অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬৬
লিজা মনি
গভীর রজনীকে বিদায় জানিয়ে ধরনীতে প্রভাতের আগমন ঘটে। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে।
অগ্নি জগিং রুমে একের পর এক আপ ডাউন দিতে থাকে । সাথে ইয়াজ ও আছে। অগ্নি আপ ডাউন দিচ্ছে আর ইয়াজ গম্ভীর হয়ে পরখ করছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাপার পেশিবহুল হাতের দিকে। মুখের গম্ভীরতা এমন ভাবে টেনে রেখেছে যেন অগ্নি চৌধুরির স্বভাব ভেসে উঠেছে। প্রায় দুইশত আপ ডাউন দিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
” ইউর কমপ্লিটলি ওর্ন আউট নাউ?
ইয়াজ বসা থেকে উঠে,
— নো পাপা। আই’ম টোটালি ওকে।
অগ্নি এক পলক ইয়াজের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
” Good job, champ! চেষ্টা করতে পারো। কাম!
— ইয়েস পাপা। হোয়াটস দ্য হার্ম ইন ট্রায়িং?
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হাসে। এরপর আপ ডাউন শেষ করে বলে,
” তোমার মাম্মাম বকা দিবে । এই বয়সে এমন হার্ড জিম করলে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়াজ কিছু বলল না। শুধু গম্ভীর হয়ে কিছু পরখ করছে। প্রচুর মা ভক্ত সে। মাম্মাম যা বলে সেটাই রাইট আর বাকি সব ভুল। সারাক্ষন গম্ভীরতা টেনে বসে থাকে। কথা বলে খুব কম। ইয়াজকে নিয়ে ইয়ানার দুশ্চিন্তার শেষ নেই । এইটা যে অগ্নি চৌধুরির দ্বিতীয় ফটোকপি তার কোনো সন্দেহ নেই। এখন থেকেই এমন স্বভাব আর বড় হলে কি করবে? তাই বলে একদম বাবার মত হবে? একটু তার স্বভাবের হতে পারলো না! এই হৃদয়ীন মাফিয়ার সাথে আমি বলে সংসার করতে পেরেছি। নাহলে অন্য মেয়ে হলে এত দিনে কবে ডিভোর্স ঠুকে দিয়ে যেত। কিন্তু ছেলেটা এই যুগে এমন মেয়ে পাবে কোথায়? এই নিয়ে ইয়ানার দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
ইয়াজকে বসে থাকতে দেখে অগ্নি আবার ও হাস্কি সুরে জিজ্ঞাসা করে,
” ক্লান্তি লাগছে? রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
— নো আপা। আই এম অল রাইট।
অগ্নি আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই কানে ভেসে আসে মিষ্টি ডাক,
” পা..পাপ্পা, প.. পা.. পাপ্পা!
অগ্নি সহসা মাথা তুলে তাকায়। কাউচ ভেদ করে দৃষ্টি যায় পাঁচ বছরের মেয়ের দিকে। পড়নে সাদা একটা বেবি গাউন, পায়ে সুজ, হাতে একটা পুতুল নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আজ বাহিরের তাপ মাত্রা খুব প্রখঢ়। এই সকালেই যেন তেজ আছড়ে পড়ছে পুরো এড়িয়া জুড়ে। মেয়ে পাপা ডাকতে ডাকতে এক মনে দৌড়ে এগিয়ে আসছে। অগ্নির বুক ছেৎ করে উঠে। এমনভাবে দৌড়াচ্ছে যেন যে কোনো সময় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মেয়েটার মুখ ও কেমন লাল হয়ে গিয়েছে রোদের কারনে। অগ্নি তাড়াহুড়া করে জিম রুম থেকে বেরিয়ে এক টানে মেয়েকে কোলে তোলে নেই। মেয়ে অগ্নির দিকে ডেব- ডেব করে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসি দেয়। এই হাসিটাই হাজার বার ঘায়েল করে অগ্নিকে। অগ্নি মেয়ের মাথাটা ভালোভাবে পরিপাটি করে দেয়। অগ্নির চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। ইয়ানার উপর গিয়ে সব রাগ জমা হয়। কতটা ক্যায়ারল্যাস হলে এইভাবে মেয়েটাকে বাহিরে পাঠিয়ে দেয়, তাও আবার এই তীব্র গরমে! অগ্নি মেয়ের কপালে দুটো চুমু খেয়ে বলে,
– পাপা তোমার মাম্মাম কোথায়?
আনায়া অগ্নির গলা জড়িয়ে ধরে। অগ্নি আনায়াকে সামান্য ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
” পাপা মাত্র জিম নিয়েছি। ঘার্মাক্ত হয়ে আছি এখন মামুনি।
কে শুনে কার কথা। এইটুকু মেয়ের এত ধারনা আছে নাকি জিম করলে কেমন হয়। সে পাপার গলা জড়িয়ে ধরে রাখে। অগ্নি আর বাঁধা দেয় না। তবে ইয়ানার প্রতি রাগ বাড়তে থাকে।
ইয়াজ এতক্ষন বোন আর পাপাকে দেখছিলো। গম্ভীরতা টেনে বোনের দিকে তাকিয়ে সামান্য ধমক দিয়ে বলে,,
” না জানিয়ে কেনো নিচে নেমেছো আনায়া? মাম্মাম এখন বাহিরে এসে যদি খুজে না পায় তখন?
ইয়াজের ধমকে মেয়েটা কেঁপে উঠে। ঠোঁট উল্টে কান্না করতে যাবে এমন সময় ইয়ানার ডাকে সবাই সামনে তাকায়। ইয়ানা খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে এইদিকে এগিয়ে আসছে। ইয়ানা এখানে আসতেই অগ্নি চোয়াল শক্ত করে ধমকে উঠে,
” কোথায় ছিলে তুমি? মেয়েটা বাহিরে বের হয়ে গিয়েছে অথচ তোমার খেয়াল নেই? এতটা ক্যায়াসল্যাস কি করে হলে? এই রোদের তীব্রতায় পুরো মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। এমন ভাবে দৌঁড়াচ্চিলো যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলত।
অগ্নির ধমকে ইয়ানা নিজেকে ধাতস্ত করে। এরপর পুরনরায় অগ্নির দিকে তাকিয়ে আনায়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। মায়ের চোখ দেখে চুপসে যায়।
– আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি, তুমি আমার মেয়েকে চোখ রাঙ্গাচ্ছো কেনো?
— আমি তোমাকে কি বলেছিলাম আনায়া? বলেছিলাম তো বিছানায় চুপটি মেরে বসে থাকবে। মাত্র এক মিনিটের জন্য ট্রায়াল রুমে গিয়েছিলাম। আর এই সুযোগে নিচে কেনো নামলে বলো? এখন তোমার পাপা যে আমাকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে সেসবের দায় কে নিবে?
ইয়ানা আনায়ার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে শক্ত চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর ভ্রুঁ নাচিয়ে শ্বাস টেনে বলে,
” এরপর থেকে রুম থেকে বের হবে না মাম্মাম । মনে থাকবে পাপার কথা?
আনায়া ভদ্র মেয়ের মত মাথা নাড়ায়। ইয়াজ এতক্ষন বাবা, মা আর বোনের কান্ড দেখছিলো। কিন্তু তার এইসব আর ভালো না লাগাতে ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। একটু পর তাকে স্কুলে যেতে হবে। একটা রাস্কেল তাকে খুব বিরক্ত করছে। আজ তার ফায়সালা করে আসবে সে। একজন মাফিয়া বসের ছেলের সাথে তামাসা করার কাহিনী আজ বুঝিয়ে দিবে। অনেক ধৈর্য ধরা হয়েছে আর নয়। ইয়াজের ভেতরে রাগ অথচ বাহিরে গম্ভীরতা টেনে ভেতরে চলে যায়।
ইয়াজ চলে যেতেই অগ্নি ইয়ানার থমথমে মুখটার দিকে তাকায়। অগ্নির সামনে দাঁড়িয়ে অথচ মুখটা অন্য পাশে ফিরিয়ে রেখেছে। অগ্নি ইয়ানার অভিমানী মুখটার দিকে তাকিয়ে চার- পাশে গার্ডদের একটা ইশারা দেয়। গার্ডরা অগ্নির ইশারা পাওয়ার সাথে সাথে সবাই মাথা নিচু করে ফেলে। অগ্নি ইয়ানার ফোলা- ফোলা গাল দুটির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। ইয়ানা আগের থেকে সামান্য মোটা হয়ে গিয়েছে। অগ্নির কাছে ইয়ানাকে যেন আগের থেকে ও বেশি আবেদনময়ী মনে হয়।
সে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় ইয়ানার দিকে। অগ্নির গরম নিশ্বাস চোখে- মুখে পড়তেই ভড়কে যায়। ইয়ানা চট করে তাকায় অগ্নির চোখের দিকে। চোখে মাদকতা, নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। অগ্নির অবস্থা বেগতিক দেখে ইয়ানা মেয়েকে কোলে নিতে চায়। কিন্তু অগ্নি না দিয়ে ইয়ানার কোমর পেচিয়ে ধরে। সহসায় কেঁপে উঠে সে। লজ্জায় আরষ্ট হয়ে চারদিকে নজর বুলায়। প্রতিটি গার্ড মাথা নিচু করে রেখেছে। কারোর দৃষ্টি এখন আর উপরে নেয়। ইয়ানা আনায়ার দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে ফেলে। মেয়েটাও তার দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা চোখের পাতা ঝাপটে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
” আনায়াকে দিন আমার কাছে। ওকে খাওয়াতে হবে।
অগ্নি আরও ঘনিষ্ট হয়। ইয়ানা ভড়কে গিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে,
” কি অসভ্যতামি শুরু করলেন সবার সামনে? মেয়েটা তাকিয়ে আছে। ইয়াজ যে কোনো সময় চলে আসবে।
অগ্নি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
” মাম্মাম চোখ বন্ধ করে ফেলো তো?
আনায়া তাকায় পাপার দিকে। অগ্নি নিজের হাত দিয়ে আনায়ার চোখ বন্ধ করে দিয়ে বলে,
” চোখ খুলবে না একদম। চোখ বন্ধ করে রাখলে আজ তোমাদের নিয়ে পাপা লং ড্রাইভে যাব।
মেয়েটা কি বুঝল সেটা বিষয় না। তার পাপা বলেছে চোখ বন্ধ করে রাখার কথা তাই সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। মেয়েরা বাবা ভক্ত। তার জলজ্বান্ত প্রমান আনায়া। অগ্নি মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানার অবাকতা দেখে অগ্নি হাস্কি শুরু বলে,
” অগ্নি চৌধুরির ডিএনএ এতটা নরমাল নয়। তোমার অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ইয়ানা চোখ পাকিয়ে তাকায় অগ্নির দিকে। ” অসভ্য” বিরবির করে চলে যেতে চাইল। কিন্তু তার আগেই জমে যায় সে। অগ্নি হেচকা টানে ইয়ানাকে নিজের বুকের সাথে ল্যাপ্টে ধরে। এরপর কোনো সতর্ক ছাড়ায় ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। অগ্নির চোখ বন্ধ। ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলেছে। বুকের ভেতরে চিন্তার ঘূর্নিঝর চলছে। এই বুঝি কোনো গার্ড তাকিয়ে গেলো! এখন’ই ইয়াজ স্কুলের যাওয়ার জন্য পার্কিং এড়িয়ায় এসে দাড়ালো। হাজারও চিন্তা নিয়ে ইয়ানা অগ্নিকে ধ্বাক্কা দিতে যায়। ইয়ানা ধ্বাক্কা দেওয়াতে অগ্নি ইয়ানার ঠোঁটে সজোরে কামড় বসিয়ে দেয়। ইয়ানা কামড়ের ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে মৃদু আর্তনাদ করে উঠে।
আনায়া মায়ের আর্তনাদ শুনে ভুলে যায় পাপার কথা। সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায় অগ্নি আর ইয়ানার দিকে। অগ্নি এখনও ইয়ানার ঠোঁটে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা বোকার মত তাকিয়ে আছে বাবা- মায়ের দিকে। হুট করে ইয়ানার চোখ যায় আনায়ার দিকে। মেয়েকে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে। ছটফট শুরু করে দেয় ছুটার জন্য। অগ্নি বিরক্তি নিয়ে এক সময় ছেড়ে দেয় ইয়ানাকে। রাগ দেখিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
” সমস্যা কি তোমার? এত ছটফট কেনো করছিলো? প্রথমবার চুমু খাচ্ছি আমি তোমাকে? এখনও বোয়াল মাছের মত লাফা- লাফি শুরু করে দাও। এর পরের বার থেকে জিপ- টাই লাগিয়ে রাখব ইডিয়েট!
অগ্নির ধমকের মধ্যেই শুনতে পেলো আনায়ার গলার আওয়াজ,
” পাপা তুমি মাম্মামক চুমু কেনো দিচ্ছিলে? চুমু তো বাচ্চাদের খায়।
ইয়ানা চমকে উঠে মেয়ের কথায়। চোখ পাকিয়ে তাকায় অগ্নির দিকে। অগ্নি মেয়ের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলে,
” তুমি দেখছিলে?
আনায়া মাথা নাড়ে।
— মাম্মাম কান্না করছিলো। ব্যাথা পাচ্ছিলো খুব। তাই আনায়া চোখ খুলে ফেলেছে।
অগ্নি মেয়ের গালে কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে,
” চুমু খেয়েছি বলেই তুমি পৃথিবীতে এসেছো। মাম্মাম পাপার উপর রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিলো তাই এই অন্যায়ের পানিসমেন্ট দিয়েছি। যারা অন্যায় করে তাদের পানিসমেন্ট দিতে হয়। অ্যান্ড ইউ অলরেডি নো দ্যাট, মাই প্রিন্সেস।
ইয়ানা মুখ হা করে তাকিয়ে আছে অগ্নির দিকে। এইটুকু মেয়ের মাথায় এইসব কি দিচ্ছে। আনায়া কি বুঝল বুঝা গেলো না। শুধু অগ্নির কথায় হেসে পুতুল নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছে। ইয়ানা এখানে আর দাড়ায় না। দাঁত কিড়মিড়িয়ে চলে যায় ভিতরে। করিডোর পেরিয়ে ভেতরে ডুকতেই দেখে ইয়াজ রেডি হয়ে নিচে নামছে। ইয়াজকে দেখে ইয়ানা নিজের দুই হাতে আগলে নেয়। কপালে চুমু খেয়ে বলে,
” তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো। পাপা এখনওই রেডি হয়ে নিচে নামছে।
ইয়াজ মাথা নাড়িয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। এরপর চোখ তুলে আনায়ার দিকে তাকায়। আনায়া ভাইয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। তখন ধমক দেওয়ার কারনে তীব্র অভিমান জমেছে ছোট মনে। ইয়াজ কখনো আনায়াকে ধমক দেয় না।কিন্তু আজ তার মাম্মামের ব্যাপার ছিলো তাই সামাম্য ধমক দিয়েছে। অগ্নি ছেলে- মেয়ের অভিমান দেখে মুচকি হাসে। তবে কিছু বলে না।
— গাড়িতে গিয়ে বসো আমি এখন’ই আসছি।
— ওকে পাপা।
ইয়াজ চলে যায় গাড়ির কাছে। অগ্নি সিঁড়ি পেরিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করে। ইয়ানাকে কাবার্ড থেকে জামা বাহির করতে দেখে আনায়াকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। ইয়ানা আনায়ার কাছে গিয়ে স্ট্রবেরী মিল্কের পাত্রটা সামনে ধরে। খাবার দেখেই আনায়া অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ইয়ানা জোর করে মেয়েকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নেয় খাওয়ানোর জন্য। আনায়া প্রান- প্রন চেষ্টা করছে ছুটার জন্য। আর একটু পর পর আওয়াজ তুলছে,
” পা..পাপ্পা, পাপ্পা!
ইয়ানা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় মেয়ের দিকে। ইয়ানাকে চোখ রাঙ্গাতে দেখে মেয়েটা আর ও জুড়াজুড়ি শুরু করে দেয়। ঠোঁট উল্টে বার বার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছে। তার পাপা তার শেষ ভরসা আর শক্তি। আনায়াকে খাওয়াতে না পেরে ইয়ানা সামান্য মৃদু ধমক দিয়ে উঠে,
” খাবার নিয়ে এত সমস্যা কেনো তোমার? সকাল থেকে কিছু খাও নি। আর এখন এইভাবে যুদ্ধ করছো আমার সাথে। আর ওই দরজার দিকে কি তাকাচ্ছো বার বার? আমি তোমার পাপাকে ভয় পায়?
ইয়ানার রাগান্বিত চোখ আর ধমক শুনে মেয়েটা এইবার উচ্চস্বরে কেঁদে উঠে। ইয়ানা হা করে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। বলেছেটা কি? এইভাবে কান্না করার কোনো মানে হয়? ধান্দাবাজ বাবার ধান্দাবাজ মেয়ে! ইয়ানা মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,
” সরি মাম্মাম ধমক দিব না। ফিনিশ ইউর ফুড।
ইয়ানা চামচটা আনায়ার মুখে দিব এমন সময় অগ্নি শাওয়ার শেষ করে বের হয়ে আসে । মেয়েকে কান্না করতে দেখে কপাল কুচকে যায়। ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে হন্তদন্ত হয়ে মেয়েকে নিজের কোলে তোলে নেয়। ইয়ানা বুঝে উঠার আগেই মেয়ে বাবার কোলে গিয়ে আরও জোরে কান্না করে। অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,
” কি করেছো?
— কি করেছি আমি?
– হ্যা সেটাই তো প্রশ্ন করেছি। কি করেছো আমার মেয়ের সাথে?
— কি করব?
– তাহলে এইভাবে কান্না কেনো করছে? তার উপর ফুঁপিয়ে উঠছে।
– খাবার খাওয়াতে নিয়েছিলাম তাই এমন করছে। বিশ্বাস করুন কান্নার পরিমান কম ছিলো। আপনাকে দেখে আরও বেড়ে গিয়েছে।
অগ্নি ইয়ানার থেকে চোখ সরিয়ে স্ট্রবেরি মিল্কের দিকে এক পলক তাকায়। এরপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে ফোলা- ফোলা গাল দুটিতে চুমু খায়। চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,
” হোয়াট হ্যাপেন্ড, মাই প্রিন্সেস? হোয়াই আর ইউ ক্রাইং?
আনায়া ভেজা চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। এরপর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
” মাম্মাম স্কোল্ড মি পাপ্পা। অ্যানায়া গট স্কেয়ার্ড সিইং মম’স আইজ।
অগ্নি ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে বলে,
” তুমি ওকে চোখ রাঙ্গিয়েছিলে?
— খাওয়ার সময় যুদ্ধ করলে কি করব? সামান্য চোখ রাঙ্গিয়েছি বলে বাপ- বেটি মিলে এইভাবে উকালতি কেনো করছেন?
অগ্নি ইয়ানার দিকে কিছুক্ষন ঠোঁট চেপে তাকিয়ে থাকে। এরপর গলা কেঁশে হাস্কি সুরে বলে,
– যখন আমি আমার জিনিস খেতে চাই তখন তো তুমিও যুদ্ধ শুরু করে দাও। চোখ রাঙ্গায় আমি তোমাকে?
অগ্নির কন্ঠ থেকে নিসৃত বাক্যটা বুঝতে ইয়ানার কিছুক্ষন সময় লাগলো। যখন বুঝতে পেরেছে তখন অবাক হয়ে তাকায় সামনের দিকে। সামনে তাকিয়ে দেখে অগ্নি নেই। সে বর্তমানে ব্লেজার গায়ে জড়াচ্ছিলো। আর পাশে আনায়া স্ট্রবেরি মিল্ক খাচ্ছে। আনায়াকে খেতে দেখে ইয়ানার কিছুটা কষ্ট পায়। এতক্ষন সে যুদ্ধ করলো খেলো না অথচ পাপার কথায় খেয়ে নিচ্ছে! কিন্তু অগ্নির কথাটা মস্তিষ্কে আবার ঘুরপাক খাওয়া শুরু করে। কি অসভ্য আর অভদ্র এই লোক! উনি চোখ না রাঙ্গালে আমাকে এত ধমক কে দেয় তাহলে? ইয়ানা কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলে,
” চোখ রাঙ্গান না হাতে যাস্ট হ্যান্ড কাফ বা জিপ টাই লাগিয়ে ফেলেন।
ইয়ানা কথাটা বলে আর দাড়ায় না। দাঁড়াবে কিভাবে লজ্জার তো একটা ব্যাপার আছে। এখন তার উত্তরের প্রেক্ষাপটে নিশ্চয় আরেকটা অসভ্য মার্কা কথা শুনতে হবে। ইয়ানা সোজা বেলকনিতে চলে যায়। মেয়েকে নিয়ে যায় নি সাথে। কারন পাপা তার মেয়েকে আদর করে এরপর বিদায় জানিয়ে বের হবে।
অগ্নি ইয়ানার কথায় কোনো রিয়্যাকশন দেয় না। শুধু আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে।
এরপর মেয়ের কাছে আসে গালে চুমু খেয়ে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে। অগ্নি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে গাড়ির কাছে চলে যায়। ডোর খোলে ড্রাইভিং সিটে বসে ইয়াজের উদ্দেশ্যে বলে,
” আই’ম রিয়েলি লেট।
— নো প্রাবলেম, পাপা। দ্য টাইমিং ইজ জাস্ট রাইট।
অগ্নি ইয়াজের কাধ থেকে ব্যাগটা নিয়ে ব্যাক সিটে রাখে। এরপর গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে গম্ভীরতা নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
” প্রফেস্যারের ছেলের জামেলা মিটমাট হয়েছে?
ইয়াজ অগ্নির প্রশ্নে কিছুটা রাগ মিশিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“দ্যাট বয় ইজ টু অফুল, পাপা। যেদিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাবে সেদিন কেউ আটকে পারবে না। ইভেন তুমিও না। আই’ল শো দেম দ্য পাওয়ার অফ আ মাফিয়া বস’স সান।
ইয়াজের কথায় অগ্নি গম্ভীর হয়ে বসে। কপালের ভ্রুঁ জোড়া ভাঁজ করে কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে ইয়াজের গম্ভীর মুখটার দিকে তাকায়। হালকার উপর ঝাপসা তার অস্তিত্ব, ব্যবহার অনুমান করতে পারছে। এইটা যে অগ্নি চৌধুরির ডিএনএ তার কোনো সন্দেহ নেই। অগ্নি তপ্ত শ্বাস ছেড়ে গাড়ি চালাতে মনযোগ দেয়।
অগ্নি চলে যেতেই ইয়ানা রুমে প্রবেশ করে। বিছানার উপর একটা বক্স দেখে কপাল কুচকে ফেলে। বক্সের উপর একটা সাদা পাতায় লেখা,
” শাড়িটা পড়ে রাতে রেডি হয়ে থাকবে।
ইয়ানা চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টানে। এরপর আনায়াকে নিয়ে নিচে নামে। ঠিক তখন ওই করিডর পেরিয়ে পার করে সুমু আর ছোট রাহার আগমন ঘটে। রাহা আনায়াকে দেখেই সুমুর হাত ছেড়ে দিয়ে ভোঁ দৌঁড়। রাহার দৌঁড় দেখে সুমু আর ইয়ানা হতভম্ভ হয়ে ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু তাদের ভয়কে তোয়াক্কা করে দুই মেয়ে হাগ করে নেয়। সুমু আর ইয়ানা তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। সুমু ইয়ানার কাছে এগিয়ে এসে বলে,
” মিরা কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না যে?
— সাত মাসের প্রেগনেন্সির জন্য ভাইয়া চেকআপ করাতে নিয়ে গেছে। সকালেই বের হয়ে গিয়েছিলো। চলে আসবে এখন’ই।
— আমরা চলেও এসেছি।
মিরার আওয়াজ পেয়ে সুমু আর ইয়ানা দরজার দিকে তাকায়। মিরা অরিদের দিকে ভেঙচি কেটে ডিভানে এসে বসে পড়ে। অরিদের হাতে ফাইল, মিরার ভেঙচি দেখে চোখ পাকিয়ে তাকায়। মিরা থমথমে মুডে ডিভানে বসতেই সুমু প্রশ্ন করে,
” রাস্তায় আবার কি মারামারি করেছিস? এইভাবে মুখ করে আছিস কেনো দুইটা?
মিরা নাকের বাঁশি ফুলিয়ে বলে,
” ওই লোক পুরো রাস্তায় আমাকে ধমকে এনেছে। যাব না কোথাও উনার সাথে আমি। যদি যায় তাহলে আমিও মিরা নয়।
— মিরা না হও, মিসেস অরিদ চৌধুরি হলেই চলবে।
মিরা কটমট চোখে তাকায় অরিদের দিকে। অরিদ ফাইল সহ ডিভানে বসে পড়ে।
ইয়ানা — ঝগড়া করেছিস কি নিয়ে? ধমক দিয়েছে কেনো?
অরিদ কিছুটা রাগ মিশিয়ে বলে,
” বউ মনি ওর পায়ের গোড়ালিটা দেখো। কে বলেছিলো পাকনামি করে হিল পড়ার জন্য?
— আমি হিল পড়ি নি। সামান্য উচু ছিলো। নতুন জুতা তাই এমন লাল হয়ে গিয়েছে।
— খাবারের কাহিনী? ডাক্তার বলে দিয়েছে রক্ত কম শরীরের। ঠিকভাবে খাওয়া- দাওয়া করে না। রক্ত থাকবে কিভাবে? এখন যদি আমার দেওয়া মেনু অনুযায়ী চলাচল না করে ট্রাস্ট মি সিলিং- এ উল্টো ঝুলিয়ে রাখব।
মিরা কেঁদে দিবে ভাব। অরিদ সেদিকে না তাকিয়ে রাহা আর আনায়ার গালে দুটি চুমু খেয়ে বলে,
” পরে কথা হচ্ছে মামুনিরা। চাচ্চু প্রচুর টায়ার্ড। বাদর মানুষ করে আসি এরপর খেলা হবে। গো প্লে নাউ।
এরপর মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ রুমে চলো।
– যাব না আমি।
– যাবে না?
– না। খবরদার কোলে তুলবেন না। মেরে ফেলব আপনাকে আমি।
কে শুনে কার কথা। অরিদ মিরাকে পাজা কোলে তোলে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। মিরা হাত পা – ছুটা ছুটি করছে। তার জন্য অরিদের হাতে কয়েকবার ধমক ও খেয়েছে। এমনি ছেলেটা প্রেগনেন্সি নিয়ে চিন্তায় অস্থির। মিরা না জানিয়ে বাচ্চা কনসিভ করে ফেলেছিলো। একসময় অরিদকে জানালে সেও বাধ্য হয়ে কনসিভ করাটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু মিরার প্রেগনেন্সিতে অনেক সমস্যা। তার থেকেও বড় সমস্যা রক্ত কম।
অরিদ মিরাকে নিয়ে চলে যেতেই সুমু উচ্চস্বরে হেসে উঠে,
” এদের ঝগড়া কবে থামবে?
– কয়েকদিন পর বাচ্চা মাঝখানে রেখেও চুলাচুলি করবে। রায়ান ভাইয়া আসে নি?
— না। উনি আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গিয়েছে। কাল তো আবার দেশে যাচ্ছি।
— অনেক বছর পর নিজ দেশে ফিরছি। আলাদা একটা শান্তি যেন এখন ওই অনুভব করছি। কতদিন ধরে আব্বু- আম্মুর কবরটা দেখি না।
হুট করে ইয়ানার মন বিষন্ন হয়ে উঠে। চোখের কোণে পানি জমে উঠে। ইয়ানাকে কান্না করতে দেখে সুমু দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে ইয়ানাকে আগলে নেয়। ইয়ানা সুমুর বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠে,
” ওইদিন কি কেউ পারত না আমার আব্বু- আম্মুকে বাঁচাতে? আল্লাহ কেনো পাঠালো না কাউকে? নাকি কেউ ইচ্ছে করেই বাঁচাই নি।
— হায়াত আল্লাহ দান করেন। যখন যার সময় ফুরিয়ে যায় তখন তাকে মরন কবুল করতেই হবে। নিজেকে স্ট্রং রাখ নাহকে রুই ভেঙ্গে পড়বে।
ইয়ানা মাথা নাড়ায়। সুমু আর ইয়ানা অন্য গল্পে চলে যায়।
রাহা আনায়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
” পিঁয়াজ ভাইয়া কোতায়?
আনায়া ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে তার থেকে ছোট রাহার দিকে। মুলত সে পেঁয়াজ মানেটা বুঝতে পারছে না। পেঁয়াজ কি? রাহা ও আর প্রশ্ন করে নি। খেলায় মনযোগী হয়ে পড়ে দুইজন।
ইউভি আর রুয়ানা তাদের এক সংসার সাজিয়েছে নিজের আলিশান বাড়িতে। ইউভি আজ অফিসে যাবে এগারোটার দিকে। তাই প্রায় নয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছে। রুয়ানা নিচ থেকে অনেক সময় ধরে হাটাহাটি করে রুমে এসে দেখে ইউভি মাত্র ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিতে গিয়েছে। রুয়ানা এই ফাঁকে বিছানা গুছিয়ে হাতে মোবাইল নিয়ে বসে। মুলত সে আজ অগ্নির বাসভবনে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ইউভি রাতে প্রচুর ক্লান্ত ছিলো, সকালে আবার এত সময় ধরে ঘুমিয়েছে। ইউভি সচারচর খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। শরীর খারাপ ভেবে রুয়ানা আর যাওয়ার কথা বলে নি। কাল তো তারা বাংলাদেশ যাচ্ছেই। রুয়ানা ইয়ানার নাম্বারে ফোন দেয় কিন্তু কেউ ধরে নি। দুই বার দেওয়ার পরও কেউ রিসিভ করে নি। রুয়ানা ফুঁস করে শ্বাস নিয়ে বলে,
” এই কারনেই তোমাকে ভাইয়া এত রাগ দেখায়। কখনো ফোন রিসিভ হয় না। এই ফোন রিসিভ না করাতে ঠিক কতটা মোবাইল হারিয়েছো আল্লাহ মালুম জানে।
রুয়ানা বিরবির করার মধ্যেই ইউভি ওয়াশরুম থেকে বের হয়। একদম ট্রায়াল রুম প্যান্ট, শার্ট পড়ে আসে। বাট শার্টের বোতাম খুলে রাখে রুয়ানা লাগিয়ে দিবে সেই আশায়। ইউভি বের হয়ে কপাল কুচকে তাকায় রুয়ানার দিকে। রুয়ানা ও বিনা বাক্য ব্যয় না করে ইউভির শার্টের বোতাম লাগাতে শুরু করে। তাকে বলে দেওয়া হয়েছে এই কাজের কথা। রুয়ানা বোতাম লাগাতে ব্যস্ত। ইউভি রুয়ানার ফোলা- ফোলা গালে কামড় বসিয়ে দেয়। রুয়ানা সামান্য শব্দ করে উঠে বলে,
” কামড় কেনো দিচ্ছেন?
— এইভাবে গাল ফুলিয়ে রাখলে তো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
রুয়ানা লজ্জায় মাথা নত করে ফেলে। এইসব কথা ডাইরেক্ট কেউ বলে? তার লজ্জা লাগে না বুঝি। গাল রক্তিম হয়ে উঠে লজ্জায়।
ইউভি রুয়ানার রক্তিম মুখটাকে চিবুক ধরে তার মুখের সম্মুখে আনে। রুয়ানা লজ্জায় চোখ খুলতে পারছে না।
ইউভি রুয়ানার পুরো মুখে নজর দিয়ে হাস্কি সুরে বলে,
” কিস অন দ্য লিপস কুইকলি ফর ওয়ান মিনিট।
রুয়ানা চট করে চোখ খুলে ফেলে। হুট করে ইউভির বাহুতে আবদ্ধ থাকা অবস্থায় ছিটকে দুরে সরে যায়। ইউভির দিকে তাকিয়ে বলে,
” একদম না। অতীত কিছুই ভুলে যায় নি। চুমু খাব না আমি। আপনি আমাকে আগে ধমক দিতেন শুধু। তাই আমিও আর দিব না।
— আগে বুঝতে না বাট এখন তো বুঝে গিয়েছো।
— আপনি বুঝান নি, নিজ থেকে বুঝেছি সবটা। প্রশ্ন করতাম তবুও উত্তর দিতেন না হৃদয়ীনের মত।
— তোমার ওইগুলো প্রশ্ন ছিলো?
– অবশ্যই।
— কি প্রশ্ন যে, আমাকে একটা মেডিসিন এনে দিবেন। আমিও প্রেগনেন্ট হব।
রুয়ানা লজ্জায় হাঁশ-ফাঁশ করে উঠে। সে কি জানত না এতকিছু, তাই তো বলদের মত প্রশ্ন করেছিলো।
— আমি কি জানতাম নাকি? তাই তো মেডিসিন নিয়ে আসার কথা বলেছিলাম। ভাবতাম মেডিসিন খেলেই বাচ্চা হয়।
এতকিছু জানলে নিশ্চই এইসব বলতাম না। একটু বুঝিয়ে বললেই হত। কিন্তু আমাকে আপনি পর পর ধমকে চুপ করে দিয়েছেন।
— তোমাকে আমি ওইসময় এইসব বুঝাতাম ইডিয়েট! অল্প বয়সে পাকা ঠিক না। তখন তোমার পর্যাপ্ত সময় ছিলো না এইসব নিয়ে জ্ঞান অর্জন করার। এখন তো জানো। এখন তো বুঝ তাহলে?
রুয়ানা লজ্জায় আর টিকতে পারে নি। দ্রুত মুখ লুকিয়ে চলে যেতে চায় এখান থেকে। দরজার কাছে আসতেই হাতে টান অনুভব করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই কারোর বুকে গিয়ে ধ্বাক্কা লাগে। থরথর কেঁপে উঠে মেয়েটা । অস্ফুর্ত আওয়াজে বলে,
” ক.. কি করছেন?
ইউভি রুয়ানার কোমরে হাত পেচিয়ে সামান্য উচু করে নেয়। ইউভির ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠে মেয়েটা। ইউভি নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায় গ্রীবাদেশে।
— ওই সময় তোমাকে যদি এতকিছু বুঝাতাম তখন আমাকে সামলাত কে? পারতে তখন আমাকে সামলাতে? বয়স কত ছিলো তোমার? সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে লিটল গার্ল।
রুয়ানা ইউভির শার্ট খামছে ধরে। চোখ – মুখ খিঁচে ফেলে লজ্জায়। ইউভি সামান্য চুমু খেয়ে ছেড়ে দেয়। রুয়ানা মাথা নিচু করে রাখে,
” এখন ওত সামলাতে পারি না।
– পারতে হবে এখন । না চাইলে ও পারতে হবে। সর্বোচ্চটা দিয়ে হলেও এখন সামলাতে হবে।
ইউভি কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রুয়ানা লজ্জায় মুখে হাত দিয়ে বরফের ন্যায় দাড়িয়ে থাকে।
রাতের নিস্তব্ধ প্রহরে যখন আকাশে তারাগুলোর অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয় মেঘের ঘন সমাবেশে তখন হিমেল হাওয়ার অদৃশ্য আঁচড়ে হৃদয়ের অন্তঃস্থ অনুভূতিগুলো জেগে ওঠে এক অপরিচিত সুরে। বাতাসে ভেসে বেড়ায় অচেনা শীতলতা যার প্রতিটি ঝাপটা যেন মনজগতের গভীরতম স্তরে অনুরণন তোলে। চারিদিকে এক রহস্যময় বিষন্নতা। রাতের এই ম্লান আলোয় সময় যেন থমকে থাকে। প্রতিটি মুহূর্ত এক একটি দীর্ঘশ্বাস হয়ে বুকের গহীনে জমা হতে থাকে। আবহাওয়ার এই প্রতিকূলতা শুধু দেহে নয় অনুভবে, কল্পনায়, এমনকি স্মৃতির অন্ধকার অলিন্দেও ঠান্ডার মতো জেঁকে বসে। এমন রাতে, নিঃশব্দতা হয়ে ওঠে ভাষার চেয়েও প্রবল আর অনুভব হয়ে ওঠে এমন এক অদৃশ্য আর্তনাদ। যা প্রকাশের চেয়েও বেশি নীরবতায় বেঁচে থাকে। রাতটা মানেই কি লজ্জাকর পরিস্থিতির সম্মুখীন। এই যে ইয়ানা লজ্জায় মরে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে ইয়ানা লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে আছে। সামনে অগ্নি দাঁড়িয়ে আছে নিচের ঠোঁট কামড়ে। ইয়ানার সবচেয়ে দামী ব্রেন্ড লাক্সারির একটা শাড়ি পরিহিতা। ইয়ানার শরীরে সেই শাড়িটি যেন স্বপ্ন আর নীরব অভিজাত্যের এক অপার্থিব অভিব্যক্তি মুখর অথচ নিঃশব্দ। মরচে রঙা সিল্ক ও প্যাশমিনার সংমিশ্রণে তৈরি শরীরটি। জ্যোৎস্নার মতো কোমল অথচ সূর্যের মতো দীপ্ত। শাড়ির পাড়জুড়ে সূক্ষ্মভাবে হাতের কাজ করা ২৪ ক্যারেট গোল্ড ফিলিগ্রির নকশা যার প্রতিটি রেখা ফরাসি রেনেসাঁ যুগের স্থাপত্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। শাড়ির আঁচলে বসানো হয়েছে হাতের কাঁথার স্টাইলে বোনা চাঁদ-তারার আল্পনা।
এইটা বেনারসের ঐতিহ্য ও প্যারিসের মিনিমালিজমকে এক সাথে বয়ে আনে। আঁচলের মাঝখানে স্থাপিত একটি অরিজিনাল কালচারড পার্ল বাটন যেটি শাড়িটিকে শুধু পোশাক নয় বরং এক সংগ্রহযোগ্য শিল্পকর্মে পরিণত করেছে। অগ্নি ঠোঁট কামড়ে এক পা এক পা করে ইয়ানার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অগ্নির এমন নিরব এগিয়ে আসা ইয়ানার ভয়কে আরও বাড়িয়ে দেয়। সামান্য ঢোক গিকে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নির সেই নেশালো দৃষ্টি দেখে ইয়ানা আরও ভড়কে যায়। অগ্নি একদম ইয়ানার কাছা- কাছি এসে দাঁড়ায়। এরপর আচমকা ইয়ানার উন্মুক্ত কোমর পেচিয়ে ধরে নিজের ঘনিষ্ট করে তুলে। ইয়ানা কেঁপে উঠে অনুভুতির সাথে। অগ্নি ইয়ানার কাঁপা ঠোঁটের উপর আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে স্লো ভয়েসে বলে,
” সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ইউ আর লুকিং স্টানিং মাই এমপ্রেস।
ইয়ানা কিছু বলে না। লজ্জায় শুধু মাথা নিচু করে রাখে। অগ্নি আচমকা ইয়ানার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের ভাঁজে নিয়ে আসে। তবে আলতো ভাবে সামান্য চুমু খায়। নিজেকে সামলে নেয় বাদ্ধ হয়ে। ইয়ানার গালে হাত দিয়ে বলে,
” চলো।
— কোথায়?
— গেলেই দেখতে পারবে।
— ইয়াজ এখনও সজাগ হয়ে আছে। ছেলেটা এখনও ঘুমায় নি। কোথায় সাব আমি?
অগ্নি ইয়ানার কথা পাত্তা না দিয়ে কোলে তোলে নেয় আচমকা। ইয়ানা ভড়কে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে। অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। ঠিক তখন পিছন থেকে ভেসে আসে,
” অল দ্যা বেস্ট পাপা। গিভ মাম্মাম দ্য বেস্ট গিফট সো দ্যাট শি বিকামস হ্যাপি।
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকায় নিজের ছেলের দিকে। যে সিঁড়ির সামনে হেসে দাড়িয়ে আছে। অগ্নি ইয়াজের দিকে তাকিয়ে স্বভাবসুলভ ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
” ইয়েস ব্যাডি। বেস্ট গেফ্টটাই দিব তোমার মাম্মামকে।
অগ্নি ইয়ানাকে সিটে বসিয়ে দেয়। ইয়ানা হতভাগ, আহাম্মকের মত স্তব্দ হয়ে আছে। নিজের হুসে আসতেই অগ্নির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে,
” কি বলেছেন আপনি ইয়াজকে?
— কি বলেছি?
– প্রশ্নটা আমি করেছি।
— কিছুই বলি নি। শুধু বলেছি তোমার মাম্মামকে নিয়ে পাপা একটু লং ড্রাইভে যাব। এতে তোমার মাম্মাম অনেক খুশি হবে।
ইয়ানা শ্বাস ছেড়ে বলে,
” থ্যাংক গড, আবোল- তাবোল কিছু বলেন নি। অসভ্যের মত যা খুশি বলে দিন। মুখে আটকায় নাকি কিছু।
অগ্নি আচকা ইয়ানার মাথার পিছন অংশ চেপে ধরে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসে,
” এই আল্লাহর বান্দি অসভ্য না হলে দুইটা প্রডাক্ট পেতি কোথায় হুম? আমি ছেলে – মেয়েদের সামনে সবচেয়ে বেস্ট হলেও তর কাছে সেই অসভ্য, জানোয়ার অগ্নি চৌধুরি ওই থাকতে চায়। আর সেটা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।
অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে আবার ও ড্রাইভে মনযোগী হয়। কিন্তু আদ’ও কি সেখানে মনযোগ আছে। সব মনযোগ তো পাশে বসা বিয়াদপটা ছিনিয়ে নিয়েছে। অনেক্ষন গাড়ি চলতে থাকে। এরপর হঠাৎ এক খোলা আকাশের সামনে গাড়িটা থেমে যায়। গাড়ি থেমে যাওয়াতে ইয়ানার হুস আসে। প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছিলো সে। আনায়ার কথা মনে হতেই অগ্নির উদ্দেশ্যে বলে,
” বাড়িতে জিজ্ঞাসা করে দেখুন তো আনায়া উঠে পড়েছে কি না? ঘুম থেকে উঠে সাথে সাথে কাউকে না পেলে ভয় পেয়ে যাবে।
অগ্নি গাড়ির দরজা খুলে ইয়ানাকে নামার ইশারা দিয়ে বলেন,
” সন্তানের প্রটেক্ট নিয়েই তোমাকে নিয়ে বাহিরে বের হয়েছি। টেনশন করো না মিরা আছে। সাথে দুইজন মেইডকে ও বলে এসেছি।
ইয়ানা চিন্তামুক্ত হয়। মিরা থাকলে আর কোনো চিন্তা নেই। মিরা থাকলে আনায়ার কাছে ইয়ানা না থাকলেও চলবে।
ইয়ানা গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে যায়। সমুদ্রের পাশে একটা বিশাল তাবু। এর আশে- পাশে অনেক সুন্দর লাইটিং করা।নদীর ঢেউ এর সাথে সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছিলো।
ইয়ানা অজান্তেই বলে,
” মাশ- আল্লাহ কি উদ্ভুত সুন্দর চার- পাশ।
— পছন্দ হয়েছে?
— প্রচুর যা আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না।
অগ্নি হেসে ইয়ানাকে নিয়ে সেই স্থানে প্রবেশ করে। বালির উপর সাদা চাদর। তার উপর লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাঙ্গানো। আর ও ভিবিন্ন কাচা ফুলের ডেকোরেশন। লাইটিং এ চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে ইয়ানার। কিন্তু এইদিকে অগ্নির নাজেহাল অবস্থা। ইয়ানার এই রুপ তাকে ক্ষনে ক্ষনে ঘায়েল করছে। ইয়ানাকে ভিতরে পা রাখতেই চোখের সামনে গোলাকৃতি একটা টেবিল দেখতে পায়। টেবিলের উপর ভিবিন্ন লাইটিং, পনীয় আর অনেক বড় কেক । কেকের উপরে দেওয়া
“Infinity Love – 8 Beautiful Years”
ইয়ানা অবাক হয়ে তাকায় অগ্নির দিকে। আজ তাদের অষ্টম বিবাহ বার্ষিকী ছিলো! অথচ সে এই দিনটা ভুলে বসেছে। ইয়ানা আবগ প্লুত হয়ে আচমকা অগ্নির গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
” থ্যাংক ইউ ! থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমার সকল ভালোবাসা আপনার জন্য। আই’ম ফিলিং সো হ্যাপি টুডে, অগ্নি চৌধুরি!
ইয়ানা অগ্নির গালে টুপ করে চুমু খেয়ে সরে আসে। অগ্নি বরফের ন্যায় স্তব্দ হয়ে আছে। বিরবির করে আওড়াও,
” আমাকে নাজেহাল করে ছাড়ছে। আর মাত্র কয়েক মিনিট।
ইয়ানা ডেকোরেশন দেখাতে ব্যস্ত। ঠিক তখন ওই কোমরে অনুভব করে কোনো কিছুর ছোঁয়া। ইয়ানা কেঁপে উঠে। অগ্নি ঘনিষ্ট হয়ে ইয়ানার হাত ধরে কেকটার উপর ছুঁড়ি বসায়।
আর মিহি নেশালো আওয়াজে বলে,
” আই লাভ ইউ অনুভবের সেহজাদী। আট বছরের ভালোবাসা আজ তোমার সামনে প্রকাশিত করলাম। যে ভালোবাসি শব্দ শোনার জন্য তুমি চাতক পাখির ন্যায় ছটফট করেছিলো আজ বলছি, ভালোবাসি আমি তোমাকে। ভালোবাসি আমার সন্তানের মাকে। ভালোবাসি আমি আমার রাজ্যের রানী আর সম্রাজ্ঞীকে।
ইয়ানা থমকে যায় অগ্নির মুখে ভালোবাসি শব্দ শুনে। এই প্রথম দুই বাচ্চার বাবা হওয়ার পর ইয়ানার সামনে তার ভালোবাসি শব্দটা প্রকাশিত করেছে। ইয়ানা ঠাঁই হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
অগ্নি কেক কেটে ইয়ানাকে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর একটা ডায়মন্ড রিং পড়িয়ে দেয় ইয়ানার আঙ্গুলে। সেখানে চুমু খেয়ে বলে,
” হৃদয়ের রানী তো তখন ওই হয়েছিলে যেদিন আল্লাহর কালাম পড়ে আমার নামে কবুল বলেছিলে। রানী তো তখন ওই হয়েছিলে যেদিন আমি তোমাকে পাহাড়ের সেই মাটির ঘরে গভীর ভাবে স্পর্শে করেছিলাম। কিন্তু রক্তে, গন্ধে আজ বাজেভাবে মিশে গেলে দুইটা সন্তান উপহার দিয়ে। আমার অন্ধকার, হৃদয়হীন রাজ্যে এক ফালি আলো হয়ে আমার জীবনে ভুমিকম্পের মত আগমন হয়েছিলে। জীবনের সবচেয়ে বড় বড় পাপ নারী পাচার, শিশু পাচার, অনৈতিক আর বর্বর কাজ ছেড়ে দিয়েছি তোমার ভালোবাসায় আচ্ছাদিত হয়ে। বুঝতে পেরেছো ঠিক কতটা পরিবর্তন করেছো আমাকে? একটা সংসার হীন, ছন্নছাড়া পাষান নরপশুকে সংসারী করে তুললে। ভালোবাসি মাই গর্জিয়াস লেডি। খুব করে ভালোবাসি তোমাকে। অনুভবে তুমি আমার। আমাকে ভালোবাসো তো?
ইয়ানা আচমকা অগ্নির গলায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উঠে। কান্না করে উঠে মেয়েটা।
” ভালোবাসি আমি আপনাকে অগ্নি চৌধুরি। জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
— আমি কিন্তু এখনও মাফিয়া, এরপর ও ভালোবাসবে?
– বাসব।
— এক রাত ও কিন্তু ছাড় দিব না, চলবে?
— চলবে। তার পরও ভালোবাসব।
— আমি রেগে গেলে সামলাতে পারবে?
— পারব।
– প্রচুর জ্বালাব কিন্তু?
— সহ্য করে নিব সব কিছু। সামলে নিব ভালোবাসা দিয়ে।
— আমার কথামত বাধ্য হয়ে চলতে হবে।
— চলব, সব মেনে।
— থাপ্পর দিলেও আমার বুকে এসে আছড়ে পড়বে, মনে থাকবে?
— থাকবে।
অগ্নি মুচকি হেসে ইয়ানাকে জড়িয়ে নেয় কিছুক্ষন চাঁদের দিকে তাকায়। অগ্নি নিশ্বাস ছেডে বলে,
” আমার প্রফেশন নিয়ে আর কোনোদিন অন্ধকার করে রাখবে না। ঘৃন করতে পারবে না।
— পাচার কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। আর কি চাই আমার। তবে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমার হাতে কো*প খাবেন। আপনাকে রাগানোর জন্য আমার মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটাই যথেষ্ট।
অগ্নি হাস্কি সুরে বলে,
” তোমাকে কান্না করানোর জন্য আমার একটা রাত ওই যথেষ্ট।
ইয়ানা থতমত খেয়ে যায় অগ্নির লাগামহীন কথা শুনে। কিন্তু সে ও কম কিসে। গলা কেঁশে বলে,
” আপনার ভেতরটা কাঁদানোর জন্য আমার চোখের পানি ‘ই যথেষ্ট।
— আচ্ছা।
— হুম।
— এতটা খেয়াল করো আমাকে?
— কাকে করব তাহলে?
— এখন খেয়াল করছো? আমার ভেতরে ঠিক কি হচ্ছে?
— কি হচ্ছে? শরীর খারাপ লাগছে?
— প্রচুর খারাপ লাগছে। আর ধৈর্য ধরে থাকলে মরে যাব।
ইয়ানাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাজা কোলে তোলে নিয়ে তাবুর ভেতরে ডুকে পড়ে। এরপর সাদা নরম বিছানায় শুয়ে দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলে,
” জান চিৎকার করবে না।এইটা আমাদের সাউন্ড প্রুফ রুম নয় তাই কষ্ট হলে চিৎকার করবে না। তাবুর ভেতরের সামান্য চিৎকার ও চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে।
ইয়ানা ভয় পেয়ে যায় অগ্নির চোখ দেখে। আটকাতে চায় কিন্তু সে নিজেই আবদ্ধ হয়ে যায় কিছু একটার মধ্যে। তার হাতটাকে ঘুরিয়ে জিপটাই দিয়ে বেঁধে দেয়। ইয়ানা সামান্য ঢোক গিলে। চোখ দুটি দ্বিধা আর আত্মসমর্পণের সীমারেখায় ঝুলছে। অগ্নি ধীর অথচ অব্যর্থ হাতে একটানা এগিয়ে আসে তার দিকে। অগ্নি এতক্ষনে এক উন্মাদ প্রেমিকে পরিনত হয়। ইয়ানার ঠোঁট গুলো আকড়ে ধরে। প্রতিবারের মত শক্ত আর কঠিন। অবাধ্য হাতের বিচরন পুরো সত্তা জুড়ে।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬৫
ইয়ানা সয়ে নেয় প্রতিবারের মত অগ্নির উন্মাদ স্পর্শগুলোকে। চার- পাশের বাতাস থমকে আছে। যেন সময় নিজেই কাঁপছে তার নিঃশব্দ গতিতে । রাতের নিস্তব্দতায় শুধু দুইজনের ঘন নিশ্বাস। রাত গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। সামান্য বৃষ্টির ফোটা পড়তে থাকে তবে সেটা ভারী বর্ষন নয়। কি যায় আসে বৃষ্টির ফোটাতে! থামাতে পারবে মাফিয়া বস অগ্নি চৌধুরিকে?

Thanks you so much ❤️❤️❤️❤️❤️