অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২
লিজা মনি

স্যারকে দেখে আমার ভিমরি খাওয়ার মত অবস্থা। এ আমি কাকে দেখছি? সবাই ওনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আর আমার অশ্বস্তিতে কথা বলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।আমার সামনে সয়ং ভবিষ্যৎ খাদ্য মন্ত্রী অগ্নি চৌধুরি। ওনি কি আমাদের নতুন প্রফেস্যার নাকি? কিন্তু ওনি তো পলিটিক্স করে তাহলে ভার্সিটির প্রফেস্যার হতে গিয়েছে কোন দুঃখে? ক্ষমতা থাকলেই যেখানে সেখানে জাহির করা শুরু করে সেজন্য ওই ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের আমি ঘৃনা করি। ইয়ানা হঠাৎ আহহ করে উঠে। নাক মুখ কুচকে তাকিয়ে দেখে সুমু ওর হাতে চিমটি দিয়েছে।
ইয়ানা সুমুর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

” চিমটি দিয়েছিস কেনো বিয়াদপ? ”
সুমু সামনের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে সুরে বলে,,,
” আরে গাধি সামনে তো একবার তাকা। ”
ইয়ানা সুমুর কথা মত সামনে তাকাতে তাকাতে বলে,,
“সামনে কি আ.. আর বলতে পারে নি আপনা আপনি মুখ বন্ধ হয়ে যায়। রুমের প্রতিটি স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে শুধু ইয়ানা ছাড়া। এতটা ভাবনার জগতে ছিলো যে তার খেয়াল নেই স্যার কি বলছে।
সামনে তাকিয়ে দেখে অগ্নি তার দিকে এগিয়ে আসছে সাথে কপাল কুচকানো। ইয়ানা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়।
অগ্নি ইয়ানার কাছে এসে বলে,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আরে দাঁড়ালে কেনো বসে থাকো সমস্যা নেই। সব শিক্ষার্থী থেকে তুমি আলাদা মনে হয় তাই কষ্ট করে দাড়াঁনোটা ঠিক মানায় না। আদব – কায়দা সমস্ত ম্যানার্স সম্পর্কে ধারনা নিয়ে ভার্সিটিতে এসেছো নাকি উড়ু উড়ু মন নিয়ে চলে এসেছো?
সমস্ত ক্লাস রুম জুড়ে পিন পিন নিরবতা। এতক্ষণ যাবৎ যে মেয়েগুলো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো তারা ও অগ্নির কর্কশ কন্ঠ শুনে চোখ নিচু করে রেখেছে।
ইয়ানার খারাপ লাগলে ও চুপ করে থাকে। যেহেতু অন্যায়টা সে করেছে। দাঁড়ানোটা উচিৎ ছিলো সম্মান প্রদর্শনের জন্য কিন্তু শালার ভাবনার কারনে খেয়াল ওই ছিলো না। ইয়ানা কন্ঠ নিচে নামিয়ে বলে,,
” সরি স্যার।”
অগ্নি ঘম্ভীর কন্ঠে বলে,,,

” এরপর থেকে যেনো খেয়াল থাকে। শুধু রাস্তা ঘাটে যে কাউকে থাপ্পর মারলে হয় না তার সাথে কিছু আদব – কায়দা থাকতে হয়। আমার ক্লাসে সব ডিসিপ্লিন মেনে চলতে হবে নাহলে ক্লাস করার প্রয়োজন নেই।
ইয়ানার এবার প্রচুর রাগ হচ্ছে। এইবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে না। সে ভুল করেছে তার জন্য তো সরি ও বলেছে তাহলে এত কথার কি মানে? ওনি কি কোনোভাবে কালকের ঘটনার শোধ তুলছে। ইয়ানা মাথা নিচু করে বলে,,
” স্যার আমি ভুল করেছি তার সাথে সরি ও বলেছি। কিন্তু আপনার কথার পরিমান তো আমার ভুলের থেকে ও বেশি। ”
ইয়ানার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,

” জাস্ট সেট আপ। মুখে মুখে তর্ক করছো কোন সাহসে বিয়াদপ? ক্লাস রুম থেকে বের হও। ”
ইয়ানা সহ বাকি সব স্টুডেন্ট অগ্নির ধমকে কেঁপে উঠে। ইয়ানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে চাইছে। এতটা অপমানিত সে কখনো হই নি। ইয়ানা কিছু না ভেবে ব্যাগ নিয়ে চলে আসতে নিলে রুহান ওর হাত ধরে ফেলে। চোখ দিয়ে ইশারা করে না যেতে। ইয়ানা চলে গেলে ওরা ও বের হয়ে যাবে।
অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার হাতের দিকে তাকায় যেখানে রুহান চেপে ধরেছে। মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।
ইয়ানা রুহানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,,,
” আমার কারনে তরা কেনো বের হবি? তরা ক্লাস কর। কারোর পার্সোনাল শত্রুতার কারনে পুরো ক্লাসে অপমানিত আমি হয়েছি তরা না। তরা ক্লাস কর আমি যাই। ”
ইয়ানা ব্যাগ নিয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,

” আসসালামু আলাইকুম স্যার আসি। ”
এরপর ইয়ানা রুম থেকে বের হয়ে যায়। সবার মনে কিছু মুহূর্তের জন্য যেনো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিলো। তাদের নতুন টিচার এতটা গম্ভির আর মাজাজী হবে তারা ভাবতে ও পারে নি।
অগ্নি সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর শান্ত কন্ঠে বলে,,,,
” আমার পরিচয়তো আমি দিয়েছি। এখন তোমাদের পরিচয়টা দেও একজন একজন করে।
এক এক করে সবার পরিচয় পর্ব শেষে আহান সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,
” কাল থেকে তোমাদের ক্লাস নিব। আমার ক্লাসে কোনো রকম কোলাহল বা কথা বলা চলবে না। কোনো কিছুর দরকার হলে আমাকে প্রশ্ন করবে।”

এরপর অগ্নি সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে পড়ে।
অগ্নি বের হয়ে যাওয়ার পর সবাই একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে।
একটা মেয়ে — দেখতে যেমন হট তেমনে রাগী। কি আ্যটিটিউড দেখেছিস?
আরেকটি মেয়ে — হুম শুনেছি ওনি খাদ্য মন্ত্রী সাজিদ চৌধুরির বড় ছেলে। আমাদের দেশের আগামী খাদ্য মন্ত্রী। মনে হয় এইবার ওনি নির্বাচনে দাঁড়াবে। শুনেছি ওনি কয়েকদিন আগে দেশে এসেছে। ওনার বসবাস কানাডায় ছিলো। ওনার ছোট ভাই তো আমাদের উপরের ডিপার্টমেন্টের বিরোধী দলের নেতা।
সবার কথোপকথন শুনে সুমু রুহানের উদ্দেশ্যে বলে,,,
” অগ্নি চৌধুরি তাহলে খাদ্যমন্ত্রীর ছেলে? কিন্তু এই সামান্য ব্যপার নিয়ে স্যার এত রেগে গেলো কেনো বলতো। কথা শুনিয়েছে ভালো কথা কিন্তু স্যার চোখের দিকে তাকিয়েছিস যেনো চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। সামান্য ব্যাপারটা নিয়ে এত রাগ করাটা ঠিক হজম হচ্ছে না অন্য কোনো ব্যাপার নেই তো। ”
আরু– কিরে তরা ভুলে গেলি কাল ইয়ানা কি বলেছিলো?
সুমু আর রুহান উৎসুক দৃষ্টি ফেলে বলে,,,,

” কি? ”
আরু — আরে ও বলেছিলো না মন্ত্রীর ছোট ছেলেকে থাপ্পর দেওয়ার পরিবর্তে বড় ছেলেকে থাপ্পর দিয়েছে। মেয়েগুলোর কথা অনুযায়ী ওনি খাদ্যমন্ত্রীর বড় ছেলে অগ্নি চৌধুরি। তাহলে তো ইয়ানার থাপ্পর দেওয়া ব্যক্তিটা ওই ওনি।
সুমু আর রায়ানের টনক নড়ল।
সুমু — যেখানে বাঘেএ ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। ওনি কি কোনোভাবে রিভেঞ্জ নিলো? কিন্তু ওনি নিজে ও তো পাল্টা আঘাত করেছে।

আহান ভার্সিটে শেষে অফিসের কিছু কাজ সমাপ্তি করে সোজা চৌধুরি ভিলায় চলে যায়। কেনো জানি মেজাজটা আজ বেশি চটে আছে। চারপাশের সব কিছু অসহ্য লাগছে।
অগ্নি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই এক মহিলা এসে আহানের সামনে দাঁড়ায়। বয়স বেশি হলে ও শরীরে রয়েছে আভিজাত্যের ছোয়া। যেনো এখনো নিজেকে মেয়ে বলে দাবি করতে চায়। মহিলাটি আহানের হাত ধরে বলে,,,
” খুব ভালো করেছিস আজ তাড়াতাড়ি এসেছিস। আমি তর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আহান সন্দেহ দৃষ্টি ফেলে বলে,,,,
” কেনো অপেক্ষা করছিলে? দেখো আবার যদি এইসব আবোল তাবোল কথা বলা শুরু করো তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে আম্মু ।

মহিলাটি আহানকে টেনে ভিবানের কাছে নিয়ে যায়। এরপর হাসিমুখে টেবিল থেকে কয়েকটা ছবি নিয়ে বলে,,,
” এই ছবিগুলো দেখ বাবা। শুধু একবার তাকিয়ে দেখ। আমি শহরের সব চেয়ে সুন্দরী আর শিক্ষিত মেয়ের সন্ধান এনেছি। শুধু একবার দেখ! দেখবি কোনো একটাকে পছন্দ হয়ে যাবে।
মায়ের কথা শুনে অগ্নি বিরক্তি নিয়ে তাকায়। মিসেস শিখা ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে তাকায় অগ্নির দিকে।
অগ্নি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

” শুধু শুধু এইসবের পিছনে পড়েছো কেনো তুমি? আমার জন্য মেয়ে দেখতে বলেছি আমি? ”
শিখা চৌধুরি — ওমা আমরা খুজবো নাতো কে খুজবে? তর যদি পছন্দ থাকে তাহলে বলে দে আমি কাল ওই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলে বিয়ে করবি?
অগ্নি— রুমে গিয়ে রেস্ট নেও। তোমাকে এইসব আজাইরা জিনিস ভাবতে হবে না। এইসব বিয়ে নিয়ে আর কখনো যাতে আলোচনা করতে না দেখি ব্যাস।
শিখা চৌধুরি — আহা রেগে যাচ্ছিস কেনো। একবার তো ছবিগুলা দেখ।
অগ্নি মায়ের দিকে তাকিয়ে ছবিগুলা হাতে নেই। এরপর কপাল কুচকে চার পাশে তাকায়।
শিখা চৌধুরি খুশিতে আত্নহারা। অবশেষে ছেলে ছবিগুলা হাতে নিয়েছে। বিগত দুই বছর ধরে ছেলের পিছন পিছন ঘুরছে বিয়ে করানোর জন্য।
অগ্নি মায়ের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের বাড়ির কেয়ার টেকার হামিদকে ডাক দেয়। অগ্নির ডাক শুনে মুহূর্তেই ওনি হাজির হয়।

শিখা চৌধুরি অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” তুই হামিদকে ডেকেছিস কেনো?
অগ্নি হামিদের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
অগ্নি — চাচা এই ছবিগুলো নিয়ে সোজা ডাস্টবিনের ফেলবেন। যাতে ছবিগুলার অস্তিত্ব ও না বুঝা যায়।
শিখা চৌধুরি ছেলের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকায়। এমনভাবে তাকিয়েছে যেনো সে বড় সড় কোনো অন্যায় করেছে। এরপর একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,,,
” ছেলেমানুষীর চরমপর্যায়ে পৌছে যাচ্ছো না তুমি? বিয়ে করতে চাও না সারাজীবন কি চিরকুমার থাকবে নাকি? জীবনে চলার পথে সবার সঙ্গীর প্রয়োজন হয় বুঝার চেষ্টা করো। মেয়েদের ঘৃনা করো সেটা তোমার চিন্তাভাবনা কিন্তু সব চিন্তাভাবনাকে প্রাধান্য দিলে চলে। তোমার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হলে ও একটা বউ প্রয়োজন। আমাদের ও নাতি নাতনির মুখ দেখতে ইচ্ছে হয়।

অগ্নি মায়ের কথায় প্রচুর বিরক্ত। জীবনে চলার পথে বিয়েই কেনো করতে হবে। একা আর ও সুন্দরভাবে জীবন চালনা করা যায়। চারপাশের বিয়ে নিয়ে এত কোলাহল দেখে সে ক্লান্ত। দাম্পত্য জীবন নিয়ে এত কোলাহল, চার দিকে ডিভোর্স, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি এইসব কি বিয়েতে না করার জন্য কম নয়। এইসব প্রতিকূলতায় আমি পড়তে চাই না। সিঙ্গেল আছি এতে অনেক শান্তি। আর কাকে বিয়ে করবে সে যাকে দেখে তাকেই ছলনাময়ী মনে হয়। একজন ও তো তার মনের গহীনে জায়গা করতে পারে না। হাত বাড়ালে হাজার মেয়ে পাওয়া যায় কিন্তু আমার তো এইসব বেহায়া মেয়েদের একদম পছন্দ নয়। মেয়েরা হতে হয় ব্যক্তিত্যসম্পন্ন, সাহসী । নরম – সরম মেয়েতো আমার একদম পছন্দ নয়। মেয়েদের চোখে থাকতে হবে এক তেজী তেজী ভাব। ওর ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে ইয়ানার সেদিনকার তেজী চোখ জোড়া ভেসে আসে। সাথে সাথে মুখে বিরক্তি চলে আসে। ওই মেয়েতো পুরোটা বিয়াদপ।

অগ্নি আর কোনো কথা না বলে উপরে চলে যায়। শিখা চৌধুরি হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই ছেলেকে হাজার কথা বললে ও কানে তোলে না। এইভাবে জীবন আর কতদিন। শখের বশে প্রফেসার হতে চেয়েছিলো তা ও হয়েছে কিন্ত সামনে আবার নির্বাচন। নির্বাচন, ব্যবসা, আবার ভার্সিটি কয়টা সামলাবে এই ছেলে। তার জন্য তো একটা মেয়ের প্রয়োজন নাকি। শিখা একটা নির্লিপ্ত শ্বাস ফেলে মাথায় হাত রেখে বসে পরে।
অগ্নি রুমে এসে লম্বা এক শাওয়ার নেই। ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকায়। চোখের সামনে ভেসে উঠে ইয়ানা একটা ছেলের শরীর ঘেসে বসে ছিলো। এই মেয়ে ছেলদের শরীর ঘেসে কেনো বসেছে?
আবার মনে মনে আওড়ায়,,,,,,,, শরীর ঘেসে বসেছে তো আমার কি আমি এত রিয়াক্ট করেছিলাম কেনো তখন?
হঠাৎ করে রেগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। তবে সেটা ইয়ানার উপর নয় নিজের উপর। চুলগুলো শক্ত করে খামচে ধরে ভিবানে বসে পড়ে। যে করেই হোক মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কিন্তু রাগ কেনো হচ্ছে সে নিজে ও জানে না। শুধু শুধু কেনো এত ডেম্পারেট হয়ে পড়ছি আমি।
“” ওওওওহহহহহ”

ইয়ানা ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। এখন বই নিয়ে পড়তে বসে। পড়ার মধ্যে বিগত দুই দিনের কাহিনী মিলাতে থাকে।
মনে পড়ে যায় ক্লাসের অপমানের কথা। সে অন্যায় করেছে কিন্তু অন্যায় থেকে বেশি ছিলো কথার পরিমান। এরপর থেকে ক্লাসে সাবধানে থাকতে হবে। যতটুকু ধারনা ওনি আমার সামান্য দোষ ও ছাড় দিবে না। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করে অপমান করবে।

টিফিন টাইমে ক্যাম্পাসে বসে আছে ইয়ানা, আকাশ , রুহান, সুমু আর আরু।
আকাশের মাথায় বেন্ডেজ করা তবে আগের থেকে অনেক ভালো।
আকাশ সকালে এসে শুনেছে ভার্সিটিতে নতুন প্রফেস্যার নিযুক্ত হয়েছে খাদ্যমন্ত্রীর ছেলে অগ্নি চৌধুরি সাথে ইয়ানার সাথে রুড ব্যবহারের কথা।

রুহান — আচ্ছা দুই তিন মাস পরে ইলেকশন। জনগন চাচ্ছে অগ্নি চৌধুরিকে খাদ্যমন্ত্রী বানাতে। এতে সবাই বাহবা ও দিয়েছে। এদেশের তরুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমন একজন বিদেশ থেকে ডিগ্রি অর্জন করে নিয়ে আসা শিক্ষিত ছেলে, সাহসী, কর্মঠ , তেজী মন্ত্রী তারা চাই। শুনেছি ওনি নাকি নির্বাচনে দাড়াবেন। চারদিকে এইটা নিয়েই আলোচনা চলছে। খবরের চ্যানেল বলিস হাটে বাজারে সব জায়গায়। কিন্তু ওনি ভার্সিটির প্রফেস্যারে নিযুক্ত হলেন কেনো? যদি টাকার কথা বলিস তাহলে ওনাদের তো টাকার অভাব নেই। ওরা পারলে এমন একটা ভার্সিটি নিজে তৈরি করতে পারে। ওনি ভার্সিটির প্রফেস্যার কেনো হয়েছে সেটাই মাথায় ডুকছে না।
আরু — হয়ত ওনি শিক্ষকতা পছন্দ করেন। জীবনের প্রথম কোনো ভার্সিটির প্রফেস্যার এত হ্যান্ডসাম আর স্মার্ট দেখেছি। নাহলে সবাই তো ভুড়িওয়ালা। সৌন্দর্য যেমন আছড়ে পড়ছে ঠিক তেমন ভাবে রাগ আর দাম্ভিকতা শিরায় শিরায়। প্রথম দিন এসেই কিভাবে সবার মনে এক ভয় ডুকিয়ে দিয়েছে। তবে একটা ভালোই হয়েছে মেয়েরা যেভাবে তাকিয়ে ছিলো আমি তো ভেবেছিলাম চোখ দিয়ে গিলে খাবে। পরে স্যারের ধমক শুনে এক একটা ভেজা বিড়ালের মত মাথা নিচে করে রেখেছিলো।

কথা শেষ করে আরু হেসে উঠে।
ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
“বন্ধ করবি এই দানবের গুনগান। শুধু সৌন্দর্য থাকলেই হয় না। ওনাকে দেখলেই এখন আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠবে। আল্লাহ আল্লাহ বলে ক্লাসটা শেষ করতে পারলেই হবে।
তাদের আড্ডার মাঝে ক্লাসের ঘন্টা চলে আসে।

টিফিনের পরের ঘন্টা অগ্নি চৌধুরির। একদিনে পুরো ভার্সিটিতে আতঙ্ক সষ্টি করে ফেলেছে। শুধু শিক্ষার্থী নয় টিচারদের মনে ও। যেসব টিচার আগে ক্লাস ফাকি দিয়ে অফিস বা রেস্ট রুমে বসে থাকত তাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যদি পরবর্তীতে এমন কিছু হয় তাহলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই আজ সব টিচার নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছে। স্টুডেন্টরা ও আড্ডা বাদ দিয়ে যে যার ক্লাস রুমে চলে যায়। আতঙ্কের আরেক নাম অগ্নি চৌধুরি।
অগ্নি সঠিক টাইমে গম্ভীর্য মুখ নিয়ে ক্লাস রুমে প্রবেশ করে। তাকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানাই।
অগ্নি সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বসতে বলে।
ইয়ানা সর্বক্ষন মাথা নিচু করে রেখেছে। তারা আজ সময়ের অভাবে একদম শেষের সামনে বেঞ্চে বসেছে। সামনে বসেছে আকাশ এরপর ইয়ানা আর আরু।

অগ্নি এক এক করে পড়াতে থাকে। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা মনে মনে ভাবে রাগী আর বদমেজাজী হলেও অনেক সুন্দরভাবে পড়ায়। মেয়েরা পড়ার নাম করে শুধু তাকে দেখে যাচ্ছে। অগ্নি মেয়েদের তাকানো অনুধাবন করতে পেরে এতক্ষন যা পড়িয়েছে তা লেখার জন্য বলে। তার দিক থেকে শুধু মনযোগ সরানোর জন্য। যদি তাকে সবাই এইভাবে দেখতে থাকে তাহলে পড়া ইহজনমে ও মাথায় ডুকবে না। সে জন্য সে মেয়েদের ঘৃনা করে ছেলে দেখলেই ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকে। অগ্নি বিরক্তির ছাপ নিয়ে বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায়। সে চলে যেতেই ক্লাসে ফিসফিস লেগে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই সে রুমে ডুকে। তাকে দেখে সবাই চুপসে যায়।
অগ্নি সবার দিকে তাকিয়ে গম্ভির আর ধমকের সুরে বলে,,,
” কারা কথা বলেছো? ”

সবাই নিশ্চুপ।
অগ্নি নিজের ঘম্ভীরতা বজায় রেখেই বলে,,,
তোমাদেরকে কাজ দিয়ে গিয়েছলাম কথা বলতে বলে যাই নি। পরবর্তীতে যাতে কখনো আর কথা বলতে না দেখি। তোমরা হলে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তোমরা যদি সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হও তাহলে পরবর্তী প্রজম্ন কি শিখবে। হুম এর পর থেকে খেয়াল রাখবে শুধু পড়াশুনার মধ্যে। যে কাজ দিয়েছি সেটা শেষ করো।
আরু — ইনু আমি এইটা বুঝিনি।
ইয়ানা — স্যারকে বল।

আরু — ভয় করছে যদি কিছু বলে। তুই বল না যাতে আরেকটু বুঝিয়ে দেয়।
ইয়ানা — আমি তো বুঝেছি। আর স্যার তো অনেক সুন্দর করে বুঝিয়েছে তখন খেয়াল কোথায় ছিলো তর?
আরু — এত সুন্দর ডেইরি মিল্ক সামনে থাকলে কি আর পড়ায় মনযোগ থাকে।
ইয়ানা — দিনে দিনে উচ্ছন্নে যাচ্ছিস তুই আরু।
আরু — প্লিজ স্যার কে বলনা আবার বুঝিয়ে দিতে। প্লিজ দোস্ত।
ইয়ানা একটা শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। অগ্নির দৃষ্টি আকর্শন করার জন্য স্যার বলে ডাক দেয়। অগ্নি ডাক দেওয়া ব্যক্তির দিকে তাকায়। ইয়ানাকে এত পিছনে দেখে কপাল কুচকে আসে। অগ্নি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কপাল কুচকে কিছু একটা পরখ করছে। ইয়ানার পাশে আকাশকে দেখে রাগটা পুনরায় মাথায় চেপে বসে। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে মুহূর্তের ভিতরে। কিন্ত রাগ উঠার কারন খুজে পাচ্ছে না। ছেলেদের সাথে তো আর ও অনেক মেয়ে বসেছে কই তাদের দেখে তো এমন লাগছে না এই বিয়াদপ মেয়েটাকে কোনো পুরুষের সাথে দেখে এমন রাগ আর অস্থিরতা হচ্ছে কেনো?

অগ্নি সকল রাগ সাইডে রেখে বলে,,,
” বলো কি সমস্যা?
ইয়ানা মিনমিন সুরে বলে,,,,
” স্যার এইটা যদি পুনরায় বুঝিয়ে দিতেন তাহলে খুব ভালো হতো”
অগ্নি গম্ভির কন্ঠে বলে,,,,
” যখন বুঝিয়েছিলাম তখন মনযোগ কোথায় ছলো আপনার। সবাই বুঝেছে অথচ আপনি বুঝেন নি কেনো? সারাদিন মাথার মধ্যে ছেলে সঙ্গ আর আজেবাজে চিন্তা থাকলে পড়া মাথায় ডুকবে কিভবে।
অগ্নির ধারনা ইয়ানাও তার দিকে বাকিদের মত নির্লজ্জের মত তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু সে তো এমন নারীদের একদম পছন্দ করে না।

অগ্নির কথা শুনে ইয়ানার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ও কেনো এত অপমানের শিকার হবে? কেনো? ইয়ানা নিজের চোখের পানি মুছে অগ্নির দিকে তাকায় এরপর বলে,,,,
” অনেক বলেছেন আর অনেক শুনেছি। সাথে অনেক অপমান ও সহ্য করেছি। কোন অধিকারে আপনি এইভাবে অপমান করছেন? আমাকে এত কথা বলার রাইট কে দিয়েছে? আপনি তো রীতিমতো ব্যক্তিগত আক্রমন করছেন। আপনি আমার শিক্ষক মানে আমার গুরুজন যার সম্মান সবার উপরে। কেনো আমাকে সম্মান করতে দিচ্ছেন না। আপনার অধিকার আছে শাসন করার কিন্তু অপমান করার নয় স্যার।আপনি পুরো ক্লাসে জিজ্ঞাসা করে দেখুন কে কে এই পড়াটা বুঝেছে। মেক্সিমামের উত্তর না আসবে। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। হতে পারি আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান কিন্তু নিজের ইজ্জত রাস্তাঘাটে বিলিয়ে দেই না যে ছেলে নিয়ে তামাশা করব। শিক্ষক শিক্ষকের শব্দ উচ্চরন করবেন স্যার ব্যক্তিগত আ্যাটাক নয়। হয়ত আপনি আমাকে ঘৃনা করেন আপনার ক্লাসে দেখতে চান না। সমস্যা নেই স্যার আমি ও আর আপনার ক্লাস করব না।

ইয়ানা নিজের ব্যাগ নিয়ে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।
অগ্নি ইয়ানার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। দাতে দাত চেপে রাগ সংযত করে কিন্তু বরাবরের মত ব্যর্থ হয়। কত বড় স্পর্ধা হলে এইটুকু একটা মেয়ে তার মুখের উপর কথা বলে চলে যাচ্ছে। মেয়েটার ভাগ্য ভালো এইটা ভার্সিটি আর আমি তার শিক্ষক নাহলে কি অবস্থা করতাম ওর ধারনার ও বাহিরে।

অগ্নি সোজা চৌধুরি ভিলায় চলে যায়। বাহিরে থাকলে তার রাগের স্বীকার যে কেউ হতে পারে। রুমে ডুকে নিজেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর শুরু করে। ওর রুম যেহেতু সাউন্ড প্রুফ তাই শব্দ বাহিরে যায় নি। কিন্ত ও যে রেগে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ডুকেছে সেটা কারোর নজর এড়ায় নি।
অরিদ — তোমার ছেলের কি হয়েছে বলো তো আম্মু ? এইভাবে রেগে আছে কেনো?
শিখা চৌধুরি — আমি কি করে জানব। গিয়ে দেখে আসি কি হয়েছে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১

অরিদ — হ্যা যাও। ভাইয়ার এই রাগ আর মেজাজের জন্য বউ টিকবে না কোনোদিন। দেখা গেলো বিয়ে করে বউকে মিষ্টি কথার চেয়ে হাজারটা ধমক দিয়ে রাখবে। কোন মেয়ে এত ধৈর্য ধরে সংসার করবে।
শিখা চৌধুরি — করবে! করবে। দেখবি এমন এক মেয়ে আসবে ওর জীবনে যে ওকে কন্ট্রোল করতে পারবে। দেখে নিস আমি মা হয়ে বললাম।
অরিদ — তোমার দোয়া যাতে কবুল হয়। এখন যাও গিয়ে দেখো কি করছে।
শিখা চৌধুরি অগ্নির রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩