অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৭
লিজা মনি
ভার্সিটিতে ক্লাস চলছে। ইদানিং মিরার শরীরটা মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। বসা থেকে দাঁড়ালে পুরো শরীর কেঁপে উঠে। মাথা ঘুরিয়ে পরে যাওয়ার উপক্রম। আরু মিরার অবস্থা দেখে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,,
” মিরা আর ইউ ওকে? ঠিক আছিস তুই?
মিরা আরুর দিকে তাকায়। এরপর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,
” হুম ঠিক আছি।
আরু — কিন্তু তর চোখ – মুখ অস্বাভাবিক লাগছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুই ঠিক নেই।
মিরা দুর্বল আওয়াজে বলে,
” জানি না কেমন জানি লাগছে। শরীর প্রচন্ড দুর্বল অনুভব করছি। উঠে দাঁড়ানোর মত শক্তি পাচ্ছি না। মাথা ঘুরছে।
আরু মিরার দুর্বল মুখটার দিকে তাকিয়ে বলে,
” আরু তর মাথা ঘুরছে? শরীর দুর্বল লাগছে?
মিরা — হ্যা।
আরু– বমি বমি পাচ্ছে?
মিরা — মাথা ঘুরলে, শরীর দুর্বল অনুভব হলে তো হালকা বমি বমি পাবেই।
মিরার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরু চেঁচিয়ে উঠে। আরুর চেঁচানোতে মিরা হতভম্ভ হয়ে যায়। ভার্সিটির যে কয়জন ক্লাসে উপস্থিত ছিলো সবাই তার দিকে তাকায়। আরু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিম্ন আওয়াজে বলে,
” মিরা মিষ্টি খাওয়া। তুই মা হতে যাচ্ছিস। ওরে.. রে.. রে আমরা খালামনি হতে যাচ্ছি। এই খবরটা এখন ওই সবাইকে জানাতে হবে। আগে অরিদ ভাইয়াকে এই সু – সংবাদটা দিয়ে আসি।
আরুর কথায় মিরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। হতভম্ভ হয়ে বোকার মত তাকিয়ে থাকে আরুর উত্তেজিত মুখটার দিকে। আরু উঠে অরিদের কাছে যেতে নিবে মিরা নিজের সাথে চেপে ধরে। এরপর অসহায় হয়ে বলে,
” হারামি কেইস খাওয়াবি নাকি? মা হতে যাব কেনো আমি?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরু — তর জামাই আছে সে জন্য হবি।
মিরা থতমত মুখে বলে,
” আমি প্রেগনেন্ট নয় বোন চুপ যা। মাথা ঘুরালেই কেউ প্রেগনেন্ট হয়ে যায় না। বাচ্চা নিশ্চয় আকাশ থেকে টপকাবে না।
আরু — বাচ্চা আল্লাহ দান করছে তর জামাইর মাধ্যমে। আকাশ থেকে টপকাতে যাবে কেনো?
মিরা আরুর কথায় দাঁত পিষে বলে,
” এমন কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের যে বাচ্চা আসবে। চুপ থাক তুই হারামি।
আরু কিছুক্ষন চুপ থেকে চট করে মিরার মুখের দিকে তাকায়। এরপর কপাল কুচকে বলে,
” তার মানে তরা এখনও আলাদা?
মিরা শান্ত হয়ে বসে বলে,
” আমি বিছানায় আর উনি ডিভানে থাকে। মাঝে অনেক দুরত্ব বোন। সেই দুরত্ব ভেদ করে আসা হয় নি।
আরু– এইভাবে ছেকা না দিলেও পারতি। আমি আরও কত কিছু ভেবে নিয়েছিলাম। অরিদ ভাইয়া শুনলে অনেক খুশি হত।
মিরা — বাল হত। স্ট্রোক করে মরে যেত। বাচ্চা কি মাটি খুঁড়ে আসবে নাকি? মাথা ব্যাথা করছে আরু এখন আর ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না।
আরু এইবার একটু সিরিয়াস হয়ে বলে,
” সকালে খেয়েছিস?
মিরা — নাহহ।
আরু মিরার হাত ধরে বলে,,
” কিছু খাবি চল।
মিরা — আরে না। এখন কিছু খাব না।
আরু– আজ আর ক্লাস করতে হবে না। চল বাড়ি দিয়ে আসি।
মিরা — আমি আমার ঠিকানায় চলে যেতে চাই। এখানে আর ভালো লাগছে না।
আরু– ভাইয়াকে রেখে তুই কানাডায় চলে যেতে পারবি মিরা?
মিরা — সেটাই তো সমস্যা আরু। চাইলেও যেতে পারছি না আমি। এক অদ্ভুত শিকলে বাঁধা পড়ে গিয়েছে। যেই শিকলের ভবিষ্যত নিশ্চয়তা নেই।
আরু — স্বামী – স্ত্রীর সম্পর্কে আলাদা রহমত থাকে। দেখে নিস ভাইয়া তকে ভালোবাসবে আর সাথে তুই ও।
মিরা বিষন্ন হাসে। আরু মন খারাপ করে বলে,
” আমাদের হল্লা – পার্টির সবাই বিয়ে করে সংসার করছে। সবাই বিয়ে করে বিদেশে ট্রান্সফার হচ্ছে। কয়েকদিন পর তুই ও চলে যাবি। আকাশ আর অবনির কি ভালোবাসা! আর এইদিকে আমি আর রুহান এক হতভাগা কপালপোড়া। বালের বিয়ে নামক শব্দ ওই আসে না জীবনে ।
আরুর রিয়্যাকশন দেখে মিরা ফিক করে হেসে উঠে।
— বিয়ে সবার হয়েছে। বাট আমার আর ইয়ানার হচ্ছে যুদ্ধের সংসার। ইয়ানার পলাশীর যুদ্ধ আর আমার ছোট – খাটো যুদ্ধ। দোয়া করি তর কপালেও একটা জুটুক। সেও যাতে বিদেশী হয়।
আরু নাক ছিটকিয়ে বলে,
‘ এ্যাঁই অভিশাপ দিছ না বোন। বিদেশী যাতে কপালে না জুটে। বাংলাদেশী বিয়ে করে বাংলাদেশেই সংসার করে ক্রিকেট টিম বানাবো।
মিরা শুধু হাসছে। তারা কথা বলতে বলতে মাঠে চলে আসে। হুট করে আরু চেঁচিয়ে উঠে,,
” ওহহ শিট! মোবাইল রেখে চলে আসছি ক্লাসে। তুই একটু ওয়েট কর আমি নিয়ে আসছি।
মিরা — দ্রুত যা, নাহলে হারিয়ে ফেলবি।
আরু আর না দাঁড়িয়ে চলে যায় ক্লাসের দিকে। মিরা মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। সূর্যের তেজ বেশি না হলেও সামান্য ভ্যাঁপসা গরম। খোলা আকাশের নিচে দাড়ানোর ফলে সূর্যের আলোটা একদম তার শরীরে এসে পড়ে। কপাল দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘমের জমা হয়। হঠাৎ করে মনে হলো দুর থেকে কেউ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে সামান্য কপাল কুচকে চারপাশে ভালোভাবে তাকায়। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। কেউ তার দিকে তেমনভাবে তাকানো নেই। নিজের মনের ভুল ভেবে পুনরায় আগের মত দাড়িয়ে থাকে।
আরু মোবাইল নিয়ে দরজার কাছে আসতেই কাউকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। ঠোঁটের কোনায় হাসি বজায় রেখে বলে,
” কেমন আছেন ভাইয়া?
অরিদ — এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
আরু– জি আল্লাহ রাখছে। ঠিক আছে ভাইয়া তাহলে আজ আসি। ভালো থাকবেন।
আরু হাসি দিয়ে পা বাড়াতেই আবার দাঁড়িয়ে যায়।
— আরু শুনো।
আরু অরিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
” জি ভাইয়া কিছু বলবেন?
অরিদ কিছুক্ষন নিচের ঠোঁটে কামড় দিয়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা মিরার দিকে তাকায়। কপাল কুচকে জিজ্ঞাসা করে,
” তোমার ফ্রেন্ডের কি শরীর ভালো না?
— কোন ফ্রেন্ড ভাইয়া?
— মিরা।
আরু অরিদের আড়ালে হাসে। সে প্রথমেই বুঝেছে কার কথা জিজ্ঞাসা করেছে। অরিদের মুখে নামটা শুনার জন্য বুঝে ও না বুঝার অভিনয় করেছে। আরুকে এইভাবে মিটিমিটি হাসতে দেখে অরিদ থতমত খেয়ে যায়। সামান্য গলা কেঁশে বলে,
” এমনি জিজ্ঞাসা করেছিলাম আরকি।
আরু — সকাল থেকে মিরার শরীরটা খারাপ লাগছে। জিজ্ঞাসা করেছি সকালে কিছু খেয়েছে কি না। ও বললো কিছু খায় নি। হয়ত দুর্বলতা থেকে মাথা ঘুরছে আর শরীর বার বার কেঁপে উঠছে। আমার তো অন্য কিছু মনে হচ্ছে ভাইয়া।
অরিদ চিন্তিত হয়ে বলে,
” কি?
মিরা — হয়ত মিরা প্রেগন্যান্ট।
অরিদ আচমকা চেঁচিয়ে উঠে,
” হুয়াট! কি সব বলছো?
অরিদের চেঁচানোতে আরু শুকনো ঢোক গিলে বলে,
” বুঝেছি ভাইয়া খুশির খবর তাই এইভাবে রিয়্যাকশন দিবেন? তবে মিরা এইটা অস্বীকার করে।
মিরা অস্বীকার করে কথাটা শুনে অরিদ কিছুটা শান্ত হয়। নাহলে কেন জানি কিছুক্ষনের জন্য রুহটা বেরিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের মধ্যে তো তেমন কিছু হয় নি তাহলে প্রেগন্যান্ট হবে কিভাবে?
অরিদকে ভাবতে দেখে আরু হেসে সিরিয়াস হয়ে বলে,
” ভাইয়া আপনি মিরাকে কিছু খাইয়ে বাড়িতে নিয়ে যান। এতক্ষন ক্ষুধার্ত থাকলে জ্ঞান হারাবে।
অরিদ আমতা আমতা করে আরুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে মিরার উদ্দেশ্যে চলে যায়। আরু অরিদের যাওয়া দেখে শব্দ করে হেসে বলে,
” যাক এই প্রেগন্যন্ট শব্দটা তাদের মাথায় ডুকিয়ে দিয়েছি। এখন একজন যখন আরেকজনের দিকে তাকাবে তখন দুজনের মধ্যে একটু লজ্জা লজ্জা ভাব আসবে। এরপর শুরু হবে প্রেম।
আরু হাসতে হাসতে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
মিরা অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে যায়। মিরাকে আসতে না দেখে পিছন ফিরে তাকাবে তার আগেই কেউ তার হাত ধরে সামনে নিয়ে যেতে থাকে। প্রথমে মিরা রেগে গেলেও হাত ধরে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে অবাক হয়। মিরা চারপাশে এক নজর তাকায়। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। অরিদ চৌধুরি হচ্ছে পয়সার কুমির তার উপর সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্ববান পুরুষ। এক কথায় ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশ বয়। কিছু কিছু মেয়ে তো মিরাকে চোখ দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। মিরা মহি সুরে বলে,,
” অরিদ ছাড়ুন আমার হাত। সবাই তাকিয়ে দেখছে।
অরিদ — আরে বাহহ আমার নাম ধরে ডাকছো। ভালোবেসে ফেললে নাকি?
মিরা — বাজে কথা বন্ধ করুন আর আমার হাত ছাড়ুন।
অরিদ মিরার কথায় পাত্তা না দিয়ে একদম ক্যান্টিনের ভিতরে নিয়ে যায়। এরপর একটা ভি আইপি রুমে নিয়ে মিরাকে বসিয়ে দেয়। মিরা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে,,
” কি পাগলামো শুরু করেছেন আপনি? আরু আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন?
অরিদ ক্যান্টিন থেকে কিছু খাবার অর্ডার করে নিয়ে আসে। অরিদ খাবারগুলো এক পাশে রেখে গম্ভীর হয়ে বলে,
” আরুকে পাঠিয়ে দিয়েছে।সকালে খেয়ে আসো নি কেনো?
মিরা — ইচ্ছে হয় নি তাই খেয়ে আসি নি। কৈফিয়ত কেনো চাচ্ছেন?
অরিদ — এতটাও মহান নয় আমি যে তোমার খাওয়া – দাওয়া নিয়ে কৈফিয়ত চাইব, দেখা- শুনা করব। না খেয়ে কিছু হলে তো আবার তোমার বাবা – মা আমার বাবা – মাকে দোষারুপ করবে । আমরা তার মেয়েকে সঠিকভাবে খেতে দেয় নি। এখন খেয়ে নিজেকে একটু শক্তিশালী করো নাহলে পরের বার ঝগরা করে হেরে যাবে দুর্বলতার জন্য। ঢং করে না খেয়ে এসে এখন আমার পকেট মারার ধান্দা করেছো আরকি।
মিরা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
” একবার ও কি আয়নায় দেখেছেন যে কত বড় হিটলার আপনি। খাবার খাওয়াতে এনেছেন নাকি খুঁটা দিতে এসেছেন?
অরিদ গম্ভীর হয়ে বসে বলে,
” খুঁটা কোথায় দেখলে? আমি যাস্ট সত্যিটা বলেছি।
অরিদের কথায় মিরা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এরপর রাগী আওয়াজে বলে,
” নিজের খাবার নিজে খান। চিন্তা করবেন না , না খেয়ে মরে গেলেও আমার বাপ আপনার পরিবারকে কিছু বলবে না। কারন তারা জানে এই বাড়িতে এসে আমি শিখা চৌধুরির মত মা পেয়েছি, সাজিদ চৌধুরির মত বাবা আর আহিয়ার মত বোন পেয়েছি।
অরিদ হঠাৎ বড়বড় শ্বাস টানে। ফর্সা হাতের রগগুলো ভেসে উঠে । নিচের দিকে তাকিয়ে মিরার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে পুনরায় বসিয়ে দেয়। অরিদের রেগে যাওয়াটা মিরার বোধগাম্য হলো না। অরিদ খাবারগুলো মিরার সামনে রেখে বলে,
” মরার ইচ্ছে হলো আমাকে বলো। আমার হাতের একটা ছুঁরির আঘাত ওই যথেষ্ট। ছুঁরিটা পেট বরাবর বসাব আর সাথে সাথে রুহটা আলাদা হয়ে যাবে। না খেয়ে তিলে তিলে মরার চেয়ে আমার ছুঁরির আঘাতে মরা অনেক ভালো হবে তোমার জন্য। আপাযত দশ মিনিটের মধ্যে খাবারটা শেষ করবে।
অরিদের গম্ভীর প্রতিটি শব্দচায়ন মিরা ভিতর থেকে কেঁপে উঠে। অরিদের লাল দুটি চোখ দেখে শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা হাতে খাবারের বাটিটা নিজের কাছে নেয়। অরিদের ভয়ানক চাহনি মিরা নিজেকে সিটিয়ে নেয়। কেনো জানি হুট করে ভয় কাজ করছে। এইসব চাহনি তার ভিতরে ভয় কাজ করে। মনে পড়ে যায় সেই নিকৃষ্ট জনির কথা। যে বার বার তার সম্মান লুটপাট করার প্রয়াস করত। তার বান্ধুবীকে কলঙ্কিত করে মেরছে। মিরা ভয়ে কাঁপছে আর চামচ দিয়ে খাবার মুখে তুলছে। মিরাকে অস্বাভাবিক আর ভাবুক দেখে অরিদ শান্ত আওয়াজে বলে,
” ঠিক আছো তুমি?
মিরা — হুম।
অরিদ — শুনলাম তুমি নাকি প্রেগন্যান্ট?
মিরা স্যুপ মুখে নিতে যাবে এমন সময় এই কথা শুনে থমকে যায়। লজ্জাকে এক পাশে রেখে অবাক হয়ে বলে,
” এমন বলদ মার্কা কথা কে বলেছে আপনাকে? আরু?
অরিদ — যদি বলি হ্যা। সে যায় হোক খুশির খবরে মিষ্টি খাওয়াবে না?
মিরা নাক – মুখ কুচকে অরিদের দিকে তাকায়। কত বড় অসভ্য হলে এইটা নিয়ে ফাজলামো করে। আরুর বাচ্চা ! তকে আমি একবার সামনে পায়। মিরা অরিদের দিকে না তাকিয়েই বলি,
” বাড়িতে গিয়েই সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতাম। কিন্তু তার আগেই আরু আপনাকে জানিয়ে দিলো। বাই দ্যা ওয়ে আপনি তো সম্পর্কে বাচ্চার মামা হবেন।
অরিদ আচমকা মিরার দিকে তাকায়।
— হুয়াট!
মিরা ভাবলেশহীনভাবে বলে,
” হ্যা।
অরিদ — বাবা কে তাহলে?
মিরা কোনো কিছু না ভেবেই হুট করে বলে,
” জাওয়াদ ভাই।
কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে এক বিকট শব্দে মিরা কেঁপে উঠে। তার সামনে রাখা সমস্ত খাবার মেঝেতে পড়ে আছে। যেহেতু এইটা একটা রুম তাই কেউ নেই সাথে। তার উপর দরজা লাগানো ভিতর থেকে। মিরা মেঝের
থেকে চোখ সরিয়ে অরিদের দিকে তাকায়। অরিদ রাগে দাঁত কিড়মিড়িয়ে আচমকে মিরার চিবুক চেপে ধরে বলে,
” জাওয়াদ! জাওয়াদ! জাওয়াদ ! কে এই জাওয়াদ! কে হয় সে ! কেনো বার বার তার কথা উচ্চারিত হয়? তার বাচ্চা তর পেটে তাই না? কার বউ তুই? আমার বউ হয়ে সেই কু*ত্তার বাচ্চা সন্তান তর পেটে কথাটা উচ্চারন করলে কোন সাহসে?
অরিদের প্রতিটি ধমকে মিরা কেঁপে উঠছে। গালে ব্যাথায় টনটন করছে। মনে হচ্ছে অরিদের আঙ্গুল গুলো চামরা ভেদ করে ডুকে পড়বে। জাওয়াদ কে? সত্যিকার অর্থে জাওয়াদ নামের কেউ তো নেই। সে তো এমনি এই নামটা উচ্চারন করে। কিন্তু এইভাবে রিয়্যেক্ট কেনো করলো উনি? উনি তো আমাকে বউ হিসেবে মানে না। আর আজ উনি আমাকে নিজের বউ বললো! মিরা ব্যাথায় ছটফটিয়ে উঠে। অরিদের চোখ – মুখ লাল হয়ে আছে। মিরা অরিদের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,
” ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি।
অরিদ চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে মিরাকে ছেড়ে দেয়। গাল থেকে হাত সরাতেই মিরা যেন নিজের জীবন ফিরে পায়। কিন্তু এক অপ্রত্যাশিত আর নির্যাতিত থাবায় সে হতভম্ভ হয়ে যায়। অরিদ তার দুই ঠোঁট শক্তভাবে চেপে ধরেছে। একের পর এক দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে যাচ্ছে। যেন ঠোঁটের উপর কোনো প্রতিশোধ নিচ্ছে নিখোঁতভাবে। মিরা পর পর এমন ভয়ংকর রুপে আশ্চর্য হচ্ছে। এ তো অগ্নি চৌধুরির ফটোকপি! মিরা ব্যাথায় শব্দ করে উঠে। তার হাত অরিদ নিজের দুই হাত দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছে। শরীর নাড়ানোর মত শক্তি নেই। একের পর এক এমন দাঁতের কামড়ে মিরার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। মিরা পা দিয়ে ছটফট করলে অরিদ নিজের পা দিয়ে আবদ্ধ করে নেয়। অরিদ সম্পর্নভাবে মিরার উপরে।
বাঁধন ধীরে ধীরে নরম হতে থাকে। তবে এখন দাঁতের ঘর্ষন নয় হালকা নরম স্পর্শ। খুব নরমভাবে মিরার ঠোঁটগুলো অরিদ নিজের ঠোঁটের ভাঁজে নিয়ে নেয়। মিরা কাঁপছে ভিষনভাবে। এতক্ষন ভয়ংকর স্পর্শ অনুভব করলেও এখন কেমন লজ্জা লাগছে। মিরা এতক্ষন চোখ বন্ধ ছিলো। চোখ খোলে তাকাতে যাবে তার আগেই অরিদ মিরাকে ছেড়ে দেয়। মিরা ব্যাথায় ঠোঁটে স্পর্শ করে স্তব্দ হয়ে যায়। ঠোঁট অনেক জায়গায় কেটে গিয়েছে। রক্ত ও বের হয়েছে কিন্তু সেটা শেষ মুহূর্তে অরিদ খেয়ে নিয়েছে! মিরা লজ্জা, রাগ, জেদ আর ব্যাথায় জিম মেরে এক পাশে শুয়ে থাকে। অরিদ গম্ভীর হয়ে এতক্ষন চোখ বন্ধ করে রাখে। হুশ আসলে নিজের করা কর্মকান্ডে চোখ বড় বড় করে ফেলে। কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া কাহিনী, মুহূর্তে মনে পড়তেই মাথায় হাত। মিরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,
” কি করলাম আমি? কেনো করলাম? কিসের এত জেলাসি? কিসের এত রাগ? হাজারটা ছেলের নাম নিক তাতে আমার কি? আমি কেনো এত হাইপার হয়ে যায় জাওয়াদ নামটা শুনলেই! আমি তো মিরাকে সহ্য করতে পারি না। আলাদা একটা রাগ সেই প্রথম দিন থেকেই। বিয়ে হওয়াতে আমার সবচেয়ে অপছন্দের মেয়ে সে। তাহলে তার প্রতি আমি কেনো এত দুর্বল আর পজেসিভ হয়!
অরিদ নিজেকে স্বাভাবিক করে এক পাশে শুয়ে থাকা মিরার দিকে তাকিয়ে মৃদু আওয়াজে বলে,
” মিরা উঠে বসো।
মিরা একইভাবে শুয়ে থাকে। মিরাকে নাড়াচড়া করতে না দেখে অরিদ পুনরায় বলে,
” মিরা উঠে বসো। বাড়ি যাব।
পর পর ডাকার পরও মিরার রেসপন্স না পেয়ে কপাল কুচকে আসে। সন্দেহবশত মিরার দিকে ঝুঁকে জোর করে নিজের দিকে ফেরায়। মিরা নিজের দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। অরিদ বাঁকা হেসে মিরার দিকে এক পলক তাকিয়ে হেচকা টানে শুয়া থেকে উঠে বসায়। এরপর নিজে বিছানা থেকে উঠে মিরার উদ্দেশ্যে বলে,
” যা হয়েছে সেটা সপ্ন ভেবে ভুলে যাও। এইটা একটা দুর্ঘটনা ছাড়া কিছুই নয়। একটু আগের কাহিনী ভেবে দেবদাসের মত সারাক্ষন বসে থেকো না। উঠে আসো। এইটা তোমার বেড রুম নয়। এইটা হচ্ছে ক্যান্টিন রুম।
মিরা একদম নিশ্চুপ। যেন কোনো অনুভুতিহীন শূন্য পাথর। অরিদকে অনুসরন করে মুখ অর্ধেক ঢেকে সামনে এগিয়ে যায়। অরিদ ক্যান্টিনের একজন লোককে ডেকে বলে,
” ভিতরকার মেঝেটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিও।
লোকটা — জি স্যার।
অরিদ আর কিছু না বলে সোজা চলে যায় গাড়ির কাছে। এরপর গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসলে মিরাও এসে পাশে বসে। মিরাকে মুখ ঢেকে রাখতে দেখে অরিদ কপাল কুচকে প্রশ্ন করে,
” এইভাবে মুখে ঢেকে রেখেছো কেনো?
মিরা কটমট চোখে অরিদের দিকে তাকিয়ে বলেন,,
” আমার ঠোঁট এক ক্ষ্যাপা বাঘের থাবায় পড়ে ভার্জিনিটি হারিয়ে রক্তাক্ত হয়েছে। এখন তার বিধ্বস্ত অবস্থা যদি লোক সমাজ দেখে তাহলে হাসা হাসি করবে। আপাযত আপনি চুপ থাকুন আর আমাকেও থাকতে দিন।
মিরার যুক্তি শুনে অরিদ চুপ হয়ে যায়। মিরা সিটে হেলান দিয়ে চোখ খিঁচে রেখেছে। ভালোবাসার পরশ নাকি এইটা হিংস্রতা ছিলো?
আরু ইচ্ছে করে বাড়িতে না গিয়ে ফুঁচকার দোকানের পাশে গিয়ে ফুঁচকা খেয়ে আসে। অনেক দিন ধরে ঝাল ফুঁচকা খাওয়া হয় নি। তাই খাওয়া শেষ করে ইচ্ছে করে রিক্সা না নিয়ে হেটে হেটে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ব্যাস্ত রাস্তায় একটা আইসক্রিমে কামড় দিচ্ছিলো আর আনমনে হাটছিলো। হুট করে সামনে কারোর আগমনে দু পা পিছিয়ে যায়। কিছুটা রাগ দেখিয়ে সামনে তাকাতেই কপাল কুচকে আসে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই ছেলেটা যাকে সেদিনে ক্যাম্পাসে সে জুতা দিয়ে পিটিয়ে হসপিটালে পাঠয়েছিলো। তার সামনে বিচ্ছিরি এক হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। মিরা নিজ পায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,
” আমার জুতার বারি খেয়ে তৃপ্তি মিটে নি সেদিন? আজ তো আমি হিল পড়ে আসি নি, যে তৃপ্তি মিটিয়ে দিব। সামনে থেকে সর বাল। খাম্বার মত খাডাসের হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস।
মিরা কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আরও দুইজন এসে ছেলেটার সাথে যুক্ত হয়। মিরা কিছুটা ভয় পেলেও শক্ত গলায় বলে,
” কি সমস্যা তোমার? এইভাবে রাস্তা আটকিয়েছো কেনো? তাও আবার মাঝ রাস্তায়। পথ ছাড়ো নাহলে চেঁচিয়ে গন পিটুনি খাওয়াব।
ছেলেটা বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে বলে,
” চেঁচিয়ে লোক জড়ো করবে ? তবে কর। কেউ নেই এখন। এইটা নির্জন রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে বড় লোকেরা বেশি যাতায়াত করে। এখানে বর্তমানে কেউ নেই। সেদিন খুব সাহস দেখিয়েছিলি আজ দেখব কত সাহস দেখাতে পারিস। এই তোরা এইটাকে ধরে গাড়িতে তোল। আজ এই মা*** সব তেজ বের করব।
আরু আচমকা পিছিয়ে যায়। ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। লোক দুইটা আরুর দিকে বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসছে। আর আরু এক – পা , দু- পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে তার হাত – পা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে আসছে। সুযোগ বুঝে ভোঁ এক দৌড় দেয়। তিনটা ছেলেই হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকে আরুর দিকে। তারা ভেবেছিলো ভয়ে তাদের কাছে ক্ষমা চাইবে। এরপর তারা ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিবে।
একজন লোক– কিরে মেয়েটা তো পালিয়ে গেলো।
— থাক আর দৌঁড়ে এনার্জি নষ্ট করতে পারব না। অন্যদিন সুযোগ প্রতিশোধ নিব।
— কি প্রতিশোধ নিবি?
— আমাকে যেভাবে জুতা পিটা করেছে আমি ও ঠিক সেই ভাবে জুতা পিটা করব।
— আমি আরও ভেবেছিলাম সম্মান নষ্ট করবি।
— ফাঁসিতে ঝুলার ইচ্ছে নেই।
আরু এখনও সমান তালে দৌড়ে যাচ্ছে। পিছন দিকে তাকানোর সাহস নেই তার কাছে। দৌড়াতে গিয়ে অনেক বার পড়ে ও গিয়েছে। কিন্তু তার উদ্দেশ্য একটাই যেকোনো মূল্যে পালাতে হবে তাদের হাত থেকে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আচমকা একটা গাড়ির সাথে হালকা ধাক্কা খায়। তবে ধাক্কা লাগার আগেই গাড়িটা থামিয়ে দেওয়া হয়। আরু ধাক্কা খেয়ে ক্লান্ত হয়ে এক পাশে বসে পড়ে। সামান্য ব্যাথা পেয়েছে পেটে। গাড়িতে বসে থাকা ব্যক্তিটা আরুর দিকে তীক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে থেকে আরুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর গম্ভীর হয়ে বলে,
” আজকাল এত সুন্দরী পাগলীও রাস্তায় দেখা যায়। অদ্ভুত!
পরিচত কন্ঠ আর পাগলী সম্মোধন পেয়ে আরু চোখ তোলে সেদিকে তাকায়। সামনে রেশবকে দেখতে পেয়ে তেঁতে উঠে বলে,
” পাগলী কাকে বললেন আপনি? আমাকে দেখে কি পাগলী মনে হয়?
রেশব — রাস্তায় পাগলের মত এইভাবে দৌঁড়ালে লোকে পাগল বলবে এটাই স্বাভবিক।
আরু বিরক্তি নিয়ে বলে,,
” ডায়াবেটিস চব্বিশে চলে গিয়েছিলো। ডাক্তার বলেছে আরেকটু বেড়ে গেলে মরে যাব। তাই দৌঁড়ে ডায়াবেটিস কমানোর কাজ করছি।
আরুর কথা শুনে রেশব থতমত খেয়ে যায়। এই মেয়ের আসলেই স্ক্রু ঢিলা। হঠাৎ আরুর হাতে রক্ত দেখে অধৈর্য হয়ে বলে,
” তোমার হাতে রক্ত ঝরছে কেনো? ব্যাথা পেয়েছো কোথাও?
রেশবের কথা শুনে আরু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে কান্না করে উঠে। রেশব হতভম্ভ হয়ে বলে,
” আরে কাঁদছো কেনো?
আরু– দেখতে পাচ্ছেন না ব্যাথা পেয়েছি।
রেশব গম্ভীর হাসি দিয়ে বলে,
” এতক্ষন তোমার ব্যাথা লাগে নি? আমি যখন দেখিয়েছি তখন থেকেই ব্যাথা লাগতে শুরু করেছে? আরেহহ বাহহ!
আরু নিজের কান্না থামিয়ে বলে,
” আরে আপনি এত কথা বলছেন কেনো? আঘাত প্রাপ্ত বিপদে পড়া মেয়েকে সাহায্য না করে মজা নিচ্ছেন। যায় হোক সামনে থেকে সরুন। লোক গুলো মেবি চলে গিয়েছে।
রেশব কপাল কুচকে বলে,,
” কিসের লোক?
আরু– ওইদিন যাকে জুতা পিটা করেছিলাম সে এসেছিলো প্রতিশোধ নিতে। উপায় না পেয়ে দৌঁড় দিয়েছিলাম। শালারা মেবি আসে নি পিছনে। নাহলে এতক্ষনে চলে আসত।
আরুর মুখে গালি শুনে রেশব চোখ বড় বড় করে তাকায়। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,
” ডেঞ্জারাস মেয়ে! আজ জুতা পিটা করো নি কেনো?
আরু– মাথা খারাপ আপনার? আমি একা মেয়ে আর ওরা তিন জন ছিলো। একা একটা মেয়ে লড়াই করা সম্ভব নাকি? তবে এদের মেইন পয়েন্টে ঘুষি দিলেই শক্তি শেষ হয়ে যেত। বুদ্ধিটা আগে মাথায় আসে নি।
আরুর এমন অদ্ভুত কথায় রেশব কেঁশে উঠে। মেয়েরা এমন শক্ত হয়!
রেশব — থাক আর অকাজ করতে হবে না তোমাকে। যদি চাও ফাস্টেড করতে পারো। আমার গাড়িতে ফাস্টেড বক্স আছে। চলো তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি।
আরু — না থাক আমি বাড়িতে গিয়ে করে নিব। ধন্যবাদ আপনি আসতে পারেন।
রেশব — তোমাকে একা পেয়ে তারা আবার আসতে পারে। হয়ত তোমার সাথে আমাকে দেখে দুরে কোথাও লোকিয়ে আছে।
আরু চোখ তোলে তাকায় রেশবের দিকে। আরু রাস্তার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিয়ে ভয়ে ভয়ে রেশবের কথা মত গাড়িতে গিয়ে উঠে।
একটু পর মাগরীবের আজান দিবে। অগ্নি দুপুরে বাড়িতে চলে এসেছিলো। কিন্তু আসার পর থেকে ইয়ানার সাথে কথা বলে নি। নিজের স্টাডি রুমে ভিডিও কলে কারোর সাথে কথা বলছে। তবে প্রতিটি শব্দ, বাক্য ছিলো ইংরেজীতে। ইয়ানা শুনতে চেয়েছিলো কি বলছে কিন্তু আফসোস বুঝে উঠতে পারছে না। সেই দুপুর থেকে ভিডিও কলে কাদের সাথে যেন কথা বলছে। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করা। ইয়ানা একবার দরজায় নক করতে চেয়েছিলো কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর করে নি। নিজের রুমে এসে অনেকক্ষন পায়চারী করে। চারদিকে ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে। ইয়ানা কান পেতে কিছু শুনার চেষ্টি করছে। শুধু এইটুকু বুঝেছে,,
“আই’ম অ্যারাইভিং অ্যাট দ্য টর্চার সেল নাউ। এভরিথিং মাস্ট বি রেডি টু দ্য লাস্ট ডিটেইল।”
ইয়ানা এই বাক্যটা স্পষ্ট বুঝত্ব পারে। তার বুক ধুক করে উঠে। আচমকা মাথায় এক জেদ চেপে বসে। চারদিকে একবার তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। চারদিকে হাটছে আর ভিবিন্ন কিছু ভেবে যাচ্ছে। ড্রয়ার থেকে একটা চুইনগাম বের করে মুখে দিয়ে চিবাতে থাকে। অগ্নিকে ভিতরে আসতে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে বিছানায় বসে। অগ্নি কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। ইয়ানা সেদিকে তাকিয়ে থুতনি হাটুতে ঠেকিয়ে ভাবুক হয়ে বসে। কিছুক্ষন পর অগ্নি শাওয়ার শেষ করে বেরিয়ে আসে। ইয়ানাকে এমন ভাবুক দেখে কপাল কুচকে সামনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে,
” আজ এত শান্ত!
ইয়ানা চোখ তোলে তাকায় সেদিকে। অগ্নিকে তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
” কেনো আপনার সমস্যা হচ্ছে?
অগ্নি — তোমার শান্ত থাকাটা ও আজকাল বড্ড ভাবায়। কোন সময় কোন কু- বুদ্ধি বের করো কে জানে?
ইয়ানা হালকা হেসে বলে,
” যত বড় বুদ্ধি ভাবি না কেনো আপনার মত কলিজায় গিয়ে আঘাত করব না। ছুঁরির আঘাত আপনি একদম সামনে থেকে করেছেন। আমি করলেও সামনে থেকেই করব। যদি কখনো করি ও তবে সেটা জানিয়ে করব।
অগ্নি — পিছন থেকে ছুঁরি আঘাত করে কাপুরুষ আর ভিতুরা। বাট আমি সামনে থেকেই ছুঁরি বসাতে পছন্দ করি বেশি। তুমি আমার বউ হয়ে পিছন থেকে কেনো আঘাত করবে বলো? আমার রুলস অনুযায়ী আমার মত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ইয়ানা কিছু বলে না। শুধু অগ্নির সেই বাক্যটা কানে বাজছে।
— তোমার মুখে রাবার কেনো?
অগ্নির এমন প্রশ্নে ইয়ানা হতভম্ভ হয়ে বলে,,
” এইটা রাবার নয় চুইনগাম।
— চুইনগাম কি?
ইয়ানা তাজ্জব বনে যায়। অবাক হয়ে বলে,
” আপনি চুইংগাম চিনেন না? কখনো ছোট বেলায় নাম শুনেন নি? বড় হয়ে কানাডায় দেখেন নি কোনোদিন?
— ছোট সময়ের কথা এখন মনে থাকার কথা নয়। বাট কানাডায় কখনো এই নাম শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।
ইয়ানা আচমকা বলে,
” মুখের ভিতরে শক্ত হয়ে ডুকে নরম হয়ে বের হওয়ার নাম ওই হচ্ছে চুইংগাম। যদি এরপরও না চিনেন তাহলে একটা খেয়ে দেখতে পারেন। রাবার হলেও মিষ্টি।
চুইনগামের ব্যাখ্যা জেনে অগ্নি তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। এইটাকে আর মানুষ করতে পারবে না সে!
— আমার খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
অগ্নি বেরিয়ে যেতে নিলে ইয়ানা জিজ্ঞাসা করে,
” কোথায় যাচ্ছেন?
অগ্নি থামে কিছুক্ষনের জন্য। তবে কোনো উত্তর না দিয়ে বিনা বাক্যে নিজের নিজের গাড়ির কাছে চলে যায়। ইয়ানা চুপিচুপি অগ্নির পিছন দিয়ে যায়। সেদিন সপ্নে সে দেখেছিলো কিভাবে ব্যাক সিটে লোকিয়ে টর্চার সেলে প্রবেশ করেছে। আজ সেই সপ্নটাকেই বাস্তবে রুপান্তর করবে। অগ্নি দরজা পেরিয়ে যেতেই ইয়ানা দরজার পাশে রাখা ফুলদানিটা ফেলে দেয়। রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। তবে বিলাশবহুল এই ভবনের চারপাশে লাইটিং এর আলোতে চিকচিক করছে। ফুলদানি ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে অগ্নি হাঁটা থামিয়ে দেয়। কপাল কুচকে পিছনে ফিরে তাকায়। এরপর ধীর পায়ে দরজার কাছে এগিয়ে আসে। ফুলদানিটা পড়া অবস্থায় দেখে স্টাফকে আদেশ করে ভাঙ্গা অংশগুলো পরিষ্কার করে নিতে। নাহলে যে কোনো সময় কারোর পা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অগ্নি স্টাফকে আদেশ দিয়ে গম্ভীর পায়ে গাড়ির কাছে যায়। এরপর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্ট্রাট দেয়।
এইদিকে ইয়ানা ব্যাক সিটের নিচে নিজেকে গুঁটিয়ে বসে থাকে। চোখ- মুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখে। ভিতরে এক প্রকার ভয় আর যুদ্ধ। সেদিন হয়ত সপ্ন ছিলো তাই অতি সহজেই টর্চার সেলে পৌঁছে গিয়েছিলো। সেটা ছিলো বাংলাদেশের এক তথাকথিত সামান্য একটা সেল। কিন্তু আজ সে যে পরিস্থিতিতে আছে সেটা বাস্তব। একবার যদি অগ্নি দেখে তাহলে সেখানই তাকে জিন্দা কবর দিবে। সে যাচ্ছে এমন এক জায়গায় যেখানে সব হিংস্র লোকের বসবাস। নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের যাতায়াত। প্রতিটি কোনায় লেগে আছে পাপ, অনাচার আর অশ্রু! সেখানে গিয়ে আমি কোথায় যাব?
চারদিকে নিশ্চয় অনেক গার্ড থাকবে। কোথায় গিয়ে দাড়াব আমি? কি করে ভিতরকার পরিবেশ দেখব? কিভাবে বুঝব অগ্নি চৌধুরির চোখে দেখা সত্যি। যদি কেউ আমাকে দেখে ফেলে? তারা আমাকে জীবন নিয়ে আসতে দিবে না আমি সিউর। আর উনি তো আমাকে সেখানেই খুন করবে।
ইয়ানার ভয় কাজ করছে প্রচুর। তবুও নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। ভয় পেলে চলবে না। জানতে হবে আমার সব কিছু। নিজের চোখে দেখতে হবে অদেখা জিনিসিগুলো। নাহলে আপনার দুর্বলতা বুঝব কিভাবে অগ্নি চৌধুরি? আমি ও দেখি কার জয় হয়। আপনার পাপ নাকি একজন স্ত্রী!
প্রায় এক ঘন্টা গাড়িটা চলছে। গাড়িটা ঢুকে এক নির্জন জায়গায়। চারদিকে অন্ধকার আর গা ছমছমে পরিবেশ। অগ্নি গম্ভীর হয়ে মাস্ক পড়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। অগ্নি নামার সাথে সাথে দুইজন গার্ড এগিয়ে আসে। অগ্নি চোখ দিয়ে গার্ডকে ইশারা দিতেই লোহার গেইডটা লাগিয়ে দেয়। ইয়ানা বিকট শব্দে কেঁপে উঠে। বুঝতে পারছে না বাহিরে কি হচ্ছে। অগ্নি সহ গার্ডগুলো ভিতরে চলে যায়। ইয়ানা মাথা উচু করে ব্যাক সিটে বসে। কোমরে টান অনুভব হতেই আহহ শব্দ করে উঠে। এতক্ষন একইভাবে বসে থাকার কারনে কোমরে বাজেভাবে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। ইয়ানা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে উঠে বসে।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৬
চারদিকের পরিবেশ দেখে আৎকে উঠে। বাহিরের লোহার গেইডটা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। একবার যেহেতু ডুকে পড়েছে পালানোর আর রাস্তা নেই। ইয়ানা মুখে কাপর বেঁধে গাড়ি থেকে নামে।বাহিরে কোনো গার্ড নেই। সে তো ভেবেছিলো অসংখ্যক গার্ড থাকবে। হয়ত লোহার গেইডটা রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে। ইয়ানা মুখে কাপর বেঁধে পা টিপে টিপে প্রবেশ করতে থাকে। টর্চার সেলের বাহিরে দেখলে মনে হচ্ছে কোনো বিলাশবহুল বিশাল বাড়ি। সে খোলা দরজাটার কাছে এসে কাউকে দেখে আচমকা পিছিয়ে যায়।
