অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৬
লিজা মনি
এক মাস পর………
অগ্নি কাউচের উপর বসে কারোর সাথে কথা বলছিলো। মুখে রাগ আর বিরক্ত স্পষ্ট। তবে কিছুক্ষন বাদে ঠোঁটে খেলে যায় এক রহস্যময় হাসির রেখা।
ইয়ানা নিচ থেকে অগ্নির জন্য খাবার নিয়ে আসে। অগ্নিকে কথা বলতে দেখে ইয়ানা খাবারটা মিনি টেবিলের উপর রেখে কার্বাডের কাপড় গুছাতে থাকে। কিছুক্ষন পর পর অগ্নিকে আড়চোখে লক্ষ করছে। চেহারাটা কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।
অগ্নি কথা বলা শেষ করে কাউচ থেকে উঠে দাঁড়ায়। কার্বাডের কাছে চোখ যেতেই ইয়ানাকে দেখতে পাই। অগ্নি বিছানায় বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অগ্নির দৃষ্টি লক্ষ্য করতে পেরে ইয়ানা পিছনে ফিরে তাকায়। এরপর ভ্রু কুচকে বলে,,,,,
” কি দেখছেন এইভাবে?
অগ্নি — আপনাকে ম্যাডাম।
ইয়ানা — আমার পিছন দেখে আপনার কি লাভ।
অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,,,
” তোমার একটা চুল দেখলেই তোমার পুরো অস্তিত্ব আমি অনুমান করতে পারি। সেখানে পিছন দেখি আর সামনে দেখি কি যায় আসে।
ইয়ানা ফুঁস করে শ্বাস ছাড়ে।
এরপর হাতের একটা শাড়ি অগ্নির দিকে ছুঁড়ে মেরে বলে,,,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” এই নিন এইটা ভাঁজ করতে সাহায্য করুন? একা হাতে করতে পারছি না।
অগ্নি শাড়ির দিকে তাকিয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর ঠোঁট চেপে হালকা হেসে শাড়িটার মধ্যে ধরে। ইয়ানা যখন শাড়ির দিকে তাকিয়ে ভাঁজ করতে নিবে তখন অগ্নি শাড়ি সহ হেচকা টান মারে। ইয়ানা টাল সামলাতে না পেরে অগ্নির উপর গিয়ে পরে। অগ্নি ইয়ানার দুই বাহু ধরে শুইয়ে পরে। সাথে ইয়ানাকেও নিজের উপর ধরে রাখে। ইয়ানা এখন ও অগ্নির বুকে মুখ গুঁজে আছে ।
অগ্নি হালকা হেসে ইয়ানার কানে ফিঁসফিঁস করে বলে,,,,,
” শাড়ি ভাঁজ করা আমার কাজ না জান। শাড়ি খুলা আমার কাজ। আর সেটা আমি সবসময় করি। নিজের কাজে খুব পজেসিভ আমি।
অগ্নির কথায় ইয়ানার টনক নড়ল। অগ্নির দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বলে,,,,,
” আল্লাহর ওয়াস্তে আপনার মুখটা বন্ধ করুন। নির্লজ্জ লোক। আপনি তো দেখছি সানি লিওনের চেয়ে ও নির্লজ্জ।
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,
” হুয়াট লিওন?
ইয়ানা অগ্নির বুক থেকে উঠতে উঠতে জবাব দেই,,,,,,
” সানি লিওন, একজন নীল তারকা।
অগ্নি ইয়ানাকে পুনরায় নিজের সাথে চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” থপরিয়ে ভিমরুতি বের করব বিয়াদপ এই মেয়ে! এই তোমাকে ছাড়া আমি কোনোদিন অন্য নারীর দিকে তাকিয়েছি?
অগ্নির রেগে যাওয়া দেখে ইয়ানার বুক ফেটে হাসি পাচ্ছে। লোকটা কিভাবে রেগে গেলো এই সামান্য কথায়।
ইয়ানা নিজের হাসিকে থামিয়ে আগের ন্যায় বলে।,,,,,,
“” আপনাকে কে বলেছে ওই তারকা খারাপ। উনি আগে খারাপ ছিলো কিন্তু এখন ফিরে এসেছে এইসব থেকে। বিয়ে করে এখন বাচ্চা নিয়ে সংসার করছে।
অগ্নি — তুমি বলতে চাইছো তোমাকে বিয়ে করার আগে আমি খারাপ ছিলাম। আই থিংক সেইমল্যাস বলতে চাইছো।এখন বিয়ে করে ভালো হয়ে গিয়েছি। যদি তোমার এমন মনে হয় লিসেন ইয়ানা,, অগ্নি চৌধুরি না আগে কখনো মেয়ের দিকে তাকিয়েছে আর না এখন।
অগ্নি রেগে খাবার রেখেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইয়ানা হাতাশ চোখে তাকিয়ে আছে। আমি তো মজা করে এমনি বলেছি। তাই বলে রাগ করে না খেয়ে চলে যাবে। আমিও খাব না। দেখি উনি কতক্ষন রাগ করে থাকতে পারে। যেহেতু দোষ আমার তাই সরিটা আগে বলে নেই।
প্রায় আধাঘন্টা পরে ইয়ানা হাতে ফোন নিয়ে অগ্নির মোবাইলে ফোন দেই। ফোন ডুকছে ঠিক কিন্ত রিসিভ করছে না। ইয়ানা মেসেজ সেন্ড করে,,,,,
“, এই সামান্য কথায় আমার উপর এইভাবে রেগে যাবেন। আমি তো মজা করে বলেছি আপনি সিরিয়াস নিয়েছেন কেনো?
অগ্নির মেসেজ গুলো দেখছে ঠিক কিন্তু রিপ্লাই দিচ্ছে না। সে ইয়ানার সাথে রাগ করে নেই। সে যাচ্ছে আতিকের মহলে।
ইয়ানা হতাস হয়ে আবার মেসেজ দেই,,,,,
” সরি জান আর বলব না এইসব। এইবারের মত ক্ষমা করে দিন। বাড়ি ফিরে আসুন। যতক্ষন না আসবেন আমি খাবার খাব না।
মেসেজটা দেখেই অগ্নি কপাল কুচকে ফেলে। সাথে সাথে ইয়ানার মোবাইলে ফোন দিয়ে রাগকে সংযত করে বলে,,,,,
” ট্রাস্ট মি সোনা একটু ও রেগে নেই। খাবারটা খেয়ে নাও।
ইয়ানা জেদ ধরে বলে,,,,,,,
” তাহলে এইভাবে রেগে বের হয়ে গিয়েছেন কেনো? বাড়ি ফিরে আসুন নাহলে খাব না।
অগ্নি এইবার গলাটাকে শক্ত করে শাসনের সুরে বলে,,,,,,,
“কিছুক্ষনের মধ্যে তোমার জন্য আন্টি খাবার নিয়ে উপরে আসছে। আমি দশ মিনিট পর জানতে চাইব খেয়েছো কি না? যদি না খাও তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে তুমি নিজেও জানো। এখন না আসি রাতে তো বাড়িতে আসব। ত্যাড়ামি না করে খেয়ে নিবে। নাহলে তোমার পুরো সর্বাঙ্গ জুড়ে আমার রাজত্ব চলবে আর তুমি চিৎকার করতে বাধ্য হবে। তাই যা বলছি তাই করো জান।আমাকে তুমি এখন ও ১০% চিনো আর ৯০% ওই আমি তোমার কাছে অপরিচিত। কাজে আটকা পড়ে গিয়েছি তাই যেতে পারছি না । নিজের খেয়াল রাখো।
ইয়ানা মোবাইল কানে নিয়ে তব্দা লেগে বসে আছে সামান্য কয়টা বাক্যে কয় ধরনের রং ধারন করেছে উনি। এই ধমক দিয়েছে, এই আবার হুমকি, এই আবার আদর – ভালোবাসা। গিরগিটি! উনাকে কি আমি আসলেই চিনি না। এতটা অপরিচিত উনি আমার কাছে, কিন্তু কেনো?
এক বিশাল বিলাসবহুল ভিলা বা পেন্টহাউসের মিনি রাজপথের মতো সাজানো। পুরো স্থানটি ডিজাইন করা হয়েছে অত্যন্ত যত্নসহকারে যেখানে চমৎকার সাজসজ্জা, সিল্কের পর্দা, এবং মার্বেল ফ্লোরিং এক রাজকীয় পরিবেশ তৈরি করেছে। একটি বিশাল কাঠের টেবিল, যার উপরে সোনালি ফলক, শেকসপীয়ান ঘরানার ছোট, প্রাকৃতিক কাঠের মূর্তি আর বিশাল সোনালী আলোকিত ঝুমঝুমি ঝুলছে।
আতিক আর রানবীর নিজের সিটটি বেছে নিয়েছে ভিলার সেন্ট্রাল পয়েন্টে। যেখানে গ্লাসের বিশাল জানালা দিয়ে বাইরে শহরের ঝলমলে আলো দেখা যায়। জানালাগুলো এমনভাবে সাজানো যেন তার চোখের সামনে সমস্ত পৃথিবী নিয়ন্ত্রণে। এবং সে যেখানেই তাকাবে সেখানেই শক্তি এবং আধিপত্য অনুভব হবে। শোভিত সোনালি ফার্নিচার, মোটা সিল্কের কুশন, এবং সাদা রঙের কার্পেট সর্বত্র বিলাসিতা ছড়িয়ে আছে।
অগ্নি এসে আর্কিড কালারের এক ল্যাদারের চেয়ারে বসে।এরপর পা মৃদু করে উপরে তুলে রাখে। যেন সে স্বাচ্ছন্দ্যেই বসে আছে এবং তার শরীর পুরোপুরি শান্ত। সামনে রাখা টেবিলে কিছু সিগার, সেরা কনিয়াকের বোতল , ওয়াইন এবং নানান ধরনের বিলাসবহুল প্রোডাক্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অগ্নি ওয়াইনের বোতল থেকে এক গ্লাস ওয়াইন নিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” কিরে আরিফ দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? মিষ্টি দে সবাইকে।
আরিফ আর আতিক অগ্নির ভাবমুর্তি বুঝার চেষ্টা করে বলে,,,,,
” মিষ্টি কেনো খাওয়াচ্ছো? তা ও আবার তুমি। বাবা হচ্ছো নাকি?
অগ্নি বাকা হেসে বলে,,,,,
” আরে ভাই কি যে বলো না। এইসব কথা কি আর বলা যায় নাকি? আমার তো লজ্জার ব্যাপার আছে তাই না। এখন ও বাবা হওয়ার প্রসেসিং শুরু করি নি। শুরু করি এরপর জানাবো।
পাশের থেকে আরিফ হালকা কেঁশে উঠে। এক বাক্যে বলছে লজ্জা লাগছে আরেক বাক্যে নিজেই নির্লজ্জ কথা বলছে।
রানবী — তুই না বউ মানিস না তাহলে?
অগ্নি নিজেকে গুছিয়ে বলে,,,,
” আমাকে আর ভালো হতে দিবে না ভাই তোমরা। বউ না মানি বিয়ে তো হয়েছে নাকি। পুরুষ মানুষ আমি বিয়ে করা বউকে দেখে আটকাতে পারব নাকি আশ্চর্য। তুমি নিজে ও তো বিয়ে করেছো অথচ হাজারটা মেয়ের সাথে রাত কাটিয়ে। আমি তো কারোর সাথে রাত কাটায় নি এখন বউকে যদি ছেড়ে দেই তাহলে কিভাবে হবে বলো। বউ যখন আমার সামনে ঘুরঘুর করে বিশ্বাস করো ভাই ভিতরে এক পুরু…
রানবীর কেঁশে বল,,,,,
” হয়েছে তর এইসব কাহিনী বলতে হবে না।
অগ্নি একদম শান্ত কিন্তু ভিতরে হিংস্র কূটিল হাসছে।
আরিফ নিজের স্যারকে দেখছে। এতটা ঠোঁটকাটা তো স্যার ছিলো না। এই লোক তার স্যার তো.?
অগ্নি — ভাই আমার মনে হয় রায়হান এক অনেক বড় দলের সাথে হাত মিলিয়েছে। দেখবা ওর ও জনির মত অবস্থা হবে। মৃত্যু ওর খুব সন্নিকটে ভাই।
লাস্টের কথাটা অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে।
রানিবীর — সন্নিকটে মানে? কি বলতে চাইছিস?
অগ্নি — আমি কি বলব আমি যাস্ট এলার্ট করতে এসেছি। তোমার ছেলে তো গুম হয়ে বসে আছে। কার ভয়ে বলোতো? সেই ব্যক্তির ভয়ে। সে বুঝে গিয়েছে তার মরন খুব নিকটে। বারন করেছিলাম হাত মিলিয়ে নিজেকে দুর্বল করিস না কিন্তু শুনে নি। এখন নিয়তি জানে ওর সাথে কি হবে।
রানবীর একটু ভয় পেলেও বুক ফুলিয়ে বলে,,,,,
” জনি দুর্বল ছিলো তাই ওকে সহজে বিদায় করতে পেরেছে। কিন্তু রায়হান হাজার গুন শক্তিশালী আর বুদ্ধিমান ওর কিছু করতে পারবে না।
রানবীরের কথা শুনে অগ্নি রহস্যময় হাসি দিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” মিষ্টি নিয়ে এইভাবে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে থাকার জন্য তকে এনেছি। মিষ্টি দিচ্ছিস না কেনো?
আরিফ অগ্নির ধমক খেয়ে মিষ্টি নিয়ে ওদের সামনে রাখে। সবাই এক এক করে মিষ্টি খায়।
অগ্নি এইবার উঠে বলে,,,,,
” তাহলে এখন আমি আসি ভাই।
এরপর গাড়িতে গিয়ে বসে রেগে গম্ভীর হয়ে বলে ,,,,,,
” তর ছেলের দিন শেষ রানবীর। তকে মিষ্টি খাইয়ে অগ্রিম বার্তা জানিয়ে গেলাম। যদি ভুলেও তর ছেলে আমার বাড়ির আশেপাশে আসে তাহলে এমন মৃত্য দিব যা কল্পনা ও কেউ করে নি।
আকশে মেঘ জমা হয়েছে। রাত দশটার কাছাকাছি। ইয়ানা বাড়িতে কথা বলে অগ্নির জন্য অপেক্ষা করছে। এই যে না খেয়ে বেরিয়ে গেছে আর কোনো খবর নেই। ইয়ানা হাটাহাটি করে বেলকনিতে চলে যায়। মেঘলা আকাশে চাঁদের আলো ছড়াচ্ছিলো। ইয়ানা তাকিয়ে আছে সেই আকাশের দিকে। হঠাৎ কারোর উষ্ম নিশ্বাস ঘাড়ের উপর পেয়ে আৎকে উঠে। পর মুহূর্তে বুঝতে পারে লোকটি কে। ইয়ানা আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে,,,,,
” কখন এসেছেন?
অগ্নি ইয়ানার গলায় শক্ত করে চুমু খেয়ে বলে,,,,
” এই মাত্র এসেছি।
ইয়ানা — রাগ কমেছে? সত্যি আমি কথাটা এইভাবে বলতে চাই নি। আমি তো জানি আপনি কেমন।
অগ্নি ইয়ানার টি- শার্ট ভেদ করে উন্মুক্ত কোমর চেপে ধরে বলে,,,,
” রাগ কেনো করতে যাব। তোমার সাথে রাগ করে কখনো থাকতে পেরেছি যে আজ থাকব।
ইয়ানা অগ্নির বুকে মাথা রাখে।
অগ্নি — কি হয়েছে জান?
ইয়ানা ধীর কন্ঠে বলে,,,,,
” জানি না ভিতরে কেনো এত অশান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো কিছু হারিয়ে ফেলছি। ভয় হচ্ছে খুব। আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবেন না তো?
অগ্নি ইয়ানাকে আগলে নিয়ে বলে ,,,,,
” তুমি আমার অস্তিত্ব আর শ্বাস- প্রশ্বাস। একমাত্র বিধাতা ছাড়া আমার থেকে তোমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। এমনকি তুমি নিজে ও না।
ইয়ানা — আমি আপনাকে ছেড়ে কোথা ও যাব না। সবসময় আমার বিশ্বাসের ভিতরে থাকবেন। আমি বিশ্বাসঘাতকদের অনেক ঘৃনা করি। আমাদের জীবন যাতে এক সুন্দরতম অধ্যায় হয়। যুগ – যুগান্তর আপনার হাতে হাত রেখে হাটতে চাই মি, চৌধুরি। আপনাকে ছাড়া আমি নিশ্বাস নিতে ও ভুলে যায়। আল্লাহ যাতে আমাদের সকল বিপদ থেকে রক্ষা করে এক সূত্রে বেঁধে রাখে।
বিশ্বাসঘাতক শব্দটা শুনে অগ্নির বুক ভাড়ি হয়ে আসে। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ইয়ানাকে বুক থেকে তোলে কপালে গভীর চুম্বন খেয়ে বলে,,,,,
” ঘুমাতে যাও পাখি। এখন রাত হয়েছে প্রচুর।
ইয়ানা — আরেকটু থাকি ভালোই তো লাগছে।
ইয়ানার কথায় অগ্নি ঠোঁট কামড়ে বলে,,,,,
” তুমি আমাকে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছো ইয়ানা।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,
” কিসের ইঙ্গিত দিব?
অগ্নি — সামথিং সামথিং। আমি একদম জেন্টাল বয় এইসব করতে পারব না।
ইয়ানা চোখ পাকিয়ে তাকায় অগ্নির দিকে। এরপর রুমে চলে যেতে নিলে অগ্নি দোলনায় বসে ইয়ানাকে নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে দেই হেচকা টান মেরে।
ইয়ানা ছটফট করে বলে,,,,,,
” ছাড়ুন আমাকে সবসময় উলটা চিন্তা মাথায় আসে বদ লোক একটা।
অগ্নি ইয়ানাকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,,,,,
” ছটফট করো না জান। চুপচাপ বসে থাকো আর আমাকে অনুভব করতে দাও।
ইয়ানা চুপ হয়ে যায়। অগ্নি ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে আছে যেনো একটু ছাড়লেই পালিয়ে যাবে। ইয়ানা একসময় অগ্নির কাধে মাথা রেখে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
রাত দুইটা বেজে চল্লিশ মিনিট,,,,,,,,
বাইরে বজ্রপাত হচ্ছিল অবিরাম। বৃষ্টি যেন আকাশ ফুঁড়ে ঝরছে। বৃষ্টির ধারায় ভেসে যাচ্ছে শহরটা। বজ্রের ঝলকানিতে মুহূর্তে জানালার পর্দা কেঁপে ওঠে। জানালার পর্দাগুলো উড়ছিলো নিজের মত।
বজ্রপাতের ঝংকারে ইয়ানা কেঁপে উঠে। হঠাৎ চোখ মেলে তাকায়। ইয়ানা তাকিয়ে দেখে আকাশ যেন গর্জে কাঁদছে। বজ্রপাতে জানালার কাঁচে আঁচড় পড়ে আবার সরে যায়।
ইয়ানা অগ্নিকে খুঁজার জন্য পাশে তাকাতেই দেখে সে নেই। অগ্নিকে না দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসে। চিরচেনা চাদরটা এক পশে হয়ে আছে।চিন্তায় বুক ধুক করে উঠে। ইয়ানা বিছানা থেকে নেমে লাইট অন করে ওয়াশরুম চেক করে। কিন্তু না অগ্নি নেই ওয়াশরুমে। এরপর বেলকনি সব কিছু দেখে। কোথা ও অগ্নি নেই।পুরো রুমে অগ্নির কোনো অস্তিত্ব নেই। ইয়ানার ভয়ে গাঁ শিউরে উঠে। এর রাতে উনি কোথায় গেলো তাও এত বজ্রপাতের সময়। শরীরে যেনো এক অজানা কাঁপুনি দিয়ে উঠে।
ইয়ানা সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। সবাই ঘুমে। পুরো কামড়া জুড়ে পিনপিন নিরবতা।
ইয়ানা নিচে থেকে আবার উপরে চলে যায়। সেখানে প্রত্যেকটা রুমে অগ্নিকে খুঁজতে থাকে। বজ্রের শব্দ আর ইয়ানার পায়ের শব্দ যেনো পুরো করিডর ভারি হয়ে গেছে।
ইয়ানার জন্য আজ বাড়িটা অদ্ভুত রকমের নিস্তব্দ লাগছে।
যেনো কিছু লুকিয়ে আছে দেয়ালের ফাঁকে। ধীরে ধীরে পায়ের শব্দে সে এগিয়ে চলে সেই বদ্ধ পুরনো দরজার কাছে। যেটা অগ্নি কখনো খুলতে দেই না। ও বলেছে এখানে কিছু গচ্ছিত সম্পদ আছে। কিন্তু দরজা আজ হালকা ফাঁকা কেনো?
ইয়ানা আর ও ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেখানে কৌতহলবশত। প্রতিটা পা যেনো ধ্বনি তোলে শূন্যতাকে বিদ্ধ করে সত্তের সম্মুখীন করাচ্ছে। কাছে যেতেই এক অদ্ভুত আওয়াজ কানে এসে ঝংকার তোলে। পুরো শরীরেরে কাটা দিয়ে উঠে। ইয়ানা আরেকটু কাছে এগিয়ে যেতেই পায়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই নিচের দিকে তাকায়।
পায়ের নিচে যেনো কিছু ভেজা, নরম ছোপ। ইয়ানা আৎকে উঠে। র.. রক্ত? ইয়ানার বুক ধড়ফড় শুরু করে। এই চিরচেনা কড়িডরকে আজ অদ্ভুতভাবে অচেনা লাগছে।যেনো সব দেয়াল তাকে চোঁখে চোঁখে রেখেছে। হঠাৎ এক শব্দে ইয়ানা থামকে যায়। সামান্য খোলা থেকে বের হচ্ছে এক ধরনের শব্দ। যেনো কেউ কিছু চিবিয়ে আর ছিড়ে খাচ্ছে। গলার নিচে গোঁ গোঁ করে উঠা গর্জন।আর কেমন এক উদ্ভট গন্ধ বার বার বাতাসের সাথে নাকে এসে বারি খাচ্ছে। কিসের গন্ধ? পচা মাংসের। ইয়ানা উড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে। ইয়ানার ঠোঁটগুলো কাঁপছে অনবরত।চোখ ফেটে তার কান্না আসছে। কোথায় আপনি অগ্নি চৌধুরি? আমার যে ভীষন ভয় করছে।
ইয়ানা ফাঁকা দিক দিয়ে কিছু দেখার জন্য উকি দেই। এক মুহূর্তে পুরো শরীরে এক অদ্ভুত রকমের কাঁপুনি দিয়ে উঠে। রুমের ভিতরে চারটা বিশালদেহী মানুষ বসে আছে। না এইগুলো মানুষ নই। দেখতে কেমন বিকৃত।
উলঙ্গ শরীর।।তাদের একটা করে চোখ নেই। শরীরে লেগে আছে রক্ত। তারা একটা কাটা হাতের তালু চাটছে এমন ভাবে যেনো সেটা জিহ্বা দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে চাই। তাদের চামড়া কেমন বিকৃত। পাজরের মত দাঁত বেরিয়ে আছে। তাদের হাত – পা শিঁকল দিয়ে বাঁধা। ইয়ানার হাতের ধাক্কা লেগে দরজা পুরোটা খুলে যায়। ইয়ানা ভয়ের কারনে স্তব্দ হয়ে যায়। দরজার সাঁই সাঁই আওয়াজে লোকগুলো দরজার দিকে তাকায়। ইয়ানা এখন ও সেদিকেই তাকিয়ে আছে। বুক ছিড়ে কান্না আসছে। ভয়ে এক জায়াগায় বরফের ন্যায় জমে গিয়েছে। এত বিকৃত আর ভয়াভহ দৃশ্য সে কোনোদিন দেখে নি। লোকগুলোর তাকানো কি ধারালো। তাদের চোখ গর্তে ডুকে গিয়েছে। এরা কি মানুষ নাকি নরখাদক?
লোকগুলো ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর হাসি দেই। ইয়ানা কেঁপে উঠে। কোন জগতে এসে দাঁড়িয়ে আছে সে?
একটা লোক ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” আসবি? তর শরীরের মাংস ছিড়ে খেতে দে।
বলেই এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে উঠে। কি সেই ভয়ংকর উট্টহাসি। যেনো মনে হচ্ছে কোনো কবর থেকে উঠে এসেছে।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৫
ইয়ানা আর দাড়াতে পারলো না মুখে ধরে এক চিৎকার দিয়ে এখান থেকে চলে যায়। কোথায় যাচ্ছে সে নিজে ও জানে না। ওর পায়ের শব্দ বজ্ররের কলধ্বনিতে তাল মেলাচ্ছে। ইয়ানা কাঁপছে, হাপাচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে। সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়। বজ্রপাতের কারনে পুনরায় নামতে যাবে এমন সময় চোখ যায় একটা কালো ছায়ার উপর। ভালোভাবে তাকালে তখনওই একটা বিকট বজ্রপাতে সেই ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠে। থেমে যায় ইয়ানা। পুনরায় ছাদের দিকে ঘুরে তাকায়। বার বার বজ্রপাতে কিছু দৃশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বৃষ্টির পানিতে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে এক পাশে। ইয়ানা বাক্যহীন স্তব্দ হয়ে যায়। এত বড় অভিনয়। এমন ধোঁকা আর বিশ্বাসঘাতকতা। এত বড় অভিনয়ের স্বীকার হলাম আমি। হঠাৎ………….