অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৪

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৪
লিজা মনি

আহিয়া অরিদের কাছ থেকে উঠে ইয়ানার কাছে যায়। এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” বউমনি তুমি এখানে কেনো বসে আছো?
আহিয়ার কন্ঠ পেয়ে ইয়ানা সেদিকে তাকায়। এরপর অগ্নির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,,,,,
” এমনি আহিয়া। যাও তোমরা গিয়ে আনন্দ করো।
আহিয়া — ওকে। আমার নাচার প্রোগ্রাম শেষ করি।

আহিয়া জামাটা ধরে ইয়ানার কাছ থেকে চলে আসে। এরপর সোজা চলে যায় স্টেজের মধ্যে যেখানে নাচের জায়গা করা হয়েছে। আহিয়া সেখানে যেতেই সবগুলো লাইট গিয়ে ওর উপর পড়ে। শিখা চৌধুরি, সাজিদ চৌধুরি , ইয়ানা, হল্লা পার্টি, ইউভি, রায়ান, রুয়ানা, অরিদ সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। গান চালু করা হয়,,,,,,,,,,,
সবাই আহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অগ্নি ফোনের স্ক্রিন থেকে মাথা তুলে এক পলক বোনের দিকে তাকায়। পুনরায় আবার ফোনের দিকে নজর দেয়। অগ্নিকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,
” সারাজীবন অসামাজিক পরিবেশে থেকে বুঝবেন কিভাবে পরিবারের সবার সাথে এক সাথে আনন্দ করার মর্ম। জীবনে খুন, কালোবাজার এইসব ছাড়া আর করেছেন কি? অসামাজিক লোক।
ইয়ানার বকবক কানে পৌঁছালে নির্ঘাত একটা থাপ্পর খেত। কিন্তু অগ্নির কানে থাকা ইয়ার ফোনটা ওকে বাঁচিয়ে দিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহিয়া নিজের নাচ শেষ করে শিখা চৌধুরির কাছে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে বসে। সবাই আহিয়ার খুব প্রসংসা করছিলো।
ইয়ানা সেখান থেকে আহিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,
” আহিয়া সুমু অনেক সুন্দর কাপল ডান্স করতে পারে। ওকে বলো ডান্স করতে।
ইয়ানার কথা শুনে সুমু চোখ বড় বড় করে তাকায়। সামান্য ইতস্ততা নিয়ে বলে,,,,,
” এই না আমার এখন প্র‍্যেকটিস নেই । হঠাৎ করে কিভাবে নাচব? আর কাপল পাব কোথায় আমি?
আহিয়া সুমুর সামনে গিয়ে বলে,,,,,,
” প্র‍্যাকটিসের প্র‍্যোজন নেই আপু। তুমি নাচবে এইটাই শেষ কথা। তুমি নাচলে পার্টনার ও পাওয়া যাবে।
ইউভি রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

” এইভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছিস কেনো.? যাহহ নাচ গিয়ে তর প্রেয়সীর পার্টনার প্রয়োজন।
রায়ান অবাক হয়ে বলে,,,,,
” আমি যাব?
ইউভি — তাহলে আমি যায়? আমি গিয়ে নাচি তর প্রেয়সীর সাথে। যাব?
রায়ান — একদম না। যাচ্ছি আমি।
রায়ান ইউভির কাছ থেকে উঠে সুমু তাদের সামনে যায়। এরপর গলা কেঁশে বলে,,,,,,,
” মিস, রাগিনী চলোন তাহলে একটা স্টেপ নেওয়া যাক?
সুমু অবাক হয়ে রায়ানের দিকে তাকায়।
আহিয়া — এই তো আপু তোমার পার্টনার চলে এসেছে। এখন তো নাচবে?
সুমু — আমি….

আহিয়া সুমুর হাত ধরে দাড়া করায়। এরপর জোড় করে পাঠিয়ে দেয় স্টাজের মধ্যে। সুমুর পুরো শরীর কাঁপছে। এইভাবে একজন ছেলের সাথে নাচা যায় নাকি? এরচেয়ে ভালো ছিলো আকাশ অথবা রুহান যদি আসতো। উনার সাথে কিভাবে নাচব আমি?
সুমুর ভাবনার মধ্যে রায়ান এগিয়ে গিয়ে মিহি সুরে বলে,,,,
” ভয় পেয়ে না। আছি আমি তোমার সাথে। শুধু আমার হাতটা ধরো।
রায়ান এক হাত বাড়িয়ে দেয়। সুমু হাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে রায়ানের দিকে তাকায়। রায়ান ইশারা দিয়ে বলে,,,,,

“” ধরো ”
সুমু কাঁপাকাঁপা নরম হাতটা রায়ানের শক্তপোক্ত হাতের উপর রাখে। মুহূর্তেই বৈদ্যুতিক শকের মত পুরো শরীর
কেঁপে উঠে।
আরু ভিডিও করার জন্য মোবাইল বাহির করে তাদের দিকে ক্যামেরা রাখে।
আহিয়া গিয়ে গান চালু করে দেই।
” janam, janam, janam
saath chalna yunhi
kasam tumhe kasam
Aake milna Yahin
Ak jaan Hai bhale
Do Badan ho Judda
Meri Hoke Hamesha hi

রায়ান সুমুর কোমরে হাত রেখে হালকা করে উপরে তুলে ধরে।
Rehena Kabhi na
Meri Subha Ho Tumhi
Ar Tumhi Shaam Ho
Tum Dard Ho
Tumhi Araam Ho
Meri Duaon Se
Aati Hai Bas Yeah Sadaa
Meri Hoke Hamesha Hi
Rehena kabhi na
Meri Subha Ho Tumhi

রায়ান সুমুকে ঘুরিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সুমুর পিঠ গিয়ে ঠেকে রায়ানের শক্তপোক্ত বুকে। গান থেমে যায়। সবার হাত তালি দেওয়া দেখে একে অপরে ঙ্গানে আসে। রায়ান ছেড়ে দেয় সুমুকে। সুমু দ্রুত স্টেজ থেকে নেমে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে। চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস টানছে। আরু সুমুর উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,
“” তদের দেখে মনে হয়েছিলো সত্তিকারের কাপল। কি আবেগ, স্পর্শ দিয়ে কাভার করেছিস সুমু। খুব সুন্দর হয়েছে।
সুমু মিহি সুরে বলে,,,,,

“” থ্যাংক্স।
এরপর এক এক করে নাচের স্টেপ দিচ্ছিলো। প্রথমে আকাশ আর রুহান এরপর অরিদ।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। খুব বিরক্ত সে। এমন একটা মোমেন্টে এইভাবে কে বসে থাকে। ইয়ানা অগ্নির উড়ুর উপর কনুই ঠেকিয়ে বলে,,,,,
” শুনছেন?
অগ্নি একইভাবে ফোনে কাজ করে যাচ্ছে। ইয়ানা নিজের রাগকে সংযত করতে না পেরে হেচকা টানে মোবাইলটা নিয়ে নেয়। আকস্মিক এমন হওয়াতে অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

” কি আছে এই মোবাইলে। কাকে দেখছেন এইভাবে? পুরো দুনিয়ার খবর নেই আপনার।
অগ্নি — কি হচ্ছেটা কি ইয়ানা। কাজ করছি আমি ফোন দাও। তোমাদের এইসব লজিকহীন কাজে আমি উৎসাহী নয়।
ইয়ানা — একটা মানুষ এনে দেয়? আপনি বসে বসে তার শরীরটাকে কেটে টুকরো টুকরো করবেন। সেই কাটা – ছেড়া কাজে খুব উৎসাহী আপনি, তাই না?
অগ্নি — এতদিনে বুঝলে?
ইয়ানা চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিয়ে বলে,,,,,
” আমি ও নাঁঁচব প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
অগ্নি ব্লেজার ঠিক করে বলে,,,,

” তোমার এক পা যদি মঞ্চে পড়ে তাহলে সেই পা আমি কেটে রেখে দিব।
ইয়ানা — কি সমস্যা গেলে। সুমু, আহিয়া, আরু তারা সবাই তো নাচছে।
অগ্নি — তারা তুমি নও ইয়ানা। আর না এরা সবাই অগ্নি চৌধুরির ওয়াইফ। তুমি আমার বউ। অগ্নি চৌধুরি অর্ধাঙ্গিনী। আমার হৃদয়হরনী তুমি। তারা নয়। আর আমি আমার বউকে সবার সামনে প্রদর্শন করব না।
ইয়ানা — সবাই কোথায়? সবাই তো নিজের ওই লোক। একটু যায় প্লিজ।
অগ্নি ইয়ানার দিকে শান্ত চোখে তাকায়। এরপর সামনে থেকে শুরু করে আশেপাশে চারদিকে তাকায়। অরিদ, রুহান, আর আকাশ ডান্স করছে। সবার ফোকাস বর্তমানে সেদিকে।
অগ্নি ইয়ানার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে আচমকা ইয়ানাকে পাঁজা কোলে তুলে নেই। অগ্নির এমন কান্ডে ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। আল্লাহ সবার সামনে এইভাবে কোলে তোলা এইটা কোন নির্লজ্জতার ক্যাটাগরি।
ইয়ানা অগ্নির চোখের দিকে তাকয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,

” আল্লাহর দোহায় লাগে নিচে নামান আমাকে। যে কেউ দেখে ফেলবে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
অগ্নি — রুমে।
ইয়ানা — যাব না আমি। আমাকে নামান নাহলে আমি চিৎকার করবো।
অগ্নির সোজাসাপ্টা উত্তর,,,,,
” করো চিৎকার ”
ইয়ানা চিৎকার দেওয়ার জন্য মুখ খুলতেই অগ্নি নিজের ঠোঁট দিয়ে ইয়ানার ঠোঁট চেপে ধরে। এরপর ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। ইয়ানা নিজের বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে। কি করলো উনি? নিচে বাবা – মা সবাই বসে আছে। একবার যদি ভুলে ও তাকায় তাহলে সব শেষ।
রুয়ানা ইয়ানার দিকে তাকাতেই দেখে ইয়ানাএখানে নেই। সাথে অগ্নি যেখানে বসে ছিলো সেটা ও খালি। চারদিকে চোখ বুলিয়ে খুঁজার সময় আচমকা চোখ যায় উপরের দিকে। সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। রুয়ানা টাস্কি খেয়ে বলে,,,,,

.” কি ভাগ্য আমার আপুরা। ছোট বোন হয়ে বড় বোনের রোমান্স দেখি। কয়জনের সেই ভাগ্য হয় বলো।
হল্লা পার্টি রুয়ানার কথার মানে বুঝতে না পেরে তার দৃষ্টি অনুযায়ী সেদিকে তাকায়। এতক্ষনে অগ্নি প্রায় সিঁড়ি পার করে ফেলেছে। এখন ও ইয়ানার ঠোঁট চেপে ধরে রেখেছে।
হল্লা পার্টি সেদিকে তাকিয়ে প্রথমে অবাক হলে ও এখন সবাই মিটিমিটি হাসছে। আরু রুয়ানার চোখ এক হাতে চেপে ধরে ইয়ানাদের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” তুই ছোট রুই। তর এইসব দেখার বয়স এখন ও হয় নি।
রুয়ানা চোখ থেকে আরুর হাত ছাড়িয়ে বলে,,,,,

” ছোট – বড় এর কি আছে সকলের সমান অধিকার। স্বাধীন দেশের নাগরিক আমি। আমার ও দেখার স্বাধীনতা আছে।
এতক্ষনে অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে তাদের চোখের আড়াল হয়ে যায়।
ইয়ানা তাদের দেখতে না পেয়ে রুহান বলে,,,,,
” ওরা চলে গিয়েছে এইবার নাচের দিকে ফোকাস কর।
অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে একদম বিছানার উপর বসিয়ে দেয়। ইয়ানা পারে না অগ্নিকে কাচা চিবিয়ে খেতে। অগ্নি ইয়ানাকে বসিয়ে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় ইয়ানা অগ্নির ব্লেজারের পিছনে টান দিয়ে বলে,,,,,
” লজ্জা – শরমের মাথা খেয়ে বসে আছেন তাই না? সবার সামনে এক তো কোলে তোলেছেন তার উপর এমন একটা বিশ্রি কাজ। যদি বাবা – মা দেখতো তাহলে কি হত ধারনা আছে আপনার?
অগ্নি ইয়ানার রাগান্বিত মুখের দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,,

“” দেখে নি তাই নিশ্চুপ থাকো।
ইয়ানা — যদি দেখত?
অগ্নি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ইয়ানার দিকে ঝুঁকে বলে,,,,
” দেখলে তো? তোমাকে ফাঁসির মঞ্চে নিশ্চয় দাড়া করাবে না। দেখে নি আব্বু – আম্মু। আমি খারাপ হতে পারি কিন্তু বেশরম নয়। যে বাবা – মায়ের সামনে বউ নিয়ে তামাসা করব। বউ আমার তাই আদর করব, স্পর্শ করব সব নিজের ব্যক্তগতভাবে লোকসমাজে নয়।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা চোখ ছোট ছোট করে মেঝেতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ইয়ানাকে এইরকম ঘাপটি মেরে বসে থাকতে দেখে অগ্নি হালকা সুরে বলে,,,,

” এইভাবে বসে কি ভাবছো?
ইয়ানা একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে থেকে বলে,,,,,
” ভাবছিলাম নির্লজ্জ আর বেশরমের মধ্যে প্রার্থক্য কোথায়। মানে সে বউকে কোলে তোলে নিয়ে চলে আসলে তাও চুমু খেতে খেতে সে নাকি আবার বেশরম নয়।
অগ্নি ইয়ানার কথার প্যাচ বুঝতে পেরে বলে,,,,,
“” মার খাবে তুমি আমার হাতে ইয়ানা। অগ্নি চৌধুরি কোনো কাজ করলে সেটা চারদিকে ফোকাস রেখেই করে। আমার আব্বু — আম্মু তারা না দেখলে তোমার বাদর বাহিনী ঠিক দেখেছে। ওরা দেখলে কি যায় আসে?
অগ্নির কথা শুনা মাত্রই ইয়ানা লাফ মেরে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,
“” কিহহ! গেলো আমার সব ইজ্জত গেলো। এর অবিচার কয়দিন চলবে আমার জানা নেই। একটা সূত্র পেয়েছে তারা আমাকে এখন পদে পদে লজ্জায় ফেলবে।
অগ্নি — তুমি লজ্জা পেতে যাবে কেনো?

ইয়ানা কটমট চোখে অগ্নির দিকে তাকায়।সে দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে। কথা বলে লাভ নেই হাজারটা যুক্তি দিয়ে বসিয়ে রাখবে। অগ্নি গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। অগ্নিকে দরজা লাগাতে দেখে ইয়ানা বিছানা থেকে নেমে বলে,,,,,,
” দরজা কেনো লাগিয়েছেন? সবাই নিচে আর আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কেনো?
অগ্নি ডিভানের সামনে কাউচের উপর বসে বলে,,,,,
“” যত খুশি নাচো এইবার।
ইয়ানা আশ্চর্য হয়ে বলে,,,,,
“” মানেহহ?

অগ্নি — তুমি তো নাচের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছিলে নাচো এইবার। আমি গান কানেক্ট করে দিচ্ছি।
ইয়ানা — কি ধরনের রশিকতা এইটা মি, চৌধুরি। আপনি যে একটা সাইকো সেটা জানেন।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হাসে। এরপর একটা গান কানেক্ট করে ইয়ানার দিকে এগিয়ে যায়। চোখে তার অদ্ভুত নেশা। অগ্নির হালকা ব্রাউন চোখের এমন নেশালো দৃষ্টি ইয়ানা পরখ করতে চাইছে। কিন্তু সে কাঙ্খিত ফলাফল মেলাতে পারছে না। এই চোখেই সে ঘায়েল হয় বার বার। বুক ভরা ঘৃনা এই লোকটার প্রতি কিন্তু যখন সেই ব্যক্তিটা নিজের উষ্ণ আলিঙ্গনে তাকে কাছে যখন টেনে নেয় তখন সে কোনো এক জগৎে হারিয়ে যায়। রাতের নিস্তব্দতায় যখন তাকে টেনে নিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে তখন বুক ফেটে চিৎকার বের হতে চায়,,,

“কেনো আপনি এরকম মি, চৌধুরি। কেনো নিজেকে হারিয়ে ফললেন অন্ধকার দুনিয়ায়”
অগ্নি ইয়ানার খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। ইয়ানা এখন ও অগ্নির চোখে চোখে রেখে তাকিয়ে আছে। অগ্নি ইয়ানার চাহনিতে আর ও গভীর হয়ে উঠে। ইয়ানার ডান হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে শাড়ীর আস্তরন ভেদ করে উন্মুক্ত কোমরে চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ইয়ানা তিরতির করে কেঁপে উঠে। ভিতরে অনুভুতির প্রজাপতিগুলো অবাধ্যভাবে উড়াউড়ি করতে থাকে। শরীরের রক্ত মনে হচ্ছে হিম শীতলভাবে জমে গিয়েছে। নড়ার করার ক্ষমতাটাও বিলুপ্তি হয়ে আসছে। অগ্নি ইয়ানার সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ায়। একে অপরের শ্বাস উপলব্দি করতে পারছে দুজন। ইয়ানাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অগ্নি স্বভাব সুলভ ঠোঁট কামড়ে হাসে। অগ্নি ইয়ানার কানে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,

‘ তোমার ঠোঁট, তোমার শরীরের গন্ধ, তোমার ভয়, তোমার হাসি, তোমার পায়ের নখ থেকে শুরু করে সব আমার। আর সেটা দেখার অধিকার শুধু অগ্নি নামক ব্যক্তির আর কারোর নয়।
ইয়ানা চমকে উঠে। একইভাবে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে সে বুঝার চেষ্টা করছে কর‍তে কি চাইছে উনি। অগ্নি চৌধুরির মত ব্যক্তি মিউজিক অন করেছে ভাবাটা যেনো কঠিন হয়ে পড়ছে।
মিউজিক বাজছে,,,,,,
অগ্নি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ইয়ানার হাত ধরে ঘুরিয়ে নেয়। ইয়ানা শুধু অবাক হয়ে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।

Tum Jaahan Main Wahan
Me Agar Kahoon Hum safar meri
Apsara Ho TumYa koi Pari
Tarif Ye Bhai Tu Such Hai Kuch Bhai Nehi
অগ্নি ডান পা সামনের দিকে বাড়ায়, ইয়ানা ও তাল সামলে নিয়ে বাম পা পেছনে সরায়।
ধীরে, তাল মেলে। মনে হচ্ছে সময় থেমে গেছে।
Tumko Paya To Jese Khoy Hoon
Khena Chahun Bhai To Tumse Kya Kahoon
অগ্নি ইয়ানার উন্মুক্ত কোমরে ধরে নিচ থেকে হালকা নিচু করে।
ইয়ানা পেছনে হেলে পড়ে, চোখ বন্ধ করে যেন নিজেকে তার ভালোবাসার হাতে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়।
ইয়ানার পা মাটিতে থেকে হালকা টান তৈরি হয়।

Tumko Paya To Jese Khoya Hoon
Khena chahun Bhai To Tumse Kya Kahoon
দুই শরীর কাছাকাছি আসে।বুক একত্রে লাগে। শ্বাস-প্রশ্বাস একত্রে বাজে।
একে অপরকে জড়িয়ে ধরে নরম তাল অনুযায়ী ধীরে ধীরে ঘোরে।
kidi Jabaanme Bhai Woh Lefz Hi Nehin
Ki Jinme Twm Ho Kya Tumhe Bata Sakoon
Me Aagar Kahoon
Me Agar Kahoon Hum safar meri
Apsara Ho TumYa koi Pari
Tarif Ye Bhai Tu Such Hai Kuch Bhai Nehi

তাকিয়ে থাকে ইয়ানা অগ্নির দিকে মিউজিক অফ হয়ে যায়।
অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে আদেশের সুরে বলে,,,,,,,
” শখ মিটিছে? আহ্লাদ পুরন করে দিয়েছি নিচে গিয়ে যাতে আর লাফালাফি না করা হয়। আমি বাহিরে যাচ্ছি এসে সিসিটভি ফুটেজ চেক করব। যদি আমার অবাধ্য কিছু পায় তাহলে কি করব সেটা তোমার একটু একটু ধারনা আছে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তব্দা লেগে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা যাতে নিচে নাচতে না পারে তাই রুমে এনে নাচ করালো সাথে নিজেও তাল মিলালো। আবার এইভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কত নাম্বার সাইকো হলে এমন করে?
অগ্নি বেরিয়ে যায়। সাথে ইউভি আর রায়ান ও যায়। তাদের দরকারি কিছু কাজ মনে পড়ে যায়। তাই মাঝ পথে রেখেই তিন জন বেরিয়ে পড়ে বাড়ি থেকে।

প্রোগ্রাম শেষ হয়। প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এর মধ্যে হল্লা পার্টি তখনকার ঘটনা নিয়ে লজ্জা দিতে ভুল করে নি। ইয়ানা পারে না তখন অগ্নির মাথা ছিড়ে খেতে। পাগল লোক কখন কি করে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। সবাই আছে এখানে শুধু উনি নেই। এখানে যদি রক্তের গন্ধ পেত তাহলে কেউ না থাকলে ও উনি ঠিক থাকত। বিষিয়ে উঠে ইয়ানার মন।
খাওয়ার এক পর্যায়ে সুমু বলে,,,,,

“” ইয়ানা কাল ভার্সিটিতে যাবি? নিজের ভার্সিটিটা একবার ঘুরে দেখে আয়। সবার সাথে দেখা করে ও আসবি।
ইয়ানা মুখ তুলে সুমুর দিকে তাকায়। এরপর কিছু একটা ভেবে বলে,,,,,
” যাওয়ার তো আকাশ পরিমান ইচ্ছে আমার। কিন্তু উনার থেকে অনুমতি নিতে হবে।
আরু– রাজি করিয়ে নিবি চুমু-টুমু খেয়ে। অথবা অন্যকিছু করে। তর জন্য রাজি করানো কঠিন ব্যাপার নাকি? ভাইয়া যেভাবে তকে আলিঙ্গন করে উপরে নিয়ে গেলো ভাবছি রুমে কি করিস তরা।
ইয়ানা আনমনে বলে,,,,,

‘ যুদ্ধ আর কাটাছিড়া।
আরু কিছুটা অবাক হয়ে বলে,,,,,
” মানেহহ”
ইয়ানা নিজের হুঁসে এসে বলে,,,,,
“” কিছু না। কাল সকালে তদের জানাচ্ছি দেখি অনুমতি দেয় কি না।
সুমু– ওকে ডিয়ার। তাহলে আমরা আসছি।
ইয়ানা মন খারাপ করে বলে,,,,,
” থেকে যা। কবে ধরে তদের সাথে রাতের আড্ডা হয় না।
সুমু— সম্ভব নয় ইয়ানা। যদি কখনো ও বাড়ি যাস তখন না হয় একদিন সময় করে সবাই আড্ডায় মেতে উঠব।
রুহান — হুম সেটাই।
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

“” ওকে মনে থাকে যেনো?
আরু টিপ্পনী মেরে বলে,,,,,
” আমাদের মনে থাকবে কিন্তু তুই যদি জামাইর আদর খেয়ে ভুলে যাস তাহলে??
ইয়ানা চোখ রাঙ্গিয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” আরুঅঅঅঅ”
আরু হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” মজা করছি ইয়ার। চোখ লাল করে ভয় দেখাস কেনো.? তাহলে আজ আমরা আসি। নিজের খেয়াল রাখিস জান।
ইয়ানা রুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

” থেকে যা রুই আমি আম্মুকে জানিয়ে দিব।
রুই — না আপু কাল আমার স্কুল আছে। সকালে প্রাইভেট। থাকলে সব মিস হয়ে যাবে। চিন্তা করো না আন্টি গাড়ি দিয়ে পাঠাচ্ছে একদম বাড়িতে নিয়ে দিয়ে আসবে।
ইয়ানা মলিন চোখে বোনকে জড়িয়ে ধরে। সবাই সবার থেকে বিদায় জানিয়ে বের হয়ে পড়ে। ইয়ানার চোখের কার্নিশে পানি চলে আসে। কত দিন পর সবার সাথে দেখা হয়েছিলো। আবার কবে চলে যাবে কে যানে? ইয়ানা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে উপরে চলে যায়। আহিয়া অনেক আগেই সবার থেকে বিদায় নিয়ে উপরে চলে গিয়েছিলো। নিচে এখন কেউ নেই কয়েকজন সার্ভেন্ট ছাড়া।
ইয়ানা রুমে যেতেই পেটটা হালকা ব্যাথা করে উঠে। বিছানার কাছে যেতে যেতে পেটের ব্যাথা আর তীব্র হয়। ইয়ানা দাঁত কিড়মিড়িয়ে সেই ব্যথা সহ্য করতে থাকে। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। হালকা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। সেলিনা হোসেনের কথা বড্ড মনে পড়ছে। ইয়ানা ফ্রেশ না হয়েই ধীরে ধীরে বিছানায় গিয়ে বালিশে শরীর এলিয়ে দেয়। পাটাকে কুকড়িয়ে তল পেটে শক্ত করে চেপে ধরে রাখে।

রাত প্রায় দশটার দিকে। এত নাচানাচির কারনে সবাই ক্লান্ত। অরিদ , আহিয়া সবাই ঘুমাচ্ছে। নিস্তব্দ চৌধুরি ভিলা। চারদিকে লাইটের ঝিকমিক আলো আর গার্ডদের আনাগোনা।
অগ্নির গাড়িটি এসে থামে চৌধুরি ভিলার সামনে। চুলগুলো এলোমেলো যা তার রুলসের বাহিরে। চোখমুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ক্লান্ত। কিন্তু মুখে গম্ভীরতা থাকার কারনে ক্লান্ত চেহারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। অগ্নি লিভিং রুমের কাছে এসে ফিঙ্গার টাচ করে ভিতরে প্রবেশ করে। অগ্নি সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে নিবে ঠিক তখন কেউ আদেশ সুরে বলে,,,,,,

” দাড়াও আহান।
অগ্নি আদেশ করা ব্যক্তিটার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,,,,
‘” আহান নয় বলো অগ্নি চৌধুরি।
শিখা চৌধুরি অগ্নির কাছে এসে বলে,,,,,
” চৌধুরি ট্যাগ কেনো লাগিয়ে রেখেছো এইটা ও মুছে দাও।
অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,,
” ইচ্ছে হয়েছে তাই। মুছতে পারব না। এই নামেই আমার সম্রাজ্য চলে।
শিখা চৌধুরি প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে,,,,,
“” স্বাভাবিক হয়ে আসো। কানাডায় যাওয়ার আর প্রয়োজন নেই। চৌধুরি ইন্ডাস্ট্রিজ তোমার হাতে। এইটা দেখাশুনা করো।
অগ্নি মায়ের দিকে এগিয়ে এসে বলে,,,,

” কানাডায় আমি যেতে চাই নি কিন্তু তোমরা পাঠিয়েছিলে। কান্না করেছিলাম। হাতে – পায়ে ধরেছলাম তোমার আর আব্বুর আমাকে তোমাদের থেকে আলাদা করো না, আমি থাকতে পারব না। কিন্তু তোমরা বলেছিলে মানিয়ে নিলে থাকতে পারব। আমি তো মানিয়ে নিয়েছি আর থাকছি ও তাহলে এখন আসতে কেনো বলছো?
শিখা চৌধুরি ছেলের কথা শুনে বলে,,,,,
” তোমাকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য পাঠিয়েছিলাম জানোয়ার হওয়ার জন্য নয়। তোমাকে মানিয়ে নিতে বলেছিলাম যাতে তুমি নিজের মত করে থাকতে পারো আমাদের কথা মনে করে কষ্ট অনুভব না করো কিন্তু দেশ থেকে একদম আলাদা হতে বলে নি।

অগ্নি — তোমরা তোমাদের স্টাইলে পাঠিয়েছিলে আর আমি আমার স্টাইলে মানিয়ে নিয়েছি। যদি না পাঠাতে আমি এমন নিয়তির সম্মুখীন হতাম না আর না ভিতরে ধ্বংসের লাভা জ্বলে উঠত। আর না আমি এমন হয়ে উঠতাম। আর এমন হওয়াতে আমি আর ও বেশি খুশি তিল পরিমান ও আফসোস নেই ভিতরে।
শিখা চৌধুরি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,,,,
” মেয়েটাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছো?
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,,
” ও তোমাকে বলেছে আমি কষ্ট দিয়েছি।
শিখা চৌধুরি দৃঢ় কন্ঠে বলে,,,,,,,
” কেনো গায়ে হাত তুলবে গিয়ে?
অগ্নি গম্ভীর হেসে বলে,,,,,,,,

” আমার বউ ও। আমার পুরোটা জীবন এই মেয়েটাকে ঘিরে। কিন্তু মেয়েটা মানতেই চায় না। শুধু বলে চলে যাব আপনার কাছ থেকে অনেক দুরে। তখন বলো আম্মু কি করব? এতটা ধৈর্যশীল আমি নয়। আর ওর ক্ষেত্রে তো তিল পরিমান ও না। একে গায়ে হাত তুলা বলে না আম্মু। ওর যায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতক্ষনে জবান বন্ধ করে ফেলতাম।
শিখা চৌধুরি — সবাই আর ইয়ানা এক নয়। ও তোমার বউ।

অগ্নি — সেটাই তো মাথায় রাখি। বউ আমার বন্ধ ঘরে কি করব সেটা একান্ত ওই আমার। বউকে আঘাত করব যে যায়গায় মলম পুনরায় আমি ওই লাগাব। আমি হাজারটা পাপ করতে পারি, রক্তে গোসল করতে পারি কিন্ত নিজের দায়িত্ব থেকে কখনো সরে দাঁড়ায় নি। ওর জীবনের প্রথম আর শেষ ব্যক্তি আমি ছিলাম আর আমি ওই থাকব।আমাকে সে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিবে। আমার থেকে যদি কাউকে বেশি প্রাধান্য দেয় তাহলে তার জন্য কবর খুঁড়ে নেওয়া আমার বা হাতের কাজ। সে জায়গায় যদি ওর বাবা – মা ও থাকে আই ডোন্ট কেয়ার। হাত একটু ও কেঁপে উঠবে না।
শিখা চৌধুরি — তুমি একটা সাইকো অগ্নি।
অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,,,
” আই নো আম্মু সেটা তোমার বউ মা ও বলে।
শিখা চৌধুরি — ভুল তো কিছু বলে নি।
অগ্নি আর কিছু বলে না। গম্ভীরতা নিয়ে বিনা বাক্যে উপরে চলে যায়। শিখা চৌধুরি ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই হাত দিয়ে মুছে ফেলে নিজের রুমে দিকে চলে যায়।

অগ্নি রুমে ডুকে হতভাগ আর হতভম্ভ। কারোর ফোঁপানোর শব্দ পেয়ে বুকটা ছেৎ করে উঠে। এই শব্দ ইয়ানার। কি হয়েছে ওর। এইভাবে ফুঁপাচ্ছে কেনো? কখনো তো এইভাবে কান্না করে না। ইভেন অগ্নির সমস্ত অত্যার মুখ বুজে সহ্য করে নেয় পুনরায় জিজ্ঞাসা করে না এত ব্যাথা কেনো দিয়েছেন। তাহলে আজ কি হলো তার। অগ্নি রুমের লাইট অন করে। ইয়ানাকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে অগ্নির হৃদয় থমকে যাওয়ার উপরক্রম। অগ্নি দ্রুত ইয়ানার কাছে গিয়ে তার মাথাটা উচু করে তার দিকে মুখ ঘুড়ায়। ইয়ানার চোখ, মুখ ফুলে গিয়েছে একদম। পুরো মুখ ,
নাক লাল হয়ে গিয়েছে একদম। মনে হচ্ছে মুখ থেকে রক্ত ঝরছে।
অগ্নির ভিতরটা হাহাকার করে উঠে। ইয়ানাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,,

” এই বউ কি হয়েছে তোমার? এমন বিধ্বস্ত অবস্থা কেনো হয়েছে ?
অগ্নির উপস্থিতি পেয়ে ইয়ানা চুপ হয়ে যায়। সামান্য লজ্জা ঝেঁকে বসে। ইয়ানাকে চুপ থাকতে দেখে অগ্নি রাগ দেখিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,,,
” জিজ্ঞাসা করছি না কি হয়েছে। শুনতে পাচ্ছিস না আমার কথা? তর নিশ্চুপ আমার শ্বাস থমকে যাচ্ছে বুঝতে পারছিস না ফাজিলের বাচ্চা।
অগ্নির ধমকে ইয়ানা কেঁপে উঠে। অগ্নির রাগান্বিত চেহারার দিকে এক পলক তাকিয়ে মিহি সুরে কিছু একটা বলে।
অগ্নি এইবার কিছুটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। ইয়ানাকে এইভাবে লজ্জায় নুইয়ে যেতে দেখে অগ্নি শান্ত কন্ঠে বলে,,,,
” এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে আমার সামনে লজ্জা পাওয়ার কি আছে তোমার। এমন কোন জিনিস আছে যা আমি আজ ও উন্মুক্ত করতে পারি নি।

ইয়ানা অগ্নির এমন বাক্য শুনে ইয়ানা পেটে হাত দিয়ে বলে,,,,,,,
” আমার এমন ব্যাথা সবসময় হয় না। আগে দুই তিন বার হয়েছিলো । জানি না আজ কেনো হচ্ছে আবার। আপনাকে ফোন করার মত ক্ষমতা ছিলো না আমার।
ইয়ানা ব্যাথা কথা বলতে পারছে না তবুও কয়েকটা শব্দ উচ্চারন করে অনেক কষ্টে।
অগ্নি ইয়ানার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বলে,,,,,
” বেশি ব্যাথা করছে জান?
ইয়ানা মাথা দিয়ে হ্যা জানায়।
অগ্নি ইয়ানার দিকে অধৈর্যের ন্যায় তাকিয়ে বলে,,,,
” চলো ডাক্তারের কাছে যায়।

অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। এইটা তো ওর জন্য নরমাল। তার জন্য ডাক্তারের কাছে কেনো যেতে হবে। আল্লাহ এই পাগল লোক কি করবে কে জানে?
অগ্নি ইয়ানাকে কোলে তোলার জন্য নিচে হাত রাখতে যাবে এমনি ইয়ানা সরে যায়। সরে গিয়ে সাথে সাথে নাক মুখ খিঁচে ফেলে। এরপর মিহি সুরে বলে,,,,,,
” ছুঁবেন না, আপনার শরীরে লাগবে। প্লিজ আল্লাহর দোহায় লাগে এত রাতে পাগলামি করবেন না। বিশ্বাস করুন এইটা বেশিক্ষন থাকে না মাত্র কিছু ক্ষন থাকবে। কাল আবার নরমাল হয়ে যাব। কিছুক্ষন রেস্ট নিলে এমনি সেরে যাবে। বিশ্বাস করুন আমার কথা।
অগ্নি বিছানায় এক পলক তাকিয়ে দেখে ইয়ানার নারীসত্তায় সাদা বেড শিট লাল হয়ে গিয়েছে। অগ্নি ইয়ানার কথায় কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,,,,,,

” সাথে করে ন্যাপকিন নিয়ে আসো নি?
ইয়ানা নিচু আওয়াজে বলে,,,,,,
” আমার মনে ছিলো না ভুলে রেখে আসছি।
অগ্নি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
” তোমার না হয় মনে ছিলো না। আমি কি করে ভুলে গেলাম আজকের তারিখের কথা।
অগ্নি ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বলে,,,,,
” কিছুক্ষন বসো আমি আসছি।
অগ্নি ইয়ানার দিকে আর না তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা আহিয়ার রুমের সামনে চলে যায়। আহিয়ার রুমে দরজা খোলা এরপর ও অগ্নি বাহির থেকে কয়েকবার ডাক দেয়। আহিয়া অগ্নির কন্ঠ পেয়ে কিছুটা নড়েচড়ে উঠে। অগ্নি আরেকবার ডাক দিলে ঘুম ছুটে যায়। ঘুমঘুম চোখে উঠে এসে বলে,,,,,

” কি হয়েছে দাদাভাই? তুমি এখানে?
অগ্নি অস্বস্থিতে পড়ে যায়। কখনো কল্পনা ও করে নি এমন একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়াবে। হাজারটা খুন করলে ও ভাবায় না কিন্তু সামান্য একটা জিনিস চাওয়াতে যেভাবে ভাবাচ্ছে।
অগ্নি — স্যানেটারি ন্যপকিন থাকলে দে? ইয়ানার প্রয়োজন।
আহিয়া একইভাবে ঘুমঘুম চোখে একটা প্যাকেট হাতে ধরিয়ে বলে,,,,,
” আমি আসব দাদাভাই? বউমনির শরীর কি অসুস্থ হয়ে পড়েছে?
অগ্নি আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” প্র‍য়োজন নেই। আছি আমি সাথে আর আম্মু কে ও জনানোর দরকার নেই। শুধু শুধু টেনশন করবে।
আহিয়া — তুমি তাদের কথা ভাবছো দাদাভাই? বিশ্বাস হচ্ছে না।
অগ্নি কোনো কথা না বলে শুধু মৃদু আওয়াজে বলে,,,,

” ঘুমাহ।
এরপর চলে যায়। আহিয়া পিছন থেকে উচ্চস্বরে বলে,,,,,
” ভাইয়া তল পেটে গরম পানির হালকা ছেক দিও। পারলে হট ব্যাগে নিয়ে দিও। আর আদা দিয়ে চা অথবা গরম পানি।
অগ্নি আহিয়ার কথা শুনে গম্ভীর হাসি দেয়। আহিয়া কিছুক্ষন অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে পুনরায় দরজা আটকে দেয়।
অগ্নি রুমে গিয়ে ইয়ানাকে পাজা কোলে তোলে নেয়। আচানক কোলে তোলাতে ইয়ানার বুঝতে বেগ পেতে হয়। এরপর অগ্নির উপস্থিতি বুঝতে পেরে হালকা আওয়াজে বলে,,,,,

” আপনার শরীরে রক্ত লাগবে।
অগ্নি ওয়াশরুমে প্রবেশ করতে করতে বলে,,,,,
” এইটা আমার বউয়ের গর্ব।সেটা আমার জন্য কোনো আবর্জনা নয় যে এড়িয়ে যাব। চুপচাপ থাকো বিয়াদপ।
ইয়ানা কিছু বলে না। অগ্নির মৃদু ধমকে চুপ হয়ে যায়। অগ্নি ইয়ানাকে দাড়া করিয়ে বলে ,,,,,
” ড্রেস চেইঞ্জ করে নাও। তুমি একা পারবে নাকি আমি সাহায্য করব?
ইয়ানা হালকা আওয়াজে বলে,,,,,,
‘ পারব আমি চিন্তা করবেন না।
অগ্নি ইয়ানার লজ্জা দেখে বিষয়টাকে নিয়ে আর ঘাটায় নি। নিশ্বঃব্দে বেরিয়ে আসে। বিছনার বেডশিটটা তুলে নতুন আরেকটা বেডশিট বিছিয়ে দেয়। কিছুক্ষন পর ইয়ানা বের হলে অগ্নি কোলে তোলে এনে বিছনায় শুইয়ে দিয়ে বলে,,,,,

“” রেস্ট নাও আসছি আমি।
অগ্নি চলে যায় কিচেনের কাছে। এই প্রথম সে কিচেন রুমে পা রেখেছে। জানা নেই এই মেয়ের জন্য আর কত অনাকাঙ্খিত কাজ করতে হবে।চারদিকে পিনপিন নিস্তব্দতা। অগ্নি ধীর পায়ে এগিয়ে যায় কিচেনের ভিতরের অংশে। এরপর শব্দছাড়া পানি গরম করে হট ওয়াটার ব্যাগের ভিতর ভরে নেয়। ইউটিউব দেখে দেখে আদা দিয়ে চা করে একটা পাত্রে নেয়। এরপর চারদিকে তাকায় বাড়ির সার্ভেন্ট কেউ জেগে আছে কি না। আর দেখলেই বা। নিজের বউয়ের জন্য ওইত করছে। অগ্নি রুমে ডুকে মৃদু আওয়াজে দরজা লাগিয়ে ইয়ানার কাছে চলে যায়। মেয়েটা ব্যাথায় কিভাবে কপোকাত হয়ে আছে। অগ্নি ইয়ানার মাথাটা নিজের বক্ষের মাঝে নিয়ে হট ওয়াটার ব্যাগটা চেপে ধরে। এরপর আদা দেওয়া চা টা ইয়ানাকে খাইয়ে দিয়ে একটা ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়ায়।
ইয়ানা কিছুটা অবাক হয়ে বলে,,,,,,

” কেনো এত রাতে সার্ভেন্ট ডাকতে গেলেন? ওরা ওত মানুষ সারাদিন পরিশ্রম করে একটু বিশ্রাম নেয়।
অগ্নি ইয়ানার পেটে হট ওয়াটার ব্যাগটা চেপে ধরে বলে,,,,
” সার্ভেন্ট ডাকতে যাব কেনো?
ইয়ানা — তাহলে কে বানিয়ে দিয়েছে আম্মু?
অগ্নি — নাহহ
ইয়ানা — আহিয়াকে আবার ডাকতে গেলেন কেনো?
অগ্নির এইবার ধৈর্যের সীমা পার হয়ে যায়। কেনো ও কি করতে পারে না। অগ্নি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,
” আমাকে তোমার চোখে লাগে না বিয়াদপ?
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে অগ্নির দিকে তাকায়। জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্চর্য সে আজ হলো মনে হয়। ইয়ানা টস্কি সুরে বলে ,,,,,,

” মাফিয়া লিডার অগ্নি চৌধুরি ও তাহলে কিচেন রুমে যায়?
অগ্নি — এমন অনেক কাজ ওই তুমি আমাকে দিয়ে করিয়েছো এইটা আর এমন কি? বিয়ে করেছি, আসক্তি জন্মেছে, অনুভুতির মাত্রা প্রখর যার শেষ নিশ্চত ধ্বংস, বউ হয়েছে তাই করতেই পারি অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ইয়ানা তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। কে বলবে এই লোকটার ভিতরে এক অন্ধকার জগৎ বাস করে।লোকটা ভালোবাসতে জানে না। এইসব কি ভালোবাসার মধ্যে পড়ে না। ভালোবাসা কি মুখে উচ্চারন করতে হয়?
ইয়ানা নিজের সমস্ত ভাড় অগ্নির উপর ছেড়ে দেয়।
অগ্নি — বেশি ব্যাথা করছে জান? আমি আর সহ্য করতে পারছি না চলো ডাক্তারের কাছে যায়।
ইয়ানা — প্রয়োজন নেই। আপনি শুধু আমার পাশে থাকুন। নাচার কারনে পা সহ ব্যাথা করছে।
অগ্নি কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,

” নাচবে না? চলো আবার গিয়ে নাচি? নাচার জন্য আমার জান নিয়ে নিচ্ছিলে।
ইয়ানা — সেই ক্ষমতা থাকলে ভালো ওই ছিলো।
অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,,
” দিয়েই তো রেখেছি।
ইয়ানা — সঠিক সময় আসুক। প্রয়োজন পড়লে দুজনের উপর ওই কাজে লাগাব।
অগ্নি — ব্যাথা কমেছে আগের থেকে?
ইয়ানা — হুম অনেকটা।
অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে শুইয়ে পড়ে। ইয়ানার মাথাটা এখন ও তার বক্ষে। অগ্নি ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৩

“ঘুমাও। পাশে আছি আমি তোমার। কোনো ভয় নেই। তোমার একটা মৃদু চিৎকার বের হওয়ার আগেই আমি তোমাকে আগলে নিব।
ইয়ানা — আপনাকে ও ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন।
অগ্নি কিছু বলে না। শুধু ইয়ায়ানার পেট থেকে বার বার হট ব্যাগটা এপিঠ ওপিঠ করে দিচ্ছে। অন্য হাত দিয়ে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আসলেই কি এইটা অগ্নি চৌধুরি? ইয়ানা অসুস্থ হয়ে পড়লে জ্বর কিংবা ঠান্ডা যায় লাগুক প্রত্যেকবার যেনো অন্য এক অগ্নি চৌধুরিকে দেখতে পায়। যার চোখে ব্যকুলতা থাকে। কিন্তু অন্যসময় থাকে শুধু হিংস্রতা। ইয়ানা এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে । অগ্নি ইয়ানার মাথায় চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৫