অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৫
লিজা মনি
মাথায় হাত দিয়ে একের পর এক পায়চারী করছে রায়হান।
হিংস্র বাঘের মত ফুঁসফুঁস করছে। এরপর হুংকার দিয়ে বলে ,,,,
” তদেরকে কে বলেছিলো অগ্নি চৌধুরির বউকে বন্ধী করতি শু*** বাচ্চারা। আমি বলে দিয়েছিলাম না আমাকে ফোন দিয়ে জানাতে। শুধু ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলাম বন্ধ করার জন্য নয়।
রায়হানের হুংকারে একজন গার্ড নতমস্তিষ্কে বলে,,,,,
” স্যার আপনাকে ফোন দিয়েছিলো সিনিয়র। বাট আপনি ফোন তোলেন নি। তাই উনি ওকে বন্ধী করেছে। অগ্নি চৌধুরির বউয়ের সাথে আরেকটা মেয়ে ছিলো। অগ্নি চৌধুরির বউয়ের হেব্বি তেজ । সিনিয়রকে আক্রমন করে বাহিরে চলে আসে। আমরা ধরার আগেই দেখি অগ্নি চৌধুরি গেইডের সামনে। আমরা পালিয়ে আসলে ও সিনিয়র রেইহাই পাই নি। মনে হয় এতক্ষনে সিনিয়রকে মেরে দিয়েছে।
লোকটার কথা শুনে রায়হান বিকৃত হাসি দিয়ে দাঁড়ায়।
এরপর কাছে এসে বলে ,,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” যখন সিনিয়র মরেছে তখন তরা বেঁচে আছিস কেনো?
পরপর পাঁচটা লোকের পেটে চেপে ধরে শুট করে।
লোকগুলো চিৎকার দেওয়ার ও সুযোগ হয় নি তার আগেই ঢলে পড়ে।
পুরো সাদা টাইলস লাল হয়ে যায় রক্তের স্রোতে। রায়হান বন্ধুকটা নিজের প্যান্টের পকেটে পুনরায় গুঁজে দিয়ে রেগে বলে,,,,
” যখন মাথায় ঘিলু নেই তখন বেঁচে থাকার ও দরকার নেই সব অকাজের। এখন অগ্নি চৌধুরির টার্গেটে থাকব আমি সবসময়। তদের কে বলেছিলো এইসব করতে সুযোগ বুঝে আমিই ওর বউয়ের বিনাস করতাম। এমন বিনাস যাতে অগ্নি চৌধুরির অহংকার আর মর্যাদা চুর্নবিচূর্ন হয়ে পড়ে। থুঁবরে পরে মাটিতে ওর মুখ। খুব পজেসিভ তুই বউ নিয়ে তাই না একটা মশা ও বসতে পারে না গায়ে তুই ছেৎ করে উঠিস। তর এই পজেসিভ আমিই ভাঙব।
এরপর রায়হান এক বিকৃত হাসিতে ফেটে পড়ে। ওয়াইনের বোতল খুলে একজনকে ইশারা দিয়ে বলে,,,,
” একটা মেয়ে পাঠিয়ে দে রুমে। কিছুক্ষন ফুর্তি করি মনের আনন্দে।
রায়হান ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে রুমে যায়। যাওয়ার কিছুক্ষন পর ওই একটা মেয়ে ডুকে ভিবিন্ন অঙ্গবঙ্গি দিয়ে।
এরপর শুরু হয় নিষিদ্ধ পাপযুক্ত এক আদিম খেলা।
কেটে যায় বিশ দিন।
ইয়ানা শাওয়ার শেষ করে গিয়ে খাটের কিনারায় হাটু ভাঁজ করে বসে। ফুরফুরে মেজাজে চুলগুলো শুকাতে থাকে। চুল শুকানো শেষ হলে খাট থেকে নেমে জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দেয়। এরপর গুনগুন করে গান গেয়ে কাবার্ডের কাছে যায়। কার্বাড খুলে একটা কালো রঙ্গের বক্স বের করে মুচকি হাসি দেই। সকালে অগ্নি ইয়ানাকে এই বক্সটা হাতে দিয়ে বলেছিলো,,,, ”
“এইটা তোমার ”
ইয়ানা বক্সটা নিয়ে পুনরায় গিয়ে খাটে বসে। ভিতরে মনে হচ্ছে অনুভুতির হাজারও প্রজাপতি উড়াউড়ি করছে। কাঁপা কাঁপা হাতে বক্সটা খুলে দেখে একটা পাতলা শাড়ি। ইয়ানা শাড়ি দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে। এই লোক এইসব কি শাড়ি এনেছে। পাতলার তো একটা লিমিট থাকে কিন্তু এইটা তো লিমিট ছাড়া পাতলা। পড়ার চেয়ে না পড়াই ভালো শরীর সব ভাঁজ যখন বুঝা যাবে। ইয়ানা শাড়িটা হাতে নিয়ে পুরো রুম ঘুড়তে থাকে। এক বার এই পাশ যাচ্ছে আরেকবার ওই পাশ। ছিহহ এইসব শাড়ি পড়ার কথা উনি আমাকে বলে গিয়েছেন? আমি তো এইটা জীবনে ও পড়ব না। ইয়ানা বির বির করে খাটে গিয়ে পুনরায় বসে। এরপর বাকা চোখে একবার শাড়িটার দিকে তাকায়। কিছুক্ষন ভাবার পর হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা ডায়েরি বের করে। পৃষ্ঠা উল্টাতেই সেই কাঙ্খিত তারিখটা ভেসে উঠে ২৩ ফেব্রুয়ারী। ইয়ানা স্তব্দ হয়ে একবার শাড়ির দিকে তাকাচ্ছে আবার তারিখটার দিকে। খুশিতে চোখ দুটি পানির মাধ্যমে চিকচিক করছে। যেকোনো সময় নোনা জল গড়িয়ে পড়বে। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি। মনে হচ্ছে কাল ওই এই দিনটা ছিলো অথচ। অনেক দিন পেরিয়ে গেছে।
রাতটা ছিল অদ্ভুত রকমের নীরব। লাইটগুলো হালকা ঝাপসা হয়ে আছে।ঘরের বাতাসে ভেসে ছিল সাদা চন্দন ধূপের মৃদু গন্ধ। জানালা দিয়ে ফিসফিস করে ঢুকছিল ঠান্ডা হাওয়া, পর্দা দুলছিল ধীরে ধীরে। চারদিকে সাদা পর্দাগুলো যেনো এক সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার জন্য স্তব্দ হয়ে রয়েছে। রুমের ঝলমলে আলো চারদিকে ঠান্ডা বাতাসের মিষ্টি গন্ধ এক অদ্ভুত সময়ের জানান দিচ্ছে।
রাত বারোটা বেজে এক মিনিট……
ঠিক তখন অগ্নি দরজা ঠেলে রুমে ডুকে। রুমটা ছিলো একদম শান্ত। ইয়ানাকে খুঁজার জন্য চারপাশে চোখ বুলাতেই আয়নার সামনে কাউকে দেখে স্তব্দ হয়ে যায়। এগিয়ে যাওয়ার মত শক্তি নেই যেনো পা থেমে গেলো।
আলো নরম কিন্তু ঘরটায় এক স্বপ্নঘেরা স্নিগ্ধতা।আর ঠিক মাঝখানে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ইয়ানা পাতলা শিফনের শাড়িতে, যেটা তার ভেজা চুলের মতোই গা ছুঁয়ে নেমে গেছে। তার পিঠের কিছু অংশ খোলা, কোমরভাঁজটা ঠিকঠাক শাড়ির আঁচলের নিচে লুকোচ্ছে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভয়ানক এক আবেদনময়ী নারী । যার সামান্য উপস্থিতি ওর রেগে উঠা দাবানলকে এক নিমিষে গলিয়ে দেই। তার রাগ, তার জেদ সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করতে পারে যেখানে বাহিরের কেউ সামান্য উচ্চস্বরে হুংকার কথা বলতে পারে না।
আমি মানুষ মেরেছি। রক্তে ভিজে গেছে আমার হাত বহুবার । রক্ত দিয়ে আমি গোসল করেছি লোকের কলিজা টেনে এনে হিংস্র প্রানী দিয়ে খাইয়েছি।চামরা ভেদ করে বিষাক্ত সূচ ডুকিয়ে নরকময় কষ্ট দিয়েছি।কিন্তু এমন কোমল কিছু এতটা শান্ত, এতটা হৃদয় কাঁপানো অনুভুতি আগে কখনো অনুভব করেনি। যতটা এই মেয়ের সংস্পর্শে আসলে অনুভব হয়।অগ্নির বুকের ভেতর হঠাৎ করে যেন কেঁপে উঠল কিছু।
অগ্নি ধীর পায়ে এগিয়ে যেত লাগলো। যেনো মনে হচ্ছে কেউ চুম্বকের মত কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রুমের ভিতরে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়ানা সেইদিকে লক্ষ্য রাখে। মুহূর্তেই থরথর করে কেঁপে উঠে ছোট দেহখানা। লজ্জায় মাথা নিচে করে নিজের শরীর ডাকতে থাকে পরে থাকা আচল দিয়ে।
অগ্নি থামে একদম ইয়ানার সামনে এসে। ইয়ানা লজ্জায় নত মস্তিষ্ক হয়ে আছে। ইচ্ছে করছে দৌড়ে কোথাও পালিয়ে যেতে। এতক্ষন বিন্দু মাত্র ও লজ্জা বা খারাপ লাগে নি। মনে হচ্ছিলো সবকিছু সামলে নিবে। কিন্তু এখন? এখন মনে হচ্ছে নিশ্বাস নিতে ও কষ্ট হচ্ছে। লোকটার গভীর চাহনী ইয়ানা উপলব্দি করতে পারছে তবে সে তাকাতে পারছে না। হারিয়ে যেতে পারছে না সেই চাহনীতে। লজ্জা নামক এক লক্ষ্যনরেখা তাকে আটকে দিচ্ছে। ইয়ানা পায়ের নখ দিয়ে মেঝেতে ভালোভাবে খামচে ধরে। মনে হচ্ছে এখন ওই সে পড়ে যাবে।
অগ্নি শীতল চাহনীতে ইয়ানার পুরো অস্তিত্বে চোখ বোলায়। পায়ের দিকে চোখ যেতেই ঠোঁট চেপে হাসে।
অগ্নি ইয়ানার এত লজ্জায় রক্তিম হওয়া মুখ দেখে বলে,,,,
” এত লজ্জা কেনো পাচ্ছ আমি ওইত। তোমাকে সুন্দর লাগছে না ইয়ানা।
ইয়ানা চট করে মুখ তোলে তাকায়। মুখ থেকে যেনো রক্ত সরে যাচ্ছে। এতক্ষন ধরে সাজার এই প্রতিদান দিলো তাকে? কি বলল তাকে সুন্দর লাগছে না। কথাটা বলতে গিয়ে মুখে আটকালো না। একবার ও মনে হলো না আমি কষ্ট পাব? মনে করবে কেনো উনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।
ইয়ানা চলে যেতে নিবে ঠিক তখন অগ্নি বলে উঠে,,,,,,
” বরং তার চেয়ে ও বেশি লাগছে। সুন্দর কথাটা সাধারন মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় কিন্তু তুমি আমার চোখে, আমার কাছে এক অসাধারন আবেদনময়ী নারী। যার সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা আমি কোনো দিন দিতে পারব না।
ইয়ানা থমকায়। এক মুহূর্তের জন্য স্তব্দ হয়ে যায়। সুন্দর না বলে ও এত নিখুঁতভাবে কারোর প্রশংসা করা যায়। কিন্তু করেছেন তো? উনি করেছেন আমাকে। যার অস্তিত্ব ছাড়া আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। যার রাগ, যার জেদ, যার ধমক, যার দেওয়া ভালোবাসা নামক নরম অত্যাচার এক গভীরভাবে টেনে নিয়ে যায় আমাকে। যার উপস্থিতি ছাড়া নিশ্বাস নিতে ও কষ্ট হয়। যার মিষ্টি সোহাগ আর আলিঙ্গনে হারিয়ে যায় এক অদ্ভুত জগতে। আচ্ছা লোকটাকে ছাড়া কি আমি কোনোদিন বাঁচতে পারব? ওহুম কোনোদিন ও না। যদি বলা হয় পুরো পৃথিবী চাও নাকি অগ্নি চৌধুরিকে। তাহলে আমি বলব এই পুরুষটার কথা। যে আমাকে থাপ্পর দেই, ধমক দেই আবার ভালোবেসে কাছে টেনে নেই। যার ব্যক্তিত্ব খুব সুন্দর ও ভালো।
অগ্নি ইয়ানার মুখের দিকে তাকায়। ইয়ানা এখন ও মাথা নিচু করে আছে। অগ্নি মোহিত কন্ঠে বলে,,,,
” তাকাও আমার দিকে?
অগ্নির কথা মৃদু কেঁপে উঠে। ইয়ানা তাকাই না। অগ্নির কপাল কুচকে আসে। মুখটা কিছুটা গম্ভীর রুপ ধারন করে। সামান্য গম্ভীরতা নিয়ে বলে,,,,,
” তাকাতে বলেছি আমি ইয়ানা। তাকাও আমার দিকে।
ইয়ানা মাথা দিয়ে না করে। অগ্নি আগের ন্যায় কন্ঠে বলে,,,,
অগ্নি — দেখবো।
ইয়ানা চোখ মুখ খিচে অগ্নির দিকে তাকায়। তবে চোখ বন্ধ এখনও।
অগ্নির শীতল হাতের স্পর্শ ইয়ানার দুই গালে ছোঁয়ায়। চিরচেনা হাতের স্পর্শ পেয়ে ইয়ানা চোখ খোলে। অগ্নি থমকায় এই ধবংসাত্বক চোখে। এরপর পুরো মুখে নজর দেই। যেই মুখে ছিলো না কোনো সাজ, ছিলোনা কোন কৃএিম কিছু। চোখে গাড় কাজল আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপ বাম।
ভেজা চুলের সঙ্গে মিশে থাকা তাজা সাবানের মৃদু গন্ধ, শরীরের নরম উষ্ণতার ঘ্রান ইয়ানার শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়ছিলো।
তা এমনই এক নেশা ছড়াচ্ছিল যেন চেতনাকে ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে।
অগ্নি ইয়ানার আচলটা মাথায় দিয়ে বলে,,,,
“তুমি তো আগেও আমার ছিলে ইয়ানা। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তোমাকে নতুন করে চেনা দরকার। মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত। কিন্ত সেটা ধীরে ধীরে, আদরে, আবেগে……..
ইয়ানা লজ্জায় মাথা আর ও নুইয়ে ফেলে। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” ধন্যবাদ আপনাকে এই তারিখটার কথা মনে রাখার জন্য। ঠিক বারোটার পর থেকে এই তারিখটাই আমি আপনার সাথে তিন কবুল বলে জীবন বেঁধেছিলাম।
অগ্নি হালকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” মনে আমার ও ছিলো না ইউভি তারা মনে করিয়েছে। ইউ নো শুধু আজকের তারিখটা স্পেশাল নয় আমাদ জন্য তুমি প্রতি তারিখেই স্পেশাল।
ইয়ানা — আপনার মনে ছিলো না? স্পেশাল না হলে শাড়ি এনেছেন কেনো?
অগ্নি ইয়ায়ানার উন্মুক্ত কমরে হাত রেখে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,,,,
” ইউভি তারা জোড় করে আনিয়েছে। আনিয়েছে ঠিক বাট আমি ইচ্ছে করেই এনেছি। বিশ্বাস করো নিজের পছন্দমত এনেছি কিন্ত এইটা যে উন্মুক্ত সেটা জানা ছিলো না জান।
ইয়ানার কিছুটা খারাপ লাগলো। উনি তারিখটা মনে রাখেন নি অন্য কেউ মনে করিয়ে দিয়েছে। ইয়ানার মুখে তিক্ততা দেখে অগ্নি নিজের বাম হাত দিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা চ্যাপ্টা বক্স বের করে। ইয়ানা বক্সটার দিকে তাকায়। অনেক সুন্দর পাথর দিয়ে খোদায় করা। বক্সটার গায়ে ক্ষুদ্র পাথর দিয়ে The Heritage in Bloom Necklace লিখা। ইয়ানা বক্স দেখে কপাল কুচকে ফেলে। অগ্নি বক্সটা খুলতেই মনে হচ্ছে এক ফালি আলোর কনা এখান থেকে বের হয়েছে। চাদের মত চিক চিক কিরছিলো হীরেগুলো। নেকলেসটার মধ্যে” I” আর O অক্ষর দুইটিকে ভালোবাসার এক মূর্ত প্রতীক মনে হচ্ছিলো। অগ্নি আলতো করে নেকলেসটা নিয়ে এক হাতে ইয়ানার পিঠ থেকে চুল সরিয়ে দেই। অগ্নির স্পর্শে হালকা কেঁপে উঠে। অগ্নি নিজের হাতে ইয়ানার গলায় নেকলাসটা পরিয়ে দেয়। এরপর গলার নিচে শক্ত করে চুমু খেয়ে বলে,,,,
” আমার দেওয়া প্রথম উপহার এইটা তোমার জন্য বউ।
অগ্নির এত সান্নিধ্য ইয়ানা ভড়কে যায়। সে এখনও স্তব্দ হয়ে আছে। নেকলেসটা দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর দামী তার ভাবনার ও বাহিরে। দাম কি জিজ্ঞাসা করব? না এইটা ঠিক না। উপহারের মূল্য জিজ্ঞাসা করা একদম অনুচিত।
ইয়ানার ভাবনার মাঝে এক অদ্ভুত কথা ওর কানে প্রবেশ করে। মুহূর্তেই ওর শরীরে এক হিম শীতল বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। লজ্জায় আরষ্ট হয়ে যায় মেয়েটি।
” আমার চোখের ভাষা, আমার হৃদস্পন্দন, আমার গভীর নিশ্বাস কি তুমি বুঝতে পারছো? তুমি কি বুঝতে পারছো আমি এই মুহূর্তে কি চাচ্ছি?
ইয়ানা বাকহীন হয়ে পড়ে। লজ্জায় অগ্মির বুকে মুখে গুজে ফেলে। ইয়নার সম্মতি দেখে অগ্নি বাকা হেসে বলে,,,,,
” সহ্য করতে পারবে তো? নাকি আগের বারের মত এক মাস অসুস্থ হয়ে বিছনায় পড়ে থাকবে?
ইয়ানা মিহি সুরে বলে,,,,,,,
” অসুস্থ হলেই বা কি? আপনি আছেন তো তিন দিন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আমাকে সেবা করার জন্য। আপনার ক্ষত আপনি নিজেই সারাবেন তাতে আমার কি?
অগ্নি ইয়ানাকে কোলে তোলা নিয়ে বলে,,,,
” তাই? ওকে ম্যাডাম তাহলে সহ্য করে নিন আবার ও সেই মিষ্টি অত্যাচার।
ইয়ানা অগ্নির বুকে মুখ গুজে। অগ্নি আলতো হাতে ইয়ানাকে বিছানায় শুইয়ে দেই। এরপর কপালে এক শক্ত চুম্বন করে। ধীরে ধীরে এক উন্মাদ প্রেমিক বা এক উন্মাদ স্বামী হতে থাকে। ধীরে ধীরে অগ্নির বর্বরতা ইয়ানার ছোট কোমল শরীরটার উপর জাহির করতে থাকে।ইয়ানার কষ্ট হলেও বরন করে নিলো এত কঠিন ক্ষত বিক্ষত হওয়া কঠিন ভালোবাসাকে।
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পড়তেই অগ্নি চোখ খিচে ফেলে। এরপর ঘুম ঘুম ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,,,,,,
” ইয়ানা পর্দাটা লাগিয়ে দাও। আলো এসে চোখে পড়ছে।
ইয়ানা অগ্নির কাছে এসে বলে,,,,,,
” উঠুন তাড়াতাড়ি নয়টা বাজে। জিমে তো জাননি অফিসে তো যেতে হবে নাকি?
অগ্নি চোখ বন্ধ করে রেখেই বলে,,,,,,
” ওহুম জান আরেকটু ঘুমাই। সারারাত ঘুমাতে পারি নি এখন একটু না ঘুমালে কাজে মনযোগ দিতে পারব না।
অগ্নির এমন নেশালো ঠান্ডা কন্ঠ শুনে ইয়ানা বিরবির করে বলে,,,,,,,
” কথা বলছে কিভাবে দেখো? মনে হচ্ছে একদম সদ্য জন্ম নেওয়া নাদান বাচ্চা। আর উনার ভালোবাসা দারালো অশ্রের মত। উফফ আল্লাহ পুরো শরীর ব্যাথা করছে। কোন সময় জানি আমি নিজেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়।
ইয়ানা নিজের কথা রেখে খাটের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় এরপর অগ্নির কাছে গিয়ে হাতে ধরে টান দেই। কিন্তু এক চুল ও নাড়াতে পারে নি। অগ্নি চোখ খোলে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর হেচকা টানে বিছানায় ফেলে দেয়। ইয়ানা টাল সামলাতে না পড়ে যায়। পুরো বেড নরম তাই ব্যাথা লাগার কথা না। কিন্তু অগ্নি এইভাবে টান দেওয়াতে ব্যাথাতুর হাতে আর ও ব্যাথা পায়। ইয়ানা সামান্য মৃদু আর্তনাদ করে উঠে। অগ্নি বিরক্তি নিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে হাত দুটি চেপে ধরে বলে,,,,,
” সমস্যা কি তোমার? বলছি না ঘুমাতে দাও এইভাবে বিরক্তি করছো কেনো?
ইয়ানা অগ্নিকে উপর থেকে সরিয়ে নিতে নিতে উত্তর দেই,,,,,,
” নয়টা বেজে গেছে তাই ডাকছিলাম। নিজের দায়িত্ব বলে তো একটা কথা আছে। পরে বলবেন কেনো ডাকি নি।
অগ্নি ইয়ানার কথা শুনে চুলে হাত দিয়ে বলে,,,,
” তোমার চুল ভেজা না কেনো?
ইয়ানা — শুকিয়ে গেছে। আমি কি এখন শাওয়ার নিয়েছি নাকি আজব। আমি নামাজ পড়েছি সকালের স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে লাগিয়েছি এরপর আপনাকে ডাকতে এসেছি।
অগ্নি বিরক্তি নিয়ে বলে,,, ,
” তাই বলে তুমি চুল শুকিয়ে ফেলবে। ভেজা ভেজা চুলে এসে আমাকে মিষ্টি সোহাগে ডাক দিবে তবেই না আমি উঠব। কিন্তু তুমি তো টানাটানি শুরু করেছো তাও আবার চুল শুকিয়ে এসে।
ইয়ানা অগ্নিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসে বলে,,,,
” সরেন তো এইসব ন্যাকামো আমি করতে পারব না। শাওয়ার নিন গিয়ে আগে যান।
অগ্নি ইয়ানার কথায় ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। এরপর ইয়ানার উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,
” হ্যা উন্মুক্ত পাতলা শাড়ি পড়ে কন্ট্রোললেস করতে পারো বাট মিষ্টি সোহাগে ডাকতে তোমার ন্যাকা লাগে। সেই!
ইয়ানা বেশ বুঝতে পেরেছে লোকটা তাকে খোঁচানোর জন্য এই কথাগুলো বলছে। শুধু আজ না এইটা উনার সব সময়ের কাজ। উনি সব কিছু করবে আবার উনিই খোঁচাবে। নির্লজ্জ লোক একটা। ইয়ানা রেগে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়।
“” ইয়ানা তুমি কিন্তু আগের মত এখন আর নেই? ”
ইয়ানা থামকে যায়। আগের মত নেই মানে উনি কি বুঝাতে চেয়েছে? ইয়ানা বদলে গেছে। নাকি অন্য কিছু? ইয়ানা পিছন ফিরে অগ্নির দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে,,,,,
” মানেহহ! কি বলতে চাইছেন আপনি?
অগ্নি গম্ভীর ভাবটা সরিয়ে বলে,,,,,
” মানে এই যে তোমার লজ্জা মাখা মুখটা আজ সকাল থেকে আর নেই। আগে লজ্জা রাঙ্গা রক্তিম মুখটা নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়াতে। ইভেন দাড়াতে ও না। তাকাতে না পর্যন্ত। আজ কিন্তু সেই ইয়ানা নেই। লজ্জা না রেখে কর্তব্যপরায়ন স্ত্রী হয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করতে এসেছো। কেনো? কেনো? এমন কেনো হয়েছে? আমি তো কাল রাতে কিছুই করে নি যে তোমার লজ্জা ভাঙ্গবে।
এমন হয়েছে কেনো জান?
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা কটমট চোখে তাকাই। যতই
চাচ্ছে নিজেকে স্বাভাবিক করে মানিয়ে নিতে এতেই এই লোকের এলার্জি শুরু হয়েছে। ইয়ানা ডিভানের উপর থেকে একট বালিশ নিয়ে অগ্নির দিকে ছুড়ে মেরে বলে,,,,
” নির্লজ্জ লোক মুখে কস্টিপ মেরে রাখুন।
এরপর ইয়ানা এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে রুম ত্যাগ করে নিচে চলে যায়। ইয়ানার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অগ্নি হালকা হাসে।
ইয়ানাকে এইভাবে নামতে দেখে কাজের আন্টি জিজ্ঞাসা করে ,,,,,,
” কি হয়েছে মামুনি আপনি এইভাবে আসছেন কেনো? কিছু কি হয়েছে?
ইয়ানা নিজেকে ঠিক করে ভালো করে মাথায় উড়না পেচিয়ে নেই। ফুল হাতার জামা পড়েছে। কেউ যদি এইসব দাগ দেখে তাহলে ইজ্জত শেষ। ইয়ানা মহিলাটির দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” না আন্টি কিছু হয় নি। আপনি খাবার টা রেডি করুন উনি কিছুক্ষনের মধ্যেই নিচে নামছে।
এইদিকে অগ্নি খাট থেকে নেমে গম্ভীর হয়ে দাঁড়ায়।
মোবাইলে কারোর নাম্বার ডায়েল করে বলে,,,,,
” রায়হানের খবর পেয়েছিস?
ওই পাশে– না ও মেবি কোনো গুহায় লোকিয়ে আছে। শুনেছি দেশের বাহিরে গেছে এক মাস পড়ে ফিরবে। ইয়ানা ওর টার্গেট তকে শেষ করার জন্য। তাই ইয়ানাকে সাবধানে রাখিস অগ্নি।
অগ্নি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” যতক্ষন পর্যন্ত আমার কলিজায় কেউ আঘাত করতে পারছে ঠিক ততক্ষন ইয়ানার শরীরে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। আর শুন ও দেশে আসবে আর ও এক মাস পর। তাইতো ইউভি?
ইউভি — হ্যা।
অগ্নি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,
” তাহলেই তো খেলা শুরু। ও আসবে আর আমি উধাও হব। ও আসলে খবর ছড়িয়ে দে। আমি কাজের জন্য কিছুদিনের জন্য বাহিরে গিয়েছি। ইয়ানা একা বাড়িতে।
ইউভি অবাক হয়ে বলে,,,,,,
” হুয়াট পাগল হয়ে গিয়েছিস তুই অগ্নি। ইয়ানাকে বাড়িতে একা রেখে যাবি? যত হাজার হাজার গার্ড থাকুক তুই ছাড়া তবুও একটা ভয় আছে।
অগ্নি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৪
” চুপ কত তর টেপ রেকর্ড। আমাকে তর বলদ মনে হয় আহাম্মক। আমি যাস্ট ভুয়া খবর ছড়াতে বলছি বাট বাস্তবে আমি আমার বউয়ের কাছেই থাকব। রায়হান আমার অনুপস্থিতে ইয়ানার ক্ষতি করতে আসবে। তখন ওই তো শুরু হবে আসল খেলা।
অগ্নির কথা বুঝতে পেরে ইউভি সম্মতি জানাই। অগ্নি ফোন কেটে দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দেই।