অনুভবে তুমি পর্ব ৪০
লিজা মনি
মিসেস অঞ্জলি ইয়ানাকে ভালোভাবে চেক করে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” খবরটা শুনলে জানি না আপনাদের কি অবস্থা হবে “”
আহান —- কি অবস্থা হবে মানে? আমার ইয়ানা ঠিক আছে তো? সরুন আপনি আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না ওকে নিয়ে আমি হসপিটালে যাচ্ছি।
দাদুমনি —- আহান প্লিজ শান্ত হ।ড. তুমি বলো কি হয়েছে চিন্তার কিছু নেই তো?
আহানের অস্থিরতা দেখে মিসেস অঞ্জলি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
— চৌধুরি মহলের লোকসংখ্যা বাড়তে চলেছে।
আহিয়া খুশিতে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,,
“” অর্থাৎ আমি ফুপ্পি হতে চলেছি?
মিসেস অঞ্জলি — আরে বাহহ তোমার তো বুদ্ধি আছে বলতে হয়। তুমি তো বলার আগেই বুঝে গিয়েছো।
এরপর মিসেস অঞ্জলি আহানের দিকে তাকায় যে এই মুহূর্তে সবার কথার অর্থ বুঝার চেষ্টা করছে। মিসেস অঞ্জলি আহানের উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,
“” অভিন্দন মি. চৌধুরি বাচ্চার বাবা হতে চলেছেন। ”
এরপর ইয়ানার মাথায় হাত রেখে বলে,,,,
“” কিন্তু ও প্রচুর ইউক। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সঠিক বয়স হলেও শারীরিক ভাবে এখনো তৈরি হয় নি। এখন থেকে ওর দেখাশুনা করতে হবে। নাহলে বাচ্চা জন্ম দিতে প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। “”
ইয়ানা এখনো চোখ বন্ধ করে রেখেছে। শরীরের দুর্বলতা এখন ও কাটিয়ে উঠতে পারে নি। আহিয়া ইয়ানার কাছে গিয়ে গালে চুমু খেয়ে বলে,,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“” তোমাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ বউমনি আমাকে ফুপ্পি বানানোর জন্য। “”
আহিয়ার কথা কর্নপাত হতেই ইয়ানা শুয়া থেকে উঠে বসে। অবাক হয়ে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” তুমি ফুপ্পি হতে চলেছো মানে? তোমার আবার কোন ভাইয়ের বাচ্চা হতে চলেছে। ”
দাদুমনি —- তুই ড. অঞ্জলির কথা কিছু শুনিস নি?
ইয়ানা — না।
দাদুমনি —- আমি বড় মা আর তুই মা হতে চলেছিস।।
ইয়ানা —- কিহহহহ! কি সব বলছো আমি মা হতে যাবো কেনো আজব।
দাদুমনি —– কেনো তোর মা হওয়া কি নিষিদ্ধ।
ইয়ানা ভয়ে ভয়ে আহানের দিকে তাকায়। নিশ্চিত আজ অনেক কথা শুনাবে। এত করে বারন করার পর ও আমি কনসিভ করেছি।ইয়ানা আজ তুই শেষ। কিন্তু তুই ও কম কিসে। তুই এখন একা না। আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তকায়। চোখগুলো ভীষন লাল হয়ে আছে। ওনি কি প্রচুর রাগ করেছে নাকি অন্য কিছু। চোখা চোখি হতেই ইয়ানা তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখ জোড়া নামিয়ে নেই। আহানের চোখ দেখে ইয়ানার বুকে অজানা এক ভয়ের ভাসা বাসা বাধে।
দাদুমনি আহানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু পাশে আহান নেই। দাদুমনি অবাক হয়ে বলে,,,,,,
“” একি আহান কোথায় গেলো? এই মাত্র ওইতো এখানে ছিলো তাহলে কোথায় গেলো?
দাদুমনির কথা শুনে ইয়ানা আর আহিয়া ও তাকায় কিন্তু আহানের কোনো অস্তিত্ব ও নেই। মিসেস অঞ্জলি এর মাঝে চলে গিয়েছেন।
আহিয়া — দাদুমনি দাদাভাই এইভাবে চলে গেলো কেনো? দাদাভাই কি খুশি হয় নি। আমি তো দাদাভাইকে অনেক থ্যাংক্স বলতাম। আমার একটা সময় কাটার সাথী এনে দেওয়ার জন্য।
দাদুমনি — এমন কিছুই নই। হইতো কোনো কাজে চলে গয়েছে। চিন্তা করিস না আহান ও খুব খুশি হয়েছে।
দাদুমনি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে ইয়ানার চোখে পানি।
দাদুমনি — কান্না করছিস কেনো পাগল মেয়ে। কোনো ছেলেই নিজে প্রথম বাবা হওয়ার খুশি ধরে রাখতে পারে না।কিন্তু তুই তো জানিস আহান বাকি ছেলেদের মতো খুশি দেখাতে পারে না। কিন্তু ও খুব খুশি হয়েছে মিলিয়ে নিস আমার কথা। এখন একটু রেস্ট নে শরীরটা ভালো লাগবে।
এরপর আহিয়া আর দাদুমনি ইয়ানার রুম থেকে চলে যায়।
ইয়ানা — আপনি কি খুশি হননি আহান। কিন্তু বাচ্চা দান করার মালিক তো আল্লাহ। এতে আমার কি দোষ। হ্যা মানছি আপনার অবাধ্য হয়ে বাচ্চা কনসিভ করা ঠিক হয় নি তাই বলে এইভাবে এড়িয়ে যাবেন।আপনার এই অবহেলা যে আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। একবার এসে শুধু বলেন না ইয়ানা আমি আজ খুব খুশী আমি বাবা হতে চলেছি।
ইয়ানা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায়।
যখন রাত ঠিক বারোটা তখন ইয়ানার হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আহানকে পাশে দেখতে না পেয়ে আবার ওও হৃদয়ে কালো তিমির নেমে আসে। ইয়ানা বেলকনিতে গিয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ মিলাতে থাকে। হঠাৎ কারোর ঠান্ডা স্পর্শ নিজের উন্মুক্ত পেটে পরতেই শিউরে উঠে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে সেই স্পর্শ অনুভব করতে থাকে। এরপর নিজের কান্না আটকাতে না পেরে আছরে পরে সেই স্পর্শ করা ব্যক্তিটির বুকে। ইয়ানা বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কান্না করে উঠে।
ইয়ানা কান্না করতে করতে বলে,,,,,,
“” কেনো চলে গিয়েছিলেন এইভাবে। জানেন খুব কষ্ট হচ্ছিলো আপনার এইভাবে চলে যাওয়াতে। হৃদয়ে হাহাকার নেমে এসেছিলো আহান। আপনি আমাকে রেখে এইভাবে চলে কেনো গিয়েছিলেন? “”
আহান ইয়ানার চাবুক ধরে দাতে দাত চেপে ধমক দয়ে বলে,,,,,
“” কান্না থামাও বিয়াদপ মেয়ে। সব কিছুর মধ্যে এইভাবে কান্না করতে হয় আশ্চর্য। এত চোখের পানি আসে কোথা থেকে তোমার। আর একবার যদি কান্না করতে দেখি আই সয়ার ইয়ানা তোমাকে ওইদিনকার মতো নিচে ফেলে দিব। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আমি তো তোমাকে ঔষধ দিতাম সবসময় তাহলে কিভাবে হলো এমন? “”
আহানের কথা শুনে ইয়ানা হাসফাস করতে থাকে। আহান কপাল কুচকে বলে,,,,,
“” আমাদের মধ্যে লাস্ট হয়েছিলো তোমাদের বাড়িতে বৃষ্টির সময়। এর মধ্যে তো আমাদের মধ্যে কিছু হয় নি। কিন্তু ওইদিন সকালে তো তোমাকে নিজের হাতে পিল খাইয়ে দিয়েছিলাম তাহলে? “”
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে অপরাধী কন্ঠে বলে,,,,,
“” আ.. আসলে ওইদিন আমি খাই নি। আপনি আড়াল হতেই আমি মুখ থেকে ফেলে দিয়েছিলাম। “”
এরপর ইয়ানা সাথে সাথে নিজের চোখ বন্ধ করে নেই।
আহান যদি রেগে যায়।কিন্তু নিজের ভাবনার মাঝেই কপালে কারোর ঠোঁটের পরশ পড়তেই ইয়ানা চোখ খুলে তাকায়। আহান ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে নিজের বক্ষে ঝাপটে ধরে বলে,,,,,,
“” ইয়ানা তুমি নিজে ও জানো না আজ তুমি আমার জীবনের কত বড় খুশির খবর দিয়েছো। জীবন থেকে আপন মানুষগুলোকে হারাতে হারাতে আমি ক্লান্ত ইয়ানা। এখন আর কোনো কিছু হারানোর ভয় কাজ করে না। কিন্তু তুমি আমার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছো। আমার মৃত্যু নিয়ে কখনো কোনো ভয় ছিলো না। কিন্তু আজ থেকে আমার হৃদয়ে ভয় কাজ করা শুরু করেছে। আমার কিছু হলে আমার সন্তানের কি হবে? “”
নিজের অজান্তে আহানের চোখ থেকে দুই ফোটা জল গরিয়ে পরে। ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে বালে,,,,,
“” তার মানে আপনি খুশি? আপনি আমার কনসিভ নিয়ে রাগ করেন নি “”
আহান — থাপ্পর চিনো বিয়াদপ মেয়ে রাগ করব কেনো.? তবে প্রথমে প্রচুর রাগ হয়েছিলো। ইচ্ছে করেছিলো ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পর দেই। কিন্তু এই প্রথম নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে হৃদয়ে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেছে।
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” বাবা হওয়ার আনন্দ বয়ে গেছে মি. চৌধুরি। নিজে অনুধাবন করতে পারছেন বাবা হওয়ার আনন্দ কতটুকু তাহলে নিজের বাবার সাথে এত বাজে ব্যবহার কেনো করেন? আপনি ও কিন্তু ওনার ছেলে আহান আজ আপনার যে আনন্দ উপভোগ হচ্ছে একদিন সেই আনন্দ তার ও হয়েছিলো। তাহলে কেনো এত অবহেলা? কেনো এত কথা ধারা আঘাত করেন? ওনি ও তো কষ্ট পান আহান। মানছি ওনি অন্যায় করেছে আপনাকে আর আহিয়াকে যেখানে আগলে রাখার কথা ছিলো সেখানে ওনি বিদেশ চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওনি ও ওনার স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন। হারিয়েছিলেন নিজের প্রানপ্রিয় একমাত্র ভাইকে তার সাথে ওনার বউকে ও। এই লোকটার কি কষ্ট হয় নি। আপনি কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছিলেন তাদের মৃত্যুর কথা কিন্তু ওনি সেইদিন ওই জানতে পেরেছিলো যেদিন ওরা মারা যায়। একবার ভেবে দেখুন ওনার কি একটুও দুঃখ হয় নি। একবার নিজের বাবার সাথে সব কিছু মিটিয়ে নিন না প্লিজ। “”
আহান ইয়ানার কথা শুনে বলে,,,,,
“” রুমে আসো এই ঠান্ডার মাঝে এখানে থাকলে প্রবলেম হতে পারে। “”
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে আহান ইয়ানার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলে,,,,,
“” আর একটা কথা ও নয়। রুমে চলো ইডিয়েট। কাল সকালে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
ইয়ানা —- কি সারপ্রাইজ? আপনার মতো এমন একজন নিরামিষ লোক সারপ্রাইজ দিতে ও জানেন।
আহান বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
“” আমি কি দিতে পারি আর না দিতে পারি সময় আসলে অবশ্যয় দেখবে। একটু আধটু ট্রেইলার তো নিশ্চয় দেখেছো। যেখানে অগ্নি চৌধুরির সামান্য ভড় সহ্য করতে পারো না জ্বর চলে আসে । সে যদি এখন তোমার কাছে সব এপ্লাই শুরু করে তোমাকে তো খুজে পাওয়া যাবে না। নিশাদল, কর্পূরের মতো হাওয়া হয়ে যাবে। তাই নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রনে রাখি এই বয়সে বউকে তো আর হাওয়া হতে দিতে পারি না।
ইয়ানা অসভ্য বলে একটা ফুস করে শ্বাস ছাড়ে।
আজ শুক্রবার। ইয়ানা খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে রেস্ট নেয়। আহান আজ নিজে খাইয়ে দিয়েছে। নিজেকে আজ কুম্ভকর্নের কাতারে দার করাতে ইচ্ছে করছে। এত খাবার একসাথে মানুষ কিভাবে খায়। ইয়ানা কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে নিচে নেমে আসে। কিন্তু নিচে এত গুলো মানুষকে দেখে ইয়ানা হা করে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এইটা ওর মনের ভুল নাতো। নাহলে এরা এইভাবে এইখানে কি করছে। কই ইয়ানা তো এই ব্যাপারে জানে না। তাহলে এইটাই আহানের সারপ্রাইজ ছিলো। ইয়ানার ভাবনার ছেদ ঘটে কারোর চিৎকারে।
রুয়ানা —– আপুইইইইইইইইইই।
ইয়ানা রুয়ানার চিৎকারে তাদের সামনে এগিয়ে যায়।
এরপর ইয়ানা কোমরে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলে,,,,
“” তোরা কি সত্যি এসেছিস। নাকি আমি সপ্ন দেখছি।””
আয়ান ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
“” একদম সপ্ন দেখছিস না জানু সত্যি এসেছি। অনেক অনেক অভিনন্দন তোকে সাথে নিজেদের কে ও। ইসস ভাবতেই নাচতে ইচ্ছে করছে আমি খালামনি হব।””
আকাশ — বিয়ে আমার তোর আগে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমার আগে তর হয়ে গিয়েছে। তার সাথে আমার আগে খুশির সংবাদ ও দিয়ে দিয়েছিস। মামা হওয়ার খুশিতে আবার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। বিয়ে করে ও বউ সাথে নেই। বাচ্চাটা আসলে দেখুক তার মামা কত বড় হতভাগা।
আরুরা — ছিহহহ আকাশ তুই আবার বিয়ে করতে চাইছিস। আচ্ছা তুই যে মনে মনে আবার বিয়ে করার প্লান করছিস এইটা কি আমাদের অবনি জানে। না জানলে বল আমি বলে দিচ্ছি। আমি আজ ওই এই খবরটা অবনিকে পাঠাচ্ছি।
আকাশ আরুর মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,,,,,
“” আল্লাহর দোহায় লাগে বইন তোর বার্তা পাঠানো বন্ধ কর। বিয়ে করা বউয়ের সাথে দেখা করতে পারি না আর তুই যদি এই কথা গিয়ে বলিস কখনো বউকেই দেখতে পাবো না। এই জীবনে তাহলে আর বাবা ডাক শুনতে পারবো না। দেখ আমি ও ইয়ানার মতো ফার্স্ট হতে চাই”
ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেই। ও ফার্স্ট মানে ইসস কি লজ্জার কথা।
সুমু — ইয়ানা বেবি আপনি লজ্জা পাচ্ছেন কেনো? তুই জানিস আহান ভাইয়া যখন আমাদের সবাইকে জানিয়েছে এই খবর তখন তো ইচ্ছে করছিলো ওইসময় দৌড়ে চলে আসি। কিন্তু তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো।
ইয়ানা অবাক হয়ে সুমুর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” তোদের সন্ধ্যায় জানিয়েছে মানে?
সুমু —- হুম। আহান ভাইয়া আমাদের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলো। অবশ্য মিষ্টি নিয়ে ভাইয়া বাড়িতে ডুকেনি রায়ান ডুকেছিলো। আহান ভাইয়া গাড়িতে বসে ছিলো।
আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ওনি নাকি পুরো অফিস মিষ্টি খাইয়েছে। এইটা আমাকে রায়ান বলেছে আরকি।
ইয়ানা আজ অবাকের চরম পর্যায়ে। মাফিয়া গোল্ডেন এর লিডার অগ্নি চৌধুরি আজ মিষ্টি নিয়ে কারোর বাড়িতে গিয়েছে। শুধু বাড়িতেই নয় পুরো অফিসে মিষ্টি বিতরন করেছে। এতটা খুশি ছিলেন ওনি আর আমি কত কি ভাবলাম।
ইয়ানা টাস্কি খাওয়া সুরে বলে,,,,,
“” আসতে আসতে সব বলেন আফা আমি একসাথে এত গুলো নিতে পারছি না। “”
ইয়ানার কথা শুনে আরু বলে,,,,,,,
“”” যাই বলিস ইয়ানা আহান ভাইয়া মাফিয়া হিসাবে যেমন তেমন কিন্তু বাবা হিসেবে খুব ভালো হবে দেখে নিস””
ইয়ানা শুধু একটা মুচকি হাসি দেয়। আহান যদি খুশি থাকে তাহলে ও খুশি।
এরমধ্যে আহিয়া প্রাইভেট শেষ করে রুমে ডুকে এত মানুষ দেখে কপাল কুচকে নেই। ইয়ানা আহিয়াকে দেখে হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” আহিয়া আজ তাড়াতাড়ি চলে আসলে। আসো পরিচয় করিয়ে দেই।
এরপর আহিয়াকে সামনে নিয়ে ইয়ানা বলে,,,,,,
“” ওর সাথে তোরা কখনো পরিচয় হতে পারিস নি। ও হচ্ছে আহানের একমাত্র কলিজার ছোট বোন মানে আমার একমাত্র ননদীনি।
এরপর আহিয়ার দিয়ে তাকিয়ে হল্লা পার্টির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।রুহান এক দৃষ্টিতে এই বাচ্চা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। সাদা ড্রেস পড়া, দুই পাশে বেনি করা আর কাধে ব্যাগ রাখা অসম্ভব সুন্দর লাগছে। কিছুতেই নিজের অবাধ্য চোখ গুলোকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারছে না। হঠাৎ করে এই বাচ্চা মেয়েটির দিকে চোখ আটকে গেলো কেনো?
আরুরা কথা বলার মাঝে হঠাৎ রায়ানের দিকে চোখ যায়। রায়ানকে এক দৃষ্টিতে কোথা ও তাকিয়ে থাকতে দেখে সে সেই দৃষ্টির অনুসরন করে। অনুসরন করে দেখতে পায় সে আহিয়ার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে।
আরুরা দাতে দাত চেপে রায়ানের উরুর উপর ঘুসি মেরে বলে,,,,,,,,
“” ভাদাইম্মারে দৃষ্টি সংযত কর। ভুলভাল দিকে তাকিয়ে থাকিস না “”
রুহান আরুরার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” তাই বলে এইভাবে কিল বসাবি রাক্ষসি। আমার চোখ ওইদিকে গেলে আমি কি করব?
আরুরা — ভুলে যাস না এইটা আহান ভাইয়ার কলিজা। ওর দিকে কারোর তাকানোর সাহস নেই। নিজের হাতে যমের দুয়ারে সাক্ষাত করতে যাইস না ভাই। চোখ যদি অবাধ্য হয় তাহলে চোখগুলোকে তুলে নিয়ে ফ্রিজে ডুকিয়ে রাখ। পরে আবার সঠিক সময় আসলে লাগিয়ে নিস। এখন আপাযত চোখ গুলোকে আটকিয়ে রাখ ভাই।
রুহান নিজের মাথা চুলকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।
সুমু —– ওই তোরা দুইজন এইভাবে ফিসফিস করছিস কেনো? নিজের কন্ঠস্বর কি আরেকজনের কাছে হাওলাত দিয়ে এসেছিস। গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না এইভাবে ফিসফিস করছিস কেনো?
আরুরা —- আরে তেমন কিছু না। আসলে আমাদের রুহান একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছিলো কিন্তু সে তাকে জুতা দিয়ে দৌড়ানি দিয়েছে।
রুহান আরুরার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে। কি বলে এই মেয়ে জীবনে কোনো দিন মেয়েদের দিকে ভালোভাবে তাকায় না সেখানে নাকি ও সেচ্ছায় একটা মেয়েকে প্রপোজাল দিবে। আর সে মেয়ে নাকি আবার জুতা দিয়ে দৌড়ানি এ দিয়েছে। আরুর বাচ্চারে তোরে আজ আমি খাইছি।
আকাশ — এই দিন দেখার জন্য বেঁচে আছি রুহান। তোকে আজ কাল মেয়েরাও জুতা পিটা করে।
রুহান দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,,
“” সালা চুপ থাক। এ বলেছে জুতা দিয়ে দৌড়ানি দিয়েছে আর তুই বলিস জুতা পিটা করছে। আরেকজন এসে বলবে অন্যটা।””
রায়ানের কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। আহিয়া হাসতে হাসতে বলে,,,,,,
“” ওহহ আপু – ভাইয়ারা তোমরা তো অনেক মজা করতে পারো। এইভাবেই কি তোমরা একজনের পিছন আরেকজন লেগে থাকো?
ইয়ানা —- সবার কথা জানি না কিন্ত আরু আর রুহান লেবেল ছাড়া ঝগড়া লাগে। দুইটা মনে হয় আগের জন্মে সতিন ছিলো। আর আয়াত ছিলো আকাশ আর রুহানের বার্তাবাহক🤣🤣।
অনেক্ষন মজা আর আড্ডা খাওয়া দাওয়া করে তারা সবাই চলে যাই। সবাই একসাথে অনেক দিন পর এইভাবে আড্ডা দিয়েছে। মনটা হালকা ফুরফুরা লাগছে। সবচেয়ে বেশি খুশি লাগছে আহানের কথা শুনে।আহান সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছে।
ইয়ানা বিছানায় আধশুয়া হয়ে বসে থাকে। তখন আহান একটা ইয়া বড় বক্স নিয়ে রুমে ডুকে। ইয়ানা কপাল কুচকে আহানের হাতের বক্সটার দিকে তাকায়। আহানের জরুরি কোনো জিনিস মনে করে আর কিছু বলে নি।
আহান রুমে ডকে ইয়ানার সামনে দাঁড়ায়। এরপর ইয়ানার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,,,,,
“” দেখো সব ঠিক আছে কি না? “”
ইয়ানা না বুঝতে পেরে ফের প্রশ্ন করে,,,,,
“” কি দেখবো “”
আহান — ওই যে বক্সটা।
ইয়ানা —-আমার জন্য?
আহান — কেনো আমার কি আরেকটা বউ আছে যে তার জন্য আনব। যদি তোমার প্রয়োজন হয় তাহলে বলতে পারো তোমার সতীন দরকার।
ইয়ানা আহানের বুকে কামর বসিয়ে বলে,,,,,
“” শুধু এনে দেখেন কি করি আমি। আপনাকে খুন করে আমি জেলে যাব।””
আহান ইয়ানার দুইগালে হাত রেখে আবেদনময়ী কন্ঠে বলে,,,,,,,,
“” আমি এক ইয়ানার রুপেই তো ঝলসে যায় বার বার। তার অনুপস্তিতি আমার হৃদয়ে ঝংকার তোলে। এখন আরেক ইয়ানা আসলে তো আমি অগ্নি চৌধুরি নিশ্বেস হয়ে যাব। “”
ইয়ানা আহানের কথা শুনে একিটা তৃপ্তির হাসি দেয়।
এরপর আহানের নিয়ে আসা বক্সটা খুলতেই চোখ দুইটি বড় বড় হয়ে যায়।
ইয়ানা আহানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” এত আচার কেনো নিয়ে এসেছেন? ”
আহানের সোজাসাপ্টা উত্তর —- তোমার জন্য।
ইয়ানা —— কিন্তু আমি তো আচার খাই না।
আহান দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” না খেলে ফেলে দাও। ‘”
ইয়ানা —- তাহলে এনেছেন কেনো?
আহান ইয়ানার প্রশ্নে কি বলবে। এই মেয়েতো কখন থেকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে। মানুষ মারতে ও এইভাবে ইতস্থতা বোধ হয় নি আর আজ একটা মেয়ের সামনে এতটা ইতস্থ বোধ হচ্ছে। রায়ান তো বলে দিয়েছে মেয়েরা নাকি এই সময় আচার খেতে খুব ভালোবাসে তাই তো সে নিয়ে এসেছে। আহান ইয়ানার তাকানো দেখে বলে,,,
আহান —- আব.. শুনেছি বেবি কনসিভ করলে নাকি বেশি আচার খায় মেয়েরা তাই নিয়ে আসলাম আরকি।
ইয়ানা— সবাই খাই আপনি কিভাবে জানলেন? না মানে আপনি তো এইসব থেকে অনেক দুরে ছিলেন। তাহলে তো আপনার এইসব জানার কথা না। আচার এনেছেন ভালো কথা কিন্তু আপনি তো পুরো দোকান তুলে নিয়ে এসেছেন।
আহান ইয়ানার এত প্রশ্নে বার বার বিব্রান্তের স্বীকার হচ্ছে। সে ইয়ানাকে এক টানে নিজের নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে ইয়ানার উন্মুক্ত পেটে চেপে ধরে বলে,,,
“” এত প্রশ্ন কিভাবে করতে পারো তুমি””
নিজের উন্মুক্ত পেটে আহানের স্পর্শ পেয়ে ইয়ানা কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,,,,
“” হা.. হাত সরান আমার সুরসুরি লাগছে।””
আহান ইয়ানার কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ানার পেটে নিজের হাতের বিচরন গভীর করে করে বলে,,,,,,,
“” এখন ও সুরসুরি লাগে? “”
ইয়ানা আহানের মুখ চেপে ধরে বলে,,,,,,
“” আবার শুরু করবেন না খবরদার। এইসব কথা শুনলে আমার কেমন কেমন লাগে?
আহান ইয়ানার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,,,,,,
“” কেমন কেমন লাগে? “”
ইয়ানা আহানের বেসামাল অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য নাটক করে বলে,,,,,
“” আহান আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। সারাদিন ওদের সাথে সময় কাটিয়ে অনেক ক্লান্ত বোধ করছি। তাই একটু ঘুমাতে চাই। আর আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। তবুও বলছি আমি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে আমার সব বন্ধুদেরকে এখানে আনার জন্য।
ইয়ানা এই মুহূর্তে ক্লান্ত এই কথাটা কর্নপাত হতেই আহান ইয়ানার গলা থেকে মুখ তুলে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর অধৈর্য গলায় বলে,,,,,,,
“” তুমি ক্লান্ত আগে বলবে না। তারাতারি এখন ঘুমাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আর তোমার বন্ধুদের আনার জন্য যে থ্যাংক্স দিয়েছো ওইটা আমি অন্য উপায়ে নিব।
অনুভবে তুমি পর্ব ৩৯
ইয়ানা —- কোন উপায়?
আহান রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,
“” সময় আসলে আমারটা আমি নিয়ে নিব। “”
এরপর আহান ওয়াশরুমে ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে যায়।
ইয়ানা ও আহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে শুয়ে পড়ে।