অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১০
লিজা মনি
ইয়ানা ঘাবরে গিয়ে ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। সামনে অগ্নিকে দেখে একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। এরপর বুকে থুথু দিয়ে বলে,,,,,
“” ওহহ আপনি? ”
অগ্নির চোখ ছিলো তীক্ষ্ণ । ইয়ানার হাতটাকে জোড়ে চেপে ধরে শান্ত কন্ঠে বলে,,,,,
“” তুমি এখানে কি করছো? আমি তো বলেছিলাম কিছু সময় ব্যবধানে তোমাকে নিতে আসছি। সেখানে তুমি রেডি হওয়ার পরিবর্তে এখানে কি করছো?
ইয়ানা — আপনি পুলিশের মত এত প্রশ্ন করছেন কেনো? একা একা ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম এই সুযোগে বাড়িটা ঘুরে দেখি। সেই কারনেই এখানে আসা। কিন্তু আপনি জানেন যখন আমি এই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন কারোর গোঙ্গানির শব্দ পেয়েছি। না না একজন নয় মনে হচ্ছিলো চার পাঁচজন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এখন আর আসছে না। কিছুক্ষন আগে ও ছিলো তাই তো তালা ভাঙতে গিয়েছিলাম।
এরপর হাতে সামান্য ব্যাথা অনুভব করায় অগ্নির হাত থেকে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,,,
” উফফ হাতটা ছাড়ুন না। ব্যাথা পাচ্ছিতো।
অগ্নি গম্ভীর গলায় বলে,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“” চলো এখান থেকে।”
ইয়ানা — এই না প্লিজ! চলুন আমি আর আপনি মিলে তালাটা ভাঙ্গি তাহলে কষ্টটা কম হবে। ওয়েট ওয়েট রুমটা তো তালাবদ্ধ এই রুমের চাবি কোথায়? চাবি দিন।
অগ্নি — চাবি আমার কাছে নেই। এইটা আমার রুম না। এখানে অনেকের অনেক গচ্ছিত জিনিস আছে যা সাধারন মানুষ দের শান্তিতে নিশ্বাস নিতে দিচ্ছে।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,
” কি এমন আছে এখানে যা সাধারন মানুষদের শান্তিতে নিশ্বাস নিতে দিচ্ছে তাও আবার আপনার বাড়িতে?
অগ্নি — অন্যের জিনিস জানার বা দেখার ইন্টারেস্ট আমার কোনো কালেই ছিলো না। বললাম না এখানে অন্যের গচ্ছিত জিনিস রয়েছে। সেখানে অন্যেরটা দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।
ইয়ানা — কিন্তু এইটা তো আপনার বাড়ি তাই না?
অগ্নি — হ্যা। তবে আগে আরেকজনের ছিলো আর এখন আমার। আর আগে যার ছিলো তার ওই আমানত এই রুম। আমাকে এই বাড়ি দিয়ে যাওয়ার আগে বলে দিয়েছিলো যাতে এই রুম কখনো না খুলি। আমার ও বা কি দরকার এইটা খুলার। তাই কোনোদিন খোলার ইন্টারেস্ট দেখায় নি।
ইয়ানা — ওহহ আচ্ছা। বাট আমি তো রুমের কথা বলছি না এইখান থেকে কেমন একটা শব্দ আসছিলো।
অগ্নি — এইটা তোমার মনের ভুল।
ইয়ানা — কিন্তু….
ইয়ানার কথার মাঝে অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,,
“” ভার্সিটি যাবে নাকি এখানে দাঁড়িয়ে গোয়েন্দাগিরি করবে। মনে রেখো আজ যেতে না পারলে আর কিন্তু যেতে দিব না।
ইয়ানা অধৈর্য হয়ে বলে,,,,
” এই না না এমন কথা বলছেন কেনো? চলুন।
এরপর ইয়ানা অগ্নির পিছন পিছন চলে যায়। যাওয়ার পূর্বে একবার তালাবদ্ধ রুমটার দিকে তাকায়। এই শব্দ শুনা কি সত্যি আমার মনের ভুল ছিলো? কিন্তু কেনো জানি মন বলছে এখানে ভয়ংকর কিছু আছে।
ভার্সিটির গেইডের সামনে অগ্নির বিলাসবহুল কালো মার্সেডিস গাড়িটি এসে থামে।
ইয়ানা গাড়ির কাউচ দিয়ে বাহিরে উকি দেয়। অনেক বড় বিল্ডিং তার সাথে অনেক সুন্দর ও।
অগ্নি সানগ্লাসের আড়ালে ইয়ানার হাসিমাখা মুখটি দেখে। অগ্নির মুখে বরাবরের মতই মাক্স। সেই মাক্সের আড়ালেই একটা মুচকি হাসি দেয় যা ইয়ানার অজানা।
ইয়ানা গাড়ি থেকে নেমে অগ্নিকে বিদায় দিয়ে দুই কদম ফেলতেই অগ্নি পিছন থেকে ইয়ানার হাত ধরে নিজের কাছে এনে দাড় করায়। ইয়ানা ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,
” কি হলো যেতে দিবেন না নাকি? ”
অগ্নি দুই ঠোঁট চেপে বলে,,,,
” দিতে তো কোনো কালেই ইচ্ছে ছিলো না। যদি এমন সুন্দরী বউ থাকে তাহলে কোন পুরুষ আলাদা রাখতে চাই বলোন।
ইয়ানা — শুরু হয়ে গেছে তাই না?
অগ্নি ইয়ানার হাতের উপর একটা বক্স দিয়ে বলে,,,
” এই নাও তোমার মোবাইল। সবকিছু ঠিক করে দিয়েছি ফোন দিলে যাতে সাথে সাথে পাই। আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবে ওকে।
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,,,,
” হুম ”
অগ্নি — গুড।
এই বলে সে নিজের গাড়ি নিয়ে মুহূর্তের ভিতর দৃষ্টিসীমানার আড়াল হয়ে যায়।
ইয়ানা মোবাইলটা পেয়ে খুব খুশি। সত্যি একটা ফোন ওর প্রয়োজন ছিলো।
ইয়ানা নার্ভাস কাটিয়ে ভার্সিটির ভিতরে প্রবেশ করে। ইয়ানা গিয়ে নিজের ক্লাস রুমে যায় । সবাই কেমন অপরিচিত। ইয়ানা বসতেই তার কাছে একটা মেয়ে এসে বলে,,,,
” তুমি কি বাংলাদেশী? দেখে বাঙ্গালী মনে হচ্ছে। ”
এত ইংরেজদের ভীরে বাঙ্গালী ভাষা শুনে ইয়ানা একটা স্বস্থি ফেলে।
ইয়ানা — জি আমি বাঙ্গালি। আজ ওই জয়েন হয়েছি।
মেয়েটা — ওহহ আমি ও বাঙ্গালি। আমি এই দুই মাস হবে এসেছি। হাই আমি মিরা।
মেয়েটি ইয়ানার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,,,
” আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি? ”
ইয়ানা মেয়েটির হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
” হ্যা কেনো নয়। আমি ইয়ানা।
মিরা — নাইস নেইম। ইউ নো তুমি খুব মিষ্ট।
ইয়ানা — থ্যাংকস। আপনি ও খুব সুন্দর।
মেয়েটা ঠোঁট উল্টে বলে ,,,,
” একটু আগেই তো ফ্রেন্ড বানালে এখন আবার আপনি সম্মোধন করছো? এইটা কিন্তু ঠিক না।
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
” ওফফ সরি! তুমি কি এখানে হোস্টেলে থাক নাকি বাসা থেকে যাতায়াত করো?
মিরা — আমি আগে মামাদের বাসায় থাকতাম বাট ওইখান থেকে প্রতিদিন ভার্সিটি আসা খুব কষ্টদায়ক। তাই হোস্টেলে থাকি। কিন্তু তুমি এত দেরীতে ভর্তি হলে যে। সচারচর এখানে এত লেইট করে স্টুডেন ভর্তি করায় না। তোমার ব্যাপারটা সত্যি আশ্চর্য জনক। যাই হোক ভর্তি তো হতে পেরেছো এই অনেক। এই দেখছো তোমার কথাই জিজ্ঞাসা করা হলো না। আসলে আমি কথা বলতে বেশি ভালোবাসি। বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে দেখলাম গাড়ি দিয়ে আসতে। তোমার ভাই বা ড্রাইভার নাকি?
ইয়ানা মিরার কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে যায়। এরপর আমতা আমতা করে বলে,,,,
” উনি আমার হাজবেন্ড ভাই বা ড্রাইভার নয়।
মিরা অবাক হয়ে ইয়ানার দিকে তাকায় এরপর একগাল হেসে বলে,,,,,
“” ওফফস সরি সরি। তুমি বিবাহিতা! যাই হোক বিবাহিতা জীবনের জন্য অভিনন্দন। আসলে আমি তোমার হাজবেন্ডকে দেখতে পাই নি তাই বলে ফেলেছি মুখ ফসকে।
ইয়ানা — থ্যাংকস। ওকে সমস্যা নেই।
মিরা — আমাদের জিজুর নাম কি ইয়ানা?
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” অগ্নি চৌধুরি। ”
অগ্নি চৌধুরি নামটা শুনতেই মিরা আতঙ্ক নিয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানা মিরার ভয়ার্ত মুখ দেখে বলে,,,,
” কি হয়েছে মিরা? মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে ভয় পাচ্ছো?
মিরা শুকনো ঢুক গিলে কাঁপাকঁপা কন্ঠে বলে,,,,
” ক..কোন অগ্নি চৌধুরি? আই মিন উনি কি করেন?
ইয়ানা — উনি ফ্যামিলি বিজন্যাস সামলাচ্ছে আর এই কারনেই আমাদের এখানে আসা।
মিরা ভয়ার্ত মুখ থেকে এখন একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। ভয়ে পুরো শরীর ঘেমে যাচ্ছিলো। কপালের ঘাম টিস্যু দিয়ে মুছে বলে,,,,,
“” ওহহ আচ্ছা। ”
ইয়ানা মিরার দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,,
” হ্যা। কিন্তু তুমি অগ্নি চৌধুরির নাম শুনে এইভাবে রিয়াক্ট করলে কেনো?
মিরা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
” আরে না এমনি।
ইয়ানা — কোনো কারন ছাড়া হঠাৎ করে কারোর মুখ এতটা ভয়ার্ত দেখায় না মিরা। আমি স্পষ্ট দেখেছি তুমি ঘামছিলে। তোমার ভয়ার্ত মুখের ঘামগুলো ও কি মিথ্যা ছিলো?
মিরা — তুমি তোমার হাজবেন্ডের নাম অগ্নি চৌধুরি বললে না সেটা নিয়েই একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। অগ্নি চৌধুরি হলো এখানকার সবচেয়ে বড় মাফিয়া। উনার চেয়ে ও অনেক বড় বড় মাফিয়া আছেন কিন্তু উনাকে সবাই যমের মত ভয় পায়। ওনার এক একটা খুনের বর্ননা শুনলে শরীরের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। উনি টরন্টো শহরের বাদশাহ বলতে পারো। উনার ভয়ে বড় বড় মাফিয়ারা ও আতঙ্কে থাকে। তবে উনি অন্যায়কে কখনো পশ্রয় দেয় না। যতটুকু শুনেছি এইখানে আগে অনেক খারাপ কাজ হত। বাট উনি আসার পর থেকে সব কিছু কমেছে। কয়েকটা গ্রামের লোকজনের উপর নাকি টর্চার করা হত এত আইন থাকা সত্তেও। টর্চারিত গ্রামের দায়িত্ব নিয়েছেন অগ্নি চৌধুরি। কিন্তু মাফিয়া তো মাফিয়া ওই হয় বোন। ওদের শরীরে মায়া বলতে কোনো শব্দ নেই। খুন – পাচার, দুর্নিতী তো ওদের রক্তে আছে।
অগ্নি চৌধুরির নাম শুনেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
ইয়ানা — ওহহ বুঝলাম। কিন্তু উনি এইসব খারাপ কাজ করার কল্পনা ও করতে পারে না। ও একজন ব্যবসায়ী এইটুকু কোনো মাফিয়া টাফিয়া নয়। প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি রাগী তবে আমার জন্য ঠিক আছে।
মিরা — ওকে বাদ দাও এখন ওই ক্লাস শুরু হবে।
ভার্সিটির ছুটির পর ইয়ানা গেইডে আসতেই দেখতে পাই অগ্নির গাড়ি। ইয়ানা মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” ওই তো আমার গাড়ি এসে গেছে। তাহলে কাল আবার দেখা হচ্ছে।
মিরা — আল্লাহ হাফেজ।
ইয়ানা গাড়ির কাছে যেতেই অগ্নি কাউচ নামিয়ে দেয়।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” কি ব্যাপার এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন যে ? ফোন দেওয়ার প্রয়োজন হয় নি। ”
অগ্নি — জি আমার রাজ্যের রানী আপনাকে দাড়া করিয়ে রেখে কষ্ট দিতে পারি বলোন। রানী হয়ে যদি অভিশাপ দিন তখন আমি তো ধ্বংস হয়ে যাব।
ইয়ানা গাড়িতে উঠে বলে,,,,,,
” নাটক কম করেন জাহাপানা। আপনার নাটক দেখে আমার গরম লাগছে।
অগ্নি ইয়ানার মাথা থেকে উড়না খুলে দিয়ে বলে,,,,,
” এসি রুম থেকে এসে এখন এসি গাড়িতে বসেছেন তাতে ও গরম সেই সেই। রানী হলে এমন ওই হয়।”
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,
” আপনাকে সত্তিই মাঝে মাঝে চিনতে পারি না। কিন্তু আপনি এইভাবে সবসময় মাক্স আর সানগ্লাস লাগিয়ে রাখেন কেনো বলোন তো? এখন তো গাড়ির ভিতর আছেন ধুলোবালি ডুকবে না খুলতে পারেন।
অগ্নি ইয়ানার কথাটাকে কৌশলে এড়িয়ে বলে,,,,,
” কেমন কাটলো আপনার প্রথম দিনের ক্লাস রানী সাহেবা।
ইয়ানা চুলগুলো ঠিক করে বলে,,,,,
” অনেক ভালো লেগেছে। আজ একটা ইন্টারেস্টিং কাহিনী শুনেছি মাফিয়া সম্পর্কে।
মাফিয়া উচ্চারন শুনতেই অগ্নি আৎকে উঠে। গাড়ির স্টিয়ারিং এ শক্ত করে চেপে ধরে বলে।,,,,
“” ক. কি শুনেছো?
ইয়ানা — এখানে নাকি একজন মাফিয়া আছে। তার নাম ও ঠিক আপনার নামের মত অগ্নি চৌধুরী। সেই জন্য ওই তো বলি আপনার এত রাগ কেনো? নাম মিলেছে তো তাই একটু ব্যবহার চলে এসেছে। যাই হোক ওই মাফিয়ার সাথে আপনার তুলনা করব না কারন আপনি তো ভালো। আর মাফিয়ারা তো খুব খারাপ হয় যাকে বলে জঘন্য খারাপ। ওয়াক এদের দেখলে ঘৃনা হয়। জানোয়ার সবগুলো। শুনোন এদের থেকে সবসময় দুরত্ব বজায় রাখবে। এইসব জানোয়ারদের এড়িয়ে চলাটা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। কারন এইসব মানুষদের ঘৃনা করি।
অগ্নি ছোট করে উত্তর দেই….
“” হুম ”
ওয়াইনের গ্লাসে জোড়ে চেপে ধরে আছে অগ্নি। চোখগুলো অসম্ভব লাল। বার বার ইয়ানার কথাগুলো জানে বাজছে। ইয়ানা ঘৃনা করে অগ্নি চৌধুরি নামক মাফিয়াকে। বার বার ইয়ানার নাক মুখ কুচকানো মুখটা ভেসে আসছে। অস্থির লাগছে সবকিছু। সব কিছু শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। এতটা বিষাক্ত কেনো লাগছে চারপাশ।
আজকাল ওয়াইনের নেশা ও রাগ মিটাতে পারে না। অগ্নি
আ্যালকোহল সচারচর খাই না মাঝে মাঝে মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য খেতে হয়। তবে নেশা যাতে না হয় সেই পরিমান নিয়ে সেবন করে। তবে আজ ওয়াইন ও ভালো লাগছে না। হাতে থাকা ওয়াইনের গ্লাসটাকে সজোরে আছাড় মেরে বলে,,,,,
” বাল ছাল ছাতার মাথা এইসব ও ভালো লাগছে না। ঘৃনা করলে করুক এত অস্থির হওয়ার কি আছে আমি কি ছেড়ে দিব নাকি। আমাকে এতটা ডেম্পারেট করে ছেড়ে চলে যাবে ভেবেছে। একবার শুধু ছেড়ে যাওয়ার কথা বলোক হাত পা বেঁধে টর্চার সেলে রেখে দিয়ে আসব।
অগ্নি চুলগুলো খামচে ধরে আরেকটা গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে বলে,,,,,
” আমার রাজত্যে তুমি প্রবেশ করেছো রানী সাহেবা। আমি তোমাকে ফোর্স করে নি শুধু হালকা ফাঁদ পেতেছিলাম। আর সে ফাঁদে তুমি এসে আটকিয়েছো। আমার রাজত্যে শুধু ভালোবাসা আর আলোটাই দেখলে। কারন এখন ও তুমি আমার সীমার মধ্যে আছো। কিন্তু যেদিন আমার সীমানা অতিক্রম করে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইবে, ঘৃনা করতে চাইবে, ওইদিন তুমি অগ্নি চৌধুরির অন্ধকার রাজত্বের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তুমি এখন আলো দেখছো পরবর্তীতে অন্ধকার দেখবে, অগ্নি চৌধুরির মিষ্টি কথা শুনেছো কিন্তু ওনার হিংস্রতা দেখো নি।
তাই আমাকে ঘৃনা করার মত ভুল যাতে কখনো না করো। এমনিতে তোমাকে নিয়ে প্রচুর পজেসিভ আমি। তোমার নিশ্বাস যখন ফেলো তখনও ভয় হয় যদি কিছু হয়ে যায়। যদি পারতাম তাহলে নিশ্বাস টা ও আমার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতাম। আমার অনুভুতির পুরো সত্তা জুড়ে তুমি আছো। তাই আমাকে ছেড়ে যাওয়ার মত দুঃস্বাহস হবে তোমার মৃত্যু সমতুল্য।
অগ্নি এইসব বলতে বলতে হাত শক্ত করে ফেলে। পুরো শরীর কাঁপছে ওর।
লাল চক্ষু নয়নে দেয়ালে আঁকা এক আগুনের প্রতিচ্ছবির তাকিয়ে কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,,
” যদি বিচ্ছেদ নামক কোনো শব্দ ভুলে ও আসে তাহলে পুরো শহর আমি শেষ করতে ও সময় নিব না।
ইয়ানা টেবিলে বসে পড়ছিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। ইয়ানা মোবাইল ওপেন করে অগ্নিকে ফোন দেয়। তিন চার সেকেন্ডের মধ্যেই ফোন রিসিভ করে বলে,,,
” কোথায় আপনি?
অগ্নি — আজ আসব না ভাবছি। তুমি খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে থাকো।
ইয়ানা — কিন্ত কেনো?
অগ্নি — কেনো মিস করছো?
ইয়ানা — বলে বুঝাতে হয়।
অগ্নি — উহুম। তুমি তো আমাকে এমনিতে ও অপছন্দ করো তাহলে?
ইয়ানা মন খারাপ করে বলে,,,,
” আপনি ওতো আমাকে ঘৃনা করতেন এখন ও করেন? না তো। তাহলে আমি কেনো ঘৃনা করব। আমাকে রেখে বাহিরে থাকবেন?
অগ্নি — কি করব বউ কাছে আসলে দশ হাত দুরে চলে যায়। বউ পাশে থাকতে ও আমার মত এমন যুবক সিঙ্গেল জীবন পার করছে। চুমু খেতে গেলে ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকে হাত বাড়ায়। এত অবিচার হয় আমার সাথে তাই আজ আসব না ভেবেছি। দেখি বাহিরে কাউকে পটাতে পারি কি না।
ইয়ানা — ওহহহ। সরি আপনাকে এত অপেক্ষা করানোর জন্য।
ইয়ানা ঘুরতে যাবে তার আগেই কেউ তাকে ঝাপটে ধরে। ইয়ানা প্রথমে ভড়কালে ও পরক্ষনে বুঝতে পারে লোকটি কে? তাই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,,, ,,,
” আমাকে ধরেছেন কেনো? যান দেখেন বাহিরের কোনো মেয়েকে পান কি না। অবশ্য আপনি হাত বাড়ানোর আগেই হাজার হাজার মেয়ে পায়ের কাছে এসে পড়বে সেটা আমি জানি। সৌন্দর্যের অধীকারি কোটিপতির সন্তান তার উপর নিজের ও টাকার অভাব নেই সেখানে অনেক মেয়ে পাবেন। ছেলে তো আপনি সবার মতই হবেন এটাই স্বাভাবিক। ছাড়ুন আমাকে।
অগ্নি ইয়ানার কোমরে চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। এরপর এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়।
ইয়ানার কপালে জোড় করে চুমু খেয়ে বলে,,,,
” ইচ্ছে মত বলে এখন রাগ কমেছে। নাকি আর ও বলবে সমস্যা নেই আমি শুনতে প্রস্তুত। মাঝে মাঝে বউয়ের কথা শুনা ভালো।
ইয়ানা — বউ বলেন কাকে? একটু আগে যখন বলেছিলেন অন্য মেয়ের কাছে যাবেন তখন বউয়ের কথা মনে ছিলো না নাকি বাহিরে গেলে বউয়ের কথা ভুলে যান অন্য মেয়েদের দেখে। এইটা হলো ছেলে জাতির সবচেয়ে ছেচড়া স্বভাব অন্যের জিনিসে একটু হলে ও উকি দিবে। সেখানে আপনি ও…. শেষ ইয়ানা কথা বন্ধ করে দিছে। অবশ্য কথা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কারন কথা বলার জন্য ঠোঁট প্রয়োজন যেটা বর্তমানে অগ্নি চৌধুরির রাজত্বে আছে। ইয়ানার ঠোঁটগুলো আকড়ে ধরেছে নরমভাবে। ইয়ানা অগ্নির বুকে ঘুসি দিলে হাত দুইটা আকড়ে ধরে।
ইয়ানা পা কাজে লাগাতে চাইলে পাগুলো নিজের কবলে নিয়ে নেয় শেষ ইয়ানার সব শক্তি ধীরে ধীরে বিলুপ্তি হতে থাকে ছটফট করার ও সুযোগ নেই ।
দশেক মিনিট পর অগ্নি ইয়ানার ঠোঁটে জোড়ে এক কামড় বসিয়ে ছেড়ে দেয়। ঠোঁটে কামড় পড়তেই ইয়ানা ব্যাথায় আহহ করে উঠে।
অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,,,
” হালকার উপর ঝাপসা একটু চুমু খেয়েছি। বলেছি না যতবার রাগ করবে ততবার তোমার ঠোঁট আমার দখলে আসবে। পরে কোনো একদিন পুরো ইয়ানাটাকেই না হয় দখল করে নিবে।
ইয়ানা — ছিহহ অসভ্য লোক।
অগ্নি — তার জন্য আমি গর্বিত।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,,
” আপনি একটা অসভ্য সেটা নিয়ে আপনার গর্ব বোধ হয়। ”
অগ্নি — পুরো দেশের সামনে অসভ্য না হয়ে বউয়ের সামনে অসভ্য হলে ক্ষতি কি। বউ অসভ্য বলেছে তার মানে সে বউকে কিঁছু করেছে তাই। সে বউয়ের সাথে কিছু করতে পেরে অসভ্য উপাধি পেয়েছে তার জন্য তো শুধু আমি না সবার গর্ব করা উচিত।
ইয়ানা অগ্নির লজিক শুনে কপাল কুচকে বলে,,,,,
” হ্যা বউ রেখে অন্য মেয়ের কাছে যাওয়াটা ও গর্বের বিষয়।”
অগ্নি — আমি যাস্ট মজা করেছি সুইটহার্ট। বউ রেখে অন্য মেয়ের কাছে যাওয়ার মত অসভ্য আমি নয়।
ইয়ানা — তাহলে বললেন যে?
অগ্নি এইবার বিরক্তি হয়ে বলে,,,,,,
” আমি যখন তোমাকে এইসব বলছিলাম তখন আমি পার্কিং এড়িয়াতে গাড়ি পার্কিং করছিলা ইডিয়েট।
অনেক্ষন নিরবতা কাটিয়ে ইয়ানা একটা কথা শুনে থমকে যায়।
“” তুমি মাফিয়া শব্দটা খুব ঘৃনা করো তাই না.?”
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৯
” হ্যা তবে এই প্রশ্ন করছেন কেনো? ”
অগ্নি — নাথিং। যাও ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি।
কিছুক্ষন ব্যবধানে অগ্নি রুমে ডুকে ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
এই কিছুদিনের মধ্যে এইটা তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে ইয়ানাকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুমাতে পারে না। ইয়ানার প্রথম প্রথম একটু অস্বস্থি হত কিন্তু এখন ঠিক হয়ে গেছে।