অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১
লিজা মনি
ঠাসসসসসসস…
নিজের গালে থাপ্পর অনুভব করতে পেরে রক্তচক্ষু নিয়ে থাপ্পর দেওয়া ব্যক্তির দিকে তাকায়। তার সামনে তেজী আর রাগান্বিত মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। দেখতে আনুমানিক পাঁচ ফুট তিন হবে। এইটুকু একটা মেয়ের হাতের থাপ্পর খেয়ে রাগটা যেনো মাথায় চেপে বসেছে। পুরো কামড়া জুড়ে কানাঘুষা লেগে গেছে কে এই মেয়ে? খাদ্য মন্ত্রী সাজিদ চৌধুরির ছেলে অগ্নি চৌধুরিকে থাপ্পর মারার মত দুঃস্বাহস দেখিয়েছে। যে আমাদের আগামী দিনের মন্ত্রী। মেয়েটির পুরো মুখ ফর্সা হওয়ার ধরুন রাগে লাল হয়ে আছে।
মেয়েটি —কোন সাহসে আপনি আমার বন্ধুকে আটকিয়ে এইভাবে মেরেছেন? কোন কারনে মেরেছেন? আমার ফ্রেন্ড কি আপনার বাপের ভিটা নিজের নামে লিখিয়ে নিচ্ছিলো নাকি আপনার বাপ দাদার মাথায় আঘাত করেছে? শুনেছি আপনার বাবা খুব ভালো মানুষ। সবাই তাকে অন্ধের মতো সম্মান করে। কিন্তু আপনি তো একটা মুখুশধারী শয়তান। খদ্য মন্ত্রী নিজের ছেলে সম্পর্কে কি কিছু জানে?
অগ্নি নিজের হাত দুইটা মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। রাগে তির তির করে কাঁপতে থাকে পুরো শরীর। ইচ্ছে করছে মেয়েটার গলা চেয়ে জান নিয়ে নিতে। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
অগ্নি বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলে,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” থেমে যাও মেয়ে। বিনা কারনে নিজের বিপদ ডেকে এনো না। তোমার জন্য সেটা ভালো হবে না। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে যাও আমি নিয়ন্ত্রনহীন হওয়ার আগে ।
এরপর অগ্নি হাতের ইশারা দিয়ে সবাইকে রুম থেকে বের হতে বলে। শুধু নিজের পিএ আরিফকে ছাড়া।
সবাইকে চলে যেতে দেখে মেয়েটি দাতে দাত চেপে বলে,,,
” যদি আমার ফ্রেন্ডের কিছু হয় তাহলে আপনাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব। আপনার রেপুটেশন আর সম্মান যদি ধুলোই না মিশায় তাহলে আমার নাম ও ইয়ানা নয় কথাটা মাথায় ডুকিয়ে নিবেন।
এরপর ইয়ানা সেখান থেকে চলে আসতে নিলে নিজের হাতের হেচকে টান অনুভব করে তাল সামলাতে না পেরে টেবিলের উপর বারি খায়। সাথে সাথে আহহ. করে উঠে। কপাল ফেটে কিছুটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
কপালে হাত রেখেই নিজের হাতের দিকে তাকায়। দেখে অগ্নি তার হাত ধরে রেখেছে। সাথে সাথে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সর্বশক্ত দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় এক ঝটকায়
। ইয়ানা কিড়মিড় করে বলে,,,
” অসভ্য হাত ধরার সাহস কি করে হয়? ”
ব্যাস অগ্নি চৌধুরির রাগের সীমা অতিক্রম করার জন্য অসভ্য বলাটায় যথেষ্ট ছিলো। রাগে নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে থাপ্পর লাগায় ইয়ানার নরম তুলতুলে গালে। এত শক্ত হাতের থাপ্পর খেয়ে ইয়ানা ঙ্গান হারানোর উপক্রম। মনে হচ্ছে তার চারপাশে পুরো পৃথিবী ঘুড়ছে। জীবনে এত বড় থাপ্পর কখনো খায় নি। এইটা মানুষের হাতের থাপ্পর নাকি আলাদিনের দৈত্যের। ইয়ানার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে কারোর কর্কশ কন্ঠে,,,
” আজ মেয়ে বলে বেঁচে গেলে। কারন আমি মেয়েদের কিছু করতে চাই না। তারা মেয়ে জাত তাদের জন্য একটা থাপ্পর ওই যথেষ্ট। কোনো কিছু যাচাই না করে তেজ দেখিয়ে চলে আসলে তোমার বন্ধুকে আমি মেরেছি। তুমি নিজের চোখে দেখেছো নাকি তারা বলেছে কোনটা? প্রমান কি আমি তাকে মেরেছি? আন্সার মি ডেম ইট।
থাপ্পর খেয়ে ইয়ানা একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। কিন্তু অগ্নির কর্কশ ধমক সে ঘোর কেটে মঙ্গল গ্রহে চলে গিয়েছে।
ইয়ানা — আমি দেখিনি তো কি হয়েছে? তার সাথে তো আর ও অনেকে ছিলো তারা বলেছে। খাদ্য মন্ত্রী সাজিদ চৌধুরির ছেলে আমার বন্ধু আকাশকে মেরেছে। তাহলে সাজিদ চৌধুরির ছেলে কে? আপনি তো তাই না। ভার্সিটিতে নিজের ক্ষমতা দিয়ে অপরপক্ষের বিরোধী দলের ছাত্রনেতা হলেন। আর আমার ফ্রেন্ড আকাশও আপনার বিরোধী দল। তাই বলে ক্ষমতার দাপটে ওকে মেরে হসপিটালে পাঠাবেন? আমি বিগত দুই মাস ধরে ভার্সিটিতে যাই না। শুনেছি আপনি নতুন ভর্তি হয়েছেন আমাদের ডিপার্টমেন্টে। সেখানে এসেই ক্ষমতা জাহির করা শুরু করলেন। আর আমি এত দিন পর ভার্সিটি যাওয়ার পর শুনতে পেলাম আমার বন্ধুকে মেরে এই মাত্র হসপিটালে পাঠিয়েছেন। বাট এখানে তো এসে দেখি ভদ্রতার মুখোশ পরে সবার সামনে ন্যায়ের ভাষন দিচ্ছেন।
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নির কপাল কুচকে আসে। এতক্ষনে বুঝতে পারে আসল ঘটনা। এরপর ইয়ানার দিকে দাতে দাত চেপে বলে,,,,
” আহাম্মক মেয়ে আমাকে দেখে কি তোমার ভার্সিটি পড়ুয়া নিব্বা মনে হয়। তুমি যার কথা বলেছো সে আমার ভাই ওরিদ চৌধুরি।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানার চোয়াল ঝুলে আসে। এতক্ষনে অগ্নির দিকে ইয়ানা তাকায়। সত্যি ওইতো ওনার মত এত বড় দানব কিভাবে ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র হবে। দেখতে তো একদম ফিদা হওয়ার মত চেহারা আর ভাবভঙ্গি। হ্যা সাজিদ চৌধুরির ছেলেকে ইয়ানা কখনো দেখেনি। সবাইতো বলল ওনি নাকি সাজিদ চৌধুরির ছেলে এখানে সবার সাথে মিটিং করছে। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
ইয়ানা — তাহলে আপনি কে?
অগ্নি — আউট! বের হও আমার কেবিন থেকে আহাম্মক মেয়ে।
অগ্নি নিজের চুল গুলো খামচে ধরেছে। রাগে যেনো পুরো শরীর ঝলসে যাচ্ছে।
এত বড় ধমক খেয়ে ইয়ানা কেঁপে উঠে। কিন্তু তবুও নিজের বুকের সাহস সঞ্চয় করে বলে,,
“” আপনার ধমক শুনতে আসি নি। শুধু আমি জানতে চাই কে আপনি?
এখন ও মেয়েটার তেজী গলা শুনে অগ্নি তার দিকে তাকায়। অবস্থা বেগতিক দেখে আরিফ বলে,,,
” আপনি প্লিজ এখন চলে যান। ভাই রেগে গেলে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে যাবে।
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,,
” কেনো ওনি কি ভ্যাম্পিয়ার নাকি? আপনি বলুন তো ভাইয়া ওনার পরিচয়টা।
আরিফ — ওনি সাজিদ চৌধুরির বড় ছলে অগ্নি চৌধুরি। কাল মাত্র ওনি দেশে ব্যাক করছে। আর আপনি যার কথা বলেছেন সে হলো ওরিদ মানে ওনার ছোট ভাই।
ইয়ানা আরিফের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায়। কি ভুলটা না সে করলো ইসস। ভুল লোকেশনে পার্সেল করে ফেলেছ। এখন নিশ্চয় লোকটা রেগে আছে। হ্যা রেগেইতো আছে দেখলেই বুঝা যায় পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।
ইয়ানা অগ্নির সামনে গিয়ে বলে,,,,
” সরি মি, চৌধুরি। আমি না বুঝেই কতকিছু বলে ফেললাম। আমি এখানে এসেছি পরে সবাই বলছিলো আপনি সাজিদ চৌধুরির ছেলে। এখন আমি তো আর জানতাম না আপনার বাবার কয় ছেলে বা কাউকে চিনতাম ওনা। আমি..
ইয়ানা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই বিকট শব্দ কানে এসে বাজে….
” রুম থেকে বের হও বিয়াদপ মেয়ে। আদব – কায়দা ম্যানার্স কিছু জানা নেই আহাম্মক মেয়ে।
ইয়ানা — আপনি কিন্তু..
ইয়ানার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরিফ বলে,, ,
” প্লিজ ম্যাম আপনাকে মিনতি করছি চলে যান। ”
ইয়ানা ও আর কিছু বলে না কেবিন থেকে বের হয়ে পড়ে।
ইয়ানা সোজা হসপিটালে যায় যেখানে আকাশকে রাখে হয়েছে। পুরো শরীরে কিছু হয় নি বাট মাথায় আঘাত পেয়েছে হালকা। ইয়ানা সোজা গিয়ে আকাশের শার্টের কলারে ধরে বলে,,,,,
” তর কারনে আজ আমাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ”
সুমাইয়া — ” কি করেছিস তুই ”
ইয়ানা *— ভুল যায়গা পার্সেল পাঠিয়ে দিয়েছি।
সুমু — মানে?
ইয়ানা — মানে আবার কি? তদের কথা অনুযায়ী আকাশকে যে মেরেছে সাজিদ চৌধুরির ছেলেকে ধরতে গিয়েছিলাম কিন্তু ভুলবসত তাকে না দিয়ে তার বড় ভাইকে থাপ্পর মেরেছে।
আকাশ — কিহহহ!
ইয়ানা নাক মুখ কুচকে বলে,,,
” আরে আমি জানতাম নাকি ওনার যে দুই ছেলে। ওদের মিটিং কেন্দ্রে গিয়ে জজ্ঞাসা করছি ওনার ছেলে কোনটা সবাই আমাকে তাকে দেখিয়েছে তাই কোনো কিছু না ভেবে সবার সামনে সোজা থাপ্পর লাগায়।
সুমু আর আকাশ ইয়ানার দিকে বড় বড় চোখ তুলে তাকায়।
সুমু — ছেলেটা কিছু করে নি তকে। ওয়েট ওয়েট তর গালে তো পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে আছে। হায় আল্লাহ কপাল ও কেটে গিয়েছে। তার মানে তুই ও খেয়েছিস?
ইয়ানা — হ্যা লোকটা রুম খালি করে থাপ্পরটা দিয়েছে। সবার সামনে দেই নি এই অনেক।
তারা অনেক্ষন এইসব নিয়ে আলোচনা করে আকাশকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।
( আমি ইয়ানা বিনতে আসাদ। আমি পরিবারের বড় মেয়ে। আমার একটা ছোট বোন আছে। নাম রুয়ানা বিনতে আসাদ। বাবা আসাদ হোসেন মা সেলিনা হোসেন এই আমার মধ্যবিত্ত পরিবার। তবে আমার প্রান প্রিয় চারজন বন্ধু আছে। সুমু , আরু, আকাশ আর রুহান। আমরা সবাই এক ভার্সিটিতে পড়ি।)
ইয়ানা বাড়িতে এসে গালে বরফ লাগিয়ে নেয়। গালটা প্রচন্ডভাবে লাল হয়ে আছে সাথে ব্যাথা ও করছে। সবার কছে নিজেকে আড়াল করার জন্য অসুস্থতার বাহানা ধরে সারাদিন শুয়ে থাকে।
পরের দিন সকালে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্যে চলে যায়। আজ আকাশ আসে নি কিছুদিনের জন্য রেস্ট নিচ্ছে। তারা অনেক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর ক্লাসে রুশান স্যার প্রবেশ করে।
রুশান স্যার — কি অবস্থা সবার। তোমাদের নতুন প্রফেস্যার নিযুক্ত হয়েছে। সবাই তার সাথে পরিচিত হয়ে নাও। এরপর নতুন স্যারটি ক্লাস রুমে প্রবেশ করে।
স্যারকে দেখে আমার ভিমরি খাওয়ার মত অবস্থা। এ আমি কাকে দেখছি। সবাই ওনাকে চোখ গিলে খাচ্ছে আর আমার অস্বস্থিতে কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
আমার সামনে সয়ং দাড়িয়ে আছে……
