অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬৩
লিজা মনি
সময় নিজের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে কেটে যায় নয় মাস। দশ বারোদিন পরেই ইয়ানার প্রেগনেন্সির নয় মাস পুরন হবে। সুমুর চার মাস রানিং চলছে। রেশব আর আরুর একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। রেশব নিজ থেকে আরুদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। আরু প্রথমে অবাক হলেও মনে মনে বেশ খুশি হয়। কারন যত ঝগড়া হোক মনে মনে সে ও রেশবকে পছন্দ করে। তাদের পারিবারিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। আরু কাল সন্ধ্যায় রেশবের সাথে কানাডায় এসেছে। মেয়েটা পুরো জীবন দোয়া করে এসেছে কোনো বিদেশীর সাথে যাতে বিয়ে না হয়। কিন্তু ভাগ্য সেই বিদেশী সাদা ভুত ওই রাখলো।
আরু খুব হতাশ একজন বিদেশীকে বিয়ে করে। ইয়ানা বিছানায় ভোঁতা মুখে বসে আছে। হাতে আচারের একটা বাটি। উঁচু পেটটাকে সামলে নিয়ে ধীর পায়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। পায়ে জুতা পড়তে গিয়ে ও খুলে ফেলে। কারন মেঝেতে এখন আর টাইলস নই আ্যন্টি – স্লেপ কার্পেট বিছানো। ইয়ানা ফুঁশ করে শ্বাস টানে। সে যতটুকু এড়িয়া পর্যন্ত যাতায়াত করে আ্যন্টি- স্লেপ কার্পেট বিছানো। বিগত নয় মাস ধরে সে বাহিরের জগৎে পা রাখে না। বাহিরের জগৎ তো অনেক দুরে রুমের বাহিরে পা রাখাটাও নিষিদ্ধ। একবার অগ্নির আড়ালে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাচ্ছিলো নিচে কিন্তু তখন ওই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু পরমুহূর্তে রেলিং এ ধরে নিজেকে সামলে নেয়। চোখ মেলে সামনে তাকাতেই আৎকে উঠে। কারন সামনে সয়ং মাফিয়া বস দাঁড়ানো। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। আর হলোও তাই। অগ্নি চোখ – মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিন ইয়ানা প্রচুর ভয় পেয়েছিলো। তখন ইয়ানার প্রেগনেন্সির ছয় মাস চলে। ইয়ানা কাথা কাটিয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু অগ্নি রাগে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রুমে গিয়ে ছোট থেকে শুরু করে বড় সব জিনিস ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিলো। কিন্তু ইয়ানাকে একটু আঘাত ও করে নি। ইয়ানা অগ্নির রাগ দেখে মুখে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। সাউন্ড প্রুফ রুম শব্দ শুনার মত ও কেউ নেই। অগ্নি সব কিছু ভেঙ্গে নিঃশ্বাস টেনে ইয়ানার বাহু ধরে শুধু একটা কথায় বলেছিলো,
” যদি আজ কিছু হয়ে যেত তাহলে আমি মরে যেতাম ইয়ানা। বাচ্চা হারানোর ভয়ে নয় তোমাকে হারানোর ভয়ে।
অগ্নির চোখে সেদিন রাগ কম ভয় ছিলো। কাউকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলো চোখ- দুটি। ইয়ানা কাঁপা হাতে জড়িয়ে ধরে অগ্নির মনকে শান্ত করার জন্য বলে,
” আর কখনো রুম থেকে বের হবো না। প্রমিস করছি আপনাকে আমি। কিছু হবে না আমার। আল্লাহ সব সামলে নিবেন।
আর হলোও তাই। ইয়ানা নিজের কথামত আর কখনো রুম থেকে বের হয় নি। যে তাকে নিয়ে এতটা উন্মাদ মাত্র নয়টা মাস কি তার কথা রাখা যায় না? অবশ্যই রাখা যায়। হয়ত কষ্ট হবে একটু কিন্তু উনি তো হ্যাপি থাকবেন, চিন্তামুক্ত থাকবেন! ইয়ানা বেলকনিতে হাটছে আর অগ্নির পাগলামো গুলো স্মরন করছে। একবার জ্বরের ঘোরে আচারের কথা বলেছিলো পরেরদিন সকালে উঠে দেখে রুমে নতুন আলমারির মধ্যে শত শত আচারের বক্স। আর সবগুলো উন্নতমানের স্বাস্থ্যসম্মত আচার। এত এত আচারের জার দেখে ইয়ানার চোখ সেদিন কপালে উঠে যায়। ইয়ানা অবাক হয়ে অগ্নিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো,
” এত এত আচারের বয়াম কেনো? মারামারি ছেড়ে দিয়ে কি আচারের ব্যাবসা শুরু করবেন ভেবেছেন?
— তুমি বলেছিলে আচারের কথা তাই এনেছি।
— কখন?
— রাতে জ্বরের ঘোরে।
ইয়ানা মাথায় হাত দিয়ে কপাল চাপড়ে বলে,
” যদি বলেও থাকি তাহলে দুইটা বা তিনটা নিয়ে আসতেন। কিন্তু আপনি তো পুরো কম্পানির আচার নিয়ে চলে এসেছেন।
— আমি কিভাবে বুঝব তোমার কখন কোন আচার পছন্দ হয়। তাই যা যা ছিলো সব নিয়ে এসেছি। এখানে বেশি নয় এক হাজারের বয়াম এর উপরে আছে। যত ইচ্ছে খেতে পারো।
ইয়ানা বোকার মত তাকিয়ে থাকে আলমারির দিকে। এত আচারের বয়াম দেখে জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা।
ইয়ানা আগের কাহিনী মনে করে নিজের অজান্তেই হেসে উঠে। আচমকা হাত চলে যায় পেটের মধ্যে। ডাক্তার বলে দিয়েছে জমজ বাচ্চা হবে। জমজ বাচ্চার কথা শুনে মাফিয়া বসের আরও নাজেহাল অবস্থা। কেমন জানি অন্যরকম লাগে এখন তার কাছে। একদম বাচ্চা আর নিষ্পাপ। অফিসে থাকলে সারাক্ষন ল্যাপটপে ভিডিও কল চালু করে রাখে। যতক্ষন অফিসে থাকবে ঠিক ততক্ষন কল চালু থাকে। ইয়ানা মাঝে মাঝে ঘুমানোর সময় কল অফ করে দিলে মাফিয়া বস ধমকে উঠেন। ধমকের ভয়ে ঘুমানোর সময় ও কল চালু থাকে। ইয়ানা ভাবছে আর সাবধানতার সাথে দোলনায় বসে। দোলনায় রাখা মিনি বালিশটা পেটের উপর রেখে হেসে বলে,
” নিজের জীবন নিয়ে ও কোনোদিন এত ভয় করিনি যতটা ভয় তোমাদের নিয়ে হয়। মাফিয়া বসের সন্তান তোমরা । এখন নিজের পেটে রাখতে ও ভয় হচ্ছে। তোমরা আমার জীবনের এক অমুল্য রতন। তোমাদের বাবাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার এক মাত্র হাতিয়ার। যদি তোমরা মেয়ে হও তাহলে হাজার হাজার শুক্রিয়া। বাবারা সব পারে কিন্ত নিজের মেয়ের কথা কখনো ফেলতে পারে না আর সেটা যদি হয় অগ্নি চৌধুরি। তোমাদের অস্তিত্ব যাতে তোমাদের বাবাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনে বাচ্চারা।
ইয়ানা খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে সন্ধার বাতাসটা অনুভব করার চেষ্টা করে। চারদিকে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আজানের শব্দ পেয়ে ইয়ানা বারান্দা থেকে রুমে চলে আসে। এরপর শার্টের বোতাম খুলে পেটে হালকা অলিভ ওয়েল তেল মেখে বিছানার হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে অগ্নির নাম্বার চেক করে ফোন দিয়েছে কি না? কোনো ফোন দেখতে না পেয়ে মোবাইল জায়গা মত রেখে দেয়। আজও মাথায় আরেক দুষ্টু বুদ্ধি ধারন করে। ইয়ানা পুনরায় বিছানা থেকে নেমে কাবার্ডের কাছে যায়। এরপর কাবার্ড খুলে একটা লাল শাড়ী বের করে। লাল জিনিস অগ্নি চৌধুরির খুব পছন্দের। ইয়ানা মুচকি হেসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ীটা নিজের সাথে চেপে ধরে। এত পাতলা যে শরীরের ভাঁজ বুঝানোর ক্ষমতা রাখে। ইয়ানার লজ্জা লাগে প্রচুর। কিন্তু অগ্নি চৌধুরিকে জ্বালাতে লজ্জা’ই ত্যাগ করা যায়।
মিরা কাবার্ডের কাপড় গুছাচ্ছে। অরিদ মোবাইলে গেইমস খেলছে। অরিদ আড়চোখে একবার তাকিয়ে আবার মোবাইলে চোখে রাখে। প্রায় অনেক্ষন ধরে মিরাকে আসতে না দেখে অরিদ কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে,
” কি সমস্যা তোমার মিরা? সারাদিন কি করেছো শুনি? বাসায় এসেছি দেখতে পারছো না।
মিরা কাপড়গুলো গুছিয়ে নিয়েছে। আর মাত্র কয়েকটা কাপড় এখনও গুছানো বাকি। অরিদের কথা শুনে সেদিকে কপাল কুচকে বলে,
” আপনি বাসায় এসেছেন দেখব না কেনো? জিম করে তো সাতশত কেজি বডি বানিয়েছেন। এত বড় বডি যদি দেখতে না পায় তাহলে তো আমি কানা।
অরিদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
” সাতশত কেজি! যখন দেখতে পাচ্ছো এসেছি তাহলে কাজ কেনো করছো?
— আরে বাবা কাজ কোথায় করছি? কাপড়গুলো অগুছালো ছিলো তাই গুছাচ্ছিলাম। আপনি এমন রিয়্যাক্ট কেনো করছেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না ?
অরিদ কিছুক্ষন গম্ভীর থেকে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
” বুঝবে কিভাবে? কখনো বুঝার চেষ্টা করেছো আমাকে? বলা ছিলো আমি অফিস থেকে ফিরলে কাছে এসে বসতে। কিন্তু আপনার তো আমার কাছে আসতে ভালো লাগে না। আমি জোর করে নিয়ে আসি। মুখ ফুটে বলে দিলেই পারেন আপনাকে আমার একদম ভালো লাগে না অরিদ চৌধুরি। তাই কাছে আসতে ও ভালো লাগে না।
অরিদের কথা শুনে মিরার মুখ হা হয়ে যায়। অভিমান মিশ্রিত রাগী চেহারাটার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি ও আসে । তবে মিরা হাসিটাকে প্রাধান্য না দিয়ে অবাক হয়ে বলে,
” আপনি তো মেয়েদের মত রিতীমত ঝগড়া শুরু করে দিয়েছেন। আর মাত্র দশ মিনিট সময় দিন আমি এখন’ই আসছি।
অরিদ বিছানা থেকে উঠে মিরার দিকে তাকিয়ে দাঁত পিষে বলে,
” প্রয়োজন নেই আর। কাজ করো বেশি করে।
অরিদ এক প্রকার রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিরা পিছন থেকে ডেকে উঠে,
” রাগ কেনো করছেন অরিদ? ঠিক আছে কাপড় গুছাচ্ছি না। বসছি আপনার পাশে। এইবার অন্তত মাথা ঠান্ডা করুন।
মিরা কথাগুলো বলছিলো আর অরিদের পিছু পিছু যাচ্ছে। কিন্তু অরিদ মিরার দৃষ্টিসীমার বাহিরে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। মিরা অসহায়ত্বের শ্বাস ছাড়ে। এই দুই ভাইকে বিয়ে করে আমার আর ইয়ানার কপাল পুড়েছে। প্রেগনেন্ট মহিলাদের ও এত মুড সুইং হয় না কিন্তু উনার যতবার হয়। কখনো রাগ, কখনো গম্ভীর, কখনো সবচেয়ে অসভ্য, লাগামহীন পুরুষ উনি। অন্যসময় হলে তো জোর করে নিয়ে নিজের কাছে বসিয়ে রাখত। কিন্তু আজ চৌধুরি বাড়ির ছোট ছেলের মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছে। যেমন বড় ভাই তেমন ছোট ভাই! পাগল, সাইকো, স্ক্রু ঢিলা। মিরা বির বির করে ডিভানে বসে পড়ে। খারাপ লাগছে প্রচন্ড এইভাবে চলে যাওয়াতে। রাত প্রায় এখন নয়টার কাছা-কাছি। রাগ করে বেরিয়ে গিয়েছে কখন আসবে কে জানে? মিরা মোবাইলটা হাতে নিয়ে অরিদের নাম্বারে ফোন দেয়। প্রায় অনেকবার দেওয়ার পরও ওইপাশ থেকে কেউ রিসিভ করে না। মিরা লাস্ট বার দিতেই অরিদ সাথে সাথে রিসিভ করে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,
” কি সমস্যা তোমার? কাছে আসলে সমস্যা আবার দুরে গেলেও সমস্যা। ফোন দিয়ে জ্বালিয়ে কেনো মারছো?
মিরা ফুঁপিয়ে উঠে অপরাধীর ন্যায় মুখ করে বলে,
” বাড়িতে ফিরে আসুন প্লিজ। এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন? খাবার ও তো খান নি।
— সেই চিন্তা তোমার করতে হবে না। কাজ করে বেশি করে।
— আপনি না আসলে কিন্তু মামাদের এখানে চলে যাব।
— নিজের কোমল পা দুটি যদি হারাতো চাও, তাহলে যাও সমস্যা নেই।
— কেটে ফেলবেন?
— নিজের মর্জি। তবে কাটব সেটা সিউর।
— যাব না। বাড়িতে ফিরে আসুন।
— যেখানে নিজের প্রায়োরিটি নেই সেখানে যাব না।
— আমি আপনাকে প্রায়োরিটি দেয় না? এই কথাটা এত সহজে বলে ফেললেন? আর আপনি বুঝি খুব দেন? সারাদিন ঝগড়া লেগে থাকেন।
— দিনে ঝগড়া করি কিন্তু রাতে যেটা করি সেটা কি?
মিরা চোখ বন্ধ করে ফেলে। লজ্জায় লাল রাঙ্গা হয়ে যায় লাজুক মেয়েটির।
— অসভ্যতামি করেন।
— আচ্ছা?
— হুম। বাসায় আসুন।
— আসব না। আজ আমি বাড়িতে’ই ফিরব না। একা থাকো, পুরো রুম দিয়ে চলে এসেছি।
মিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই কল কেটে দেওয়ার শব্দ ভেসে আসে। অরিদ আসবে না শুনে কষ্টে মনটা বিষিয়ে যায়। মিরা দুই হাটুর মধ্যে মুখ ডুকিয়ে নিশ্বঃব্দে কেঁদে উঠে।
অরিদ বাড়ির সামনে গাড়িতে বসে সামান্য হেসে উঠে। সে তো বাড়িতেই আছে নতুন করে আবার কোথা থেকে আসবে। এমন সুন্দরী বউ রেখে এক রাত দুরে থাকাটাও পাপ। আর এমন পাপ অরিদ চৌধুরি কখনো করে না। বউটা ঝগড়ুটে বাট অনেক আদুরে তার কাছে ।
অরিদ গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। মিরাকে ডিভানে বসে থাকতে দেখে কপাল কুচকে ফেলে। এই মেয়ে তো রুমে ছিলো কিন্তু এখানে কি করছে? অরিদ গম্ভীরতা নিয়ে মিরার সামনে যায়
যেন সে ভীষন রেগে আছে। সামান্য গলা কেঁশে রাগ দেখিয়ে বলে,
” ভাইয়া ফোন দিয়ে বলল বাড়িতে কিছু কাজ আছে তাই চলে এসেছি নাহলে কখনো আসতাম না।
অরিদ কথা শেষ করতে দেরী কিন্ত মিরার হাতের মাইর খেতে দেরী হয় নি। মিরা ডিভান থেকে সব থেকে বড় বালিশটা অরিদের দিকে আঘাত করতে করতে বলে,
” আসবেন কেনো? বাহিরে তো অর্ধনগ্ন হাজার হাজার মেয়ে দেখা যায়। বাড়িতে বউ ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। এইটাকেই বলে পুরুষ মানুষ ঘরে থাকতে মন না চাইলে বউয়ের উপর বিনা কারনে রাগ দেখিয়ে বাহিরে চলে যাওয়া। আরে বউ কথা শুনে নি এইটা অজুহাত মাত্র। কি ভেবেছেন আমি বুঝি না কিছু?
মিরা অরিদকে একাধারে আঘাত করেই যাচ্ছে। অরিদ হাত দিয়ে আটকাচ্ছে বার বার। মিরা কাঁদছে আর ইচ্ছেমত রাগ ঝরছে। একসময় অরদি বালিশটাকে খপ করে ধরে । মিরা জোর দেখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে অরিদ মিরার মেদহীন কোমর ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মিরা রাগে ফুঁশছে অথচ চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। অরিদ মিরার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে চুলগুলো সরিয়ে কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলে,
” মাথা ঠান্ডা হয়েছে পাগলামো করে ? রাগ কমেছে একটু?
মিরা ছটফটিয়ে উঠে বলে,
‘ ছাড়ুন আমাকে ।
— রাগ তো আমি করেছিলাম। আমার রাগ না ভাঙ্গিয়ে এখন নিজেই রাগ করে বসে আছো? আমার রাগটা কে ভাঙ্গাবে তাহলে?
— যদি রুমে বসে থাকতেন তাহলে জীবন দিয়ে হলেও রাগ ভাঙ্গাতাম। তেজ দেখিয়ে বাহিরে গিয়েছে কেনো? মেয়েগুলো জায়গা দেয় নি?
— তুমি আছো তো আমার কাছে। হাজার ও নগ্ন মেয়ের ভীরে আমার শালীনতায় ঢেকে থাকা মেয়েটাকেই চাই। সে আমার খুব আদুরের।
— এইসব বললেও রাগ কমবে না। কথা বলব না আপনার সাথে। ছাড়ুন আমাকে।
— ওকে রাগ না ভাঙলে আমি নিজের মেডিসিন প্রয়োগ করছি।
মিরস চোখ বড় বড় করে বলে,
” একদম নষ্টামি করবেন না বলে দিলাম।
— একটু তো করব ওই।
মিরা ছটফট করছে। অরিদ মিরাকে নিজের সাথে আরও ভালোভাবে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে যাবে এমন সময় দরজার কাছ থেকে কারোর কাঁশির শব্দ পেয়ে দুইজন দুই পাশে সরে যায়। দরজার কাছে ইউভি আর অগ্নি দাঁড়িয়ে আছে। অগ্নির গম্ভীর মুখ কিন্তু ইউভির ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। মিরা অগ্নি আর ইউভিকে দেখে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইচ্ছে করছে মাঠ ফাঁক করে ডুকে পড়তে। বড় ভাইদের সামনে এমন লজ্জাকর পরিস্থিতি! ছিহহ। মিরা আর এক মুহূর্তে এখানে দাঁড়ায় না। নাক- মুখ কুচকে এক প্রকার পালিয়ে দ্রুত নিজের রুমের দিকে চলে যায়। অরিদ মিরাকে চলে যেতে দেখে ইউভির উদ্দেশ্যে বলে,
” তোমরা আসার আর সময় পাও নি?
ইউভি অরিদের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,
” বেড রুম রেখে ড্রয়িং রুমে কি করছিস? যদি আমার বউটা চলে আসত কি হত বলত?
অরিদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
” কি আর হত তোমাকে হাজারটা প্রশ্ন করত।
— রাইট।
— তাহলে এখন তোমার বউয়ের জন্য সব রোমান্স বাতিল করে দাও।
— এমন করলে নিজও রোমান্স থেকে বাতিল হয়ে যাব।
— হ্যা বুড়ো কালে করবে।
— শক্তি একই থাকবে।
অগ্নি ভ্রুঁ নাচায় এদের কথা শুনে। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে উপরে চলে যায়।
নিশিথকালীন পরিবেশের গূঢ়তা এমন এক অন্তর্মুখী আবেশে নিমজ্জিত যা মনোজগতের অদৃশ্য তরঙ্গে আন্দোলিত করে হৃদয়ের সূক্ষ্মতম তন্তুগুলিকে। রাতের অনুপম নীরবতা যেন বহুকালের অপূর্ণ উচ্চারণ। ধরা দেয় এক অলৌকিক ব্যঞ্জনায়।চাঁদের কণ্ঠরোধ করা জ্যোৎস্না ছুঁয়ে যায় বৃক্ষশাখার নিস্পন্দ ছায়া। আর বাতাসে বিচরণ করে অনাগত বিস্ময়ের আগাম ছায়াচিহ্ন। সমস্ত প্রতিবেশ যেন ব্যাকুল এক প্রতীক্ষায় প্রহর গুনে। অনুজ্ঞাহীন সেই স্তব্ধতা হৃদয়ের অন্তঃপুরে জাগায় এক নিভৃত অভিসার। তারার নিস্পলক দৃষ্টিতে অনুধাবন করা যায় এক অনবচ্ছিন্ন আক্ষেপের সঙ্গীত। যা সংবেদনশীল আত্মাকে পরিক্রমণ করায় স্মৃতির অতল গহ্বরে। সময় এখানে আর ঘূর্ণমান নয়।সে এক অনড়, অবিচল স্বাক্ষর যেন যা প্রত্যেক নিঃশব্দ মুহূর্তকে করে তোলে এক একটি অব্যক্ত কবিতা।
এই নিশা কেবল অন্ধকারের আধার নয়। এইটা এক গভীর, সুধাময় বিষাদ।যেখানে প্রতিটি নিঃশ্বাসেই মিশে থাকে ব্যথা, বিস্মৃতি ও বিনির্মাণ। এই নৈঃশব্দ্য, এই নিশিথকাল, সাহিত্যের অলিন্দে এক অনির্বচনীয় যাত্রার আহ্বায়ক, যা অনুভবের অতীতেও বিরাজমান এক অনন্ত সত্তা। সেই রাতের অন্ধকারের নিস্তব্দতা ভেঁদ করে অগ্নি রুমে প্রবেশ করে। পুরো রুম অন্ধকার দেখে কপাল কুচকে ফেলে। এক হাত দিয়ে লাইট অন করে কিন্তু ইয়ানা নেই। বুকের ভেতর তীব্র কে ধ্বাক্কা অনুভব হয়। মুহূর্তেই ছটফটিয়ে উঠে শক্ত- পোক্ত হৃদয়ের মাফিয়া বস। অগ্নির কপালে চিন্তার ভাঁজ। এসি রুমের ভেতরে কপালে ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা জমা হয়। অগ্নি চারপাশে তাকিয়ে অন্যদিকে তাকাতে যাবে এমন সময় আয়নার পিছন থেকে বেরিয়ে আসে এক অপরুপ লাল পরী। অগ্নির চোখ সেদিকে আটকে যায়। শ্বাস নিতেও ভুলে গিয়েছে সে।
ইয়ানার শরীরে একটা লাল শাড়ি। শাড়ীটা এমনভাবে পড়েছে অর্ধেক পেট উন্মুক্ত। অগ্নি শুকনো ঢোক গিলে। প্রেগনেন্সিতে ইয়ানা আরও গুলোমুলো হয়ে গিয়েছে। চেহেরার উজ্জলতা আর কোমলতা যেন কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফর্সা শরীরে লাল শাড়িতে কোনো পরী মনে হচ্ছে অগ্নির কাছে। কিন্তু উনি তো মাফিয়া বস। প্রসংশা করা উনার ধাঁচে নেই। ইয়ানা সামনে এসেছে ঠিক কিন্তু লজ্জায় নিজের ইচ্ছে করছে মরে যেতে। কিন্তু বরাবর লজ্জাকে উপেক্ষা করে অগ্নির কাছে এসে দাঁড়ায়। অগ্নির পায়ের উপর পা রাখে। এরপর উচু করে অগ্নির গলা জড়িয়ে ধরে। সামান্য একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে দুই গালে চারটা চুমু খায়। অগ্নি শুকনো ঢোক গিলছে বার বার। মাফিয়া বস একজন মেয়ের থেকে পালানোর জন্য পিছাতে পিছাতে একদম বিছানায় গিয়ে বসে যায়। ইয়ানা অগ্নির নাজেহাল অবস্থা দেখে সামান্য হেসে কন্ঠনালীতে টুস করে কয়েকটা চুমু খায়।
— আপনাকে অনেক সুইট লাগছে। আর আপনার আ্যডমস আ্যপল সো সুইট।
ইয়ানা পর পর আর কয়েকটা চুমু খায়। অগ্নি ইয়ানার দুই হাত ধরে কিড়মিড়িয়ে বলে,
” ফা’ক অফ ইয়ানা। প্রতিটা দিন আমাকে নাজেহাল করে দিচ্ছো। একেক সময় একেক ড্রেস পড়ে হাজির হচ্ছো। এত কিসের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছো আমার থেকে?
— আপনি সত্যি নাজেহাল হয়ে যাচ্ছেন? নাজেহাল কেনো হবেন অগ্নি চৌধুরি। কিছু করছেন না কেনো?
ইয়ানা ভ্রুঁ নাচিয়ে তাকায়। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। অগ্নি হাসিতে এক পলক তাকিয়ে ইয়ানার মাথার পিছন অংশ চেপে ধরে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসে। এরপর আচমকা ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। ইয়ানা চোখ ছোট ছোট করে ফেলে। অগ্নি ইয়ানার ঠোঁট গাঢ় শক্ত চুমু খেয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে শ্বাস নিয়ে বলে,
” ৬,৪৮০ ঘণ্টা… ২৩,৩২৮,০০০ সেকেন্ড….২৩,৩২৮,০০,০০০ মিলিসেকেন্ড…
২৩,৩২,৮০০,০০,০০,০০০ মাইক্রোসেকেন্ড…
২৩,৩২,৮০০,০০,০০,০০,০০,০০০ ন্যানোসেকেন্ড.. মোট নয় মাস আমাকে জ্বালাচ্ছো । প্রতি সেকেন্ড, ন্যানো সেকেন্ড আমি হিসেবে রাখছি সুইহার্ট। আমার সন্তান তোমার পেটে আছে তাই এখনও ধৈর্য ধরে সহ্য করছি। কিন্তু যেদিন বাচ্চা দুনিয়ার আলো দেখবে সেদিন থেকে তোমার রাতের ঘুম নির্ঘুম করব।
অগ্নি শ্বাস টেনে আবার ও বলে,
” বাচ্চাদের সেইফটির কথা ভেবে ভদ্র হলেও তোমার কাছে সেই অসভ্য অগ্নি চৌধুরি’ই আছে। যেভাবে আমাকে প্রতি রাতে জ্বালিয়ে মারছো সেভাবে আমি ও জ্বালাবো। আর আমার জ্বালানো ঠিক কতটা উন্মাদ সেটা ধারনা আছে নিশ্চই। এক রাত যদি ছাড় দেয় তাহলে আমি ও মাফিয়া বস অগ্নি চৌধুরি নয়।
ইয়ানা সামান্য ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলে,
” ভয় কেনো দেখাচ্ছেন এইভাবে? এমন এলার্ট আগে কেনো দেন নি? জানলে এইভাবে ইচ্ছাকৃত জ্বালাতাম নাকি?
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,
” ইচ্ছেকৃত! গুড, রেডি থাকুন আর মাত্র কয়েকটা দিন।
ইয়ানা অগ্নির উপর থেকে উঠে কাঁদো- কাঁদো ফেইস নিয়ে বলে,
” প্লিজ ক্ষমা করে দিন। যত জ্বালিয়েছি সব আবার পুনরায় ফেরত নিয়ে নিচ্ছি। আর কোনোদিন জ্বালাব না।
— জ্বালালে ও মেডিসিন সাথে সাথে’ই পাবে। তখন ইচ্ছেমত জ্বালাবে ফলে আমার কাজ আরও সহজ হবে।
ইয়ানা ভোঁতা মুখে নখ কামড়াচ্ছে।
— এখনও এই শাড়ি পড়ে আমার সামনে থাকবে?
— চেইঞ্জ করছি। এত সুন্দর শাড়িটা পড়েছি একটু প্রসংশা ও তো করতে পারতেন।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
” ইউর সো সে………
— বলতে হবে না আর। বুঝে গিয়েছি আমি। অসভ্য!
ইয়ানা অগ্নিকে কথা শেষ না করে দিয়ে মাঝ পথে থামিয়ে দেয়। এরপর দ্রুত ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে শাড়ি পাল্টানোর জন্য।
অগ্নি নিজের চুল-টেনে ধরে বড় বড় শ্বাস টেনে নেয়। অধৈর্য করে ফেলছে মেয়েটা। বার বার ইয়ানার আবেদনমী রুপ ভেসে আসছে। অর্ধেক পাগল করে দিয়েছে । সময়ের অপেক্ষা প্রতিটি কর্মের ফল পাবে তুমি। জানে এখন কিছুই করতে পারব না এইটার ওই সুযোগ নিচ্ছে। সময় আমার ও আসবে তখন বুঝবে অগ্নি চৌধুরি কি জিনিস?
ইয়ানা শাড়ি খুলে একটা নরমাল ড্রেস পড়ে বের হয়। অগ্নির কথাগুলো তাকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। ইয়ানা ভোঁতা মুখে বিছানায় বসলে অগ্নি কাছে টেনে নিয়ে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে চিন্তিত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে,
” একটা প্রশ্ন তোমার কাছে আমার। বাচ্চা এসেছে কিভাবে? মানে আসার তো কোনো উপাই ছিলো না।
ইয়ানা এমনিতে চিন্তিত হয়ে আছে। গভীর চিন্তায় মগ্ন , ভবিষ্যতে কি হবে সেটা নিয়ে। তার উপর অগ্নির এমন উদ্ভুত প্রশ্নে বিরক্তি নিয়ে বলে,
” একদিন আপনার রাগ থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে যাচ্ছিলাম। হুট করে একটা ট্রেন এসে আমাকে ধ্বাক্কা দেয়। ব্যাস পড়ে যায় আমি সেখানে। এরপর হয়ে গেলাম প্রেগন্যান্ট। বাচ্চা আল্লাহ উপর থেকে টুপ করে আমার গর্ভে দিয়ে দেয়।
ইয়ানার এমন উত্তরে অগ্নি ভ্রুঁ ভাঁজ করে ফেলে। ইয়ানাকে নিজের সাথে আরও চেপে ধরে বলে,
” ফাইজলামো করছো আমার সাথে বিয়াদব? সিরিয়াস প্রশ্ন করেছি আমি। ঔষধ দেওয়ার পরও বাচ্চা আসবে কোথা থেকে সেই প্রশ্ন করেছি আমি? তুমি ঠিকমত খাও নি?
ইয়ানা অগ্নির মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,
” লাস্ট মাসে কোনো মেডেসিন নেয় নি। আপনি চলে গেলে মুখ থেকে ফেলে দিতাম।
— আরেকটু সতর্ক থাকার উচিত ছিলো আমার। বার বার বলতে আমার বাচ্চা তোমার মধ্যে কখনো ধারন করবে না সেটা ভেবেই এত কিছু নজর দেয় নি। কিন্তু এইসব বলে বলে যে উল্টো কাজ করবে কে জানতো?
— এখনও আপনি নাখোঁজ করছেন? বাচ্চাদের বলে দিব সব কিছু। আপনি কিভাবে অখুশি ছিলেন।
— আমার অনুভুতি ঠিক কতটুকু সেটা তুমি কল্পনা ও করতে পারবে না।
অগ্নি ইয়ানার ফোলা পেটে হাত রাখে। ইয়ানার জামাটা উপরে তুলে উন্মুক্ত পেটে হাত বুলিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বলে,
” হয়ত আমার অনুভুতি সবার থেকে অন্যরকম কিন্তু সেটা অনুমান করার ক্ষমতা কারোর নেই।
ইয়ানা মুচকি হাসে। অগ্নির গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বলে,
” আপনি পৃথীবির বেস্ট বাবা হবেন।
অগ্নি গম্ভীর হাসে। হঠাৎ চোখ যায় ইয়ানার উন্মুক্ত ফর্সা পেটে। অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
” বাচ্চার পায়ের ছাপ বুঝা যাচ্ছে। এখনও কি আগের মত লাথি-ঘুষি দেয়, কিক মারে?
ইয়ানা হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বলে,
” যেমন বাপ ঠিক তেমন বাচ্চা- কাচ্চা। আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে এই কয়টা মাস। যেন আমার পেট কোনো ফুটবল খেলার মাঠ। অধৈর্য বাপের অধৈর্য সন্তান ।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে একটু শব্দ করে হেসে উঠে। ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
” চিন্তা নেই সুইটহার্ট, বাচ্চার বাবা ও কিছুদিন পর শুরু করবে। শুধু বাচ্চাগুলোকে পৃথিবীতে আসতে দাও।
ইয়ানার মনে আবার ও ভয় এসে বাসা বাঁধে। কিন্ত আজ অগ্নিকে হাসি- খুশি দেখে একটু প্রশান্তি লাগছে। যেদিন থেকে শুনেছে টুইন বেবি হবে সেদিন থেকে উনার মুখের দিকে যাস্ট তাকানো যায় না। পৃথিবীর সব চিন্তা যেন উনার মুখে এসে ভীর করে। ইয়ানা অগ্নির গালে হাত রেখে বলে,
” বাহিরে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। চলুন না খোলা আকাশটা একটু দেখে আসি রাতের নিস্তব্দতায়।
অগ্নি আচমকা ইয়ানার দিকে তাকায়। অগ্নি মুখে কাঠিন্যতা বজায় রেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানা বলে উঠে,
” এখন ধমক দিলে সত্যি কেঁদে দিব। আপনার কথা অনুযায়ী নয় মাস বাহিরে পা রেখিনি। আজ কেমন জানি অস্বস্থি হচ্ছে। পৃথিবীটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ চলুন! প্লিজ!
— কিন্তু এখন অনেক রাত হয়েছে।
— কিছু হবে না আপনি পাশে আছেন তো । আল্লাহ ভরসা। প্লিজ নিয়ে চলুন না।
অগ্নির ইয়ানার বাচ্চামো করা মুখটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলে,
” ওকে।
ইয়ানা যেন খুশিতে আত্নাহারা। অগ্নির গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
” ধন্যবাদ ইয়াজের আব্বু।
অগ্নি ইয়ানার নাকে নাক ঘেষে বলে,
” ওয়েলকাম আনায়ার আম্মু।
— যদি দুইটাই ছেলে হয়।
— মেয়ে হলে আরও ভালো।
ইয়ানা ছোট ছোট চোখ করে বলে,
” তার মানে আপনার মেয়ে খুব পছন্দ?
— সব কিছুতেই আমি খুশি।
ইয়ানা মুচকি হাসে। তবে অগ্নি যে মেয়ে খুব পছন্দ করে সেটা ইয়ানা আগে থেকেই ধারনা করেছে। অগ্নি ইয়ানাকে কোলে তোলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।অগ্নি নিচে নেমে আসলে ইয়ানা চারদিকে তাকিয়ে বলে,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬২
” কতমাস পরে লিভিং রুমে এসেছি।
অগ্নি রিমোটের মাধ্যমে দরজা খুলে আবার লাগিয়ে দেয়। এরপর ইয়ানাকে সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। ইয়ানা অগ্নির বাহুতে মাথা রেখে হাসি দিয়ে তাকায়। চোখের মিলন ঘটে দুজনার।