অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪২

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪২
লিজা মনি

ফজরের আজান হয়েছে। ইয়ানা নামাজ শেষ করে বেলকনিতে যায়। শিখা চৌধুরিকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল হাতে নিতেই বেলকনি থেকে মোবাইলটা হুট করে নিচে পড়ে যায়। ইয়ানা মৃদু চিৎকার করে উঠে। নিজের প্রান প্রিয় বন্ধুকে অকালে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে দেখে কান্না চলে আসে। উপর থেকে নিচে কোথায় পড়েছে ভালোভাবে দেখাও যাচ্ছে না। তবে মোবাইল যে আর অক্ষত নেই সেটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। ইয়ানা বিরক্তিতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ফোন করার জন্য কি আজ বেলকনিতেই যেতে হলো। যদি না যেত তাহলে আর মোবাইলটা পড়ে যেত না। ইয়ানা নিজের মনে বিরবির করতে করতে নিজের রুমে পায়িচারী করতে থাকে।

চৌধুরি বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। অরিদ ঘুমে বুদ হয়ে আছে। জিসান আর সিমি এসে শিখা চৌধুরির সাথে দেখা করে সোজা অরিদের রুমে চলে যায়। সিমি সোফায় গিয়ে ধপাস করে বসে পড়ে। জিসান সিমির দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে বলে,,,,,
“” এ তো দেখছি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
সিমি — ডেকে তুল।
জিসান — ডাক দিলেই উঠে পড়বে?
সিমি ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,
” এক কাজ কর লম্বা চুল লাগিয়ে ভিজিয়ে আন। এরপর বউয়েরা যেভাবে চুলের পানি মুখের উপর দিয়ে ঘুম থেকে তুলে স্বামীদের সেভাবে তুল। গাধা একটা।
জিসান সিমির কথায় চুপসে গিয়ে বলে,,,,,
” মজা কেনো করছিস ভাই?
জিসান অরিদের বাহু ধরে টান দিতেই অরিদ ঘুম ঘুম চোখে বলে,,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” ডিস্ট্রাব করিস না ঘুমাতে দে।
সিমি বিছানার উপরে উঠে অরিদের পা টান দিয়ে বলে,,,,,,
” এই গাধা উঠ। সকাল দশটা বাজে এখন। সারারাত কি চুরি করতে বের হয়েছিলি। উঠ বলছি!
সিমির কর্কশ কন্ঠ কানে ডুকতেই অরিদের ঘুম ছুটে যায়। এক লাফে শুয়া থেকে উঠে বসে। চোখে- মুখে আতঙ্ক ভর করে।
সিমি সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আওড়ায়,,,,,
“” কি হয়েছে? তকে বেশ চিন্তিত লাগছে?
অরিদ মাথার চুল খামছে ধরে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
“” একটা ভুল করে ফেলেছি দোস্ত। মিরাকে কাল রাতে সুইমিংপুলের পাশের পরিত্যক্ত রুমে আটকে দিয়ে এসেছিলাম।
সিমি চোখ বড় বড় করে ফেলে।হালকা চেঁচিয়ে বলে,,,,,

“” হুয়াট! আরে গাঁধা ওইখানে এক মেয়েকে আটকে এসেছিস। আর এখানে মরার মত এতক্ষন ঘুমাচ্ছিলি। তকে বুদ্ধিমান ভাবতাম, তুই এমন বোকার মত কাজ কিভাবে করতে পারলি?
অরিদ বিছানা থেকে নেমে স্যন্ডেল লাগিয়ে বলে,,,,,
” পরে সব প্রশ্নের উত্তর দিব। আগে দেখে আসি বেঁচে আছি কি না?
অরিদ আর এক মুহূর্তে দেরী না করে পিছনের সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নেমে যায়। অরিদ এত দ্রুত বের হয়েছে যে সিমি আর জিসান মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে ফেলে তাকে । অরিদ সেই রুমের সামনে গিয়ে দ্রুত দরজা খুলে। দরজা খুলতেই মিরা হেলে নিচে পড়ে যায়। মিরার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে অরিদ সামান্য চেঁচিয়ে উঠে,,,,
“” মিরা! এই মিরা!

তাড়াহুড়া করে মিরার পাশে বসে মিরার দুই গালে হালকা থাপ্পর দিয়ে ডাকতে থাকে। কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই। গোলাপী ঠোঁটগুলো কেমন নীল হয়ে আছে।
অরিদ নিজের উপর নিজে প্রচুর রাগ হয়। রাগের মাথায় কি করে ফেললাম আমি? অন্যভাবেও শাস্তি দিতে পারতাম। বার বার কানে ভাসছে মিরার সেই আকুতি। প্লিজ যাবেন না,, অন্ধকারে আমার প্রচুর ভয় করে। খারাপ সপ্ন আসে যা আমি সহ্য করতে পারি না।
অরিদ কোনো কিছু না ভেবে পাজাকোলে তুলে নেয়। উদ্দেশ্য বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া। সবার আগে চিকিৎসা দরকার এখন। অরিদ মিরাকে কোলে তোলে দ্রুত বের হয়। লিভিং রুমে আসতেই সবার নজর অরিদের দিকে। কিন্তু অরিদের এইসব কোনো খেয়াল নেই। তার সব ধ্যান – ধারনা এখন মিরার উপর। মেয়েটাকে সহ্য করতে পারে না ঠিক আছে কিন্তু এখন এই অবস্থার জন্য ও দায়ী। শিখা চৌধুরি, হল্লা পার্টি, সিমি – জিসান তারা সবাই আসে।
অরিদ মিরাকে ডিভানে শুয়ে দিয়ে শিখা চৌধুরির উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,,,

” আম্মু ডক্তরকে ফোন করো। ফাস্ট!
শিখা চৌধুরি মিরার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে বলে,,,,,
” কি হয়েছে বাবা ওর? আর তরা কোথা থেকে এসেছিস?
অরিদ — এখন এইসব জিজ্ঞাসা করার সময় নয় আম্মু। আগে ডক্তর কল করো।
আহিয়া — আমি করেছি ভাইয়া। কিছুক্ষনের মধ্যেই আসছে। কিন্তু ভাইয়া মিরা আপু আর তুমি কোথায় ছিলে? আপুর এই অবস্থা হয়েছে কেনো?
অরিদ — সুইমিংপুলের পাশে পরিত্যক্ত রুমে।
আরু মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলে,,,,,
” কিহহ! আপনারা সাররাত ওইখানে ছিলেন। কিন্তু কেনো? মিরার এমন অবস্থা হয়েছে কিভাবে?
আরুর মুখে এমন কথা শুনে অরিদ তাজ্জব বনে যায়। বলেছে কি আর বলছে কি? সারারাত সে ছিলো মানে?
অরিদ আরুর উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন ওই একজন মহিলার মুখের বিকৃত বাক্য বয়ে আসে,,,,,

“” চৌধুরি বাড়ির ছেলেরা তাহলে মেয়ে নিয়ে রাত কাটায়? ছিহহ ছিহহ! মন্ত্রী সাহেব তো অনেক ভালো কিন্তু উনার ছেলে এমন কেনো?
মহিলার কথায় আরও কয়েকজন মহিলা তাল মিলায়। এদের কথা শুনে লিভিং – রুমের সবাই অবাক হয়ে তাকায়। ইয়ানা এতক্ষন উপরে ছিলো তাই কিছু জানে না। সে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে এমন সময় এইরকম জঘন্য কথায় সে থমকে যায়। সে শিখা চৌধুরির দিকে তাকায়। অরিদ রাগে কাঁপছে। শিখা চৌধুরি অবস্থা বেগতিক দেখে শান্ত কন্ঠে বলে,,,,,
” না জেনে কথা বলবেন না। শান্ত হন আপনারা। আমার ছেলেদের এমন শিক্ষা দেয় নি যে মেয়ে নিয়ে তামাসা করবে।

একজন মহিলা — সে তো নিজের চোখে দেখতেই পাচ্ছি। সবার সামনেই তো আপনার ছেলে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে রুমে ডুকলো। তার উপর মেয়েটার অবস্থা ও খারাপ।কেমন সেন্সল্যাস হয়ে পড়ে আছে।
আরেকজন মহিলা — হ্যা সেটাই তো দেখলাম এতক্ষন। আর সে তো নিজের মুখেই বলল পরিত্যক্ত রুম থেকে এসেছে। তারা সারারাত সেখানেই ছিলো। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এক রুমে থেকেছে আর সেটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে বলছেন মিসেস চৌধুরি?
হল্লা পার্টি থেকে শুরু করে সবাই এক প্রকার বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। সিমি আর জিসান তাকিয়ে দেখছে। অরিদ কখন রাতে ছিলো? ওকে তো তারা এসে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছে।
ইয়ানা সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,,,

” কি যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছেন আপনারা। মুখে একটু ও আটকাচ্ছে না আপনাদের। একটা মেয়ে হয়ে এরেকজন মেয়ের সম্পর্কে এইসব বলতে। আপনাদের এইসব ভিত্তিহীন কথা মেয়েটার কানে গেলে মেয়েটার মানসিক অবস্থা কেমন হবে ধারনা আছে আপনাদের?
একজন মহিলা — সারারাত যে মেয়ে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের সাথে এক রুমে থাকতে পারে তার আবার মানসিকতা। জানি না এই বদ্ধরুমে কি হয়েছে?
অরিদ আর সহ্য করতে পারে নি। মহিলাদের এক একটা কথা ওর প্রতিটা কোষকে জাগিয়ে তুলে। রাগে নিজের হিতাহিত ঙ্গান হারিয়ে ডিভানের পাশে থাকা কাউচটাকে উল্টে ফেলে দেয়। বিকট এক শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে চারপাশ। অরিদের হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রক্ত দেখে সবাই ভয়ে মুখ হাত দিয়ে দেয়। আহিয়া দৌড়ে এসে কান্না করে দিয়ে বলে,,,,,

“” ভাইয়া তোমার হাতে ক্ষত হয়ে গিয়েছে। রক্ত ঝরছে প্রচুর।
অরিদ আহিয়ার হাতটা সরিয়ে নেয়। তার দৃষ্টি সামনে থাকা মহিলাদের উপর। চোখ দুটি অসম্ভব লাল হয়ে আছে। ইয়ানা অরিদের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। অগ্নির রাগের কথা মনে পড়ে যায়। দুই ভাইয়ের রাগ ঠিক এক রকম। অরিদ এগিয়ে যায় তাদের দিকে। শিখা চৌধুরি আটকাতে চাই কিন্তু অরিদ হাত সরিয়ে নেয়। ততক্ষনে ইউভি আর রায়ান ও চলে আসে। লিভিং রুমের এমন পরিস্থিতি দেখে কিছুটা অবাক হয়।
অরিদ মহিলাদের দিকে দৃষ্টি তাক করে চেঁচিয়ে বলে,,,,,,,
“” কি যেনো বলছিলে রাত কাটিয়েছি? তাও আবার সেই পরিত্যক্ত নোংরা রুমে? যেখানে অরিদ চৌধুরি জীবনে পা ও রাখে না সে জায়গায়। মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করার জন্য চৌধুরি বাড়ির ছেলেদের টাকার অভাব নেই। তারা নোংরা জায়গায় রাত কাটাবে। তাদের ফুর্তি করার হলে ঢাকার সবচেয়ে বিলাশবহুল রুম আছে।যেখানে – সেখানে মেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে না ঠিক আপনাদের ছেলের মত।
একজন মহিলা আমতা আমতা করে বলে,,,,,

“” আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন কেনো? আপনাদের ক্ষমতা আর টাকা আছে বলে চুপ করে থাকব না। অন্যায় কে অন্যায় বলেই গন্য করব।
অরিদ দাঁতে দাঁত পিষে বলে ,,,,,,,,,,,,,,
“” যাহহ রাত কাটিয়েছি। এখন কি করবি কর। আমি ও দেখি তদের কতটুকু ক্ষমতা।
অরিদের কথায় সবাই হতভম্ভ হয়ে যায়। কিসব ভুল স্বীকার উক্তি দিচ্ছে। রায়ান অরিদের হাতে ধরে বলে,,,,,,
“” কিসব বলছিস এইসব? মাথা ঠিক আছে তর? রাগের মাথায় কিসব বলছিস? এখানে রাজনিতী ব্যক্তিদের লোক আছে। আঙ্কেলকে বদনাম করার জন্য এইটাকে তিল থেকে তাল করবে। আঙ্কেল বাড়িতে এসে জানতে পারলে রাগ করবে প্রচুর।
অরিদ সামান্য রাগ দেখিয়ে বলে,,,,

“” কি বলব আমাকে বলো ভাইয়া? আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ে আসি। আর তারা বানাচ্ছে আমি সারারাত সেখানে ছিলাম। ইচ্ছে তো করছে….
ইউভি — শান্ত হ।
একজন মহিলা — নিজের মুখে তাহলে স্বীকার করলেন। যদি সকালে গিয়ে এনে থাকেন তাহলে আপনি জানেন কিভাবে যে এই মেয়ে ওই রুমে ছিলো?
আরেকজন মহিলা — হ্যা সেটাই। আর সকালে গেলে আমি দেখলাম না কেনো? আমি তো এখানেই বসা ছিলাম।
জিসান এতক্ষন চুপ থাকলে ও এইবার সবার উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,,

“” মহিলাদের যে হাটুর নিচে বুদ্ধি থাকে তার আজ আবার ও প্রমান হলো। আশ্চর্য রকমের মহিলা আপনারা। রাত কাটানোর জন্য নোংরা জায়গা বেছে নিবে হ্যা? রুমের কি অভাব পড়েছে। আর এখানে শয়নরত মেয়েটা ছোট বোনের মত। দেখতে পাচ্ছেন অসুস্থ কিন্তু আপনাদের কটু কথা থামছে না। এই মেয়ে যদি ফিজিক্যাল টর্চারে অজ্ঞান হতো তাহলে তার শরীরে অসংখ্য ক্ষত থাকত। দেখতে পারছেন আপনারা কোনো ক্ষত?
সবাই চুপসে গেলেও একজন মহিলা বিরোধ করে বলে,,,,,,
” সবসময় বাহ্যিক ক্ষত অভ্যন্তরীন ক্ষতকে বুঝানো যায় না।
জিসান বিরক্তিতে মুখ সরিয়ে নেয়। মুখ থেকে কিছু গালি বের হয়ে আসে মন থেকে। চোখ থেকে ও যারা দেখে না তাদের অন্ধ ভাবাটা বোকামি।
শিখা চৌধুরিকে এইভাবে শান্তভাবে বসে থাকতে দেখে ইয়ানা কপাল কুচকে নেয়। এই ঘটনাটা পুরো বাড়ি ছড়িয়ে যাচ্ছে। একটু পর পার্টির উদ্দেশ্যে মিডিয়া আসবে আর এখন এমন এক অবস্থা। ইয়ানা কোনো কিছু না ভেবে শিখা চৌধুরির কাছে গিয়ে বলে,,,,,

” আম্মু তুমি এইভাবে চুপচাপ বসে থাকলে তো চলবে না। মহিলাগুলো যা ইচ্ছে তাই বলছে।
শিখা চৌধুরি ভাবনা থেকেই উত্তর দেয়,,,,,,
” ইয়ানা তর মনে প্রশ্ন জাগছে না অরিদ কিভাবে জানে মিরা ওই খানে। আবার সেই জায়গায় যেখানে তার ছায়া ও পড়ে না। সে কিভাবে জানলো মিরা ওই রুমে আছে.?
ইয়ানা কথাটা শুনে কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে,,,,,,
” আম্মু এইটা পড়ে আলোচনা করা যাবে। ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করলেই হবে। আপাযত পরিস্থিতি সামলে আনো।
শিখা চৌধুরি — এত সহজে সম্ভব না। একবার যেহেতু এইটা রটে গিয়েছে সেটা অনেক দুর পর্যন্ত যাবে। ওদের তুই চিনিস না। ওরা সবাই রাজনিতীর লোক।
মিরা অবাক হয়ে বলে,,,,,,

” সম্ভব হবে না কেনো আম্মু? পারলে সব সম্ভব। অরিদ ভাইয়া খুব রেগে আছে যেকোনো সময় অনর্থ ঘটাবে। কিছু করো মিরার ঙ্গান আসার আগে পর্যন্ত।
শিখা চৌধুরি কিছু ভেবে উঠে দাঁড়ায়। আরু ইয়ানার কানে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,
” ইয়ানা মিরার চোখে – মুখে পানি এনে ছিটিয়ে দেই। চোখে – মুখে পানি পড়লেই তো জ্ঞান ফিরে আসবে। এতক্ষন আমার মাথায় আসে নি।
মিরা আরুর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” এখন জ্ঞান ফিরানোর দরকার নেই। এইসব দেখলে ও সহ্য করতে পারবে না। তার চেয়ে বরং পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক। ডাক্তার মনে হয় চলেই এসেছে।
আরু ইয়ানার কথায় সম্মতি জানায়।
শিখা চৌধুরি গম্ভীর হয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,,

” আপনাদের মতে আমার ছেলে অনেক বড় অন্যায় করেছে। এখন শাস্তি হিসেবে কি চান?
পুরো লিভিং রুমে পিনপিন নিরবতা বিরাজ করে কিছু সময়ের জন্য।
এর মধ্যে একজন মহিলে বলে উঠে,,,,,,
“” চৌধুরি বাড়ির ছেলেকে শাস্তি দেওয়ার মত এত ক্ষমতা আমাদের নেয়। তবে যে মেয়েটাকে ঘিরে এই ঘটনা তাকে এই বাড়ির বউ করে আনুন। হারাম সম্পর্ককে হালাল করুন।
শিখা চৌধুরি ভ্রু কুচকে বলে,,,,,,
“” অর্থাৎ?
” অর্থাৎ আপনার ছোট ছেলের সাথে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে সম্পর্ককে পবিত্র করে তুলোন।
মহিলাদের কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকায়। অরিদ রাগে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,,
” রাবিশ! আর একটা লজিক ছাড়া কথা বললে মাটিতে পুতে ফেলব। ভুলে যাবে কে ছোট আর কে বড়। বিয়ে আমি করব না।
মহিলাটি কিছু বলতে যাবে তার আগেই শিখা চৌধুরি শান্ত সুরে বলে,,,,,,,,

“” বিয়ে তুমি করবে অরিদ। আর তোমার বিয়ে মিরার সাথেই হবে আজ সবার সামনে। নিজের ভুল নিজেই শুধরে নিবে মিরাকে বিয়ে করে।
অরিদ আশ্চর্য হয়ে বলে,,,,,,
” আম্মু তুমিও! তুমি আমাকে সন্দেহ করছো? তোমার মনে হচ্ছে তোমার ছেলে এমন জঘন্য কাজ করছে?
শিখা চৌধুরি — প্রশ্ন আমাকে দিয়ে নয় অরিদ। প্রশ্ন সবার মনে জাগিয়েছো তুমি। তুমি মিরাকে সবার সামনে এমন অবস্থায় এনে পরিস্থিতি তোমার দিকে আঙ্গুল তুলতে বাধ্য করেছো। জনতার মুখে এখন প্রশ্ন উঠেছে। আর বিয়ের মাধ্যমেই সে প্রশ্নের আঙ্গুল বাঁকা হবে। তোমার বাবার সম্মানের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো। ছেলে হিসেবে সম্মান বাঁচানো তোমার কর্তব্য।
অরিদ রাগে কাঁপছে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানছে ঘনঘন। ডিভানে বসে দাঁত পিষে বলে,,,,,,

” বিয়ে আমি করব না।
শিখা চৌধুরি গম্ভীর আওয়াজে আওড়ায়,,,,,
” বিয়ে তুমি করবে। আর তোমার আব্বু ও চলে আসছে কিছুক্ষনের মধ্যে। সে আমার কোনো কথার অমত করবে না। জানে আমি সঠিক সিদ্ধান্ত ওই নিব। আর আশা করছি তুমি ও আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে।
ইয়ানার চোখে পানি টলমল করছে। হৈ হুল্লুরে ভরে উঠা বাড়িটা কেমন শোকে পরিনত হয়েছে। আরু, সুমু সবার চোখে পানি চলে আসছে মিরার জন্য।
ইয়ানা শিখা চৌধুরির উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,
” আম্মু সমাধান কি অন্যভাবে দেওয়া যায় না? অরিদ ভাইয়া তো মিরাকে চিনে না। ভালোবাসা ছাড়া হুট করে সম্পর্ক কিভাবে বাঁধবে?
শিখা চৌধুরির কঠিন সুর,,,,,,,

” তর আর অগ্নির বিয়ে ও কিন্ত পারিবারিক। মানিয়ে নিচ্ছিস তো ভালোভাবেই? আমার আর তর বাবার বিয়েও পারিবারিক। ভালোবাসা বিয়ের পরেও করা যায়।
এর মধ্যেই ডাক্তার চলে আসে। সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। শিখা চৌধুরি সাজিদ চৌধুরিকে আসতে দেখে উনি তার কাছে চলে যায়। এরপর সাজিদ চৌধুরিকে সবকিছু খুলে বলে। বিয়ের ব্যাপারটা জানাতে অমত করলেও পরে রাজি হয়ে যায়। মিরা অনেক অমায়িক আর ভদ্র, সুন্দর একটা মেয়ে। রাজি না হওয়ার কোনো কারন নেই।
সাজিদ চৌধুরি আর শিখা চৌধুরি লিভিং রুমে আসে।
ডাক্তার কিছুক্ষন চেকআপ করে শিখা চৌধুরির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” মিসেস চৌধুরি রোগী কি কিছু নিয়ে প্রচুর ভয় পেয়েছে? অতিরিক্ত ভয়ের কারনে জ্ঞান হারিয়েছে। মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছে প্রচুর। ইঞ্জেকশন পুশ করে দিয়েছি কিছুক্ষনের মধ্যে ঙ্গান চলে আসবে।
শিখা চৌধুরি কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে,,,,,

“” জি ডাক্তার। আর কিছুর প্রয়োজন পড়বে না?
ডাক্তার উঠে বলে,,,,,,
” না আহামরি কিছু না। ভয়ে থেকে সেন্সল্যাস হয়েছে, ঘাবরানোর কিছু নেই।
এরপর ডাক্তার চলে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যে মিরার ঙ্গান ফিরে আসে। পার্টি বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। মিরা মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে। মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে। চোখের সামনে লাইটের আলোতে আরও ঘাপলা লাগছে। সে তো অন্ধকারে ছিলো। আশেপাশে এত মানুষ দেখে ঘাবরে যায়। এখন ও ঙ্গানে আসতে পারছে না। আবছা মনে পড়তে থাকে তার দিকে কেউ এগিয়ে আসছে। রাতের ঘটনা মনে পড়তেই আৎকে উঠে। মিরা ভয়ে ঘামতে থাকে। শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে। ইয়ানা মিরার এমন অবস্থা দেখে তার পাশে বসে কাধে হাত রাখে। মিরা ভয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে সোজা ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে । ইয়ানাকে শক্ত করে আকড়ে ধরে আতঙ্ক জড়ানো কন্ঠে ফিঁসফিঁস করে বলে,,,,,,

” নেহা! নেহা এসেছে ইয়ানা। নেহা এসেছিলো! জ.. জনি, জ..জনি আমাকে শেষ করার জন্য এগিয়ে আসছে। ইয়ানা নেহা আসছে।
মিরা ভয়ের কারনে আবোল- তাবোল বকে যাচ্ছে। সবাই মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিদ গম্ভীর হয়ে বসে আছে। সে জানে না তার পাশে কি ঘটছে। মনে হচ্ছে সে কোনো ভাবনার ধ্যানে মগ্ন।
ইয়ানা মিরাকে শান্তনা দিয়ে বলে,,,,,,,
” আমি পাশে আছি। কিছু হয় নি। জনি বেঁচে নেই আর। তোমাকে ও আর কিছু করতে পারবে না। ভয়ের কোনো কারন নেই। নেহা পরোপারে ভালো আছে। শান্ত হও মিরা। সপ্ন থেকে বেরিয়ে আসো। দেখো তোমার পাশে আমরা আছি। জনি বা নেহা কেউ নেই।
মিরা কিছুটা শান্ত হয়ে আসে। ইয়ানার বুক থেকে মাথা তুলে।
ইউভি কিছুটা ভ্রুঁ কুচকে বলে,,,,,,,
” মিরা কি আতিকের ছেলে জনির কথা বলছে ইয়ানা? জনিকে মিরা কোথায় পেয়েছে? আর নেহা কে?
ইয়ানা শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,

“” মিরা চট্টগ্রামের মেয়ে ভাইয়া। এখন তারা ঢাকা থাকে। জনি আর নেহা হচ্ছে ওর অতীতে ফেলে আসা এক কালো অধ্যায় যা আজও ও মিরাকে অন্ধকারে অনুসরন করে। সময় হলে কোনো একদিন বলব।
শিখা চৌধুরি মিরার মাথায় হাত রেখে পাশে বসে। মহিলারা তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। শিখা চৌধুরি ইশারা দিয়ে বলে বাজে কথা না বলতে। যা করার উনি করবে।
শিখা চৌধুরি — শান্ত হ মা। কিছু হয় নি। এখন বল আমাদের তর কাছে কেমন লাগে?
শিখা চৌধুরির প্রশ্নে মিরা কিছুটা ভড়কে গিয়ে বলে,,,,,
” আপনি তো অতুলনীয় আন্টি। আপনার সাথে কারোর তুলনা হয় না। আমাদের যেভাবে মেয়ের মত ভালোবাসা দেন সেখানে আর ব্যাখ্যা কি দিব।
শিখা চৌধুরি খুব সন্তুষ্ট হন মিরার কথায়। উনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে বলে,,,,,,

” এখন মা হিসেবে যদি আমি কিছু চাই নিশ্চয় ফিরিয়ে দিবে না?
মিরা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” না আন্টি কখনো না। আপনাকে কিছু দেওয়া আমার সৌভাগ্য। আপনি কিছু চাচ্ছেন জেনে ওইত আনন্দে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি।
শিখা চৌধুরি গম্ভীর হাসি দিয়ে বলে,,,,,

” আমি তোমাকে আমার ছেলের বউ বানাতে চাই মিরা। নিশ্চয় তুমি অমত করবে না?
শিখা চৌধুরির কথায় মিরার হাসিমাখা মুখটা অন্ধকারে ঢেকে যায়। চুপ হয়ে যায় সে। তার ছেলে তো দুইজন এক অগ্নি চৌধরি আর একজন অসভ্য অরিদ চৌধুরি। তাকে বিয়ে করার কথা বলছে আন্টি? অসম্ভব! এর মত অভদ্র ছেলে আর পৃথিবীতে নেই। তার জন্য আজ আমার এমন অবস্থা। যে ছেলে মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না সে বিয়ের পর যে সম্মান দিবে তার কি গ্যারান্টি। এমন বিয়াদপকে তো আমি জীবনে ও বিয়ে করব না। কিন্তু আন্টির মুখের উপর কিভাবে না করব? কষ্ট পাবে তো উনি। উনার মত একজন মেধা সম্পন্ন বিশ্ব বিখ্যাত বিজিন্যাস ইউমেন আমাকে বউ বানাবে বলে আবদার করছে কিভাবে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এই ছেলেকে বিয়ে করা অসম্ভব। তার চেয়ে রাস্তার পাগল বিয়ে করব কিন্তু একে না। কিন্তু কিছু একটা বলতে হবে।
মিরা ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলে,,,,,,

” আমার আব্বু রাজি হবেন না আন্টি। আব্বু অনেক অসুস্থ। তাকে না জানিয়ে আমি বিয়ে করতে পারব না।
অরিদ দাঁতে পিষে বলে,,,,,,
” আর আমি তোমাকে বিয়ে করব না। আর তোমার মত মেয়েকে তো বিয়ে করার প্রশ্ন ওই আসে না।
অরিদের কথায় মিরা তেঁতে উঠে বলে ,,,,,,,,
” আপনাকে বিয়ে করার জন্য আমিও বসে নেই মি, অরিদ চৌধুরি। আপনার মত বিয়াদপকে তো করার প্রশ্ন ওই আসে না।
ওদের ঝগরা দেখে শিখা চৌধুরি চুপ করিয়ে বলে,,,,,

” চুপ হ তোরা। পরে যা ইচ্ছে করিস আগে বিয়েটা হতে দে। মিরা তোমার বাবাকে আমি রাজি করাব। আর উনি কখনো আমার কথায় অমত করবে না।
মিরা — কিন্ত হঠাৎ বিয়ের কথা কেনো বলছেন আন্টি?
একজন মহিলে হুট করে বলে,,,,,,,
“” সারারাত যে নোংরামি করেছো সেটাকে শুদ্ধ করার জন্য।
মিরা অবাকের চরম পর্যায়ে যায়। নোংরামি করেছে মানে কি বলতে চাইছে এই মহিলা? মিরার চোখে পানি চলে আসে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে বলে,,,,,,
” এই মহিলা কিসব বলছে ইয়ানা? নোংরামি মানে? কে নোংরামি করেছে?
ইয়ানা শান্ত করতে যাবে এমন সময় আরেকজন মহিলা বলে,,,,,,

“” কেনো চৌধুরি বাড়ির ছেলের সাথে রাত কাটাও নি। নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে। বড়লোক ছেলে দেখেছো আর নিজেকে ধরে রাখতে পারো নি তাই না?
ইয়ানা সবার উদ্দেশ্যে রাগে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” চুপ করুন আপনারা। আমাকে অসভ্য হতে বাধ্য করবেন না। আপনাদের কথা তো মেনে নেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে আপনারা বলেছেন এইসব বাহিরে পাচার করবেন না। যে ছবি তুলেছেন সেসব মিডিয়াকে দিবেন না। সব মেনে নেওয়া হয়েছে এরপর ও মিথ্যেটাকে কেন্দ্র করে কটু কথা কেনো বলে যাচ্ছেন। আপনারা আপনাদের কথা রাখুন আর আমরা আপনাদের।
এইসব কথায় মিরার হেচকি উঠে যায়। ইয়ানা শান্তনা দিয়ে বলে,,,,,,

” ভাইয়া খারাপ ছেলে নয় মিরা। কথা দিচ্ছে তর কোনো কষ্ট হবে না।
মিরা নিশ্চুপ হয়ে যায়। তার মাথা ফাকা হয়ে যায়। এইসব কথা ওকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে তুলছে। যে অপবাদের জন্য সে জনির থেকে বাঁচতে বিদেশ থাকতে হয়েছে পুনরায় সেই অপবাদ তার দিকে ঘুরে এসেছে। তাও আবার এক নোংরা মিথ্যে অপবাদ। শান্ত হয়ে পড়ে মিরা। কথা বলার অবস্থা হারিয়ে ফেলে। বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
এক প্রকার বাদ্ধ করে অরিদ আর মিরাকে এক সাথে বসানো হয়। রায়ান ততক্ষনে কাজী নিয়ে পৌঁছে যায়। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। মিরাকে কবুল বলতে মিরা নিশ্চুপ হয়ে যায় । অরিদ দাঁত কটমট করে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,

” এখন ও সময় আছে বিয়ে থেকে উঠে দাঁড়াও। আমাকে বিয়ে করলে জীবন বরবাদ করে দিব। না করে দাও মিরা সুখে থাকবে। নাহলে অরিদ চৌধুরির অপমান সহ্য করতে হবে প্রতি মুহূর্তে।
অরিদের কথায় মিরা নিজের ঙ্গানে ফিরে আসে। কিন্তু অরিদের কথা তার একদম ভালো লাগে নি। তাকে কি চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে।
মিরা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” আর আমি বুঝাব মিরা কি জিনিস। আপনার কারনে আমার চরিত্রে আঙ্গুল উঠেছে। আপনি যদি কিছু না করতেন এমন নোংরা পরিস্থিতিতে পড়তে হত না। আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা গড়ে তুলুন মি, অরিদ চৌধুরি।
সিমি অরিদ আর মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

“” এই জিসান। মিরা আর অরিদ কবুল না বলে কি বিরবির করছেরে?
জিসান — কয়টা বাচ্চা পয়দা করবে সেটা ভাবছে।
সিমি কটমট চোখে তাকায়। জিসান ঠোঁট উল্টে বলে,,,,,,
“” আমাকে জিজ্ঞাসা করছিস আমি কিভাবে জানব? তুই যেখানে আমি ও সেখানে।
সিমি — আমি ভাবছি পরিনতি কি হবে দুইটার। দুইটার দিকে তাকিয়ে দেখ কেমন রেগে ফেটে যাচ্ছে। আর অরিদকে তো ভালোভাবেই চিনিস কখনো মেনে নিবে না।
কাজী — মা কবুল বলো দ্রুত।

মিরা এতক্ষন সাহস দেখালেও ভয়ে জমে যায়। অজানা ভবিষ্যতের দিকে এইভাবে পা দেওয়াটা কি উচিত হচ্ছে? বাবা আমাকে ভুল বুঝ না প্লিজ। তোমার অসম্মান হবে এমন জিনিস তোমার মেয়ে কখনো করে নি। মিরা সবার চোখের ইশারা আর আশ্বাস পেয়ে কবুল বলে দেয়।
অরিদকে কবুল বলতে বললে অরিদ রাগান্বিত চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে তিন কবুল বলে দেয়। এরপর একটা স্বাক্ষর করে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে লিভিং রুমে ছেড়ে বাহিরে চলে যায়। জিসান আর সিমি একে অপরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর নিশ্বাস ছাড়ে।তারা জানে অরিদ এখন কোথায় যাবে। শিখা চৌধুরিকে আশ্বাস দিয়ে অরিদের উদ্দেশ্যে এরা দুইজন ও বেরিয়ে যায়।
মিরা অনবরত চোখের পানি ফেলছে। মহিলারা ও হাসি মুখে বেরিয়ে যায়। পার্টি থেকে বাড়িটা এক আতঙ্কে রুপ নিয়েছিলো। শিখা চৌধুরি মিরাকে নিজের বুকে স্থান দেয়। মিরা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।
সবার চোখে পানি চিকচিক করছে। পরিস্থিতি কোথায় থেকে কোথায় দাড়িয়েছে। তবে ব্যাপারটা যে মিডিয়া পর্যন্ত যায় নি এই নিয়ে শুক্রিয়া।

হুট করে রুয়ানার ফোনে মিসডকল আসে। রুয়ানা চোখের পানি মুছে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে আব্বু সেইভ করা। রুয়ানা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই সেলিনা হোসের কান্না রত কথা শুনে চিৎকার করে বলে,,,,,,
“” কিহহহহ! কখন আম্মু? আমি এখন ওই আসছি।
ইয়ানা রুয়ানাকে অধৈর্য হতে দেখে বলে,,,,,,
” কি হয়েছে রুই? এমন করছিস কেনো? আম্মুর কি হয়েছে?
রুয়ানা — আম্মু নয় আব্বুর আবার হার্টের ব্যাথা উঠেছে আপু। তোমাকে আর আমাকে ডাকছে।
ইয়ানা বরফের মত জমে যায়। আজ এমন কি হয়েছে। সব বিপদ এক সাথে কেনো হানা দিচ্ছে?
ইউভি — চিন্তা করো না আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমাদের। গুরতর কিছু নয় তো?
রুয়ানা — না ভাইয়া তেমন না। এমন ব্যাথা আব্বুর প্রায় উঠে। আপুর বিয়ের পর এই আজ উঠলো। এতদিন কোনো ব্যাথা উঠে নি। আব্বু অসুস্থ হলে আমাকে আর আপুকে কাছে না পেলে অস্থির হয়ে পড়ে। কিছুক্ষনের মধ্যে আবার ঠিক হয়ে যায়।
ইউভি — ওকে ঠিক আছে চলো আমার সাথে।
শিখা চৌধুরি — আমি ও যাচ্ছি।
ইয়ানা — না আম্মু তুমি এদিকে সামলাও। এখানে তোমার প্রয়োজন আম্মু। আব্বুর এমন আগে মাঝে মাঝে হত। টেনশন করো না।
ইয়ানা আর কিছু না বলে ইউভির সাথে বেরিয়ে যায়।

অগ্নি অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় আরিফ ড্রাইভিং সিটে বসে বলে,,,,,,
“” ভাই ভাবি ফোন দিয়েছে অনেকবার। আপনার এই সিমে।
অগ্নি ভ্রু কিঞ্চিত কুচকে যায়। কপালের ভাঁজ আরও প্রখঢ় হয়। দুই দিনে একবার ও তার ইয়ানার সাথে হয় নি। আজ সকালে সে অফিসে এসেছে । রাত পর্যন্ত মাফিয়া প্যালেসে ছিলো । আর সেখানে সে সব নেটওয়ার্ক অফ করে যায়।
অগ্নি আরিফের থেকে মোবাইলটা নিয়ে ইয়ানার নাম্বারে ফোন দেয়। কিন্তু প্রতিবার বন্ধ দেখাচ্ছে। অগ্নি দাঁতে দাঁত পিষে মোবাইলটা ফিক্কা মেরে গাড়ির বাক্সে ছুঁড়ে ফেলে। বিয়াদপ মেয়ে একটা। ফোন রিসিভ না করে মনটাকে আরও অশান্ত করে তুলেছে। অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪১

” বাড়িতে নয় সোজা প্রাইভেট জেটের কাছে চল।
আরিফ অবাক হয়ে বলে,,,,,,,
“” ভাই এখন জেটের কাছে গিয়ে কি করব?
অগ্নি — বাংলাদেশ যাব। একজনকে থাপ্পর দেওয়ার জন্য হাত প্রচুর নিশপিশ করছে।
আরিফ থাপ্পরের কথা শুনে থমথমে খায়। কাউকে থাপ্পর দেওয়ার জন্য এখন কানাডা থেকে বাংলাদেশ যাবে।
আরিফ — ভাই আজ দুইটা মিটিং আছে। আর এই মিটিং -এ অনেক বড় কন্ট্রাক্ট ডিল করতে হবে। অনেক গুরুত্বপূর্ন মিটিং।
অগ্নির গম্ভীর শব্দ — ক্যান্সেল। সোজা প্রাইভেট জেটের কাছে চল। আরেকটা কথা বললে গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে মারব ইডিয়েট।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৩