অনুভবে তুমি পর্ব ৩৫
লিজা মনি
ইয়ানা আহানের কথা শুনা মাত্র ওই নিজের হিচকি বন্ধ করে নেয়। এই লোককে নিয়ে বিশ্বাস নেই। যা বলে তাই করে ফেলতে পারে।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” রিলাক্স বউ এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি কিছু করব না। এখন আমার অনেক কাজ আছে রুমান্টিকতার মুডে নেই। তাই এত ঘাবরাতে হবে না। রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়। আমার কিছু কাজ আছে এইগুলো শেষ করি।
ইয়ানা বুঝে পায় না এই লোকের মাথায় শুধু এইসব ঘুরে। ভালো কথা মুখ দিয়ে বের হয় না। ইয়ানা ছোট করে উত্তর দেয়,,,,,
“” হুম “”
ইয়ানা শুয়ে গেলে আহান নিজের ল্যাপটপ নিয়ে ভিবানে বসে পড়ে। কাজ করার মাঝে হঠাৎ ফোন আসায় বিরক্তি নিয়ে মুখে ” চ” শব্দ করে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়।অপরিচিত নাম্বার দেখে কপাল কুচকে নেয়। তারপর কিছু একটা ভেবে ফোন হাতে নিয়ে এক পলক ইয়ানার দিকে তাকায়। দেখে সে গভীর ঘুমে মগ্ন। আহান ভেবে পায় না এত তারাতারি একটা মানুষ কিভাবে ঘুমাতে পারে। আহান ইয়ানার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চলে যায় নিজের তৈরি করা বারে।
ওইপাশ থেকে,,,,,,
“” তা মি, অগ্নি চৌধুরি বউ নিয়ে কেমন আছো “”
আহান — আমি তো ঠিক আছি মি. শেখ কিন্তু আপনি আপনার পরকীয়া করে পাওয়া বউকে নিয়ে ভালো আছেন তো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শেখ —- মুখ সামলে কথা বলো আহান ওনি তোমার খালা হয়।
আহান শেখের কথা শুনে রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।কিন্তু ভুল সময় ভুল যায়গায় রাগ দেখলে হবে না। সঠিক সময় তীর ছুড়তে হয়।এরপর আহান বিদ্রুপ করে বলে ,,,,
“” খালা শব্দের মানে বুঝে ওই মহিলা। খালা হলো মায়ের পরে যে সবচেয়ে বেশি আগলে রাখে। কিন্তু ওই মহিলা তো আমার মাকেই বাঁচতে দেয় নি। সম্পত্তির জন্য আমার কাকা আর ছোট মাকে ও মেরেছে। একটা কথা মনে রাখবি রানবীর শেখ তোর ছেলেকে যেই মৃত্যু যন্ত্রনা দিয়েছি তার থেকে ও দিগুন নরক যন্ত্রনা দিয়ে শেষ করব তোদের। আর অগ্নি চৌধুরি সম্পর্কে নিশ্চয় সব ধারনা রেখে খেলায় নেমেছিস।
রানবীর শেখ —– জানি আমি তুই খুব হিংস্র। মৃত্যুর চেয়ে কঠিন যন্ত্রনা দিয়ে তুই শত্রুদের শেষ করিস। তোকে জানতে হলে রাতের অন্ধকারে দেখতে হবে। তাহলে বুঝবে তুই কেমন। কিন্তু আমি ও রানবীর শেখ। তুই কারনে মানুষ খুন করিস কিন্তু আমি অকারনেই মেরে ফেলি। তোর বউকে মেরে আমি তোকে তিলে তিলে শেষ করব অগ্নি চৌধুরি । কুকুরের মতো অবস্থা করব আমি তোর। আমার ছেলেকে মেরে ফেলার প্রত্যেকটা হিসাব আমি তিলে তিলে নিব।
আহানের ইচ্ছে করছে রানবীরকে মেরে তার দেহটা কুকুর দিয়ে খাওয়াতে। কিন্তু ওইটা ও সঠিক সময় আসলে অবশ্যই করবে। আহান রানবীরের কথা শুনে রেগে দাতে দাত চেপে বলে,,,,
“” সাহস থাকলে ছুয়ে দেখাস। আর আমি অগ্নি চৌধুরি ও দেখব আমার কলিজায় কে হাত বাড়ায়। খেলাটা তাহলে সামনাসামনি হোক।
রুয়ানা সকাল থেকে সেলিনা হোসেনকে শান্ত করে চলছে।
রুয়ানা —- ও আম্মু শান্ত হও নাগো প্লিজ। এইভাবে হাইপার হলে তোমার প্রেসারের সমস্যা হবে।
সেলিনা হোসেন —- হোক সমস্যা। কতদিন ধরে মেয়েটাকে দেখি না। বিয়ে হয়েছে তিন মাস হয়েছে একদিন ওকি আহান আমার মেয়েটাকে নিয়ে আসতে পারে নি। মানছি ও অনেক বড় ব্যবসায়ী প্রচুর কাজের চাপে থকে তাই বলে কি একদিন ও সময় পাই নি। আমি আমার মেয়েকে এই ছেলের সাথে থকতে দিব না। আমি ওর থেকে থেকে আমার মেয়েকে নিয়ে চলে আসব আজীবনের জন্য। প্রয়োজনে হলে ডিভোর্স করিয়ে আনবো তবুও এই ছেলের সংসার করতে দিব না।
রুয়ানা মায়ের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে ফেলে। আজ ঠিক মতো ক্ষেপেছে যে করেই হোক শান্ত করাতে হবে।
রুয়ানা —- সকাল থেকে বকবক করছো এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো আবার ডিভোর্সের কথা তুলছো কেনো। এই কথা যদি ভাইয়া জানতে পারে তাহলে খুব রেগে যাবে। তোমার কি মনে হয় তুমি বললেই আহান ভাইয়া আপুকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। ভুলে গেছো ভাইয়া কিভাবে বেপরোয়া হয়ে বিয়ে করেছে। ভালোবাসে বিধায় ছুটে গিয়েছিলো ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে। আর তাছড়া আপু এখন ভাইয়ার লিগ্যালি ওয়াইফ। আমাদের থেকে উনার অধিকার বেশি।
সেলিনা হোসেন গাজর কাটতে কাটতে বলে,,,,,,,
“” বিয়ে করেছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে। আমাদের কি আমার মেয়ের উপর কোনো অধিকার নেই একটু দেখা ও করতে পারবো না। আমার মেয়েটাকে এইভাবে ঘর বন্ধি করে রাখবে। “”
রুয়ানা —- কে বলেছে আপুকে ঘর বন্ধী করে রেখেছে। ভাইয়া আপুকে ভার্সিটিতে যেতে দিচ্ছে। আর সময় হলে আমাদের বাড়িতে ও নিয়ে আসবে। হয়ত কোনো এক কারনে আসতে পারছে না। তুমি যখন আপুর সাথে কথা বলো তোমার মনে হয় আপু কষ্টে আছে। হ্যা হয়ত আমাদের জন্য একটু মন খারাপ করে কিন্তু আপু খুব শুখে আছে। আহান ভাইয়া আপুকে খুব ভালোবাসে আম্মু। আর ওনি আপুর কিছু হতে দিবে না এতদিনে আমি এইটুকু চিনে গেছি।
মিসেস সেলিনা হোসেন একটা নিশ্বাস ছাড়ে। ইয়ানা ঠিক থাকলে তারাও খুশি। আহানের ব্যবহারে তারা খুব অসন্তুষ্ট। কখনো ভুলবে না আহান কিভাবে ইয়ানাকে বিয়ে করেছে।নিজের মেয়ের খুশির জন্য তারা আহানকে মেনে নিয়েছে নিজের স্বমীকে ও বুঝিয়েছে।
রুয়ানা মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সেলিনা হোসেন কিছু একটা ভাবছে। রুয়ানা একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,
“” যাক বাবা কিছু একটা বলে ঘূর্নিঝর থামাতে পেরেছি। যেভাবে শুরু করেছিলো আমি তো ভেবেছিলাম আমাদের ঘরটাই উলটে যাবে। আম্মু শান্ত হয়েছে এইটা অনেক।
ইয়ানা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছরাচ্ছিলো। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় হালকা কেঁপে উঠে। যখন বুঝতে পারে কে জড়িয়ে ধরেছে তখন পিছন ফিরে তাকিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে বলে,,,,,,
“”” কি হলো।সকাল সকাল এত ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে কেনো শুনি।
আহান ইয়ানাকে শক্ত করে চেপে ধরে কপালে ডিপলি চুমু দিয়ে বলে,,,,,,
“” আমার বউকে আমি জ্ড়িয়ে ধরেছি। সেখানে তোমাকে বলতে যাব কেনো শুনি।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে বিরক্তি হয়ে মনে মনে ভবে,,,,,
এই লোক জীবনে সোজা কথা বলতে পারে না। আবার আমাকে ডাকে ঘার ত্যারা। নিজে যে ঘার ত্যারার গোডাউন এইটা কি ওনি জানেন। ইয়ানা আহান থেকে নিজেকে বিরক্তি নিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। আহান ইয়ানার মুখের দিকে এক পলক তাকায়। এরপর জড়িয়ে ধরে কানে ফিস ফিসিয়ে বলে,,,,
“” ওহে বালিকা দেমাগ দেখিও না হৃদস্পন্দন দখল করে নিব। “”
আহানের ফিসফিস করা কথা ইয়ানার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে। ইয়ানা আহানের বুকে মুখ গুজে। ইচ্ছে করছে শার্ট ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যেতে। আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” বউ কি আমাকে লজ্জা পাচ্ছে। এক রাতে কি বউয়ের লজ্জা ভাঙ্গাতে পারলাম না। কেমন পুরুষ আমি। তুমি চাইলে লজ্জা ভাঙ্গার প্রসেসিং শুরু করতে পারি।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে আহানের বুকে চিমটি কেটে বলে,,,,,,,
“”” সবসসময় আমাকে লজ্জায় ফেলে কি মজা পান আপনি শুনি। “”
আহান ইয়ানার চিবুক ধরে বলে,,,,,
“” কারন এই লজ্জাবতীর লজ্জামাখা মুখ দেখলে অগ্নি চৌধুরির বুকে ঘূর্নিঝর শুরু হয়। বেসামাল হয়ে পড়ে তার অস্তিত্ব । ইচ্ছে করে তার ভালোবাসায় বার বার ডুব দিতে। কিন্তু আমার শশুর মশাই তো আমার বউকে তুলা খাইয়ে বড় করেছে। ভাগ্য করে বউ পেয়েছি আমি। থাপ্পর দিলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আর ভালোবাসতে গেলে জ্বর চলে আসে। যদি বউকে প্রতিদিন ভালোবাসতে যায় দেখা গেলো বউ আমার বারো মাস জ্বরে ভুগছে। কিন্ত এইটা তো অগ্মি চৌধুরি কখনো হতে দিবে না।
ইয়ানা আহানের বুক থেকে মুখ উঠিয়ে বলে,,,,
“” আপনি কি কোনোভাবে আমাকে অপমান করছেন।””
আহান — ওহুম একদম অপমান করছি না। যাস্ট সত্তিটা বলেছি। অগ্নি চৌধুরির ভালোবাসা বহন করার শক্তি তোমার এখনো হয় নি। সেটা আমি এক রাতেই বুঝতে পারেছি। খুব উইক তুমি ইয়ানা। আমার ভালোবাসা বহন করার জন্য তোমার প্রচুর শক্তির প্রয়োজন।
এরপর আহান ইয়ানা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। নিজের কাবার্ড থেকে একটা কাগজ বের করে ইয়ানার সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপর কাগজটা ইয়ানার হাতে নিয়ে বলে,,,,,,
“”” এই নাও তোমার খাবার খাওয়ার রুটিন। এখন থেকে এই রুটিন মেনে খাবার খাবে। এর চেয়ে যদি কম খেয়েছো তাহলে খবর আছে।””
ইয়ানা আহানের থেকে কাগজটা হাতে নেয়। এরপর একটু পড়েই চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকায়। আহান ইয়ানার তাকানো দেখে বলে,,,,,
“” এইভাবে তাকালে লাভ হবে না। তোমাকে যেভাবে রুটিনটা দিয়েছি ঠিক সেভাবেই খেতে হবে””
ইয়ানা —- আমাকে দেখে কি আপনার কুম্ভকর্ন মনে হয়। এত খাবার আমি প্রতিদিন খাব কিভাবে?
আহান —- এই জন্য শরীরের এই হাল। এই সামান্য খাবার কে তোমার অনেক মনে হচ্ছে।
ইয়ানা নাক মুখ ছিটকিয়ে আহানের কাছে কাগজটা দিয়ে বলে,,,,
“” আমি এইসব ঘাসপাতা খেতে পারব না। ওয়াক ওয়াক দেখলেই বমি চলে আসে আর খাওয়া তো বিলাসিতা।””
আহান ইয়ানার নাক মুখ ছিটকানো দেখে বলে,,,,
“” এইভাবে নাক মুখ ছিটকানোর কি আছে।এইসব খাবার খেলে স্বাস্থ ভালো থাকে। এইসব তো স্বাস্থ্যকর খাবার। স্যালাড আর.. আহানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইয়ানা বলে,,,,,
“”” হ্যা অনেক স্বাস্থ্যকর খাবার। আপনার মতো দানব শরীরের অধিকারী হব। কিন্তু আমার এমন শরীরের প্রয়োজন নেই। “”
আহান ইয়ানাকে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
“” থাপ্পর চিনো? থাপরিয়ে আবার অজ্ঞান করবো বিয়াদপ মেয়ে।কথায় কথায় এত লজিক কোথায় পাও তুমি? যেভাবে বলছি ঠিক সেভাবেই চলবে। এইটুকু একটা শরীর ভালোবাসার জন্য জায়গা খুজে পায় না। জামাকাপড় বের করো অফিসে যাওয়ার জন্য আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আহান ওয়াশরুমের সামনে যেতেই ইয়ানার কন্ঠস্বর শুনে থমকে দাঁড়ায়।
“” আহান “”
এই কন্ঠস্বর আজ এমন দেখাচ্ছে কেনো। যেনো এই ডাকটার মধ্যে অনেক দিনের প্রত্যাশা লুকিয়ে আছে। আহান পিছন ফিরে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,
“” কি হয়েছে তোমার কন্ঠস্বর এমন দেখাচ্ছে কেনো? কিছু কি হয়েছে বলো আমায়? ধমক দিয়েছি বলে কষ্ট পেয়েছো?
ইয়ানা আহানের ব্যকুলতা দেখে বলে,,,,,,
“” আমি যদি আপনার কাছে কিছু চাই তাহলে আমায় দিবেন “”
হঠাৎ করে আহানের বুকটা ধুক করে উঠে। এতটা কাতরতা নিয়ে ইয়ানা কখনো আহানের কাছে আবদার করে নি। তাহলে আজ কিভাবে ফিরিয়ে দিবে এই হৃদয়হিরনীর আবদার।
আহান ইয়ানার দিকে তকিয়ে বলে,,,,,
“” আমায় ছেড়ে চলে যাওয়া বাদে যা চাও আমি তাই দিব।
কি চাই তোমার একবার শুধু বলো?
ইয়ানা একটা শুকনো ঢুক গিলে। আল্লাহ যানে এইটা শুনার পর আহান নি আবার রেগে যায়। তারপর ও সাহস সঞ্চয় করে বলে,,,,,,
“” আহান আমি বাড়ি যেতে চায়। অনেকদিন ধরে নিজের বাবা মাকে দেখি না ভিতরটা হাহাকার করছে। কতদিন ধরে মায়ের হাতের খাবার খায় না বাবার সাথে খুনশুটি তে মেতে উঠি না। নিজের বোনটার সাথে সময় কাটাতে পারি না। আমি বাড়ি গিয়ে নিজের পরিবারে সাথে সময় কাটাতে চায় আহান। আপনি কি একবার আমাকে নিয়ে যাবেন।
এই বলে ইয়ানা নিজের চোখ বন্ধ করে নেই। নির্ঘাত আহান রেগে আছে। এই বুঝি গালে দাবাং মার্কা চড়টা পড়লো। কিন্তু গালে কারোর হাতের স্পর্শ অনুভব করে ইয়ানা চোখ মেলে তাকায়। আহান ইয়ানার দুই গাল আলতো করে ধরে বলে,,,,,
“” বাড়ি যেতে চাও তাইতো। ঠিক আছে আমি বিকালে অফিস থেকে এসে তোমায় পৌছে দিব। “”
ইয়ানা আহানের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে তাকায়। এইটা আহান তো নাকি ভালো মানুষদের ভুত ভর করেছে। বাড়ির কথা শুনলেই যেই ছেলে রেগে যেত সে আজ এত সুন্দর করে রাজি হয়ে গেলো। ব্যাপারটা ঠিক মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ইয়ানা আহানের কপালে হাত রেখে অধৈর্য গলায় বলে,,,,,,,
“” আপনি ঠিক আছেন তো আহান। আপনার কিছু হয় নি তো। আমার না আপনার রাজি হয়ে যাওয়াটা ঠিক হজম হচ্ছে না।
আহান —- হজম না হলে হজমের মেডিসিন নাও। হজম হয়ে যাবে।
এই বলে আহান ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে ভেভাচেকা খেয়ে যায়। কি বলে গেলো এই লোক। পর মুহূর্তে মনে পড়ে যায় আহান ইয়ানাকে ওর বাড়ি নিয়ে যাবে। এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে। আমি আপনাকে ঠিক করবো আহান। অমাবশ্যা থেকে ফিরিয়ে এনে আপনাকে আলোর সন্ধান করাবো। আর এইটা ইয়ানা বিনতে আসাদ আপনাকে প্রতিজ্ঞা করলো।
ভার্সিটি ছুটি হয়ে যাওয়াতে ড্রাইভার এসে ইয়ানাকে নিয়ে যায়। বন্ধুমহলের সবাই চলে যাই। সুমাইয়া ভার্সিটির সামনে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে। ঠিক তখন তার সামনে একটা কালো সাদা রঙ্গের গাড়ি এসে থামে। সুমাইয়া গাড়িটাকে চিনতে না পেরে এইখান থেকে সরে যায়। গাড়ির মালিক সুমুর এই ব্যবহারে কপাল কুচকে নেয়। এইভাবে এড়িয়ে চলে গেলো কেনো? পরে মনে পরে আজ তো সে অন্য গাড়ি নিয়ে এসেছে তাই মহারানী চিনতে পারে নি। গাড়ির মালিক গাড়ি থেকে নেমে ঠিক সুমুর পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। সুমাইয়া পিছন ফিরতেই অবাক হয়ে যায়। অবাক হয়ে বলে,,,,,
“” রায়ান আপনি? আপনি তো এখন অফিসে থাকার কথা। আপনি আমার ভার্সিটির সামনে কি করছেন?
রায়ান —– বউকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিলো। তাই তো তুমার ভার্সিটির সামনে চলে আসলাম।
সুমুর ভিতরটা হঠাৎ হাহাকার করে উঠে। রায়ানের বউ মানে? তাহলে কি রায়ান আমার সাথে প্রতারনা করলো?
সুমু কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,,,,,
“” আপনার বউ মানে? আপনি বিয়ে করেছেন রায়ান আপনার বউ আছে?
রায়ান সুমুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,,,
কি মেয়েরে বাবা ওকে বউ বলেছি আর ও আরেকজনকে ভেবে নিয়েছে। বউয়ের সাথে দেখা করতে আসলে কি এই মেয়ের সামনে আসতাম।
রায়ান —– বিয়ে এখনো হয় নি। তবে মন থেকে তাকে বউ হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছি। এখন শুধু কাগজে কলমে হালাল ভাবে করা বাকি। এখন আপনি আর আপনার আঙ্কেল রাজি থাকলেই হবে। কি বিয়ে করবেন না আমাকে?
রায়ানের কথা শুনে সুমুর টনক নড়ল। সুমু রায়ানের কথা শুনে বলে,,,,
“” আপনি আমাকে বউ বলছেন? ”
রায়ান —- কেনো অন্য জনকে বলার কথা ছিলো? তুমি চাইলে বলতে পারি।
সুমু বাঘীনির ন্যায় ক্ষেপে গিয়ে বলে,,,,,,
“” শুধু বলে দেখুন অবস্থা খারাপ করবো আপনার। ”
রায়ান সুমুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে।,,,,,
“” একটা সুমুর রুপে আমি ঝলসে যায় আরেকটা সুমু আসলে তো আমি নিশ্বেস হয়ে যাব। আমার হৃদয়হরন তুমি করেছো তাহলে অন্যকে কিভাবে বউ বলে ডাকব শুনি। “”
সুমু রায়ানের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। রায়ান ইয়ানার লজ্জা মাখা মুখটা দেখে একটা প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে।
রায়ান —- এইভাবে লজ্জা পেলে কিন্তু আমি নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ি।
সুমু অসভ্য বলে সামনে এগিয়ে যায় রিক্সা ডাকার জন্য। রায়ান সুমুকে রিক্সা ডাকতে দেখে অবাক হয়। এই মেয়ের জন্য সমস্ত কাজ রেখে এসেছি পৌছে দিব বলে আর এই মেয়ে রিক্সা ডাকছে। রায়ান সুমুর সামনে গিয়ে বলে,,,,
“” বাড়ি চলো।
সুমু — বাড়িতে ওইত যাচ্ছি।
রায়ান —- গাটিতে উঠ গিয়ে।
সুমু —- রিক্সা থাকতে গাড়িতে উঠতে যাব কেনো?
রায়ান — তাহলে আমি কেনো এসেছি?
সুমু — কেনো এসেছেন? আপনি কেনো এসেছেন আমি কি করে জানব?
রায়ান — সুমু আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।
সুমু — রেগে গেলে আমি কি করব?
রায়ান —- কখন থেকে কি করব কি করব শুরু করেছো। তুমি জানোনা আমি কেনো এসেছি? তাহলে এইভাবে রাগিয়ে দিচ্ছো কেনো?
সুমু রায়ানের অবস্থা দেখে খিল খিল করে হেসে উঠে। রাস্তায় তখন কেউ ছিলো না তাই কেউ সুমুর হাসির শব্দ শুনতে পায় নি। রায়ান অপলক দৃষ্টি ফেলে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে। ইসস কি সুন্দর এই হাসি। ইচ্ছে করে এই মায়াবীনির ভালোবাসায় ডুব দিয়ে হারিয়ে যেতে।
সুমু নিজের হাসিকে কোনো রকম থামিয়ে বলে,,,,,,
“” কি রায়ান আমি তো মজা করছিলাম। আর আপনি বাচ্চাদের মতো রেগে যাচ্ছেন। আমি জানি আপনি আমাকে নিতে এসেছেন। আমি তো যাস্ট ফাইজলামি করেছি।
এই বলে সুমু আবার ও হেসে উঠে। রায়ান এক দৃষ্টিতে সুমুর দিকে তাকিয়ে থাকে। সুমু রায়ানকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে এক ভ্রু উচিয়ে বলে,,,,
“” কি হলো মি. রায়ান এইভাবে তকিয়ে আছেন কেনো?
রায়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” দেখছি কাউকে হাসলে এত সুন্দর কিভাবে লাগে। এই হাসির ঝংকার হৃদয়ে ঝংকার তোলে। ”
সুমু —- ধ্যাত গাড়িতে উঠুন। আপনি কিন্তু দিন দিন কবি হয়ে যাচ্ছেন।
রায়ান গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে,,,,
“” মানুষ প্রেমে পড়ল কবি হয়। তাহলে আমি এ আর এমন কি? আমাদের নিরামিষ আহান যদি আস্তে আস্তে আমিষ হতে পারে তাহলে আমি কি ভুল করলাম। আমি ওত এক কাদিম্বীনির প্রেমে আসক্ত। “””””
সুমু ——- হ্যা ঠিক বলেছেন। আমরা যখন যানতে পারি আহান ভাইয়া আর অগ্নি চৌধুরি এক ব্যক্তি তখন খুব খারাপ লেখেছিলো। ইয়ানাকে কিভাবে বিয়ে করেছে সব মিলিয়ে ঘৃনা করতাম। কিন্তু এখন আর আমরা ঘৃনা করি না। আহান ভাইয়া সত্যি ইয়ানাকে ভালোবাসে।”””
রায়ান —- হুম আমরা দেখেছি আহানের চোখে ইয়ানার জন্য ভালোবাসা। ছটফট করা। আর যেই ছেলে বন্ধুদের জন্য নিজের জীবন দিতে পিছু পা হয় না সে নিজের ভালোবাসাকে কখনো বিপদের সম্মুখীন হতে দিব না।
সুমু —- আপনাদের বন্ধত্ব দেখে মাঝে মাঝে দেখলে অবাক হই। এই যুগে এসে কিভাবে এতটা স্ট্রং বন্ধুত্ব থাকতে পারে। সত্যি আপনাদের না দেখলে বুঝতাম না।
রায়ান সুমুর কথা শুনে একটা নিশ্বাস ফেলে। আহান তাদের যতটা ভালোবাসে ততটা ভালোবাসা মনে হয় তারা ও বাসতে পারে নি।
ইয়ানা ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে সোজা দাদুমনির রুমে চলে যায়।
দাদুমনি —- কিরে কিছু বলবি?
ইয়ানা — হুম। আসলে দাদুমনি ওনি বলেছে আজ আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে। ওনেক দিন হলো বাড়িতে যায় না। আব্বু আম্মুর জন্য মনটা হাহাকার করছে।তাই বাড়িতে যেতে চাই আরকি।
দাদুমনি —— বাড়িতে যাবি এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে।আমিও এটাই ভাবছিলাম অনেকদিন ধরে তুই বাড়িতে যাস না। আহানির সাথে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর বলিনি। যদি আবার ও রাগ করে।যা কয়েক দিনকে থেকে আয় তোর ও ভালো লাগবে।
ইয়ানা ——ওকে দাদুমনি। আর হ্যাঁ আমি সবগুলো ঔষধ বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছি সময় মত খেয়ে নিবে। যদি একটা ঔষধের এদিক-সেদিক হয় তাহলে তোমার খবর আছে। আমি বাড়ি থেকে এসে সব গুলো ঔষধ এক এক করে দেখব।
দাদু মনে হাসি দেয় ইয়ানাকে বলে,,,,,,,,
“””যেই থ্রেট দিয়ে যাচ্ছিস না খেয়ে কি উপায় আছে। তুই কি জানিস তুই আহানের মত সাইকো হয়ে যাচ্ছিস””
ইয়ানা ফিক করে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” হ্যা উনার মত একটু কথা বলার চেষ্টা করছিলাম “”
এরপর ইয়ানা দাদুমনির সম্মতি পেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
রুমে গিয়ে নিজের সব কাপড় গুছিয়ে নেয়। আহানের কাপড় গুছাতে গিয়ে কার্বাডে হাত দেয়। এরপর কিছু একটা ভেবে হাত সরিয়ে নেয়। ওনার কাপড় ওনি এসে গুছিয়ে নিবে। আমি গোছাতে গেলে এদিক-সেদিক হবে। পরে আমার সাথে শুধু শুধু রাগারাগি করবে। ইয়ানা এইসব ভেবে আহানের কাপড় আর গুছায় নি। বেবি পিন্কের মধ্যে পাথরের কারুকাজ করা একটা শারি পড়ে নেয়। সাথে একটা পাথরের কাজ করে হিজাব পরে নেই। চোখে গাঢ় কাজল এঁকে ঠোঁটে লিপস্টিক দিতেই আহানের নিষেধের কথা মনে পড়ে যায়। উনিতো না করেছিলেন লিপস্টিক দিতে। দেখলে যদি আবার রাগারাগি করে। এর পর কিছু একটা ভেবে বলে,,, সমস্যা নেই কিছু একটা বলে ম্যানেজ করে নিব।
ইয়ানা সাজ শেষ করে আয়নার সামনে গিয়ে অবাক হয়ে বলে,,,,,
“আরে ইয়ানা তুই যে এত সুন্দর এইটা কি তুই জানতি। মাসআল্লাহ কি সুন্দর লাগছে তোকে কারোর যাতে নজর না লাগে ফু ফু।”
ইয়ানার ভাবনার মাঝে আহান রুমে ঢুকে। ইয়ানাকে খেয়াল না করে বিছানার দিকে কপাল কুচকে তাকায়। দেখে বিছানার উপর ইয়ানার কার্বাডের সমস্ত কাপড় গুছানো।
আহান মনে মনে ভাবে,,,
অনুভবে তুমি পর্ব ৩৪
“” একেই বলে মেয়ে মানুষ। একবার শুধু বলেছি বাবার বাড়ি নিয়ে যাব। খুশির ঠেলায় বাড়ির সমস্ত কাপড় গুছিয়ে নিয়েছে।যদি পাড়ত তাহলে পুরো শৌরুমটা গুছিয়ে নিত।
আহান ইয়ানাকে খুজতে গেলে চোখ আটকে যায় আয়নার সামনে বসে থাকা রমনীর দিকে। ইয়ানা এখন ও দেখেনি আহান এসেছে। আহান ইয়ানাকে দেখে থমকে গেছে।
এই রুপ আহানের ভিতর এক ঝংকার তুলছে।সে….