অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৮
লিজা মনি
চৌধুরী বাড়ির লিভিং রুমে সকালের রোদ জানালা বেয়ে নরম হয়ে পড়ছে। ঘরের ভেতর ব্যস্ততার ছায়া।
সাজিদ চৌধুরী খবরের কাগজের পাতায় চোখ রেখে রাজনীতির মোড় ঘোরার অপেক্ষায়। শিখা চৌধুরী অন্যমনস্কভাবে চায়ের কাপ ঠোঁটে তুলছেন বারবার।
আহিয়া ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। চোখে-মুখে উদ্বেগ তার। পড়াশুনার প্রচুর চাপ বেড়েছে।। অরিদ একপাশে বসে আছে। মুখ গম্ভীর হয়ে আছে আঙুল ছুঁয়ে যাচ্ছে কনসোলের বোতামভিডিও গেমের অদৃশ্য জগতে সে নিমজ্জিত।
রায়ান আর ইউভি ঘর ছাড়েন অনেক আগেই।
ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে মিরা আর সুমু।
সুমু চোখ দিয়ে ইশারা করে মিরাকে।
মিরা মাথা নাড়ে সংকোচে না বুঝায়।
সুমুর ঠোঁটে দৃঢ়তা দেখে মিরা আর গড়িমসি করতে না পেরে পা বাড়ায় শিখা চৌধুরী আর সাজিদ চৌধুরীর সামনে।
শিখা চৌধুরী মিরার মুখে দ্বিধার ছায়া দেখে বলেন,,,
“কিছু বলবে আম্মু?
মিরা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়, তারপর নিচু গলায় বলে,,,
“”আম্মু, ভার্সিটি থেকে ট্যুরের প্ল্যান করছে। সাজেক যেতে চায় সবাই। তাই ভাবছিলাম যদি অনুমতি দেন আমি আর সুমু যাব।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শিখা চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে মিরার দিকে তাকান।
“তুমি আর সুমু? ইয়ানা যাবে না।
মিরা — জানি না আম্মু। ইয়ানাকে তো ভাইয়া জীবনে ও দিবে না। আরু, তারা সবাই যাবে। আমি ও যেতে চাই। বাংলাদেশের সৌন্দর্য আর কোনোদিন উপভোগ করতে পারব কি না জানা নেই তাই এই সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাচ্ছি না।
অরিদ ভিডিও গেইমসে মনযোগ দিয়ে রেখছে। কিন্তু জানা নেই অজান্তেই মিরার দিকে দৃষ্টি চলে যায়। মুহূর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে আনে।
শিখা চৌধুরি কন্ঠে অবাকের সুর,,,
“শেষ উপভোগ মানে?
মিরা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,,,,
” এইটা অন্যদিন আলোচনা করব সবার সাথে। আজ শুধু অনুমতি চাচ্ছি।
সাজিদ চৌধুরি ভরসা দিয়ে বলেন,,,
” অবশ্যয় যাবে। কেনো যাবে না তুমি? অরিদ যাচ্ছে তাহলে আর ভয় কিসের। তাছাড়া তোমরা বন্ধুমহল সবাই তো আছো।
মিরা মুচকি হাসে। কেমন নির্লিপ্ত আর অচেনা হয়ে বসে আছে ছেলেটা।অরিদকে এমন খাপছাড়া বসে থাকতে দেখে সাজিদ চৌধুরি অরিদের দিকে বিরক্ত নিয়ে বলে,,,,,
” কিসের মধ্যে তুমি ডুকে আছো অরিদ। গুরত্বপূর্ন কথা হচ্ছে পরিবেশে ফিরে আসো।
অরিদ মোবাইলে দৃষ্টি রেখে উত্তর দেয়,,,,
” হ্যা বলো, শুনছি আমি।
সাজিদ চৌধুরি — মিরা তোমার সাথে যাচ্ছে দেখে রেখো তাকে। সাথে সুমু যাচ্ছে সেই দায়িত্ব ও তোমার।
অরিদের কন্ঠে একররাশ বিরক্তি ,,,,
” আমি কোনো মিরা – টিরাকে দেখে রাখতে পারব না। আর সুমু আপু তো স্ট্রং পার্সন তাকে দেখে রাখলেও শান্তি আসবে।
সাজিদ চৌধুরির কন্ঠ কঠোর হয়ে উঠে,,,
” মিরাকে দেখে রাখলে সমস্যা কোথায়?
অরিদ — আব্বু আমি ভার্সিটির ভিপি হিসেবে যাচ্ছি সো সবাইকে হ্যান্ডেল করব। কিন্তু এক্সট্রাভাবে কাউকে দেখে রাখার এনার্জি নাই।
সাজিদ চৌধুরি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,
” সব মেয়ে আর মিরার মধ্যে পার্থক্য আছে। সব মেয়ে কি তোমার বউ? কিন্তু মিরা তোমার বউ।
অরিদ ডিভান থেকে উঠে দাঁড়ায়। ঠান্ডা গলায় বিষ ঢেলে বলে,,,,
” সামান্য তিন কবুল, কাগজে সাইন করালেই বউ হয়ে যায় না আব্বু। এমন এক অনাকাঙ্খিত সম্পর্ক স্থাপন করার আগে তোমাদের ভাবা উচিত ছিলো এই মেয়েটার জীবন কেমন হবে। না আমি বিয়ে মানি আর না বউ। তাই বউ বউ বলে চাপিয়ে দিবে না।
অরিদ গটগট পায়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। মিরার চোখে পানি চিকচিক করছে। অযথায় সে অপেক্ষা করবে এতদিন। কিছুই বদলাবে না সব আগের মত ওই থাকবে।
সাজিদ চৌধুরি রাগে গর্জে উঠলেন,,,,
“বিয়াদব হয়েছে সবকয়টা।
মিরা নিজেকে স্বাভাবিক করে সবার উদ্দেশ্যে বলে,,,
” আমাকে কেউ দেখে রাখতে হবে না আব্বু। আমরা নিজেদের খেয়াল রাখতে পারব।
সাজিদ চৌধুরি হাসি দিয়ে বলে,,,,
” তাহলে যাও তোমরা।
মিরা খুশি হয়ে সুমুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপা দেয়। জীবনের নিষেধের ভেতর থেকে মুক্তির ক্ষনিক আনন্দ।
কালো হুডি পড়া এক লোক। উচ্চতা আনুমানিক ছয় ফুট হবে। শক্তপোক্ত দেহ। অগ্নির ডুপ্লেক্স বাড়িটার সামনে তার অবস্থান। কিন্তু দুরত্ব অনেক। অনুবীক্ষনিক যন্ত্র দিয়ে বার বার বারান্দায় দৃষ্টি মিলাচ্ছে। চোখের দৃষ্টি বারান্দায় কারোর অপেক্ষায়। চোখে – মুখে হিংস্রতা আর পৈশাচিক ছাপ। চোখে আগুন, ভয়, ক্রোধ জ্বলজ্বল করছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে। শুধু সময়ের অপেক্ষার প্রহর গননা করছে। পিছনে গুজে রাখা গান টা ভালোভাবে ঢেকে নেয়।
রুয়ানা ক্লাস শেষে রিক্সা ডাকতে যাবে এমন সময় কালো একটা মার্সিডিজ গাড়ি এসে সামনে থামে। রুয়ানা সেদিকে তাকায়। সে গাড়ির মালিক কে চিনে। যে প্রতিদিন এই টাইমে তার জন্য অপেক্ষা করে। প্রথম প্রথম রুয়ানার কাছে এক্সিডেন্ট মনে হলেও এখন খারাপ লাগছে। একজন লোকের কাজ থাকতে পারে কিন্তু প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সেটা ভাবতেই রুই নিজেকে নিজে অপরাধী মনে করে। হাজারবার সে ইউভিকে বারন করেছে কিন্তু ইউভি শুনে নি। রুয়ানা যদি কোনোদিন রিক্সা নিয়ে গিয়েছে তাহলেও সে ইউভির গাড়িটা তাদের পিছনে দেখেছে।
ইউভি গাড়ির গ্লাস খুলে রুয়ানাকে উদ্দেশ্যে করে বলে ,,
” কি হলো লিটল গার্ল উঠো।
রুয়ানা তাকায় না সেদিকে। মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে,, ,,,,,
” ভাইয়া আপনার কাজের সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন এইভাবে সময় নষ্ট করা উচিৎ নয়।
ইউভি হেসে উত্তর দেয়,,,,
“” বাংলাদেশে আমার কোনো পার্সোনাল কাজ নেই লিটল গার্ল। আমি অগ্নিকে সাহায্য করি যাস্ট এইটুকু। আমার সব কাজ কানাডায়। ওইখানেই আমার জন্ম, কর্ম। তাই কাজ আর সময় নিয়ে ভাবতে হবে না উঠে আসো।
রুয়ানা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। কেনো জানি নিজের কাছে খারাপ লাগা কাজ করছে। একজন মানুষ কষ্ট করে তাকে প্রতিদিন বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে বিষয়টা খারাপ দেখায়। ইউভি ভাইয়া ভাববে রুয়ানা সুযোগের সৎ ব্যবহার করে। কিন্তু এমনটা তো নয়। আমি তো যেতে চাই না।
ইয়ানাকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইউভি কপাল কুচকে সেদিকে তাকায়। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে গাড়ি থেকে নেমে রুয়ানার কাছে যায়। রুয়ানা মাথা তুলে সুঠামদেহী ইউভির দিকে তাকায়। ইউভি রুয়ানার চোখে চোখ রাখে। কিন্তু সেটা বেশিক্ষন স্থায়ী হয় না। এই চোখে চোখ রাখার ক্ষমতা তার নেই। এই ধ্বংসকারী চোখ তার ভিতরটা জ্বালিয়ে দিতে চাই। তার ধৈর্যকে ভেঙ্গে অধৈর্য করে তুলে। ইউভি গম্ভীর কন্ঠে রুয়ানার উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,
” চোখ – মুখ শুকনো লাগছে মনে হচ্ছে তেমন খাওয়া হয় নি। সামনের রেস্টুরেন্টে চলো।
রুয়ানা আচমকা তাকায় ইউভির দিকে। কন্ঠে অধৈর্য,,,
“” না, না ভাইয়া যাব না। আমার তিল পরিমান ক্ষিধে ও নেই।
ইউভির কন্ঠ ভারী হয়ে উঠে সাথে চাপা ধমক,,,
” চলো আমার সাথে লিটল গার্ল
ইউভির এমন ভারী কন্ঠস্বরে সিটিয়ে যায়। বাধ্য মেয়ের মত ইউভির পিছু পিছু যাওয়া শুরু করে। ইউভি সামান্য হাসে। এই বাচ্চামো আর সরলতার কারনেই তো তোমার প্রতি এত এট্রাক্টিভ লিটল গার্ল।
রেস্টুরেন্টে ডুকে একটা টেবিলে সে। ইউভি আর রুয়ানা সামনাসামনি বসে। রুয়ানার ভিতরে এক চাপা সংকোচ।
ইউভি হাতের ইশারায় ওয়েটারকে ডাক দেয়। ওয়েটার হাসি – মুখে ইউভির কাছে এসে বিনয়ী সুরে বলে,,,,
” জি স্যার বলুন, আপনি আর আপনার মেয়ের জন্য কি করতে পারি।
ওয়েটারের কথায় রুয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকায়। মেয়ে! হায় আল্লাহ বলে কি এই পাগলে।
ইউভি কটমট চোখে তাকায় ওয়েটারের দিকে। ওয়েটারকে ধমকে বলে,,,,,
” ঠাটিয়ে দিব এক থাপ্পর বিয়াদব। আগে সম্পর্কে জেনে এরপর সম্মোধন করবে নাহলে জবান ছিঁড়ে ফেলব।
ওয়েটার মাথা নিচু করে ফেলে। মুখ থেকে অনেকবার সরি বের হচ্ছে। ইউভি রাগে চোয়াল চেপে আছে। রুয়ানা অবাক হয়ে ইউভির দিকে তাকায়। এই প্রথম সে ইউভিকে এইভাবে রাগতে দেখেছে। রুয়ানা পরিবেশ ঠান্ডা করার জন্য নম্র কন্ঠে বলে,,,,
” সম্পর্কে আমি উনার ছোট বোন ওয়েটার ভাইয়া। আগে লোকের সম্পর্ক যাচাই করে সম্মোধন করবে। বোকার মত কখনো সম্মোধন করে ফেলবন না।
ওয়েটার — সরি ম্যাডাম বুঝতে পারি নি। আজ অতিরিক্ত খুশির কারনে ভুলভাল কথা বলে ফেলছি।
রুয়ানা হেসে ওয়েটারকে আশ্বাস দেয় তেমন কিছু হয় নি।
ওয়েটার চলে যায় খাবার আনতে। রুয়ানা ইউভির দিকে তাকাতেই ইউভি প্রশ্ন করে,,,
” তোমার কেমন ছেলে পছন্দ লিটল গার্ল?
রুয়ানা ভড়কে যায় অসময়ে এমন প্রশ্নে। তার উপর সামনে বসা ব্যক্তিটা ভাই সমতুল্য। রুয়ানা আমতা আমতা করে মিহি সুরে বলে ,,,
” একটা হলেই হবে।
ইউভি কপাল কুচকে বলে,,,,,
” একজন হলেই হবে! আলাদা করে পছন্দ নেই?
রুয়ানা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বলে,,
” ছেলে পছন্দ করাটা কোনো বাজারের পন্য নয় ভাইয়া। যেটা পছন্দ করলে আমি সেইম কালেকশন পেয়ে যাব। অথবা পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইনার দিয়ে তৈরি করতে পারব। আমি এইসব নিয়ে কখনো ভাবি না।
ইউভি রুয়ানার দিকে তাকিয়ে আড়ালে মুচকি হাসে।
চৌধুরি গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টিজের তেইশ তালা বিশিষ্ট ছাদের উপরে অগ্নি দাড়িয়ে আছে। চোখে – মুখে গম্ভীরতা। সিগেরেট খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু খেতে পারছে না। সিগেরেট খেলে সে আর চুমু খেতে পারবে না। সিগেরেট ছাড়া বছরের পর বছর থাকতে পারবে কিন্তু চুমু ছাড়া একদিন ও না। অসম্ভব! বউয়ের কাছে যেতে না পারলে, আদর করতে না পারলে বেঁচে থাকায় বৃথা। অগ্নি অনেক কিছু বলে মনকে শান্তনা দেয়। ভবিষ্যতে ঘটতে চলেছে অনেক কিছু। অনেক সত্য সামনে আসবে। আমি কি আমার বউকে আগলে রাখতে পারব। ছেৎ করে উঠে অগ্নির বুক। জীবন চলে যাবে কিন্তু ইয়ানার কিছু হতে দিবে না। কেউ আঘাত করতে আসলে সর্বপ্রথম তার বুক ক্ষতবিক্ষত করতে হবে। আর অগ্নি চৌধুরির বুক ক্ষত বিক্ষত করা এত সহজ নয়। নিশ্বাস ছাড়ে চারদিকে তাকায়। এই বাতাসটাকে ও তার হিংসে হয়। এই বাতাস তার বউটাকে স্পর্শ করে। পৃথিবীতে এমন কিছু কি আবিষ্কার হয় নি যা দিয়ে তাদের হৃৎপিন্ড এক করা যাবে! যাতে ইয়ানার শ্বাসটাও সে প্রতি সেকেন্ড উপলব্দি করতে পারবে। কেনো হয় নি এমন? হওয়া উচিৎ ছিলো। সব কয়টা বিয়াদব বিজ্ঞানী। জ্ঞান কাজে লাগিয়ে এমন কিছু আবিষ্কার করলে কি এমন হত। তাহলে তো সে তার বউকে প্রতি ন্যানো সেকন্ডে অনুভব করতে পারত।
হঠাৎ অতিরিক্ত আওয়াজে অগ্নির ফোন বেজে উঠে।
— হ্যালো।
অপরপাশ থেকে আতঙ্কিত সুর,,,,,
“” বস আপনাদের রুমের বারান্দায় একটু আগে গান লাইট দেখা গিয়েছে। মনে হচ্ছে কেউ গান তাক করেছিলো। কিন্তু শত খুঁজার পর কেন্দ্র, ব্যক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। কারোর জন্য অপেক্ষা করছে। ম্যাডামকে বারান্দায় আসা থেকে বিরত করুন। আমরা খুঁজছি ব্যক্তিটা কে?
অগ্নির হৃদয় কেঁপে উঠে। শান্ত থাকা হৃদয়টা কিছু মুহূর্তের মধ্যে ক্রোধে ফেটে পড়ে। অশান্ত হয়ে পড়ে। পানি শূন্য মরুভুমির মত হৃৎপিন্ড খাঁ খাঁ করে উঠে। অগ্নির ঝাঁঝালো গর্জন,,,,,
” চব্বিশ ঘন্টার ভিতরে ওই শু**- বাচ্চাকে আমি জঙ্গলের টর্চার সেলে চাই। না পেলে প্রয়োজনে মাটি খুঁড়ে বের করবে। আবার আ্যাটাক করবে সবার দৃষ্টি সতর্ক করো। আমার বউয়ের যাতে কিছু না হয়।
অগ্নি ফোন কেটে দেয়। কোনো কিছু না ভেবে লিফ্টে নামতে নামতে ইয়ানার ফোনে মিসডকলস দেয়। যে করেই হোক বেলকনিতে যাওয়া থেকে আটকাতে হবে। যে কোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে। অগ্নি বার বার অধৈর্য হয়ে ফোন দিচ্ছে কিন্তু বার বার সুইচ অফ। গাড়ির কাছে যাওয়া পর্যন্ত একাধারে ফোন দিয়ে গিয়েছে, বরাবর শুধু সুইচ অফ দেখাচ্ছে। রাগ, ভয় সব মিলিয়ে মোবাইলটাকে রাস্তার মধ্যে সজোরে আছাড় মারে। সাথে সাথে মোবাইলটা অনেকগুলো খন্ডে ভিবক্ত হয়ে যায়।
অগ্নি গাড়িতে উঠে দরজা লাগিয়ে দ্রুত পিছিয়ে নেয়। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে। ইয়ানা সামলে থাকলে খুন করত। ভাগ্যক্রমে যদি অক্ষত পায়। কোনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে এই মেয়েকে আজ জ্যান্ত কবর দিব। এরপর শাঁ শাঁ করে সর্বোচ্চ বেগে চলতে থাকে। মনে হচ্ছে রাস্তা শেষ হচ্ছে না । যত এগিয়ে যাচ্ছে রাস্তা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাত কাঁপছে স্টিয়ারিং ঘোরাতে গিয়েও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মনের ভিতরে অশুভ চিন্তা হানা দিচ্ছে। ইয়ানা বারান্দায় গিয়েছে তারপর… আর ভাবতে পারছে না।
আভার্সিটির ক্লাস শেষ না করেই মিরা, আরু সবাই মিলে ক্যাম্পাসের সাইট দিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো।
আরু পানি খাওয়ার জন্য ক্যম্পাস পার করে যাবে এমন সময় কানে ভেসে উঠে এক বিষাক্ত বাক্য —
” সেক্সি লেডি। উফফ পুরাই আগুন।
আরু হাত মুষ্ঠি করে নেয়। এই ছেলেটা তাকে কয়েকদিন যাবৎ জ্বালিয়ে মারছে। বার বার বারন করার পরও এইভাবে পিছু নেওয়ার কি অর্থ? অসভ্য বিয়াদব। রাগে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। পিছনে ফিরতে চাই কিন্তু পরমুহূর্ত কিছু ভেবে মাটির দিকে তাকিয়ে রাগটাকে ঠান্ডা করে সামনে এগিয়ে যাবে এমন সময় আবার ও এক কুরুচিপূর্ন শব্দ ভেসে আসে___
“যাস্ট একবার টেস্ট করার চাই। উপর থেকেই এত মিষ্টি ভিতর দিয়ে তো……
আর বলতে পারে নি তার আগেই ছেলেটা মাটিতে মুখ থুবরে পড়ে। ছেলেটা বুঝার আগেই মিরা পায়ের হিল সুজ দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। ছেলেটার বন্ধু এগিয়ে আসলে আরু রাগে গজগজ করে বলে___
” খবরদার সামনে আসলে মিথ্যা মামলায় ঠুকে দিব। যৌন হয়রানীতে জেলের ভাত খাওয়াব।
ছেলেটা থেমে যায়। নিজের প্রান বাঁচিয়ে মিরার আড়ালেই পালিয়ে যায়। আরু মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটা পিটিয়ে যাচ্ছে সমানতালে।
মিরা, সুমু, আকাশ, রুহান সেদিকে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। পাগলী ঠিকভাবে ক্ষেপেছে। তারা সেখান থেকে উঠে দ্রুত আরুর কাছে যায়। জায়গাটা অনেকটা আড়ালে তাই এখনও সবাই দেখে নি। যারা দেখেছে সবাই এসে ভীর জমিয়েছে।
মাটিতে পড়ে থেকে ছেলেটা সুজে ধরে ফেললে আরু পা দিয়ে ছেলেটার পেটে লাথি মারে। ছেলেটা হালকা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আরু পুনরায় আঘাত করতে যাবে তখন আবার কেউ সুজটা হেচকা টেনে নিয়ে নেই।
আরু সেদিকে তাকাতে তাকাতে রাগে ধমক দিয়ে বলে,,,,,,
” আমার হাত থেকে সুজ নিয়েছিস কোন সাহসে? বলেছিনা যৌন হয়রানীর মামলায়…
আর বলতে পারে নি। সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে কপাল কুচকে আসে। বেদেশীদের মত দেখতে শক্তপোক্ত দেহের ব্যক্তিটাকে কোথায় যেন সে দেখেছে। হুট করে মনে পড়ে রায়ান ভাইয়ার বিয়েতে দেখেছে। হ্যা, এইটা আহিয়ার কাজিন রেশব! আরু চট করে তাকায় সেদিকে। রেশব কপালে ভাঁজ নিয়ে বলে,,,,,
” একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে এমনভাবে পিটাতে লজ্জা করছে না? ভার্সিটিতে পড়াশুনার নামে কি গুন্ডামি করছো, অসভ্য মেয়ে। মনের ভিতরে মানবতা নেই এইভাবে একটা ছেলেকে পিটাচ্ছো।
আরু রেশবের ধমকে কেঁপে উঠে। কিন্তু কথাটা তার মোটে ও ভালো লাগে নি। সে তো অন্যায় কিছু করছিলো না। তাকে অপমান করছিলো এই ছেলেটা তাই নিজেই যোগ্য জবাব দিয়েছে। আরু কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,,
” মানবতা! যখন আমাকে দিনের পর দিন উত্যক্ত করত তখন কোথায় ছিলো আপনার মনবতা? যখন আজ আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ন কথা বলছিলো তখন কোথায় ছিলো আপনার মানবতা? মানবতা তখন ওই আপনারা দেখতে পান যখন একটা মেয়ে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তখন দেখেন না, যখন দিনের পর দিন টর্চারের শিকার হয়? তখন শব্দ আসে না যখন হাজারও মেয়ে ভিক্টিম হয়! সুশীল সমাজ আমার, আসছে মানবতা দেখাতে।
রেশব ছোট ছোট চোখে আরুর রাগে কাপতে থাকা মুখটার দিকে তাকায়। এইটা মেয়ে নাকি কোনো এটম বোমা। দেখতে তো হাটু পর্যন্ত সাইজ কিন্তু তেজ আকাশ সমান। কথায় আছে ছোট মরিচের ঝাঁঝ বেশি। প্রমান হিসেবে আজ এই মেয়েকে দেখলাম।
আরু রেশবের হাত থেকে জুতাটা নিতে চায় কিন্তু রেশব দেয় না। কৌশলে হাত সরিয়ে নেয়। আরু কটমট করে বলে,,,,,
” জুতাটা দিন আগে ওকে সাইজ করে নেয়।
রেশবের শান্ত স্বর,,,,
” যেভাবে মারছো আরেকটু হলে মরে যেত। কাউকে আঘাত করলে সীমার ভিতরে করতে হয়। অনিয়ন্ত্রিত কিছুই ভালো না।
আরু থেমে যায়। এরপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলে,,,
” আর কোনোদিন আমার পিছু আসবি?
ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে না জানায়। আরু বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,,
” আর কোনোদিন আমার আশে – পাশে আসবি?
ছেলেটা কাতরাতে কাতরাতে বলে,,,,,
” না।
আরু– আমাকে আর বেইবি, সোনা, জান, কলিজা এইসব বলে ডাক দিবি?
ছেলেটা — নাহ কোনোদিন ও না।
আরুর কন্ঠে ঠান্ডা স্বর,,,,
” এখন থেকে আমাকে খালাম্মা ডাকবি। বুঝেছিস আমার কথা?
ছেলেটা মাথা দিয়ে হ্যা নাড়ায় ।
আরু — এখন আমাকে খালাম্মা সম্মোধন কর। বল খালাম্মা কেমন আছেন?
ছেলেটা একই ভঙ্গিতে কাঁপা স্বরে বলে,,
” খালাম্মা কেমন আছেন?
মিরা হেসে ছেলেটার পিঠে হালকা থাপ্পর দিয়ে বলে,,,,
” এই তো ভাইগ্না ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
ছেলেটার করুন স্বর,,,
” জি মাইর খেয়ে আছি কোনোরকম।
আরু উঠে হল্লা পার্টির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” আমার ভাইগ্নাকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা কর।
রেশব শান্ত কন্ঠে বলে,,,,
” নিজে মেরে নিজেই হসপিটালে পাঠাচ্ছো। অন্যায় যদি করে থাকে তাহলে জেলে দাও।
আরু বিরক্তি নিয়ে রেশবের দিকে তাকায়। এরপর সামনে গিয়ে বলে,,,
” সাদা বিলাই মশায় মাথার ঘিলু নির্ঘাত বিদেশের মাটিতেই রেখে এসেছেন। এই অবস্থায় যদি ওকে জেলে নেই তাহলে এই বাদরকে নয় আমাকেই জেলে ডুকিয়ে দিবে। আগে চিকিৎসা করি, ফল- ফ্রুট খাইয়ে তাজা করে তুলি এরপর ভাবা যাবে। আপাযত আপনি চুপ থাকুন।
মিরা আরুকে টেনে নিজেদের কাছে নিয়ে যায়। এরপর হিসহিসিয়ে বলে,,,,
” কি করেছিস এইটা বলদি?
আরু— রাগ উঠে গিয়েছিলো প্রচুর। শালা ভুলভাল কথা বলছিলো।
রুহান — বইন আমার রাগ কন্ট্রোল করতে শিখ। বেচারা ছেলেটাকে পুরুষ নির্যাতন করেছিস রীতিমত।
হায় আমাদের পুরুষদের এত অপমান। আমাদের গন্তব্য কথায়। ছেলেটা তকে পছন্দ করত আর তুই মা সমতুল্য খালাম্মা বানিয়ে দিলি!
রুয়ানের নাটকে আরু ধমকে বলে,,
” চুপ থাক বলদ। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তকে ও এমন অবস্থা করব। এরপর বউয়ের হক নষ্ট করে হসপিটালের বেডে শুইয়ে রাখব। বউ এসে দেখবে জামাইর কিছু নাই। এখন আমাকে সাহায্য কর।
আরুর হুমকিতে রুহান চুপসে যায়। কত বড় কালনাগিনী ভাবা যায়। আমার ভবিষ্যত অন্ধকার করে বউয়ের হক নষ্ট করতে চাইছে। অভিশাপ দিলাম তর কপালে জামাই না জুটুক।
আকাশ আর রুহান ছেলেটাকে মাটি থেকে তুলে নিয়ে একটা অটোতে বসিয়ে দেয়। এরপর তারা ও গিয়ে বসে। আরু অটোতে উঠে পিছন ফিরে রেশবের দিকে তাকায়। রেশব এখনও তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হল্লা পার্টি সবাই ছেলেটাকে নিয়ে হসপিটার উদ্দেশ্যে চলে যায়। অটো দৃষ্টিসীমানার বাহিরে যেতেই রেশব প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দিয়ে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বলে,,,,,
‘” আল্লাহ জানে এই মেয়ে কার ভাগ্যে আছে। যার কপালে পড়বে তার জীবন নিয়ে অগ্রিম অভিনন্দন।
অগ্নি গাড়ি পার্ক না করেই দ্রুত সিঁড়ি পার করে।
সোজা গিয়ে রুমে ডুকে। চোখে বিদ্যুৎ ঝলকের মত অস্থিরতা। বিছানায় ইয়ানা নেই। পুরো রুম জুড়ে ইয়ানার ছায়া কোথাও নেই। বেড সাইটে মোবাইল রাখা। মোবাইলটা যেন অদৃশ্য এক সাঙ্ঘাতিক ঘটনার নীরব সাক্ষী। ইয়ানা ওয়াশরুমেও নেই দরজা বাহির থেকে লাগানো। অগ্নির সমস্ত শরীর হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। তবে এইটা রাগ নাকি ভয় বুঝা মুশকিল। পুরো মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। অগ্নির চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। চোখের পাতায় ভেসে উঠে লোহিত জালা। কপালের রগগুলো মনে হচ্ছে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে। নিশ্বাস ভারি হয়ে উঠে।ইয়ানার অনুপস্থিতি হিংস্র দানবের ন্যায় ক্ষেপে উঠেছে। মস্তিষ্কের জমে থাকা সন্দেহ মেঘগুলো আচমকা বজ্রপাত হয়ে নেমে আসে। ঠোঁটের কোণে জমে উঠে চাপা গর্জন। ভিতরে এক জলন্ত বিস্ফোরন চলছে! ভালোবাসা, মালিকানা, অনিশ্চয়তা আর এক অজানা আশঙ্খার জ্বলন্ত মিশ্রন।
ইয়ানা বেলকনি থেকে এসে অগ্নিকে এমন অসময়ে দেখতে পেয়ে ভড়কে যায়। অগ্নির এমন অস্বাভাবিক রুপে ইয়ানা ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। ইয়ানাকে বেলকনি থেকে আসতে দেখে শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু সেটা বেশিক্ষন স্থায়ী হয় নি। ইয়ানা এতক্ষন বেলকনিতে ছিলো, ফোন ধরে নি! যদি কিছু ঘটে যেত? রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। চোখের সামনে দেখতে পেয়েই হিংস্র হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে।কোনো কথা নয়, কোনো শব্দ নয়, কেবল শরীর জুরে জমে থাকা জ্বলন্ত আগুনের বিস্ফূরন। ইয়ানার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে। ইয়ানা ব্যাথায় মুখ খিচে ফেলে। মুখ থেকে বেরিয়ে আসে এক মৃদু শব্দ। চোখে পানি চিকচিক করে উঠে।মনে হচ্ছে অগ্নির শক্ত পাঁচটা আঙ্গুল মাংস ভেদ করে ডুকে যাবে। মাংস গলে ছিঁড়ে আসবে। তার আঙ্গুলের ছাপে আগুন লেগে যায় ইয়ানার গায়ে। এই হাত অনেক সময় নরমভাবে আহ্বান করে আবার হুট করে একসময় পাথরের মত কঠিন, আগুনের মত যন্ত্রনাদায়ক লোহার দন্ড হয়ে উঠে। অগ্নি ইয়ানার গালে সজোরে পর পর দুইটা থাপ্পর দেয়। ইয়ানা নিজেকে সামলাতে পারে না। ভাগ্য ভালো থাকায় থাপ্পরের আঘাতে বিছানায় গিয়ে ছিটকে পড়ে। ইয়ানা কিছু বুঝে উঠার আগেই অগ্নি বিছানার সাথে ইয়ানাকে চেপে ধরে চিবুক শক্ত করে স্পর্শ করে চাপা গর্জে উঠে,,,
” মন কোথায় থাকে, মস্তিষ্ক কোথায় থাকে ফা*কিং গার্ল? এই আল্লাহর বান্দি তাকা আমার দিকে। বান্দির বাচ্চা মেরে ফেলতে চাস আমাকে? তর ধারনা আছে কি হতে পারত আজ। এই তর আমাকে মানুষ মনে হয় না? কি মনে হয় আমি পাথর। আমার মনে নেই, আমার জীবন নেই। তর কিছু হলে আমি কি করতাম কুত্তার বাচ্চা।
ইয়ানা বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে আছে। ঠোঁট শুকিয়ে আসে। চোখ ছলছল করে উঠে। বুকের ভিতরে কোনো এক অব্যক্ত কান্না। নিজের সমস্ত অস্তিত্ব চেপে ধরে তীক্ষ্ম নিশ্বাসে। ইয়ানার দৃষ্টিতে এক পশলা নিরবতা চাপিয়ে প্রশ্ন করে,,,,
” ক.. কি হয়েছে?
ব্যাস এতে অগ্নির রাগ আরও দ্বীগুন বৃদ্ধি পায়। গলা চেপে ধরে ইয়ানার। কিন্তু মোটেও নরমভাবে নয়। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে গলায় চেপে ধরে। ইয়ানা ছটফট করে উঠে। দুই ঠোঁট ফাঁক করে কেঁশে উঠে। অগ্নি হায়েনার মত গর্জে বলে,,,,,
” মোবাইল কোথায় তর? নতুন ফোন যে দিয়েছিলাম সেটা কোথায়? বারান্দায় কেনো গিয়েছিলি? যাস্ট একটু দেরী হলে চোখের পলকে তর জীবন ছিন্ন – বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। একটা বুলেটের আঘাতে এতক্ষন নেতিয়ে পড়তি বান্দির বাচ্চা। তুই মরে যাহ কিছু আসে যায় না। আমাকে কেনো নরকে পাঠিয়ে মরবি। তুইহীনা আমি নরক যন্ত্রনায় ভোগব সেটা তুই জানিস না।
ইয়ানার দেহের প্রতিটি সেল কেঁপে উঠে। গলায় চেপে ধরায় দম বন্ধ হয়ে আসছে।প্রতিটি মুহূর্তে ইয়ানা মনে করে তার হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তার শ্বাস – প্রশ্বাস এক মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস স্তূপের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। ইয়ানা কথা বলতে পারছে না। দম আটকে আসছে। গলা জ্বলে উঠে। শুধু মনে হচ্ছে মৃত্যুর দরজায় সে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে মৃত্যু আর বাঁচার মধ্যে তার আত্না বিপর্যস্ত। ইয়ানার চোখ উল্টে আসবে। হুট করে মনে হচ্ছে গলা হালকা লাগছে। মুখের উপর গরম কিছু। ইয়ানা কেঁশে উঠে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে ইয়ানা চোখ খুলে তাকায়। অগ্নি তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। ইয়ানা ভয়ে চাপা কান্না করে উঠে। অগ্নির গরম নিশ্বাস তার মুখে স্পর্শ করে যাচ্ছে। থাপ্পর দেওয়া জায়গায় পাঁচ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট। ব্যাথাতুর জায়গায় নরম স্পর্শ পেতেই ইয়ানা চমকে উঠে। অগ্নি আলতোভাবে সে জায়গায় স্পর্শ করে।
ইয়ানা কিছু বুঝার আগে অগ্নি নিজের নরম ঠোঁটের ছোঁয়া সেখানে দিতে থাকে। যেখানে চেপে ধরেছিলো গলা, গাল সব জায়গায় অগ্নি বেপোরোয়াভাবে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। ইয়ানা অসহায় হয়ে তাকায় সেদিকে। অগ্নির থামার ভাবান্তর নেই। ইয়ানা হাঁপিয়ে উঠে। ইয়ানা চোখ খুলে তাকাতে চাই কিন্তু অগ্নির বেপোরোয়া ঠোঁটের স্পর্শে আবার চোখ বন্ধ করে দেয়। অগ্নির চুমুর পরিমান গননা করার মত না। ইয়ানার শরীর নেতিয়ে পড়ে। অগ্নির দেওয়া থাপ্পর, এতক্ষনের মানসিক আঘাত সব মিলিয়ে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। চোখের পাতাগুলো নিভু নিভু ভাবে বন্ধ হয়ে আসে। এক সময় জ্ঞান হারিয়ে অগ্নির শক্তপোক্ত শরীরের নিচে ইয়ানা নিজের শরীর ছেড়ে দেয়। অগ্নি থামে না। অজস্র চুমু খেয়ে শান্ত হয়।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৭
ইয়ানাকে জ্ঞান হারাতে দেখে নিজের সাথে আগলে নেয়। কপালে ভালোবাসার পঁরশ দিয়ে ইয়ানার শুষ্ক মুখটার দিকে তাকায়। থাপ্পরের দাগে কেমন লাল দাগ হয়ে আছে। অগ্নি চোখ বন্ধ করে বলে,,,,
” আজ তোমার কিছু হলে আমি কি করতাম বউ। একটু এদিক – সেদিক হলে তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম আজ। দিনে দিনে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। আপন রক্তের বলতে আমার এই দুনিয়ায় কেউ নেই। তোমাকে আগলে নিয়ে বাঁচতে শিখেছি আমি, হারিয়ে যেও না। নিশ্বেস হয়ে যাব আমি।