অনুভবে তুমি শেষ পর্ব
লিজা মনি
তিন বছর পর,,,,,,,
ইয়াজ, ইয়াজ কোথায় তুমি? কিন্তু ইয়াজের কোনো সারা শব্দ নেই। আহানের কন্ঠ পেয়ে ইয়ানা কিচেন রুম থেকে বের হয়।
ইয়ানা — কোথায় গেলো এখনেই তো ছিলো এতক্ষন।
আহান কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,
” এখানে থাকলে কোথায় ও?আমি বাড়িতে ডুকে ওকে দেখতে পেলাম না। সামনে সুইমিংপুল ওকে একা ছেড়ে দিয়েছো কেনো তুমি?
ইয়ানা — আমার কাছেই ছিলো এতক্ষন। আপনার ছেলে এই মুহূর্তে দাদা বাড়ি যেতে চায়। আহিয়া ফোন করেছিলো এরপর থেকে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে। আমি বলেছি তোমার পাপ্পা আসুক তার পর যাব । কিন্তু ওতো আপনার ছেলে কথা বলবে না ঠিক কিন্তু রাগ নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরে। রাগ করে আমার কাছ থেকে চলে এসেছে। ভিবানেই তো বসে ছিলো কিন্তু এখন কোথায় গেলো?
আহান — আমি বাহিরে দেখে আসছি?
ইয়ানা — আমি ও আসছি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়ানা আহানের পিছু পিছু যায়। আহান ভালো করে যানে ইয়াজ রেগে গেলে কোথায় যায়। তারা এখন আর চৌধুরি ভিলায় থাকে না আহান এর তৈরি করা ডুপ্লেক্স বাড়িতে তাদের সংসার সাজিয়েছে। ইয়ানা, আহান আর ইয়াজ এই তিন জনের পরিবার। আহান খুন, কালো বাজার সব ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু চাইলে কি সব ছাড়া যায়। হয়ত এখন ও আছে কিন্ত সেটা আগের তুলনায় কম সেটা ইয়ানা জানে না।
ইয়ানা সুইমিংপুল এর কাছে গিয়ে আহানের দিকে তাকায়। আহান মুচকি হাসি দিয়ে ইয়াজি
কে পিছন থেকে কোলে তুলে নেয়। আহান ইয়াজের গাল ফোলানো মুখের দিকে তাকিয়ে গালে দুইটা চুমু খেয়ে বলে,,,,
” তোমাকে তো বাবা বারন করেছিলাম সুইমিংপুলের এখানে না আসতে তাহলে আমার কথা অমান্য কেনো করলে হুম? তুমি তো সাঁতার পারো না যদি পড়ে যাও তখন কি হবে শুনি। রাগ হলে বাড়ির ভিতরে অন্য যায়গায় যাবে কিন্তু বাহিরে আসবে না। মনে থাকবে আমার কথা?
ইয়াজ গম্ভির হয়ে বলে,,,
” হুম ”
আহান হাসি দিয়ে বলে,,,,
” এখন কি এইভাবে গাল ফুলিয়ে রাখবে। মাম্মাম তো বলেছিলো তোমাকে নিয়ে যাবে তাহলে এত অধৈর্য কেনো হয়েছিলে? তোমাকে তো আমি বলেছিলাম বাচ্চারা ধৈর্যশীল না হলে তারা বড় হতে পারে না। বড় হতে চাও না তুমি?
ইয়াজ — চাই।
আহান —- তাহলে এইভাবে মায়ের উপর রাগ কেনো করেছিলে বাবা। মাম্মাত তো কষ্ট পাবে।
ইয়াজ আহানের কথা শুনে ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না করে দেয়। তারপর নিজেই নিজের কান্না থামিয়ে দেয়।
ইয়াজকে এইভাবে ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না করতে দেখে অবাক হয়। ইয়াজ সহজে কান্না করে না একদম গম্ভীর চুপচাপ থাকে। এখন তাহলে কি হলো?
আহান ইয়াজকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,,,
” কি হয়েছে বাবা কান্না করছো কেনো? কষ্ট পেয়েছো কেনো তুমি ”
ইয়ানা — বাচ্চারা এমনি কান্না করতে পারে এখানে কষ্ট পাওয়ার কি আছে। এরপর ইয়ানা ইয়াজের দিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। আহান ইয়ানার দিকে তাকালে ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।
আহান — বাবাকে না বললে বুঝব কিভাবে সোনা।
ইয়াজ আহানের বুকে মুখ গুজে অভীমানি সুরে বলে,,,
” মাম্মাম প্রচুর বকেছে সাথে মেরেছে ও ”
আহান ইয়াজের কথা শুনে ইয়ানার দিকে রেগে তাকায়। ইয়ানা এই মুহূর্তে মাথা নিচু করে বিরবির করে যাচ্ছে।
” আল্লাহ আর কি কি বলে ফেলে কে জানে। ”
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ইয়াজিকে বলে,,
” আর কি কি বলেছে তোমার মাম্মাম? ”
ইয়াজ বাবার আদুরে মাখা কথা শুনে গলে যায় সাথে সাহস ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়াজ বলতে যাবে তখন ইয়ানা কাছে এসে হাসি দিয়ে বলে,,,,
” আর কিছু বলতে হবে না বাবা। এখন রাগ অভিমান কমিয়ে ঘরে আসুন।
আহান ইয়ায়ানার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
” ছেলের সামনে মাইর খেতে না চাইলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো। ”
আহানের কথায় ইয়ানা চুপসে যায়। এই ছেলে মাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না কিন্তু বাবা চলে আসলে ওনার অভিযোগের শেষ নেই বিয়াদপ ছেলে।
ইয়াজ — বলেছে বিয়াদপ ছেলে একদম বাবার মত হয়েছিস। এত জেদ কোথায় থেকে আসে তর। আরেকবার বিরক্ত করলে থাপ্পর খাবি। আরও অনেক কিছু বলেছে আমার মনে নেই পাপ্পা।
আহান পারছে না ইয়ানাকে এখানেই থাপ্পর মারতে। কিন্ত ছেলের সামনে তো আর করা যাবে না।
আহান ইয়াজের মথায় একটা চুমু খেয়ে বলে,,,
” মাম্মাম তো তোমাকে শাষন করেছে সোনা। মায়ের সাথে তো রাগ করতে নেই। মা যেমন শাষন করে তেমনি ভালো ওতো বাসে। কি তোমাকে ভালোবাসে না?
ইয়াজ— হুম অনেক ভালোবাসে।
আহান — তাহলে আর কোনোদিন রাগ করবে মাম্মামের উপর?
ইয়াজ — নাহ?
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইয়ানার কাছে আহান পৃথিবীর বেস্ট বাবা।
আহান — এইতো গুড বয়। এখন মাম্মামের সাথে ভাব করে নাও। যাও গালে কয়েকটা পাপ্পি দিয়ে বলো আর কখনো তোমার সাথে রাগ করব না।
ইয়াজ আহানের কোল থেকে নেমে ইয়ানার সামনে দাঁড়ায়। ইয়ানা কোলে নিতে চাইলে সে কোলে না উঠে বলে,, ,
” আমাকে কোলে নিলে তুমি কষ্ট পাবে মাম্মাম। তুমি বসে আমার সমান হও তাড়াতাড়ি।
হ্যা ইয়াজ ইয়ানার কোলে উঠে না। একবার ইয়ানা পড়ে গিয়ে কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলো এরপর থেকে ইয়াজ ইয়ানার কোলে উঠে না। আর তার ভাষ্যমতে সে এখন বড় হয়েছে কোলে উঠলে ওনার ইগুতে লাগে। রাহা আর আকাশের ছেলে আরিবের কোলে উঠার বয়স ওনার না। শুধু নিজের বাবার কোলে উঠতে পারবে উনি আর কারোর না।
ইয়ানা ইয়াজের কথা অনুযায়ী মাটিতে হাটু গেড়ে বসে।
ইয়াজা ইয়ানার ছোট ছোট হাত দিয়ে মুখে ধরে পুরো মুখে চুমু খেয়ে বলে,,,
” সরি মাম্মাম আর কখনো রাগ করব না। তুমি আমাকে মারলে ও রাগ করব না।
ইয়ানা ইয়াজের ছোট দুইটা হাতে চুমু খেয়ে বলে,,,,
” আমি ও সরি তোমাকে বকা আর মারার জন্য। আর কখনো মারব না। তুমি মাম্মামের কথা অনুযায়ী চলবে? ”
ইয়াজ — আচ্ছা।
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
” এই তো আমার লক্ষী ছেলে। এখন চলো রুমে যাই। ”
ইয়ানা ইয়াজকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে নিবে এমন সময় আহান বলে,,,,
” তুমি কোথায় যাচ্ছ শুনি? আমি ইয়াজকে আলিয়ার সাথে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি এখানে থাকো।
ইয়ানা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে,,,,
” আমি ও যাই এখানে থাকার কি আছে।’
আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে,,
” ছেলের সামনে নিশ্চয় শাস্তি পেতে চাও না। যদি ত্যারামি করো তাহলে ওর সামনেই থাপ্পর লাগাবো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।
আহানের ফিসফিস করে হুমকিস্বরুপ কথা শুনে ইয়ানা চুপসে যায়। আহান আলিয়ার সাথে ইয়াজকে পাঠিয়ে দেয়। ইয়াজ আর আলিয়া চলে যেতেই আহান ইয়ানার সামনে বড়াবড় দাঁড়ায়। ইয়ানা মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।
আহান — মাটির দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? ওইখানে কি গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছো? নাকি আমি বুড়ো হয়ে গিয়েছে তাই তাকাতে ইচ্ছে করছে না।
আহানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইয়ানা তার দিকে তাকায়।
ইয়ানা — আমি ওকে মারতে চাই নি কিন্তু বেশি বিরক্তি করছিলো তাই রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারি নি।
আহান — সন্তান ভুল পথে গেলে মা শাষন করবে এইটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাচ্চাদের উপর হাত তুললে তারা বিগরে যায়। তখন তাদের সাহস আর ও দ্বীগুন বেড়ে যায়। তাই বাচ্চাদের মেরে নয় ভালোবাসা দিয়ে বুঝাতে হয়। আর ইয়াজ সব বাচ্চাদের থেকে অনেক আলাদা। তোমাকে বিনা কারনে বিরক্তি করেছে ও কখনো। একটু আধটু বিরক্ত তো সব বাচ্চা করে তাই বলে তুমি ওকে এতগুলো বকা দিবে। সাথে আবার গায়ে ও হাত তুলেছো। এতপর যাতে এমন করতে না দেখি নিজের শব্দচায়ন ঠিক করবে।
ইয়ানা — হুম। আপনার ছেলেকে শাসন করার মত শক্তি এখন ও আমার হয় নি। যেমন বাপ তার তেমন ছেলে।
ইয়ানার কথায় আহান মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ানাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।
আহান — আর গাল ফুলানো স্বভাবটা যে তোমার পেয়েছে তার সময়। মা ছেলে দুইজনে গাল ফুলানোর পিএজডি করে রাখছো।
ইয়ানা আহানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,,,
” কি করছেন ছাড়ুন যে কেউ এসে যাবে তো। রুমে চলোন ইয়াজ এখন ও খাই নি কিছু। ছেলেটার খিদে পেয়েছে হয় তো। ”
আহান — হুম চলো।
ইয়ানা — আরেকটা কথা বলতে চেয়েছিলাম?
আহান — কি?
ইয়ানা — কাল চৌধুরি ভিলায় গেলে এখন থেকে সেখানেই থাকব।
আহান ছোট ছোট চোখ করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইয়ানা আহানের তাকানো দেখে আমতা আমতা করে বলে,,,
” দেখুন ওইখানে দাদুমনির অবস্থা বেশি ভালো না। আহিয়ার কয়েকমাস পর বিয়ে। এতো রুহানদের এখানে চলে যাবে। বাবার এখন বয়স হচ্ছে আগের মত আর সেই দাপট নেই। এখন তো আপনাদের বাবা ছেলের সম্পর্ক ও ঠিক হয়েছে। তাহলে আমাদের পরিবার থাকতে আলাদা থাকার তো কোনো মানে হয় না। তারা তো একে অপরকে খুব মিস করে। প্লিজ না করবে না। নিজের পরিবারের সাথে থাকার শান্তি আর কোথাও নেই।
আহান — হু।
ইয়ানা — কি হু? আমি যা কিছু বলেছি তার সম্মতি দিন।
আহান একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,,,
” ঠিক আছে। ”
আহানের সম্মতিতে ইয়ানার চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। অতিরিক্ত উত্তেজনায় মাথাটা উচু করে আহানের গালে চুমু খেয়ে বলে,,,,
” ধন্যবাদ স্বামীজান। অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাদের নিয়ে এত ভাবার জন্য।
আহান ইয়ানার কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
” আপনার রিপিট পুরস্কার পাওয়া উচিত। আমাকে নিয়ন্ত্রন করার সব শক্তি আছে আপনার কাছে তাই না।
ইয়ানা — কি রিপিট পুরস্কার?
আহান ইয়ানার একদম কাছাকাছি এসে বলে,,,
” করে বুঝিয়ে দিচ্ছি। ‘
ইয়ানা কিছু বলার আগে আহা ইয়ানার মুখে অজশ্র চুমু এঁকে দেয়।
ইয়ানা লজ্জায় মিনিমিনিয়ে বলে,,,
” বাচ্চা বড় হয়ে যাচ্ছে এখন তো একটু বেহায়াপনা ছাড়ুন। ”
এরপর আহানকে রেখে ইয়ানা বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
ইয়ানার লজ্জা মাখা মুখ দেখে আহান ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে। তখন ফোনে রিংটন বাজতে শুরু করে। আহান মোবাইলের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে রিসিভ করে বলে,,,
” হ্যা আরিফ বল ”
আরিফ — ভাই এই লোক কে কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না। পর পর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এত মার মারলাম তবুও এই লোকের ক্লান্তি নেই। ভাই একে ছেড়ে দিলে আবার আমাদের কম্পানির ক্ষতি করবে।
আহান ঠান্ডা গলায় বলে,,,,
” মেরে দে। বুক বরাবর ছয়টা বুলেট ডুকাবি। আমি আসতে পারবা না তর ভাবির সাথে চৌধুরি ভিলায় যাব। আর যদি মারতে না পারিস তাহলে রেখে দে আমি কাল আসছি। ”
আরিফ — না ভাই পারব আসার দরকার নেই।
আহান — হুম।
এরপর আরিফ ফোন কেটে দেয়। আহান মোবাইলের দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দেয়।
আহানকে আসতে না দেখে ইয়ানা ডাক দেয়। ইয়ানার ডাক শুনে নিজেকে ঠিক করে বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
আহান ইয়ানা তারা আজ চৌধুরি ভিলায় এসেছে। ইয়ানা তারা আসার পর দুপুরের দিকে হল্লাপার্টি, রুয়ানা, ইউভি রায়ান তারা ও এসেছে। রেশব আর আরুরার বিয়ে হয়েছে আজ এক বছর হতে চলল। আয়াতের সাথে পারিবারিকভাবে তার বোনের দেবরের বিয়ে হয়েছে আজ চার মাস। তারা সুইজারল্যান্ডে হানিমুনে গিয়েছে। তাই আয়াত আজ তাদের মধ্যে নেয়। অনেক দিন পর সবাই এক সাথে হওয়াতে সবাই আজ খুব খুশি।
আকাশ আর অবনির কোলে তাদের ছোট পুচকো আরিব। রায়ান আর সুমুর কোলে তাদের মেয়ে রাহা। রুয়ানার প্রেগনেন্সির আজ পাঁচমাস চলে। কিন্তু মেয়েটা আজ ও সেই অবুজ ওই রয়ে গেলো।
রুয়ানা — আয়াত আপুকে খুব মিস করছি।
সুমু — হ্যা। তবে আগামী মাসে চলে আসবে। আর সাথে নিয়ে আসবে খুশির খবর।
ইয়াজ ইয়ানার কোল থেকে নেমে সুমুর সামনে গিয়া দাঁড়ায়। এরপর রাহার দিকে তাকিয়ে বলে, ,
” তোমার জন্য চকলেট এনেছি পুচকে। তুমি চকলেট খাবে। ”
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,
” আচ্ছা। তোমি চকলেট কোথায় পেলে? তোমার তো চকলেট খেতে বারন করেছিলাম।
ইয়াজ — পাপ্পা এনে দিয়েছিলো তারপর ওইখান থেকে পুচকোর জন্য রেখে দিয়েছিলাম।
ইয়াজের কথা শুনে ইয়ানা আহানের দিকে রেগে তাকিয়ে বলে,,,,
“” আপনি ওকে চকলেট কিনে দিয়েছেন কোন ঙ্গানে? আমি না করি আর আপনি লোকিয়ে এইসব খাওয়াচ্ছেন।
আহান — আব . আমি তো এনে দিয়েছিলাম তোমার আড়ালে কিন্তু তোমার ছেলে এইভাবে পাবলিক করে দিবে জানতাম নাকি।
আরু– বাদ দে। আমাদের ইয়াজ বাবা যে রাহার জন্য মনে করে চকলেট এনেছে এইটা তো অনেক বড় ব্যাপার।
রায়ান — ভবিষ্যৎ বউ তো তাই ছোট থেকেই আগলে রাখছে।
রায়ানের কথা শুনে সুমু ধমক দিয়ে বলে,,,,
” চুপ করবেন আপনি। বাচ্চাদের সামনে কিসব বলছেন।
ইয়ানা সুমুর কোল থেকে রাহাকে কোলে নিতে যাবে এমনি মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে। হঠাৎ করে এইভাবে শরীর খারাপ লাগার কারন বুঝতে পারছে না। কিছু একটা ভেবে পুরো মুখে চিন্তা বিরাজ করতে লাগলো। তার পর নিজেকে ঠিক করে রাহাকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষন রাখে। সবাই অনেক গুলা গ্রুপ ফোটো ও তুলেছে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে যে যার বাড়ি চলে যায়। থাকতে বলেছিলো কিন্তু এখন সবাই নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। থাকার জন্য একটা পর্যাপ্ত সময়ের দরকার।
ইয়ানা রুমে এসে খাতা খুলে। অনেকদিন ধরে তার রিতুচক্র বন্ধ তাহলে কি কোনোভাবে সে আবার ও মা হতে চলেছে। অজান্তেই মুখে একরাশ বিস্ময় আর হাসি চলে আসে। তার পর ও কনফার্ম হওয়ার জন্য প্রেগনেন্সি কীট নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে। কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে আহান বিভানে বসে কিছু ফাইল দেখছে। ইয়ানা আহানকে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। কিছুতেই তাকাতে পারছে না তার দিকে। আহান ইয়ানাকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,,,,
” ওয়াশরুমের সামনে এইভাবে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
ইয়ানা আহানের কথা শুনে ধীরে ধীরে তার কাছে যায়। আহান কপাল কুচকে জিজ্ঞাসা করে,,,
– কি? কিছু বলবে?
ইয়ানা এতক্ষনে মাথা তোলে আহানের চোখে চোখ রেখে তাকায়। ইয়ানার এমন মুচকি মুচকি হাসা দেখে জিজ্ঞাসা করে।,,,,
” কি হয়েছে বলো তো তোমার? এইভাবে হাসছো কেনো?
ইয়ানা আহানের কোলে গিয়ে বসে গলা জড়িয়ে ধরে। আহান কপাল কুচকে ইয়ানার ভাব ভঙ্গি বুঝার প্রয়াস চালাচ্ছে।
ইয়ানা লাজুক হাসি দিয়ে বলে,,,,
” ইয়াজের জন্য একটা বোন চান না আপনি? ”
আহান — চাই কিন্ত ইয়াজ যখন হয়েছিলো তখন তোমার কি অবস্থা হয়েছে সেটা ও ভুলে যায় নি। কোনো রিস্ক নিতে চাই না আমি তাই সাবধান।
ইয়ানা — রিস্ক তো নিয়ে নিয়েছি।
আহান ইয়ানার কথা শুনে চমকে যায়। এরপর ফের প্রশ্ন করে,,,
” অর্থাৎ? ”
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
” অগ্নি চৌধুরির আরেকটা আংশ পৃথিবীতে আসতে চলেছে আমার গর্ভে।
ইয়ানার কথা শুনে আহান তব্দা লেগে আছে। হঠাৎ অনাকাঙ্খিত কিছু শুনলে যেমন মানুষের যেমন মস্তিষ্ক শুন্য হয়ে পড়ে আহান বর্তমানে সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে।
ইয়ানার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,,,,
” তুমি তো দেখছি ক্রিকেট টিম বানানোর কাজে লেগে পড়েছো। বাচ্চা চাই না বলতে বলতে ও তিন বাচ্চার বাপ বানিয়ে দিয়েছো।”
ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
ইয়ানাকে নিজের সাথে চেপে ধরে শান্ত কণ্ঠে বলে,,,,
” আমার জীবনে এত সুখ শান্তি নিয়ে কেনো এসেছো তুমি? আমি যে এত সুখ সহ্য করতে পারছি না ইয়ানা। সংসার বিরোধী একটা ছন্নছাড়া ছেলেকে পাক্কা সংসারী বানিয়ে দিয়েছো তুমি।
ইয়ানা — আপনি নিজেই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ – শান্তি আপনাকে আমি নতুন করে কি দিব আহান।
আহান মাথা নিচু করে ইয়ানার পেটে চুমু খেয়ে বলে,,,
” এই যে দুই দুইটা সর্গ দিয়েছো আমার। বাবা হওয়ার সুখ দিয়েছো। ভালোবাসি ইয়ানা খুব ভালোবাসি। তোমাদের ছাড়া আমি অগ্নি চৌধুরি অসম্পূর্ন।
ইয়ানা আহানের দুই গাল আকড়ে ধরে বলে,,,,
” আমি ও আপনাকে খুব ভালোবাসি আহান। আপনার হৃদয়কে ছুতে চাওয়ার তীব্রতা আমার অস্তিত্বকে সঙ্গায়িত করে। সারাজীবন আপনার পাশে থাকতে চাই সুখ আর দুঃখের সঙ্গি হয়ে। এইভাবে ভালোবাসতে চাই জন্ম- জন্মান্তর।
আহান মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ানাকে নিজের সাথে আকড়ে ধরে বলে,,,
” তোমার প্রতি অনুভুতি সেই নদীর মত যা সমুদ্রের কাছে গিয়ে ও নিজেকে হারায় না।
ইয়ানার মুচকি হাসি দিয়ে আহানকে আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
এইভাবে তাদের ভালোবাসা পূর্নতা পাক। সারাজীবন যাতে সুখ – দুঃখের সাথী হয়ে এক সাথে থাকতে পারে। আহানের হিংস্রতা যাতে টর্চার সেল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। ইয়ানা আর তার সন্তানদের উপর কোনো প্রভাবে না ফেলে।
অনুভবে তুমি পর্ব ৫৮
সত্যি ভালোবাসা সুন্দর যদি মানুষটি সঠিক হয়। এই যে একজন মাফিয়া এক সাধারন মেয়ের প্রেমে পড়ে নিজের মধ্যে এক সর্গ গড়ে তুলেছে। তাই বলে ভালোবাসা আর বিশ্বাস দিয়ে মুরুভূমিতে ও ফুল ফুটানো সম্ভব।