অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৫

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৫
লিজা মনি

অগ্নি গাড়ির কাছে যাবে এমন সময় চোখ আটকে যায় দুরে থাকা এক রমনীর দিকে। যে এই মুহূর্তে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে পানি চিকচিক করছে তা দৃশ্যমান। ঠোঁটগুলো অসম্ভব ভাবে কাঁপছে।
অগ্নি ঠোঁট চেপে গম্ভীর নিশ্বাস ছাড়ে। নির্ঘাত এই মেয়ে এখন উল্টাপাল্টা জিনিস ভাববে।
ইয়ানা আর দাঁড়ায় না। এখানে কফি শপে এসে এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফুর্তি করছে। ভালো ওই তো। সে জন্য তো তার কোনো খোঁজ নেয় না। এতগুলো দিন তাকে ছাড়ায় কাটাচ্ছে। তাহলে এই হলো আসল রহস্য। তলে তলে সবাই এগিয়ে যাচ্ছে শুধু আমি বোকা রয়ে গেলাম।
ইয়ানাকে চলে যেতে দেখে মিরা আটকে দিয়ে বলে,,,,,,,

” ইয়ানা ভাইয়া! প্লিজ কথা বলে যা।
ইয়ানা এগিয়ে যেতে যেতে বলে,,,,,,,,
“” অপরিচিত কারোর সাথে কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নয় মিরা। যে আমাকে ভুলে যায় তাকে কেনো আমি মনে রাখব। সে বলেছে আমি যাতে তাকে আমার এই মুখ না দেখায় কারন উনাকে মুখ দেখানোর মানুষ আছে। চলে আয় তুই।
ইয়ানা কিছুটা এগিয়ে যেতেই কেউ তার হাত শক্তভাবে আকড়ে ধরে। ইয়ানা দাঁড়িয়ে যায়। মিরার হাত এত শক্ত লাগছে কেনো পুরুষদের মত! বিরক্তি নিয়ে মিরার দিকে তাকাতে তাকাতে বলে,,,,,
” এইভাবে শক্ত করে হাত কেনো ধরেছো মিরা? বললাম না অগ্নি চৌধুরি নামক কাউকে চিনি না আমি। চলো আমার…..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর বলতে পারে নি সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে স্তব্দ হয়ে যায়। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাড়িয়ে যায়। প্রতিটি কোষে অদ্ভুত এক শিহরন জেগে উঠে। কালো শার্ট পড়ে সুঠামদেহী ব্যক্তি। সামনে দুইটা বোতাম খুলে রাখা ফলে ফর্সা উন্মুক্ত বুকের লোমগুলো দৃশ্যমান। চোখে সানগ্লাস পড়িহিতা ব্যক্তিটি তার দিকে তাকিয়ে চোখ- মুখ কঠিন করে রেখেছে। ইয়ানা সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকায়। যেখানে অগ্নি শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে ইয়ানা ছটফটিয়ে উঠে। হাত ছাড়ানোর জন্য অগ্নির হাত সরাতে চায়। কিন্তু বারাবরের মত সে অক্ষম। এক আঙ্গুল সরাতে পারছে না সেখানে পুরোটা সরানো তো বিলাসিতা।
ইয়ানা জেদ ধরে শক্ত গলায় বলে,,, ,,,,,
” হাত ছাড়ুন আমার। রাস্তার মধ্যে অভদ্রতামি কেনো করছেন?
অগ্নির গম্ভীর আওয়াজ,,

“” বিবাহিতা বউয়ের হাত ধরা অসভ্যতামি? এক থাপ্পরে অজ্ঞান করব বিয়াদব। চলো আমার সাথে।
ইয়ানা ভাঙ্গা গলায় বলে,,,,,,
“” যাব না আমি আপনার সাথে। এক্স গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে কফিশপে যান, আমার কাছে কি?
অগ্নি ইয়ানার ভোঁতা মুখের দিকে তাকায়। ইয়ানার এমন হিংসা দেখে অজান্তেই আড়ালে হালকা হেসে ফেলে।
অগ্নি — যাব কোনো একদিন। এখন তোমাকে আমার প্রয়োজন। একদম বিয়াদবি করবে না। তোমাকে আদর করার জন্য হলেও প্রয়োজন। চলো!
ইয়ানা যায় না। এক জায়গায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কত বড় নির্লজ্জ এই লোক। বলছে এক্স গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে অন্য আরেকদিন যাবে?যাবে না সে। ভুলে যায় নি এতদিনের অবহেলা।
ইয়ানা শক্তভাবে বলে,,,,,

” ওই ঝর্নাকে গিয়ে যত খুশি চুমু খান, শরীরে ধরে নিকনিক করেন। আমার থেকে দুরে সরুন।
অগ্নি — বিয়ে তো আমি তোমাকে করেছি। অন্য কারোর কাছে যাবো কেনো?
ইয়ানা — পুরুষের ঘরোয়া বউ, শিক্ষিত বউ, সুশীল বউ, শালীন বউ এর থেকে বেশি পছন্দ রাস্তার মেয়ে আর পরের বউ।
ইয়ানার কথায় অগ্নি ধমক দিয়ে তিরিক্ষি মেজাজে বলে,,,,,,
“” ঠাটিয়ে থাপ্পর দিব বিয়াদপ। উফফফ এত ঘাড় ত্যারা কেনো তুমি? সব কিছুর মধ্যে দুই লাইন আগে বুঝে যাও। আমি কিন্তু ধৈর্যহারা হচ্ছি ইয়ানা।
ইয়ানার ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না আসছে। কথায় আছে যার প্রতি অভিমান জন্মায় তার সামান্য ধমক ও পাহাড় সময় মনে হয়। ইয়ানা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে বলে,,,,,,

” আবার ধমকাচ্ছেন আমাকে? ভালোবেসে নরম সুরে একবার বলেছেন, ইয়ানা চলো আমার সাথে? নরম সুরে বললে এতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতাম? কখন চলে যেতাম গাড়ির কাছে। সবসময় শুধু ধমকান আমাকে।
অগ্নি কপাল ভাঁজ করে ইয়ানার দিকে তাকায়। নরম সুরে আবার কিভাবে কথা বলে? এই মেয়ে যে এতদিন এত ত্যারামি করছে তার হিসেব কে দিবে? আবার বলছে নরম সুরে কথা বলার জন্য! থাপরিয়ে যে এতক্ষন গাল লাল করিনি সেটা নিয়ে শুক্রিয়া ও করছে না। বিয়াদপ একটা।
অগ্নি আর ইয়ানার কাহিনী দেখে মিরার পেট পেটে হাসি পাচ্ছে। কিন্তু অগ্নির ভয়ে সে মনমত হাসতে ও পারছে না। কোনোমতে হাসি আটকিয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। অগ্নি ইয়ানাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়। এরপর ঠোঁট চেপে ইয়ানার নত মস্তিষ্ক মুখের দিকে তাকায়। গম্ভীর হেসে আচমকা পাজা কোলে তোলে নেয়।
ইয়ানা হতভম্ভ হয়ে যায়। মিরার হাসি মুখটা চুপসে যায়। মুখে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। এরপর অবস্থান বুঝে হেসে উঠে। অগ্নি সামনে এগিয়ে গিয়ে গাড়ির ভিতরে ইয়ানাকে বসিয়ে দেয়। ইয়ানা এখন ও স্তব্দ হয়ে আছে। অগ্নি ড্রাইভিং সিটে বসতেই ইয়ানার টনক নড়ে। ইয়ানা দাঁত কিড়মিড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার জন্য ছটফট করে বলে,,,,,

” যাব না আমি কোথাও আপনার মত বদ লোকের সাথে। যে আমাকে অবহেলা করে তার সাথে আমি যেতে চাই না কোথাও। আপনি তো বলেছেন যাতে আমি আমার মুখ না দেখায়। দেখাব না আমি আমার মুখ। ছেড়ে দিন আমাকে, আমি আমার বাড়ি যাব।
ইয়ানা এক শ্বাসে কথাগুলো বলে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি শান্ত চোখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে মনে হচ্ছে অনেক দিনের মাদকতা ভীর করে আছে। ইয়ানা চুপসে গিয়ে দুরে সরে বসতে চায়। কিন্তু পারে না আবদ্ধ হয়ে যায় অগ্নির বাহুডরে। ইয়ানাকে হেচকা টানে নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে দেয়। মাথায় রাখা উরনাটা অনেক আগেই মাথা থেকে পড়ে গলায় ঝুলে আছে। অগ্নি এক হাতে ইয়ানার গলায় ঝুলে থাকে উরনা সরিয়ে ব্যাক সিটে ফেলে দেয়। এক মুহূর্ত ও বিলম্ব না করে ইয়ানার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। ইয়ানা ভড়কে যায়। শরীর বরফের মত জমে যায়। নিজের অজান্তেই আকড়ে ধরে অগ্নির চুলগুলো। ইয়ানা সরাতে চাই কিন্তু পেরে উঠে না। এক পাশে হেলে পড়ে সে। অগ্নি গলা থেকে মুখ তুলে ইয়ানার দিকে নেশালো চোখে তাকায়। ইয়ানার দুই গালে স্পর্শ করে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে। ইয়ানা মিহি আওয়াজে বলে,,,,,

“” অগ্নি চৌধুরি প্লিজ লিভ।
অগ্নি — প্লিজ ডোন’ট মুভ! যাস্ট ফিল মি সুইটহার্ট।
ইয়ানা — পাগলামো করবেন না। গাড়ির মধ্যে আছেন। প্লিজ মুভ!
অগ্নি — আই ডোন্ট কেয়ার। যাস্ট ওয়ান্স মোর। আই কান’ট কন্ট্রোল মাই সেল্ফ।
ইয়ানা — আপনি কিন্তু অভদ্র হয়ে গিয়েছেন।
ইয়ানা সরে যেতে চাইলে অগ্নি শক্ত বাধনে আটকে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,
অভদ্র হয়েছি আমি তোমার ওই প্রেমে
তাই কাছে আসো না
ইশশ কথা বলো না
কোনো কথা বলো না

অগ্নির হিসহিসিয়ে কথা বলা ইয়ানার পুরো সত্তা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ইয়ানা অগ্নির বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। যে কোনো সময় অঘটন ঘটানোর কাজে লেগে পড়বে এই নির্লজ্জ লোক। চোখ আর ভাব ভঙ্গি ভালো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। ইয়ানাকে ছটফট করতে দেখে অগ্নি নিজের সাথে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। ইয়ানা শান্ত হয়ে পড়ে। অগ্নির স্পর্শ প্রতিবারের মত নরম এরপর ধীরে ধীরে এক উন্মাদনার শক্ত থাবায় পরিনত হয়। অগ্নি ইয়ানাকে আগলে নেয়। খুঁজে পায় নিজের শান্তি। এতদিনের ছটফট করা বিষন্ন মন ঠান্ডা হয়ে আসে। যাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না অথচ তাকে ছাড়া,পাঁচ- থেকে ছয়দিন কাটিয়েছে। অগ্নি ইয়ানাকে শক্তভাবে আকড়ে ধরে। রাতে তৈরি হওয়া ক্ষতে দন্তের ঘর্ষনে আরও তাজা হয়ে উঠে। ইয়ানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষনের মধ্যে অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে ইয়ানার গালের সাথে নিজের গাল লাগায়।এরপর হিসহিস করে বলে,,,,,

” পাগলামো করো আর জান। এতদিনের বিষন্ন মনকে সতেজ করে তুলেছি তোমার ছোঁয়ায়। চুপচাপ বসে থাকো নাহলে যা করতে চেয়েছিলাম সেটা সম্পূর্ন করব, তখন কিন্তু আর নিজেকে আটকাব না।
অগ্নির কথায় ইয়ানা সিটিয়ে যায়। ভয়ে আর কিছু বলে না। ঠোঁটে অসম্ভব ব্যাথা করছে। ইয়ানা অগ্নির কোল থেকে উঠে যেতে নিলে অগ্নি আটকিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,
“” এখানেই বসে থাকো।তোমার সাথে বিশ্বাস নেই। সুযোগ বুঝে গাড়ি থেকে লাফ দিতে পারো।
ইয়ানা — এতটা সাহস আমার নেই।
অগ্নি — সেটা আমি প্রতি পদে পদে টের পাচ্ছি।

ইয়ানা আর কিছু বলে না। চুপ হয়ে যায়। গাড়ি শাঁ শাঁ করে চলতে থাকে। গাড়ি গিয়ে প্রবেশ করে জঙ্গলের কাছে এক জনমানবহীন জায়গায়। এতক্ষন ঘাপটি মেরে অগ্নির বুকে শুয়েছিলো তাই রাস্তা খেয়াল করে নি কোথায় যাচ্ছে। গাড়ি থামতেই ইয়ানা চোখ মেলে মাথা উচু করে কাউচ ভেদ করে বাহিরে তাকায়। সাথে সাথে মুখ হা হয়ে যায়। এইটা তো চৌধুরি ভিলা না। এইটা অগ্নির ডুপ্লেক্স বাড়ি। আগে যখন বাংলাদেশ আসতো তখন এখানেই সে থাকত। চৌধুরি ভিলাতে খুব কম যেত। অগ্নি গাড়ি থেকে নামে। এরপর ইয়ানাকে কোলে নিতে গিয়ে ও থেমে যায়। একটা রহস্য ময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,

“” নামো আর নিজের পায়ে হেঁটে হেঁটে আসো।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,
” আপনার কোলে চড়ার ইচ্ছে আমার নেই। এখানে কেনো নিয়ে আসছেন আমাকে?
অগ্নির সোজাসাপ্টা উত্তর,,,,,
” তোমাকে সাইজ করার করার জন্য।
ইয়ানা ফুঁশে উঠে বলে,,,,,
” আমাকে মারার জন্য এনেছেন?
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে ,,,,,
” মনে করতে পারো। আমার শাস্তির স্টাইল অন্যরকম। এখন এক সপ্তাহ বেড রেস্ট থাকতে হয় আর শাস্তি দিতে গেলে দেখো গেলো হসপিটালে ভর্তি হতে হলো।
অগ্নির কথায় ইয়ানা চুপসে গিয়ে বলে,,,,,

” উন্মাদ নেকড়ে! ”
অগ্নি — এতটা ও অধৈর্যশীল কিন্তু আমি না। তাই উন্মাদ নেকড়ের ট্যাগ লাগানো ঠিক হবে না।
ইয়ানা — আপনার জায়গা, সময় এইসব কখনো মেনেছেন? বেশ করেছি নেকড়ে বলেছি। আপনি তো নেকড়ে ওই। যখন তখন ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ইয়ানা নেমে যায় গাড়ি থেকে। অগ্নিকে রেখে দরজার সামনে আসে। দরজায় ধ্বাক্কা দিতেই লাল সিগন্যাল জ্বলে উঠে। ফ্রিঙ্গার টাচ লাগবে। ইয়ানা কিছুক্ষন টিপাটিপি করে অসহায় হয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি সেই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। প্যান্টের পকেটে হাত রেখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়ানার অসহায় মুখটা দেখে অগ্নি এগিয়ে গিয়ে বলে,,,,,,,

” তেজ দেখিয়ে আমাকে রেখেই চলে আসলে এখন পারছো না কেনো?
ইয়ানা তাকায় না অগ্নির দিকে। তার এখন কথা বলার মুড নেই। অগ্নি স্ক্যানারে টাচ করতেই কাউচের দরজাটা খুলে যায়। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে উপরে চলে যায়। সে এখানে আগেও এসেছে তাই সবকিছু পরিচিত। ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে। এখানে কোনো গার্ড, স্টাফ কেউ নেই। ইয়ানা বাহিরে উকি দেয়। চারপাশে ভালোভাবে নজর বুলায়। ঠিক তখন ওই কারোর গম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসে,,,,,
“” কি পালানোর রাস্তা খুঁজছেন?
হঠাৎ অপ্রত্যাশিত বাক্য শুনাতে ইয়ানা ভয়ে কেঁপে উঠে। বুকের মধ্যে থু থু দিয়ে পিছন ফিরে তাকায়। অগ্নি দরজা লাগিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। অগ্নির মুখে রহস্যময় হাসি। ইয়ানা ঘাবড়ে যায় অগ্নির ব্যবহারে। শুকিয়ে আসা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,,,,

” ক.. কাছে আসছেন কেনো?
অগ্নি বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” বউ যেহেতু আছে কাছে তো আসব ওই।
অগ্নি ইয়ানার একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। ইয়ানা দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ – মুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখে। অগ্নি ইয়ানার মুখের দিকে তাকায়। ইয়ানা হঠাৎ আঘাত পাওয়ায় আহহ করে উঠে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো। ইয়ানা হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। কত বড় বদমাশ লোক ভাবা যায়। তাকে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে বেঁধে রাখছে।
অগ্নি ইয়ানার থেকে সরে এসে বিছানায় বসে বলে,,,

“” এইটা তোমার শাস্তি। আমাকে এই কদিন রিজেকশন করার জন্য।
ইয়ানা তেঁরে যায় অগ্নির কথায়। সামনে গিয়ে দাঁত পিষে বলে,,,,,,
” আপনি আমাকে অবহেলা করেন নি? কানাডা যে গিয়েছেন বলে গিয়েছেন একবার।
অগ্নি — আমি বলতে চেয়েছিলাম ইয়ানা বাট তুমি শুননি। বলেছিলাম একটা কথা বলব। কিন্তু তুমি শুননি। বলছিলাম পস্তাবে এরপর। তুমি বলেছিলে নাহহ। তাহলে এতে আমার কি অন্যায়। যদি তুমি না শুনো তাহলে আমি কি করব?
ইয়ানার মনে পড়ে সেদিনকার ঘটনা। অগ্নি বলতে চেয়েছিলো বাট সে শুনে নি।
ইয়ানা — একটা ফোন তো দিতে পারতেন। আমার চিন্তা হয় প্রচুর আপনাকে নিয়ে। কখন, কোন সময় বিপদের সম্মুখীন হন বুঝা মুশকিল।
অগ্নি কপাল ভাঁজ করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইয়ানা ঠোঁট উলটে বলে,,,,,

” খুলে দিন।
অগ্নি — নো। এইটা তোমার শাস্তি।
ইয়ানা — তাহলে আপনার ও তো শাস্তি পাওয়া উচিত। আপনি ওত আমাকে অবহেলা করেছেন।
অগ্নি — আমি হাত বাধা অবস্থায় থাকলে তোমাকে আদর করবে কে?
ইয়ানা কটমট চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। কান্না পাচ্ছে তার। ইয়ানা গিয়ে শুয়ে পড়ে। অগ্নি ইয়ানার পাশে যেতে নিবে এমন সময় ইয়ানা নিস্তেজ সুরে বলে,,,,,
” প্লিজ পাগলামো শুরু করবেন না । প্রচুর দুর্বল লাগছে নিজেকে।
অগ্নি ইয়ানার পাশ থেকে চার্জার নিয়ে বলে,,,,,
” কাছে কে আসছে তোমার? মোবাইলে চার্জ কম তাই চার্জার নিয়েছি তোমার পাশ থেকে।
ইয়ানা লজ্জায় পড়ে যায়। এইভাবে কট খাবে সপ্নে ও ভাবে নি। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়াতেই ইয়ানার চোখ চিকচিক করে উঠে। অগ্নির উদ্দেশ্যে বলে,,,,,

” মি, চৌধুরি আমাদের বিয়ের কাবিন কত দিয়েছেলেন?
অসময়ে ইয়ানার এমন প্রশ্নে অগ্নি কপাল কুচকে তাকায়। চোখ ছোট ছোট করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” কাবিনের টাকার পরিমান দিয়ে কি করবে শুনি?
ইয়ানা — জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।
অগ্নি — এক টাকা।
অগ্নির কথা কানে পৌঁছাতেই ইয়ানা এক লাফে বিছানা থেকে উঠে। হাতে এখন ও হ্যান্ডকাফ লাগানো। চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আচমকা চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,
“” কিহহহ! এক টাকা?
ইয়ানার কান্ডে অগ্নি গম্ভীর হয়ে তাকায়। এরপর শান্ত গলায় বলে,,,,
” হ্যা। এই মাত্র না বললে তোমার শরীর দুর্বল লাগছে। দুর্বল শরীর নিয়ে এত বড় চিৎকার দাও কিভাবে?
ইয়ানার চোখে পানি চিকচিক করছে। ইয়ানার এমন অবস্থা দেখে অগ্নি হতভম্ভ হয়ে যায়। ইয়ানা হাটু ভাঁজ করে বসে বলে,,,,,

” ছিহহ অগ্নি চৌধুরি ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে এক টাকার কাবিন দিয়ে বিয়ে করতে লজ্জা করলো না। এতটা কিপটামি না করলেও পারতেন।
অগ্নি অবাক হয়ে বলে,,,,,
‘ তাই বলে তুমি কান্না করবে?
ইয়ানা চোখের পানি মুছে বলে,,,,,
” কান্না তো আমার দুঃখে করছি না। কান্না করছি আপনার কথা ভেবে। বিয়ের সময় কত অভাবে ছিলেন আপনি সেটা ভেবেই আফসোস হচ্ছে। মাত্র এক টাকার কাবিনে আপনাকে বিয়ে করতে হয়েছে। আহারে কত অভাব ছিলো।
ইয়ানার নাটক দেখে অগ্নি দাঁতে দাঁত চেপে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” চুপ ইডিয়েট? নাটক বন্ধ করো নাহলে মাইর খাবে আমার হাতে। কাবিন হিসেবে এক টাকা যাস্ট তোমার কাছে যাওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছিলো। আমার সব সম্পত্তির সমান ভাগিদার তুমি।কিন্তু কাবিন নামায় লেখা আছে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তোমার আর আমার কখনো বিচ্ছেদ হতে পারবে না। না তুমি কখনো কোনো পুরুষের কাছে যেতে পারবে না। আর না আমি কোনো নারীর কাছে যেতে পারব।
অগ্নির কথায় ইয়ানা থমথমে খেয়ে যায়। জীবনের প্রথম সে আজ কাবিনের এমন নিয়ম শুনেছে। ইয়ানা শান্ত হয়ে বসে বলে,,,,,

“” ইয়া খোঁদা আর কত নিয়ম দেখব আমি। উনার সাথে সাথে আমাকেও ভিন্নগ্রহের প্রানী বানিয়ে দিচ্ছে। মাত্র এক টাকার কাবিন!
ইয়ানাকে এক টাকা নিয়ে আফসোস করতে দেখে অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,,,
“” আমার যা আছে সব তোমার জান। আমি পুরোটাই যখন তোমার তখন আর কি চাই।
ইয়ানা কিছুক্ষন গম্ভীর থেকে বলে,,,,,
“” এইভাবে শার্টের বোতাম খুলে রেখে বাহিরে কেনো যান?
অগ্নি নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” তাহলে কিভাবে যাব?
ইয়ানা — কেনো লাগিয়ে যেতে পারেন না। মেয়েদেরকে উন্মুক্ত বুক দেখাতে ভালো লাগে। ওই ঝর্না কিভাবে তাকিয়ে ছিলো জানেন?
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে বলে, ,,

“” আর ইউ জেলাস বেইবি?
ইয়ানা — নো! আপনার মনে আছে একবার আমার দিকে গার্ড তাকিয়েছিলো বলে সেই তিলটা তুলে ফেলেছিলেন। এরপর সেখানে নিজের নাম খোদায় করেছেন। এই দেখুন দাগ এখন ও দৃশ্যমান।
ইয়ানা উড়না সরিয়ে সে জায়গাটা দেখায়। অগ্নি কিছু বলে না। গম্ভীর হেসে হাতে একটা মোটা সূঁচ নেয়। এরপর ইয়ানার কাছে গিয়ে হ্যান্ডকাফ খুলে দেয়। শার্টের নিচের বোতাম দুটি খুলে ফেলে। ইয়ানা তব্দা লেগে আছে। শার্ট কেনো খুলছে? আবার কি করবে।
অগ্নি ইয়ানার হাতে সুঁচটা দিয়ে বুকে ইশারা দিয়ে বলে,,,,,
” যেখানে ঝর্না তাকিয়েছিলো সেখানে নিজের নাম লিখো।
অগ্নির কথায় ইয়ানা পিছিয়ে যায়। অবাক হয়ে তাকায় সে।
ইয়ানা — এইসবের মুড নেই। ব্যাথা পাবেন।
অগ্নি ঠোঁট চেপে হেসে বলে,,,,,,

” পুরো শরীর ক্ষতিবিক্ষত করলে ও কিছু হবে না। যা বলেছি তাই করো কুইক।
ইয়ানা দাঁত পিঁষে বলে,,,,
” বললাম তো পারব না।
অগ্নি — তোমাকে পারতে হবে ইয়ানা। গড প্রমিস যদি এইটা করো তাহলে আজ বাহিরে যাব না। জঙ্গলের সেই টর্চারসেলে দুইজন ব্যক্তিকে বন্ধী করে রেখে এসেছি। আমি যাস্ট যাব আর নরকের সাথে মরন যন্ত্রনা দিব। যদি আমার বুকে তোমার নাম লিখো ট্রাস্ট মি ছেড়ে দিব তাদের। বাহিরে এক পা ও দিব না আজ। মুক্তি পাবে তারা।
ইয়ানা ভয়ে আতকে উঠে। দুইজন ব্যক্তির জীবন বাঁচবে। কিন্তু এই কাজটা কিভাবে করব? ইয়ানা কাঁপাকাঁপা হাতে সুঁচটা নেয়। এরপর অগ্নির গলার নিচে চোখ বন্ধ করে ইয়ানা নাম লিখে। অগ্নি গম্ভীর হয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা চোখ মেলে তাকায়। অগ্নির বুকে রক্ত দেখে মুখে হাত দিয়ে কান্না করে উঠে। অগ্নি টিস্যু পেপার দিয়ে রক্তটা মুছে শব্দ করে হেসে বলে,,,,
” কান্না করে না জান। একদম পারফেক্ট লাগছে। এই নাম খোদায় করে শুধু নামটাই লিখো নি। বরং সারাজীবনের জন্য অগ্নি চৌধুরির বুকের বন্দিনী হয়েছো। চাইলে ও আর পালাতে পারবে না। কারন শরীরে শিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছো।
ইয়ানা নাক টেনে বলে,,,,

” ব্যাথা পেয়েছেন বেশি?
অগ্নি জড়িয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,,,,,
” ব্যাথা নয় শান্তি লাগছে।
ইয়ানা ফুঁপিয়ে উঠে।
অগ্নি — কান্না করলে কিন্তু আমি নিজের প্রমিস রাখব না।
ইয়ানা চুপ হয়ে যায়। অগ্নির বুকের সাথে ল্যপ্টে যায়। কিন্তু অগ্নি বেশিক্ষন আগলে রাখে না। হাতে থাকা হ্যান্ডকাফ আবার লাগিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
” শাস্তি পূরন না হওয়া পর্যন্ত লাগানো থাকবে।
ইয়ানা শক্ত চোখ তাকাতে চাই অগ্নির দিকে কিন্তু তাকায় না। কোনো শব্দ ও ব্যায় করে না। অগ্নি রুম থেকে বের হয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে খাবার নিয়ে এসে বলে,,,,
” দ্রুত খেয়ে নাও। বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
ইয়ানা মুখ সরিয়ে বলে,,,,,

” খাব না. ।
অগ্নি ঠান্ডা গলায় বলে,,,,
” সত্যি খাবে না?
ইয়ানার কাটকাট জবাব,,,,,
” নাহহ ”
অগ্নি — ভেবে দেখো? সত্যি খাবে না?
ইয়ানা — নাহহ।
অগ্নি খাবারের প্লেট নিয়ে বলে,,,,
” ওকে এজ ইউর ইউশ। আমাকে আর কষ্ট করে খাওয়াতে হবে না। বেঁচে গেলাম আমি।
ইয়ানা অবাক হয়ে তাকায় অগ্নির দিকে। এই লোক আজ এত ভালো ব্যবহার করছে কিভাবে? অন্য সময় হলে তো চেপে ধরে খাওয়াত। আজ একবার না বলাতেই মেনে নিয়েছে! গিরগিটি একটা।
অগ্নি ইয়ানার ভেংচি কেটে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,

” আপনার কষ্ট হবে ভেবেই আমি খাচ্ছি না। বুঝতে পারছেন কতটা ভাবি আপনাকে নিয়ে।
অগ্নি ইয়ানার থাকা মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে হালকা হেসে যেতে যেতে বলে,,,,
আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য
শুধু তোমারি প্রেমের ওই জন্য
তোমার ওই পরশে জানি ওগো সোনা বউ
জীবন হলো যে অনন্য।
ইয়ানাকে রুমে রেখেই বেরিয়ে যায়। ইয়ানা এখন ও তব্দা লেগে তাকিয়ে আছে। এত ভালো হলো কিভাবে এই নেকড়ে সাইকো! অগ্নি রুম থেকে বেরিয়ে চাপা হাসে। আজ ইচ্ছে করে জোর করে নি। সে ও দেখবে কতক্ষন জেদ ধরে থাকতে পারে । ইয়ানাকে অভুক্ত রেখে সে নিজেও কিছু খায় নি।
ড্রয়িং রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে। রুমে গেলে এই মেয়েকে সামনে রেখে জীবনে ও কাজে মনযোগী হাতে পারবে না। অবাধ্য মন শুধু সেদিকে পড়ে থাকবে ।

মিরা শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে অনেক্ষন যাবত বসে আছে। এতক্ষন আহিয়ার সাথে আড্ডা দিয়েছে। নিজেকে একা একা লাগছে। অরিদের রুমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। দেয়ালে চারটা বড় সাইজের ছবি ঝুলানো। মিরা ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে সামান্য মুচকি হাসে। এই লোকটা যে প্রতিনিয়ত মেয়েদের মত ঝগড়া করে সেটা কে বলবে? ডান পাশে কর্ণারে একটা সেল্ফ রাখা। সেখানে অনেকগুলো ট্রফি গুছিয়ে রাখা। যা আজ পর্যন্ত অরিদ খেলা থেকে শুরু করে পড়াশুনাতে অর্জন করেছে। মেধা, সৌন্দর্য আর ক্ষমতার জন্য অরিদকে ভার্সিটির সবাই চিনে। মিরা আরও অনেক কিছু দেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। উদ্দেশ্যে সুমুর রুমে যাওয়া। রায়ান বাড়িতে নেই সেটা মিরা জানে। মিরা সুমুর রুমের সামনে গিয়ে সুমু বসে আছে। মিরা নক করে ভিতরে ডুকে ভিতরে প্রবেশ করে। সুমুর পাশে বসে উৎসুক হয়ে বলে,,,,

” আজ ইয়ানার সাথে আড্ডা দেওয়ার পর ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো।
সুমু অবাক হয়ে বলে ,,,,,,,
” এরপর? তাদের মান – অভিমান, দুরত্ব কমেছে তো?
মিরা — সেটা তো বলতে পারব না।বাট ভাইয়া ইয়ানাকে জোর করে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে কোথাও নিয়ে গিয়েছে।
সুমু — কিহহহ! কোথায় নিয়ে যাবে?
মিরা — সেটা তো জানি না বাট যাবে হয়ত কোথাও। আহিয়ার থেকে শুনেছি ভাইয়ার এক ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে। সেখানে ভাইয়া আগে আসলে সেখানে থাকত। মনে হয় সেখানেই নিয়ে গিয়েছে।
সুমু দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে ,,,,,
” ইশশরে মিরা যদি ওদের রোমান্স দেখতে পারতাম জীবনটা ধন্য হয়ে যেত। নিশ্চয় এখন লাগা লাগা প্রেম করবে।
মিরা অবাক হয়ে বলে,,,,,

” লাগা লাগা প্রেম কি?
সুমু ঠোঁট উল্টে বলে,,,,,
” সেটা আমিও জানি না বাট শুনেছি লোকের মুখে তাই আমি ও বললাম। রোমান্স দেখতে খুব ইচ্ছে করছে রে মিরা। তাও আবার ইয়ানা আর ভাইয়ার।
মিরা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” তোমার তো জামাই আছে সুমু। তার সাথে করে শখ পুরন করে নাও।
সুমু– আরে ধুর নিজে করা আর তাদেরটা দেখা সমান নাকি? আচ্ছা তোমার আর অরিদ ভাইয়ার মধ্যে কিছু হয় নি?
মিরা কেঁশে উঠে। মাথা নাড়িয়ে না বলে। এরপর নাক ছিটকিয়ে বলে,,,,,,
” এই ঝগড়ুটের কাছে কে যাবে? বুদ্ধিহীন লেজকাটা বাদর একটা। আমি তো ইহজনমের ও যাব না।
সুমু উচ্চস্বরে হেসে বলে,,,,,,

” কিছুদিন মানিয়ে নাও মিরা। মনে হয় না অরিদ ভাইয়া খারাপ ছেলে। আমি যতদিন দেখেছি খারাপ কিছু চোখে পড়ে নি। ভাইয়া একটু মানসিকভাবে ডিস্ট্রাব। নিজেদের নিজেরা সময় দাও। দেখবে একটা সময় গিয়ে ঠিক হয়ে যাবে।
মিরা হেসে বলে,,,,,,
” আর পাঁচটা দাম্পত্য জীবন আমাদের নয় সুমু। আমাদের সম্পর্ক কখনো ঠিক হবে না। উনার আর আমার রাস্তা আলাদা। ওইদিন বিয়েটা যাস্ট একটা এক্সিডেন্ট সুমু। আর সেটা উনি এক্সিডেন্ট হিসেবে ওই সারাজীবন মেনে নিবে। আমি আর কয়েক মাসের মধ্যে কানাডা ব্যাক করছি। একদম চিরদিনের জন্য উনাকে মুক্তি দিয়ে যাব।
মিরার চোখে পানি চিকচিক করছে। বিয়েটা যেভাবে হোক, সে যত ঘৃনা করুক অরিদকে। কিন্তু কোথাও যেন একটা মায়া কাজ করছে। আচ্ছা এইটা কি শুধু কবুলের শক্তি? আমি কি ধীরে ধীরে অসভ্য ব্যক্তিটার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি ! মিরাকে ইমোশনাল হতে দেখে সুমু আওড়ায়,,,,,,,

” সম্পর্ককে একটা সুযোগ দাও মিরা। বিয়ে একবার ওই হয়। যেভাবেই হোক বিয়ে, কিন্তু পরিশেষে তোমরা স্বামী- স্ত্রী। এইভাবে কিভাবে আলাদা হতে পারো?এইটা একদম ঠিক হবে না মিরা।
সুমুর কথায় মিরা মেকি হেসে কথা ঘুরিয়ে দুষ্টু হেসে বলে,,,
” তোমার তো বাসর হয়ে গিয়েছে তাই না?
সুমু লজ্জায় দৃষ্টি নামিয়ে দেয়। কেঁপে উঠে পুরো কায়া। মিহি আওয়াজে বলে,,,,,,
” এইসব নাউযুবিল্লাহ কর্ম শুনলেই সুরসুরি উঠে শরীরে। প্রেক্টক্যাল করা তো বিলাসিতা মিরা।
সুমু ভোঁতা মুখে দেখে মিরা ফিক করে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় কেউ নক করে উঠে। মিরা আর সুমু সেই ব্যক্তিটার দিকে তাকায়। মিরা রায়ানকে দেখে উঠে গিয়ে সুমুর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে নিম্ন আওয়াজে বলে,,,,,,

” শখ পূরন করো সুইটহার্ট। সুরসুরি উঠলেও কিছু করার নেই। বেস্ট অফ লাক।
মিরা চোখ টিপ মেরে চলে যায়। সুমু এইদিকে ভাবছে তাদের এইসব লাগাম ছাড়া কথা রায়ান শুনে ফেলে নিতো? সুমুর ভাবনার মধ্যে রায়ান রুমে ডুকে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,
” অন্যেরটা না দেখে নিজেকে দিয়ে ট্রাই করতে পারো। তোমার সুঁরসুঁরি এত বেশি জানা ছিলো না একদম।
রায়ানের কথায় সুমুর গাল রক্তিম হয়ে উঠে। লজ্জায় আরষ্ঠ হয়ে যায় তার শরীর। কি লজ্জাজনক পরিস্থিতি সব শুনে ফেলেছে? সুমু নিচু আওয়াজে বলে,,,,,
” আজ তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন যে?
রায়ান গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,

” কয়েকদিনের ভিতরে কানাডা ব্যাক করছি তুমি কি প্রস্তুত?
সুমু চমকে উঠে। রায়ানের দিকে চোখ তোলে তাকায়। কয়েকদিনের মধ্যে কানাডা চলে যাচ্ছে মানে? নিজের দেশ, প্রিয় মানুষগুলোকে রেখে কিভাবে যাবে সে? ভাবতেই যেন ভিতরটা কেঁপে উঠে। সুমু ভাঙ্গা গলায় বলে,,,,,
” ক.. কি? কবে যাব ?
সুমু রায়ানের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তপ্ত শ্বাস ফেলে। সুমুর দুই গালে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,,,
” কান্না করো না প্লিজ। আমি সহ্য করতে পারি না সেই চোখের পানি। তুমি যখন ইচ্ছে হবে আমাকে বলবে আমি নিয়ে আসবে। বছরে একবার হলেও দেশে আসব। প্রমিস।
সুমু কান্নামিশ্রিত চোখে তাকায় রায়ানের দিকে। সুমু চোখের পানি মুছে বলে,,,,,,
” সত্যি বলছেন?
রায়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,

” একদম।
সুমু হালকা হাসে। রায়ান শরীরের ব্লেজারটা খুলে বলে,,,,,
” আমরা একা যাচ্ছি না । অগ্নি, ইয়ানা, ইউভি সবাই চলে যাবে। মূলত অগ্নি আমাদের রাতে জানিয়েছে কানাডায় ব্যাক করার কথা। ইয়ানা এখন ও জানে না। আমার কাজ, ইউভির কাজ সব জমে আছে। তবে অরিদ ও যেতে পারে । ওর পড়াশুনা কম্লিট করার জন্য যাবে। এখন অরিদ গেলে নিশ্চয় মিরা বসে থাকবে না। আর তাছাড়া মিরা তো বাংলাদেশে কয়েক মাসের জন্য এসেছিলো।
সুমু মনযোগ সহকারে রায়ানের কথা শুনে। এইটা শুনে তৃপ্তি লাগছে যাক সবাই তো যাচ্ছে। নিজেকে আর একা ফিল হবে না। আর তাছাড়া বছরে তো একবার আসবেই। মায়ের কথা মনে হতেই সুমুর মনটা বিষিয়ে উঠে। কিভাবে থাকবে সে মাকে ছাড়া?

রাতের ঘন অন্ধকারে চৌধুরি ভিলাটা ল্যাম্পস্টের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে।
অরিদ ক্লান্ত হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। ভিতরে লিভিং রুমে কাউকে না দেখে সামান্য কপাল কুচকে আসে। লিভিং রুম থেকে সোজা কিচেন রুমে গিয়ে ফ্রিজ খুলতেই আহিয়া চেঁচিয়ে উঠে বলে,,,,,
” এই ভাইয়া একদম আমার আইসক্রিমে হাত দিবে না বলে দিলাম।
অরিদ কপাল কুচকে আহিয়ার দিকে তাকায়। সে মূলত আইসক্রিম ওই নিতে এসেছে। আর বক্সে এখনও হাত লেগে আছে। আহিয়ার কথায় হেসে আইসক্রিমের বক্সটা নিয়ে শব্দ করে ফ্রিজ লাগিয়ে দেয়। এরপর আহিয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে ধপাস করে গিয়ে ডিভানে বসে পড়ে। আহিয়া চোখ বড় বড় করে নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে। আহিয়া কাছে এসে বলে,,,,,

” তুমি আমার আইসক্রিম কেনো আনলে? তোমার ভাগেরটা খেয়ে এখন আমারটা কেনো এনেছো? আমি কিন্তু বড় আম্মুর কাছে বিচার দিব ভাইয়া।
অরিদ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,,,,,,,
” ছিঁচকাদুনি এইটা ছাড়া আর কি পারিস। যাহহ বিচার দে গিয়ে। ততক্ষনে আইসক্রিম আমার পেটে চলে যাবে। তরটা যে খেয়েছি তার প্রমান থাকবে না কোনো। আউট!
আহিয়া অরিদের কথায় ভাবুক হয়ে যায়। ঠিক সে চলে গেলে তো খেয়ে ফেলবে ততক্ষনে। আহিয়া না গিয়ে অরিদের কাছ থেকে আইসক্রিমের বক্স ছিনিয়ে নিতে যায় কিন্তু পারে না।
মিরা নিচে কিছু কাজের জন্য আসে। অরিদ আর আহিয়াকে যুদ্ধ করতে দেখে অবাক হয়ে বলে,,,,,,

” আপনি সামান্য আইসক্রিম নিয়ে এইভাবে ওর সাথে পলাশির যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে । ও ছোট মানুষ ওরটা কেনো নিয়েছেন?
মিরার হঠাৎ আসাতে অরিদ কিছুটা থমথমে খায়। তবে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
” আমাদের ভাই বোনের মধ্যে তোমার না ডুকলেও চলবে।
আহিয়া — কেনো ডুকবে না? অবশ্যয় ডুকবে। মিরা আপু তোমার বউ আর আমার ছোট বউ মনি। সম্পূর্ন রাইট আছে আপুর।
আহিয়ার কথায় অরিদ মেজাজ দেখিয়ে বলে,,,,
” বউ বলে চাপিয়ে দিলে থাপ্পর খাবি আহি আমার হাতে। যাহহ দিতে চেয়েছিলাম আইসক্রিম এখন সেটাও দিব না।
অরিদ এক লাফে উঠে আহিয়া কিছু বলার আগেই চলে যায়। নিজের আইসক্রিম নিয়ে যেতে দেখে আহিয়া উচ্চস্বরে বলে,,,,,

” তোমার পেটে সইবে না ভাইয়া অভিশাপ দিলাম। অন্যের হক মেরে খাচ্ছো।
অরিদ তার আগেই চলে যায়।
মিরা — মন খারাপ করো না আমি কাল কিনে দিব।
আহিয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠে। মিরাকে জড়িয়ে হাসি মুখে বলে,,,,,
” থ্যাংক ইউ ছোট বউ মনি।
মিরা মুচকি হাসে।

রাতের নিস্তব্দতায় ছোট ডুপ্লেক্স বাড়িটা জাদুময়ী হয়ে উঠে। ইয়ানা ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পেটের ক্ষুধার জন্য ঘুম আসছে না। সে জানে অগ্নি ড্রয়িং রুমে বসে আছে। একবার যেহেতু ওয়াদা করেছে আজ বাহিরে যাবে না তার মানে যাবে না। এতটুকু বিশ্বাস তার আছে। ইয়ানার রুমের ভিতরে পায়চারী করছে। হাতে এখন ও হ্যান্ডকাফ লাগানো। এক বার না হয় সে মানা করে দিয়েছে তাই বলে কি পুনরায় খাওয়ার কথা বলা যায় না? জোর করলে কি উনার শক্তি কমে যেত? সবকিছুতেই তো জোর করে আজ শক্তি দেখালে কি এমন হত? আমি না বললাম আর উনিও মেনে নিলেন! একদম শান্তভাবে সরে গিয়েছেন? আর বললেন ও না খাওয়ার কথ! ভাবা যায় মাঝে মাঝে কিভাবে গিরগিটির মত রং পাল্টায়।

ইয়ানা আর সহ্য করতে পারছে না ক্ষধার যন্ত্রনা। সেই সকালে খেয়ে বের হয়েছিলো এখন ও পর্যন্ত অভুক্ত। ক্ষুধা লাগাটায় স্বাভাবিক। ইয়ানা নিজের ইগোকে এক পাশে রেখে অনেক কষ্টে দরজা খুলে। রুমে থেকে বের হয়ে আসে চুপিচুপি। সিঁড়ির কাছে আসতেই কপাল কুচকে ফেলে। পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে অন্ধকার আর পিনপিন নিরবতা। শুধু একটা জায়গায় কিছু আলো দৃশ্যমান। মনে হচ্ছে কোনো মুভির সিন চলছে তবে দুর থেকে বেশি বুঝা যায় না। ইয়ানা আরেকটু সামনে গেলেই বুঝতে পারে জায়গাটা ডিভানের উপর।

আর সেখানে অগ্নি চৌধুরি বসে আছে। ইয়ানা পা টিপে টিপে সামনে যায়। যাতে কোনো শব্দ না হয়, একদম নিশ্বঃব্দে। ডিভানের কাছে গিয়ে অগ্নির পিছনে দাঁড়ায়। অগ্নি কপাল কুচকে ল্যাপটপে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে যেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ আটকে যায় এক ঘনিষ্ট দৃশ্য। মুহর্তের মধ্যেই ইয়ানা চেঁচিয়ে উঠে,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৪

” নাউযুবিল্লাহ! আস্তাগিফিরুল্লাহ! তাওবা, তওবা। মি, অগ্নি চৌধুরি আপনি মাই ফল্ট মুভি দেখছেন? ইয়া খোদা ছিহহ ছিহহ কেমন বাজে দৃশ্য।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৬