক হট শাওয়ার নিয়ে অফিসের গেট আপ পড়ে নেয়। সত্যি ইয়ানাকে একবারের জন্য ও ডাক দেয় নি।

সর্ভেন্টরা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। এক এক করে সবাই খাবার খেতে বসে পড়ে। শুধু আহান আর ঝর্না নেই। ইয়ানা একটা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। আহান ও যদি সবার সাথে বসে খেত কত ভালো হত।
খাবার খেয়ে সাজিদ চৌধুরি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” আরে বাহহহ রান্না তো খুব সুস্বাদু হয়েছে”””
দাদুমনি —- হুম তুই তো খুব ভালো রান্না করতে পারিস। কোথা থেকে শিখেছিস শুনি। আজকালকার মেয়েরা তো রান্না করতেই জানে না।
ইয়ানা সবার এত প্রশংসা পেয়ে খুব লজ্জা পায়। একটু প্রশংসা করার কি আছে একটু রান্নাইতো করেছে।
ইয়ানা দাদুমনির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“”” ওই মাঝে মঝে আম্মু রান্না করলে বসে বসে দেখতাম। আম্মুর থেকেই শিখেছি “””

আহান অফিসে যাওয়ার জন্য নিচে নামে। দরজার কাছে যেতেই কারোর কথা কানে ধাক্কা খায়।
রেশব —— আরে বাহহ ইয়ানা তুমি তো খুব ভালো রান্না করতে পারো। তোমার মতো একটা সুন্দরি গুনবতী বউ হলেই হবে।

আহান কপাল কুচকে একবার ইয়ানার দিকে তাকায়। দেখে সে হাসি মুখে সবার সাথে কথ বলছে। আহানের সাথে চোখাচোখি হলে ও দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। আহান ইয়ানার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সবার দিকে এক এক করে তাকিয়ে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। আহানকে খাবার টেবিলের সামনে দেখে এক একজনের ভিমরি খাওয়ার মতো অবস্থা। আহান কারোর দিকে না তাকিয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়ে। আহানকে দেখে আহিয়া চোখ বড় বড় করে তাকায়। এ তার দাদাভাইতো নাকি অন্য কেউ। সবার ও ঠিক একই অবস্থা। যেই ছেলেকে এত বলে ও খাবার টেবিলে আনতে পারে নি সে আজ সেচ্ছায় এসেছে বিষয়টা সত্যি সন্দেহ জনক। ইয়ানা তো ভয় পাচ্ছে খাওয়ার জন্য বসেছে নাকি আবার কোনো ঘূর্নিঝর চালাবে।
আহান সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করে,,,,,,

“” তোমাদের মেয়ের জন্য কি জামাই দেখছো যে এইভাবে তাকিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পরখ করছো? ‘”
আহানের কথায় সবাই থমথমে খেয়ে যায়। জীবনে ও সোজা কথা বলতে পারে না।
কজের খালা এসে আহানেকে জিজ্ঞাসা করে,,,,
“” কি খাবে বাবা? তুমি কি খাও, কি পছন্দ কর তা তো জানি না, বললে ভালো হত। “”
আহান খালার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” এখন আমি যদি বলি আমার পছন্দের খাবারের কথা আমাকে কি অল্প সময়ের মধ্যে রান্না করে দিবে। যেটা পারবে না সেটা বলো কেনো? যা আছে তাই দেও। “”
ইয়ানা কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আহান খেতে বসেছে। ও কত বলেছে কিন্ত তখন তো ঠিক রাগ দেখাতো।
খালা ইয়ানার রান্না করা খাবার আহানের সামনে এনে রাখে। খাওয়ার সময় সাজিদ চৌধুরি আহানের উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,,

“” বিয়ে তো হয়েছে অনেক দিন হলো। এখন তোমাদের নিজেদের একটু সময় দেওয়ার প্রয়োজন। তুমি তো বিয়ের পর থেকেই কাজের মধ্য দিয়ে যাচ্ছো। নিশ্চয় নিজেদেরকে নিজেরা সময় দিতে পারছো না। তোমাদের জন্য কানাডার টিকিট বুক করছি চাইলে ঘুরে আসতে পারো। যদি অন্য দেশে যাওয়ার ইচ্ছে হয় তাহলে বলো আমি টিকিট বুক করে দিচ্ছি। “”
আহান খাবারে চামচ নাড়াতে নাড়াতে বলে,,,,,
“” আপনি কি কোনোভাবে হানিমুনে যাওয়ার কথা বলছেন””?
সাজিদ হোসেন একটু কাশি দিয়ে বলে,,,,
“” হ্যা এরকম ওই। তোমাদের ভাষায় যা বলে আরকি “””
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” তুমি ও কি হানিমুনে যেতে চাও। “”
ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচে করে ফেল। হানিমুনে যাওয়ার কথা ওনি কিভাবে বলে যাচ্ছেন।। আহান ইয়ানার দিকে চোখ সরিয়ে নিয়ে খাবারের দিকে তাকায় ঘম্ভির কন্ঠে বলে,,
“” হানিমুনে গিয়ে বউয়ের সাথে রুমান্স করে। বউয়ের সাথে রুমান্স করতে অন্য দেশে যাওয়ার কি প্রয়োজন। এত টাকা খরচ করে বাড়ি ঘর বানিয়েছি কেনো? যদি অন্যের তৈরি করা বাড়িতে গিয়ে বউয়ের সাথে সময় কাটাতে হয়””

ইয়ানার ইচ্ছে করছিলো মাটি ফাক করে ভিতরে ঢুকে যেতে। অন্তত এই লোকের লাগামহীন কথা থেকে তো বাঁচবে। লাজ লজ্জা বলে কিছু নেই। বড়দের সামনে কি কথা বলতে হয় তাও জানে না নির্লজ্জ লোক।
সাজিদ হোসেন ও আহানের কথায় থমথমে খেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। এই নির্লজ্জ ছেলে বাবাকে ও মানবে না। আমার কথাটা বলাই ভুল হয়েছে।
আহিয়া আর দাদুমনি মিটিমিটি হাসছে আহানের কথা শুনে। আহান খাবার খাওয়া শেষ করে রেশবের পিঠে হাত দিয়ে বলে,,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৩২

“”” অন্যের বউয়ের প্রশংসা করা এখন থেকে বাদ দে। আর ইয়ানাকে নাম ধরে নয় ভাবি ডাকবি। আই রিপিট ভাবি বলে ডাকবি। beacouse she is my wife. হুম এর পর থেকে যেনো মনে থাকে। আর মনে না থাকলে আমার স্টাইলে মনে করিয়ে দিব””
এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে,,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৪