অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৯
লিজা মনি
কেটে যায় চারটা দিন। এই চারদিনে অগ্নি বাড়ি আসে নি। আর না ইয়ানাকে কোনো ফোন দিয়েছে।ইয়ানা চাইত অগ্নি আসুক। ঘৃনা করে কিন্তু লোকটাকে না দেখে থাকতে পারে না সে। কিন্তু উনি দিব্বি থাকছে। এই চারদিনে একবারের জন্য ও ইয়ানা অগ্নিকে দেখে নি। আর না সে রুম থেকে বের হয়েছে। স্টাফ খাবার দিয়ে যেত আর সে জীবন বাঁচানোর জন্য দুই মোঁঠো খেত। খাবার মুখে নিলেই মনে পড়তে সেই দিনগুলোর কথা যখন অগ্নি নিজের হাতে ইয়ানাকে খাইয়ে দিত। মিষ্টি সোহাগে কাছে টেনে নিত।
কিন্তু কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে সেই মুহূর্তগুলো। সম্পর্কের এক তিক্ত বেরাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফজরের আজান দিলে ইয়ানা খাট থেকে নেমে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। এরপর ওযু করে খাটের পাশে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষনের মধ্যে নামাজ শেষ করে মোনাজাতে ধরে অজারো কেঁদে দেই। নিজের কান্না ঠোঁট কামড়ে বন্ধ রাখার চেষ্টা করে বলে,,,,,,
” আল্লাহ কি পরিক্ষা নিচ্ছো তুমি আমার। আমি এক অদৃশ্য দেয়ালে আটকে পড়েছি। জানি না কিভাবে এখান থেকে বের হব। এক অদৃশ্য মোহ মায়ায় আটকে গেছি আমি চাইলে ও বের হতে পারছি না। পথ দেখাও আমাকে। আমাকে ধৈর্য দাও।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এইভাবে ইয়ানা জায়নামাজে বসে কাঁদতে থাকে। কতক্ষন সময় গিয়েছে সে হয়ত নিজে ও জানে না। পাখির কিচিরমিচির শব্দ জানালা দিয়ে কানে আসতেই তার ধ্যান ভঙ্গ হয়। ইয়ানা নিজের চোখের পানি মুছে জায়নামাজ যথাস্থানে রেখে দিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
ধীরর ধীরে দরজা খুলে বেলকনিতে পা রাখে। তখন যেন এক জাদুকরী পরিবর্তন ঘটে। বাতাস একদম মৃদু, নরম আর কোমল এমনভাবে গাল ছুঁয়ে যায় যেন কেউ তাকে খুব আদর করে জাগিয়ে তুলছে। যেন প্রকৃতির এক আদর ভরা ছোঁয়া। বাতাসে থাকে ভোরের শিশিরের গন্ধ, এক ধরনের সতেজতার আমেজ যেটা ঘরের ভেতরের ভারী বাতাসে কখনোই পাওয়া যায় না।
মনে হচ্ছে এই বাতাস ইয়ানাকে বলছে “চিন্তা করো না, আমি আছি।”
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে রেলিং ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
বাতাসে থাকা কুয়াশার ছোঁয়া, ভেজা মাটির গন্ধ, আর গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরের সতেজতা। প্রতিটা নিঃশ্বাসে বুক ভরে যায় এক অদ্ভুত প্রশান্তি আর জীবনের নতুন স্পন্দনে দূরের আকাশটা তখনো একটু ধূসর, তবে পূর্ব দিগন্ত থেকে সূর্যের প্রথম আলোর রেখা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ছে একটা সোনালি আলোয় সব কিছু ঢেকে দিচ্ছে। সেই আলো যখন গাছের পাতায় পরে তখন মনে হয় যেন সেগুলো সোনা দিয়ে বাঁধানো।চারদিকে ছড়িয়ে থাকা গাছের পাতাগুলো ধীরে ধীরে দুলছে, রোদের প্রথম কিরণ যখন পাতায় পড়ে, তখন সেগুলো চকচক করে একটা শান্তির ঝিলিক নিয়ে। দূরে পাখির কিচিরমিচির ডাক যেন তারা দিনের সূচনা গান গাইছে।
পাখিরা তখন একে একে ডাকে একটা নয় অনেকগুলো। কিছু পাখি পরিবেশ মাতিয়ে তোলে আবার কিছু আপন মনেই গান গায়। তারা যেন সকালকে সুরে বেঁধে নতুন সকালের উপহার দিচ্ছে।
এটা শুধু একটা মুহূর্ত না এটা একটা অনুভব, একটা ধ্যানের মতো। এমন মিষ্টি হাওয়া বুকের ভেতর পর্যন্ত ঢুকে যায়, মনকে নরম করে, চিন্তাগুলোকে হালকা করে। সেই সময়টার সৌন্দর্য বর্ণনা করার ভাষা যেন হারিয়ে যায়। কারণ তা শুধু চোখে নয়, মনে অনুভব হয়।
ইয়ানা রেলিং থেকে সরে এসে রুমে যেতে নিবে এমন সময় দোলনার দিকে চোখ যায়। ইয়ানা ধীর পায়ে দোলনার কাছে গিয়ে সামান্য হাত বুলিয়ে তাচ্ছিল্য হাসে। এই দোলনায় বসে লোকটার সাথে বসে কত বার রাত কাটিয়েছে । লোকটা বসতে চাই নি কিন্তু সে জোর করে বসিয়ে রাখত। শুধু কাঁধে মাথা রাখবে বলে? ইয়ানা দোলনা থেকে বালিশ এক পাশে সরিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে বসে। মনে পড়ে যায় তাদের একান্ত মুহূর্তগুলো। সময় ঠিক ওই চলছে কিন্তু আমি স্তব্দ হয়ে গিয়েছি আপনার তিক্ত বেরাজালে।ইয়ানা বিষন্য মনে গুনগুন করে বলতে থাকে,,,,,
” কি করে বলব তোমায়
আসলে মন কি যে চায়।
কেনো সে পালিয়ে বেড়ায় তোমার থেকেই
কি করে বলব তোমায়
কেনো এই মন হাত বাড়ায়
আবার ও হারিয়ে সে যায় তোমার থেকেই
তুমি জানতে পারো নি কত গল্প পুড়ে যায়
তুমি চিনতে পারো নি আমাকে হায়
কি করে বলব তোমায়
আসলে মন কি যে চায়।
কেনো সে পালিয়ে বেড়ায় তোমার থেকে
পথ ভুলে গেছি চলে, দুরের কুয়াশায়
তবু আমার ফিরে আসার সত্যি নেই কোনো উপায়
যদি ভুলি চোরাগলি মনের যায় কোথায়।
আসবে কি? রাখবে কি? তোমার উঠা পড়ায়।
কি করে বলব তোমায়
আসলে মন কি যে চায়।
কেনো সে পালিয়ে বেড়ায় তোমার থেকেই
কি করে বলব তোমায়
তুমি জানতে পারো নি কত গল্প পুড়ে যায়
তুমি চিনতে পারো নি আমাকে হায়
হঠাৎ করে ইয়ানা দুই হাটুতে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। কেনো আপনি হীনা আমার বুক এত পুড়ছে। ঘৃনা করি তো আপনাকে। ভালোবাসায় কোনো কৃপনতা করি নি আপনার উপর। নিজের সর্বোচ্চ ভালোবাসা আমি আপনার উপর প্রদান করেছি। তাহলে কেনো এইভাবে ঠকালেন আমায়? চলে আসুন না সেই পথ থেকে? যে অগ্নি চৌধুরিকে আমি প্রথম চিনতাম হয়ে যান না সেই আগের অগ্নি চৌধুরি? যে অগ্নি চৌধুরির কাছে আমি ভালোবেসে নিজের সতিত্ব বিলিয়ে দিয়েছিলাম হয়ে যান না সেই অগ্নি চৌধুরি? যেই অগ্নি চৌধুরির ভালোবাসায় আমি লজ্জা পেতাম হয়ে যান না সেই অগ্নি চৌধুরি।
এইভাবেই কিছুক্ষন মুখ গুঁজে থাকে ভিতরটা প্রচুর অশান্তি লাগছে। ইয়ানা দোলনা থেকে উঠে রুমে চলে যায়। এরপর একটা উড়না গায়ে দিয়ে দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে পা রাখতেই সাত আটজন গার্ড পথ আটকায়। ইয়ানা কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে সামান্য অবাক হয়ে কপাল কুচকে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,,
” পথ আটকালে কেনো এইভাবে?
গার্ডগুলো মাথা নিচু করে বলে,,,,,,
” সরি ম্যাম এইটা স্যারের আদেশ। স্যার বলেছে আপনাকে যাতে বাড়ির বাহিরে যেতে না দেওয়া হয়।
ইয়ানা রেগে দুইটা নিশ্বাস ছেড়ে গার্ডদের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,,,
” আপনার স্যারকে গিয়ে বলে দিবেন,,, আমি মরলে বা বাঁচলে তাতে উনার কি যায় আসে? আর বাহিরে গেলেই পালিয়ে যাব না। চলে যাওয়ার ইচ্ছে হলে অনেক আগেই যেতে পারতাম। পিঠ বাঁচিয়ে পালিয়ে যাওয়ার মত মেয়ে আমি না। পথ ছাড়ুন আমি গার্ডেনে যাব।
গার্ডগুলো একইভাবে মাথা নিচু করে বলে,,,,,
” সরি ম্যাম স্যারের আদেশ না পাওয়া অব্দি আমরা আপনাকে বাহিরে যেতে দিতে পারি না।
ইয়ানা রেগে নাক মুখ খিচে ফেলে। এক একটা অগ্নি চৌধুরির পোষা কুকুর। উনি যদি বলে বসতে তাহলে তারা বসবে। ইয়ানা ঠোঁট কামড়ে একবার গার্ডগুলোর দিকে তাকিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। রান্নাঘর থেকে শুধু জিনিসপত্রের টুং টাং শব্দ আসছে। কিছুক্ষন খুঁজাখুঁজির পর ইয়ানা হাতে একটা ফল কাটার ছুঁরি নিয়ে এসে গার্ডদের সামনে দাঁড়ায়। ইয়ানার হাতে ছুঁরি দেখে গার্ডরা ভয় পেয়ে যায়। ইয়না ছুঁরিটা হাতের শিরার উপর ধরে গার্ডদের উদ্দ্যশ্যে বলে,,,,,,
” যদি আমাকে যেতে না দেন তাহলে নিজেকে ছুঁরিঘাত করব। আর সব দোষ দিব আপনাদের। তখন স্যারের রাগের সামনে দাড়াতে পারবেন তো?
গার্ড আতঙ্কিত হয়ে বলে,,,,,,
” না ম্যাম এমন করবেন না। তাহলে আমাদের এমন হাল করবে যা কোনোদিন কল্পনা ও করি না। কিন্তু আপনাকে যেতে দিলে ও সেই একই হাল করবে।
ইয়ানা আশ্বাস দিয়ে বলে,,,,,
” আপনাদের জান যাবে এমন কাজ করে আমি কি পাব বলুন? কথা দিচ্ছি যাস্ট গার্ডেন এরিয়া পর্যন্ত থাকব। দুরে কোথা ও যাব না।
গার্ডগুলো ইয়ানাকে বিশ্বাস করে যেতে দেই। ইয়ানা বাহিরে বের হয়ে একদ যাওয়ার রাস্তার দিকেচলে যায়। বিগত পাঁচ দিন পর সে বাহিরে বের হয়েছে। ইয়ানা গার্ডেনে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।
একজন গার্ড অগ্নিকে ফোন দেই। ফোন রিসিভ হতেই ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,
” স্যার ম্যাম ব্লেকমেইল করে বাহিরে গিয়েছে। ম্যাম বলেছে শুধু গার্ডেনে থাকবে।
ওইপাশ থাকা ব্যক্তিটি মাত্র ঘুমিয়েছিলো সারারাত নির্ঘুম। কি করে ঘুমাবে যেখানে নিজের প্রানটা রয়েছে সেই বিলাশবহুল অট্টালিকায়। ফোনের রিংটনে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে মেজাজটা খিটখিটে হয়ে যায় আর ও।
সামান্য রেগে বলে,,,,,
” যেতে দাও আর খেয়াল রেখো।”
গার্ড — ওকে বস।
অগ্নি মোবাইলটা বিছানায় রেখে দিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফজরের আজান যখন দিয়েছিলো তখন ঘুমিয়েছে। এখন বাজে ছয়টা। মাত্র দুই তিন ঘন্টা ঘুমানোর ফলে মাথাটা জিম ধরে রেখেছে।
অগ্নি ওয়াশরুমে ডুকতে যাবে এমন সময় মোবাইলটা আবারও বিকট শব্দে বেজে উঠে। অগ্নি বিরক্তি আর রাগ নিয়ে পুনরায় হাতে মোবাইল তোলে নেয়। মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে শিখা চৌধুরির নাম্বার। অগ্নি একটা বাঁকা হাসি দিয়ে রিসিভ করে। যেনো সে যানে শিখা চৌধুরি কি বলবে।
ফোন রিসিভ হতেই ওই পাশ থেকে শিখা চৌধুরি ধারালো কন্ঠে বলে,,,,,,,
” শান্তি হয়েছে তোমার অগ্নি মেয়েটাকে দিনের পর দিন এইভাবে কাঁদিয়ে।
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,,
” ভুল বলছো আম্মু। আমি কাউকে কাঁদায় নি। আমি আগলে রাখতে চেয়েছি। এখন সে যদি গোয়েন্দাগিরি করে সব জেনে যায় সেখানে আমার তো কোনো অপরাধ নেই।
শিখা চৌধুরি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,
” একটু ও খারাপ লাগছে না?
অগ্নি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” যদি বলো অনশোচনা তাহলে বলব এক বিন্দু ও না। কেনো হবে অনুশোচনা বলো আমায়? বউ সে আমার। তাই আমার পাপ সব ওর। একবার যেহেতু আল্লাহর কালাম পাঠ করে আমার সাথে জীবন বেধেঁছে সেখানে পাপ করি আর যায় করি সব কিছুর শামিল ও। আর হ্যা আম্মু তোমার মেয়েকে বলে দিও আমার সাথে ত্যারামি না করতে আমার ধৈর্য খুব কম। ধৈর্যের সীমা পার হলে আমি যা কিছু করতে পারি। এখন কি করতে পারি সেটা তোমাকে বলা যাবে না। মা হও তুমি আমার লজ্জার ওত একটা ব্যাপার আছে।
শিখা চৌধুরি ছেলের কথার মানে বুঝতে পেরে চুপসে যায়।
তাই তিনি কথার প্রসঙ্গ পালটে বলে,,,,,,
“” বাংলাদেশে আসো টিকিট কেটে রেখেছি আমি।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,,
” তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি ওইখানে যায় না।
শিখা চৌধুরি নরম সুরে বলে,,,,,
” বুঝার চেষ্টা করো অগ্নি । এমন চলতে থাকলে ইয়ানা ট্রমায় চলে যেতে পারে। তোমার মত না ও। তুমি রক্ত নিয়ে খেলা করো আর ওর রক্তের মধ্যে ফোবিয়া। আগুন আর পানির সম্পর্ক দুইজনের। যদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাও তাহলে আমার কাছে আসো। ইয়ানাকে আমি সামলাবো।
ইয়ানা — নিজের বউকে নিজে সামলাতে পারি। ভালোবেসে বা আঘাত করে। এখন রাখছি আম্মু ফ্রেশ হব।
শিখা চৌধুরিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অগ্নি ফোন কেটে দেই। মোবাইল বিছানার উপর ছুঁরে ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে।
লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয়। পড়নে কালো টি- শার্ট আর কালো ট্রাউজার। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল মুছতেই কেউ হুড়মুড়িয়ে তার রুমে প্রবেশ করে। কারোর উপস্থিতি বুঝতে পেরে অগ্নি কপাল কুচকে সেদিকে তাকায়।
অগ্নি তাকিয়ে দেখে ইউভি আর রায়ান। তারা সোজা গিয়ে ডিভানে বসে। অগ্নি আয়নার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,,,,,,
“” পারমিশন ছাড়া ডুকেছিস কেনো?
রায়ান ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
” যেখানে তর বাসর দেখার ওই পারমিশন আছে সেখানে এইসবের ম্যানার্স কে দেখায়? ছেহহ এতটা ও খারাপ দিন আসে নি তর সাথে আমরা ম্যানার্স মেনে চলব।
রায়ানের কথা শুনে অগ্নি হালকা কপাল ভাঁজ করে বলে,,,,,,
” তকে আমার বউ দেখার পারমিশন দিয়েছি আমি?
রায়ান অবাক ভঙ্গিতে বলে,,,,,,
” তর বউকে কেনো দেখতে যাব? আমি তো তর বাসরের কিথা বলেছি।
অগ্নি রেগে রায়ানের দিকে তাকায়। এরপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,,,
” বাসর নিশ্চয় তর সাথে করব না। বাসর কি আমি বউ ছাড়া করব ইডিয়েট।
অগ্নির কথা শুনে রায়ান শুকনো ঢুক গিলে বলে,,,,
” কথাটা হয়ত ভুল করে বলেছি কিন্তু খবরদার আমার দিকে নজর দিবি না। আমার সব কিছু সুমুর জন্য আমানত হিসেবে রেখে দিয়েছি। খবরদার আবারও বলছি হামলা করবি না।
অগ্নি বিরক্তি নিয়ে রায়ানের দিকে তাকায়। অগ্নির তাকানো দেখে রায়ান এইবার সিরিয়াস হয়ে বলে,,,,,
” বাদ দে এইসব। জানি আমি তর চরিত্র অন্ধকারের মত পবিত্র । আগে বল তুই অফিসে রাত কাটাচ্ছিস কেনো অগ্নি? ভুল যাচ্ছিস ওইখানে একা ইয়ানা আছে।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে ,,,,,,,
“” তো?
ইউভি অবাক হয়ে বলে,,,,,
” তো মানে? এতটা খাপছাড়া কিভাবে বলতে পারিস? এত বড় একটা ঘটনা ঘটেছে। ওর পুরো অস্তিত্ব ওই ভেঙ্গে গেছে। মেয়েটা ছটফট করছে আর তুই এখানে নির্বিঘ্নে আছিস কিভাবে অগ্নি? যদি ইয়ানা কোনোভাবে নিজের কোনো ক্ষতি করে?
অগ্নির নিব্বাক ভঙ্গিতে বলে,,,,,,,
” করবে না। ভেঙ্গে পড়ার মত মেয়ে ও না। বউ আমার,, তাই ভালোভাবেই চিনি। ওর প্রতিটা কদম ফেলানোর আগেই ওর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রাখি। ওর প্রতিটা নিশ্বাস আমার জানা।
রায়ানা — যখন এতটা ভালোবাসিস এতটা চিনিস তাহলে দুরে কেনো আছিস?
অগ্নি গায়ে ব্লেজার জড়িয়ে বলে,,,,,,
‘” মিশন ছিলো? যে কোনো সময় আমার উপর হামলা হতে পারত। হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র আটকে রেখেছি আমি। তদের কি মনে হয় তারা আসবে না এই নিয়ে কথা বলতে। এইসব কি আমি ইয়ানার সামনে করবো নাকি? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তারা কেউ আসে নি ভয়ে। অবশ্য ভয় পাওয়াই ভালো।
ইউভি — আটকেছিস কেনো? কখনো তো আটকাস নি তাহলে?
অগ্নি বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” সব কিছু যদি এত সহজে দিয়ে দেই তাহলে এর মর্ম কে করবে। আগে অপেক্ষা করুক তার পর নাহয় কাজে মনযোগ দিব।
ইউভি কিছু একটা ভেবে বলে,,,,,,,
” ওই চারজন লোককে কি করবি? নাকি মেরে ফেলেছিস?
অগ্নি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কত বাঁচিয়ে রাখব।
ইউভি আর রায়ান আৎকে উঠে বলে,,,,,,
” হুয়াট! কখন এই কাজ করলি?
অগ্নি — যেদিন ইয়ানা আমার আসল পরিচয় জেনেছে। ওইদিন ওদের এখান থাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরের দিন ওই এসিড ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছি।
ইউভি শস্থির নিশ্বাস ফেলে বলে,,,,
” ভালো হয়েছে ইয়ানা দেখার আগেই সরিয়ে দিয়েছিস।
অগ্নি — দেখেছে।
রায়ান ডিভান থেকে চট করে উঠে বলে,,,,,,
” কি দেখেছে?
অগ্নি খাপছাড়াভেবে বলে,,,
” ওই চারজন নরখাদক কে। দরজা খোলা পেয়েছিলাম। পরে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখতে পাই ইয়ানা গিয়েছিলো ওই রুমে। তবে আমাকে এই নিয়ে কোনো প্রশ্ন করে নি।
ইউভি আর রায়ান হতাস হয়ে তাকায় অগ্নির দিকে।
ইউভি অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
‘” তাহলে ভাই তদের সংসারে বিচ্ছেদ ঘটলেও সেটা হালাল বিচ্ছেদ হবে। এখানে শুধু ইয়ানা নয় ওর জায়গায় যদি আরও সাহসী মেয়ে থাকত তাহল সে তর উপস্থিতি দেখলেই ভয় পাবে। এত এত ভয়ংকর সত্যি কোনো মেয়েই সহ্য করতে পারবে না। ওই নরখাদকগুলোর যে অবস্থা তুই করেছিস সেটা আমি এক নজর দেখেই রাতে ঘুমাতে পারে নি অনেক দিন। সেখানে ইয়ানা কিভাবে দেখেও সহ্য করে আছে কে জানে? শুক্রিয়া কর শালা এমন বউ পেয়েছিস।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,,,
” বিচ্ছেদ তো এই জনমে হবে না কোনোদিন। আমার বউ যদি নরমাল ও হত তবুও সে সাহসী হয়ে উঠত। সে উঠতে বাধ্য। কারন অগ্নি চৌধুরি ওর স্বামী। স্বামী যদি রক্ত দিয়ে হাত ধুয়ে আসে বউ সেই হাত আচল দিয়ে মুছে দিবে। তাহলে ভয় পেলে তো চলবে না।
রায়ান শান্ত হয়ে বলে,,,,,
” এত সিরিয়াস কথার মধ্যে ও এত রুমান্টিক বাক্য আসে কিভাবে তর মনে।
অগ্নি — বউয়ের চুমু খেতে খেতে ঠোঁট দিয়ে এমনি রুমান্টিক কথা বের হয়। কারন চুমুগুলো তো ডাইরেক্ট ঠোঁটের উপর পড়ত । আমি আমার এই ঠোঁট দুটি দিয়েই তো সব করেছি তাই না।
অগ্নির কথা শুনে রায়ান আর অগ্নি ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে অগ্নি চাবি নিয়ে বের হিয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় বলে যায়,,,,,,
“” রুম থেকে বের হলে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যাস
রায়ান —- ওকে আগে তর ঠোঁটের ব্যাখ্যাটা মাথায় ডুকিয়ে নেই।
বাগানটি বাড়ির পেছনের দিকে উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। বাহিরের পৃথিবী থেকে আলাদা এক রহস্যময় স্থান। একজন ভয়ংকর পুরুষ যার নাম শুনলেই শহরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। কিন্তু তার বাড়ির পেছনে ছিল এমন এক ফুলের বাগান যা যেন তার রক্তাক্ত অতীতকে ছায়ার মতো ঢেকে রাখেছে । চারপাশে সুউচ্চ দেওয়াল, গোপন ক্যামেরা, নিরব দেহরক্ষী থাকলেও বাগানের ভেতরে পা রাখলেই মনে হয় যেন অন্য এক পৃথিবীতে চলে এসেছে।
পাথরের পথগুলো নিখুঁতভাবে বাঁকানো।ঠিক যেন কোনো রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরীণ পথ। বাগানের মাঝখানে একটা ছোট মার্বেল ফোয়ারা যেখান থেকে সাদা ধোঁয়ার মতো পানি উঠে পড়ে একটা স্বপ্নময় আবেশ তৈরি করে। আশেপাশে শতশত ফুল রয়েছে গোলাপ, অর্কিড, পিওনি, চেরি ব্লসম রঙের এক বিস্ফোরণ। প্রতিটি ফুল নিখুঁতভাবে সাজানো যেন তারা নিজেই জানে কোথায় জন্ম নিলে সৌন্দর্য সম্পূর্ণ হয়।
ইয়ানা এগিয়ে যায় ভিতরের দিকে। সকালটা যেন এখন ও শান্। পাখিরা তখনো কেবল জেগেছে বাতাসে ছিল শিশিরের টাটকা ঘ্রাণ। ইয়ানা ধীরে ধীরে বাগানকে পর্যবেক্ষন করতে শুরু করে।সাদা রেশমি পোশাক পরা, খোলা চুল কোমর ছুঁয়ে নেমে গেছে। চোখে ঘুম ঘুম প্রশান্তি।
ইয়ানা ধীর পায়ে গোলাপের কাছে গিয়ে সে হালকা করে একটা পাপড়ি ছুঁয়ে দেয়। সেই স্পর্শে ফুলটা যেন আরও লাল হয়ে ওঠে। লজ্জা পায় আর ভালোবাসা বুঝে ফেলে।
ফোয়ারার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে সূর্যের কিরণ তার চুলে পড়ে। মনে হচ্ছে সোনালি আলোয় জ্বলছে সে। চোখ বন্ধ করে ইয়ানা শ্বাস নেয় আর মনে হয় তার বুকজুড়ে একটা গভীর প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। সারাদিনের জন্য সে নতুন শক্তি খুঁজে পেয়েছে।
ইয়ানাকে দেখে মনে হচ্ছে বাগানটা ঠিক তার জন্যই বানানো। ফুলগুলো যেন তার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা আরেকটা ফুল নেওয়ার জন্য নিচে নামতেই ওর উড়না সরে গিয়ে কাঁধ থেকে জামা ঝুলে যায়। কিন্তু ইয়ানা বেখিয়ালিভাবে ফুল হাতিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ করে ওর কানে এক ভয়ংকর শব্দ এসে আঘাত করে। একটা শব্দতেই থেমে যায় নি পরপর বিকট ভয়ংকর শব্দ এসে কানে আঘাত করছিলো। মনে হচ্ছে পুরো বাড়িটাতে কোনো ক্রস ফায়ার হয়েছে এক্ষনি। ইয়ানা ভয়ে কেঁপে উঠে বার বার। আতঙ্কে গলা শুকিয়ে গেছে। নিজের আতঙ্কের রেশ না কাটাতেই সামনে এক ভয়ানক দৃশ্য দেখে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দুই পা পিছিয়ে যায়। দুইজন লোক রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে মাটিতে। একদম চোখ বরাবর শুট করা হয়েছে। লোকগুলো চোখে হাত দিয়ে মরনযন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে।
ইয়ানা ভয়ের রেশ নিয়ে সামনে তাকাতেই আৎকে উঠে। অগ্নি রক্ত চোখে লোকগুলোর দিকে তাকায়। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই কাঁচা চিবিয়ে খাবে। ফর্সা মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। রাগে দাত কিড়মিড় দিয়ে রেখেছে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে। নিজের রাগকে বজায় রেখে অগ্নি আরিফের উদ্দেশ্যে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,,,,
” আরিফ ছুঁরি আর চা* পাতি দে।
অগ্নির হুংকারে প্রতিটি দেয়াল ও কেঁপে উঠছিলো। এতক্ষনের কোলাহল যেনো মুহূর্তেই স্তব্দ হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে এতক্ষনের সতেজ থাকা ফুলগুলো ও ভয়ে নেতিয়ে পড়েছে। ইয়ানা এখন ও মুখে হাত দিয়ে অগ্নির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ভয়ে তার রক্ত জমে গিয়েছে।
আরিফ বড় ছুঁরি আর ধারালো কিছু অস্ত্র এনে অগ্নি হাতে দেই। অগ্নি অস্ত্রগুলোর দিকে তাকিয়ে শান্ত কিন্তু ভয়ানক কন্ঠে বলে,,,,,,,,,
“”চোখ বন্ধ করো জান। এই মুহূর্তে চোখ দুইটি নিজের হাতে চেপে ধরো। যেনো এক কণা ও কিছু দেখতে না পাও।
ইয়ানা এখন ও তাকিয়ে আছে স্তব্দ হয়ে। নিজের মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন শুধু একই কথা বলছে,,,,,
“” কি করবে এখন? কি হবে এই গার্ডগুলোর সাথে।
ইয়ানাকে এইভাবে স্তব্দ হয়ে থাকতে দেখে অগ্নি নিজের হিংস্র চোখ দিয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়।
এরপর কিছু না বলে ইয়ানার সামনে গিয়ে বলে,,,,,,,,
‘”” কথা কানে যাচ্ছে না চোখ বন্ধ করতে বলেছি আমি তকে বিয়াদপ।
এরপর নিজের কাছে থাকা একটা বড় রুমাল দিয়ে ইয়ানার চোঁখ বেঁধে দিয়ে বলে,,,,,,
“” খবরদার খুলবে না। যদি এক বিন্দুও এদের কোনো মারের দৃশ্য দেখো তাহলে আমি তোমাকে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে গেঢ়ে দিয়ে আসব। সহ্য করতে পারবে না তাই যা বলছি সেটাই করবে।
অগ্নির পাগলামো দেখে ইয়ানা স্তব্দতা নিয়েই মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়। আসলে ইয়ানা নিজের মধ্যেই নেই। অগ্নির চোখে সে নেশা দেখতে পাচ্ছে যেমনটা সে ওইদিন রাতে দেখেছে। কি ঘটবে এখন? ইয়ানা আৎকে উঠে। অগ্নিকে থামাতে হবে। ইয়ানা কাঁপছে কিন্তু কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না। কিছুক্ষন পর আকস্মিক চোখের কাপড় সরিয়ে এমন এক ভয়ংকর দৃশ্য দেখে ইয়ানা চিৎকার দিয়ে জায়গায় বসে পড়ে।
অগ্নি একটা লোকের পেট থেকে দুই ভাগ করে ফেলেছে। নাড়িভুড়ি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে গার্ডেনের এক পাশে। ইয়ানার চিৎকার অগ্নির কান অব্দি পৌছেছে কি না জানা নেই। সে মেতে উঠেছে এক পৈশাচিক উন্মাদনায়। একটা লোককে মোট সাতটা ভাগ করে। প্রথম এক কোঁপে শরীর থেকে আলাদা করে। গলা টা গিয়ে ছিটকে অন্য জায়গায় পরে। গলা কাটা শেষ হলে বড় দাঁ দিয়ে পেট বরাবর চার ভাগ করে। এরপর নিচের দিকে ভিবিন্ন খন্ডে বিভক্ত করে। প্রতিটা কোঁপে রক্ত গিয়ে অগ্নির গায়ে ছিটকে পড়ছে। সেইম কাজ সেই পরবর্তী ব্যক্তিটার ক্ষেত্রে ও করে। এরপর পেট থেকে কলিজা খুঁজে বের করে নিয়ে সামনে ঝুলিয়ে ধরে।
তাচ্ছিল্য এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলে,,,
“” ছেহহ! এই সামান্য কলিজা নিয়ে আমার বাড়ির গার্ড হয়ে আমার বউয়ের দিকেই কু- দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। শালার মানুষ আজকাল হয়েছে কলিজা ব্যাঙ্গের মত আর কাজ করে সিংহের মত।কুত্তার বাচ্চাদের কলিজা কেঁপে উঠে নাই।
অগ্নি কলিজাটা হাতে নিয়ে গার্ডেনে থাকা দুইটা কুকুরকে দিয়ে দেই। হঠাৎ ইয়ানার দিকে চোখ যেতেই দেখতে পায় ইয়ানা মাটিতে সেন্সল্যাস হয়ে পড়ে আছে। অগ্নি দ্রুত ইয়ানার কাছে যায়। ইয়ানার দিকে তাকাতেই ধপ করে ভিতরে জ্বলে উঠা আগুনটা নিভে যায়। ভতরে জেগে উঠা পিশাচ রুপটাও শান্ত হয়ে পড়ে। অগ্নি আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” আরিফ এইগুলো ক্লিন করা এক্ষনি।
এরপর ইয়ানাকে পাজা কোলে তোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
উপরের উঠতে উঠতে একজনকে আদেশ দিয়ে বলে,,,,,
” গরম স্যুপ রুমে পাঠাও কিছুক্ষনের মধ্যে।”
অগ্নি রুমে ডুকে ইয়ানাকে বিছানায় শুইয়ে দেই। এরপর কপালে চুমু দিয়ে ইয়ানার উপর থেকে উঠে আসে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে মুখটা শুকিয়ে গেছে।মুখের উজ্জলতা একটু কমে গিয়েছে। চুলগুলো মনে হচ্ছে চিরনি লাগিয়ে দেখিনি এই চারদিন।
অগ্নি ইয়ানার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। শরীরের সব রক্ত পরিষ্কার করার জন্য। পুরো শরীরে রক্ত লেগে আছে।
আধাঘন্টা পর নিজেকে ফ্রেশ করে অগ্নি পুনরায় ইয়ানার পাশে এসে বসে। হঠাৎ তাকিয়ে দেখে ইয়ানার জামায় রক্ত লেগে আছে। ওর শরীর থেকেই ইয়ানার শরীরে রক্ত লেগেছে।
অগ্নি ড্রয়ার থেকে ইয়ানার জন্য একটা টি- শার্ট আর পায়জামা বের করে। এরপর এইগুলো নিয়ে ইয়ানার কাছে যায়। অগ্নি ইয়ানার দুই গালে স্লাইড করে মুখে অজস্র চুমু খায়। ঠিক ততক্ষন চুমু খায় যতক্ষন ওর মন না ভরে।
এরপর ইয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,,,,
” তোমার কাপর চেইঞ্জ করলে কি খুব বেশি অন্যায় হবে জান? অন্যায় কেনো হবে? তুমি নিজেই সব কিছু আমার কাছে সপে দিয়েছো। আত্নসমার্প করতে বাধ্য হয়েছো আমার কাছে। তাহলে অন্যায় কেনো হবে? খবরদার ঘুম থেকে উঠে ত্যারামি শুরু করবে না। ধৈর্য খুব কম আমার।
অগ্নি ইয়ানার কাছ থেকে এসে লাইট অফ করর দেই। এরপর আলতো হাতে ইয়ানার শরীরের পোশাক পাল্টে পুনরায় জামা পড়িয়ে দেয়।
জামা চেইঞ্জ করা শেষে অগ্নি লাইট অফ করে ইয়ানার পাশে নেশালো কন্ঠে বলে,,,,,,,
” আলোতে মানুষের দেহ টুকরো টুকরো করলে ও আমার হাত এক বিন্দু কেঁপে উঠে নি। কিন্তু তোমার সাধারন কাপর চেইঞ্জ করতে যতবার কেঁপে উঠেছে। কি আছে তোমার মধ্যে যা আমাকে চুম্বকের মত টেনে নিয়ে যায়।
অগ্নি এই বলে ইয়ানার গলার দিকে তাকায়। মুহূর্তেই মুখের অবয়ব পাল্টে যেতে থাকে। রাগে কেঁপে উঠে পুরো শরীর। অগ্নি ইয়ানার পাশ থেকে উঠে গিয়ে ফল কাটার ছুঁরিটা হাতে নেই।
এরপর একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে ইয়ানার গলার নিচে তিলটায় ছোট করে চুমু খেয়ে বলে,,,,,
” এই তিলটা আমার খুব পছন্দের ছিলো। কিন্তু এখানে কারোর কু – নজর পড়েছে। সেই কু- নজর সরাতে আমার নাম খোদাই করব। যাতে কেউ তাকালেই আৎকে উঠে। কেউ যাতে বুঝতে পারে তুমি কে? আমার হার্টবিট, আমার অনুভবের সেহজাদী।
অগ্নি আলতো হাতে ইয়ানার তিলের চারদিকে ” O” শব্দ দ্বারা খোদায় করে। একদম আলতোভাবে করেছে আর একদম শান্ত ভঙ্গিতে। কিন্তু চোখে ছিলো এক পৈশাচিক হিংস্রতা।
গলায় ছুরির আঘাতে ব্যাথা অনুভব করে ইয়ানা চোখ বুঝে থাকা অবস্থায় আর্তনাদ করে উঠে। ইয়ানা চোখ খুলে তাকায়। অগ্নি নিজের হাতের টিস্যু পেপার দিয়ে ঝরে পড়া রক্ত মুছে দেয়। ফর্সা জায়গাটা একদম লাল হয়ে গিয়েছে। অগ্নি সেদিকে তাকিয়ে সেই খোদাই করা জায়গায় শক্ত করে চুমু খায়।
চোখ খোলে অগ্নিকে নিজের এত সান্নিধ্যে দেখে নিজের হুসে আসে। ইয়ানা অগ্নিকে নিজের কাছ থেকে সরানোর জন্য ধাক্কা দেয়।কিন্তু এক চুল ও নাড়াতে পারে নি। নিজের বুকে ধাক্কা অনুভব হতে অগ্নি গলা থেকে চোখ সরিয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়। সেই চোখের চাহনিতে কোনো ভালোবাসা নেই আবার কোনো হিংস্রতা ও নেই। কি আছে সেটা হয়ত ইয়ানা নিজেও বুঝতে পারছে না।
অগ্নিকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে ইয়ানা নিশ্চুপ। গলায় ব্যাথায় টনটন করছে। গলায় আঘাতের কথা মাথায় আসতেই ইয়ানা টলমল চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,
” কি করছিলেন আমার কাছে ছুঁরি নিয়ে। গলা কাটতে এসেছেন.? যেভাবে ওই লোকগুলোর কেটেছেন। কাঁচা মরিচের মত টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন।
অগ্নি ছুরিটা হাত থেকে টেবিলের উপর রেখে,,,,,
” ওরা আমার জিনিসের দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছিলো। এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার টর্চার সেলে নিয়ে গেলে আর ও জঘন্য মৃত্যু দিতে পারতাম এখানে তো কম ওই দিয়েছি।। তোমাকে কেনো মারতে যাব তুমি কি কিছু করেছো?
এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে তিরিক্ষি মেজাজে বলে,,,,,
” যখন উরনা দিয়ে নিজেকে সুরক্ষা করতে পারো না তখন এইসব বাল ছাল পড়ো কেনো?
ইয়ানা গলার ব্যাথায় নাক মুখ খিচে রেখেছে। অগ্নির কথা শুনে এইটা বুঝতে পেরেছে হয়ত গার্ডেনে হাঁটার সময় উরনা এদিকে সেদিক হয়েছিলো।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” তাই বলে লোকগুলোকে এইভাবে মারবেন? হাত কেঁপে উঠে নি?
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি ফিক করে হেসে হঠে। সেই হাসি একসময় ভয়ংকর অট্টহাসিতে পরিনত হয়। অগ্নি ড্রয়ার থেকে ফাস্ট বক্স এনে ইয়ানার পাশে বসে। ইয়ানা তাকিয়ে আছে অগ্নির দিকে নিজের ব্যাথা ভুলে গিয়ে। চোখ হাসছে না কিন্তু মুখে ঠিক হাসির শব্দ। অগ্নি নিজের হাসি থামিয়ে ইয়ানার দিকে শান্ত চাহনিতে বলে,,,,,,,,
” আমি অন্ধকারে বেড়ে উঠা এক অমাবশ্যা। যেখানে আলো প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু তোমার আগমনে আমার জীবনে হালকা আলোর সন্ধান মিলে। তাই ভয় আমাকে কখনো কাবু করে না। আমি ভয়কে কাবু করি। এক সাথে শত শত লোকগুলোকে কুঁপিয়েছি। তাই আমাকে এইসব বলো না জান।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে ঘৃনা নিয়ে বলে,,,,,,
” জানোয়ার! অমানুষ আপনি।
অগ্নি একটা মলম ইয়ানার কাটাস্থানে লাগিয়ে ফুঁ দিয়ে বলে,,,,,,,
” তার থেকে ও বেশি যা তুমি এখন ও কল্পনাও কর নি।
ইয়ানা অগ্নির দিকে একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলে,,,,,
” লোকগুলোকে কেনো আটকে রেখেছেন? ছেড়ে দিন।
অগ্নি চট করে ইয়ানার দিকে তাকায়। মুখে কাঠিন্যতা নিয়ে বলে,,,,,,
” দরদ দেখাচ্ছিস কার জন্য? পর পুরুষের জন্য দরদ দেখাস কোন সাহসে।
ইয়ানা অগ্নির রাগকে তোয়াক্কা না করে বলে,,,,,,
” লিসেন মি, অগ্নি চৌধুরি। আপনি জানোয়ার বাট আমি নয়। লোকগুলোকে কি অবস্থা করেছেন কোনো আইডিয়া আছে। তারা যত বড় অপরাধ করুক কিন্তু এইভাবে বদ্ধ ঘরে রেখে শাস্থি দেওয়ার কোনো রাইট নেই আপনার।
অগ্নি বাঁকা হাসে। অগ্নির হাসিতে ইয়ানার গা জ্বলে যাচ্ছে। ঘৃনায় নাক মুখ খিচে বলে ,,,,,,
“” ছেড়ে দিন লোকগুলোকে।
অগ্নি খাপছাড়া ভঙ্গিতে বলে,,,,,,
‘ মেরে ফেলেছি। এসিড ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছি।
ইয়ানা টলমল চোখে বলে,,,,,,
” কেনো মেরেছেন এদের?
অগ্নি ইয়ানার হাতে একটা ছুঁরি ধরিয়ে দিয়ে কাধের পাশে ইশারা করে বলে,,,,,
” ঠিক এই বরাবর তোমার নামের অক্ষর আমার এখানে খোদাই করবে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ছুঁরিটা হাতে নিয়ে বলে,,,,,,
” ইচ্ছে তো করছে ছুরিটা পেট বরাবর ডুকিয়ে দিতে।
অগ্নি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” ডুকাতে চাও নাকি? চাইলে ডুকাতে পারো কিন্তু তার আগে তোমাকে শেষবারের মত আদরটা করে নেই।
ইয়ানা অগ্নির কাধে ছুরি দিয়ে “A” চিহ্নের খোদায় করছে। হাত কাঁপছে ওর। ভিতরে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু রাগের কারনে সবকিছুই ফিকে লাগছে। ইয়ানার হাঁত কাঁপা সত্তেও অগ্নির পেটে সামান্য ছুরি দিয়ে স্লাইড করে বলে,,,,,,
” যেদিন সময় আসবে ওইদিন নিশ্চয় ডুকাব।
অগ্নি ইয়ানার দিকে ঝুকে হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” সেই দিনের জন্য আমি ও অধীর আগ্রহে বসে থাকব। হাত কাঁপবে না? ভয় পাবে না?
ইয়ানা হাসি দিয়ে বিছানায় বসে বলে,,,,,,,
” ভয় কেনো পাব? যেদিন রাতে আপনার সব সত্য জেনেছি ওইদিন তো ভয়কে নিজের শখী করে নিয়েছি। নিজের শখীকে কেউ ভয় পায় নাকি।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” মঞ্জুর আপনার দাবি। বুক পেতে রাখব যেদিন আমাকে ছুঁরি দিয়ে আঘাত করবেন। আর হ্যা পরিবর্তী আঘাতের স্বীকার কিন্তু আপনিও হবেন?
ইয়ানা সামান্যা কপাল কুচকে বলে,,,,,
“মানে?
অগ্নি ধাঁরালো কন্ঠে বলে,,,
“”মানে এই যে আপনাকে ও আমার সাথে পরকালে যেতে হবে। আপনাকে এখানে একা রেখে যাব নাকি? আমি কবরে গিয়ে কার ঘৃনার চোখ দেখব তাই সাথে করে আপনাকে নিয়ে যেতে হবে।
ইয়ানা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,
” জীবনে যেই পাপ করেছেন কবরে গুঁতা খেঁতে খেঁতেই তো কুল পাবেন না। আমার ঘৃনা ভরা চাহনি দেখবেন কখন?
অগ্নি হঠাৎ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
” তুমি কি আমাকে মেরে কোনোভাবে অন্য কারোর সাথে সংসার করার চিন্তা করছো? এই মেয়ে? এই! জান খেয়ে ফেলব এমন চিন্তা মাথায় আসলে।
ইয়ানা অগ্নির কথায় তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” এক জানোয়ারকেই সামলাতে গিয়ে আমার সব শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে আরেকজনকে সামলাব কখন।
অগ্নি — যাক শান্তি পেলাম তোমার মনে অন্য কেউ নেই। অনেক দিন ধরে ফুটবল ম্যাচ খেলি না চলো একটু খেলে আসি।
ইয়ানা অগ্নির ইঙ্গিত বুঝতে পেরে ছুঁরিটা তার দিকে তাক করে বলে,,,,,,
” খবরদার আমার দিকে এগোবেন না। এগিয়ে আসলে কিন্তু রক্তাক্ত করে ফেলব।
অগ্নি হেচকা টানে ইয়ানার থেকে ছুঁরিটা নিয়ে বলে,,,,,,
“” এইটা ফল কাটার ছুঁরি। এইটা দিয়ে পেট ফুটো হবে না। পারলে আপেল কেটে খেও। কানাডার মাফিয়া লিডার অগ্নি চৌধুরিকে তার বউ তাকে ফল কাটার ছুঁরি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। তাও আবার বউকে একটু আদর করবে বলেছে বলে। ছেহহহ কি নির্লজ্জ ব্যাপার।
ইয়ানা অগ্নির চোখের দিকে তাকিয়ে গভীর কন্ঠে বলে,,,,,,
“আপনি কি আগের জন্মে গিরগিটি ছিলেন?
অগ্নি– হুয়াট?
ইয়ানা — গিরগিটিও এত তাড়াতাড়ি নিজের রং পালটায় কি না সন্দেহ আছে কিন্তু আপনি যত দ্রুত পাল্টান। প্রতি মিনিটে, প্রতি সেকেন্ডে হাজারটা রুপ ধারন করেন।
ইয়ানা এইসব বলতে গিয়ে হঠাৎ নিজের দিকে চোখ যেতেই অগ্নির দিকে চোখ বড় বড় তাকায়। এরপর রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,,,
“” আমার জামা পাল্টিয়েছেন কেনো? কোন সাহসে আমার শরীরে হাত দিয়েছেন ক্যারেক্টারল্যাস লোক।
ইয়ানার মুখে ক্যারেক্টার উপমা পেয়েই অগ্নির মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠে। রেগে ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে বিছানার থেকে নেমে চলে যায় কার্বাডের কাছে। এরপর হাতে করে স্প্রেডার বার নিয়ে আসে। ইয়ানা অগ্নির হাতে এইটা দিকে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,
” এইটা নিয়ে সামনে এগিয়ে আসছেন কেনো? কি করবেন এইটা দিয়ে?
অগ্নি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” সেইমল্যাস ট্যাগ যখন পেয়েছি তাহলে সেটা কাজে লাগায়। কি বলো তাহলে শুরু করা যাক।
ইয়ানা কপাট রাগ দেখিয়ে বিছানা থেকে নেমে বলে,,,,,,
” কি ভেবেছেন ভয় পায় আপনাকে? খবরদার কাছে আসবেন না।
ইয়ানা পিছাতে গেলে অগ্নি খপ করে ইয়ানাকে ধরে বিছানার সাথে স্প্রেডার দিয়ে বেঁধে দেয়।এরপর অগ্নি ধীরে ধীরে ইয়ানার গোড়ালিতে লাগানো স্প্রেডার বারের ক্ল্যাম্প শক্ত করে দেই। ইয়ানা ছুটাছুটি করে কিন্তু এতে বিফল হয়ে বলে,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৮
” গিরগিটি শয়তান খোলেন বলছি আমাকে?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায়।চোখে আগুন আর কন্ঠে আদেশ নিয়ে বলে,,,,,,
” এবার তুমি শুধু আমার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।এখন তোমার নড়ার ক্ষমতাটা ও আমার অধীনে।
