অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪১

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪১
লিজা মনি

রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে পুরো খাট সাজানো হয়। সাদা বিছানার চাদরের উপর লাল গোলাপের পাপরি লাভ আকারে আর্ট করা। চারদিকে ফুলের গন্ধে মোঁ মোঁ করছে।
হল্লা পার্টি, মিরা, রুয়ানা সবাই এসেছে সুমুর সাথে। যেহেতু কাল চৌধুরি বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে পার্টির অনুষ্ঠান তাই শিখা চৌধুরি সবাইকে নিয়ে এসেছে। সুমু রুমে আর রায়ান সেই এক ঘন্টা ধরে লিভিং রুমে বসে আছে। সাজিদ চৌধুরি বিয়ে উপলক্ষে কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন। আর সে মাথা পেতে শুনছে। কিন্তু সব ধ্যান- ধারনা রুমে পড়ে আছে। রায়ানকে এমন হাঁশফাঁশ করতে দেখে শিখা চৌধুরি সাজিদ চৌধুরিকে ইশারা করে রুমে পাঠানোর জন্য। সাজিদ চৌধুরি ও বুঝতে পেরে গলা কেঁশে বলে,,,,,

“” রায়ান রুমে যাও এখন। অনেক রাত হয়েছে এখন রুমে যাওয়া প্রয়োজন তোমার।
রায়ান যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। একটু ভাব নিয়ে উঠতে উঠতে বলে,,,,,,
“” আমি তাহলে যায় আঙ্কেল। এত রাত হয়েছে আর বাহিরে থাকার কোনো মানে হয় না। গুড নাইট।
সাজিদ চৌধুরি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,
“” গুড নাইট।
রায়ান আর এক মুহূর্ত দেরী না করে প্রস্থান করে। সাজিদ চৌধুরি আর শিখা চৌধুরি সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। রায়ান আর ইউভিকে তারা নিজেদের সন্তানের মত ভালোবাসে। বাড়ি ভর্তি মেহমান চৌধুরি বাড়িতে। সাজিদ চৌধুরি কোনো কিছুতেই কমতি রাখে নি।
সাজিদ চৌধুরি শিখা চৌধুরির উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তোমার বিয়াদপ ছেলে আর কি কখনো বাংলাদেশে আসবে না?
শিখা চৌধুরি আনমনে বলে,,,,,,
“বউ রেখে গিয়েছে। তোমার মনে হয় আর আসবে না।
সাজিদ চৌধুরি তাচ্ছিল্য সুরে বলে,,,,,,
” ওর আবার বউ! বুঝে সম্পর্কের মর্ম কাকে বলে? কখনো সমাজ মেনেছে আর না কখনো পরিবার মেনেছে?
শিখা চৌধুরি– আড়ায় বছর থেকে তিন বছর হতে যাচ্ছে তাদের বিয়ের। কখনো শুনেছো ওদের বিচ্ছেদের খবর।
সাজিদ চৌধুরি — যদি তার উত্তর খুঁজতে চাও তাহলে সেটা হচ্ছে ইয়ানা মায়ের ধৈর্য। মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিলাম।
শিখা চৌধুরি — সেই ধৈর্য দিয়েই কুলষিত মনকে ফুলের বাগান গড়ে তুলবে। অগ্নি ইয়ানা বলতে পাগল। শুধু সময়ের অপেক্ষা করো।
সাজিদ চৌধুরি — করতে বলছো?
শিখা চৌধুরি — হুম।

রায়ান একটা কল শেষ করে রুমে ডুকতে নিবে এমন সময় থমকে যায়। কারন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সব বাদরবাহিনী। রায়ান কপাল কুচকে তাকায় সেদিকে। অরিদ এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঠাট্টা করে বলে,,,,,
” আমাদের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। ভিতরে যে আছে তার দিকে সারারাত তাকিয়ে থাকো। বাট এখন আমার পাশে ভিখারীগুলোকে দেখছো, এদের টাকা দিয়ে বিদায় করো।
অরিদের কথা শুনে মিরা সেদিকে তাকায়। সে আর ইয়ানা সুমুর সাথে বসে ছিলো। সেইদিনের ঘটনার জন্য তার এখন ও ক্ষমা চাওয়া হয় নি।
অরিদের কথায় আহিয়া ফুঁসে উঠে বলে,,,,,

“‘ ভিখারী কাকে বলছিস ভাইয়া? আমাদের টিমে তুই ও আছিস সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
রুয়ানা — নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করে আগে আসল কাজ করা উত্তম। বলছিলাম রায়ান ভাইয়া বেশি না মাত্র দশ লক্ষ টাকা দিন আমরা চলে যায়।
রুয়ানার কথায় আরু চোখ বড় বড় করে তাকায়। বলে কি এই মেয়ে। রাস্তা আটকিয়েছে ভালো কথা তাই বলে দশ লক্ষ টাকা!
রুয়ানার কথায় রায়ান অবাক হয়ে বলে,,,,,,
“” তোমাদের সবাইকে বিক্রি করলে দশ লক্ষ টাকা পাব কিনা সন্দেহ। এক টাকাও দিতে পারব না রাস্তা ছাড়ো সবাই।

আহিয়া — আমাদের বিক্রি করতে হবে না ভাইয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ভাব নিয়ে হাসি দিব দেখবে দশ লক্ষ না দশ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাব।
আহিয়ার কথায় রুহান চট করে তাকায়। দেখতে সাইজ কম বাট কথাতে কি পাকা।
রায়ান আহিয়ার ভাব নেওয়া মুখ দেখে বলে,,,,,,,
” তর বয়স কত আহি? ডাক দিব শিখা চৌধুরিকে হুম।
আহিয়া চুপসে গিয়ে বলে,,,,,
” আমাদের কথায় বড় আম্মুকে কেনো ডাকতে হবে ভাইয়া। টাকা দাও চলে যায়।
রায়ান — কমিয়ে বল। এত টাকা আমার কাছে এখন নেই।
এর মধ্যে ইউভি আসে। রায়ানকে তাদের সাথে কথা
কাটাকাটি করতে দেখে বলে,,,,,

“” টাকার চাহিদা কমা এখন ওই দিয়ে দিব।
অরিদ — কিপটামি কেনো শুরু করলে এইভাবে?
ইয়ানা সব কিছু এতক্ষন দেখছিলো। সে ধীর পায়ে এগিয়ে আসে সেখানে। এরপর গলা কেঁশে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” দ্যা গ্রেট ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক অগ্নি চৌধুরির প্রান প্রিয় বন্ধদের কাছে যদি লক্ষ টাকা না থাকে ব্যাপারটা বেমানান ভাইয়া। আপনাদের হাতের এক ইশারাতে তো পুরো কানাডা কেঁপে উঠে। সামান্য লক্ষ টাকা বের করতে আপনাদের কলিজা কেনো কেঁপে উঠছে ভাইয়া? আজকের রাতটা নিশ্চয় মিস করতে চান না। যত দ্রুত টাকা দিবেন তত দ্রুত রুমে প্রবেশ করবেন। টাকা আপনার হাতে আর সময়টা আমাদের হাতে।
সবাই ইয়ানার দিকে তাকায়। সবাই কিছু মুহূর্তের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যায়। রুহান তারা কেউ ইয়ানার কথার অর্থ বুঝতে না পারলে ও ইউভি, রায়ান আর অরিদ ঠিক বুঝেছে।
ইউভি আড়চোখে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর রায়ানের উদ্দ্যেশে হিসহিসিয়ে বলে ,,,

” ভুল মানুষ চলে এসেছে দোস্ত। অগ্নি যদি ভুলে ও জানতে পারে ইয়ানা টাকা চেয়েছে অথচ তুই দেস নি। এই অপরাধে তকে সমুদ্রে নিয়ে চুবিয়ে আনবে।
ইউভির কথায় রায়ান ঢোক গিলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,,,
” ভয় কেনো দেখাচ্ছিস ভাই? দিচ্ছি তো।
এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আওড়ায় ,,,,,,
” যার কথা বলছো সে তো নেই। আমার কাছে নোট ও নেই।
ইয়ানা — — কার্ড তো আছে ভাইয়া। আমাদের কার্ড দিয়ে দিন।
রায়ান সর্বশেষ উপায় না পেয়ে পার্স থেকে একটা ব্যাংকিং কার্ড দিয়ে সাইন করে দেয়। ইয়ানা কার্ড টা নিয়ে বলে,,,,,

” থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
এরপর সবাই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। ইয়ানা অরিদের কাছে কার্ডটা দিয়ে বলে,,,,,
“” নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও।
আহিয়া — তুমি নিবে না বউমনি?সব ক্রেডিট তো তোমার।
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আমার এখন টাকার প্রয়োজন নেই আহিয়া। তোমরা নিলেই আমার নেওয়া হবে।
এইদিকে ইউভি রায়ানের কানে ফিসফিস করে বলে,,,,,
“” বসর ঘর আমি সাজিয়েছি ব্রো। তদের বাসরের পর আমার বিয়েটার দিকে নজর দিছ। বউটা এখন ও আমার পিচ্চি। আর চাচা বানানোর ব্যবস্থা করিস দ্রুত।
রায়ানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইউভি চোখ টিপে হাসতে হাসতে চলে যায়।
রায়ান বুক ভরা শ্বাস নিয়ে ভিতরে ডুকে। সুমু উপলব্দি করতে পারছে উনি ভিতরে ডুকছে। অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠে। কাঁপছে তার পুরো শরীর। যাকে দুই দিন আগে পর্যন্ত ভাইয়ের নজরে দেখত সে আজ তার স্বামী। কি করবেন এখন উনি? স্বামীর অধিকার চাইতে কাছে আসবেন? সুমু কাঁপছে অসম্ভব ভাবে। গলা শুকিয়ে আসছে বার বার। শাড়ির এক খন্ড শক্ত করে চেপে ধরে।

রায়ান নিজেও খুব নার্ভাস। জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের সাথে সে এক রুমে। এই মেয়েটাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসেছিলো। ভাগ্য ও তার সহায় ছিলো বলে আজ সে তার বউ। আর কি চাই তার? প্রয়োজন নেই জীবনে আর কিছুর। যাকে পাওয়ার তাকে তো যুদ্ধ ছাড়ায় পেয়ে গিয়েছে।
রায়ান খুব শান্তভাবে বিছানার এক পাশে বসে। সে সুমুর কাঁপা অবয়ব খুব ভালোভাবেই উপলব্দি করতে পারছে।
সামান্য মুচকি হেসে সুমুর উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,
” নার্ভাস হওয়ার প্রয়োজন নেই। তোমার সম্পর্কে আমার সব জানা, নতুন করে আর কি জানব? যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

রায়ান এইটা বলে বেলকনিতে চলে যায়। এসির নিচে থেকে ও শরীর দিয়ে ঘাম বের হচ্ছে। বাবা হারালাম, মা হারালাম, পরিবার হারালাম। জীবনে একজনকে পেয়েছি সে যাতে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকে।
সুমু মাথার উড়নাটা মাথা থেকে তুলে রুমের চারদিকে তাকায়। রায়ানকে দেখতে না পেয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে। কিছুক্ষনের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। রুমে ডুকতেই দেখে রায়ান ডিভানে বুকে বালিশ রেখে চোখে আরেক হাত দিয়ে শুয়ে আছে। সুমু সেদিকে তাকিয়ে কিছুটা সংকোচবোধ কাজ করে। সকল সংকোচ তোয়াক্কা করে মিহি আওয়াজে বলে,,, ,
” রায়ান শুনছেন.?
রায়ান একই অবস্থায় ছোট করে উত্তর দেয়,,,,,
“” হুম।
সুমু ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,,,,,

” বলছিলাম বিছানা তো অনেক বড়। আপনি এক পাশে শুয়ে পড়েন আমার সমস্যা হবে না।
রায়ান চোখ থেকে হাত সরিয়ে সুমুর দিকে তাকায়। রায়ান তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়। সুমু নিজের আখি পল্লব নামিয়ে নেয়। রায়ান নিশ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,
” তুমি শুয়ে পড়ো। আমার ডিভানে শুতে সমস্যা হবে না।
সুমু — প্লিজ আমাকে ছোট করবেন না। আপনার নিশ্চয় ছোট জায়গায় শুয়ার অভ্যাস নেই। যদি আমার সাথে শুতে না চান তাহলে আপনি বিছানায় আসুন আমি ডিভানে চলে যায়।
সুমুর কথা কর্নপাত হতেই রায়ান শুয়া থেকে উঠে। এই মেয়ে কি তাকে ভুল বুঝলো? আমি তো তার সুবিধার জন্য ওই ডিভানে শুয়েছিলাম। হে পুরুষজাতি আজ থেকে আমার ও ডিউটি শুরু। বউ কি বলে বুঝার উপায় নেই। শুতে গেলে বলত আপনি ডিভানে যান প্লিজ। আর আজ ডিভানে এসে শুয়েছি, বউ বলছে তার সাথে শুতে চাই না।
রায়ান উঠে গিয়ে বিছানার এক পাশে শুইয়ে বলে,,,,,

“” আমার কোনো সমস্যা নেই। তোমার সুবিধা ভেবে বলেছিলাম।
সুমু হালকা হেসে বেড সাইড টেবিল থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে বলে,,,,,,
” আন্টি দুধ দিয়ে গিয়েছে। বলেছে আপনাকে দেওয়ার জন্য।
রায়ান — তুমি খেয়ে নাও।
সুমু — আপনাকে দিয়ে গিয়েছে।
রায়ান সুমুর দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে,,,,,
” দুধ একটা বিশেষ কারনে খেতে হয়। বাট সেই বিশেষ কারনটা তো আর ঘটবে না তাই আপাযত তুমি খাও। ট্রাস্ট মি আমি তোমাকে এই নিয়ে খুঁটা দিব না। জুতার ঢিল খেয়ে প্রেম হয়েছে তো কি হয়েছে বর্ননা থেকে শুরু করে সমাপ্তি ভালোবাসার চাঁদরেই ঢেকে থাকবে।
জুতার কাহিনী মনে হতেই সুমু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। কুকুরকে ঢিল মারতে গিয়ে উনার কপালে পড়ে গিয়েছিলো। আর উনি সেই ঢিল খেয়ে প্রেমে পড়েছে বাহহ ইন্টারেস্টিং। আমার তো আর ও অনেক আগে ঢিল দেওয়া উচিৎ ছিলো তাহলে।

সুমু মনে মনে এইসব ভেবে দুধটা না খেয়ে বেসিনের মধ্যে নিয়ে ফেলে দেয়। তার ও এইসব দুধ খাওয়ার মুড নেই।
বিছানায় শুয়ার জন্য যাবে এমন সময় আবার শরীর কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে। সুমু নিজের শরীরের উপর প্রচুর বিরক্ত। এইভাবে কাঁপার কি আছে আজব। নিজের মনকে নিজে শান্তনা দিয়ে বিছানার এক পাশে গুটিশুটি ভাবে শুয়ে পড়ে। রায়ান এক পাশে আর সুমু আরেক পাশে। মাঝে যে জায়গা সেটাকে মনে হচ্ছে ফুটবল খেলার মাঠ।
রায়ান সুমুর দিকে তাকিয়ে চাপা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আর ও এইদিকে আসো। এত কর্নারে গেলে পড়ে যাবে। অনুমতি ছাড়া আমি কখনো অধিকার মিটাতে যাব না। কিছু চাই না শুধু ভরসা করে আমার হাতটা ধরে রেখো সারাজীবন।
রায়ানের প্রত্যেকটা কথায় সুমু শুধু মুগ্ধ হচ্ছে। আজকাল এত ভালো ছেলেও পাওয়া যায়। রায়ান একদম ফর্সা। সুমু রায়ানের ফর্সা মুখে একবার নজর বুলিয়ে মুচকি হেসে আরেকটু কাছে আসে। মনের ভিতর হাজার ও ভালো লাগার অনুভুতি কাজ করছে।বাসর রাতেই প্রেমে পড়ার যে ব্যাপারটা সেটা আজ তার সাথে ঘটেছে। ভবিষ্যতে যাতে তারা সুন্দরভাবে জীবন কাটাতে পারে।

রাতের অন্ধকারে মিরা চৌধুরি বাড়ির বাহিরের লাইটিং দেখছিলো। পুরো বাড়ি কি চমৎকার। পাশে ফোয়ারার কাছে গিয়ে কিছুক্ষন হাত ভিজিয়ে আসে। মনটা ফুরফুরা লাগছে। বাড়ির সামনে চারদিকে মনরোম দৃশ্য, নজর কারা পরিবেশ। সবাই তখন যার যার মত ঘুমিয়ে গিয়েছে ক্লান্ত থাকার কারনে। মিরা পুরো চৌধুরি বাড়ি ঘুরে দেখলেও নিচে কি আছে জানা নেই। একটু দুরে পাশেই আছে সুইমিং পুল। মিরা চাঁদনী রাতে সুইমিংপুলের কাছে যায়। হঠাৎ মনে হচ্ছে তার দিকে কেউ তাকিয়ে আছে। মিরা হুট করে পিছনে তাকায়। কিন্তু কেউ নেই।

নিজের মনের ভুল ভেবে কিছুক্ষন সুইমিংপুলে পা ভিজিয়ে বসে থাকে। আকস্মিক চোখ যায় একটা রুমের দিকে। মিরা সেদিকে এগিয়ে যায়। পুরো বাড়ি দিনের আলোর মত ফঁকফঁকা তাই ভয় না পেয়ে সে রুমটার কাছে যায়। বাড়ির এক পাশে এমন ছোট রুম দেখে কপাল কুচকে আসে। দরজায় হাত রাখতেই দেখতে পায় দরজা খোলা। মিরা ছোট থেকেই মনে কিছু আসলে সে সেটা করে দেখবেই। আর আজ সেই পুনরায় জেদ চেপে বসেছে। এই রুমে কি আছে সেটা দেখেই ছাড়বে। মিরা বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে রুমের ভিতরে ডুকে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে অনেক পুরনো বই আর আসবাব পত্র। মিরা ঠোঁট উল্টিয়ে চলে আসতে নিবে এমন সময় বাহির থেকে কেউ দরজা আটকে দেয়। মিরা ভয়ে জমে যায়। হুঁশ ফিরতেই সে দ্রুত দরজার মধ্যে ধাক্কা দিতে থাকে। উচ্চস্বরে আতঙ্ক নিয়ে বলে,,,,,,,

” প্লিজ দরজাটা খুলোন। আমার অন্ধকারে বাজে সপ্ন আসে। কে লাগিয়েছেন প্লিজ দরজাটা খুলুন।
মিরা একাধারে দরজা ধাক্কা দিতে থাকে। আর বার বার দরজা খোলার মিনতি করতে থাকে। ঠিক তখন ওই ভুতুরে আওয়াজের মত কেউ বলে উঠে,,,,,,
“” সবার সামনে থাপ্পর দেওয়ার শাস্তি এইটা। এখন ভুতের ভয়ে বসে বসে সূরা পাঠ করো।
মিরা থমকে যায়। থাপ্পর তো ও অরিদকে মেরেছিলো। তার মানে উনি প্রতিশোধ নিতে এমন নোংরা কাজ করেছে! ছিহহ।
মিরা মিনতি সুরে বলে,,,,,,
“” ক্ষমা চেয়ে নিব আপনার থেকে অরিদ চৌধুরি। প্লিজ আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না। আমি ভুত এইসবে ভয় পায় না। অন্ধকারে আমার এক বাজে সপ্ন আসে। যা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।
কিন্তু আর কারোর কোনো শব্দ পাওয়া যায় নি।
মিরা কান্না করে দিয়ে বলে,,,,,,
” প্লিজ কেউ তো খুলোন দরজাটা।

মিরা কান্না করতে করতে দরজায় হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। অন্ধকারে মনে হচ্ছে জনি তার দিকে এগিয়ে আসছে। এই তো আসছে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। এত দিন পাগলা কুকুরের মত তাকে খুঁজেছে। আজ তার সব প্রতিশোধ তুলতে। শেষ করে ফেলবে তাকে। নেহা! নেহার সেই বিধ্বস্ত লাশ। বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নেহা তার দিকে কান্না করতে করতে এগিয়ে আসছে। ” আমাকে ওরা বাঁচতে দিলো না। বাঁচতে দিলো না আমাকে। খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে আমাকে মিরা । আমার প্রতিটা অঙ্গকে ওরা চিলের মত ঠুকরে খেয়েছে মিরা। খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে আমাকে। আমাকে কেনো কেউ বাঁচাতে আসে নি মিরা? তুই কেনো আসলি না আমাকে বাঁচাতে মিরা?
মিরা কানে হাত দিয়ে বলে,,,,,

” চুপ কর নেহা সহ্য করতে পারছি না আমি আর। প্লিজ চুপ কর।
” আমাকে বাঁচা মিরা। ওই দেখ তারা আসছে আমাকে মেরে ফেলতে। আমাকে ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য আসছে মিরা। প্লিজ আমাকে বাঁচা। খুব কষ্ট হচ্ছে মিরা।
বার বার এক ধ্বনি বাজতে থাকে মিরার কানে। মিরা কান চেপে ধরে ভয়ে গুটিয়ে বসে। কিন্তু কিছুতেই নেহার সেই অন্ধকারের আর্তচিৎকার যাচ্ছে না। মিরা এক সময় সহ্য করতে না পেরে ঙ্গান হারায়।

চৌধুরি বাড়িতে নিস্তব্দ পরিবেশ। রাত তখন একটা। ইয়ানা বেলকনিতে দাড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে শুধু পানিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। বার বার চোখের পানি মুছে সে বিরক্ত। হাঁপিয়ে উঠেছে সে। নিজেকে স্বাভাবিক করে রুমে আসে। এমন সময় দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করে। ইয়ানা সেদিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” আম্মু কিছু বলবেন?
শিখা চৌধুরি ইয়ানার মাথায় হাত দিয়ে বলে,,,,,
“” ঘুমাস নি কেনো এখনও?
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
“” ঘুম আসছে না আম্মু।
শিখা চৌধুরি ইয়ানার বিষন্ন মুখটার দিকে তাকায়। ভিতর থেকে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,,
” কথা হয়েছে অগ্নির সাথে?
ইয়ানা না বোধক মাথা নাড়ায়।
শিখা চৌধুরি — চিন্তা করিস না। চলে আসবে কয়েকদিনের ভিতরে।
ইয়ানা মাথা তুলে শিখা চৌধুরির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

“” আম্মু কাকিয়া আর কাকার ব্যাপারে জানতে চাই। কি হয়েছিলো ওইদিন উনাদের সাথে? উনি এত বছর নিখোঁজ ছিলো অথচ আপনারা খুঁজে পান নি কেনো? আর উনি পরিবারের হয়েও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কেনো?
শিখা চৌধুরি — এখন জানতে চাস?
ইয়ানা — হ্যা আম্মু। এখন পর্যাপ্ত সময়। সবাই গভীর নিদ্রাতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
শিখা চৌধুরি বিছানায় ভালোভাবে বসে বলে,,,,

” আমি সব জানি না। অগ্নি আমাদের বলে নি। যদি বলিস মাজিদ আর হেনার কথা সেগুলো জানি। অগ্নিকে খুব ছোট কালে কানাডা পাঠিয়ে দেয়। ইউভি, রায়ান আর অগ্নির বাবা হচ্ছে বেস্ট ফ্রেন্ড। তাদের কাছেই ছিলো অগ্নি। মাজিদকে যখন ঘুরতে পাঠানো হয় তখন আহিয়া দুই বছরের। তারা গিয়ে ইউভিদের বাসায় উঠে। সুন্দর করেই যাচ্ছিলো দিন। দুই মাস হয়ে যায়। একদিন ইউভি আর রায়ানার বাবা বিজন্যাস পার্টি দেয়। পার্টি দিনে ছিলো তাই পার্টি শেষে যে যার মত বাড়িতে চল যায়। তবুও কিছু সংখ্যক মানুষ ছিলো। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে আসে। রায়ানের বাবা ইউভি, রায়ান আর আহিয়াকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসায়। কারন ওইদিন মাজিদের রায়ানদের বাসায় যাওয়ার কথা।

অগ্নি পড়ে যাবে বলে রুমে গিয়েছিলো দরকারি কাজে। ঠিক তখন এক আতঙ্কবাদী গ্যাং প্রবেশ করে সেখানে। সবাইকে জিন্মি করে ফেলে। তারা সবাই কালো পোশাকে আবৃত ছিলো। পুরো বাড়ি লুটপাট করে। ধারনা করা হয়েছে তারা পাচারকারী ও ছিলেন। সব লুট করা শেষে তাদের নজর অগ্নি আরও দুইটা বাচ্চার দিকে যায়। অগ্নিকে তারা নিতে গেলে হেনা বাঁধা দেয়। আর যেটা ওর কাল হয়ে দাঁড়ায় সেদিন। কোনোমতেই সে অগ্নিকে যেতে দিবে না। হেনা খুব সুন্দরী ছিলেন। তাদের মধ্যে একজনের নজর হেনার উপর পড়ে।
শিখা চৌধুরি চুপ হয়ে যায়। চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। ইয়ানা অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। এই প্রথম সে শিখা চৌধুরিকে ভেঙ্গে পড়তে দেখেছে। সবসময় শক্ত থাকা ব্যক্তিটা আজ এইভাবে কান্না করছে? ইয়ানা অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,

“” এরপর কি হয়েছিলো আম্মু?
শিখা চৌধুরি চোখের পানি মুছে বলে,,,,,,,
“” এরপর এমন এক কাহিনী ঘটেছে যা বুক ফেটে যাওয়ার উপক্রম। সবার সামনে হেনার সম্রম ছিনিয়ে নেয়। পার্টিতে থাকা পুরুষ, ইউভির বাবা তাদের সবার সামনে হেনাকে চিলের মত খুবলে খায়। মাজিদ সেদিন গলা ফেটে চিৎকার করেছিলো এমনটা যাতে না করে। ওর আর্তনাদে মনে হয় কানাডার মাটি পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। অগ্নি তাকিয়ে ও তাকাতে পারে নি। নিজের চোখের সামনে মা সমতুল্য কাকিয়ার সম্রমহীন অবস্থা সে দেখতে পারে নি। সেও চিৎকার করেছিলো কাকিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু তার মুখ চেপে ধরে রেখেছিলো।
হেনা কিছুই করতে পারে নি। চিৎকার করে শুধু আল্লাহর দরবারে ইজ্জত ভিক্ষে চেয়েছে। কিন্তু ইজ্জত বাঁচাতে পারে নি। সর্বশেষে প্রমান লুটতে তারা পুরো বাড়িটাকেই বোম দিয়ে উড়িয়ে দেয়। বাড়ির ভিতরে যতজন ছিলো সবাই মারা যায়। তাদের অস্তিত্বও কেউ খুঁজে পায় নি। শুধু মরার থেকে বেঁচে উঠেছিলো একজন। সেই আমাদের সব ঘটনা জানিয়েছে। অগ্নিকে তারা নিয়ে যায়। বোম মারাতে অগ্নি জীবনের শেষ চিৎকার দিয়েছিলো। আর মনে হয় আমার ছেলেটা কখনো কাঁদে নি।

ইউভির বাবা এখানে পুনরায় আসে অগ্নিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এইসব অবস্থা দেখে সে আর্তনাদ করে মাটিতে বসে যায়। অগ্নিকে কেউ নিয়ে যেতে দেখে সে এক দৌড়ে সেখানে গিয়ে ছিনিয়ে আনতে যায়। কিন্তু তারা তাকেও বাঁচিয়ে রাখে নি। বুক বরাবর তিনটা গুলি করে। ইউভি তারা পিছন দিকে ছিলো ড্রাইভারের সাথে। ইউভি নিজের বাবার চিৎকার শুনে বাহির হয়। মাটিতে নিজের বাবাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থা কাতরাতে দেখে সে সেখানে যায়। ততক্ষনে আতঙ্কবাদীরা অগ্নি সহ দুই তিনজন বাচ্চা নিয়ে হেলিকপ্টারে উঠে পড়ে। ইউভি রক্তচক্ষু নয়নে সেদিকে তাকায়। রায়ান, ইউভি নিজের বাবা – মাকে হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে যায়।

এইসব জেনে পরেরদিন প্রাইভেট জেট দিতে পাগলের মত কানাডায় ছুটে যায়। গাড়ির সেই ড্রাইভার, বোম থেকে বেঁচে ফেরা লোক এরা দুইজন সবকিছু জানায়। কিন্তু পুলিশ কোনো আতঙ্কবাদীকে ধরতে পারে নি। তারা সবাই কালো পোশাকে আবৃত ছিলো। শুধু এইটুকু জানিয়েছে হেনাকে যে দুইজন সম্রমহানী করেছে একজনের চোখের ভ্রু কাটা আরেকজনের বাম হাতে অসংখ্য কাটা চিহ্ন। কানাডা শহর অনেক বড়। কোন গ্যাং এসে হামলা করেছে তা প্রমানের অভাবে বাহির করতে পারে নি। নিজের ছেলেকে তন্ন তন্ন হয়ে খুঁজেছি। আমি ও পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলাম। অরিদের দেখা শুনা ঠিক মত করতাম না।

সাজিদ আমাকে আর বাংলাদেশ নিতে পারে নি। ইউভি, রায়ান, আহিয়া সবাইকে আমি বড় করতে লাগলাম। ছেলে দুইটা নিজের বাবা – মাকে হারিয়ে কেমন পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছে। এক বছর লেগেছে এদের ঠিক করতে। এত বড় ট্রমা কাটাতে পারে নি।তারা যদি সেদিন ভিতরে থাকত তাহলে তারাও হয়ত আজ বেঁচে থাকত না। সবার মত এমন অবস্থা হত। অথবা অগ্নির সাথে তাদের ও নিয়ে যেত। কিন্তু আহিয়া? ওকে তো মেরে ফেলত। নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়েটাকে তো একদম জানে মেরে দিত। হয়ত আল্লাহ সহায় ছিলেন। তাই একটা উছিলা দিয়ে তাদের আগে পাঠিয়ে দেয়।
পাচারকারীদের সামনে পড়ে নি।

বিগত অনেক বছর পর অগ্নির খুঁজ পায়। ওইদিন আমি খুশিতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ চলে গিয়েছিলাম। রায়ান আর ইউভি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। তাদের সাথে অগ্নির দেখা হয়। অগ্নি নিজেই ওদের সাথে দেখা করে। আমি আর সাজিদ বাংলাদেশ থেকে ছুটে আসি তাকে একনজর দেখব বলে। যখন সামনে পেয়েছি তখন আমার ছেলেটা একদম বড় হয়ে গিয়েছে। কাছে গিয়ে মুখে হাত রেখে বুকে জড়িয়ে ধরি। কান্না করতে করতে এক সময় অজ্ঞান হয়ে যায়। ঙ্গান ফিরলে আর তাকে দেখি নি। পাগলামো করছিলাম ছেলেটাকে দেখার জন্য। সে আসে তবে গম্ভীর ছিলো খুব। একদম অন্য স্টাইল। একদিন আমাদের সাথে থাকে। পরে জানতে পারি সে পুরো মাফিয়া গ্রুপের লিডার। আর কানাডায় তার আধিপত্য। রায়ানের গোয়ান্দা অফিস্যার হওয়ার একমাত্র লক্ষ অগ্নিকে সাহায্য করা। এর ভিতরে কি হয়েছে? অগ্নি কোথায় ছিলো? কিভাবে ফিরেছে আর কিছু জানা নেই। জিজ্ঞাসা করেছি বহুবার কিন্তু উত্তর দেয় নি।

শিখা চৌধুরি চুপ হয়ে যায়। চোখের পানি মুছে ইয়ানার দিকে তাকাতেই ইয়ানা ঝাঁপিয়ে পড়ে শিখা চৌধুরির উপর। কান্না করতে করতে বলে,,,,,,
“” চৌধুরি বাড়ির অতীত এত ভয়ংকর কেনো আম্মু? ইউভি ভাইয়া আর রায়ান ভাইয়া কতকিছুর সম্মুখীন হয়েছে। এই গল্প শুধু বাস্তবতা নয় এখনে মিশে আছে অনেকের বুক ছিঁড়া আর্তনাদ আর হাহাকার। একজন মায়ের নিজের সন্তানকে হারিয়ে ফেলার হাহাকার। একজন সন্তান নিজের কাকিয়ার ইজ্জত হারানো নিজ চোখে দেখার হাহাকার। একজন স্বামী নিজের স্ত্রীকে সম্মানের জন্য ছটফট করতে দেখার হাহাকার।একজন সন্তান নিজের বাবাকে চোখের সামনে গুলিবদ্ধ অবস্থায় ছটফট করতে দেখার হাহাকার। একজন সন্তান নিজের বাবা – মাকে শেষ বারের মত দেখতে না পাওয়ার হাহাকার। এক দুই বছরের দুধের বাচ্চা নিজের বাবা – মাকে হারানোর হাহাকার। এক ভাই নিজের ভাইকে হারানোর হাহাকার। এত আর্তনাদ আর হাহাকার কেনো আম্মু? ওদের প্রত্যেকের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে এক তিক্ত বিষাক্ত অতীত।

ইয়ানার কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গিয়েছে। শিখা চৌধুরি ইয়ানাকে ঠিক করে দিয়ে বলে,,,,,
“” শান্ত হ। অতীতকে পিছনে ফেলেই আমাদের বাঁচতে হয়। নাহলে অতীতের পিছুটান বড্ড খারাপ। তকে সেটা তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই অতীত যত বিষাক্ত হোক না কেনো আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হয়।
ইয়ানা চোখের পানি মুছে বলে,,,,,
” আহিয়া এইসব জানেলে ভেঙ্গে পড়বে আম্মু।
শিখা চৌধুরি — কখনো জানতে দিব না এইসব কিছু।
ইয়ানা — হুম নাহলে ভেঙ্গে পড়বে মেয়েটা। কোনো মেয়ে নিজের মায়ের এত বড় সত্যি মেনে নিতে পারবে না।
শিখা চৌধুরি — আমরা কয়েকজন ছাড়া সবাই জানে মাজিদ আর হেনার গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। ইভেন তর দাদুমনিও।
ইয়ানা ঠোঁট চেপে কান্না আটকিয়ে রাখে।
শিখা চৌধুরি ইয়ানার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪০

“” অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়। এইসব নিয়ে আর চিন্তা করিস না। আমি যাচ্ছি।
ইয়ানা সম্মতি জানায়। শিখা চৌধুরি চলে যেতেই ইয়ানা চোখেমুখে পানি দিয়ে পুনরায় বিছানায় এসে বসে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে অগ্নির একটা ছবির দিকে তাকায়। অগ্নি কখনো ছবি তুলে না। এই ছবিটা ইয়ানা একদিন লুকিয়ে তুলেছিলো। কালো ব্লেজার গায়ে জড়ানো। ইয়ানা একটা জিনিস লক্ষ করেছে অগ্নির সব জিনিস পত্র লাল আর কালো। ইয়ানা কিছুটা অবাক হলেও সেদিকে পাত্তা দেয় নি। অগ্নির ছবতে আলতো চুমু খেয়ে শুয়ে পড়ে। তবে আদও কি কোনো ঘুম হানা দিবে চোখে?

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪২