অনুভবে তুমি পর্ব ৩৭

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৭
লিজা মনি

বৃষ্টি দেখে ইয়ানার ঠোঁটের কোনে হাসি ফোঁটে উঠে। আজ কেউ নেই ওর রুমে ইচ্ছে মতো বৃষ্টিতে ভিজতে পারবে কেউ কিছু বলবে না। ইয়ানা খুশি মনে বারান্দার লাইট জালিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। খোলা আকাশের নিচে দড়াতেই ইয়ানার স্নিগ্ধ শরীরে বৃষ্টির ফোটা পড়তে থাকে। ইয়ানা নিজের পড়নের শাড়িটাকে কোমরে গুজে দিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে আকাশের পানে তাকায়। কিন্তু হঠাৎ কারোর ঠান্ডা স্পর্শে সাহসা কেঁপে উঠে। এই রাতে এখানে আবার কে আসলো? ভুত নয়তো আবার। ইয়ানা ভয়ে চোখ বন্ধ করে পিছনে ফিরে তাকায়।

ভয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলে সামনে থাকা অবয়বকে দেখে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়। ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান ইয়ানার শাড়ি ভেদ করে উন্মুক্ত কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ইয়ানা আহানের চোখ দেখে ভড়কে যায়। আহানের হাতের ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে ইয়ানা লজ্জায় চোখ জোড়া বন্ধ করে নেই। কিছু একটা মনে পরতেই ইয়ানা আবার চোখ মেলে আহানের পানে তাকায়। আহান এখনো ইয়ানার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে।
ইয়ানা একটু স্বাভাবিক হয়ে আহানের দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,,,,,,
“” আপনি না আসবেন না বলেছিলেন তাহলে এখন এসেছেন কেনো? ভন্ড লোক যখন আমি বলেছিলাম তখন এইভাবে বলেছিলেন কেনো? ঘোড়ার মতো গাড়ি নিয়ে দৌড়ে চলে গিয়েছিলেন।””
ইয়ানার কথা ইয়ানার কর্নে পৌছাতেই আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকায়। ইয়ানা আহানের তাকানো দেখে বলে,,,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” একদম এইভাবে তাকাবেন না। তখন আসেন নি এখন এসেছেন কেনো? “”
আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,,
“” তোমার কি আর কোনো গালি আছে আমাকে দেওয়ার জন্য। মনে তো হচ্ছে সব ঢেলে দিয়েছো। আর আমি তখন এসে কি করতাম, বউকে কি নিজের কাছে পেতাম। উহুম একটুর জন্য ও পেতাম না। সঠিক সময় এসেছি এতে অবাক হওয়ার কি আছে। “”””
ইয়ানা —– বাড়ির ভিতর ডুকেছেন কিভাবে? মানে দরজা তো লাগানো ছিলো তাহলে?
আহান ইয়ানার কপালে ডিপলি কিসস দিয়ে বলে,,,,,
“” এই নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। যেভাবেই আসি পরিশেষে তোমার কাছে তো আছি।””
ইয়ানা জেদ ধরে বলে,,,,,

“” না আপনাকে বলতেই হবে কিভাবে এসেছেন? ”
আহান বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
“” আরে আশ্চর্য যেভাবেই আসি তোমার এত জানার আগ্রহ কেনো? “”
ইয়ানা — আপনি বলবেন কি বলবেন না? আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি আহান।
আহান ঠোঁট কামড়ে বলে,,,,,,
“” আচ্ছা তুমি রেগে যাচ্ছো। রেগে গিয়ে কি করবে তুমি আমাকে শুনি “”
ইয়ানা দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,
“” বলতে হবে না আপনাকে ভন্ড লোক। জানার আর আগ্রহ নেই।””
আহান ধমক দিয়ে বলে,,,,
“” শব্দচায়ন ঠিক করো বিয়াদপ মেয়ে। কথায় কথায় এত গালি কোথা থেকে পাও তুমি। আবার এইসব বাক্য উচ্চারন করলে থাপরিয়ে অজ্ঞান করব””

ইয়ানা ভেংচি কেটে আহানের থেকে সরিয়ে নেয়। বৃষ্টির পানিতে ইয়ানার শাড়িটা শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। আহান ও ভেজে একাকার অবস্থা। ইয়ানা আকাশ পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই লোককে কিছু বলা মেনে একটা করে ধমক খাওয়া। আজ পর্যন্ত একটা কথার উত্তর ও সে ভালোভাবে পায় না। আহলে কেনো কিছু বলবে? কিছু বলবে না সে।

আসলে আহান অফিস থেকে সোজা ইয়ানাদের বাড়িতে চলে আসে। গাড়ির ভিতর থেকেই রুয়ানার মোবাইলে ফোন দেয় দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। ইয়ানার যখন মোবাইল ছিলো না তখন আহানের মোবাইল দিয়ে রুয়ানার সাথে কথা বলেছে। তখন সে নম্বর সেইভ করে রেখেছিলো। আহান রুয়ানার মোবাইলে ফোন দিতেই রুয়ানা রিসিভ করে। পরে সে এসে দরজা খুলে দিয়ে যায়। বাসার কেউ জানে না আহান এখানে এসেছে। আহান যেহেতু আগে থেকে ইয়ানার রুম চিনে তাই সোজা ইয়ানার রুমে ঢুকে পরে। রুমে এসে দেখে ইয়ানা নেই। কিছু একটা মনে পরতেই বারান্দার দিকে অগ্রসর হয়। ইয়ানাকে দেখে আহান চোয়াল শক্ত করে ফেলে। এই মেয়ে ঠান্ডার মাঝে বৃষ্টি ভিজছে। জ্বর যে আসবে সেই খেয়াল আছে। আহান রেগে ইয়ানার কাছে যায়। কিন্তু ইয়ানার এই ধ্বংসাত্বক রুপ কি আহানকে রেগে থাকতে দিয়েছে। কি করে রাগ করবে এই মায়াবীনির সাথে। যাকে দেখলে আহানের শক্ত মনটা ও ছটফট করে। নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে এই মেয়েকে দেখলে।

আহান ইয়ানার অবয়ব ধীরেধীরে পরখ করছে। শাড়িটা লেপ্টে গিয়ে শরীরের প্রত্যেক ভাজ বুঝা যাচ্ছে। আহান নিরবে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। এরপর বিরবির করে বলে,,,,,,,,,,
“”তোমাকে চিনতে গিয়ে অনুভব করতে গিয়ে আর ও বেশি আসক্ত হয়ে পড়ি। তোমার থেকে যতই দুরে যেতে চাই মিশে যায় নিশ্বাসে – প্রশ্বাসে। কেনো তোমার প্রতি এত আসক্ত হয়ে পড়ি আমি। কি আছে তোমার মধ্যে যা অগ্নি চৌধুরির আজ ও অজানা। আমার জীবন তো তখন ওই সুন্দর ছিলো যখন তুমি ছিলে অপরিচিত আর আমি ছিলাম আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তখন কোনো কিছু হারানোর ভয় ছিলো না। কিন্ত এখন তোমাকে হারানোর ভয় কাজ করে প্রতি সেকেন্ডে প্রতি মুহূর্তে। নিঃশ্বেস করে দিচ্ছো তুমি আমায়। এতটা আসক্ত না করলে ও পারতে আমার অনুভবের সেহজাদী।”””

আহান নিজের চোখ জোড়া খোলে ইয়ানার দিকে দৃষ্টি নিক্ষপ করে। ইয়ানার এই ধ্বংস করা অবয়ব মুহূর্তের মধ্যেই আহানের শান্ত মনকে অশান্ত করে ফেলে। আহান ভুলে যায় আশেপাশের পরিস্থিতি নিজের অবস্থান। মস্তিষ্কে শুধু ইয়ানা নামক মেয়েটি বিচরন করছে। আহান ইয়ানার কাছে গিয়ে আলতোভাবে মুখ ডুবাই ইয়ানার কোমর পর্যন্ত কেশ গুলোয়।
ইয়ানা হালকা কেঁপে উঠে। এই কাঁপা কি আহানের স্পর্শে নাকি আবহাওয়া ঠান্ডার কারনে?
আহান ইয়ানার পিঠ থেকে চুল সরিয়ে উন্মুক্ত পিঠে গাঢ় চুমু খাই।
ইয়ানা কাপাঁকাপা কন্ঠে বলে,,,,

“” স.. সরুন আমি রুমে যাব “”
আহান নেশালো কন্ঠে বলে,,,
“” ওহুম। I am intoxicated baby. Now i want you to me. Like that first night would like to dive into you “””
আহানের এই নেশাক্তময় বাক্য ইয়ানার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে। ইয়ানা একটা শুকনো ঢক গিলে বলে,,,,
“” কিন্ত আহান এইটা তো আমার বাড়ি। এখানে…
আহান ইয়ানার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলে,,,,
“” What heppened. অগ্নি চৌধুরি তার স্ত্রীকে ভালোবাসতে গেলে কি এখন জায়গা বুঝে বাসতে হবে। ভালোবাসার জন্য জায়গার প্রয়োজন নেই হোক সেটা গাড়ি, ওয়াশরুম, বা শশুর বাড়ির বারান্দা। বউ যেখানে থাকবে ভালোবাসা সেখানেই বিচরন করবে। “”

ইয়ানা আহানের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ইসস কি লজ্জাজনক কথাবার্তা।আল্লাহ কি ওনাকে সৃষ্টি করার সময় একটু ও লজ্জা দেই নি। কিভাবে নির্লজ্জদের মতো কথা বলে যাচ্ছে।
আহান ইয়ানার ভাবনার মাঝেই ইয়ানার থুতনি ধরে একটু উপরে তুলে নিজের ওষ্ঠ দ্বারা আকড়ে ধরল ইয়ানার ভেজা ওষ্ঠদয় । ইয়ানা আবেশে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেই। কিন্তু আহানের চুমুর গভীরতা ধীরে ধীরে তীব্র হতে থাকে। একের পর এক ওষ্ঠের ঘর্সনে ইয়ানার নাজেহাল অবস্থা। আহানের চুমুর বেগ এতটাই তীব্র ছিলো যে ইয়ানার ঠোঁট কেটে তরল লোহিত রক্ত গড়িয়ে পড়ে। ইয়ানা ব্যাথায় নাক মুখ খিচে ফেলে। ব্যথার ফলে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে ঝির ঝির করা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।ইয়ানা তবুও নিশ্চুপ। ইয়ানার নিশ্চুপ থাকা আহানের উন্মাদনা আর ও বেড়ে যায়। আহান ইয়ানার পুরো শরীরকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে ফেলে।যেখান থেকে ইয়ানা চাইলে ও আসতে পারবে না। আহানের হাতের বিচরন ইয়ানার শরীরে গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। ইয়ানা আহানের উন্মাদনার সাথে পেরে না উঠে একসময় সমস্ত শক্তি ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় রাখা কাউচের উপর বসে পরে। আহান নিজের শার্টে খুলে ইয়ানার সামনে যেতেই ইয়ানা অস্ফূর্ত শব্দ উচ্চারন করে বলে,,,,,

“” আহান রুমে চলুন। এখানে….
আহান ইয়ানাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে পুনরায় নিজের ঠোঁট দ্বারা ইয়ানার ঠোঁটে আলিঙ্গন করে। আহান এক পলক ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে।,,,,,
“” আমার শরীরের রন্ধ্রে, গন্ধে, নিশ্বাসে, শিরা – উপশিরাই, মস্তিষ্কে, আমার অনুভবে কেনো এত মিশে গেলে। বার বার মাতাল করে দিচ্ছ আমায়। কেনো এত জালাচ্ছো তুমি এইভাবে। তুমি নামক অসুখের মেডিসিন যে আমি খুজে পাচ্ছি না আমার অনুভবের সেহজাদী।””

আহান ইয়ানার বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।
আহান ইয়ানার গলদেশে নিজের ঠোঁট ছোয়ায়। প্রত্যেকটা ছোয়ায় দাগ এঁকে যাচ্ছে। ইয়ানা নিশ্চুপ হয়ে আহানের ভালোবাসা নামক ব্যাথা সহ্য করতে থাকে। তার মনের মধ্যে চলছে আত্নসমর্পনের অনুভুতি। ইয়ানা চোখ বুঝে আহনের ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিতে থাকে। রজনী গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। দুই মানব মানবী চলে যায় এক অন্য ঘোরে। যেখানে তারা ছাড়া আর কেউ নেই। ধরনীতে বৃষ্টির ফোটা কমতে থাকে। তাদের একে পরের ভালোবাসা দুইজনকে মন থেকে পবিত্র করছে। আবার ও দ্বীতিয় বারের মতো তারা ডুব দেয় ভালোবাসার অতল সাগরে। আজ তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রয়েছে রাতের মেঘাময় আকাশ।
সকলের ভালোবাসা এইভাবেই পূর্নতা পাক। ভালোবাসা সুন্দর যদি সে নিজের হয়।

রাতের তিমিরকে বিদায় জানিয়ে ধরনীতে সূর্যের কিরন ছড়িয়ে পড়ে। জানালার পর্দা ফাক করে সেই আলো এসে ঘরে আছরে পড়ে। আকাশে এখন আর কোনো মেঘের আভাস নেই। রাতের এই ভালোবাসাময় বৃষ্টির পড়ে আকাশ আজ এক অন্যরুপে সেজেছে। প্রকৃতি পুনরাবৃত্তি গুলোতে অসীম নিরাময়ের কিছু রয়েছে শীতের পর বসন্ত আসে আর রাতের পর একটা মিষ্টি সকাল।প্রকৃতি হলো সরলতার পূর্ন এক যৌগিক আশ্রয়। তাইতো তিমিরের সাথে সাক্ষাত করিয়ে আলোর সন্ধান দেখায়। আহান শাওয়ার শেষ করে এসে ইয়ানাকে ডাক দেয়। ইয়ানা এখনো কাথা মুরি দিয়ে শুয়ে আছে। আহান ইয়ানার সারা শব্দ না পেয়ে গম্ভির কন্ঠে বলে,,,,,,

“” ইয়ানা আমি জানি তুমি ফজরের নামাজ পরে আবার শুয়েছো। তারমানে তুমি এখন ও সজাগ। নাটক করার প্রয়োজন নেই উঠ তারাতারি।””
ইয়ানা কাথার নিচ থেকে মাথা তুলে লজ্জায় পিট পিট করে আহানের দিকে তাকায়। আহান ইয়ানার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ইয়ানার ঠোঁটে ছোট ছোট কামড়ের দাগ। ইয়ানা এই অবস্থা দেখে আহান দুই ঠোঁট চেপে হাসি সংবরন করে। ইয়ানা আহানকে এইভাবে হাসতে দেখে ভড়কে যায়। ওকে কি আজ খারাপ দেখতে লাগছে। এই লোক এইভাবে হাসছে কেনো? ইয়ানা ভালোভাবে নিজেকে পরখ করছে। মুখে হাত দেয় কিছু আছে কিনা বুঝার জন্য। ইয়ানা গলায় হাত দিতেই ব্যাথায় নাক মুখ কুচকে ফেলে। ইয়ানার গলায় আহানের দেওয়া স্পর্শ থেকে ক্ষত হয়ে গেছে।
ইয়ানা আহানকে হাসতে দেখে রেগে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,

“” ছাগলের মতো এইভাবে হাসছেন কেনো? সকাল সকাল কি তেঁতুল গাছের পেত্নি ভড় করেছে। “”
আহান ইয়ানার কাছে এসে দুই গালে ধরে বলে,,,,,
“” হুম পেত্নি ভড় করেছে তো। কেনো তুমি পেত্নিকে চিনো না? “”
ইয়ানা —- আপনাকে পেত্নি ভড় করেছে মানে? এই আপনি আহানতো নাকি আমার বরের রুপ ধরে এসেছেন?
আহান ইয়ানার অবস্থা দেখে কি বলবে বুঝতে পারে না। মানে এই মেয়ে ভুত- প্রেতে বিশ্বাস করে লাইক সিরিয়াসলি।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

“” হুম পেত্নি টা আমার আসক্তি হয়ে গেছে। এরপর
আহান ইয়ানাকে নিজের দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,,,
“” দেখো সেই পেত্নি কাল রাতে কিভাবে আমাকে আচরে দিয়েছে। “”
ইয়ানা আহানের দিকে তাকায় দেখে সত্যি আহানের পুরো শরীরে নখের আচর। ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচে করে ফেলে। কি লজ্জাকর পরিস্থিতি। লোকটা কি জানে না আমি লজ্জা পায় সবসময় এইসব বলতে হয়।
ইয়ানা আহানের দিকে চুরের মতো তাকায়। দেখে আহান এখনো তার দিকে তাকিয়ে মিটমিটি হাসছে।
ইয়ানা — আরে আজবতো এত হাসার কি আছে? আমার মুখে কি কিছু আছে। ইয়ানা ঠোঁটে হাত দিতেই আহহ করে উঠে।
আহান ইয়ানার কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বলে,,,,,

“” আমার দেওয়া চিহ্ন কিন্ত তোমাকে খুব মানিয়েছে বউ। আমি কম ভালোবাসতে পারি না যদি সেটা হয় নিজের বিয়ে করা সম্পদ । এখন একদম মিসেস অগ্নি চৌধুরি লাগছে।””
ইয়ানা লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে ফেলে। আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,
“”তোমার নেইলকাটার কোথায় বলোতো? “”
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,
“” আপনি এই সকালে নেইলকাটার দিয়ে কি করবেন “”
আহান — জঙ্গলি পেত্নির নখ কাটব। এই নখ গুলো আমাকে খুব বিরক্ত করে।
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,,,

“” জঙ্গলি পেত্নি কোথায় পেলেন আপনি? “”
আহান — নিজের দিকে তাকাও।
ইয়ানা আহানের কথায় থমথমে খেয়ে যায়। তাকে আহান জঙ্গলি পেত্নি বলেছে। এত বড় অপমান কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। আহান ইয়ানার শব্দ না পেয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,
” কি হলো বলছো না কেনো? কোথায় রেখেছো নেইলকাটার?
ইয়ানা — আমি এই নখ কাটব না। আপনি জানেন এইগুলো আমার অনেক শখের নখ। আমি অতি যত্নে লালন — পালন করে বড় করেছি। আমি এগুলোকে হারাতে পারব না। ওদেরকে অকালে মেরে ফেলবেন না মি. মাফিয়া দানব অগ্নি চৌধুরি।
আহান ইয়ানার শুনে থমথমে খেয়ে যায়। হাতের নখ কেউ লালন – পালন করে বড় করে লাইক সিরিয়াসলি। এই মেয়ে আমকে পাগল করে ছাড়বে। কিন্তু ওকে কি বলল এইটা।
আহান ইয়ানাকে ধমক দিয়ে বলে,,,,,

“” আবার ভুলভাল শব্দচায়ন উচ্চারন করছো। তোমাকে বলেছিনা আমাকে এইসব ডাকবে না “””
ইয়ানা অবুঝের মতে বলে,,,,,
“” কি ডেকেছি আমি “”
আহান — থাপ্পর চিনো? শুধু একটা থাপ্পর দিব সব মনে পড়ে যাবে।
এর মধ্যেই আহান অনেক গুলো হাঁচি দিয়ে দিয়েছে। ইয়ানা তাকিয়ে দেখে আহানের নাক মুখ ধীরে ধীরে লাল হয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয় এখন জ্বর আসবে। নিজের শরীর ও ঠিক লাগছে না। পুরো শরীর ব্যথা করছে আবার জ্বর আসবে মনে হয়। ইয়ানা নিজের ব্যাথাতুর শরীরটাকে নিয়ে আহানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
ইয়ানা — আপনার শরীরটা ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। আপনি বসুন আমি আপনার জন্য আদা দিয়ে চা করে আনছি।
ইয়ানা দরজার সামনে গিয়ে আবার থমকে যায়। ফিরে এসে আহানের সামনে দাঁড়িয়ে হাসফাস করতে থাকে।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,,,,

“” কি হয়েছে যাচ্ছো না কেনো “”
ইয়ানা — কিভাবে যাব?
আহান — কেনো তোমার পা কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে।
ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
“” আরে ধুর এইটা না ”
আহান —- তাহলে?
ইয়ানা দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” একদম অবুঝের মতো ব্যবহার করবেন না? এইসব দাগ যদি তারা দেখতে পায় তাহলে তারা কি ভাববে। “”
আহান —– কি ভাববে আবার। তারা ভাববে তার মেয়েকে তার জামাই ভালোবেসেছে। এতে তো তোমার গর্ব করা উচিত। রুমান্টিক জামাই পেয়েছো তুমি সে যে জায়গায় স্পর্শ করে সেই জায়গা ক্ষত সৃষ্টি হয়।
ইয়ানা পারে না আহানের মাথা ফাটাতে। ইয়ানা অসভ্য বলে চলে যায়। পরে আবার দরজার কাছ থেকে আহানের কাছে ফিরে আসে।
আহান কপাল কুচকে বলে,,,,,,

“”আবার কি? “”
ইয়ানা অসহায় ফেইস নিয়ে বলে,,,,,,
“” কিভাবে যাব তাদের সামনে। তারা নিশ্চয় এতক্ষনে জেনে গেছে আপনি এসেছেন। আমি আর আপনি এক রুমে ছিলাম। আপনি ভাবতে পারছেন বিষয়টা কি লজ্জা জনক “””
আহান —- রুমে কখন ছিলাম সারারাত তো বারান্দায় ছিলাম। শেষ রাতে রুমে এসেছি। আর তোমার বিয়ে হয়েছে তিন থেকে চার মাস হতে চলল প্রতিদিন আমরা একরুমে থেকেছি আর আজ তোমার তাদের সামনে যেতে লজ্জা করছে লাইক সিরিয়াসলি ইয়ানা।
ইয়ানা —- আপনি বুঝবেন না আমার লজ্জা। এতদিন শশুরবাড়ি ছিলাম কিন্ত আজ বাবা মায়ের সামনে।
ইয়ানা নিজেকে ভালোভাবে আবৃত করে নিচে নেমে যায়।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখে সুমু চা বানাচ্ছে।

সুমু— গুড মর্নিং। শুনলাম আহান ভাইয়া এসেছে?
ইয়ানা — হুম। আচ্ছা সুমু তোর সাথে কথা ছিলো?
সুমু — হ্যা বল কি বলবি?
ইয়ানা চারদিকে ভালোভাবে দেখে নেই কেউ আছে কি না। এরপর আহানের জন্য চায়ের পানি বসাতে বসাতে বলে,,,,,,,
“” শুন আজ আব্বুর সাথে তোর আর রায়ান ভাইয়ার কথা আলোচনা করব? “”
সুমু ইয়ানার কথা শুনে চিৎকার দিয়ে বলে ,,,,,
“” এই না না বইন প্লিজ। এমনে ফাসিয়ে দিস না আমায়””
ইয়ানা সুমুর মুখ চেপে ধরব বলে,,,,,

“” চুপ মাইয়া ষাড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেনো? আগে শুন আমার কথা “”
সুমু — কিন্তু ইয়ানা বইন আমার ভয় করে। আস্তে আস্তে আঙ্কেল কে মেনেজ করে নিব।
ইয়ানা —- চুপ থাকতো। আমার এই বিষয় নিয়ে আহানের সাথে কথা হয়েছে। তবে ওনি এইসবে পাত্তা দেই নি। তুই তো ওনাকে চিনিস বিনা কারনে একটা বাক্য ও ব্যয় করে না। শুন আব্বু আম্মু দুইজন ওই রায়ান ভাইয়াকে পছন্দ করে। আমার মনে হয় না তারা অমত করবে।
“”” কে কি অমত করবে শুনি “”
হঠাৎ কারোর কন্ঠস্বর পেয়ে ইয়ানা আর সুমু দুইজন ওই ভড়কে যায়।
ইয়ানা—– কি… কিছু না আম্মু। এই এ.. এমনি কথা বলছিলাম।
সেলিনা হোসেন— ওহহ আচ্ছা। কাল রাতে বলে জামাই এসেছে।
মায়ের প্রশ্ন শুনে ইয়ানা একটা শুকনো ঢুক গিলে। এরপর আমতা আমতা করে বলে,,,,,,,
“” হ..হ্যা এসেছে তো। “”

সেলিনা হোসেন —- জামাই প্রথমবারের মত এসেছে। কি কি পছন্দ করে আহান বাবা?
ইয়ানা মায়ের কথা শুনে ভড়কে যায়। আহান কি পছন্দ করে ইয়ানা তো জানে না। এখন যদি বলি আমি জানি না নির্ঘাত মাইর খাব। তার চেয়ে বরং ভুলভাল একটা বলে দেই। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
ইয়ানা — আসলে আম্মু তোমাদের জামাই সকল মাংস থেকে গরুর মাংস খুব পছন্দ করে। আর মাছের মধ্যে সরষে ইলিশ তার সাথে গরম ভাত। অন্য খাবার এইসব খায় না।
ইয়ানা বলে একটা ঢুক গিলে। এর মধ্যে চা হয়ে যায়।
ইয়ানা আহানের জন্য আসাদ হোসেনের একটা লুঙ্গি নিয়ে যায়। বৃষ্টিতে ভেজার কারনে পেন্ট ভিজে গেছে। এই ভেজা পেন্ট পরা থাকলে আর ভাজেভাবে ঠান্ডা লাগবে। কিন্তু ওনি তো কখনো লুঙ্গি পড়ে না। লুঙ্গি দেখলে কি আবার রেগে যাবে। ইয়ানা অনেক কিছু ভেবে আহানের কাছে যায়। গিয়ে দেখে আহান সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। ইয়ানা আহানের কাছে গিয়ে কপালে হাত দেয়। কপালে হাত দিতেই ইয়ানা আতকে উঠে। আহানের কপাল ভীষন ভাবে গরম। আহান কি তবে কখনো বৃষ্টিতে ভিজে নি। এই ঝির ঝির বৃষ্টিতে এমন ভাজেভাবে জ্বর এসেছে। আহান নিজের কপালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। ইয়ানা আহানের চোখ দেখে ভড়কে যায়। চোখ জোড়া ভীষন লাল হয়ে গেছে। হলুদ ফর্সা হওয়ার কারনে পুরো মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।
ইয়ানা আহানের বাহু ধরে অধৈর্য গলায় বলে,,,,

“” আহান আপনার তো জ্বরে পুরো শরীর পুরে যাচ্ছে। বিছানায় আসোন আমি জল পট্টি দিয়ে দিচ্ছি। খাওয়া দাওয়া করে মেডিসিন নিন ঠিক হয়ে যাবে। “”
আহান এই ব্যাকুলতা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” এই সামান্য জ্বরে অগ্নি চৌধুরির কিছু হয় না। তাই এত অধৈর্য হওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইয়ানা প্রায় কান্না করার মত অবস্থা। জ্বরে পুরো গা পুরে যাচ্ছে আর ওনি বলছে সামান্য।
ইয়ানা —— আচ্ছা পেন্ট ছেড়ে দিয়ে এই লুঙ্গিটা পড়ে নিন।
আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” লুঙ্গি পড়ব তাও আমি অসম্ভব। “”
ইয়ানা —- কেনো খুলে যাবে সেই ভয়ে পরবেন না। আচ্ছা যদি খুলে যাওয়ার ভয় পান তাহলে আমার প্লাজু পড়ে নিতে পারেন। অনেক মোটা প্লাজু আশা করি আপনার শরীরে লাগবে তবে ছোট হবে।
আহান ইয়ানাকে ধমক দিয়ে বলে,,,,,,

“” থাপ্পর চিনো? তুমি আমার সাথে ফাইজলামি করছো বিয়াদপ মেয়ে? আমি লুঙ্গি কখনো পড়িনি তাই এইসবে অভ্যস্ত নয়। “”
ইয়ানা —- প্লিজ আহান বুঝার চেষ্টা করুন এখন যদি আপনি এই ভেজা পেন্ট পরে থকেন তাহলে ঠান্ডা আর ও লাগবে।
আহান—– ওকে আমি আরিফকে ফোন দিচ্ছি ও আমার জন্য পেন্ট নিয়ে আসবে। আর তোমার এই লুঙ্গি দুরে সরাও।
ইয়ানা —- কিন্তু আরিফ ভাইয়া আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে। তাই বলছি কিছুক্ষনের জন্য শুধু পড়ুন।
আহানের অনিচ্ছা সত্তেও ইয়ানার জোড়াজোড়িতে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পরতে হয়। আজকাল অগ্নি চৌধুরি কারোর বাধ্যতার ও স্বীকার হচ্ছে।
ইয়ানা আহানকে লুঙ্গি পড়া অবস্থায় দেখে হু হু করে হেসে উঠে।
আহান ইয়ানাকে হাসতে দেখে ধমক দিয়ে বলে,,,,,

“” চুপ ইডিয়েট, হাসা বন্ধ কর। “”
ইয়ানা অনেক কষ্টে নিজের হাসিকে আটকে রেখে বলে,,,,,
“”আপনাকে কি সুন্দর লাগছে মি, অগ্নি চৌধুরি উফফ একদম চকলেট বয়। হঠাৎ ইয়ানা আহানের সামনে গিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” আজ আমি আপনার লজ্জাহরন করব মি, অগ্নি চৌধুরি। “”
ইয়ানার কথা শুনে আহান বলে,,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৬

“” একদম আমার কাছে আসবে না। লুঙ্গির মধ্যে হাত দিলে তোমার হাত কেটে ফেলব। “”
ইয়ানা —- কেনো আগে তো আমার সামনে গিয়ে বলতেন টাওয়ালটা খুলে ফেলি তাহলে আজ এত ভয় পাচ্ছেন কেনো? আমি তো আজ আপনার লজ্জাহরন করেই ছাড়ব।
ইয়ানার কথা শুনে আহান বাকা হাসি দিয়ে বলে ,,,,,,
“” ভেবে নিও একবার যদি লুঙ্গির মধ্যে হাত দাও তাহলে লজ্জাহরন আমার না তোমার করব।
আহানের কথা শুনে ইয়ানা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। নিজের কথায় নিজে আবার ও ফেসে গেলো এইভাবে। সে……

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৮