অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৯

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৯
লিজা মনি

রাতের নিস্তব্দতা ভেদ করে খোলা কাউচের ভেতর থেকে ভেসে আসে কোনো পাখির আওয়াজ। ইয়ানা নিজের মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে পিটপিট করে চোখ খোলে তাকায়। মস্তিষ্ক এখনও অন্য এক জগতে বাস করছে। শরীরে ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই নিজের হুসে আসে। আচমকা চোখ তুলে তাকায় চারদিকে। নিজেকে বাথটপের পানিতে বাঁধা অবস্থায় দেখে সিউরে উঠে। এরপর সামনে থাকা ব্যক্তিটার দিকে তাকায়। যে একটা ব্যাল্ট নিজের হাতে পেচাচ্ছে। চোখে গম্ভীরতা আর মুখে রাগ স্পষ্ট। ইয়ানা শুকনো ঢোক গিলে। কোমরে পোড়া জায়গায় ব্যথায় জ্বালা করা শুরু করে দেয়। টানা চার ঘন্টা অজ্ঞান থাকায় ব্যাথাটা অনুভব করতে পারে নি। এখন ঠান্ডা পানির স্পর্শে জ্বালা করছে। ইয়ানা ভিতু চোখে অগ্নির শান্ত মুখটার দিকে তাকায়। শান্ত থাকা মানে ঝড়ের পূর্ভাবাস! ইয়ানা কাঁপা গলায় বলে,

” ঠান্ডা লাগছে প্রচন্ড!
— জ্বলন্ত আগুনে দিয়ে আসব?
ইয়ানা পিটপিট করে তাকায়। অগ্নি নিচ থেকে মাথা তুলে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
” কিভাবে গিয়েছিলে ওইখানে?
ইয়ানা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে। ইয়ানাকে ভয় পেতে দেখে অগ্নি হাতে থাকা ব্যাল্টটা শব্দ করে দেয়ালে আঘাত করে হুংকার ছেড়ে বলে,
” ন্যাকামি করবে না আমার সামনে। কিভাবে গিয়েছিলে টর্চার সেলে ?
অগ্নির ধমকে রাতের নিস্তব্দ দেয়াল শাঁ শাঁ করে উঠে। ইয়ানা কাঁপছে ভয়ে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আ.. আপনার গাড়ির ব্যাক সিটের নিচে বসে গিয়েছিলাম।
— তোমার স্পর্ধা আর সাহস আমাকে অবাকতার চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। মেরে ফেলে দেই? মরার পাখা গজাইছে? মাটির নিচে চাপা পড়তে চাও? রক্ষিতার ড্রেস কেনো পড়েছিলে?
— আমার কাপড় পড়া থাকলে সবাই চিনে ফেলত। তাই একজন রক্ষিতার কাপড় পড়েছিলাম। বিশ্বাস করুন আমি সব কিছু দেখেই চলে আসতাম। অন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিলো না।
— কিভাবে আসতে?
অগ্নির ঠান্ডা আর ভয়ংকর কন্ঠ। ইয়ানা কিছুক্ষন ভেবে বলে,
” আপনার গাড়ি দিয়ে চলে আসতাম পুনরায়।

অগ্নি বসা থেকে উঠে ইয়ানার গাল শক্ত করে চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে,
” টর্চার সেলে ডুকা যতটা সহজ সেখান থেকে বের হওয়া ঠিক ততটা বিপদজ্জনক। ভিতর থেকে বের হলে প্রত্যেককে চেক করা হয়। তোমার মনে হয় তুমি এর সহজে বের হতে পারতে? মেরে ফেলে দিত না রাবিশ!
ইয়ানা গালের ব্যাথা উপক্ষে করে শ্বাস টেনে বলে,
“আপনি ছিলেন তো পাশে। যেখানে আপনি আছেন সেখানে ভয় কিসের অগ্নি চৌধুরি? আপনি ছিলেন বলেই সাহস করে গিয়েছিলাম। যদি আপনি না থাকতেন তাহলে সেই নিষিদ্ধ জায়গায় ইয়ানার ছায়া ও কোনোদিন পরত না। আপনার জন্য ওইত আমার এত সাহস এত যুদ্ধ!
ইয়ানার সরল উত্তরে অগ্নির কপালের ভাঁজ সমান হয়ে পড়ে। ইয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষন শান্ত হয়ে বসে। এই মেয়ের ভিতরে এক আলাদা শক্তি আছে। মাত্র কয়েকটা বাক্যে সব রাগ কোথায় হারিয়ে গেলো?

— ঘৃনা করো, তারপরও এত বিশ্বাস?
— ঘৃনা আমার সাময়িক দৃষ্টি। কিন্তু পুরুষটা তো আমার ভালোবাসা।
অগ্নি চাপা হাসে। হাতের ব্যাল্টটা এক পাশে রেখে সেদিকে তাকিয়ে বলে,
” ভেবেছিলাম এই বেল্ট দিয়ে তোমাকে রক্তাক্ত করব। কিন্তু সেই সুযোগটা থেকে বঞ্চিত করলে।
ইয়ানা চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস টানে। অগ্নি উঠে এসে ইয়ানার হাতের বাঁধন খুলে দেয়। এরপর পানি থেকে তুলে এনে গায়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে দেয়। ইয়ানা ঠান্ডা পানিতে ভেতরে কাঁপছিলো। কিন্তু এখন পানি থেকে উঠে আসার কারনে অসম্ভব রকমের কাঁপতে থাকে। প্রায় তিন ঘন্টা ঠান্ডা পানিতে থাকার কারনে যেন রক্তগুলো বরফ হয়ে গিয়েছে। ইয়ানার অস্বাভাবিক কাঁপুনিতে অগ্নি চিন্তিত হয়ে পড়ে। পড়নের কাপড়টা চেইঞ্জ করিয়ে দিয়ে বিছানায় গরম কাপড় দিয়ে শুইয়ে দেয়। কিন্তু শরীরের কাঁপুনি কিছুতেই কমছে না। অগ্নি হাতে একটা মলম নিয়ে ইয়ানার পাশে বসে। এরপর ইয়ানার টি- শার্ট উন্মুক্ত করে সিগারেটের ছেকা দেওয়া স্থানে মলম লাগিয়ে দেয়। জায়গাটা কেমন কালচে হয়ে গিয়েছে। কালো চামড়ার চারপাশে কেমন লাল আকার ধারন করে। ইয়ানা ব্যাথা চোখ বুঝে ফেললে অগ্নি সেখানে ফু দিয়ে বলে,

” এত অবাধ্য কেনো হও আমার? এমনভাবে কেনো রাগিয়ে দাও, যে রাগ আমি কন্ট্রোল করতে পারি না। রক্ষিতার পোশাক পড়েছো। তখন যদি জ্ঞান না হারাতে তাহলে হয়ত মাটির নিচে পুঁতে দিয়ে আসতাম। বেঁচে গেলে আজকের মত।
ইয়ানার পুরো শরীর হালকা গরম হয়ে উঠে।কিন্তু ঠান্ডার কারনে অনুভব করতে পারছে না। ঠান্ডায় কাঁপছে অসম্ভবভাবে। কথা বলতে পারছে না। অগ্নি ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের শরীরের টি- শার্টটা খুলে ফেলে। এরপর উন্মুক্ত শরীর নিয়ে ইয়ানার সাথে কম্বলের নিচে ডুকে যায়। ইয়ানার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে । অগ্নির শরীরের উষ্ণতা পেয়ে তাকে ভালোভাবে আকড়ে ধরে। অগ্নি ইয়ানাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। অনেক সময় কারোর শরীরের উষ্ণতায় শরীর গরম হয়ে আসে। প্রায় অনেক্ষন পর ইয়ানা স্বাভাবিক হয়ে পড়ে। অগ্নি ইয়ানার গলায় চুমু খেয়ে বলে,

” ভালো লাগছে এখন?
ইয়ানার মিহি আওয়াজ — হুম।
— কিন্তু আমার ভালো লাগছে না।
— কেনো?
— জানি না কেমন অস্বস্তি লাগছে।
— শরীর খারাপ লাগছে?
— হ্যা প্রচুর।
— তাহলে ছাড়ুন আমাকে আর মেডিসিন নিন।
অগ্নি ইয়ানাকে নিজের সাথে আরও চেপে ধরে বলে,

” মেডিসিন আমার সাথেই আছে।কন্ট্রোল হারা হয়ে পড়েছি জান। চাই এখন তোমাকে।
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। অগ্নির বুক থেকে সরে আসতে নিলে আরও বাজেভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়। অগ্নি চোখের পলকে এক ঝটকায় ইয়ানাকে বুক থেকে সরিয়ে তার হাত দুইটা চেপে ধরে। ইয়ানা বোকার মত নিজের হাত দুইটার দিকে তাকিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। যে এই মুহূর্তে তার দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা কাঁদো – কাঁদো হয়ে বলে,
” না প্লিজ।
অগ্নির সরল উত্তর — হ্যা প্লিজ।
ইয়ানাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অগ্নি তার ঠোঁট দুটি আকড়ে ধরে। ইয়ানা ছটফটিয়ে উঠে। অগ্নির হাতের অবাধ্য বিচরনে সিটিয়ে যায়।অগ্নি এক হাতে লাইট অফ করে দেয়। অন্ধকার হয়ে পড়ে পুরো রুম। রাতের শাঁ শাঁ আওয়াজের সাথে মিলিত হয় দুইজনের উষ্ণ নিশ্বাস।

— আরু শুন কাল থেকে আমি আর ভার্সিটিতে আসব না।
আরু অবাক হয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
” কিন্তু কেনো?
মিরা মুচকি হেসে বলে,
” এই সপ্তাহে চলে যাচ্ছি। টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছে আমার। আর আমার শশুড়ি নিজেই টিকিট কেটে রেখেছেন। আমি জানতাম না কাল জানতে পেরেছি।
আরু — পাগল হয়ে গিয়েছিস মিরা! তুই ভাইয়াকে রেখে চলে যাবি?
মিরা হেসে বলে,
” উনিও যাচ্ছেন আমার সাথে।
আরু ভ্রুঁ নাচিয়ে বলে,
” অরিদ ভাইয়া জানে?

মিরা — না। আমিও জানতাম না, রাতে আমাকে আম্মু জানিয়েছে। উনার পড়াশুনার জন্য নাকি এই মাসেই ইউকেতে যেতে চেয়েছিলেন। আম্মু কৌশলে কানাডায় পাঠাচ্ছে।
আরু– সিরিয়াসলি মিরা শিখা চৌধুরির মত শাশুড়ি পেতে ভাগ্য প্রয়োজন। আজকালকার শাশুড়িরা তো শুধু ছেলে আর ছেলের বউয়ের পিছনে লেগে থাকে। কিন্তু উনি চেষ্টা করছে তদের সম্পর্কটা সঠিক করতে। আমিও এমন শাশুড়ি চাই।
মিরা — পেয়ে যাবি।
আরু– সত্যি বলছিস?
মিরা — ভাগ্য যদি ভালো হয়।
আরু আনমনে হাসে। ইদানিং তার মধ্যে এইসব ফিলিংস কাজ করছে বেশি।
মিরা — লাস্ট বার প্রিন্সাপাল স্যারের সাথে দেখা করতে চাই। স্যার নিশ্চয় নিজের কক্ষেই আছেন?
আরু– হয়ত। চল দেখে আসি।

মিরা আর আরু এক সাথে প্রিন্সিপাল স্যারের কক্ষের উদ্দেশ্যে যায়। কিছুক্ষন এগিয়ে হুট করে থমকে যায় কোনো এক দৃশ্য দেখে। মিরার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি ফাক হয়ে গিয়েছে।।বুকের মাঝে পাহাড় ধ্বসে পড়েছে। মিরাকে স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরু কপাল কুচকে সামনে তাকাতেই কপালের ভাঁজ সমান হয়ে যায়। অস্ফূর্ত আওয়াজে বলেন,
” অরিদ ভাইয়া!
আরু মিরার অবস্থা দেখে মেকি হাসি দিয়ে বলে,
” আরু এমন কিছুই নয়। আমরা হয়ত ভুল দেখছি।।অনেক সময় পিছনের জিনিস সত্যি হয় না।
মিরা চোখের পানি মুছে শক্ত গলায় বলে,
” চল এখান থেকে। পিছনের জিনিস হয়ত সত্যি হয় না কিন্তু চোখ দিয়ে দেখা নোংরামো সত্য হয় আরু। আর এখন যেটা দেখছি সেটাও সত্যি। আর এখানে তো প্রকাশ্যে নোংরামো হচ্ছে। বাস্তব আর অবাস্তব ফারাক করার ক্ষমতা আমার আছে।

মিরা কথাগুলো উচ্চ আওয়াজে বলে উঠে। মিরার কন্ঠস্বর দরজা পেরিয়ে রুমের প্রতিটি মানুষের কানে গিয়ে পৌঁছায়। জিসান সহ বাকিরা সবাই তাকায়। অরিদ মেয়েটিকে সামনে রেখেই হুট করে পিছনে ফিরে। মিরার কথাগুলো কারোর ওই বোধগাম্য হচ্ছে না। তবে সিমির বুঝতে বাকি নেই এখানে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। সব বন্ধুরা ছোট একটা বল নিয়ে খেলছিলো। অরিদের হাত থেকে হঠাৎ মেয়েটার চোখে গিয়ে বলটা পড়ে। মেয়েটা ব্যাথায় চিল্লিয়ে উঠলে তাকে মেডিসিন আর ঠান্ডা বরফ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করছিলো। আর মিরা হয়ত অরিদকে পিছন থেকে মেয়েটার সাথে এত ঘনিষ্ট হতে দেখে ভুল বুঝেছে। সিমি নিশ্বাস ছেড়ে মিরার উদ্দেশ্যে বলে,
” মিরা ভুল বুঝেছো। তেমন কিছুই নয়। মেয়েটা ব্যাথা পেয়েছে তাই…
মিরা সিমিকে বলতে না দিয়ে অরিদকে বলে,
” মি, অরিদ চৌধুরি অভিনন্দন।

অরিদ ভ্রুঁ কুচকে মেয়েটার থেকে সরে এসে মিরাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিরা এখানে থেকে প্রস্থান করে।
অরিদ অবাক হয়ে বলে,
” তোমার ফ্রেন্ড সবকিছু এত বেশি বুঝে কেনো বলো তো? ভালোভাবে না দেখেই মনমত ভেবে নিয়েছে।
আরু — মিরা যা ভাবছে আমিও তো তাই ভাবছি ভাইয়া। মনে হয়েছিলো আপনি আপুটাকে চ.. চুমু খাচ্ছিলেন। ট্রাস্ট মি ভাইয়া আমার দোষ নেই। পিছন থেকে ঠিক এমন ওই বুঝা গিয়েছে। ভাইয়া সত্যি এমন কিছু হয় নি তো?
অরিদ — পাগল হয়ে গিয়েছো আরু? যায় হোক সিমি তুই অহনাকে দেখে রাখিস। খুব দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা। এইটা চোখ , নরম জিনিস। অল্পতে চিকিৎসা করানো ভালো। আমি একটু আসছি।
জিসান — বলছিলাম কি ভাই, ঘরের সিংহ ক্ষেপেছে। ঠান্ডা করা একটু বেশিই মুশকিল হয়ে পড়বে। তর জন্য কষ্টকর শুভ – কামনা রইলো।
অরিদ কটমট চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
মিরা গাড়ি থেকে নেমে ভিলাতে এসে রুমে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ নিয়ে রুম থেকে বের হতে নিবে তার আগেই অরিদ ভিতরে ডুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। অরিদকে দেখে মিরা ঘৃনায় চোখ সরিয়ে নেয়। অরিদ মিরার দিকে এগিয়ে এসে বলে,

” মিরা যা ভাবছো সব ভুল।
মিরা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
” যেতে দিন আমাকে। দরজা কেনো লাগিয়েছেন আপনি?
অরিদ — কোথায় যাবে তুমি? আর তোমার হাতে এইসব কি?
মিরা — উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধছে। তারপর ও বলছি চিন্তা করবেন না আর কোনোদিন আপনার জীবনে কাঁটা হয়ে আসব না। আলহামদুলিল্লাহ আগামী সোমবার আমার ফ্লাইট। আর মাত্র পাঁচ দিন সময় আছে। চলে যাচ্ছি আপনার জীবন থেকে।
অরিদ অবাক হয়ে বলে,
” ফ.. ফ্লাইট! আমার থেকে অনুমতি না নিয়ে টিকিট কাটলে ? কার থেকে অনুমতি নিয়েছো তুমি?
মিরা মুচকি হেসে বলে,

” যাদের থেকে নেওয়ার সবার থেকেই নিয়েছি। আপনার বাবা – মা, আমার বাবা – মা সবাই জানে। ইভেন আমি অনেক আগেই চলে যেতাম। আজকের দিনের সাক্ষী হব বলে যেতে পারি নি।
অরিদ — সবার থেকে নিয়েছো অথচ আমি জানলাম না?
মিরা — আপনাকে কেনো জানাতে যাব? কে হন আপনি আমার অরিদ চৌধুরি?
অরিদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে। মিরার দুই বাহু চেপে ধরে বলেন,
” লিগ্যালি হাজবেন্ড!
মিরা উচ্চ আওয়াজে হেসে উঠে,

” আপনি আমার হাজবেন্ড! সেই হাজবেন্ড যে প্রথম থেকেই আমার হৃদয়কে ক্ষত – বিক্ষত করে আসছে। যাস্ট একটা থাপ্পর দেওয়াতে বদ্ধ রুমে আটকে রেখেছিলেন। আর সেই কারনে ওইদিন আমার গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগলো। ছেলে নিয়ে রাত কাটায় সেটাও শুনতে হলো। বিয়ে হলো আমাদের। বিয়ের প্রথম দিনেই ঘুমন্ত আমিটার উপর ঠান্ডা পানি ঢেলে দিলেন। এরপর সব কিছু নিয়ে আমাকে অপমান, ছোট করা। বাধ্য হয়ে শুধু আপনি নয় আমিও কবুল বলেছিলাম। কলঙ্ক নিয়ে বাঁচার থেকে আপনার মত অসভ্যের সাথে থাকাটা অধিক ভালো ভেবেছিলাম। কিন্তু ভুল ছিলাম আমি। একবার ও জানতে চেয়েছেন সেইদন রাতে কেনো আমি এতটা ভয় পেয়েছিলাম? কেনো আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন? কখনো জানতে চেয়েছেন আপনার করা অপমানগুলো আমার কেমন লাগে? জানতে চেয়েছেন এত মানুষের কটু- কথা শুনে আমার মনের ভিতর দিয়ে কি বয়ে গিয়েছে? সব বাদ দিয়েছি অরিদ চৌধুরি। আপনাকে ধীরে ধীরে মনের ভিতরে জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছি দিনের পর দিন। এক সময় সফল হয়ে অজান্তেই ভালোবেসে ফেললাম। ঝগড়া – মারামারি করে আপনার সাথে বাস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি আমাকে ঠকালেন? লোকে ঠিক ওই বলে প্রথম ভালোবাসা সবসময় ভুল হয়। আমি ও ভুল মানুষকে ভালোবেসে ভুল করলাম।

মিরা এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে অরিদের সামনে দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। অরিদ স্তব্দ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে। মিরাকে আটকানোর কথা সে ভুলে যায়। সত্যি” ই তো সে মিরাকে কখনো জিজ্ঞাসা করেছে এইসব নিয়ে? তাহলে এখন হাজবেন্ড দাবি করছে কোন অধিকারে?মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মিরার বলা প্রতিটি কথা।
” আমিও ভুল মানুষকে ভালোবেসে ভুল করলাম।”
মিরার লাস্ট বলা বাক্যটা অরিদের প্রতিটি রক্তবিন্দু কাঁপিয়ে তুলছিলো। চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিশ্বাস টানে। ঠোঁটের কোনে খেলে যায় এক বাঁকা হাসি।

রুয়ানা খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে রাতের তাঁরা দেখছিলো। হঠাৎ পাশে কারোর উপস্থিতি অনুভব করে সামান্য ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু ব্যাক্তিটাকে দেখে সামান্য হাসে।
— এত রাতে কি করছো এখানে?
— তাঁরা গননা করছিলাম। যখন একদম ছোট ছিলাম তখন দাদি বলেছিলো কেউ মারা গেলে তাঁরা হয়ে যায়। সেই বাচ্চামো দিয়েই আব্বু- আম্মুকে খুঁজছিলাম।
— খুব মিস করো তাদের?
— যার কোনো অনুমান নেই।
ইউভি আলতো হাসে।
— আচ্ছা ভাইয়া আপনার বাবা – মা কোথায়?
— নেই! বাবা – মা হীনা আমি।
রুয়ানা অবাক হয়ে বলে,
” আপনি ও কি আমার মত ভাইয়া?
ইউভি গম্ভীর হেসে বলে,

” উহুম একদম না। তুমি বাবা- মাকে হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছো। আমাকে কখনো কাঁদতে দেখেছো তুমি লিটল গার্ল?
রুয়ানা — না দেখিনি। আপনার কান্না আসে না?
— যার চোখে কোনো পানি নেই সেখানে থেকে পানি আসবে কোথা থেকে? মানবজীবন যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। কাউকে হারিয়ে ভেঙ্গে পড়া বোকামি। বাবা – মায়ের জন্য কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজে স্তব্দ হয়ে গেলে তো জীবন থমকে যাবে লিটল গার্ল। তোমার মত যদি আমি স্তব্দ হয়ে যেতাম তাহলে আজ তোমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। তোমাকে বাঁচতে হবে সবাইকে সঙ্গ নিয়ে।
রুয়ানা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ইউভি নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নেয়। রুয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
” আমি আছি তো তোমার পাশে। শুধু আজকে রাতটার অপেক্ষা!

রাত প্রায় একটার কাছাকাছি। মিরা টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। কিছু ভালো লাগছে না। জীবনটা কেমন অভিশপ্ত হয়ে গিয়েছে। চোখে পানি জবজব করছে। আর যাবে না সে ওই লোকের সাথে। হয়ত উনি খুব খুশি ও হয়েছেন। ডিভোর্সের কাজ ও খুব দ্রুত করে ফেলব। কারোর জীবনের আগাছা হয়ে বাঁচতে চাই না। উনি উনার গার্ল ফ্রেন্ডকে বিয়ে করে খুশি হোক। ছিহহ মিরা তুই সম্পর্কের তৃতীয় ব্যক্তি ছিলি! এইসব ভাবতে ভাবতে কখন জানি চোখটা লেগে আসে। হুট করে কারোর হাতের বিচরন অনুভব করতে পেয়ে মিরা ধরফরিয়ে উঠে। কিন্তু তার আগেই কারোর কোলে শূন্যে ভেসে যায়। মিরা কিছু বলতে যাবে ঠিক সে সময় ব্যক্তিটা ঠাস করে নিয়ে বিছানার উপর ফেলে দেয়। মিরা সামান্য ব্যাথা পেয়ে কোমরে ধরে ” আহহ” শব্দ করে উঠে। সামনে থাকা ব্যাক্তিটা পাগলের মত কাছে এসে মিরার হাত দুটি শক্ত করে বেল্ট দিয়ে বেঁধে দেয়।

— মানসিক রোগি হয়ে গিয়েছেন আপনি অরিদ চৌধুরি? এমন পাগলামো করছেন কেনো?
— চেঁচাবে না। আমরা এক রুমে আছি। তোমার চেঁচানোতে তোমার বাবা – মা অন্য মাইন্ডে নিবে। আর চেঁচালে ও সমস্যা নেই। তুমি আমার আম্মু- আব্বুকে কি বলেছো তার উত্তর দাও?
— কি বলেছি?
— মিরা ধৈর্যের পরিক্ষা নিও না।
— আপনার আর আমার ডিভোর্সের কথা বলেছি। আর এটাও বলেছি যত দ্রুত সম্ভব কাজ করতে। আমি পাঁচ দিনের ভেতরে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
অরিদ কিছুক্ষন মিরার রাগান্বিত মুখটার দিকে তাকায়। এরপর দাঁত পিষে বলে,
” দেশ অবশ্যয় ছাড়বে তবে আমার বাচ্চা পেটে নিয়ে।
মিরা চোখ বড় বড় করে ফেলে। এমন অস্বাভাবিক কথা শুনে সে লাফিয়ে উঠে। কিন্তু আফসোস এতক্ষনে সে অরিদের বাহু বন্ধী হয়ে গিয়েছে। অরিদ শার্টের বোতাম এক হাতে খুলতে খুলতে বলে,
” ডিভোর্সের স্বাদ তোমাকে আমি দিচ্ছি মিসেস অরিদ চৌধুরি। আপনি ও আমাকে ভালোবাসেন আর আমিও। দুরত্ব থাকাটা উচিত নয়। আমার বাচ্চা পেটে নিয়ে আপনি বিদেশ যাবেন তার আগে নয়।
মিরা ছটফট করে উঠে। অরিদ প্যেন্টের পকেট থেকে একটা টেপ মিরার মুখে লাগিয়ে দেয়। মিরা শুধু উম উম শব্দ করছে। অরিদ মিরার গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে,

” স্পর্শ করার আগেই বাজে আওয়াজ বের করছো। একদম ঠিক নয় মিরা।
মিরা মিস্তেজ হয়ে আসে। হাঁপিয়ে উঠে অরিদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে। সপে দেয় শান্ত ভাবে নিজেকে অরিদের কাছে। সরে আসার আর কোনো রাস্তা নেই তার সামনে। ঘায়েল হতে থাকে অরিদের প্রতিটি স্পর্শে। ধীরে ধীরে পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আসে। মিরা সুযোগ বুঝে অরিদকে ধাক্কা দেয় সরানোর জন্য। কিন্তু সামান্য সফল ও হয় নি। অরিদের উন্মদনার সাথে মিরা এক সময় হাঁপিয়ে উঠে। নিশ্বাস ঘন হয়ে আসে দুজনার। চাঁদনী রাতে জানালার ফাঁক দিয়ে বাতাস বয়ে আসছে রুমে। আলোগুলো ও জানান দিচ্ছে দুই পাগল প্রেমিক হারিয়ে গেছে অন্য এক জগতে। মিরা কাঁপছে। হুট করে আৎকে উঠে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনা জল। অরিদের ভরসার হাত আর ফিঁসফিঁসানি কথায় মিরার সর্বাঙ্গে কেঁপিয়ে তোলে।

সুমু অনেক দিন ধরে ইয়ানাকে দেখার জন্য ছটফট করে উঠে। সিড়িঁ দিয়ে নামার সময় পায়ের কাছে কিছু একটা দেখে কপাল কুচকে ফেলে। এরপর তেলাপোকা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায় সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকা রায়ানের দিকে। সুমু ভয়ে চিৎকার করে রায়ানের কাছে যাওয়ার আগেই রায়ান দুই হাত মেলে ধরে। সুমু চিৎকার করে রায়ানের কাছে আসে ঠিক কিন্তু সামন এসেই দাঁড়িয়ে যায়। সুমুর কোনো স্পর্শ না পেয়ে রায়ান পিটপিট করে তাকায়। এরপর সুমুকে নিজের দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে যায়। সুমু রায়ানের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে পুনরায় সিঁড়ির কাছে যায়। এর পর পরে থাকা তেলাপোকাটাকে ধরে রায়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়। রায়ান চোখ বড় বড় করে তাকায় সুমুর দিকে। সুমু তেলাপোকাটা রায়ানের মুখের সামনে ধরে বলে,

” দুনিয়ায় আর কোনো জিনিস পাননি আমাকে ভয় দেখাতে? আমাকে দেখে আপনার কি মনে হয়? সামান্য তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরব? অন্য কোনো পোকা রাখতে পারতেন রায়ান। আমি তো তেলাপোকা ভয় পাই না।
— কিন্তু সব মেয়েরা তো তেলাপোকা ভয় পায়।
— তাই আপনি ভেবেছেন আমিও ভয় পাব?আর ভয় পেয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরব? তাই বলে আপনি তেলাপোকা রাখবেন সিঁড়িতে? আপনার স্ত্রী তেলাপোকা ভয় পায় না।এখন আমাকে ইয়ানার কাছে নিয়ে চলুন।
রায়ান বোকার মত সুমুর কথায় সম্মতি জানায়। বউ তার চেয়ে ও ভয়ংকর।
রুয়ানা ডিভানে বসে পপকন খাচ্ছিলো। আর বার বার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে। বিকেল থেকে ইয়ানার সাথে একবার ও দেখা হয় নি। প্রতি রাতে ইয়ানা তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যায়। অথচ কাল রাতে একবারের জন্যও আসে নি। রুয়ানা ভাবুক হয়ে বসে থাকে পা তুলে। মেইন দরজা খুলার শব্দে রুই সেদিকে তাকায়। রায়ান আর সুমুকে দেখতে পেয়ে এক দৌঁড়ে সুমুর কাছে যায়। এরপর জড়িয়ে ধরে বলে,

” উফফ আপু মিস করছিলাম প্রচুর।
সুমু মিষ্টি হেসে রুয়ানাকে আগলে নেয়।
— রুয়ানা ইউভি, অগ্নি, ইয়ানা তারা কোথায়?
— জানি না ভাইয়া। ইউভি ভাইয়া মেবি নিজের রুমে কারোর সাথে কথা বলছে। আর আপু ভাইয়ার সংবাদ রাত থেকে পাই নি।
রায়ান উপরে এক পলক তাকিয়ে বলে,
” ওকে আমি যাচ্ছি উপরে।।তোমরা গেলে আসতে পারো।
এই বলে রায়ান উপরে চলে যায়। রায়ানের সাথে সাথে সুমু, রুয়ানা ও যায়। রায়ানের মেসেজ পেয়ে ইউভি রুম থেকে বেরিয়ে এসে তাদের কাছে যায়। রায়ান ইউভির দিকে তাকিয়ে দরজায় আঘাত করে বলে,

” অগ্নি তুই কি ভিতরে আছিস? আমরা কি ভেতরে আসতি পারি।
ভেতর থেকে অগ্নির গম্ভীর গলা,,,
” না।
রায়ান সেসব পাত্তা না দিয়ে দরজা ধ্বাক্কা দিয়ে বলে,
” দুর বাল তর আবার কিসের না। সারাজীবন ওই না করে আসছিস।
রায়ান দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ডুকে । অগ্নিকে ইয়ানার কপালে চুমু খেতে দেখে সবাই চোখ বন্ধ করে নেয়। ইউভি, সুমু নিজের চোখে হাত দিয়ে পিছনে ঘুরে যায়। রুয়ানা চোখ বড় বড় ইয়ানাদের দিকে এগিয়ে যায়। রুয়ানাকে এগিয়ে যেতে দেখে ইউভি চোখ থেকে হাত সরিয়ে থতমত খেয়ে যায়। সুমু রায়ানের উদ্দেশ্যে বলে,
” দিলেন তো ওদের রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে। নিজে তো রোমান্সের ” র” ও জানেন না বাট অন্যেরটা নষ্ট করতে একদম পাক্কা।
রায়ান হিসহিসিয়ে বলে,

‘ আমি জানতাম নাকি এমন পরিস্থিতি হবে।
অগ্নি ইয়ানার পুরো মাথা মুছে দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,
” বাহিরে ফিঁসফিঁস না করে ইচ্ছে হলে ভেতরে আসতে পারিস।
অগ্নির আদেশ পাওয়া মুহূর্তেই সবাই ভেতরে প্রবেশ করে। সুমু অগ্নির থেকে নিজের মুখে ঢেকে শুয়ে থাকা ইয়ানার কাছে চলে যায়। ইয়ানা পিটপিট চোখে সুমুর দিকে তাকায়। সুমু ইয়ানার পাশে বসে শরীরে হাত দিয়ে বলে,
” ইয়ানা তোর শরীরে এত জ্বর কেনো? হঠাৎ জ্বর চলে আসলো? পুরো মুখ কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। আর এইভাবে মুখ ঢেকে রেখেছিস কেনো?
সুমু জোর করে কাপড় সরাতেই চোখ বড় বড় করে ফেলে। ঠোঁটে স্পষ্ট কামড়ের দাগ ভেসে উঠেছে। সুমু চোখ অন্যদিকে সরিয়ে কেঁশে উঠে। ইয়ানার ঠোঁটের বেহাল দশা দেখে রুয়ানা প্রায় কেঁদে উঠে,

” আপু তোমার ঠোঁট কেটেছে কিভাবে? কি হয়েছে তোমার? এ্যাঁই আপু পুরো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
ইউভি আর রায়ান ও কেঁশে উঠে পুনরায়। অগ্নি গম্ভীর হয়ে ডিভানে বসে থাকে। রায়ান ইউভির উদ্দেশ্যে বলে,
” ভাই নিজের হাতে লালন – পালন করে বড় করতে হবে তকে। বিয়ের পর সামলে রাখিস নিজেকে নাহলে পদে পদে বিপদে পড়বি।
ইউভি ঠোঁট কামড়ে হাসে। শান্ত দৃষ্টি দিয়ে রুয়ানার চিন্তাযুক্ত মুখটার দিকে তাকায়।
ইয়ানা লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। সবার সামনে এইভাবে বাজে হেনস্তার স্বীকার হতে হলো। নিজের দুর্বলতাকে এক পাশে রেখে সুমুর উদ্দেশ্যে নিম্ন আওয়াজে বলে,
” রুইকে চুপ করা সুমু। নাহলে যতটুকু ইজ্জত আছে সেটুকু ও নিলামে উঠে যাবে।
সুমু ইয়ানার অসহায় মুখটার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে উঠে। সুমু রুয়ানাকে নিজের কাছে নিতে যাবে এমন সময় রুয়ানার এক অনাকাঙ্খিত প্রশ্ন,,

” শরীরে এত জ্বর নিয়ে গোসল কেনো করলে বলো তো? এখন আরও বেশি ঠান্ডা লাগবে।
ইয়ানা চোখ বন্ধ করে নেয়। সুমু দ্রুত রুয়ানার মুখ চেপে ধরে এক পাশে নিয়ে যায়।
ইউভি মাথা চুলকাতে চুলকাতে অগ্নির পাশে বসে হাসি দিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,
” এত সকালে গোসল করলি কেন বলতো? জ্বরের মধ্যে মেয়েটাকে পানির চুবানি দিলি।
অগ্নি কটমট চোখে ইউভির দিকে তাকায়। ইউভি ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
“তর ইজ্জত সবার সামনে প্রকাশ করতে আমার সহজ- সরল বউটাই যথেষ্ট।
— তর ভবিষ্যতের লাল বাতি জ্বলে উঠলে তখন কিন্তু আমার কাছে আসিস না।
অগ্নির কথায় ইউভি চুপসে যায়। সত্যি ওই তো এমন সহজ – সরল বউ যার আছে তার ভবিষ্যত তো লাল বাতি জ্বলে উঠবেই। কোনো ব্যাপার না। এই মেয়েকে নিজের করতে পারলে সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারব।
রুইকে সুমু এক পাশে নিয়ে আড়াল হয়ে বলে,

” বইন তুই একটু চুপ কর।
রুয়ানার চিন্তিত সুর,,,
” সুমু আপু আমাকে এখানে এনেছো কেনো? আপুর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে।
সুমু রুয়ানার চিন্তিত মুখটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,,
” চিন্তা করিস না। তেমন কিছুই হয় নি। আবহাওয়া এদিক – সেদিকের কারনে হয়ত জ্বর এসেছে।
— কিন্তু ঠোঁট এইভাবে ফুলে আছে কেনো?
সুমু আমতা আমতা করে বলে,
” হয়ত কোথাও ব্যাথা পেয়েছে। চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে।
রুয়ানা নাক টেনে বলে ” হুম ”
সুমু ফুঁস করে শ্বাস টেনে পুনরায় ইয়ানার কাছে নিয়ে আসে। রুই ইয়ানার কাছে বসতেই ইয়ানা হালকা হেসে রুয়ানার হাতে আলতো চুমু খায়। এরপর নাক – মুখ কুচকে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে।
রায়ান আড়চোখে ইয়ানার অবস্থা লক্ষ্য করে অগ্নির উদ্দেশ্যে বলে,

” ভাই মেয়েটাকে কি অবস্থা করেছিস? জ্বর বাঁধিয়ে দিয়েছিস একদম। বলছিলাম একদম দুর্বল মনে হচ্ছে, ডাক্তার দেখাস নি কেনো?
— দেখানো শেষ।
অগ্নির এমন শান্ত উত্তর শুনে ইউভি আর রায়ান চোখ বড় বড় করে তাকায়। রায়ান অবাক হয়ে বলে,
” সকাল হলো মাত্র একটু আগে। তুই ডাক্তার দেখালি কখন?
— ভোর রাতে মিসেস শাইনা এসেছিলো।
অগ্নির পর পর শান্ত বয়ান শুনে ইউভি আর রায়ান একে অপরের দিকে বোকার মত তাকায়। রায়ান শ্বাস ছেড়ে বলে,
” সব কাজে ফার্স্ট!
ইউভি চোখ উল্টে বলে,
“কাউকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলার কাজে ও খুব ফার্স্ট!
রায়ান — হক কথা।
অগ্নি কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর হয়ে বলেন,
” ইউভি সব কাগজপত্র নিয়ে আয়।

— এখন!
— তাহলে কি রাতে করতে চাস?
ইউভি মাথা নাড়িয়ে বাহিরে চলে যায়। অগ্নি আড়চোখে ইয়ানার হাসি মাখা মুখটার দিকে তাকায়। সেদিকে তাকিয়ে সাথে সাথে কপাল কুচকে ফেলে। একটু আগে সামান্য উঠে বসতে পারছিলো না আর এখন বোন আর ফ্রেন্ড পেয়ে সব অসুস্থতা শেষ। অগ্নি গম্ভীর শ্বাস ফেলে মনে মনে আওড়ায়,
” মেয়ে জাত!
অগ্নি আর রায়ানের ভাবনার মধ্যে ইউভি ধীর পায়ে একটা ফাইল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। সুমু হুট করে তাদের দিকে তাকাতেই ভ্রুঁ কুচকে ফেলে। সবার চোখে – মুখে কেমন গম্ভীরতা। অগ্নি ফাইল থেকে একটা কাগজ বের করে রুয়ানার উদ্দেশ্যে বলে,
” রুয়ানা তোমাকে ইউভি বিয়ে করতে চায়। তাই এই কাগজটাই সাইন করে লিগ্যালি ওয়াইফ হয়ে যাও।
অগ্নির কথায় সবার চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইউভি কপাল কুচকে অগ্নির দিকে তাকায়। কাউকে বিয়ের কথা বললেও তো মিষ্টি সুরে বলতে হয়। সেটা না করে গম্ভীর হয়ে বলছে ” রুয়ানা তুমি ইউভির লিগ্যেলি ওয়াইফ হয়ে যাও”। এইভাবে বললে কোন মেয়ে বিয়ে করবে শালা?
ইউভি মনে মনে বিরবির করে রুয়ানার দিকে তাকায়। রুয়ানাকে হাসতে দেখে মুখ হা হয়ে যায়। রুয়ানা হাসি থামিয়ে বলে,

” ভাইয়া আপনারাও ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলেন আমাদের মত? আমরাও মাঝে মাঝে স্কুলে খেলি।
রুয়ানার কথা শুনে সবার মুখ চুপসে যায়। রায়ান শব্দ করে হেসে উঠে। ইউভি অসহায় হয়ে রায়ানের দিকে তাকায়।
হঠাৎ এমন অনাকাঙ্খিত কথায় ইয়ানা বলে,
” কিসের বিয়ে মি, চৌধুরি? এত দ্রুত কিসের বিয়ে ভাইয়া? আপনার ভালোবাসাটাকে সম্মান করি তাই বলে এখন আমার বোনকে কোনো সংসারে জড়াতে দিতে পারি না। ও ছোট এখনও ভাইয়া। সংসার বলতে কোনো ধারনা নেই। স্বামী স্ত্রীর মানে বুঝে উঠেনি এখনও। এইটা সম্ভব নয় ভাইয়া।
অগ্নি ভ্রুঁ কুচকে অগ্নির নিষেধাজ্ঞাগুলো মনযোগ দিয়ে এতক্ষন শুনে। এরপর কাছাকাছি এসে কাগজটা রুয়ানার সামনে রেখে বলে,
” না বলা আমি কখনো পছন্দ করি না। ছোট – বড় নিয়ে তাদের কাহিনী তারা বুঝে নিবে। রুয়ানাকে ইউভি জীবন দিয়ে হলেও আগলে রাখবে। তোমার সাথে এই নিয়ে আমার আলোচনা হয়েছিলো ইয়ানা। আরেকবার না উচ্চারন করলে তোমার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আশা করব আমার প্রতিটি কথার মানে বুঝবে।

— কিন্তু…
— বিশ্বাস করো তো আমাদের কে? ইউভিকে তোমার ভালো মানুষ মনে হয় না?
— সেটা বড় কথা নয় মি, চৌধুরি। রুয়ানা বিয়ের জন্য উপযুক্ত নয়।
— যার বউ সে এইসব বিষয়ে খেয়াল রাখবে তোমার ভাবতে হবে না।
ইউভি এগিয়ে এসে বলে,
” চিন্তা করো না। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে রুইকে আগলে রাখব। ওর অনুমতি ছাড়া তাকে কোনো দিন স্পর্শ করব না।
ইয়ানা সম্মতি জানায়। অগ্নি হালকা হাসে। ইউভি রুয়ানার সামনে চেয়ার টেনে বসে বলে,
” আমাকে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি আছে?
রুয়ানা অবাক হয়ে বলে,
” ব.. বিয়ে?
এরপর ইয়ানার দিকে তাকাতেই ইয়ানা রুয়ানার হাতে ধরে বলে,

” রাজি হয়ে যা রুই। জীবনের সব থেকে উত্তম জীবন – সঙ্গী পাবি।
রুয়ানা — কিন্তু আপু বেড রুমে বসে বিয়ে কিভাবে করে? তোমাকে তো কাজি বিয়ে পড়িয়েছিলো।
আকস্মিক রুয়ানার এমন কথায় সবাই থমথমে খেয়ে যায়। ইউভি মুচকি হেসে বলে,
” এখন যাস্ট কাগজে সাইন করে দাও। বিকেলে মসজিদে গিয়ে বাকি নিয়ম মেনে আসব।
রুয়ানা — অহহ আচ্ছা। ওকে দিন কোথায় সাইন করতে হবে?
ইউভি আনমনে রুয়ানাকে জায়গাটা দেখিয়ে দেয়। রুয়ানা হেসে সেখানে সাইন করে দেয়। রুয়ানার স্বাভাবিক কাজে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সুমু ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
” তুই বিয়ের জন্য এত পাগল ছিলি রুই? একবার বলা মাত্র ওই সাইন করে দিলি।
— সবাই বললো তাই করে দিলাম। অপেক্ষা করিয়ে লাভ কি বলো?
ইউভি ঠোঁট কামড়ে হাসে। অজান্তেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরে জলবিন্দু। কাঁপা হাতে নিজেও সাইন করে দেয়। সাইন শেষে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। ইউভিকে চোখ বন্ধ দেখে রায়ান ধাক্কা দিয়ে বলে,
” ভাই বিয়ে করে কানা নয় কালা হতে হয়। বউ হাজার অভিযোগ করবে বাট শুনা যাবে না।
ইউভি আলতো হাসে। আজ তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের একটা দিন। ঠিক কতটুকু আনন্দ তার হয়ত পরিমান করা যাবে না।
সুমু ইয়ানার উদ্দেশ্যে বলে,

” তরা থাক আমি আসছি। এখন ওই হল্লা – পার্টির বাকি বাদরগুলোকে জানাতে হবে।
সুমু উঠে চলে যায় নিচে। অগ্নি গম্ভীরতা নিয়ে রায়ানের দিকে ইশারা করতেই রায়ান হালকা কেঁশে বলে,
” তাহলে চলো এখান থেকে যাওয়া যাক। কেউ আমাদেরকে দেখে আর সহ্য করতে পারছে না। আপনারা দুইজন নব- দম্পত্তি নিজেরকে সময় দিন। আমি আমার পুরাতন বউটাকে গিয়ে সময় দেয়।
রায়ান ইউভিকে ইশারা দিয়ে বেরিয়ে যায়। ইউভি হেসে রুয়ানাকে বলে,
” যাওয়া যাক।
রুয়ানা — কোথায়?
ইউভি — নিচে।
রুয়ানা — আপু খেয়াল রেখো নিজের । একটু পর আবার এসে দেখে যাব। একদম উঠবে না শুয়া থেকে।
ইয়ানাকে সাবধান করে দিয়ে রুয়ানা ইউভির পিছু পিছু চলে যায়। অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,
” রেস্ট নাও। আজকে দিন – রাতে যাতে বাহিরে যেতে না দেখি।
— রুয়ানার সাথে আমার অনেক কথা আছে মি, চৌধুরি। আর তাছাড়া নিচে না গেলে রাতে ওদের বাসর ঘর সাজাবে কে? সুমু তো চলেই যাবে।
ইয়ানার এমন কথায় অগ্নি কপাল কুচকে বলে,

” বাসর হবে না যখন বাসর ঘর সাজিয়ে কি করবে তুমি?
— সেটা তো আমাদের ও হয় নি। তাই বলে কি কেউ সাজায় নি। বাসর হলে হোক না হলে নেই সাজাতে কৃপনতা করব কেনো?
— তোমার লজ্জা করছে না ছোট বোনের বাসর ঘর সাজানো নিয়ে কথা বলছো?
অগ্নির কথায় ইয়ানা চুপসে যায়। পরমুহূর্তে আমতা আমতা করে বলে,
” রুইয়ের সম্পর্কে আমি বড় বোন বাট ইউভি ভাইয়ার তো ছোট বোন। একজন ছোট বোন হিসেবে বলেছি বড় বোন হিসেবে নয়।
ইয়ানার যুক্তি শুনে অগ্নি গম্ভীর শ্বাস ফেলে সাইড টেবিল থেকে মেডিসিন নিয়ে ড্রয়ারে রেখে বলে,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৮

” যেসব মেডিসিন দিয়েছি খেয়েছিলে সবগুলো?
অগ্নি প্রশ্নে ইয়ানা ঠোঁট ভিজায়। এরপর ভয়কে জয় করে নিয়ে বলে,
” হুম।
— সিউর?
— হুম।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬০