অনুভবে তুমি পর্ব ৪৬
লিজা মনি
আরু বড় বড় চোখে রেশবের দিকে তাকায়। কিন্তু রেশব আরু কিছু বলার আগেই চলে যায়।
আরু রাগে ফুস ফুস করতে থাকে। এরপর আহিয়ার সাথে ইয়ানার কাছে চলে যায়। বাগান দেখার আনন্দ ওই চলে গিয়েছে এই ধলা বিলাইয়ের জন্য।
আরুর এই রাগান্বিত মুখ দেখে সুমু বলে,,,,,
“” কি হলো তুই এইভাবে কাল সাপের মত ফুসফুস করছিস কেনো? ”
আহিয়া — রেশব ভাইয়ার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তাই ভাইয়া বলেছে আপুকে পাবনায় ভর্তি করাতে আপু পাগল হয়ে গিয়েছে।
ইয়ানা হা করে তাকায় আরুর দিকে,,,,
“” কিরে তুই ঝগড়ুটে জানতাম তাই বলে সবার সাথে ঝগড়া করবি।আকাশ আর রুহানের কথা বাদ দিলাম কিন্তু রেশব ভাইয়ার সাথে লাগতে গেলি কেনো?
আরু — ওই ছেলে আমাকে বলে পাগল।ও পাগল ওর চৌদ্দগোষ্টি পাগল। বদ লোক একটা।
সুমু*– হয়েছে মেরি মা শান্ত হন আপনি।
ওইদিকে আহানের রুমে 🌼🌼..
রায়ান আহানের সাথে কিছু অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ন কথা শেষ করে।
আহান —- আমার মনে হয় না রানবীর সামনাসামনি আসবে। কিন্তু যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেনো ঠিক খুজে বের করব। আমি ও একটু সময় দিচ্ছি জীবনটাকে
আর একটু উপভোগ করার জন্য। কারন কয়েকদিন পর ওর রক্ত দিয়ে গোসল করব। যা খুশি করে নিক এই কয়েকদিনের ভিতর।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রায়ান — তুই কি সিউর ও দেশে এসেছে?
আহান — সিউর না হয়ে কি আমি এমনি লাফালাফি করছি ইডিয়েট।
রায়ান —- আরে ভাই রাগ করছিস কেনো? বাদ দে এইসব কথা।
আহান ভিবান থেকে উঠে গিয়ে আলমারির কাছে যেতেই রায়ানের অদ্ভুত কথা কানে বেজে উঠে,,
“” ভাই আমার বাসর “”
আহান কপাল কুচকে বলে,,,,
“” কি তোর বাসর? ” আরেকজনে নিয়ে নিয়েছে?”
রায়ান আহানের কথা শুনে ভড়কে যায়। এরপর ও নিজেকে ধাতস্ত করে বলে,,,,
“” প্রেম করেছি অনেকদিন তারপর বিয়ে করেছি। আমি বিছানার এক পাশে ঘুমাই আর আমার বউ বিছানার আরেক পাশে ঘুমাই। মাঝ খান দিয়ে ক্রিকেট খেলার মাঠের মত জায়গা ফাকা থাকে। একটা বুদ্ধি দে না ভাই কি করব? “”
আহান বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
“” তোর বউ তুই কি করবি আমি কি করে বলব? ”
রায়ান — গজব পড়ব যদি আমাকে সাহায্য না করিস। নিজে তো এতদিনে আব্বা ডাক শুনে ফেলতি তাহলে আমাকে সাহায্য করতে পারবি না কেন?
আহান সিরিয়াস হয়ে বলে,,,,
“” সুমুকে সময় দে। ওর সাথে সব কিছু শেয়ার কর দেখবি ও নিজেকে তোর সাথে হালকা মনে করবে। তোদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও ভালো হবে।””
রায়ান ভাবুক হয়ে বলে,,,,
“” আমাকে যে বুদ্ধি দিয়েছিস তা নিজে পালন করিস? তোদের দেখে মনে হলো তোদের মধ্যে কিছু ঠিক নেই। আবার কি বলেছিস ওকে? ধমকেছিস নাকি থাপ্পর দিয়েছিস?
আহান — তোর কেনো মনে হলো আমি ওকে বকেছি?
রায়ান — অন্য সময় হলে খুব হাসিখুশি থাকে। কিন্তু আজ হাসার মাঝে ও চোখ গুলো ফোলা দেখেছি মনে হচ্ছে প্রচুর কান্না করেছে।
আহান রায়ানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়। আহানের তাকানো দেখে রায়ান আমতা আমতা করে বলে “” কি? ”
আহান — তুই আমার বউয়ের দিকে এত গভীরে তাকিয়েছিস কেনো? তোকে বলেছি ওকে পরখ করতে?
রায়ান — আল্লাহর গজব পড়বে ভাই। ইয়ানা আমার বোনের মত। আমি যাস্ট এমনি তাকিয়েছিলাম ভাইয়ের চোখ দিয়ে। আমার একটা ফুটফুটে বউ আছে কয়েকদিন পর বাপ ও হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। এমন কথা বলিস না পরে বউ শুনলে জুতা পিটা করবে।
আহান — তোর জুতা পিটা খাওয়ার ওই দরকার।
আহানের কথা শুনে রায়ান চুপসে যায়। জীবনে কি পাপ করেছিলো আহান তার বন্ধু হতে হলো। আবার যেমন তেমন বন্ধু না আত্নার সম্পর্ক।
অনেকদিন পর আজ ইউভি নিজের বাড়ি গিয়েছে।
ইউভিকে দেখে তার বাবা ফায়াজ রহমান বলেন,,,,,
“” ব্যবসার কি অবস্থা? আশা করি আমাকে নিরাশ করবে না?
ইউভি –; কখনো নিরাশ করে নি ইনশা আল্লাহ করব ও না।
ফায়াজ রহমান ইউভির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” এইদিকে এসে বসো তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”
ইউভি ও ফায়াজ রহমানের কথা অনুযায়ী তার পাশে গিয়ে বসে। ফায়াজ রহমান ইউভির উদ্দেশ্যে বলে,,,,
“” দেখো ইউভি তুমি এখন বড় হয়েছো। এখন সময় হলো নিজের জীবন গুছিয়ে নেওয়া। তোমার মাকে যখন আমরা হারিয়েছি তখন তোমার বয়স ছিলো ১৬ বছরের। তখন থেকে তোমাকে আগলে রেখে বড় করিয়েছি। ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে ডিগ্রি অর্জ করে আনিয়েছি। এখন আমি বার্ধক্য হয়ে পড়েছি। কতদিন বাঁচব তার কোনো ইয়াত্তা নেই। কিন্তু মরে যাওয়ার আগে তোমার জীবনটাকে গুছিয়ে দিয়ে গেলেও শান্তি পাব। বয়স মুটামুটি তোমার হয়েছে তাই আমি চাই এখন বিয়েটা করে ফেলো””
ফায়াজ রহমানের কথা শুনে ইউভির চোখে রুয়ানার বাচ্চা চঞ্চল মুখশ্রী ভেসে উঠে। ইউভি ছোট করে উত্তর দেয়,,,,
“” এখন না আর ও পরে””
ফায়াজ রহমান — কেনো? আহান রায়ান তারা তো বিয়ে করে সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। বাকি আছো তুমি, তাহলে তুমি করবে না কেনো? যদি কাউকে পছন্দ করে থাকো তাহলে বলতে পার আমি তো আর অমত করছি না।
ইউভি ফায়াজ রহমানের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওকি রুয়ানার কথা বলবে। সকল দ্বিধাদ্বন্ধ পেরিয়ে ইউভি নিচু গলায় বলে,,,,,
“” আসলে বাবা আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি “”
ফায়াজ রহমান একটু অবাক হলেন বটে। তার ছেলে তো মেয়েদের দিকে তাকায় না কিন্ত হঠাৎ কাকে পছন্দ লেগে গেলো?
ফায়াজ রহমান — পছন্দ করো সেটা তো ভালো কথা। আমাকে আর কষ্ট করে মেয়ে খুজতে হবে না। এখন মেয়ে কি দেশের না বিদেশী। বিদেশী হলে আমি মেনে নিব না আগেই বলে দেই।
ইউভি — না বিদেশী না বাংলাদেশী। আমাদের ঢাকার মেয়ে।
ফায়াজ — তাহলে তো আর ও ভালো। মেয়ের ঠিকানা দাও আমি প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।
ইউভির খুশি লাগলে ও আমতা আমতা করে বলে,,,,
“” কিন্তু বাবা মেয়ে বয়সে অনেক ছোট। ”
ফায়াজ — সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চা নিশ্চয় না। মেয়ে কিসে পড়ে শুনি?
ইউভি ঢুক গিলে বলে,,,,,
‘” এইবার এস এস এসি দিবে “”
ফায়াজ রহমান নিজের ছেলের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এত মেয়ে থাকতে শেষে কিনা হাটুর বয়সী মেয়ে পছন্দ করল। তবুও বাবা হিসেবে ছেলের কথা মেনে নেওয়া উচিৎ। কারন উনি ইউভিকে খুব ভালোভাবে চিনে ভুলভাল কাজ নিশ্চয় করবে না। উনি সবসময় নিজের ছেলের সাথে বন্ধুর মত থেকেছে। ইউভিকে ঘিরে ওইতো উনার সব।
ফায়াজ রহমান — কি আর করার পছন্দ করে ফেলেছো। যেই কথা বলছো আমার তো মনে হচ্ছে সঠিক বয়সে বিয়ে করলে তোমার এত বড় মেয়ে থাকত। সে সব কথা থাক এড্রেস দাও কাল ড্রাইভারকে নিয়ে বিয়ের কথা বলে আসব। কিন্তু কথা হলো তারা কি এত ছোট মেয়েকে বিয়ে দিবে। আইনে তো এইটা নিষিদ্ধ।
ইউভি — আরেকটা কথা আছে বাবা।
ফায়াজ রহমান — আবার কি বলবে? তোমার পছন্দ দেখে আমার মাথা এমনিতে হ্যাঙ মেরে দিয়েছে।
ইউভি — মেয়ে হলো ইয়ানার ছোট বোন।
ফায়াজ রহমান ইউভির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায় এরপর বলে,,,,
“” তোরা কি বলত? প্রথমত আহান ইয়ানাকে বিয়ে করেছে এরপর রায়ান সুমায়াকে বিয়ে করেছে আর এখন তুই ওর বোনকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস। তোরা কি পৃথিবীতে আর মেয়ে দেখতে পাস নি। ঘুরেফিরে তিন বান্দরে তদের বাড়িতেই নজর যায়””
ইউভি –কি করব পছন্দ হয়ে গিয়েছে এখন ওকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। রুয়ানার আব্বুকে রাজি করানোর দায়িত্ব তোমার। আমি কিছু জানি না। তুমি আমার বাবা আমার সব কাজ তোমাকেই করতে হবে।
ফায়াজ রহমান — হ্যা কপাল পুড়েছে আমার। ছেলে পছন্দ করেছে হাটুর বয়সী একটা মেয়েকে। এখন বাপ হয়ে যাব মেয়ের বাপকে রাজি করাতে।
ইউভি — বাবা হয়েছো আর এইটুকু কাজ করতে পারবে না। আমি জানি তুমি এখন ও অনেক স্ট্রং পারবে বাবা পারবে ভয় পাবে না একদম। তুমি হলে ছেলের বাড়ির লোক তুমি কেনো ভয় পাবে? আর তুমি তো অনেক সুন্দর অভনয় করতে পারো তাদেরকে একটু তোমার অভিনয়টা দেখিয়ে দিও।
ফায়াজ রহমান থমথমে মুখে বসে আছেন। উনি খুব চিন্তায় আছেন ছেলের পছন্দ নিয়ে।
সুমু তারা চলে গেছে অনেক্ষন হবে। ইয়ানা দাদুমনি আর আহিয়ার সাথে আড্ডা দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে আসে।
ইয়ানা রুমে এসে দেখে আহান ল্যাপটপ বুকের উপর নিয়ে শুয়ে পড়েছে। হয়ত কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ওনি তো খাবার খান নি। ইয়ানা চুপিচুপি আহানের কাছে যায়। আহানের পাশে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কতটা নিষ্পাপ লাগছে দেখতে একদম ছোট বাচ্চাদের মত। কিন্তু জেগে গেলেই হিংস্র হয়ে উঠে। তখন জেগে থাকা অন্তরে নিজের লোকদের ছাড়া আর কারোর জন্য মায়া নেই। ইয়ানার হঠাৎ করে আহানের হাতের কথা মনে পড়ে। হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় রক্ত নেই কিন্তু চামরা এখনো ফেটে আছে। ইয়ানা একটা ফুস করে শ্বাস টানে। ওয়াড্রপ থেকে একটা মলম এনে অতি যত্নে আহানের হাতে লাগিয়ে দেয়। এরপর আহানের কপালে নিজের ঠোঁট ছোয়াতেই আহান চোখ মেলে তাকায়। আহানের ঠোঁটের কোনে লেগে আছে দুষ্টু হাসি। ইয়ানা আহানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভড়কে যায়। আহানের উপর থেকে উঠে আমতা আমতা করে বলে,,,,
“” আপনি ঘুমান নি? ”
আহান — তাহলে এইভাবে আমার ঘুমানোর সুজোগ নেও প্রতিদিন হুম। দেখো ইয়ানা আমি এখন ও ভার্জিন একটা ছেলে দয়া করে আমার ভার্জিনিটি নষ্ট করো না। এমন কিছু হলে সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারব না।
ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে আহানের দিকে তাকায়। এরপর দাত কটমট করে বলে,,,,
“” নাটক বন্ধ করুন। আপনি ভার্জিন তাই না অসভ্য বেহায়া লোক। নিজেকে আসছে সাধু সাজাতে।””
আহান ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,,,,
“” আমার মত পাপীকে স্পর্শ কেনো করলে মিসেস? আমি তো তোমাকে করি নি তুমি নিজে করেছো। উফফ আমার বউ যে এত অধৈর্য আগে জানতাম না। আমাকে না দেখে থাকতে পারলে না বুঝি?”
ইয়ানা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” আমি আপনার মত হৃদয়হীন নয় কাউকে আঘাত প্রাপ্ত দেখে বসে থাকব। জানেনতো আমি অধৈর্য নয় শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করছিলাম। স্বামী যত খারাপ হোক দিনশেষে স্বামী হয় কারন তার সাথে তো আর বিচ্ছেদ হয় নি। তাই অধৈর্য হয় নি শুধু দায়িত্ব পালন করছিলাম। সে আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে কিন্তু আমি পারি না। কারন ও তো আমাকে মন থেকে ভালোবাসে নি কিন্তু আমি ভালোবাসি। সে ভালোবাসি শব্দটা একদিন ভুল করে বলে ফেলেছিলো কিন্তু ভালোবাসে না। “”
আহান মনযোগ দিয়ে ইয়ানার কথা শুনছে আর তার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। নিজেই হতাশ এই মেয়ের চক্করে পড়ে। এই মেয়ে তো না করেছিলো ওকে যাতে না সস্পর্শ করে তার সাথে কথা না বলে। আমি তো তাই করলাম আর এখন সেটা নিয়ে ও মেডামের অভিমান আর রাগ। এখন আমি যদি ওনাকে স্পর্শ করতাম তাহলে বলত”” কতটা জঘন্য আপনি আহান। আপনি শুধু আমার শরীরটাকে চান আমাকে তো ভালোবাসেন না। না করা সত্তে ও আমাকে স্পর্শ করেছেন। আমার কথার কোনো দাম নেই আপনার কাছে। “”
কি মেয়ে মানুষরে বাবা যেদিকে যায় ওই দিক দিয়ে হৃদয়হীন হয়ে পড়ি। তাহলে করব টা কি আমি। নিজেকে নিজেই এখন চিনতে পারি না। ভাগ্য ভালো এখন ও কান্না কাটি শুরু করে নি। কখন কান্না শুরু করে দেয় আল্লাহ জানে। এই মেয়ের চোখে পানি তো আবার আমি সহ্য করতে পারি না। কলিজা কেঁপে উঠে আমার কি এক অবস্থা।
আহান ইয়ানার কান্না করার আগেই কথা পাল্টে বলে,,,
“” তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে মানে সারপ্রাইজ আরকি। শুনতে চাও সেই গুড নিউজ।””
সারপ্রাইজের কথা শুনে ইয়ানার ভিতর ধুক করে উঠে। ভেসে উঠে ঝর্নার অবয়ব। কি নৃশ্যংস অবস্থা ছিলো ওর। এই সারপ্রাইজ জিনিসটা খুব খারাপ। ইয়ানার চোখে পানি চিক চিক করছে।
আহান ইয়ানার চোখে পানি দেখে অশান্ত গলায় বলে,,,
“” কি হলো সোনা কান্না করছ কেনো? “”
ইয়ানা আহানের দিকে না তাকিয়েই বিরবির করে বলে,,,
“” আমি কোনো সারপ্রাইজ চাই না। আপনার কোনো সারপ্রাইজ আমার প্রয়োজন নেই। আপনার সারপ্রাইজ মানে হলো আমাকে নৃশ্যংস মৃত্যুর সাক্ষাত করানো””
আহান ইয়ানার কথার অর্থ বুঝার চেষ্টা করছে। কিছু সময় পর বুঝে ও যায় ইয়ানার না বলার কারন।
আহান ইয়ানার কাছে গিয়ে ইয়ানাকে নিজের বুকের সাথে জাপটে ধরে। বিগত তিন ধরে এই মেয়ের বোকামির জন্য আহান ইয়ানাকে স্পর্শ করে নি। মনে হচ্ছে ভিতরটা খালি খালি লাগছে আর আজ তা পূর্নতা পেয়েছে। কিন্তু রাতে যখন ইয়ানা ঘুমিয়ে যেত তখন আহান ইয়ানাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিত। কিন্তু কেনো জানি খালি খালি লাগত।ইয়ানা শান্ত হয়ে আহানের শার্ট খামচে ধরে।
আহান ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
“” তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না। রুয়ানার সাথে ইউভির বিয়ের কথা চলছে। কাল আঙ্কেল তোমাদের বাড়িতে যাবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। এইটাই তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম।
আহানের কথা শুনে ইয়ানা অবাক হয়ে তাকায়।
ইয়ানা — পাগল হয়ে গিয়েছেন আপনি। রুয়ানার বিয়ের বয়স হয়েছে? ও এখন ও সংসার কি জিনিস, স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন সেটাই জানে না। আর আপনি বলছে ওর বিয়ের কথা। আপনি ইউভি ভাইয়াকে না করোন কাল যাতে না যাই।
আহান —- পারে না শিখে যাবে। এখন ওইতো বলছে না স্ত্রী ধর্ম পালন করতে। কেনো তোমার কি ইউভিকে পছন্দ নয়?
ইয়ানা — ইউভি ভাইয়া খুব ভালো একটা ছেলে। উনার চেয়ে ভালো পাত্র আর কেউ হতেই পারে না। কিন্ত আমার বোনকে এখন বিয়ে দিবে না। কেনো বুঝতে চাইছেন না ও এখন ও অবুঝ।
আহান —- কে বলেছে অবুঝ? রাস্তার এক বখাটের সাথে প্রেম করতে পারে সে মেয়ে নাকি অবুঝ।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে তেতে উঠে,,,,
“” নিজের লিমিটের মধ্যে থাকুন। একবার আমার বোনের ভিডিও দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন এখন আবার আরেক অপবাদ দিচ্ছেন। কি করেছে ও আপনাকে? “”
আহান — কে বলেছে ওইটা তোমার বোনের ভিডিও ছিলো? ওইটা তো এডিট করে শুধু মুখ লাগানো হয়েছে। উত্তেজনার ফলে তুমি এডিটকে বাস্তব ধরে নিয়েছো। রুয়ানা আমার কাছে আহিয়ার মত। ওর ভিডিও করার মত নিকৃষ্ট আমি নয়। তোমাকে ব্লেইকমেইল করার জন্য একটা মাধ্যমের তো প্রয়োজন। আর আমি কোনো অপবাদ দিচ্ছি না। ওই ছেলের সাথে ওকে অনেক সময় কথা বলতে দেখেছি। পরে এসে আমি বুঝিয়েছি তাই এখন আর কথা বলে না। ওই ছেলেটাকে ও বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি তাই ও আর রুয়ানার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে না। ওরা বাচ্চা মানুষ ওদেরকে শরীরে আঘাত না করে দুই একটা ধমক দিলেই ভয়ে কাঁপে। বুঝানো এতটাও কঠিন না। আহিয়া যেমন আমার কলিজার টুকরা তেমনি রুয়ানা ও তোমার কলিজা সেটা আমি জানি। তোমার মমতা ও আমি অনুধাবন করতে পারি। তাছাড়া রুয়ানা আমাকে ভাইয়া ডাকে আমার ও বোনের মতই। আহিয়াকে যেমন নজরে রাখি সবসময় তেমনি রুয়ানে রেখেছিলাম পিছনে লোক লাগিয়ে। আর ইউভির সাথে বিয়ে হলে তোমার বোন নালিশ করার ও সুযোগ পাবে না।
ইয়ানা আহানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই লোকটা এত কিছু করেছে আর ওকি না কথা শুনাচ্ছে। হৃদয়হীন মনে ও সবার জন্য মায়া আছে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারে না। ইয়ানা আহানকে সেচ্ছায় জড়িয়ে ধরে। এই বুকটা তার কাছে সবচেয়ে প্রশান্তির জায়গা। কিন্তু মাঝে মাঝে এই লোকটাকে বড্ড ভয় লাগে।
ইয়ানা —- কিন্তু আহান আব্বু রাজি হবে না
অনুভবে তুমি পর্ব ৪৫
আহান — উনি আমাকে অপছন্দ করেন কিন্তু রায়ান আর ইউভিকে তোমার আব্বু খুব পছন্দ করেন। আর আঙ্কেল খুব সুন্দর অভিনয় করতে পারে দেখবে তোমার বাবাকে ঠিক মানিয়ে নিবে।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে আর কিছু বলে না। শুধু ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।